অবাধ্য প্রেম পর্ব ৩৭

অবাধ্য প্রেম পর্ব ৩৭
নন্দিনী নীলা

এদিকে এসে দেখি সবাই নাচানাচি করছে গান ছেড়ে। সবাই সবার গালে হলুদ দিয়ে সবাইকে ভূত করে দিচ্ছে। আমি সবাইকে ক্রস করে চলে যাচ্ছিলাম ডান্স ফ্লোর থেকে নিবিড় দৌড়ে এসে আমার হাত টেনে ধরে সবার মাঝখানে নিয়ে গেল।

আর সবার মাঝে আমার কোমর জড়িয়ে ধরে নাচতে লাগলো। নিবিড়ের স্পর্শে আমার শরীর কেঁপে উঠলো। নিবিড়ের হাত যে আমার পেট স্পর্শ করছে শাড়ি ভেদ করে।
নিজের কেমন অস্থির অস্থির লাগছে। আমি রাগে কিড়মিড় করে নিবিড়ের দিকে তাকালাম আগুন চোখে। নিবিড় আমার রাগী দৃষ্টিকে পাত্তাই দিল না ওর মুখে দুষ্টু হাসি।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আমি দাঁতে দাঁত চেপে বললাম, ‘ অসভ্য বেহারার লোক ছাড়ুন আমাকে।’
‘ অসভ্য লোকরা ঠিক মতো অসভ্যতামি না করে কাউকে ছাড় দেয় না সোনা।’ বলেই আরো শক্ত করে নিবিড় আমার কোমর চেপে ধরে একদম নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। আমি তাল সামলাতে না পেয়ে নিবিড়ের পাঞ্জাবি খামচে ধরি হাতের মুঠোয় শক্ত করে।

আমি এবার অসহায় মুখ করে বললাম, ‘ প্লিজ আমাকে ছাড়ুন। সবার মাঝখানে আপনি এমন করছেন সবাই কি ভাববে ভাবুন। আমি আর আপনাকে জীবনে অসভ্য বলব না প্রমিস।’
‘এখন বলে তো লাভ নাই। সেই তো বলেই ফেলেছো‌। শাস্তি তো পেতেই হবে। আর একটা কথা কেউ আমাদের লক্ষ্য করছে না। এখানে যে যার মত মজা মাস্তি করছে। তোমাকে আমাকে দেখার জন্য কেউ বসে রয় নাই‌।’

এতক্ষণ লাইট ছিল এখন ডিম লাইট নীল কালারের চারপাশে ঘুরছে এজন্য হয়তো আমাদের কেউ খেয়াল করছে না। এখানে অনেকেই কাপল ডান্স করছে সবাই মজা মাস্তি করছে কেউ হয়তো আমাদের লক্ষ্য করছে না। এই সুযোগটা নিবিড় কাজে লাগিয়েছে কেন যে লোকটাকে অসভ্য বলতে গেলাম।
আমি কাঁদো কাঁদো মুখ করে নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে আছি। আর নিবিড়ের মুখে শয়তানি হাসি। খুব মজা পাচ্ছে আমাকে নাস্তানাবুদ করে।

নিবিড় আর ছোঁয়া তো ভেবেছো কেউ ওদের লক্ষ করছে না। এটা ঠিক এখানে কেউ লক্ষ্য করেনি। কিন্তু একজোড়া চোখ ওদের ঠিকই লক্ষ্য করেছে। তার হাত-মুষ্টিমদ্ধ হয়ে আসছে। সে মনে মনে একটা কথাই বলছে এ জন্যই সেই দিন আমার সাথে এরকম করল। সে আগুন চোখে দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে। দুজনে এত ঘনিষ্ঠতা সে একদমই সহ্য করতে পারছে না।

আমি কোন ভাবেই নিবিড়ের থেকে ছাড়া পাচ্ছি না। নিবিড়ের শরীরে তো দানবের শক্তি আছে। ওর থেকে ছাড়া পেতে নিজের গায়ে সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করলেও ওকে ছাড়াতে পারব না। বৃথা চেষ্টা করেই যাচ্ছি নিবিড় তো আমাকে ছাড়ছে না উল্টা যতবারই ছোঁয়া নিজের থেকে ওকে সরানোর চেষ্টা করে ততবারের নিবিড় আরো ওকে নিজের সাথে ঝাপটে ধরে।

