অবাধ্য প্রেম পর্ব ৩২

অবাধ্য প্রেম পর্ব ৩২
নন্দিনী নীলা

নিবিড়ের দিকে এগিয়ে আমি বললাম, ‘ আপনি আমার পক্ষ নিলেন ভাবা যায়? আজকে সূর্য কোন দিক দিয়ে উঠেছিল?’ ভাবুক গলায় বললাম।
নিবিড় আমার কথার উত্তরে বলল, ‘ এখানে আমি কারো পক্ষ নেই নাই যেটা সত্যি জাস্ট বলেছি। এখন তোমার যদি মনে হয় আমি তোমার পক্ষ নিয়েছি তাহলে আমার কিছু বলার নাই‌!’

‘ আপনি এতো আলগা ভাব দেখান কেন? আপনাকে মেয়েদের মতো ভাব দেখাতে দেখলে রাগে শরীর আমার জ্বলে উঠে।’
নিবিড় আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ আর তুমি মেয়ে মানুষ নরম থাকবে। সুইট থাকবে কিন্তু তুমি তো ছেলেদের থেকেও রাগী। সব সময় মাথায় ঝগড়া আর রাগ নিয়ে ঘুরাফেরা করো।’

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

‘ কিহ আমি ঝগড়া আর রাগ নিয়ে ঘুরাফেরা করি ?’
‘ এদিকে আসো একটা জিনিস দেখাব তোমায়!’ নিবিড় আমাকে ছাদের ডান দিকে যেতে বলল।
আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম, ‘ কেন? কি দেখাবেন শুনি?’
‘ গিয়ে দেখো।’

‘ না আমি আপনাকে একটুও বিলিভ করি না। নিশ্চয়ই আপনার মাথায় কোন শয়তানি প্ল্যান আছে। ঐদিন আপনি আমাকে সুইমিং পুলে ফেলে দিয়েছিলেন। আজকে আবার কি বুদ্ধি করে এসেছেন?’ কড়া গলায় বললাম।
নিবিড় আমার না শুনে চোখ মুখ কঠিন করে ফেললো কিন্তু নিজেকে কন্ট্রোল করে শান্ত গলায় বলল, ‘ চলো আমার সাথে আজকে কোথাও ফেলব না।’

আমি চুপ থেকে বললাম, ‘ আপনি আমার মনটা ভালো করে দিছেন তাই জন্য যাচ্ছি না হলে আপনার কথা আমি কখনো শুনতাম না।চলুন দেখি কি দেখাবেন!’

নিবিড় আমাকে একদম কর্ণারে নিয়ে আসলো। এসে এখানে দেখতে লাগলাম কি দেখাতে আনলো।তেমন কিছু পেলাম না এদিকে ওদিকে তাকিয়ে কিছু দেখার মতো আছে কিনা খুঁজলাম। আমি মুখটা রাগী ভাব এনে বললাম, ‘ আমার সাথে কি ফান করতেছেন? ক‌ই এখানে দেখার মতো তো আমি কিছুই পাচ্ছি না। অযথা এখানে আনলেন কেন আজব!’
নিবিড় নিজের জায়গা থেকে সরে আমাকে ওর জায়গায় দাঁড় করিয়ে বলল,, ‘ ওই দিকে তাকাও।’

আমি বিরক্তিকর মুখে নিবিড়ের হাত দিয়ে ইশারা করা জায়গার দিকে তাকালাম। আমার চোখে মুখে বিরক্ত স্পর্শ নিবিড় নিশ্চিত কোন চালাকি করে নিয়ে আসছে আমাকে। রেলিংয়ের ধারে এনে দাঁড় করালো কেন আমাকে আবার এখান থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে মেরে ফেলতে চায় নাকি।

আমি নিবিড়ের এক হাত শক্ত করে ধরে তার পর সেই দিকে তাকালাম‌। লোকটাকে বিশ্বাস নাই যদি আবার ধাক্কা মেরে আমায় একদম নিচে ফেলে দেয়। এখান থেকে পড়লে নিশ্চিত আমি মরে যাব আমি এত তাড়াতাড়ি তো মরতে চাই না। তাও এই শয়তান টার হাতে তো একদম না। আমি নিবিড়ের হাত শক্ত করে ধরায় নিবিড় আমার দিকে রাগ মিশ্রিত নয়নে চাইল। নিবিড় হয়তো বুঝতে পেরেছে
আমার মনের কি চলছে।

নিবিড় আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ ইডিয়েট। শোনো তোমাকে এখান থেকে ফেলে অযথা মেরে আমি জেলের ঘানি টানতে পারবো না। তুমি কোন স্পেশাল পার্সন নাও যে তোমাকে মারলে আমার কোন লাভ হবে। So stop thinking your stupid thoughts.’

