অবাধ্য প্রেম পর্ব ৩৩

অবাধ্য প্রেম পর্ব ৩৩
নন্দিনী নীলা

নিবিড় ছোঁয়ার গালে ছোট ছোট থাপ্পর মেরে ডাকছে ছোঁয়া ছোয়া বলে আর ছোঁয়া বেহুশ হয়ে পড়ে আছে। নিবিড় বিরক্তি কর চোখে ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে আছে মন চাচ্ছে ওর আবিরকে এই ছাদ থেকে ফেলে দিতে‌।

এইসব প্ল্যান আর বুদ্ধি তো ওরই ছিল। এখন কি হলো? এই গাঁধী তো বেহুঁশ হয়ে পড়ল। রাগে মন চাচ্ছে দুটো কেই আচার মারতে। ছোঁয়ার কর্মকান্ডে এমনিতেই নিবিড়ের বিরক্তে সীমা নাই তার উপর আজকের এই কান্ডে ওর মাথা ফেটে যাচ্ছে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

নিবিড় ছোঁয়ার মুখের দিকে দৃষ্টি ফেলে দাঁতে দাঁত চেপে বলল, ‘ওপেন ইউর আইস।’
নো রেসপন্স
নিবিড় ছোঁয়ার গাল থেকে হাত সরিয়ে এক আঙুল দিয়ে অজান্তেই ছোঁয়ার ঠোঁট স্পর্শ করতেই ছোঁয়া চোখ পিটপিট করে তাকালো। নিবিড় আঙ্গুল মুষ্টিবদ্ধ করে হাত সরিয়ে ফেলল।
ছোঁয়া চোখ মেলে তাকিয়ে সবার আগে ভূত বলে চিৎকার করে উঠলো।

নিবিড় বিরক্তিকর গলায় বলল,’ ভীতুর ডিম একটা।’
ছোঁয়া ধরফর করে শোয়া থেকে উঠে বসলো। বড় বড় চোখ করে নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে ভয় একদম বিছানার এক কোনায় চলে গেল নিবিড় থেকে যথেষ্ট দূরত্বে।

নিবিড় কপালে ভাঁজ ফেলে ছোঁয়ার কান্ড কারখানা দেখছে। এ কোনায় জোরসরো হয়ে বসে থরথর করে কাঁপছে। নিবিড় বোকা চোখে তাকিয়ে আছে ছোঁয়ার ভয়ার্ত দৃষ্টির দিকে। ছোঁয়া ওকে দেখে কেন ভয় পাচ্ছে সেটাই ওর মাথায় আসছে না। কিন্তু ওকে দেখে ভয় পাওয়া দেখে নিবিড়ের রাগে মন চাচ্ছে ছোঁয়া কে থাপ্পড় মেরে ভয় পাওয়ার ভূত মাথা থেকে দূর করতে‌।

‘ ছোঁয়া এদিকে এসে তোমার এই নাটক জাস্ট বিরক্তিকর লাগছে। তখন ওই ভাবে অজ্ঞান হয়ে গেলে কেন? চুপ করে আমার দিকে ওমন অবাক নয়নে তাকিয়ে আছে কেন? জীবন আমাকে দেখনি। এমনিতে তো দেখলেই ঝগড়া করার জন্য উঠে পরে লাগ‌। আজকে দেখে ভয় পাচ্ছ? তুমি আবার আমাকে দেখে ভয় ও পাও?’ দাঁতে দাঁত চেপে কঠোর গলায় বলল নিবিড়।

আমি ভীতু নয়নে নিবিড় এর দেখে তাকিয়ে ছিলাম কারণ নিবিড়কে দেখলেই আমার এখন মনে হয় আমার সামনে ভূত বসে আছে। কিন্তু নিবিড়ের কথা শুনে আমার ভয়টা কিছুটা কাটল‌। কারণ ভূত তো আমার সাথে অন্যভাবে কথা বলছিল। কথার ধরনই ছিল অন্যরকম। কিন্তু এখন তো নিবিড় আসল রূপে চলে এসেছে। আমার সাথে সে আগের মত রাগ নিয়ে কথা বলছে। আমি চোখ বন্ধ করে দোয়া দরুদ পড়ে ভয় কাটানোর উপায় খুঁজছিলাম।

তারপর বিছানা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে নিবিড়কে উদ্দেশ্য করে বললাম, ‘ আপনি আমার রুমে কি করছেন?’
নিবিড় বিছানা আয়েশ করে বসে বলল, ‘ যেভাবে ঘাম ছেড়ে অজ্ঞান হয়েছিলে। রুমে না নিয়ে এসে উপায় ছিল না। আর তুমি নিশ্চয়ই অজ্ঞান অবস্থায় হেঁটে হেঁটে রুমে আসতে পারো নি‌। তার জন্য তো সেই আমার কোলে উঠতে হয়েছে।’
আমি চোখ বড় বড় করে বললাম, ‘ আপনি আমাকে কোলে তুলে রুমে এনেছেন?’