‘আমি ছাড়ানোর চেষ্টা করছি। আপনি আমাকে আরো চাপতে ধরছেন কেন, সমস্যা কি?’ রাগে মৃদু চিৎকার করে বললাম।
নিবিড় নিজের মুখটা আমার একদম নিকটে এনে ফিসফিস করে বলতে লাগলো,, ‘ আমি তো ছেড়ে দিতে চাই না।’
‘আমি সরি বলেছি তো। তবু কেন এমন করছেন! সত্যি বলছি আর কখনো আপনার সাথে উল্টাপাল্টা কথা বলবো না আমার শিক্ষা হয়েছে!’

নিবিড় আগের মতই আমার কাছ থেকেই উওর দিল, ‘ সেতো তুমি প্রতিবারই বলো কিন্তু ছাড়া পেলেই তো আবার সে আগের মত হয়ে যাও। আজকে তো তোমাকে শিক্ষা না দিয়ে চাচ্ছি না।’

নিবিড়ের কথা শুনে আমি ভয় পেয়ে গেলাম। শুকনা ঢোক গিলে ভীতমুখে নিবিড়ের চোখের দিকে তাকিয়ে আছি। একেতে নিবিড়ের গা ঘেসে থাকতে আমার খুব অস্বস্তি হচ্ছে। বুক ধরফর করছে। হাত পা কাঁপছে। তার উপর নিবিড় একদম আমার মুখের উপর এসে কথা বলছে এজন্য নিবিড়ের শ্বাস প্রশ্বাস আমার মুখে এসে বাড়ি খাচ্ছে কি মুসিবতে পড়লাম রে বাবা। নিবিড় কথা বলতে আসলেই আমি চোখ বন্ধ করে কাঁপতে থাকি আর নিবিড় নিশ্চয়ই আমার এই অবস্থা দেখে মজা নিচ্ছে।

এদিকে নিবিড় ছোঁয়ার কাঁপাকাঁপি দেখে হাঁ করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। চোখ বন্ধ করে মেয়েটা কিরকম কাঁপছে যার মুখের আগায় থাকে ঝগড়া। সে কিনা ভীতমুখ করে চোখ বন্ধ করে সহ্য করছে। এমনিতে আজকে ছোঁয়াকে দেখে নিবিড় আটকে গেছিল। নেশা ধরে গিয়েছিল ওর। আর এখন ছোয়াকে এই অবস্থায় দেখে নিবিড়ের নেশা ধরে যায়। ঘোর লাগা দৃষ্টিতে ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে আছে‌। ছোঁয়ার কাঁপা কাঁপা বন্ধ চোখের পাতা কাঁপা কাঁপি করছে দুই ঠোঁট। নিবিড় যেন নিজের মধ্যে নেই ও আচমকা নিজে চোখ বন্ধ করে ফেলে।

নিজেকে কন্ট্রোল করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে পারছে না ও ফট করে চোখ মেলে তাকায় ছোঁয়া ওর দিকে তাকিয়ে আছে অবাক চাহনিতে। নিবিড় ঢোক গিলে বলে উঠে, ‘If I don’t want to touch it, I will surely die.’
নিবিড় কথা শেষ করেই মাথা নিচু করে ছোঁয়ার গলায় অধর ছুঁয়ে দিল।একটা জায়গায় কতোক্ষণ ঠোঁট চেপে ধরে ছিল নিবিড়ের মনে নেয়।

নিবিড় ওইভাবেই চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিল। এদিকে ছোঁয়ার অবস্থা বেগতিক। ও চোখ বন্ধ করে আছে ওর চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরছে। নিবিড়ের গলার কাছে পাঞ্জাবি এত শক্ত করে ধরে রেখেছিল যে য়ে নিবিড় নিজের গলায় ব্যথা অনুভব করে কিন্তু ও টু শব্দটি অব্দি করেনা‌‌।

