অবাধ্য প্রেম বোনাস পর্ব 

অবাধ্য প্রেম বোনাস পর্ব 
নন্দিনী নীলা

দরজা লাগিয়ে নিবিড় আমার সামনে এসে দাঁড়াতেই আমি দ্বিতীয়বারের মতো নিবিড়ের গালে থাপ্পর মারলাম। নিবিড় আমার হাতে থাপ্পড় খাওয়ার সাথে সাথে দুহাত আমাকে আবদ্ধ করল নিজের বুকের মাঝে শক্ত করে।
আমি আচমকা নিবিড়ের এমন আক্রমণে থত মত খেয়ে গেলাম। এমন ভাবে জরিয়ে ধরেছে যে আমি নড়াচড়া করতে পারছি না আমার হাঁসফাস লাগছে।

আমি দাঁতে দাঁত চেপে নিবিড়কে বললাম, ‘ ছাড়ুন আমাকে। আপনার মত বেহায়া লোক তো আমি দুটো দেখিনি। এত কিছুর পরও আপনি আমাকে রুম এনে দরজা আটকে আবার জড়িয়ে ধরেছেন। আপনার সাহস তো কম না। এত নির্লজ্জ বেহায়া লোক আমি আর একটাও দেখিনি‌।’

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

কথাগুলো আমার বেজে বেজে আসছে। এমন ভাবে জড়িয়ে ধরেছে যে আমি কথাগুলো বলতেও পারছি না। তবু আমি অনেক কষ্ট করে কথাগুলো বললাম। কিন্তু নিবিড়ের তাতে কোন হেলদোল আছে কিনা আমি জানিনা। আমার কথাগুলো সে আদো শুনেছে কিনা কে জানে। তিনি তো আমার কাঁধে এমনভাবে মুখ ঠেকিয়ে রেখেছে মনে হচ্ছে সে আমার শরীরের উপরে ঘুমিয়ে পড়েছে।

তার শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় অতিরিক্ত বেশি লাগছে। তার শরীর থেকে গরম তাপ যেন আমার শরীর পুড়িয়ে দিচ্ছে। উনার শরীর এত গরম কেন? আমি তো এইভাবে আর কিছুক্ষন থাকলে মনে হয় এখানে ছারখার হয়ে যাব গরমে আমার হাঁসফাস লাগছে।

দম বন্ধ হয়ে আসছে। অনেক কষ্টে নিবিড় কে ঠেলে ঠুলে আমি তাকে সরাতে অবশেষে সক্ষম হলাম। তিনি নিজেই আমাকে ছেড়ে দিয়েছে। আমার ধাক্কা আর লাফালাফি সে হয়তো কুলাতে পারেনি। আমি তার থেকে অনেকটা দূরত্ব নিয়ে দাঁড়িয়ে কিছু বলতে যাব সে বিছানায় গিয়ে ধপ করে শুয়ে পড়ল।

আমি রেগে কয়টা কথা বলে দরজা খুলে বেরিয়ে আসতে গেলাম। একি দরজা খুলছে না কেন? খোলার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে দুইটা লাথি পর্যন্ত মারলাম। কিন্তু দরজা কোনভাবেই খুলল না। নিবিড় শিওর কিছু করেছে। আমি রেগে বিছানার কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। নিবিড় চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে।

‘ দরজা খুলছে না?’
নিবিড় লাল বর্ণ চোখে আমার দিকে তাকালো। তার এই দৃষ্টি বলে দিচ্ছে সে কতটা অসুস্থ। কাল রাতে যখন আমার সাথে নাচানাচি করলো তখন তো সুস্থ ছিল না। রাতের ভেতরে এত অসুস্থ হয়ে গেল কিভাবে? তার অসুস্থ বিষন্ন মুখ দেখে আমার মায়া হলো কিন্তু তবুও আমি সেই মায়া, দুর্বলতা কে প্রকাশ করতে দিলাম না। কঠিন স্বরে বললাম, ‘ দরজা খুলে দেন। আমি বের হবো।’

নিবিড় অসুস্থ গলায় বলল, ‘ আমি অসুস্থ ছোঁয়া। তুমি আমাকে এই অবস্থায় একা ফেলে চলে যাবে?’
আমি রাগে ফেটে যাচ্ছিলাম নিবিড়ের কথা শুনে বিস্মিত গলায় বললাম, ‘ আমি থাকলেই মনে হয় আপনি সুস্থ হয়ে যাবেন ম্যাজিকের মত। আর বাসার কাউকে রুমে ঢুকতে দিচ্ছেন না কেন? কাউকে সাড়া দিচ্ছেন না কেন? অসুস্থ হয়ে গুমড়ে মরছেন দরজা আটকে। এখন আমাকে অসুস্থতা দেখাচ্ছে।’

