অবাধ্য প্রেম পর্ব ৩৯

অবাধ্য প্রেম পর্ব ৩৯
নন্দিনী নীলা

‘ আচ্ছা, আচ্ছা। আমি আপনাকে খাইয়ে দিচ্ছি। ছুরিটা রাখুন। এমন বাচ্চাদের মতো জেদ, আর অহেতুক রাগ কেন করছেন সেটা আমার মাথায় ঢুকছেনা। এইসব কি সত্যি নাকি আপনার একটা নাটক সেটা আমি বুঝতে পারছি না। কি যন্ত্রণায় ফেঁসে গেলাম আমি।’ দাঁতে দাঁত চেপে কথাটা বললাম নিবিড়কে উদ্দেশ্য করে।

নিবিড় আমাকে প্লেট হাতে নিতে দেখে ছুরি রেখে আমার সামনে বসে বিশ্বজয়ের হাসি হাসলো। নিজের কাজে সফল হয়েছে হাসবেই তো। আমি চোখ কটমট করে তাকিয়ে আছি। দাঁতে দাঁত চেপে রাগ সংবরণ করে বিরিয়ানি লোকমা তুলে দিলাম নিবিড়ের মুখে। নিবিড় অপলক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

‘ আপনি অন্যদিকে তাকান না হলে কিন্তু আমি চলে যাব। আর একটু ও খাইয়ে দিব না।’
‘ সেটা তুমি পারবেনা তাই ঢং না করে একটু তাড়াতাড়ি খাইয়ে দাও। আমার পেটে তো ইঁদুর দৌড়াচ্ছে।’পেটে হাত দিয়ে বলল নিবিড়।

আমি প্লেট নিবিড়ের কোলের উপর দিয়ে বললাম, ‘পারবো না আমি। আমি আপনার চাকর হই নাই। আর না আমি আপনার ঘরের বউ যে আপনি যা বলবেন, যা অর্ডার করবেন আমি তাই তাই করবো। সুইসাইড করার ভয় দেখিয়ে আমাকে দিয়ে খাইয়ে নিচ্ছেন তো। ভালো হবে না আপনার কক্ষনো ভালো হবে না আপনার। এখন আপনার পেটে ইঁদুর দৌড়াচ্ছে আপনি নিজে খেয়ে ইঁদুর থামান। আমি গেলাম।’

বলেই আর এক সেকেন্ড ওয়েট করলাম না গটগট করে দ্রুত পায়ে বেরিয়ে এলাম। নিবিড় কে কিছু বলার সুযোগ দিলাম না। তাহলে আরেকটা নাটক শুরু করে দেবে। এই ছেলেটা এতো নাটক বাজ হয়ে গেছে উফফ।

প্লেটের যেখান থেকে ছোঁয়া নিবিড় কে খাইয়ে দিচ্ছিল। সেই স্থানটার থেকে বিরিয়ানি নিয়ে খেতে লাগলো নিবিড়‌। ওর মনে হচ্ছে এখানে ছোঁয়ার হাতের স্পর্শ লেগে আছে। মনে হচ্ছে ছোঁয়া এখনো ওকে খাইয়ে দিচ্ছে। ছোঁয়া চলে যেতেই আবির রুমে এসে ঢুকলো। নিবিড়কে চোখ বন্ধ করে বিরিয়ানি খেতে দেখে আর মিটিমিটি করে হাসতে দেখে অবাক হয়ে বলল, ‘হোয়াটস হ্যাপেন ব্রো?’

