অবাধ্য প্রেম পর্ব ৪০

অবাধ্য প্রেম পর্ব ৪০
নন্দিনী নীলা

নিবিড় যেতেই লিহানের আগমন ঘটলো। ও কেন যেন বাসার ভেতরে আসে। লিহান ভেতরে এসে আমাকে অমন থমকে যাওয়া মুখে আমাকে অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করে, ‘ ছোঁয়া, আর ইউ ওকে? বাইরে না গিয়ে এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন?’

আমি থতমত খেয়ে কানে হাত দিয়ে বলি, ‘যাওয়ার জন্যই তো বের হয়েছি। তুমি এখানে কি করছো? বিয়ে পড়ানো কি শেষ?’
লিহান বলল, ‘ ফোন অফ হয়ে গেছে আজকে চার্জে বসাই নাই। এজন্য চার্জে বসাতে আসলাম। আর বিয়ে এখনো শুরু হয় নাই। কিন্তু শুরু হয়ে যাবে।’

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

‘তো এটা কি পরে করতে পারতে না বিয়ে না দেখেই চলে আসছো।’
‘ তুমি দেখি বিয়ে দেখার জন্য খুব এক্সাইটেড।’
‘সবার বিয়েতে এক্সাইটেড থাকি না। কিন্তু আপন মানুষের বিয়েতে এক্সাইটেড থাকি। থাক তুমি তোমার কাজ কর আমি যাই।

বলে আমি তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আসলাম বাইরে এসে দেখলাম সবাই জরো হয়ে আছে। আপুরা যেহেতু স্টেজে বাসা এজন্য তাদের আমি ভালই দেখতে পাচ্ছি তারমানে এখন কাবিন হচ্ছে। দুজনে একটা কাগজের সাইন করলো এরপর হুজুর দিয়ে বিয়ে করানো হবে।

নিবিড় তাদের আশেপাশে নাই আমি দেখতে পেলাম নিবিড় আমাদের সবার পেছনে একাই দাঁড়িয়ে ফোন টিপছে। বিন্দুমাত্র আগ্রহ নাই বিয়েতে। আমি একবার পেছনে তাকিয়ে আবার সামনে তাকালাম। তখনই ভিড় ঠেলে নিবিড় আমার কাছে চলে এলো আর আমাকে এক হাতে জাপটে ধরে বলল, ‘আরে জান তুমি চলে আসছো। আমাকে রেখেই বিয়ে দেখা শুরু করে দিয়েছো। আমি যে তোমার জন্য বিয়ে না দেখে ওইখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম।’

আমার কাঁধে নিবিড়ের হাত আমি নিবিড়ের হাতের আঙ্গুলে একটা চিমটি কেটে বললাম, ‘বিয়ে দেখবেন ভালো কথা আমাকে জাপটে ধরেছেন কেন?’
নিবিড় বলল, ‘একটু গায়ে না হয় ছোয়ায় লাগছে। তাই এত্ত জোরে চিমটি দিলে বাপরে শক্তি আছে। আমাকে সবাই তোমার উপর ফেলছে ধাক্কিয়ে এর জন্যই তো পড়ে যাওয়ার ভয়ে তোমাকে ধরে রাখছি।’

আমি বললাম, ‘ও আচ্ছা তাই। আমার কাঁধ থেকে হাতটা সরান তো। আমি এখান থেকে সরে অন্য জায়গায় দাঁড়াব। আর আপনি ভুলেও আমার আশেপাশে এসে দাঁড়াবেন না‌।’

নিবিড় আমাকে কোনমতেই ছাড়বেনা আমি ওকে ধাক্কায় বিয়ে দেখা বাদ দিয়ে বাইরে চলে আসলাম। ঠেলে বাইরে এসে দেখলাম নিবিড়ের মা আর মাইসা দুজনের রাগী মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে দেখেই নিবিড়ের মা আমার হাত ধরে টানতে টানতে বাসার ভেতরে নিয়ে আসলো। রাগের কারণ কিছুই বুঝতে পারছি না। নিবিড়ের মা আমাকে এমনভাবে টেনে আনলো জানো আমি মানুষ না। গরু ছাগল।