‘ সবাই বিয়ে নিয়ে ব্যস্ত আমার দিকে খেয়াল রাখার কারো সময় নাই।’
‘তো আমি কি আপনার খেয়াল রাখার জন্য বসে আছি নাকি। আমিও বিয়ে নিয়ে ব্যস্ত, বের হতে দিন আমাকে। দরজা খুলেন।’

নিবিড় বলল, ‘ সরি এখন তোমাকে বের হতে দেওয়া যাবে না। ওইখানে খাবার আছে আমাকে খাইয়ে দাও আগে তারপর আমাকে ওষুধ খাওয়াবে। তারপর তুমি যেতে পারবে।
আমি চোখ দুটো বড়ো বড়ো করে ফেললাম কথা শুনে।
আমি অবাক গলায় বললাম, ‘ আমি আপনাকে খাইয়ে দেব?’

‘ হুম। ‘ বলে নিবিড় উঠে পরল বিছানায় থেকে। তারপর বাথরুমে ঢুকে চোখে মুখে পানি দিয়ে এলো। এদিকে যে আমি চিৎকার চেঁচামেচি করছি সেদিকে পাত্তাই দিচ্ছে না। আমি নিজেই আবার থেমে গেলাম কারণ বাইরে আবার চলে যাবে খুব জোরে চিল্লাচ্ছি। আমাকে চুপ করে যেতে দেখে নিবিড় শুকনো মুখেও হেসে বলল, ‘ আমার চিন্তায় কি তুমিও রাতে ঘুমাওনি?’

আমি কটমট চোখে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘ আমি আপনার জন্য চিন্তা করব। এমন আজাইরা ভাবনা ভাবার টাইম নাই আমার। আপনাকে এখন আমার কি করতে মন চাচ্ছে জানেন?’
নিবিড় আমার সামনে এসে দাড়িয়ে আমার দিকে ঝুঁকে বলল, ‘ জানি। অসুস্থ মানুষের সেবা করতে ইচ্ছা করছে। আসো আমাকে খাইয়ে দিয়ে সেবা করবে।’

বলে নিবিড় আমার হাত ধরে টেনে বিছানায় নিয়ে বসিয়ে দিল। আর আমার হাতে দিল খাবারে প্লেট। নিজেও বসে পরল খাওয়ার জন্য। আমি খাবারে প্লেটের দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘ এই রুমে খাবার আসলো কীভাবে?’
‘খাবার যেভাবে আসে সেভাবে আসছে।’

আমি সন্দেহ চোখে তাকিয়ে বললাম, ‘আপনি তো দরজায় খুলেন নি কালকে থেকে তাহলে আপনার রুম গরম খাবার কিভাবে আসলো? আবার দুই ভাই মিলে আমাকে বোকা বানিয়ে বানালেন! আপনার মা তাহলে ডাকল কেন?’
নিবিড় প্রশ্নের উত্তর দিল, ‘সত্যি কথা তো।

তুমি জানো কাল রাত থেকে জ্বরে আমি কতটা কষ্ট করেছি। ছটফট করেছি। জ্বরের ঘোরে ও তুমি আমাকে থাপ্পর মারছিলে রাগি রাগি চোখে আমার দিকে তাকাচ্ছিলে। রাতটা আমার ছটফট করে কাটলো, সকালে আবির এসে আমাকে ডাকাডাকি করে বাড়ির সবাই ডাকাডাকি করে আমি দরজা খুলি নাই। আমি তো তোমার অপেক্ষায় ছিলাম। ও যখন তোমার কথা বলে তখনই দরজা খুলে দেয়।

আবির কায়দা করে আমাকে দেখে নেই যে আমার শরীরে জ্বর তারপর ওষুধ খাবার দিয়ে যায়। দ্বিতীয়বার দরজা খোলার সময় বলে তোমাকে সাথে করে নিয়ে এসেছে। আর আগেরবার বলে যায় তোমাকে নিয়ে এসেই দরজা ধাক্কা দিবে। তো আমি বোকার মতো বিশ্বাস করি দরজার খোলার পরে ওসব দিয়ে রেখে চলে যায়। তোমাকে পায় না তাই ওর উপর খুব রাগারাগি করি। এবার ও বলেছে এবার তুমি নাকি দরজা ধাক্কা দেবে আসলেই তাই হলো‌।’

‘আপনি কি পাগল? এই অবস্থায় আপনি একা রুমের ভেতর দরজা আটকে বসেছিলেন। আপনার আম্মুকে দেখলাম কত দুশ্চিন্তা করছে বিয়ে বাড়ি হয়তো এজন্য কেউ এতটা খেয়াল করছে না। কিন্তু আপনার উচিত ছিল তাদেরকে জানানো। আর খাবার, ওষুধ খাওয়া। এরকম পাগলামি কেউ করে?’

