অবাধ্য প্রেম পর্ব ৩৫

অবাধ্য প্রেম পর্ব ৩৫
নন্দিনী নীলা

আমি নিজেই লিহানকে চারপাশে খুজছি। সকালের পর আর‌ ওর দেখা পেলাম না। তখন আমি লিহান কে জিজ্ঞেস করতে পারলাম না ও কেন গিয়েছিল। নিবিড় আর আবির কে দেখে তো আমি রেগেই সেখান থেকে চলে এসেছিলাম।
তারপর বাকিটা সময় আমার কেটেছে তাহমিনা আপুর সাথেই আপু আমাকে তার রুমে নিয়ে রেখেছিল।

এত আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে আপুর নাকি খুব আনইজি লাগে। এজন্য বলছিল তুই বাসার কি কাজ ধরেছিস। এগুলো রেখে আমার সাথে থাকতো এই এত মানুষের দৃষ্টি আর এত মানুষের কথাবার্তা আমার ভালো লাগেনা। আমি সব সহ্য করছি সব করছি তো আপুর জন্য ই। তাহমিন আপুকে আমি নিজের বড় বোনের মত ভাবি।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

নিজে বোনের বিয়ে এজন্য আমি সবকিছু নিজে হাতে করার চেষ্টা করছি। যাকে হ্যাপি রাখার জন্য এসব করছি সেই যদি এসব হ্যাপি না থাকে তাহলে আর এসব করে আমার লাভ কি‌। সবকিছু ছেড়ে ছুঁড়ে আমি আপুর সাথে বসে গল্প করছিলাম আর আপুর মন ভালো করার চেষ্টা করছিলাম।

আপুর মনটা ভালো নেই আমি জানি আপু মনে মনে খুব দুশ্চিন্তায় আছে। অনেকে আপুকে নিয়ে রং কথা বলছে। এই বিয়েটা নিয়ে। আপুকে ডিপ্রেশন থেকে বের করে আনার সর্বোচ্চ চেষ্টা আমি করলাম। অনেক মজার মজার গল্প বললাম। আপুকে হাসিয়ে তারপরেই তাকে বাথরুমে ঢুকিয়ে দিয়ে আমি রুম থেকে বেরিয়ে লিহানকে খুঁজছি।

এই দুপুরবেলা কোথায় গেছে কে জানে। আমিও উপরে এসে গোসল করে নিলাম। খোলা চুলে আমি রুম থেকে বেরিয়ে ছাদের একখান দাঁড়িয়ে আছি। আকাশ মেঘলা সকাল থেকে আর বৃষ্টি হয়নি মনে হচ্ছে বিকেলে বৃষ্টিটা নামবে। গরম ছেড়েছে খুব। আকাশে মেঘের ছোটা ছুটি চলছে। যেকোনো সময় বৃষ্টি নামতে পারে।

মেঘ ঘুরুম ঘুরুম করছে। ছাদে এখন কেউ নেই বাগানে কয়েকজন বসে আছে প্যান্ডেলে বাচ্চারা। আর সবাই চলে গেছে গোসল করতে গোসল করে সবাই সাজগোজ করবে। পার্লারের লোক চলে এসেছে আপুর গোসল শেষ হলেই সাজানো শুরু হবে। আমি চুল হালকা শুকিয়ে খোপা করে নিচে আসলাম তখনই আমার লিহানের সাথে দেখা হলো।

আমি লিহান কে দেখেই ডেকে উঠলাম, ‘ এই লিহান! কোথায় ছিলে? সেই কখন থেকে তোমায় খুজতেছি?’
লিহান দাঁড়িয়ে পরে বলল, ‘ বাবা মাকে আনতে গেছিলাম। নিয়ে আসলাম এখন। কেন খুঁজছিলে কেন?’
আমি কাছে এসে বললাম, ‘ ও আচ্ছা! কোথায় তোমার বাবা-মা?’

