অবাধ্য প্রেম পর্ব ২৮

অবাধ্য প্রেম পর্ব ২৮
নন্দিনী নীলা

ফাইনালি বিয়ের সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে গেছে আজকে বাসায় আসবে তাহমিনা আপু। এক বাসা থেকেই হবে বিয়ে আর আপুকে এ বাসায় আনা হবে যেহেতু তার দিক থেকে কেউ নাই। তাই ওই ভাড়া বাসায় থেকেই কি করবে! এজন্য সবাই জোর করে আপুকে বাসায় আনার জন্য অনুরোধ করেছে আপু বলেছে তার সাথে আসবে তার এক দূর সম্পর্কের ভাইগ্না।

যাদের বাসায় আপু দু’বছর থেকেছে। পরিবারের সবাই বিয়ের সময় আসবে আর ওই ভাইগ্না কে নিয়ে আসবে বিয়ের আগেই তার সাথে। তার দিক থেকে এখন আমি আর তার ওই ভাইগ্না। দুজনেই দূর সম্পর্কের আত্মীয়। আমাকে বাসার কেউ সহ্য করতে না পারলেও যখন থেকে শুনেছি তাহমিনা আপুর কাছের মানুষ আমি তখন থেকেই আমার দিকে আর কেউ আগের মত করে তাকায় না।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আর না আমাকে কোন কথা শোনায় পছন্দ না হলে এড়িয়ে যায়। যাই হোক আপুর বিয়েটা ঠিঅ হয়ে আমি ও বাসায় এখন শান্তিতে থাকতে পারছি যা ইচ্ছে তাই করতে পারতেছি। তার ওপর কনের আত্মীয় এজন্য আমার সাথে সবাই ঘুনে মেপে কথা বলে একমাত্র ঐ একজন ছাড়া সে হল নিবিড় এর ছোট চাচি।

আরেকটা শান্তিতে আছি আমাকে এখন রান্না করে খেতে হচ্ছে না বিয়ে ঠিক হওয়ার পরের দিন আমাকে নিবিড়ের আম্মু ডেকে বলেছে বিয়ে পর্যন্ত আমি যেন তাদের সাথে খাওয়া-দাওয়া করি আর তাদের যেন হেল্প করি বিয়ের কাজে। আপুর বিয়ে কাজ না করে কি পারি এজন্য তাদের আমি যথাসাধ্য হেল্প করার চেষ্টা করি।

সন্ধ্যায় আপু তার ওই দূর সম্পর্কের ভাইগ্নাকে নিয়ে বাসায় এসে উপস্থিত বাবা গো সবার কি আদর আহ্লাদ এত মানুষের ভিড়ে আমি আপুর কাছে যেতে পারলাম না। আপুকে নিয়ে সোফায় বসানো হলো। তার পাশে বসে আছে একটা ছেলে যাই হোক তিনি পরিচয় করে দিল ছেলেটার নাম লিহান। বিয়ে পর্যন্ত সে এই বাসাতেই থাকবে।

সবার নতুন বউ দেখার শেষ হলে তারা যার যার মত বাসা থেকে বেরিয়ে গেল। প্রতিবেশীর সবাই দল বেঁধে এসে বাড়ি ভর্তি করে ফেলেছিল। সবাই যেতে যেন বাসাটা নিস্তায় পেল। আমি আপুর কাছে গিয়ে দাঁড়াতে আপু বলল,, ‘ আমার দল দেখা যায় একদম ছোট।’

নিবিড় এসে বললো, ‘ সো সরি কাকি, তোমার দলে আমার থাকার ইচ্ছা ছিল কিন্তু আমার কাকাকে তো আমি একা রেখে যেতে পারবো না!’
তাহমিনা আপু বলল, ‘ আমার দুই জনই তোমাদের ১০ জনের থেকে চালু আছে আর কাউকে লাগব না‌! তাই নারে লিহান, ছোঁয়া!’

