অবাধ্য প্রেম পর্ব ৩৬

অবাধ্য প্রেম পর্ব ৩৬
নন্দিনী নীলা

আমি দরজা থেকে সরে দাঁড়ালাম মাইশা আমাকে ভেংচি কেটে ভেতরে চলে গেল।
সবার মাঝে নিজেকে কেমন তুচ্ছ লাগতেছে। সবাই একদম ফিটফাট। সবাই আমার দিকে এমন নজরে তাকাচ্ছে মনে হয় আমি এলিয়েন। তাই আমি সেখান থেকে চলে এলাম উপরে।

এখানে এসে আমি আরো মানুষ দেখতে পেলাম। ছেলে মেয়েরা ছাদে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন এঙ্গেলে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছে। এক ছেলে এক মেয়ে একদম জরাজরি করে ছবি তুলছে। আমি হা করে কতক্ষণ সবার ভাব ভঙ্গি দেখে রুমে চলে গেলাম। মন চাচ্ছে রুমের ভেতরেই বসে থাকি ।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আপু যে ব্যাগ টা দিয়েছিল সেই ব্যাগটা এখনো খুলে দেখিনি। দুইটা শাড়ি বলেছিল এখন ব্যাগটা খুলে একটা হলুদ সিল্ক জামদানি শাড়ি আরেকটা মেরুন কালারের কাতান শাড়ি। এত আশা করে দিয়েছে না পারলে তাদের অপমান করা হবে। নিচে যেহেতু আমাকে যেতেই হবে তাই শাড়িটা পড়ে নিলাম।

শাড়িটা পরে চুল কিভাবে বাধবো সেটা ভাবনা চিন্তা করতে করতে চুল খোলাই রাখলাম। সবাই কতো সাজগোজ করেছে তাদের মাঝে আমাকেই বেমানান লাগবে। আমি চাইলেও এতো সাজতে পারব না। অত সাজগোজের জিনিস আমার আছে নাকি। তাও নিজের যা আছে সেই দিয়েই কাজ চালিয়ে নিলাম।

আমার কাছে পিংক কালার একটা লিপস্টিক ছিল ওইটাই দিলাম, কপালে কালো টিপ, কানে গোল্ডেন কালার ঝুমকা গলায় কিছু দিলাম না। যাইহোক চুড়ি পরলাম এক হাতে গোল্ডেন কালারের। আমার একটা ছোট আয়না আছে সেটাতেই নিজেকে দেখছি। হলুদ কালারে আমাকে মোটেই ভালো লাগছে না। আমার গায়ের রং শ্যামলা বর্ণের, আমাকে এই কালারটাই আরো কালো দেখা যাচ্ছে।

মন চাই এখন শাড়ি খুলে বসে থাকি। বাইরে যারা এসেছি সবাই যে ফর্সা তা কিন্তু নয় আমার থেকে অনেক কালো আছে, আমার মতনও আছে আবার অনেকে সুন্দরও আছে। কিন্তু তাদের সবাইকে এক‌ই রকম দেখা যাচ্ছে। কারণ সবাই এতো এতো মেকআপ করেছে যে সবাইকেই ফর্সা লাগছে।

আমি চুল কানের পেছনে গুজতে গুজতে বেরিয়ে এলাম। ছাদে যারা ছিল সবাই আমার দিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিল। আমি নিচে চলে এলাম অনুষ্ঠান শুরু হবে এবার। নিচে এসে তো আমি নিবিড়ের মাকে আর নিবিড়ের চাচীকে দেখেছি চোখ কপালের তুললাম। তাদের সাজ দেখে আমার অবস্থা কাহিল।

নিবিড়ের আম্মুকে এখন এই পোশাক দেখে কেউ বিশ্বাস করতে পারবে না যে তার দুইটা ইয়া বড়ো বড়ো ছেলে আছে। মাহি দেখতে পেলাম শাড়ি পড়ে নাই। হলুদের সাথে সবুজ মিক্সড করা লেহেঙ্গা পরেছে একদম পুতুলের মত লাগছে‌। দুজন মেয়ে তাহমিন আপুকে ধরে নিয়ে আসছিল স্টেজে নিয়ে যাবার জন্য আপু আমাকে দেখে কাছে ডাকলো আমি যেতেই বলল, ‘ কই ছিলি সে কখন থেকে তোকে খুজছি। সবাই এমন ভাবে জেঁকে ছিল যে জন্য আমি বেরিয়ে দেখতেও পারলাম না তোকে। বলেছিলাম না আমার সাথে এসে সাজবি।’

