অবাধ্য প্রেম পর্ব ২৯

অবাধ্য প্রেম পর্ব ২৯
নন্দিনী নীলা

আকাশে মেঘ বৃষ্টির খেলা। হুটহাট আকাশ মেঘলা হয়ে যায় আর ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি পরতে থাকে ভালোই লাগে এমন খেলা দেখতে কিন্তু এখন যে কাজের তাড়া বড়। বিয়ের সব আয়োজন করতে চেয়েছে বাগানে। বৃষ্টির জন্য কাজ এগিয়েছে না।
আজ সবাই যাবে মার্কেট করতে।

বিয়ের শপিং কিছু করেছে বাড়ির লোকেরা এখন কনে তার নিজের পছন্দে বিয়ের পোশাক কিনবে সে জন্যই নিয়ে যাবে। বর কনে কে নিয়ে বিয়ের শপিং করতে যাবে। সাথে আছি আমি, নিবিড়, মাহি, আবির।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

তাহমিনা আপু আর রাফসান কাকাকে আলাদা গাড়িতে দেওয়া হলো। তাদের একটু প্রাইভেসি দেওয়ার জন্য আরেকটা গাড়ি নেয়া হলো যেটা বাদবাকি আমরা সবাই উঠলাম। মাহি আর আমি পেছনে বসেছি‌ সামনে নিবিড় আর আবির।
মার্কেটে এসে দেখলাম তাহমিনা আপু এসে বাইরে দাঁড়িয়ে আছে আমাদের জন্য ওয়েট করছে।

সবাই মিলে একসাথে শপিং মলে ঢুকলাম। আপুর জন্য বেনারসি দেখা হচ্ছে। আমরা সবাই দেখছি নিবিড় ফোন কানে ধরে ওই দূরে দাঁড়িয়ে কার সাথে যেন কথা বলছে। আপু শাড়ি চয়েজ করতে পারছে না বারবার কাকার দিকে তাকাচ্ছে তার তাকানো দেখে আমি বুঝে ফেললাম ফট করেই। হয়তোবা আপু চাইছে কাকা তাকে শাড়ি চয়েজ করে দিক। কাকা বুঝতে পারছে না শুধু জিজ্ঞেস করছে কোনটা ভালো লাগছে কোনটা ভালো লাগছে।

কাকার এমন গাধামি দেখে আমার হাসি পাচ্ছে।
আপু যে নিজে থেকে এ কথাটা বলতে পারবেন আর কাকা ও তার ইশারা বুঝতে পারবেনা। মাঝখান থেকে কি আপু শাড়ি না কিনে চলে যাবে নাকি আমাকে কিছু একটা করতে হবে।

আমি উঠে গিয়ে কাকার পাশে বসে ফিসফিস করে বললাম কাকা কে উদ্দেশ্য করে ,, ‘ কাকা আপনি একটা শাড়ি চয়েজ করে দিন আপুকে। আপনার পছন্দের শাড়ি পরার জন্য আপু পছন্দ করছে না। আপু চাইতেছে আপনি তাকে শাড়িটা পছন্দ করে দেন। কিন্তু আপনি তো কিছুই বুঝতে পারছেন না। আপনি এই বুদ্ধি নিয়ে কিভাবে পুলিশে চাকরি পেলেন সেটাই আমার মাথায় ঢুকছেনা।’

কাক আমার দিকে বিস্ময়কর চোখে তাকালো। আমি উঠে দাঁড়ালাম। নিবির এসে আমার পাশে দাঁড়িয়ে আমার দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে।
আমি কপাল কুঁচকে বললাম, ‘ কি হয়েছে?’
‘ ফিসফিস করে কাকাকে কি বললে?’
‘ যাকে বলেছি সে শুনলেই হবে আপনার জানতে হবে না।’
‘ কিন্তু আমি তো শুনে ফেলেছি।’

‘ তো জিজ্ঞেস করছেন কেন?’
‘জিজ্ঞেস করছি কেন সামনে তাকাও তাহলেই বুঝতে পারবে!’
আমি বললাম, ‘আজব তো সামনে তাকিয়ে আমি কি বুঝতে পারবো আপনি বলেন।’
নিবিড় আমার মাথায় হাত দিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে সামনের দিকে ঘুরিয়ে বলল, ‘ দেখো।’