নিবিড় চোখ বন্ধ অবস্থায় বলল, ‘ ছোঁয়া আমাকে খাইয়ে দিছে আবির।’
আবির চমকানো গলায় বলল, ‘ সত্যি! ভাবিকে তো দেখলাম রাগে গজগজ করতে করতে যাচ্ছে। আমার দিকে এমন ভাবে তাকাচ্ছিল চোখ দিয়ে আমাকে ভস্স করে দেবে।’

নিবিড় চোখ মেলে আবিরের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ও তোর ভাইয়ের একমাত্র বউ। আর তোর একমাত্র ভাবি। এই বাড়ির বড় বউ। তার এতটুকু রাগ না থাকলে কিছু হয়?’
আবির ভাইয়ের কথা শুনে বলে, ‘ভাই তুমি ভাবির প্রেমে কবে পড়ছিলে বলো তো। তোমরা খালি ঝগড়া করতে আমাকে কিন্তু কাহিনী এখনো বলোনি। এবার বল তুমি ভাবির জন্য এমন দেওয়ানা হলে কিভাবে!’

‘তোর ভাবীকে প্রথম দেখেই আমি প্রেমে পড়ে গেছিলাম। যেখানে আমার সাথে টক্কর নেওয়ার কেউ সাহস পায় না সেখানে ও কিনা আমাকে ভয় না পেয়ে আমার সাথেই ঝগড়া লাগিয়ে দেয়। এতটুকু ভয় আমি ওর চোখে দেখিনি জানিস। ও আমার হাত থেকে আমার প্রিয় ফোনটা ঠাস করে ভেঙ্গে ফেলল।

প্রথমে ওর ওপর আমার যতটাই রাগ উঠেছিল কিন্তু ওর একের পর এক সাহসিকতা দেখে তা আমি হতভম্ব হয়ে যাচ্ছিলাম। তুই জানিস আমি ওকে চড় মেরেছিলাম ও তবু ও একটু ভয় না পেয়ে আমার চোখে চোখ রেখে প্রতিবাদ করেছিল।

তখন অবশ্য এটা ভালোবাসা ছিল না তখন জাস্ট ওর এই সাহসিকতা আমার কাছে বিস্ময় ছিল। ওর এই সাহসিকতার জেদ নষ্ট করার জন্য আমি ওকে একের পর এক ফাঁদে ফেলেছি কিন্তু কখনোই আমার সামনে মাথা নত করেনি সব সময় আমার সাথে পাল্লা দিয়ে গেছে।

ঐই সময় তো আমি বিরক্ত হয়ে গেছিলাম কোনোভাবেই ওকে আমি হার মানাতে পারছিলাম না। কিন্তু সেই রাতে সেই রাতে যখন ওকে আমি একা রাস্তায় পাই ও বাসা থেকে পালিয়ে গেছিল বিপদে পড়েছিল সেই রাতে শুধু ওর উপর আমার কোন রাগ ছিল না। আমার সমস্ত রাগ কোথায় চলে গিয়েছিলাম জানিনা।

সেই রাতে আমি অনুভব করি ছোঁয়ার উপর আমি দুর্বল হয়ে পড়েছি। ওকে পছন্দ করতে শুরু করেছি। তারপর সেটা আস্তে আস্তে ভালোবাসার রুপ নেয়। কিন্তু আমি তো বুঝতে পারি না আমি তো ওকে চিরশত্রু মনে করতাম সেখান থেকে অজান্তেই কখন যে আমার মনের রানী হয়ে গেল।’

সকালের নাস্তা আমার বারোটায় করা হলো। এদিকে বিয়ে বাড়ি বলে কথা। দূর দূরান্ত থেকে কথা আত্মীয়-স্বজন আসছে। কত নতুন মুখ। বাসার সাজ যেন সকালের মধ্যেই চেঞ্জ করে ফেলেছে। তাজা ফুল দিয়ে সজ্জিত হয়েছে চারপাশ। দারুন লাগছে।

ফুলের গন্ধে মম করছে বাসাটা বাগানের দিকে তাকালে মুগ্ধতা এসে যায় একরাশ। তাজা ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে বর ব‌উ এর জন্য করা স্টেজ।। তিনটা সোফা রাখা আছে। মাঝখানেরটায় হয়তো বর বউ বসবে ওইটা একটু বড় আর দুই পাশে দুইটা সিঙ্গেল সোফা। সাড়ে বারোটার সময় অনেকে সাজ পোশাক শেষ করে ফেলেছে।

