অবাধ্য প্রেম পর্ব ৩১

অবাধ্য প্রেম পর্ব ৩১
নন্দিনী নীলা

আত্নীয় স্বজনে বাসায় গিজগিজ করছে। এই সময়ে আমার হয়েছে জ্বালা। সবার এতো কাজ করে আমি শেষ। ঘনিষ্ঠ আত্মীয় সব একা হাতে করতে হয় সব আশাকে এজন্য ও কাজ করছি।

আর তাছাড়া আমাকে তো নিবিড়ের মা বিনা পয়সায় পাওয়া কাজের লোক পেয়েছে এমন ভেবে কাজ করায়। উনাকে কয়েকদিন ভালো ভেবেছিলাম। উনি কি মিষ্টি করে আমায় ডেকেছিল। আমি ও খুশি মনে গেলাম উনার ঘরে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

‘ জি বলেন।’
নিবিড়ের মা আমার দিকে সুন্দর করে চেয়ে বলল, ‘ বিয়ে সামনে জানোই তো কতো কাজ। তুমি ও তো তাহমিনার সাথে পরিচিত তাই বলছিলাম। একটু হাতে হাতে কাজ করে দিও।’
আমি বললাম, ‘ জি আচ্ছা।’

তখন মিষ্টি করে কথা বলে আমাকে রাজি করিয়েছে। আর এখন আমাকে ইচ্ছে মতো খাটাচ্ছে। আমি তো খুশি মনেই কাজ করতে ছিলাম কিন্তু কেউ যখন জিজ্ঞেস করে আমি কি এই বাসার কাজের লোক। আমাকে কি নতুন রেখেছে এটা শুনলেই তো আমার মাথায় আগুন ধরে যায়।

এই আজকের বিকেলের ঘটনা। কাল যেহেতু রাফসান কাকার গায়ে হলুদ তো আজকে অধিকাংশ আপন আত্মীয়-স্বজন সবাই চলে এসেছে তার মধ্যে। লতা তাদের জন্য ঠান্ডা শরবত করছিল আমি ওকে হেল্প করলাম। একা এতগুলো শরবত আনতে হিমসিম খাচ্ছিল তাতেও আমি হেল্প করছিলাম।
ওর সাথে আমিও আসলাম।

আর তখনই একজন নিবিড়ের ছোট চাচীকে কেউ উদ্দেশ্য করে বলল, ‘ নতুন কাজের লোক রাখছিস?’
নিবিড়ের ছোট চাচী এমনিতেই আমাকে সহ্য করতে পারে না। কাজের লোকের মতই আমাকে দেখে সেই তুই তুকানি করে কথা বলে। আর আজকে তো আমাকে কাজের লোক বানাতে দুইবার ভাববো না।
সাথে সাথে উত্তর দিল, ‘হ্যাঁ দুটোই আমাদের কাজের লোক!’

আমি ড্রয়িং রুম ছেড়ে অনেকটা দূরে চলে গিয়েছিলাম। কাজের লোক বলাতে আমি লজ্জা আর অপমানে পেছনে তাকালাম ছলছল নয়নে। যতটা রাগ হয়েছে ঠিক ততটাই কষ্ট পেয়েছি গরিব বলে কি আমাদেরকে মানুষ মনে করে না নাকি। আমি তো এই বাসায় টাকা দিয়েই থাকি ভাড়াও দেই।

আর একটা বাসা খুঁজে পাচ্ছি না বলে আমি বাসাটা ছেড়ে যেতে পারছি না। তাই বলে এইভাবে আমাকে কাজের লোক বানিয়ে দেবে। আমি তো তাদের ভালোর জন্য তাদের কাজে সাহায্য করছি। আর সেই সুযোগটা তারা নিচ্ছে আমি রেগে যাচ্ছিলাম দুটো কড়া কথা শোনানোর জন্য।