আমি সামনে তাকিয়ে হা করে আছি। রাফসান কাকা সামনে থাকা সবুজ একটা শাড়ি হাতে নিয়ে বসে আছে। আমি তো চোখ বড় বড় করে সবুজ শাড়িটার দিকে তাকিয়ে আছি আপুর কাছে একদিন শুনতে পেয়েছি সে নাকি সবুজ কালার পছন্দ করে না। যে কালার আপুর পছন্দ নয় সেইটাই রাফসান হাতে ধরে বসে আছে।

আমি বিরবির করে বললাম, ‘ কাকা কি সবুজ কালার ছাড়া আর কোন কালার পেল না ধরার জন্য। এই কালার তো আপু একটু পছন্দ করে না একদিন আপু বলেছিল।’
নিবিড় বলল, ‘ কিন্তু আমার কাকার তো এই কালার টাই ফেভারিট। তুমি তাকে নিজের পছন্দমত চয়েজ করে দিতে বলছ তো সে তার পছন্দমত ধরেছে।’.

আপনি তারমানে আগেই জানতেন তাদের পছন্দের মধ্যে ঝামেলা আছে।
‘হুম আমি তো সবই জানি। কারণ আমি তো কাকার প্রেম ডাইরিটা লুকিয়ে পড়ে ফেলেছিলাম।’
‘ আপনি জেনে বুঝে আমাকে এটা করতে দিলেন কেন?’
‘তোমার মাথায় যে সব গাধামো বুদ্ধি সেটা বোঝানোর জন্য।’

আমি দাঁত কটমট করে বসলাম। নিবিড় গিয়ে কাকার হাত থেকে শাড়ি ফেলে নিজের চয়েস করা একটা শাড়ি বলতে গেলে এখানে সবচেয়ে সুন্দর যে শাড়িটা আমার এটাই ভালো লাগছিল সেই শাড়িটা কাকার হাতে দিলো। আপুর তখন কল আসছিল তাই একটু উঠে গেছিল ।

এইজন্যে সবকিছুই তার নজরের আড়ালে হল তারপর নিবি ড় কাকা কি কি যেন বলল কাকা সেই শাড়িটা দিকে তাকিয়ে বলল,, ‘শাড়িটা তো খুব সুন্দর তাহমিনাকে খুব সুন্দর মানাবে তাই নারে নিবিড়।’
কাকা যখন এই কথাটা বলছিল সেই মুহূর্তেই আপু এসে বসে আর কাকার সব কথা শুনতে পায়। কাকার কথা শুনে আপু তো লজ্জায় লাল হয়ে ওঠে।

কেনাকাটা শেষ করে আমরা রেস্টুরেন্টে গেলাম। ডিনার করে বাসায় ফিরে যাবে সবাই। রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসেছি সবাই তখন আপুর ফোনে কল আসে কে যেন কল করেছে। তাকে আপু রেস্টুরেন্টে আসতে বলল। আপু কথা শেষ করার পরে বলল লিহান নাকি কল করেছিল। আমরা আসার সময় লিহানকে ডাকতে গেছিলাম কিন্তু সে দুপুরে খেয়েই ঘুম দিয়েছে তার ঘুম ভাঙানো যায় নাই এজন্য তাকে রেখে আসছি।খাবার অর্ডার দেওয়া হলো।

মাহি নিজের ইচ্ছামত অর্ডার দিয়েছে আবির ও নিজের ইচ্ছামত দিয়েছে আর আমাদের সবারটা দিয়েছে নিবিড়। মাহি বসেছে আমার পাশে একটু পর পর আমার কানের কাছে বলছে আমার ড্রেসটা সবচেয়ে সুন্দর হয়েছে তাই না।
আমি মাথা নাড়িয়ে স্বীকার করে যাচ্ছি কতবার যে বললাম।

আর আবিরের ব্যাপারটা তো আমি ধরতে পারতেছি না। ওর দিকে যতবার আমি তাকিয়েছি দেখেছি ও আমাকে দেখে শুধু মিটিমিটি হাসছে। কয়েকবার ওকে ডেকে জিজ্ঞেসও করেছি, সমস্যা কি? আমার দিকে তাকিয়ে হাসছো কেন?’
আবির তখন হাসি অফ করে বলে, ‘ কেন হাসলে সমস্যা কি? তোমার তো খুশি হওয়া উচিত আপু তোমাকে দেখে আমি খুশি আছি হাসিখুশি আছি।’