নিবিড় দাঁত কিড়মিড় করে বলল, ‘ ইয়েস‌। এবার একটা সত্যি কথা বলতো, ওইরকম একটা সুন্দর মুহূর্তে তুমি কি দেখে এত ভয় পেলে আর অজ্ঞান হয়ে সব কিছু বানচাল করলে?’
আমি নিবিড়কে বললাম,’ আপনি চলে যান। আমি কিন্তু আবার অজ্ঞান হতে পারে তাই বলছি ভালই ভালই চলে যান।’
নিবিড় কপাল কুঁচকে বিস্মিত গলায় বলল, ‘ হোয়াট? আমাকে দেখে ভয় কেন পাচ্ছ!’

‘ আপনাকে ভূতে ধরেছে আপনি কেমন পরিবর্তন হয়ে গেছেন। ওই যে তখন কি সব উল্টাপাল্টা কথা বললেন। ওসব আপনি বলতে পারেন না অসম্ভব! আমি শিউর আপনাকে ভূতে ধরেছে আর সেই ভূত এমন অদ্ভুত বিহেভ করছে!’
নিবিড় মাথায় হাত রেখে আছে। আমার এমন উদ্ভব চিন্তা ভাবনায় ও শঙ্কিত।

লিহান উপরে এসেছে। উপরে আসতেই ওর ফোনে কল আসায় ও ছাদে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বললে ১৫ মিনিটের মতো‌। ফোন কেটে ও ছোঁয়ার রুমের দিকে গেল।রুমের কাছাকাছি আসতেইও ভেতর থেকে দুজনে মানুষের কথোপকথন শুনতে পেল।

দরজা চাপানো ছিল ও কে আছে ভেতরে দেখতে দরজা একটু ফাঁক করে ভিতরে উঁকি মেরে নিবিড় আর ছোঁয়াকে খুব কাছাকাছি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল। কি যেন কথা বলছে দুজনে কথাগুলো শুনতে পেল না ও।
আবির লিহানের হাত টেনে দরজার কাছ থেকে সরিয়ে নিয়ে বলল, ‘ ব্রো এসব কি করছো। ‘
লিহান বলল, ‘ ভেতরে কি হচ্ছে?’

‘ কি হবে কিছু না তো। চলো আমার সাথে। তোমাকে বারণ করা সত্তেও আসলে তাই না তুমি তো ..
‘ তুমি আমায় মিথ্যা কথা বলেছিলে কেন ছোঁয়া তো ঘুমায় নি উল্টা আরেকজনের সাথে গল্প করছে।’
‘ আমি নিজেও তো জানতাম না।’
‘ তোমার ভাইয়া ছিল।’

‘ তাই। অবাক হওয়ার ভান ধরে বলল আবির।
লিহান বলে, ‘ আমি ভেতরে যাব টেনে আনলে কেন? জরুরী কথা আছে ছোঁয়ার সাথে আমার।’
‘ওখানে যাই‌ও না গেলে কিন্তু তুমি ধমক খাবে‌। পরে বলিও যা বলার।’
লিহান শুনল না ধমক খাওয়ার জন্য চলে গেল।

নিবিড় হাহাহা করে হাসছে‌। আমি নিবিড়ের দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে আছি।
নিবিড় আমাকে কে ব্যঙ্গ করে বলল, ‘ এই বার নিজেই ভাবো তোমাকে কি আমি এমনি এমনি বলি মাথা মোটা। এমন উদ্ভব চিন্তা ভাবনা তোমার দ্বারাই সম্ভব।’

আমি গাল ফুলিয়ে কিছু বলতে যাব তখনই দরজা খোলে লিহান বলে, ‘ ছোঁয়া আসতে পারি?’
আমি সিটকে উঠে দরজার দিকে তাকালো। লিহান এখানে কি করছে এখন! ও আমার সাথে নিবিড় কে রুমে দেখলে রঙ ভাবতে পারে। এটা আবার আপুকে বলে দিলে সর্বনাশ হবে‌।
আমি গলা উঁচিয়ে বললাম,’ না না, কোন দরকার?’