আশা আমার চোখের জল মুছে দিয়ে বলল, ‘ রেগে কোথায় যাচ্ছ তুমি এ বাসার কে সেইটা তো তারা দুইদিন থাকলে জানতে পারবেই। ঝগড়াঝাটি না করাই ভালো। ছোট ম্যাডাম এমনই তুমি গেলে আরো দশ কথা শুনিয়ে দিবে। তোমার সাথে যে মেজো স্যারের বিয়ে ঠিক হয়েছিল সেটাও তো বলে দেবে।

তার থেকে চলো এখান থেকে চলো। ওখানে গেলে তুমি আরো হাসির পাত্র হবে। অপমানিত হবে। ওরা সবাই একইরকম। কাকে তুমি বোঝাতে যাবে যে তুমি এ বাসার কাজের লোক না তুমি বাসার কাজের লোক না থাকলে ওরা তোমার সাথে কাজের লোকের থেকেও খারাপ ব্যবহার করবে। আমাদের মতো গরিবদের লাঞ্ছিত করেই ওরা আনন্দিত হয়।’

গরিব হলেও আমার আত্ম সম্মানবোধ অনেক। গরিব হয়েছি বলে যে অন্যের সব করা আমি মাথা পেতে নিয়ে নীরবে সহ্য করে কান্না করে ভাসিয়ে দেবো তেমন ভীতু মেয়ে ‌আমি না। ওখানে গিয়ে আমি, তবুও দশটা কথা শুনাতাম কিন্তু আমি চাই না এখন তাহমিনা আপুর শ্বশুর বাড়িতে আমার জন্য কোন ঝামেলা হোক। বিয়েটা শেষ হোক এই বাড়ি তে এক মুহূর্ত থাকবো না।

এখানে বিয়ে বাড়িতে এসেছে নিবিড়ের এক মামাতো বোন। মেয়েটা যে এত বেয়াদব বলে বোঝাতে পারবো না আমি যখন বিকেলে কাজ করে সন্ধ্যায় উপরে আসলাম এসে দেখলাম মেয়েটা আমার রুমের দরজা খুলে ভেতরে বসে ভেতরে দাঁড়িয়ে আছে। আমি তো আবার এই মেয়ে আমার রুমে ঢুকে আছে কেন?

আমি রাগে গজগজ করতে করতে বললাম, ‘ আপনি আমার রুমের ভেতর কি করছেন?’
মেয়েটা চমকে উঠে পিছন ফিরে বলল, ‘ আর ইউ সার্ভেন্ট গার্ল! ইস দিস ইউর রুম?’
‘ মুখ সামলে কথা বলেন। আমি এই বাসায় ভাড়া থাকি। না এই বাসার কাজের জন্য পড়ে আছি আর না আমি চাকর।’
‘হোয়াট? ডিড ইউ আঙ্কেল রেন্ট দি হাউস। হু ইজ ইট পসিবল টু ওন এ হাউস?’

‘এসব আমাকে জিজ্ঞেস না করে আপনি আপনার মামাদের কে জিজ্ঞেস করেন।’
‘কাজের মেয়ে হয়ে এখন মিথ্যা বলছো না তো। ‘
‘ সবাইকে গিয়ে জিজ্ঞেস করেন?তাহলেই বুঝতে পারবেন মিথ্যা বলছি নাকি।’
‘ছোট মামি তো বলল তুমি বাসায় কাজের মেয়ে। নিজে অস্বীকার করছ কেন?’

‘ এই সরেন তো আপনার সাথে আমি ফাউল প্যাচাল পারতে পারবো না। আপনি আমার রুমের ভেতরে কি করছেন? এত বড়লোক বাড়ির মেয়ে হয়ে আরেকজনের রুমে চুরি করতে আসছেন নাকি?’