আমি হাসিমুখে বললাম, ‘আমি একা সেজেছি। ওখানে গিয়ে তোমার ঝামেলা বাড়ায়নি। দেখতো আমাকে কেমন লাগছে!’
‘ খুব মিষ্টি লাগছে। আমাকে নিয়ে চল এবার।’
‘আছে তো লোক অনেকে তাদের সাথে যাও। আমি তো আছি আশেপাশে সমস্যা নাই।’
‘ কিন্তু…

নিবিড়ের আম্মু এসে আপুর দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন?’
আমি তাকে দেখেই সেখানে থেকে চলে গেলাম। উনি আমাকে ফাঁসিয়েছেন তাই উনাকে আমার একটুও পছন্দ হয়না। আমি বিরবির করে বাগানের দিকে যাচ্ছিলাম।

ঠাস করে ধাক্কা খেলাম কারো সাথে তাকিয়ে দেখি এক পোলা ঘাসের উপর বসে দাঁত কেলিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি কপাল কুঁচকে তাকিয়ে আছি এতো জোরেই কি ধাক্কা লেগেছে নাকি যে লোকটা নিচেই বসে পরেছে ?
আমি সরি বলতে এগিয়ে যাচ্ছিলাম কিন্তু লোকটার দাঁত কেলিয়ে তাকিয়ে থাকা আমার একদম পছন্দ হলো না। আমি সরি বলা বন্ধ করে বিরক্তিকর কন্ঠে বললাম, ‘ সমস্যা কি? এমন ছাগলের মতো দাঁত কেলিয়ে আছেন কেন?’

লোকটা কোন কথাই বলল না। হা করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে । মন চাচ্ছে চোখ দুটো গালিয়ে দিতে।
আমি আরো হাই হ্যালো দুই একটা কথা বলে সেটা সামনে থেকে চলে এলাম পাগল ছাগল কোথা থেকে এসেছে কে জানে। না উওর দিল আর না বসা থেকে উঠল। ওইভাবেই বসে হা করে তাকিয়ে আছে।

এদিকে নিবিড় ওর কাকার পাশেই ছিল। নিচু হয়ে কানে কানে কাকাকে বলল, ‘ কাকা জানো এই সব কিছু ছোঁয়া একা নিজের হাতে সাজিয়েছে।’
কাকা বলল, ‘ বাহ মেয়েটার অনেক গুণের তাই নারে।’
নিবিড় কে হঠাৎ আবির টেনে নিচে নামিয়ে নিয়ে এলো। নিবিড় আবিরকে ধমক দিয়ে বলল, ‘ থাপ্পর খাবি কিন্তু এখন আমাকে জ্বালালে।’

‘ উফফ ভাইয়া আসো তো তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে।’ নিবিড়ের হাত টেনে ধরে বলল।
‘ হাত ছাড় তো। আমি এখন কোথাও যেতে পারবো না। আর কিসের সারপ্রাইজ, দেখছিস না! আমি কাকার সাথে গুরুত্বপূর্ণ কথা বলছিলাম!’

‘সেটা থেকেও গুরুত্বপূর্ণ জিনিস আমি তোমাকে দেখাবো। একটু পরে তো হা করে তাকিয়ে থাকবে আর আমাকে থ্যাংক ইউ বলবে।’
আবির টেনে এনে নিবিড় কে ছোঁয়ার দিকে ইশারা করলো। নিবিড় ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে থমকে যায়। আচমকা ওর হেঁচকি উঠে যায়।

আবির ব্যস্ত গলায় জিজ্ঞেস করে, ‘ কি হলো ভাইয়া? ভাবির এই রূপ দেখে কি হেঁচকি উঠে গেল।’
নিবিড় মাথা নেড়ে স্বীকার করল। আর পানি চাইল।
আবির পানি এনে দিল। নিবিড় পানি খেয়ে বলল, ‘ এই মেয়ে দেখি আমারে মেরে ফেলতে চায়।’