সামনে তাকিয়ে আমি বিষ্ময়ে হতভম্ব হয়ে গেলাম। এই পাশটা জঙ্গল টাইপের আর অন্ধকার এজন্য আমি সন্ধ্যার পরে বেশি এই পাশে আসি না। বাগানের ঐ পাশটায় আলো আছে। এজন্য আমি যদি রাতে বের হই। আমি বাগানের পাশটায় দাঁড়িয়ে থাকি। এজন্যই হয়তো এই সৌন্দর্য আমার দৃষ্টির আড়ালে পড়ে গেছে। জোনাকির ঝিলমিল আলো। অন্ধকারে এক ঝাঁক জোনাকি খেলাধুলা করছে মনে হচ্ছে। কি অপরূপ সৌন্দর্য ফুটে উঠেছে। এক ঝাঁক ভালো লাগে আমার চারপাশে এসে ঘিরে ধরলো যেন। সময়টা আমি মুগ্ধ নয়নে উপভোগ করতে লাগলাম।

আমার চোখে মুখে আনন্দের ছড়াছড়ি এসে ভিড় করছে। নিবিড় আমাকে এমন একটা আনন্দ উপহার দিল! আমি তো বিস্ময় হতবিহুল হয়ে যাচ্ছি। সবকিছু যেন আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। আমি অবাক নয়নে নিবিড়ের পানে তাকালাম। আমার যেন বিশ্বাস‌ই হচ্ছে না উনি আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে না মেরে উল্টা আমাকে অবাকের চরম সীমায় পৌঁছে দিয়ে। আমাকে এমন একটা সুন্দর মুহূর্ত উপহার দিল।

আমি নিবিড়ের দিকে হাসি উজ্জ্বল মুখে তাকাতেই নিবিড় আমার দিকে একটা বাক্য ছাড়লো, ‘ এই হাসিটা যে কোন পুরুষের রাতের ঘুম হারাম করার জন্য যথেষ্ট। এমন পাগল করা হাসি আর কারো সামনে হেসো না প্রেয়সী। তখন তোমাকে সত্যিই আমার এই ছাদ থেকে ফেলে দিতে ইচ্ছা করবে। তখন আমার হাত যত শক্ত করেই ধরো তুমি কিন্তু বাঁচতে পারবে না।’

আমি বোকা চোখে তাকিয়ে নিবিড়ের এমন আবুল তাবুল কথা শুনছি। এসব কথা আমি জাস্ট সহ্য করতে পারছি না। এসব আমি কি শুনছি। আমি কি নিজের কানে ভুল শুনছি। নাকি স্বপ্ন দেখছি আচ্ছা এমন ভয়ানক স্বপ্ন কেন দেখছি। নাকি নিবিড়কে কে কোন ভুতে টুতে ধরেছে তাই তিনি উল্টাপাল্টা কথা বলছে।

এমন তো হতেই,পারে এই নির্জন জায়গায় আসতেই হয়তো এখানে থেকে কোন একটা ভূত নিবিড়ের ঘাড় চেপে বসেছে আর নিবিড় নয় এইসব কথাবার্তা সেই ভূত বলছে। জীবন আমি ভুতে ভয় করিনি সব সময় সাহসিকতার সঙ্গে থেকেছি। কিন্তু আজকে নিজের সামনে ভূতরূপে নিবিড় কে দেখে আমি ভয়ে আধমরা হয়ে উঠছি ভয়ে আমার সাথে শরির থরথর করে কাঁপছে।

আমি নিবিড়ের দিকে ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে আছি। আমার সারা শরীর থর থর করে কাঁপছে নিবিড় হঠাৎ করেই নিজের এক হাত আমার বাম গালে স্পর্শ করতেই আমার কাঁপা কাঁপি আরো বেড়ে গেল ভয়ের চোটে। আমি এক চোখ বন্ধ করে নিবিড় মানে ভুতের হাতটা নিজের গালে দেখে আমার অজ্ঞান হওয়ার উপক্রম। নিবিড় আমার গাল স্পর্শ করে বলল, ‘ কি হলো কাঁপছো কেন?’

