অবাধ্য প্রেম পর্ব ৩৮

অবাধ্য প্রেম পর্ব ৩৮
নন্দিনী নীলা

নিবিড়কে ধাক্কা মেরে দরজার সামনে থেকে সরিয়ে আমি বললাম, ‘ আপনি যদি এখন এইখান থেকে না যান তাহলে আমি এখনি এ বাসা থেকে বেরিয়ে যাব।’

নিবিড় আমার কথা শুনে থমকে দাঁড়িয়ে পরল। আর এগিয়ে এলো না আমি ওর মুখের উপর শব্দ করে দরজা বন্ধ করে দিলাম। নিবিড় কিছুক্ষণ থ মেরে বন্ধ দরজা দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর নিচে নেমে এলো। নিবিড় এলোমেলো পায়ে নিজের রুমে গিয়ে নিজেও দরজা বন্ধ করে দিল।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আবির নিবিড় কে উপর থেকে আসতে দেখে ভাইয়ের পেছনে ছুট দিল। নিবিড়ের মুখটা কেমন যেন বিষন্ন হয়ে আছে। ও নিবিড়ের রুমে ঢুকতে যাবে কিন্তু তার আগে নিবিড় খট করে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। আবির দরজা ধাক্কা দিতে যাবে তখনই কেউ ওর হাত টেনে ধরে। ওপাশে তাকিয়ে বলে, ‘ মম কিছু বলবে?’

নিবিড়ের মা নিলাশা বেগম আবিরের হাত ধরে টেনে নিজের রুমে নিয়ে যায় আবিরকে। আবির মায়ের বিহেভে চমকায়। ও চমকানো গলায় বলে, ‘হোয়াটস হ্যাপেন্ড মম? এভাবে টেনে নিয়ে আসলে কেন? ব্রো ওর সাথে আমার কথা ছিল।’
নিলাশা বেগম ঠাস করে আবিরের গালে চড় মারল। আবির গালে হাত দিয়ে অবাক চোখে নিজে মমের দিকে তাকিয়ে আছে। ও বিলিভ করতে পারছে না মম ওকে থাপ্পড় মেরেছে ওর গায়ে হাত তুলেছে।

‘ মন তুমি আমাকে মারলে?’
‘ছোট ভাই হয়ে বড় ভাইকে খারাপ দিকে উস্কাচ্ছ তুমি? তোমাদের স্বাধীনতা দিয়েছি বলে কি যা খুশি তাই করবে? ওই ফকিন্নি মেয়েটার সাথে তুমি আমার ছেলের সম্পর্ক তৈরি করেছ?’ নিলাশা বেগম রাগে চিৎকার করে উঠলো।
আবির নিলাশা বেগমের কথা শুনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। এতক্ষণ অনেক কথাই বলতে চেয়েছে মমকে। কিন্তু এখন মমের কথা শুনে ওর সব কথা অফ হয়ে গেছে। মম এসব কিভাবে জানল?

‘মম তুমি এসব…
নীল আশা বেগম আবিরকে থামিয়ে দিল। আর নিজে আবার বলে উঠলো,’ আজ ঐ বাইরের মেয়েটার জন্য আমি তোমার গায়ে হাত তুলেছি। তোমার মমের হাতে তুমি আঘাত পেলে। আই হোপ তুমি বুঝতে পারবে। তুমি কতটা ভুল করেছো।

এই কাজ করা থেকে তুমি তোমার ভাইকে বিরত রাখবে। যেভাবে তাকে তার দিকে ঠেলে দিয়েছো। সেইভাবে সেখান থেকে ফিরিয়ে আনবে। আমি আমার ছেলেকে কোন ভুল পথে পা বাড়াতে দেবো না। ওই ফকিন্নির মেয়ের সাথে যেন আমার ছেলের কোন সম্পর্ক তৈরি না হয়।’

আবির মুখ নিচু করেই বলল, ‘মম আমি কিছু করিনি। ব্রো নিজেই ছোঁয়া আপুকে ভালোবাসতো। আমি শুধু তাকে কয়েকটা টেকনিক বলেছিলাম সেটা বুঝতে। এছাড়া আর কিছুই না। তুমি তো জানো ব্রো কতটা শক্ত মনের সে নিজের ইগোর জন্য ভালোবাসা প্রকাশ করতে পারেনি। আমি যখন বুঝতে পারি ব্রো ছোয়া আপুর উপর দুর্বল। তখন আমি তাকে শুধু তার অনুভূতিটা প্রকাশ করতে বলেছিলাম। এজন্য কয়েকটা টেকনিক বলেছিলাম এছাড়া আর কিছুই না। আমি কিভাবে তার অনুভূতি ফিরাবো বলো।’

‘ তোমাকে নিবিড়ের থার্ড ক্লাস অনুভূতি প্রকাশ করার কথা বোঝাতে বলেছিল কে? আমার ছেলে যদি আমার নিয়ন্ত্রণে বাইরে চলে যায় আমি কিন্তু এই মেয়েকে খুন করে ফেলব।’
‘ ছোয়া আপু ত যথেষ্ট ভালো মম। তাকে তো তুমি অনেক দায়িত্ব দিয়েছিলে দেখেছো তো কত লক্ষী। তাকে মেনে নিতে তোমার কি সমস্যা?’