মাইশা আমার দিকে শয়তানি চাহনী দিয়ে তাকিয়ে আছে ও এত খুশি কেন সেইটা আমি বুঝতে পারছি না।
‘ কোন সমস্যা আন্টি আপনি আমাকে এভাবে টেনে আনলেন কেন? আপনি কি কোন কারনে আমার উপর রেগে আছেন?’

নিবিড়ের মা আচমকা তেরে এসে ঠাস করে আমার গালে থাপ্পর মারল। আমি আচমকা থাপ্পর খেয়ে থমকে গেলাম। গালে হাত দিয়ে ছলছল নয়নে নিবিড়ের মায়ের দিকে তাকালাম। তিনি এখনো আমার দিকে রাগে ক্ষিপ্ত চাহনিতে তাকিয়ে আছে।

‘ কোন অপরাধ আপনি আমার গায়ে হাত তুললেন?’ ঝাঁঝালো গলায় বললাম।
নিবিড়ের মা আমাকে বলল, ‘ এই মুহূর্তে তুমি এই বাসা ছেড়ে বেরিয়ে যাবে সবাই এখন বিয়ের ওখানে বিজি। তোমাকে যেন আর এক সেকেন্ডে বাসায় না দেখি। বড়লোক বাড়ির ছেলেকে ফাঁসিয়ে এই বাসায় পার্মানেন্ট থাকার ধান্দা তোমার। আমি ধরতে পারবো না ভেবেছ? আর আমার ছেলের সাথে যদি কোন রকম সম্পর্ক তৈরি করার চেষ্টা করেছো আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।’

‘ আপনার মাথা ঠিক আছে? আপনি আমার বড় বলে আপনাকে আমি অসম্মান করছি না। কিন্তু আজেবাজে কথা বললে আমি আপনাকে ছেড়ে দেবো না। আপনার ছেলেকে আমি ফাঁসাচ্ছি? আপনার ছেলেকে জিজ্ঞেস করুন তার সাথে আমার কোন রকম সম্পর্ক নাই। সে নিজেই আমাকে ডিস্টার্ব করে।

এত পারেন নিজের ছেলেকে নিজের আঁচলে বেঁধে রাখেন না। তা পারেন না আমাকে দোষ দিতে আসছেন। আচ্ছা আপনার কানে এই বিষগুলো ঢেলেছে কে? আপনি তো আমাকে এমনিতেই পছন্দ করতেন না। কিন্তু আপনি এসব জানতেন না। আপনাকে কি এই কথাগুলো মাইশা আপু বলেছে?’

মাইশা চেচিয়ে উঠে বলল,, ‘দেখছো মামি কত বেয়াদব এই মেয়েটা। তোমার সাথে কেমন চ্যাটাং চ্যাটাং করে কথা বলছে। কিভাবে নিবিড়কে একা ফাঁসাচ্ছে বলছে ব্রো নাকি তাকে ডিস্টার্ব করে না। নিজের দোষ গুলো ঢেকে ব্রো কে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে তুমি কিন্তু ওর কথাই ভুলো না মামি।’

আমি মাইশা কে কিছু বলতে যাব তখনই নিবিড় দরজা খুলে ভেতরে এলো। ওকে দেখেই নিবিড়ের মার সুর চেঞ্জ হয়ে গেল। তিনি সোফায় বসে পরল। আর আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ ছোঁয়া আমাকে এক কাপ চা করে দাও তো খুব মাথা ব্যাথা করছে।’

নিবিড় আমাদের দিকে চেয়ে ছিল অবাক হয়ে কিছু জিজ্ঞেস করবে তার আগে নিবিড়ের মা কথাটা বলল যা শুনে আমি চমকে উঠলাম। তার দিকে তাকাতেই দেখলাম আমাকে ইশারায় ওইসব বলতে মানা করছে। গিরগিটির মতো রং পাল্টায়।

