অবাধ্য প্রেম পর্ব ৩৪

অবাধ্য প্রেম পর্ব ৩৪
নন্দিনী নীলা

নিবিড় কে রেখেই আমি চায়ের ট্রে হাতে বাইরে চলে এলাম। সবাইকে চা দিয়ে ট্রে হাতে কিচেনে আসলাম রাখতে। তখনো দেখি নিবিড় কফি হাতে দাঁড়িয়ে আছে রান্নাঘরে। তিনি হয়তো জানতে আমি আবার আসবো। তাই ইচ্ছে করে দাঁড়িয়ে আছে। আমি নিবিড় কে ইগনোর করে ট্রে হাতে চলে গেলাম ভেতরে। ট্রে রেখে পেছনে ফিরতেই দেখি নিবিড় আমার দিকে কফির মগটা ধরে দাঁড়িয়ে আছে। আমি কুঁচকানো চোখে কফির মগ টার দিকে তাকিয়ে নিবিড়ের মুখে দেখে তাকালাম।

কিছু বলতে যাব তার আগে নিবিড় বলে উঠলো, ‘ আমার বানানো কফি খেয়ে দেখ। এই স্বাদ তোমার মুখে লেগে থাকবে। তুমি তো কিপটা আমাকে এক কাপ চা খাওয়ানোর ভয়ে দরজা আটকে বসেছিলে। আমি তোমার মত না। নাও ধরো।’

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আমি দাঁত কিড়মিড় করে বললাম, ‘ হ্যাঁ আমি কিপটা। আমি কার ও টা খাইও না কাউকে দেয় ও না। এবার সরুন আপনার কফি নিয়ে। আমাকে জ্বালাতে আসবেন না। আপনি এমন অদ্ভুত ব্যবহার কেন করছেন সেটা আমার মাথায় আসছে না। এত ভাল বিহেভ করছেন কেন? আপনার মতলব কি সত্যি করে বলেন? হুট করেই আলগা রাগ করা মানুষটা এমন শান্ত স্বভাবের হয় কি করে?’

নিবিড় ঠোঁটে রহস্যময় হাসি এনে বলল,, ‘মগ টা ধরো, খেতে খেতে নয় চিন্তাভাবনা করে বের করো।’
আমি অবজ্ঞা স্বরে বললাম, ‘ আমার তো খেয়ে দেয়ে কাজ নাই আপনাকে নিয়ে চিন্তা ভাবনা করে সময় নষ্ট করব।’
নিবিড় জোর করে আমার হাত টেনে কফির মগ ধরিয়ে চলে গেল। আমি হাঁ করে নিবিড়ের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে র‌ইলাম। লোকটা এত জেদি উফফ কি বলবে জোর করে কফি আমাকে দিয়ে গেল ফাজিল লোক।

কফির মগ হাতে দাঁড়িয়ে আছি কি করবে এখন এই কফি। এটা ফেলে দেব? ধুর ভাল্লাগে না। যত‌ই হোক এটা খাবার তো এটা নষ্ট করব। নিবিড়ের জিনিস আমি কেন খেতে যাব? নিবিড় এটা আমাকে কেন দিল।

আকাশ পাতাল ভেবে কোন দিশা না পেয়ে কফি মগ ঠোঁটের কাছে এগিয়ে নিলাম। অস্বস্তি নিয়েই এক চুমুক দিলাম মগে। মুখে দিয়ে এর স্বাদ পেলাম আসলেই ভালো হয়েছে। আমার মুখ থেকে তৃপ্তি স্বরে বেরিয়ে এলো…. – বাহ দারুন তো। নিবিড় দেখছি ভালোই এক্সপার্ট কফি করতে।

আমি আরেক চুমুক দিতে মগটা মুখের কাছাকাছি নেব তখনি ঝড়ের বেগে ছুটে এলো নিবিড় আর আমার হাত থেকে এক প্রকার কেড়ে নিল মগটা। আচমকা কান্ড দেখে আমি চমকে উঠলাম। বিহ্বল চোখে নিবিড়ের দিকে তাকালাম। এটা কি হলো? আমার বোধগম্য হচ্ছে না। নিজে সেধে দিল আবার নিজেই কেড়ে নিল এটা কেমন ভদ্রতা?