‘ তুমি আমাকে চোর বললে? এত বড় স্পর্ধা তোমার। একটা কাজের মেয়ে হয়ে তুমি আমাকে চোর সাব্যস্ত কর। এটা আমার মামার বাসা এই বাসার যেখানে ইচ্ছে সেখানে যখন তখন আমি যেতে পারি তুমি আমাকে না করার কে আর তোমার পারমিশন নেব।’

‘আপনার মামা বাসার আপনি যেখানে খুশি সেখানে ঘুরেন আমার কোন সমস্যা নেই। কিন্তু আপনি আমার রুমের ভেতরে না ঢুকে দয়া করে বাইরে ঘোরাঘুরি করেন। নাচানাচি করেন। বের হন আমার রুম থেকে।’
মেয়েটা রাগে গজগজ করতে করতে বেরিয়ে গেল রুম থেকে আর তখনই নিবিড় এই দিকে আসলো। বুঝলাম না উনি কোথা থেকে আগমন করল। নিবিড় কে দেখেই তো মেয়েটা ন্যাকামো শুরু হয়ে গেল‌।

এতক্ষণ চ্যাটাং চ্যাটাং কথা বলছিল। এখনি শেষ করে ফ্যাচ করে কেঁদে উঠলো। আমি দরজা থেকে ভেতরে ঢোকা বন্ধ করে আমি আরো বাইরে গিয়ে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছি। বড়বড় চোখ করে। নিবিড় তো মেয়েটার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে এগিয়ে আসতেই।

মেয়েটা নিবিড়ের এক হাত ধরে তাতে কপাল ঠেকিয়ে নাক টানতে টানতে বলল, ‘ ব্রো।’
নিবিড় কোন কিছু বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করল, ‘
হোয়াই আর ইউ ক্রইং মাইশা?’

মাইশা আমার দেখে হাত তাক করে বলল, ‘ এই চাকরানি টা আমাকে চিলেকোঠা রুমে যাওয়ার জন্য চোর বলছে। আমাকে অপমান করে রুম থেকে বের করে দিছে ব্রো। ও আমাকে অনেক ইনসাল্ট করছে, ওকে বাসা থেকে তাড়িয়ে দাও ব্রো ওর সাহস কি করে হয় আমাকে ইনসাল্ট করার।’

আমি তো অগ্নি অক্ষে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আছি ওই মাইশা না পাইশার দিকে। ও আমাকে চাকরানি বলল আবার। দুই ঠোঁট এক করে নাক ফুলিয়ে রাগী চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছি।
নিবিড় নিজের রেগে আগুন। মাইশা কথা শেষ করতেই ওকে ধাক্কা দিয়ে নিজের বাহু থেকে সরিয়ে দিলো। মাইশা আচমকা ধাক্কা খেয়ে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেল।

‘কি হয়েছে ব্রো তুমি রেগে গেলে কেন আমার উপর। তোমার তো ওই কাজের মেয়েটার উপর রাগ করা উচিত ছিল। তুমি আমাকে রাগ দেখাচ্ছ কেন?’ অবাক স্বরে বলল মাইশা।
নিবিড় রাগ সংবরণ করে বলল, ‘ ও আমাদের বাসায় ভাড়া থাকে। আর মেজ কাকির আত্নীয় না জেনে কথা বলবি না। তুই নিচে যা।’

অবাধ্য প্রেম পর্ব ৩০

মাইশা কিছু বলতে গিয়েও তীব্র রাগে আমার দিকে তাকিয়ে চলে এলো। নিবিড় যে আমার পক্ষে কথা বলেছে এটা ও সহ্য করতে পারেনি ওর মুখের ভঙ্গিমা দেখে আমি বুঝে গেছি। কিন্তু কেন জানিনা নিবিড় আমাকে সাপোর্ট করায় আমার অজান্তে খুব ভালো লাগছে। বিরক্তকর মানুষটাকে ও সুন্দর লাগছে মনে হচ্ছে। আজ একটা ভালো কাজ করল তাই বোধহয়।

অবাধ্য প্রেম পর্ব ৩২