আর বাচ্চারা অনেকেই সোফা বিভিন্ন অ্যাঙ্গেল করে বসে বসে ছবি তুলছে। ক্যামেরাম্যান তো ভিডিও ছবি তোলা এখন থেকে স্টার্ট করে দিয়েছি। এ বাসার আত্মীয়-স্বজন কাউকে আমি দেখতে পাচ্ছি না সবাই হয়তো যার যার রুম সাজগোজ নিয়ে ব্যস্ত। বাইরে আর ভেতরে যারা আছে বসে আছে গল্প করছে সবাই আজকে এসেছে বিয়ের নিমন্ত্রণে।
একটা ঝুড়ি ভর্তি ফুল দেখতে পেলাম। একজনকে বলতে শুনলাম বাসর ঘর সাজানো হবে সেই জন্য ফুল এনে রাখা হচ্ছে এগুলো যেনো কেউ না ধরে।

আজকে তাহমিন আপু আমাকে জোর করে বলেছে আমি যেন তার সাথে সাজগোজ করি আর তাদের দেওয়া শাড়িটা যেন পরে আমি তাকিয়ে কাট করে না করে দিয়েছি আজকে আমি কোন শাড়ি পরবো না। আজকে আমি আমার একটা ড্রেস আছে নতুন অনেক গতবার আমি নতুন কিনেছিলাম ঈদের আগে।

সেটাই পড়বো। আপু বলছিলাম আমি যেন তার সাথে এসে সাজগোজ করি। আমি বললাম আমাকে খুব বাজে লাগবে আপু‌‌। ওই ড্রেসের সাথে গর্জিয়াস সাজ খুব‌ই খারাপ দেখা যাবে।। আর তুমি তো জানো আমি বেশি মেকআপ করি না। আর করলেও আমাকে ভালো দেখা যায় না আমাকে অত মেকাপে মানায় না। তার থেকে আমি যেভাবে থাকি থাকতে দাও। আপু আর কিছু বলার পেল না। কিবা বলবে বলার মত কিছু খুজেই পাইনি হয়তো।

কিন্তু একটা জিনিস আমাকে অবাক করলো নিবিড়ের মা আজকে কেমন যেন আগুন চোখে আমার দিকে তাকাচ্ছিল। যখনই দেখছিল যেন আমাকে খেয়ে ফেলবে না। আমি কি করেছি ওনার উনি আমার দিকে এমন কড়া চাহনি দিচ্ছে কেন? গোসল করেই আমি নিচে এসে লাঞ্চ করে গেছি।

তারপরে উপরে গিয়ে আমি নিজের মত সাজগোজ করলাম। কিন্তু আজকের সাজটা ভালো হয়েছে কারণ আপুর সাথে সাজবো না বলে আপুর বিয়ের মেকাপ বক্স আমাকে দিয়ে দিয়েছে সাজার জন্য। আমি একেবারেই জন্য নেই আমি শুধু বলেছি আজকেই সাজবো তারপর তোমার জিনিস তোমাকে ফেরত দিয়ে দেব। আপু বলেছে আমার তো এসব ব্যবহার করাই হবে না আমি কি আর এমন সাজবো নাকি আর এখন সাজতে হলো কিন্তু পার্লারের লোক তো তাদের নিজেদের জিনিস দিয়ে আমাকে সাজিয়ে দেয়।

কালকের তুলনায় আজকে আমি একটু গর্জিয়াস সাজলাম কিন্তু অতটাও না আমি যতটুকু পারি বুঝি ততটুকুই সাজলাম তারপরে নিচে আসলাম।
বাসা একদম ফাঁকা সবাই বাগানে চলে গেছে। আর একটু পরেই বিয়ে পড়ানো হবে সন্ধার আগেই বিয়ে পড়াবে কারণ দূর দূরান্তের অনেক আত্মীয়স্বজন এসেছে তারা বিয়ে পড়ানো হলে চলে যাবে।