আমি দাঁতে দাঁত চেপে বললাম, ‘ আপনি কফি কেড়ে নিলেন কেন?’
নিবিড় বলল, ‘ সো সরি এটা আমার। আমি ভুলে আমার টা তোমাকে আর তোমার টা আমি নিয়ে গেছিলাম। তাই চেঞ্জ করতে আসছি।’

আমি রাগ সংবরণ করে বললাম, ‘ তাই বলে এমন করে কেড়ে নিবেন। এজন্য আমি নিচে চাইনি আপনার জিনিস। জোর করে দিয়ে এখন কেড়ে নিচ্ছেন।’
‘ তুমি ভুল বুঝছো। এমনটা না।’

‘ আচ্ছা মানলাম তাই বলে চেঞ্জ করতে এসে কাড়াকাড়ি করবেন। আম–
আমার কথা থেমে গেল নিবিড় আমার চুমুক দেওয়া কফিতে অনবরত চুমুক দিচ্ছে। আমি যে পাশ দিয়ে চুমুক দিয়েছি সেই পাশ দিয়েই দিচ্ছে। আমার গলা শুকিয়ে এলো। বুক ধুকপুক করছে।

নিবিড় শান্ত গলায় বলল, ‘ কেড়ে নিয়েছিল কারণ তুমি চুমুক দিতে চেয়েছিলে। কেড়ে নেওয়ায় দিতে পারো নি।’
বলে নিজের হাতের কফি আমার হাতে দিয়ে আমার খাওয়া কফি খেতে খেতে চলে গেল নিবিড়।
আমি হতবুদ্ধি চোখে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি।

এই কফি আর আমি খাব না। মস্করা পেয়েছে নাকি। আমি কফি ফেলে দিলাম। তারপর গাল ফুলিয়ে বেরিয়ে এলাম। তাহমিনা আপু আমাকে টেনে নিজের রুমে নিয়ে গেল। আর আমার হাতে একটা ব্যাগ দিয়ে বলল, ‘ এটা তোর জন্য। রাফসান এনেছে।’

আমি অবাক গলায় বললাম, ‘ কি আছে?’
‘তোর জন্য দুইটা শাড়ি। রাফসান নিজে পছন্দ করে এনেছে।’ বলেই মিষ্টি করে হাসলো।
‘আমি এটা নিতে পারব না। আমার হলুদ শাড়ি আছে। আমি সেটাই পরব। এসব আমাকে দিও না।’ আমি নিতে না চেয়ে বললাম।

তখন রাফসান কাকা এলো রুমে আর আমার কথা শুনে বলল, ‘ ছোঁয়া তোমার জন্য আজ আমি তাহু কে পাচ্ছি। তুমি হেল্প না করলে তাহু কে আমি মানাতে পারতাম না। আজ আমাদের বিয়েটা হচ্ছে তোমার জন্যে‌ই। আমি অনেক ভালোবেসে এই সামান্য জিনিস তোমার জন্য এনেছে। এটা না নিলে আমি খুব কষ্ট পাব।’

‘ আমি আবার কি করলাম।‌ আপু আপনাকে ভালোবাসে তাই ফিরে এসেছে। এই সব কিছু আপনাদের ভালোবাসার জন্য হচ্ছে।’
‘ তোমাকে এটা নিতেই হবে।’

আমি পরলাম মুসিবতে। কাকা আমাকে না দিয়ে ছাড়বেই না। এটা নিতেও ইচ্ছে করছে না, আবার এমন কথা বলছে না নিয়েও পারছি না। রীতিমতো ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করা শুরু করেছে। অবশেষে আমি হার মানলাম।

ব্যাগ উপরে রেখে এসে ব্রেকফাস্ট করলাম সবাই এক সাথে। মাহিকে দেখলাম সেই মেয়েটার সাথে বসে খাচ্ছে। ওই মেয়েটার নাম এখনো আমি জানি না। মেয়ে আমার দিকে অগ্নি চোখে তাকিয়ে আছে। এই রাগের কারণ আমি জানি নিবিড় আমার পক্ষ নিয়েছিল বলে। মেয়েটা মাহিকে আমার দিকে তাকিয়ে কি যেন জিজ্ঞেস করছে। আমি নিশ্চিত আমার সম্পর্কে জানছে।