লিহান না শুনে খুব অপমানিত বোধ করল। তবু ও বলল, ‘ হ্যাঁ একটু দরকার ছিল তুমি কি বিজি?’
আমি নিবিড়ের দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললাম, ‘হ্যাঁ তোমার সাথে কাল কথা বলি।’
লিহান আচ্ছা বলে চলে গেল। আমি ভাবলাম হয়ত লিহান নিবিড় কে দেখতে পায় নাই। আমি যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। এদিকে আমি জানতে পারলাম না লিহান আগে আমাদের দুজনকে দেখে নিয়েছে।

নিবিড় ও সাথে সাথে দরজার খুলে বের হতে যাচ্ছিল আমি পেছন ডেকে বললাম, ‘ আপনি একটু পরে যান আপনাকে দেখে নেবে।’
‘দেখুক আমি কাউকে ভয় পায় নাকি? এটা আমার বাসা আমি এখানকার যেখানে খুশি সেখানে যাব।’
‘ ঘাড় তেরা একটা‌!’

পরদিন সকালে থেকে বিশাল খাবারের আয়োজন। আত্মীয়-স্বজন আসে এজন্য তাদের জন্য বিশাল খাবারের আয়োজন করা হয়েছে। আজকে অবশ্য আমাকে রান্না করতে হচ্ছে না। আমাকে কেন বাসার কাউকে রান্না করতে হচ্ছে না। বাবুর্চি করছে এখন সব রান্নাবান্না।

কিন্তু তবু ও আমি ফ্রি নাই আমাকে তো পেয়েছে একজন ফ্রী কাজের লোক। দায়িত্ব পালন করব রাজি হয়েছিলাম এদের সাহায্য করব। এখানে আমি এখানে রাজি হয়ে ফেঁসে গেছি। কি করব মুখ বুজে সব কিছু সহ্য করতে হচ্ছে। কেউ কফি চাচ্ছে কেউ চাচ আছে কেউ জুস চাচ্ছে ঘুরতে ঘুরতে মনে হয় পাগল হয়ে যাব।

আর এদিকে আশার তো পাত্তাই নাই।‌ আশাকে তো অন্য কাজ করতে হচ্ছে বাসা তো সাজানো হয়েছে হলুদের প্যান্ডেল সাজানো বাকি আছে গায়ে হলুদের স্টেজ সাজানো হচ্ছে সেখানে আশা আছে। সেখানে কত কিছু যে লাগছে ও সেগুলো করছে।

তাহমিনা আপু কে তো যে যেখানে পাচ্ছে বসিয়ে রেখে কেউ ভালো কথা বলছে কেউ কটু কথা বলছে। এত বছর বিয়ে করেনি কেন! তার বাড়ির লোক কোথায়! কেউ বরের বাড়িতে থেকে বিয়ে করে নাকি। কিন্তু যে যাই বলুক রাফসান কাকি ঢাল হয়ে তার পাশে দাড়িয়েছে এটা জাস্ট আমাকে মুগ্ধ করেছে।

আমি তো বিরতির করে একটা কথাই বলছিলাম,হে আল্লাহ রাফসান কাকার মত এমন একজন কেয়ারিং জীবনসঙ্গিনী পেলে জীবনটা ধন্য হয়ে যেতো।
সেই মুহূর্তে নিবিড় সেখানে কিভাবে এলো জানিনা আমি তখন গরম পানি করছিলাম চা বানানোর জন্য। নিবিড় এসে আমার কানের কাছে বলে, ‘এর থেকেও বেটার কেউ তোমার জন্য অপেক্ষা করছে!’

আমি নিবিড়কে দেখে বলি, ‘আপনি এখানে কি করছেন?’
নিবিড় বলল, ‘ আমার জন্য এক কাপ কফি করো তো।’
আমি তেজি কন্ঠে বললাম, ‘ কে আমার জন্য অপেক্ষা করছে?’
নিবিড় না জানার ভান করে বলল,’ আমি কি করে জানবো?’
আমি নাক পাটা ফুলিয়ে বললাম, ‘ তাইলে আপনি বললেন কেন?’

নিবিড় বলল, ‘ আমার মনে হয় সবার জন্যই আল্লাহ তায়ালা বেটার কাউকে চুজ করে রেখেছে তাই বলেছি।’
‘ আমি চা করছি আর এই পর্যন্ত তিনবার চা করলাম। এখন আমি কফি করতে পারব না। নিজেরটা নিজে করে নেন। আমি আপনাদের বাসার কাজের বুয়া না আমাকে হুকুম করবেন না।’

অবাধ্য প্রেম পর্ব ৩২

নিবিড় আমার তেজি কন্ঠ শুনে হাহাহা করে হাসছে‌। তারপর সত্যি নিজেই বানাতে লাগল কফি। আমি আড়চোখে দেখলাম।

অবাধ্য প্রেম পর্ব ৩৪