আমি বললাম, ‘ ইয়েস আপু।’
নিবিড় আমার মুখে আপু শুনে বলল, ‘ একজনকে কাকা আরেকজনকে আপু এ কোন দেশে বসবাস করছি আমি।’
আমি বললাম, ‘ সেতো আপনি জানেন আপনি কোথায় বসবাস করছেন। ‘
‘ কাকিকে আপু বললে কাকাকে তুমি কাকা বলো কেন? আপু না বলে কাকি বলা শেখো একজন কে কাকা একজনকে আপু এটা কি ধরনের কথা বার্তা!’

‘ আমার যা খুশি আমি তাই বলবো আর আমি আপুকে কাকি কখনো বলবো না। সে আমার আপু আর আপু থাকবে। দরকার পড়লে কাকাকে আমি দুলাভাই ডাকব।’
নিবিড় মুখটা পানশুটে করে বলল,’ মেন্টাল।’

লিহান নামের ছেলেটা চুপ করে বাসার সবাইকে দেখছে সবার কথা মনোযোগ সহকারে শুনছে। অচেনা পরিবারে সে একজন মানুষকে ছাড়া আর কাউকে চেনে না। কার সাথে কি কথা বলবে কিভাবে কার সাথে ভাব জমাবে সেটাই বুঝতে পারছে না।

নিজেকে এখানে অন্য গ্রহের প্রাণী মনে হচ্ছে। সবাই কথা বলছে উঠে উঠে চলে যাচ্ছে ও কোথায় যাবে কি করবে বুঝতে না পেরে গালে হাত দিয়ে ওখানে বসে রইল। ড্রইং রুম সম্পূর্ণ ফাঁকা হয়ে গেল কেউ রান্না করতেছে কেউ উপরে গেছে কেউ কেউ রুমে চলে গেছে।

আমি রান্নাঘর থেকে নতুন নামের ছেলেটার জন্য নিয়ে এসেছি শরবত। ঠান্ডা শরবত। সে আমাদের দলের লোক তার সেবা যত্নের দায়িত্ব পরেছে আমার। তাকে এই ঠান্ডা শরবত খাইয়ে তার রুম দেখিয়ে দিতে হবে। লিহান গালে হাত দিয়ে অন্যমনস্ক হয়ে কি যেন ভাবছে আমি গিয়ে একদম তার মুখের কাছে শরবতের গ্লাস ধরলাম।

লিহান ওইভাবে বসে আছে কোন সারা নাই। আমি এই গ্লাস ধরে কতোক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকব ডাকছি দাও সারা নাই। কোন পাগলা গারদ থেকে পাগলরে ধরে আনছে আপু আল্লাহ জানে।
আমি লিহানকে একটা ধাক্কা দিয়ে বললাম, ‘হাই, কোন রাজ্য শাসনের পরিকল্পনা করছো শরবত খেয়ে আগে আমাকে ছুটি দাও তারপর তোমার ভাবনা আবার শুরু করিও।’

লিহান চমকে উঠে সরি সরি বলতে লাগলো‌। আমি গম্ভীর গলায় বললাম , ‘ ইটস ওকে। চলো আমার সাথে।’
লিহান বলল, ‘ ক‌ই যাবো?’
‘ এইখানে বসে থাকবা নাকি তোমার জন্য রুম ঠিক করা হয়েছে সেখানে থাকতে চাও না? এখানেই বসে দিনরাত পার করবা?’

‘ নানানা আমাকে রুমে নিয়ে চলো।’
লিহানকে রুম দেখিয়ে আমি আসছিলাম। হঠাৎ আমার নজরে গেল রাফসান কাকা আর তাহমিনা আপুর দিকে। তাদের দরজা লাগানো না চাপানো ছিল একটু ফাঁকা সেই ফাঁকা দিয়ে দেখা যাচ্ছে পরস্প র নিজেদের দিকে হা করে তাকিয়ে
আছে।
আহ কি প্রেম!!