আমি মেইন দরজা খুলে বাইরে বের হতে যাব তখনই একজোড়া হাত আমার হাত ধরে আমাকে আটকে দেয়। আমি পেছনে তাকাই ভয় পেয়ে আতকে। কিন্তু নিবিড় কে দেখে আমার ভয় কেটে একরাশ বিরক্তি এসে যায়। আমি নিবিড়ের দিকে বিরক্তিকর গলায় তাকিয়ে বলি, ‘ আবার শুরু করে দিয়েছেন হাত ছাড়ুন! সবাই বাগানে হইহুল্ল করছে। আপনি এখানে কি করছেন? আপনার প্রিয় কাকার না বিয়ে। তার বিয়েতে তার পাশে না থেকে…

‘ আমি তো তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। তুমি আবার একা একা যদি না যাও। আগে জানতাম মেয়েরা সাজগোজ করতে দিন পার করে দেয়। আজকে সেটা নিজে চোখে দেখলাম। সবাই সাজগোজ করে চলে গেছে আর তুমি দেখো বিয়ে পড়ানো হয়তো শেষ হয়ে যাবে এই মুহূর্তে তোমার সাজগোজ শেষ হলো।’

‘ একদম ফালতু কথা বলবেন না। মোটেই আমার সাজগোজ করতে এত সময় লাগে নাই। আমার সাঁজতে পাক্কা পাঁচ মিনিট লাগে। আর সবার মত অত সাজিনি সবার মত সাজতে গেলে আজকে হয়তো আমি রুম থেকে বের হতে পারতাম না। আর আমি সাজতে গিয়েছি পরে সবাই তো সেই সকাল থেকে দরজা আটকে বসেছিল। আমি এইমাত্র গিয়ে এইমাত্র বেরিয়ে আসলাম।’

‘ আচ্ছা বুঝলাম তা তুমি কেন সকাল থেকে দরজা আটকে ওদের মতো সাজলে না?’
‘সেটা আমার ইচ্ছা আপনাকে আমি কৈফিয়ত দিতে যাব না অবশ্য‌ই। এবার আমার হাত ছাড়েন। না হলে এবার আপনার জন্য সত্যিই হয়তো আমি গিয়ে দেখব কবুল বলার শেষ।’

‘শেষ হয়ে গেলে শেষ হয়ে যাবে। তুমি আর আমি কবুল বলে না হয় আমাদের বিয়েটা দেখে নেব।’ দাঁত কেলিয়ে বলল নিবিড়।

আমি কঠিন একটা ওয়ার্ড ব্যবহার করতে যাব তখনই নিবিড় একটা ফুল আমার সামনে ধরে। আমি ফুল দেখে বকাটা আর দিতে পারি না। ফুলের দিকে তাকিয়ে আছি অবাক হয়ে। প্রপোজ করবে নাকি এবার কপাল কুঁচকে ভাবছি‌। নিবিড় আমাকে অবাক করে দিয়ে ফুলটা আমার কানের পিছনে গুছিয়ে দিয়ে বলে, ‘ বাহ দারুন লাগছে তো। ‘

অবাধ্য প্রেম বোনাস পর্ব

বলেই নিবিড় নিজের পকেটে থেকে ফোনটা বের করে আমার দুইটা ছবি তুলে। আর আমি কানে হাত দিয়ে হা করে নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে আছি। নিবিড় আমার ছবি তুলছে আমি না করব সেটাও করতে পারলাম না। ও ছবি তুলে গান গাইতে গাইতে চলে গেল আমাকে ফেলে।

অবাধ্য প্রেম পর্ব ৪০