অবাধ্য প্রেম পর্ব ৩০

অবাধ্য প্রেম পর্ব ৩০
নন্দিনী নীলা

আবির বলল,’ জোরেই তো বললাম আমার কথা কি তুমি শুনতে পাও নাই?’
আমি বললাম, ‘ চুপ তোমার ভাইয়া আসছে টপিক চেঞ্জ করো।’

আবির আমার পেছনে তাকিয়ে দেখলাম আসলেই নিবিড় বাইরে আসছে তা দেখে ও তো জাটকা খেলো। বিস্মিত গলায় বলল, ‘ তুমি তো আমার দিকে ফিরে আছো তুমি বুঝলে কিভাবে ভাই আসছে?’
‘ রাক্ষসটা যেভাবে আমাদের বাইরে আসার দিকে তাকিয়ে ছিল। আমি নিশ্চিত ছিলাম এখানে আসার দুই মিনিটের মাথায় হাজির হবে। ‘

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

‘ বাহ ভাইয়াকে কত চেনো বোঝো তাই না আপু‌।’ বলেই আবার মিটিমিটি করে হেসে উঠলো।
আমি রেগে কিছু বলতে যাব তখনি নিবিড় এসে হাজির। ও এসেই আবিরের শেষ কথা শুনে ধমক দিয়ে বলল, ‘ বেশি পাকনামো করলে কিন্তু এখানে আমার কাছে কান মলা খাবি যা এখান থেকে।’

নিবিড়ের ধমক শুনে আবির চলে যাচ্ছিল আমি পেছনে ডেকে বললাম, ‘ আরে আবির আমাকে রেখে কোথায় যাচ্ছ?’
নিবিড় আমার হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ধরে বলল,,’ তুমি তো আমার সাথে যাবে সোনা। ওকে যেতে দাও।’

আমি আবিরের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। নিবিড়ের কথা আর আমার হাতে নিবিড়ের স্পর্শ পেয়ে শিউরে উঠলাম। নিবিড়ের এমন ধারা কথা শুনে আমার মুখটা হা হয়ে গেল। আমি অবাক নয়নে নিবিড় দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকালাম।
আমি বিস্মিত গলায় বললাম, ‘ কি বললেন আপনি ?’

নিবিড় আমার কথার উত্তর দিল না। আমাকে টেনে কোথায় জানি নিয়ে যেতে লাগল।
‘ আরে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে।’

‘ রাস্তায় চেঁচামেচি না করে চুপচাপ চলো আমার সাথে! রাস্তায় মানুষ কে সার্কাস দেখাতে না চাইলে। শান্ত থাকো।’
‘ আপনি ওমন অদ্ভুত করে কথা বললেন কেন আমার সাথে?’ হাঁটতে হাঁটতে আমি নিবিড়ের কান গালের দিকে চেয়ে থেকে প্রশ্ন করলাম। নিবিড়ের বাচ্চা আমার কথার উত্তর দিল না।

পাশ থেকে কারো ডাক কানে এলো ছোঁয়া বলে ডাকছে। আমি অপর সাইডে তাকিয়ে দেখি লিহান। আমাকে ডাকছে।
‘ আরে ছাড়ুন লিহান ডাকছে শুনি কি বলতে চায়।’
‘ ও তোমাকে খুঁজতে আসে নাই। আর না জরুরি কথা বলতে ডাকছে। তাই না শুনলেও চলবে।’
‘ কিন্তু আপনি আমায় ক‌ই নিয়ে যাচ্ছেন?’

নিবিড় আমার দিকে চেয়ে মুচকি হেসে বলল, ‘ এতো অধৈর্য কেন?’
‘ আপনিও হাসছেন? উফফ আজ সব উল্টা পাল্টা হচ্ছে কেন?’
নিবিড় হাসি মুখে বলল, ‘ কি উল্টা পাল্টা হয়েছে?’
আমি বললাম,, ‘ সবকিছুই। আপনার হাসি আমার হজম হচ্ছে না। একদম আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসবেন না। রেগে তাকান।’

‘ নো আজকে আমি রাগবো না।’
আমি নিবিড় কে রাগানোর জন্য বললাম, ‘ আপনি একটা রাক্ষস। আপনি ফাজিল। আপনি….
নিবিড় আমার কথায় তবু ও রাগ না করে বলল, ‘ এসব বলে লাভ নেই আমি তো রাগ করব না।’
‘ আপনি বুঝতে পারছেন না!’