‘ তোমার কাছ থেকে আমি অবশ্যই জ্ঞান নেব না।’
‘সরি মম! কিন্তু তুমি এসব জানলে কিভাবে?’
‘তোমার কাজ শেষ। তোমাকে যে কাজ দিয়েছি সেটা কর মনোযোগ দিয়ে। আমি যেসব জেনে গেছি সেটা যেন নিবিড় জানতে না পারে।’

নিলাশা বেগম আবিরের আর একটা কথাও শুনল না। আবির বাধ্য হয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। ওর মাথায় আকাশ সমান চিন্তা এখন। কে এমন শত্রামি করলো ওদের সাথে।

নিলাশা বেগম আর আবিরের কথোপকথন সবই এক জোড়া চোখ শয়তানি হাসি দিয়ে তাকিয়ে শুনছিল। সে নাচতে নাচতে মাহির রুমে চলে এলো। অবশেষে নিবিড় আর ছোঁয়ার অপমানের প্রতিশোধের নিতে পারল। মাহি মাইশার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ মাইশা আপু তুমি কি খুব খুশি আজকে?’

মাইশা বিছানায় শুয়ে বলল, ‘হ্যাঁ রে মাহি। খুব খুশি।’
মাহি জিজ্ঞেস করল, ‘কারণটা কি মাইশা আপু?’
‘ কারণটা তো বলা যাবে না। কিন্তু তুই তো জানিস আমি ব্রো কতটা ভালোবাসি।’
‘ হুম তো ব্রো কি তোমাকে আই লাভ ইউ বলেছে?’

মাইশা লজ্জা লজ্জা মুখে বলল, ‘সেরকমটা না কিন্তু যাতে খুব তাড়াতাড়ি সে এই কথাটা আমাকে বলে। সেই ব্যবস্থা আমি করে ফেলেছি।’
‘ কি করেছ?’ খুব কৌতুহল নিয়ে জিজ্ঞেস করল মাহি।
মাইশা খুশি মনে বলল, ‘আমি তো বড় মামীকে বলে দিয়েছি। আমি ব্রোকে ভালোবাসি বিয়ে করতে চাই। তিনি আমাকে পুত্রবধূ করতে রাজি।’

মাহিও খুশি হলো খুব।
মাইশায় বলে দিয়েছে ছোঁয়া, নিবিড়ের কাহিনীটা নিলাশা বেগমকে। সেই দিনকার অপমান আর নিবিড়ের ছোঁয়াকে সাপোর্ট করাটা নিয়ে ও হিংসায় জ্বলে পুড়ে মরছিল। তারপর থেকে দুজনকে ও সি আইডির মত চোখে চোখে রাখছিল। তখনই ওর কাছে সব ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে যায়।

নিবিড় ছোঁয়া কে ভালবাসে আর আবির ওদের দুজনকে মেলানোর অনেক চেষ্টা করে যাচ্ছে। আর আজকে দুজন কে এত ঘনিষ্টভাবে দেখে ওর মাথা খারাপ হয়ে যায় রাগে মন চাই ছোঁয়া কে মেরে ফেলতে। তারপরেই মাথায় আসে মামীর কথা। মামী ছোঁয়া কে পছন্দ করে না জানতে পেরেছে ও। তাই মামির কাছে গিয়ে সব জানিয়ে দেয় আর নিজের ভালোবাসার কথাও বলে দেয়।

রাতটা আমার যেন তেন ভাবে কাটলো। রাতেই আমি লিলির সাথে কথা বলছি ও আমাকে বলেছে ওরা যে ফ্ল্যাটে থাকে ওই ফ্ল্যাটে একটা রুম ঠিক করতে পেরেছে। খবরটা শুনে খুশিতে আমার চোখ চিক চিক করে।

নিচে নামলাম আজ অনেক দেরি করে এ বাসায় আর আমি কোন কাজই করবো না। তেমনি ইচ্ছা আমার। আমাকে কেউ ডাকতেও আসে নি। দশটার পরে নিচে নামলাম নিচে এসে দেখলাম মানুষের যন্ত্রণার নিচে নড়াচড়া করা যাচ্ছে না। আমাকে দেখে একটা মেয়ে বলল তাহমিন আপু নাকি আমাকে সকাল থেকেই খুঁজছে। আপুর কাছে গেলাম আপু আমার চোখ মুখ ফোলা দেখে বললো কি হয়েছে?

‘কিছুই না গো কিছু বলবা?’
‘সে যে কালকে হলুদ ছুয়ে গেলি আর তুই এলিনা। আমিও ত আর ক্লান্তি দিতে তোদের খোঁজ নিতে পারি না ঘুমিয়ে পড়েছি। সকালে উঠে তো মানুষের জালায় আমি রুম থেকেই বের হতে পারছি না।’
‘তুমি আমাকে নিয়ে টেনশন করো না তা আমি ঠিকই আছে!’