লিহান ফট করে আমার পাশে বসে বলল, ‘ গতকাল রাতে তুমি নিবিড়ের সাথে রুমের ভেতরে কি করছিলে?’
আমি চমকে উঠে বললাম, ‘ নিবিড় আমার রুমে থাকবে কেন? কি বলছো?’
লিহান বলল, ‘ আমাকে তাড়িয়ে দিলে মিথ্যা বলে। আমি তো আগে দেখেছি রুমে তুমি আর নিবিড় কি যেন গল্প করছিলে। কিন্তু আমাকে যেতে দিলে না।’

আমি শুকনো ঢোক গিলে কাঁচুমাচু মুখে করে লিহানের দিকে তাকিয়ে আছি। কি বলব বুঝতে পারছি না। লিহান নিবিড় কে আমার রুমে দেখে নিয়েছে আমি তো বুঝতেই পারি নি। কি সর্বনাশ! ও তো রঙ কিছু ভাববে এখন। সব দোষ ওই নিবিড়ের।

আমি আমতা আমতা করে কিছু বলতে যাব তখন নিবিড় আর আবির আমার টেবিলে এসে বসল চেয়ার টেনে। আমি রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি নিবিড়ের দিকে।
আবির বসেই লিহান কে বলল, ‘ ব্রো তোমার প্লেট ক‌ই। খাবার ছাড়া খাবার টেবিলে বসে আছো কেন?’
লিহান বলল, ‘ আমি খাওয়া শেষ করে এসেছি।’

‘ ওহ তা ভাবির সাথে কি কথা বলছিলে ব্রো?’
আমি ও লিহান দুজনেই চোখ কপালে তুলে আবিরের দিকে তাকালাম। আবির আমাকে ভাবি বলে ইশারা করে জিজ্ঞেস করেছে। আমি তো বিষ্ময় এ হতভম্ব। এই পোলা বলে কি?… আমি ওর কোন কালের ভাবি?

আমি রাগে গজগজ করতে করতে বললাম, ‘ এই আমি তোমার কোন কালের ভাবি? আমাকে ভাবি বলছো কেন?’
লিহানের মাথায় তো কিছুই ঢুকছে না ও নিবিড়ের দিকে সন্দেহের চোখে তাকিয়ে আছে। নিবিড় আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তা দেখে লিহান কিছু সন্দেহ করছে। আর আমি আবিরের সাথে তর্ক বিতর্ক করছি।

এইদিকে মাহি আর ওই মেয়েটাও আমাদের কাছে এসে দাঁড়ালো।
মাহি এসেই বলল, ‘ সবাই এখানে কি করছো?’
নিবিড় বলল, ‘ খাচ্ছি চোখে দেখিস না‌।’
মাহি বলল, ‘ ভাইয়া মাইশা আপু বলল তোমার সাথে নাকি কি কথা বলবে।’

নিবিড় মাইশা মানে যে মেয়ে আমার সাথে ঝগড়া করেছিল তার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ বল’
মাইশা বলল, ‘ ব্রো এদিকে আয়। ওদের সামনে বলব না।’
নিবিড় বলল, ‘ তাহলে পরে বলিস। এখন কোথাও যেতে পারব না।’

মাইশা অভিমানী গলায় বলল, ‘ এই মেয়ের সাথে বসে খাচ্ছো কেন? আমাদের টেবিলে এসে বসো।’
নিবিড় রেগে গিয়ে বলল, ‘ তুই এখান থেকে যাবি?’
ধমক খেয়ে মাইশা আর মাহি দৌড়ে পালিয়েছে।

আমি এতজন আসা যাওয়া আর রং ঢং দেখতে দেখতে খেতেই পারলাম না। এতো গুলো ছেলের সামনে বসে কি খাওয়া যায় আমি প্লেট হাতে উঠে দাঁড়ালাম তারা দেখে আবির বলল , ‘ ক‌ই যাও আপু?’
আমি বললাম, ‘ খেতে যাই‌’
আবির বলল, ‘ এখানে বসেই খাও। কোথায় যাও?’

অবাধ্য প্রেম পর্ব ৩৩

‘তোমাদের যন্ত্রণায় কি আমি খেতে পারব? আমাকে না জ্বালিয়ে তো তোমরা দুই ভাই স্বস্তি নেবে না। তোমরাই থাকো আমি যাই।’ দাঁতে দাঁত চেপে বলে চলে এলাম বিরক্তিকর মুখে।

অবাধ্য প্রেম পর্ব ৩৫