নিবিড় আমার কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে নিলো। আবার কি ভেবে যেন মুচকি মুচকি হাসতে লাগল। আমার তো পাগল হবার উপক্রম। মাথার ওপরে যাচ্ছে আমি থতমত খাওয়া মুখে নিবিড়ের হাসি মাখা মুখের দিকে তাকিয়ে আছে এই তুমি এই হাসি আমি সহ্য করতে পারছি না।

নিবিড় আমাকে অবাকের উপর অবাক করতে লাগল। আমাকে নিয়ে এলো জুয়েলারি দোকানে। এটায় আমি একটু আগেও এসেছিলাম। তাহমিনা আপুর সাথে আপু যখন জুয়েলারি কিনছিল তখন আমি একজোড়া কানের দুল দেখছিলাম দেখে আমার অনেক পছন্দ হয়েছিল। কিন্তু স্বর্ণের কানের দুল কিনার মত টাকা না আমার আছে না। না কখনো হবে তাই দেখে উল্টে পাল্টে আবার রেখে দিয়েছি কেউ নজর দেওয়ার আগেই।

এই দোকানে নিবিড় আমাকে কেন নিয়ে আসলো সেটাই আমি বুঝতে পারছি না।
আমি নিবিড়ের দিকে কপাল কুঁচকে বললাম, ‘এখানে নিয়ে আসলেন কেন? এখানে কি কাজ আপনার?’
নিবিড় আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ কাজ আছে বলেই এসেছি। তোমার মত আমি তো আর আজাইরা কাজে যেখানে সেখানে যায় না।’

আমি নক ফুলিয়ে বললাম, ‘ আমি আবার কখন আজাইরা কাজে গেলাম। একদম আমাকে খোঁচা দিবেন না।’
‘ দরকার নাই। শোন আমি কিছু জুয়েলারি কিনব তুমি একটু চয়েস করে দাও। মেয়েদের জিনিস কেনার অভ্যাস নাই তো তাই তোমাকে নিয়ে এলাম।’

‘ করে আর কার জন্য কিনবেন? আর আমাকেই কেন আনতে হবে তখন সবাই ছিল তাদের বলতেন!’
নিবিড় বলল, ‘ পাগল নাকি সবাইকে বলে কি আমি কেস খাবো নাকি। গার্লফ্রেন্ডের জন্য জিনিস কিনবো সেটা কি সবাইকে জানে কেনা যায়।’

‘তাদের জানানো যায় না আর আমাকে জানানো যায় তাই না?’
‘ তারা পরিবারের লোক এই ভাবে কি জানানো যায়? তুমি তো আমার কেউ না তাই তোমাকে জানালে সমস্যা নাই‌!’
আমি করবো না বলে বললাম, ‘ও আচ্ছা। আমি তো আপনাকে কোন হেল্প করব না। যারতার জন্য জিনিস আমি চয়েস করতে পারব না সরি। ‘

‘আচ্ছা না করলে আমি করি তুমি দেখো। আমার নিজের চয়েজ‌ অনেক ভালো।’
আমি রাগ দেখিয়ে বললাম, ‘ আপনি নিজেই করতে পারেন নিজের চয়েস এতো ভালো তাইলে আমাকে নিয়ে আসছেন কেন?’
‘ আমার তো তোমাকে দিয়ে করানোর ইচ্ছে ছিল কিন্তু তুমি তো করবে না তো কি করব নিজের‌ই করতে হবে।’
আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম, ‘ আপনি মাঝে মাঝে ওমন অদ্ভূত ধারায় কথা বলেন কেন আমার সাথে?’
নিবিড় অবুঝ সুরে বলল, ‘ কেমন ধারায়?’