‘আমাকে না দেখলে কি তুমি হাসি খুশি থাকো না। তোমার হাসি দেখে তো আমার অন্য কিছু মনে হচ্ছে। সত্যি করে বলো তুমি আমাকে দেখে হাসো কেন?’
আবির বিপাকে পড়ে যায়। ছোঁয়া তো ওকে একদম চেপে ধরেছে সত্যি কথা না জেনে মনে হয় ওকে ছাড়বেই না। কি বিপদে পড়ায় গেল। তখন আবির কায়দা করে একটু অ্যাক্টিং করে। ছোঁয়ার পেছনে তাকিয়ে বলে, ‘আরে নিবিড় ভাইয়া দেখো না ছোঁয়া আপু কি সব জিগ্গেস করছে আমাকে।’

আমিও বোকার মত পেছনে তাকাতেই সামনে থেকে আবির চলে যায়। আর আমি পেছনে তাকিয়ে দেখি ফাঁকা কেউ নাই। আবির আমাকে বোকা বানিয়েছে। এখন আবার খাবার টেবিলে বসে দাঁত কেলাচ্ছে। আমি রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করছি আবিরের দিকে। হুট করে আমার নজর গেল আবিরের চোখের দৃষ্টির উপর। ভালো করে খেয়াল করে দেখি আবির একবার আমার দিকে তো একবার নিবিড়ের দিকে তাকাচ্ছে। আর মিটি মিটি হাসছে।

আমি ফট করে বসা থেকে দাঁড়িয়ে আবিরের দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘ এই আবির চলো একটু এদিকে।’
আবির থতমত খেয়ে আমার দিকে তাকালো।
হতবুদ্ধি চোখ মুখ করে বলল, ‘কেন আপু?’
পাশ থেকে মাহি আমাকে বলল, ‘তুমি এখন কোথায় যাবে?’
তাহমিনা আপু বলল, ‘ ক‌ই যাবি? ‘

আমি সবার উদ্দেশ্যে কি বলব ভাবছি। উত্তেজিত হয়ে তো আবিরকে ডেকে ফেললাম এখন সবার উদ্দেশ্যে আমার এমন কিছু বলতে হবে যাতে সবাই উত্তর পেয়ে যায়।
আমি নিবিড়ের দিকে রাগ মিশ্রিত চোখে চেয়ে সবার উদ্দেশ্যে বললাম, ‘ আমার একটা দরকার আছে। তাই ভাবছি আবির কে নিয়ে যাই ও তো ফ্রি আর ও তো সবকিছুই চিনে।’

‘ রাফসান কে নিয়ে যা।’
‘না না না তার দরকার হবে না। আবির গেলেই হবে। আবির চলো তো বলেই বেরিয়ে এলাম আবির হয়তোবা বুঝতে পেরেছে আমি ওকে কায়দা করে আমার প্রশ্নে জালে ফাঁসানোর জন্য নিয়ে যাচ্ছি।
ও নিবিড় কে কিছু বলতে যাচ্ছিল। আমি তখন চেঁচিয়ে ডেকে উঠি।

আবির আর নিবিড় কে কিছু বলার সুযোগ পায় না দৌড়ে আমার সাথে হাঁটতে লাগে। আবিরকে টেনে বাইরে এনে কোমরে হাত দিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে জিজ্ঞেস করি, ‘ তোমার ভাই কে আর আমাকে দেখে মিটিমিটি হাসছিল কেন? সত্যি করে বলো না হলে কিন্তু তোমার যে গার্লফ্রেন্ড আছে সেটা আমি নিবিড়কে বলে দেব।’

অবাধ্য প্রেম পর্ব ২৮

আবির বলে, ‘আমার গার্লফ্রেন্ড আছে তার প্রমাণ কি? আর ভাইয়াকে বললে তাই কি হবে ভাইয়ার ও তো আছে।’
আমি হতবিহ্বল কন্ঠে বলি,’ কিহহ বললে?’

অবাধ্য প্রেম পর্ব ৩০