‘তুই ঠিক নেয় কিছু তো হয়েছে। কেউ কিছু বলেছে বল আমাকে? চোখমুখ কেমন হয়ে গেছে ফুলে রাতে ঘুমাসনি?’
‘আরে ঘুমাইছি। বেশি ঘুমাইছি তো এজন্য চোখ ফুলে গেছে।’
‘আমার কাছে লুকাস না। আমি কিন্তু ঠিকই বুঝতে পারছি কিছু ত হয়েছে কিন্তু আমাকে বলতেছিস না কেন?’
‘আমার কিছুই হয়নি আমাকে নিয়ে চিন্তা ভাবনা না করে তুমি বিয়েটা ইনজয় করো প্লিজ আপু।’

অনেক বলে কয়ে আপুর কাছ থেকে চলে এলাম। হঠাৎ আবিরের সাথে দেখা হয়ে গেল এবার আমি আবিরের রহস্য ময় হাসি ওর তাকানো মানে বুঝতে পেরেছি এই ছেলেটা সব জানতো। একদম নিজের ভাইয়ের মত হয়েছে। আবির আমাকে দেখিই আশেপাশে তাকিয়ে ফট করে আমার কাছে চলে এলো‌।

একদম চোরের মত আমার সামনে এসে ফিসফিস করে বলল, ‘ভাবি ব্রো তো কাল তোমার ওখান থেকে আসার পর থেকে সেই যে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। আর রুম থেকে বের হয়নি। এত বেলা হয়ে গেল এত ডাকাডাকি করছে সবাই কিন্তু কোন রেসপন্স করছো।তুমি একবার দেখবে প্লিজ।’

আমি কঠিন দুটো কথা বলতে যাব তখনই দেখলাম আবির আমাকে পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছে চোরের মত দৌড়ে। আমি দেখতে পেলাম আবিরের আম্মু ফোনে কথা বলতে বলতে এদিকে আসছে সে হয়তো আমাকে লক্ষ্য করেনি। কিন্তু আবির কি নিজের মাকে দেখে এমন চোরের মত পালালো? কিন্তু কেন?

নিবিড়ের মা ফোন কান থেকে নামাল একদম নিবিড়ের দরজার সামনে গিয়ে। তারপর নিবিড় কে ডাকতে লাগলো কোমল গলায়, ‘নিবি আব্বু বের হও কি হয়েছে তোমার? এনিথিং রং! মমকে বল! তোমার কি টাকা লাগবে?’

আমি ভাবছিলাম আবির হয়তো আমাকে মিথ্যা বলেছে সিম্পাতি পাওয়ার জন্য কিন্তু নিবিড়ের মা কে এমন চিন্তা গস্ত ভাবে নিবিড়কে ডাকতে দেখে আমার ভাবনা ভুল প্রমাণ হয়। সারা শব্দ না পেয়ে নিবিড়ের মা চলে যায়। বিড়বিড় করে বলে যায় বিয়ে বাড়ি না হলে একটা কিছু করা যায় চিৎকার করে মানুষ কে তামাশা দেখাব নাকি‌। দুশ্চিন্তা মাথায় নিয়েই চলে যায়।

তিনি চলে যেতেই আবির এসে হাজির আমাকে বুঝাচ্ছে। অনেক ইমোশনাল কথা বলছে নিবিড় নিজের ক্ষতি করে দেবে তার অনেক রাগ। রাগের মাথায় অনেক উল্টা পাল্টা কাজ করে ফেলে। আমি কালকের কথা মনে করলাম আসলেই নিবিড়ের অনেক রাগ। যদি সত্যি আমার জন্য তার কিছু হয়।
আমি কি করব ভাবছি।

দুটানা মন নিয়েই দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। একবার দরজায় আঘাত করলাম তারপর কাঁপা কাঁপা গলায় নিবিড় কে ডেকে উঠলাম। একবার ডাকতেই দরজা খুলে গেল। আমি চমকে উঠলাম। আমার চোখ মুখ শক্ত হয়ে গেল। নিবিড় আমার ডাকের অপেক্ষায় ছিল তাহলে। কি শয়তান লোক।

অবাধ্য প্রেম পর্ব ৩৭

আমি চলে আসতে যাব নিবিড় টান মেরে আমাকে বেডরুমের ভেতরে নিয়ে আবার দরজা আটকে দিল। নিবিড় দরজা লাগিয়ে আমার দিকে তাকালো। তার মুখটাও কেমন ফোলা ফোলা হয়ে আছে।। বিধ্বস্ত লাগছে তাকে। লাল বর্ণের চক্ষুদ্বয়।
রাতে ঘুমায়নি মনে হচ্ছে।

অবাধ্য প্রেম বোনাস পর্ব