‘ তখন ওমন অদ্ভুত করে হাসলেন কেন?’
নিবিড় আবার ঠোঁট কামড়ে হেসে বলল, ‘ কেন আমার হাসি কি সুন্দর না? নাকি আমার হাসি দেখে ভয় পেয়ে গেছো! প্রেমে পড়ে যাবে বলে।’

আমি চোখ ছোট ছোট করে বললাম, ‘ আপনাকে ভূতে ধরছে। না হলে আপনার মাথার ইস্কুল ঢিলা হয়ে গেছে অকারনেই হাসছেন পাগলের মত।’
নিবিড় আমার কথা শুনে হা হা করে হেসে উঠলো উচ্চ গলায়।

‘আচ্ছা তোমার সব প্রশ্নের উত্তর দেব তার আগে তুমি আমাকে কয়েকটা জিনিস চয়েজ করে দাও।’
‘ সবকিছুতেই আপনার শুধু একটা ঝামেলা রাখতে হবে। আচ্ছা বলেন কি কি লাগবে আপনার।’
নিবিড় আমাকে বলল একটাও রিং এক জোড়া কানের দুল।

দোকানে আসার পর আমার নজর শুধু সেই চয়েজ করার কানের দুলের উপরেই পরছিল। আমার নজর আটকে আছে সেখানেই। এটা কেনার মত সামর্থ্য আমার হবে না আর হলেও সেটা দিয়ে আমি আরেকটা কিছু করতে পারবো কানের দুল কিনে আমার টাকা নষ্ট করার মানে হয় না।

এটাই নিবিড়কে পছন্দ করে দিলাম আর একটা রিং পছন্দ করে দিলাম। দুটো জিনিসের দাম শুনে আমার মাথা ঘুরে উঠলো। আমি মাথায় হাত দিয়ে নিবিড় কে বললাম, ‘ এই ছোট আন্টির এত দাম? উনারা আপনাকে ঠকাচ্ছে রেখে দিন। এই আপনাকে আমি ২০-৩০ টাকায় এনে দিতে পারব। এখানে এক লাখ টাকা বলছে এরা তো ডাকাত। ‘

নিবিড় আমার দিকে তাকিয়ে গলার স্বর নামিয়ে বলল, ‘ স্টপ দিস। এই রিং তুমি ২০/৩০ টাকায় এনে দিতে পারবে পাগল তুমি?’

‘ একদম আমাকে পাগল বলবেন না‌ এটা তো স্বর্ণের না। এটা এতো দাম কি করে হয়?’
‘ গাঁধী এটা ডায়মন্ডের। নিজের মুখটা বন্ধ রাখ।’ আমাকে ধমক দিয়ে চুপ করালো।
‘ আপনার গার্লফ্রেন্ড বিয়েতে আসবে না?’

নিবিড় আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ আছেই তো আর আসবে কি?’
আমি অবাক গলায় বলল, ‘ আছেই ক‌ই আমি তো তার একটি ছবি ছাড়া। তাকে আর দেখলাম না।’
নিবিড় ভ্রু কুঁচকে অবাক স্বরে বলল, ‘ হোয়াট?’

‘আমার খিদে লাগছে আপনার সাথে পেছাল পারতে পারব না।’
বলেই নিবিড় কে রেখেই আমি রেস্টুরেন্টের দিকে হাঁটতে লাগলাম। নিবিড় ও আমার পেছনেই আসছে।
রেস্টুরেন্টে আসতেই লিহান আমাদের দিকে চেয়ে বলে উঠলো, ‘ ওই ভাবে দুজনে কোথায় যাচ্ছিলে? কত ডাকলাম শুনলেই না।’

আমি হাসার চেষ্টা করে বললাম, ‘ একটা দরকারে গেছিলাম তুমি কোথায় ছিলে তোমাকে তো দেখলাম না?’
লিহান অবাক গলায় বলল, ‘ তুমি না আমার দিকে একবার তাকালে কি যেন বলতে চেয়ে বললে না।’
আমি বিচলিত গলায় বললাম, ‘ কই আমিতো তোমায় দেখিনি এই মাত্র দেখলাম তোমায়।’

লিহান ভাবুক গলায় বলল, ‘ সত্যি দেখনি? তাহলে কি আমি ভুল দেখলাম নাকি!’
নিবিড় বসতে বসতে বলল, ‘ তুমি তো একনাগারে ডাকতেছিলে। এজন্য তুমি আন্দাজ করে নিয়েছে আমরা তোমাকে দেখেছি। এটা জাস্ট তোমার ভাবনা আমরা তোমাকে দেখলে অবশ্যই কথা বলতাম।’

অবাধ্য প্রেম পর্ব ২৯

আমি নিবিড়ের কি দারুন মিথ্যা বলার স্টাইলের দিকে তাকিয়ে আছি। এ দেখি আমার থেকেও বেশি বানিয়ে কথা বলতে পারে। ‌

অবাধ্য প্রেম পর্ব ৩১