কথা বলতে দেরি হয়েছে আমার অজ্ঞান হতে দেরি হয়নি। আমি নিজের শরীরে ভার ছেড়ে দিলাম। নিবিড় আমাকে দু’হাতে ধরে অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
নিবিড় আমার অবস্থা দেখে বিস্মিত কন্ঠে বলল, ‘ ছোঁয়া হোয়াট হ্যাপেন্ড টু ইউ?’

আমি তো আর তার কথা শুনার অবস্থাতে নাই। নিবিড় ছোঁয়া কে ডেকে ও যখন সারা শব্দ পেল না। তখন ও নিশ্চিত হয়ে গেল ছোঁয়া অজ্ঞান হয়ে গেছে। হঠাৎ অজ্ঞান কেন হলো সেটাই ওর মাথায় আসছে না। নিবিড় ছোঁয়া কে পাঁজকোলে তুলে চিলেকোঠার রুমে নিয়ে গেল।

এদিকে আবির দৌড়ে এসে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বলল, ‘ কি হয়েছে ভাইয়া ভাবি অজ্ঞান কেন? কি করেছো তুমি? প্রেম করতে গিয়ে অজ্ঞান করে ফেললে তোমাকে দিয়ে দেখি কিচ্ছু হবে না।’
নিবিড় কড়া চোখে তাকালো আবিরের দিকে আবির ভাইয়ার কঠিন দৃষ্টি দেখে আমতা আমতা গলায় বলল, ‘ আমি কিছু বলিনি। আমি যাই তুমি ভাবির সেবা যত্ন করো কেমন।’

আবির নিবিড় কে রেখে চলে গেল। ভাইয়া ক্ষেপেছে এখানে থাকা যাবে না। আবির ছাদে আর না দাঁড়িয়ে নিচে যাওয়া ধরলো তখন কারো সাথে ধাক্কা খেলো।
‘ কেরে আমারে ধাক্কা দিলি!’
পাশ থেকে লিহান বলল, ‘ আমাকে তুমি ধাক্কা দিলে কেন?’
আবির বলল, ‘ ও তুমি সরি‌। দোষ দুজনের ই। ‘

লিহান হেসে উপরে উঠা ধরল তা দেখে আবির চমকে উঠল নিবিড়ের কথা ভেবে। ও ছুটে গিয়ে লিহানের হাত ধরে বলল, ‘ ক‌ই যাও ব্রো?’
লিহান বলল, ‘ ছাদে যাব ছোঁয়ার সাথে আড্ডা দিতে।’
আবির চোখ কপালে তুলে বলল, ‘ কিহহ না না এখন তো যাওয়া যাবে না। তুমি আমার সাথে নিচে চলো। তোমার সাথে আড্ডা আমি দিব।’

লিহান সন্দেহ চোখে তাকিয়ে বলল,’ আমি কি বলেছি তোমার সাথে আড্ডা দিব? আমার ছোঁয়ার সাথে দরকার আছে।’
আবির আটকে বলল, ‘ ছোঁয়া আপুকে এখন তুমি কোথায় পাবে? ছোঁয়া আপু তো ঘুমিয়ে পড়ছে আমি তো গিয়েছিলাম। আপু বলল এখন ঘুমাবে কেউ যেন ডিস্টার্ব না করে। তাইতো আমি চলে আসলাম।’

অবাধ্য প্রেম পর্ব ৩১

লিহান বলল, ‘ আমি গিয়ে শুনে আসি। তুমি আমাকে আটকাচ্ছো কেন? ও আমার সাথে গল্প না করলেও আমি এখন ছাদে যাবে এমনিতেই।’
আবির কোনভাবে আটকাতে পারল না লিহান কে লিহান গটগট করে উপরে চলে গেল।

অবাধ্য প্রেম পর্ব ৩৩