আমি দুজনের প্রেম দেখছিলাম লুকিয়ে। চুরি করে দেখতে গিয়ে কার কাছে যেন ধরা খেয়েছি।
নিবিড় আমার পাশে কখন দাঁড়িয়ে আছে খেয়াল করিনি। নিবিড় এসে আমার পাশে শান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে কানের কাছে ফিসফিস করে, ‘ কি করছো?’

আমিও বোকার মত উত্তর দিয়ে দেই, ‘ প্রেম করা দেখি‌।’
উত্তর দেওয়ার পর আমার মনে পড়ে কে আমাকে জিজ্ঞেস করল। আমি চোখ ঘুরিয়ে তাকাতে চমকে উঠি নিবিড় কে দেখে চিৎকার করতে যাব। নিবিড় আমার মুখে হাত দিয়ে চিৎকার করা থেকে বিরত করে বলে, ‘ হুঁশ চুপ, চিৎকার করে তাদের এই রোমান্টিক মুহূর্তের ভিলেন হয়ো না।’

নিবিড় আমার মুখ থেকে হাত সরিয়ে দেয়। আমি মাথা নিচু করে ফেলি। সমস্ত কিছুই এই লোকটার সামনে হতে হয়। উফ।
‘আমাকে সব সময় কি বলতা যেন? আমার চিন্তা-ভাবনা নোংরা! আমি….

নিবিড় কে আমি থামিয়ে বললাম,’ আমাকে এসব এখন কেন বলছেন? দেখুন এই সামান্য ব্যাপার নিয়ে আপনি আমাকে খারাপ ভাবতে পারেন না। আমি যথেষ্ট ভদ্র একটা মেয়ে। আমি তো জাস্ট তাদের মধ্যে সবকিছু কেমন আছে ঠিক আছে নাকি দেখার জন্য দাঁড়িয়ে ছিলাম। আমার এত পার্সোনাল মোমেন্ট দেখার ইচ্ছা নাই আমি জাস্ট এর জন্যই দাঁড়িয়ে ছিলাম।’

‘ উল্টাপাল্টা যুক্তি দিলেই তো হবে না। তুমি কেন এখানে দাঁড়িয়ে ছিলে। সেটা তুমি নিজের মুখে বলেছ। ‘
আমি অবাক স্বরে বললাম,, ‘ কি বলেছি?’
নিবিড় বলল, ‘ প্রেম করা দেখতেছো।’
‘ ইম্পসিবল এটা আমি কখনো বলিনি।’
‘ আবার দেখি অস্বীকার করছো।’

আমি তারা দেখিয়ে বললাম, ‘যেটা আমি বলি নি সেটা স্বীকার করবো কেন? সরেন তো আমার কাজ আছে আপুর বিয়ে বলে কথা কত কাজ করতে হবে যাই!’
কাজের বাহানা দেখিয়ে আমি চলে এলাম তাড়াতাড়ি। নিচে আপুকে যে রুমটা দিয়েছে থাকার জন্য। আজকে আমি সেই রুমে থাকলাম।

আপু জোর করে আমাকে রাখল থাকার জন্য বলল, ‘একা একা ছাদে থাকিস তোর ভয় করে না ছোঁয়া।’
‘না ত আপু ভয় করবে কেন? বরঞ্চ আমি ইনজয় করি। রাতে যখনই মন চায় বের হয়ে ঠান্ডা বাতাসে বসে চা খাই আর একাই আড্ডা দেই। রাতের আকাশের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র তারাদের সাথে।’

অবাধ্য প্রেম পর্ব ২৭

‘তারাদের সাথে আবার আড্ডাও দিস। তোর ভয় করে না যদি ভূত আসে।’
‘আমার এমন পরিস্থিতি আসবে বলেই হয়তো আল্লাহ আমার ভয় কম দিয়েছে।’
আপু আমার গাল টেনে দিয়ে বলল, ‘ পাগলী মেয়ে একটা।’

অবাধ্য প্রেম পর্ব ২৯