নিবিড়ের সাথে ঝগড়া করলেও নিবিড়ের প্রতি একটা বিশ্বাস ছিল। মানুষটা যেমনই হোক ভালো। রাগের মাথায় উল্টাপাল্টা অনেক কথাই বলে। কিন্তু মন থেকে নিবিড় কে আমি অনেকটাই বিশ্বাস করি, ভরসা করি। আজকের ব্যবহারটা এজন্য আমি মানতে পারছি না। নিবিড় এটা করতে পারল আমি বিশ্বাস করতে পারছি না। ডান পাশের গলায় ব্যথা অনুভব হচ্ছে জ্বলছে জায়গাটা। নিবিড় কখন কামড়ে ধরে ছিল টের পায়নি। আমি জায়গাটায় হাত রেখে ফুঁপিয়ে উঠলাম।

নিচে লাইট জ্বলতেই আমি নিবিড়কে ধাক্কা মারি। নিবিড় আমাতে এতটাই মগ্ন ছিল আমাকে ধরে রাখা হাতের বাঁধন আগলা হয়ে গেছিল ওর। এজন্য আমার ধাক্কা খেয়ে নিবিড় দূরে সরে হেলে পড়েছিল। আমি সেখানে আর এক মিনিট ও অপেক্ষা করি নাই দৌড়ে উপরে চলে এসে দরজা বন্ধ করে দেই‌।

দরজায় করাঘাতে আমার কান্নায় বাধা পরল। জোরে জোরে কেউ দরজায় বাড়ি মারছে আর আমাকে ডাকছে কন্ঠটা নিবিড়ের। আমি উঠলাম না কথাও বললাম না। নিবিড় একের পর এক ডাক দিয়েই চলেছে। আর দরজাতে এত্তো জোরে জোরে বারি দিচ্ছে মনে হচ্ছে দরজা ভেঙে ফেলবে।

বাধ্য হয়ে আমাকে উঠে দরজায় খুলতে হলো। রাগে আমি গজ গজ করতে করতে দরজা খুলতেই নিবিড় আমার সামনে মাথা নিচু করে বসে পড়লো।
অপরাধী চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারিনি। আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমি তোমার সাথে এটা করতে চাইনি কিভাবে কি করে ফেললাম আমি নিজেও জানিনা। আমাকে…..

আমি ঠাস করে নিবিড়ের গালে একটা থাপ্পড় মেরে ক্ষান্ত হলাম। চোখ দিয়ে আমার আগুন বের হচ্ছে, নিবিড় কে এখন আমার যে কি করতে মন চাচ্ছে আমি বোঝাতে পারবো না। নিবিড় থাপ্পড় খেয়েও কোন রিঅ্যাক্ট করলো না। যেন এমনটা হওয়ারই ছিল। ও আমার থাপ্পর দেওয়া হাতটা নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বলল,, ‘ আর মারও প্লিজ কিন্তু আমাকে ঘৃণার চোখে দেখো না। আমি কখনো তোমার সাথে এমন করতে চাই নি‌। তোমার চোখে নিজের জন্য ঘৃণা আমি সহ্য করতে পারব না।’

আমি রাগে কিটকিট করে বললাম, ‘চলে যান আপনি আমি কালকে দিন পর এই বাসা ছেড়ে চলে যাব। আপনার সাথে অনেক কথা বলেছি আপনাকে অনেক কিছু বলেছি সত্যি বলছি সেসব আমি মন থেকে বলিনি। আমি মুখে আপনাকে অসভ্য বললেও মন থেকে আমি আপনাকে কিন্তু একজন দায়িত্ববান পুরুষই ভাবতাম।

না চাইতেও আপনার প্রতি আমার আস্থা ভরসা কেন জানি তৈরি হয়ে গেছিল। কিন্তু আপনি শুধুমাত্র শাস্তি দেওয়ার জন্য আজকে যে করলেন ছিহ। একটা মেয়ের সাথে কত বড় অন্যায় করেছেন সেটা হয়তো আপনি ছেলে হয়ে বুঝতে পারবেন না। এভাবে শাস্তি দিয়ে আমাকে শাস্তি নয় শুধু নিজেকেও আপনি ছোট করেছেন। আমার চোখে ছোট হয়ে আপনার হয়তো কিছু আসবে যাবে না কিন্তু আমার ভরসাটা আমি হারিয়ে সত্যিই অনেক কষ্ট পেয়েছি।’