‘ তাহু আন্টির রুমে।’ তাহমিনা আপুর রুমে দেখিয়ে বলল।
‘ ওহ শোনো যেখানে আমি তোমাকে খুজছিলাম। তুমি গতকাল রাতে আমার কাছে কেন গিয়েছিলে?’
‘গিয়েছিলাম একটা দরকারে। ‘

আমি বললাম, ‘কি দরকার সেটাই তো জিজ্ঞেস করছি! বলো..!!’
‘ এখন আর প্রয়োজন নাই সেটা বলার। কাজ হয়ে গেছে তোমাকে যে জন্য খুঁজছিলাম। তুমি তো মিথ্যা বলে আমার কথাটাই শুনলে না।’

আমি অপ্রস্তুত হয়ে বললাম, ‘ আসলে নিবিড় এর সাথে আমি না বিয়ে নিয়ে একটা গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করছিলাম। নিবিড় বলেছিল এখন যাতে কেউ না আসে। এজন্য তুমি যখন গেলে ও তোমাকে আলোচনা নিতে চাইনি। এজন্য আমি তোমাকে মিথ্যা বলেছিলাম সরি।’

লিহান বলল, ‘ ইটস ওকে। আমি গোসল করব বাই।’
আমি নিচ তলায় এসে দেখি নিবিড়ের দুই মামি ফল, মিষ্টি নিয়ে বসে আছে‌। হলুদের জন্য যে ফল দিয়ে নানান জিনিস বানিয়ে সাজানো হয় সেইগুলো বানাচ্ছে। কিন্তু সুন্দর হচ্ছে না আমি তাদের পাশে গিয়ে সোফায় বসে দেখতে লাগলাম তাদের বানানো। তরমুজ কেটে ফল দানি বানানোর চেষ্টা করছে পারছে না।

কেটেকুটে একটা তরমুজি নষ্ট করে ফেলল তা দেখে আমি বললাম, ‘আপনাদের সমস্যা না থাকলে আমি বানিয়ে দিতে পারি। আমি প্রায়ই সব‌ই বানাতে পারি।’
এদের বলতে দেরি দুজনের সবকিছু ছেড়ে ছেড়ে উঠতে দেরি হলো না। খুশিতে গদগদ হয়ে দুজনেই সরে বসে আমাকে বসতে বললাম আমি বসলাম। দুই অকর্মা কিছু পারে না সবকিছু আমাকে বানাতে হলো।

ঠিক দুই ঘণ্টা বসিয়ে আমাকে দিয়ে ইনারা ১০ রকমের আইটেম বানালো। বসে বানাতে বানাতে আমার কোমর ব্যথা হয়ে গেছে। আমি কাঁদো কাঁদো মুখ করে বসে আছি। তারা কখন আমাকে ফেলে চলে গেছে তাদের নাকি এখন শাড়ি পড়তে হবে অনুষ্ঠানের জন্য সাজতে হবে।

পাঁচটা বেজে গেছে বানাতে বানাতে আমি এখানে এসেছিলাম তিনটায়।
কোথা থেকে নিবিড় এসে ঠাস করে আমার বসে পরল। আর আমার সামনে থাকা আনারসের গায়ে লাগানো মিষ্টি টান দিয়ে নিজের মুখে পড়ে নিয়ে সব কিছুর দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ বাহ সুন্দর হয়েছে তো‌। এই সব কি তুমি একা সাজিয়েছ?’

আমি ক্লান্ত গলায় বললাম, ‘আমি ছাড়া কি এখানে আর কাউকে দেখতে পাচ্ছেন? আমি বানিয়েছি বলেই তো আমার এই অবস্থা দেখতে পাচ্ছেন না এখন আমি উঠতে পারছি না হাত পা আমার ব্যথা হয়ে গেছে। এত মায়া দয়া হীন মানুষ হয় আগে জানতাম না।

কি সুযোগ সন্ধানী আপনার দুই মামী আমাকে ফাঁসিয়ে রেখে দুজনেই ভেঙ্গেছে। এত মানুষের এলো গেল একটু সাহায্য করল না। এত ফল আমাকে দিয়ে কাটালো, সাজালো। কি নির্দয় ফ্যামিলিরে বাবা! ঠিক আপনার মতো! আপনার মনটাও যেমন নির্দয়। আর এই ফ্যামিলির সব মানুষের মন ও আপনার মত পাষাণ। খালি কাউকে পেলে হয়েছে সব কাজ তার মাথার উপর ছেড়ে সবাই পালিয়ে যায়।’