আবির চলে‌ গেল। নিবিড় ছোঁয়া মাথা থেকে পা পর্যন্ত খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। এখানে উপস্থিত সব মেয়েদের তুলনায় ছোঁয়া সাধারণ হলেও ওর দৃষ্টিতে ছোঁয়া সব চেয়ে সুন্দরী নারী। যার এই রুপ দেখে নিবিড় থমকে গেছে। ওর কপালে ঘাম জমে উঠেছে, কেমন এলোমেলো লাগছে। শাড়ি ওকে কে পরতে বলেছে? নিবিড় তো নিজের দৃষ্টি সরাতেই পারছেনা এইভাবে পাগল করতে চায় নাকি ওকে।

ছোঁয়া সবার থেকে দূরে আলাদা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে‌ আশার সাথে। নিবিড় চেয়ে র‌ইল কতোক্ষণ তারপর চোখ সরিয়ে অন্য দিকে চলে গেল‌ মা ডাকছে হলুদ দিতে। নিবিড়ের আসতে মন চাইল না। ওর মন চাইছে শুধু ছোঁয়ার দিকে চেয়ে থাকতে।

কাকা আর কাকিকে হলুদ লাগিয়ে ও হাতে একটু হলুদ নিয়েই চলে এলো স্টেজ ছেড়ে।
সবার দেওয়া হতে আমি সবার শেষেই হলুদ ছোঁয়াতে গেলাম। আমার দিকে তো আপু চোখ রাঙিয়ে তাকালো আমি তার কাছে একবার আসে নি এজন্য। আর আমি আসতাম কি করে নিবিড়ের ছোট চাচী তো আমাকে এখানে আসার পরেই বলেছে তোমার কি জন্য স্টেজের আশেপাশে না দেখি। খুব যে একটা আসার ইচ্ছা ছিল তা না কিন্তু উনার কথাই খুব কষ্ট পেয়েছি এজন্য আর আসি নাই‌।

স্টেজ থেকে নামতে কে যেন আমার হাত ধরে টেনে এক পাশে নিয়ে এলো। আলো ছেড়ে অন্ধকারে চলে এসেছি। আমি অন্ধকারেও নিবিড়কে চিনে ফেললাম।
‘কি অসভ্যতামি হচ্ছে আপনি আমাকে টেনে এখানে নিয়ে আসলেন কেন?’
‘তোমাকে একটা জিনিস দিতে নিয়ে আসলাম। এখানে অসভ্যতামির কি পেলে? আসো একটু অসভ্যতামি করে না হয় এটা শুনি‌!’

‘কি দিতে?’ অবাক গলায় বললাম। এই অন্ধকারে টেনে আমাকে কি দেওয়ার জন্য নিয়ে আসলো। কোন শয়তানি মতলব আঁকছে না তো এই নিবিড়।
আমার বলতে দেরি হলো আর নিবিড়ের ফট করেই নিজের হাত উঁচু করে ভেজা ভেজা কিছু আমার দু গালে লাগিয়ে দিতে দেরি হলো না। আমি তো গালে হাত দিয়ে হা।

অন্ধকারে দেখা যাচ্ছে না কি। আমি রাগী গলায় বললাম, ‘আমার গালে কি দিলেন?’
‘তোমার গালেই তো আছে আয়নার সামনে গিয়ে না হয় দেখো।’
আমি আন্দাজ করে নিলাম এটা হলুদ ই হবে আমি নিজের গালে থেকে নিয়ে নিবিড়ের গালেও লাগিয়ে দিলাম।

অবাধ্য প্রেম পর্ব ৩৫

‘যান আপনাকেও লাগিয়ে দিলাম এবার আপনি আয়নায় গিয়ে দেখুন‌। অসভ্য বেহায়া লোক।’
রাগে গজগজ করতে করতে আমি নিবিড়ের সামনে থেকে চলে এলাম।
নিবিড়….

অবাধ্য প্রেম পর্ব ৩৭