‘ তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। আগের মত আবার আমাকে বিশ্বাস করো। তাহলে আমি আর এরকম পাগলামি করবো না।’
‘ ইম্পসিবল আপনি মরে গেলেও আপনাকে আমি বিশ্বাস করব না।’
‘আমি মরে গেলে তুমি খুশি হবে?’
‘ শুনুন আপনার সাথে আমি ফালতু প্যাচাল পারতে পারবো না। আপনি দরজা খুলুন আমি চলে যাব। আপনার সাথে আমি কোন কথাই বলতে চাই না।’

‘তুমি যদি এখন আমাকে ক্ষমা না করে ছেড়ে চলে যাও আই প্রমিজ আমি কিন্তু নিজের ক্ষতি করে দেব‌।’
‘ আপনার যা খুশি তাই করেন।’বলে আমি বিরক্তকর একটা নিঃশ্বাস ফেলে দরজার দিকে যেতে লাগলাম। নিবিড় নিজের হাতের রিমোট দিয়ে দরজা ওপেন করে দিল। তারপরে চিৎকার করে বলল, ‘ দরজা খুলে দিছি এবার তুমি যেতে পারবে। কিন্তু যাওয়ার আগে তোমাকে একটা সারপ্রাইজ দিতে চাই। সারপ্রাইজটা না হয় দেখে যাও।’

দরজার কাছে গিয়েও আমি কেন জানিনা নিবিড়ের কথা শুনে পেছন ফিরে তাকালাম। আর পেছনে ফিরে আমি আঁতকে উঠলাম। নিবিড় এর হাতের ছুরি। ছুরি হাতে নিজের শিরা কাটার জন্য প্রস্তুত হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। জ্বরে কি এই লোকটার মাথা খারাপ হয়ে গেল নাকি।

আমি দরজা খোলা বাদ দিয়ে আবার ভেতরের দিকে এগোতে এগোতে বললাম, ‘আরে আরে কি করছেন? মাথা ঠিক আছে তো আপনার! ছুরি ফেলুন! একদম আমাকে ভয় দেখিয়ে কিছু করানোর চেষ্টা করবেন না। ভালোবেসে মন থেকে তো কিছু করাতে পারেন না। শুধু পারেন থ্রেট দিতে আর ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করতে তাই না।’

নিবিড় আমার কথার প্রেক্ষিতে বলল, ‘আমি কিন্তু তোমাকে এখন রাজি করানোর জন্য হাত কাটছি না। আমি হাতটা এখন কেন কাটবো জানো?’
আমি বললাম কেন?
‘আমি সত্যি তোমার ইগনোর আর অবহেলা ঘৃণা টা মেনে নিতে পারছি না। এভাবে থাকলে আমি এমনিতেই দুমড়ে মরে যাব। আর এই জ্বরটা কিন্তু তোমার জন্য এসেছে তোমার কাছ থেকে কালকে আঘাতটা পেয়ে আমি সহ্য করতে পারিনি। এজন্য আমি এমন বিছানায় পড়ে আছি।

আর এইভাবে তুমি যদি আমাকে ঘৃণা করতেই থাকো তাহলে আমি জানি আমি বেঁচে থেকেও মরে যাব। এইভাবে বেঁচে থাকার থেকে তো মরে যাওয়াই ভালো তাই না। এই কি বললে আমি সবসময় তোমাকে থ্রেট আর ইমোশনাল ব্ল্যাকমেল করি। তুমি কি আমাকে ভালোবাসা সুযোগটা দিয়েছো?

আমার অনুভূতি গুলো বোঝানোর আমাকে কি সুযোগ দিয়েছো? একটু প্রকাশ করতে গিয়েছি কি আর তুমি আমি আমাকে নাকানি-চুবানি খাওয়াচ্ছ। একটা সুযোগ দিয়ে দেখাও। নিবিড় বলতে তুমি অজ্ঞান থাকবে। নিবিড় ছাড়া তুমি কিছুই বুঝবে না। সেটা করতে জাস্ট আমার এক মাস লাগবে।

অবাধ্য প্রেম পর্ব ৩৮

আমাকে আমার মত ভালবাসাটা বোঝানোর সুযোগ দিয়ে দেখাও একবার। তারপরও যদি তুমি আমার প্রতি কোন ফিলিংস না পাও তারপরে যাও তোমাকে আমি ছেড়ে দেব। আমি তার সাথেই সারাটা জীবন কাটাতে চাই যে আমাকে আমার থেকেও বেশি ভালবাসবে।’

অবাধ্য প্রেম পর্ব ৩৯