নিবিড় আমার দিকে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে এবং আমার কথাগুলো খুব মনোযোগ সহকারে শুনছে। আমি নিবিড় কে অদ্ভুত চাহনিতে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকে দেখে বিরক্ত হলাম।
আমার বিরক্তি আর রাগটা বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য নিবিড়ের এই কাজটা যথেষ্ট ছিল।
নিবিড় একটা আঙ্গুর তুলে আমার দিকে ধরে বলল,’আঙ্গুর খেয়ে মাথা ঠান্ডা করো।’

প্রচন্ড রাগ হচ্ছে আমার মন চাচ্ছে নিবিড়ের মাথায় এই আনারস দিয়ে একটা বাড়ি মারি। আমি জ্বলন্ত চোখে তাকালাম নিবিড়ের দিকে।
নিবিড় আমার চোখের দিকে দৃষ্টি ফেলে বলল, ‘ রাগলে তো তোমায় দারুন লাগে, আই এ্যাম ক্রাশিত। রাগী রাগী চোখ দিয়ে আমায় ইমপ্রেস করার চেষ্টা, তাই না? ধরো আঙ্গুর খাও রাগ কমাও।’

আমি নিবিড়ে দুই আঙুলের ভেতর থেকে আঙ্গুরটা টেনে নিজের হাতে নিলাম। তারপর সেইটা নিবিড়ের মুখের ভেতর ঢুকিয়ে দিলাম।
‘আপনি বসে বসে খান। আজকে আপনার‌ ও গায়ে হলুদ হবে। এগুলো আপনাকে ও সবাই মিলে খাওয়াবো।’
নিবিড় আমার দিকে চেয়ে অবাক হওয়ার ভঙ্গিতে বলল, ‘ তুমি যদি রাজি থাকো তাহলে আজকেই হলুদ সন্ধ্যা করে ফেলব।’

‘ দেখুন এমনিতে আমার মেজাজটা গরম আছে। আপনি আমার সাথে এখন ইয়ার্কি করতে আসবেন না। যান তো এখান থেকে আমাকে বিরক্ত করবেন না।’
নিবিড় উঠে আমাকে ও টেনে উঠিয়ে বলল, ‘ যাও সাজগোজ করে রেডি হয়ে নাও। সবাই তো অলরেডি রেডি হয়ে গেছে মনে হয়। তোমার ভাব সাব দেখে মনে হচ্ছে এখানে বসে থাকবা আজকে।’

আমি নিবিড় কে কিছু বলতে গিয়েও বললাম না। চলে এলাম তাহমিনা আপু রুমে তাকে দেখে তো আমি গালে হাত দিয়ে তাকে সুন্দর লাগছে। হলদে রঙের কাতান গোলাপি পাড় এর শাড়ি পড়েছে সুন্দর করে সাজিয়েছে আপুকে দারুন লাগছে। আমি দরজার কাছে থেকে আপুর দিকে তাকিয়ে আছি।

ভেতরে আপুর সাথে ছবি তুলছে অনেকেই। সব মেয়েরাই শাড়ি পড়ে একদম সাজুগুজু করে আছে। আমি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে সবাইকে দেখছিলাম তখনই মাইশা এসে আমার পেছনে দাঁড়ায় আর বলে ওঠে,, ‘ এক্সকিউজ মি! সাইড প্লিজ।’

আমি চমকে পেছনে তাকাতেই দেখলাম মাইশা শাড়ি পড়ে গর্জিয়াস লুক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে দেখেই মাইশা এক প্রকার নাক সিটকালো। পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে বলল, ‘ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছো কেন সরো। তোমার যন্ত্রণায় দেখি রুমের ভেতরেও ঢুকতে পারবো না।’

অবাধ্য প্রেম পর্ব ৩৪

আমি দরজা থেকে সরে দাঁড়ালাম মাইশা আমাকে ভেংচি কেটে ভেতরে চলে গেল।

অবাধ্য প্রেম পর্ব ৩৬