বলতে বলতে আমি কেঁদে ফেললাম নিবিড় আমার কান্না দেখে ব্যস্ত হয়ে বলল, ‘বিলিভ করো তোমাকে শাস্তি দিতে আমি এটা করিনি। আমি কাউকে শারীরিকভাবে দুর্বল করে শাস্তি দিতে চায়না। তোমাকে তো আমি কখনোই শাস্তি দিতে চাই নি। আমি তো শুধু মুখে মুখে এটা বলি‌। তোমাকে এত কাছে পেয়ে আমি নিজেই নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলাম। কখন তোমাকে আপত্তিকর ভাবে স্পর্শ করে ফেলেছি আমি বুঝতেই পারিনি। এখনো আমার এই অধিকার হয়নি আমি কিভাবে করলাম। এটা একটা এক্সিডেন্ট বিলিভ মি।’

আমি কিছুই বলতে পারছিনা। নিবিড়ের দিকেও তাকাচ্ছি না। আমি ঘার বাকিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে আছি। নিবিড় আমার দুই হাতে নিজের কপালে ঠেকিয়ে অনেক কিছুই বলছে। নিবিড় কেন এতটা অনুতপ্ত হচ্ছে এসব তো ও ইচ্ছেই করেছে তাহলে কেন এমন করছে‌। আমার কাছে নিজেকে ভালো প্রমাণ করে ওর লাভ কি?

‘ যা হওয়ার হয়ে গেছে। আপনার আমাকে আর কিছু বোঝাতে হবে না। আমি আপনার জীবনে এমন ইম্পরট্যান্ট কেউ না যে আমাকে বুঝাতে না পারলে আপনি মরে যাবেন। তাই নিজের ইগো ক্ষুন্ন করে আমার কাছে এত কিছু…..
নিবিড় বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায় আমার কথা শুনে। আমার অন্যদিকে করে রাখা মুখটা টেনে নিজের দিকে টেনে আনে। দুহাতে আমার মুখটা আবদ্ধ করে চোখে চোখ রেখে বলে, ‘ তুমি আমার জীবনে। তোমাকে বোঝাতে না পারলে তো আমি মরেই যাব।’

নিবিড়ের কথা শোনে আমার মেরুদন্ড সোজা হয়ে গেছে। আমি বিস্মিত নয়নে নিবিড়ের মায়া ভরা চোখের দিকে তাকিয়ে আছি‌। কি অদ্ভুত নিমিষেই যেন আমি নিবিড়ের চোখের ভাষা পড়ে ফেললাম।
এই চোখের ভাষা যেন আমার পড়া ঠিক হয় নাই।

আমি চঞ্চল গলায় বললাম, ‘ইম্পসিবল! এটা হতেই পারে না।’
নিবিড় খুবই কোমল গলায় বলল, ‘এটা সত্যি।’
আমি বললাম, ‘ আমি বিশ্বাস করি না। আপনি আমাকে শাস্তি দিতে আবার আরেকটা নাটক করছেন।’

অবাধ্য প্রেম পর্ব ৩৬

নিবিড় অনুভূতি ভরা গলায় বলল, ‘যার স্থান আমার হৃদয়ে তাকে আমি শাস্তি কিভাবে দেবো?’
আমার চোখে মুখে চরম বিস্ময়। নিবিড় এর কথাগুলো আমার হজম হচ্ছে না। মানুষটা এতটাই নাটকবাজ‌। এত সুন্দর করে কিভাবে নাটক করছে। এই চোখ দিয়ে কিভাবে এতটা ভালোবাসা ছেড়ে দিচ্ছে যেন এই চোখের দৃষ্টি দিয়ে আমাকে বশ করে ফেলবে। না না এই চোখের দিকে তাকানো যাবে না।

অবাধ্য প্রেম পর্ব ৩৮