আমি রান্না ঘরে চলে গেলাম। নিবিড় মায়ের কাছে গিয়ে কোমল গলায় জিজ্ঞেস করছে মাথা কেন ব্যাথা করছে হ্যানত্যান। মাইশা নিবিড়কে দেখেই বাইরে চলে গেছে। চা করে এসে দেখলাম নিবিড় নিজের মায়ের মাথা টিপে দিচ্ছে।
রাগে আমার মাথা ফেটে যাচ্ছে। কিন্তু ও দাঁতে দাঁত চেপে ওনার হুকুমটা আমার শুনতে হলো। এত অপমানিত, থাপ্পর খেয়েও উনার জন্য আমার চা করতে হলো। আমি চা নিয়ে একদম ওনার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম কঠিন মুখ করেই বললাম, ‘নিন আপনার চা।’

নিবিড় বলল,’ আম্মু তোমাকে চলো রুমে নিয়ে যায়। শুয়ে থাকলে মাথা ব্যথা কমে যাবে।’
নিবিড়ের মা চা খেয়ে ছেলের সাথে রুমে চলে গেল আমি বাইরে চলে এলাম। আমাকে বাসার ভেতর থেকে বের হতে দেখে বলল, ‘বিয়ের এখানে উপস্থিত না হয়ে ভেতরে কি করছিলে? তুমি না আমাকে তখন বিয়ে দেখার জন্য তারা দিয়ে চলে এলে।’

‘আমি তো বিয়ে দেখেই ভিতরে গেছিলাম একটা দরকার।’
লিহান অবাক গলায় বলল, ‘আর ইউ সিরিয়াস।’
‘ হ্যাঁ।’

‘বলো কি তাহলে বর বউ এখন কবুল বলল কেন? বিয়েতে কয়বার কবুল বলে?’
আমি জিভ কেটে বললাম, ‘আমি আসলে কাবিন দেখেই চলে গেছি। বিয়ে পড়ানো দেখি নি।’
লিহান বলল, ‘আবির আম্মু তোমাকে ঐভাবে টেনে নিয়ে গেল কেন?’
আমি ঢোক গিলে লিহানের দিকে তাকিয়ে আছি। লিহান উৎসুক হয়ে চেয়ে আছে জানার জন্য।

‘তুমি দেখেছো?’
‘হ্যাঁ দেখলাম তো উনি খুব রেগে ছিলেন বোধহয় তোমার উপর!’
‘হয়তো কিন্তু নিয়ে গেলেন এমন ভাবে কিন্তু যাওয়ার পরে এক কাপ চা চাইলেন। বুঝলাম না চা খাওয়ার জন্য অমন করে নিয়ে গেলেন কেন?’
লিহান অবিশ্বাস্য বলায় বলল, ‘সিরিয়াসলি?’

‘একদম। উনার নাকি মাথা ব্যথা করছে। চা খেয়ে এখন তো রুমে গিয়ে শুয়ে পড়েছে বোধ হয়।’
‘বলো কি? দেখে তো মনে হয়নি অসুস্থ। উনি তো খুব রেগে ছিলেন দেখা গেল।’
‘ওনাকে গিয়ে জিজ্ঞেস কর। যা হয়েছে তাই তো বললাম।’

নিবিড় কে দেখলাম এদিকে আসছে। নিবিড় এসেই আমাকে দুজনের মাঝখানে দাঁড়িয়ে বলল, ‘কি কথা হচ্ছে?’
লিহান বলল, ‘তোমার আম্মুকে নিয়ে কথা হচ্ছে!’
আমি চমকে উঠলাম লিহানের কথা শুনে। ফাজিল ছেলে এসব এখন নিবিড় কে বলে দেবে নাকি। আমি চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে আছি লিহানের দিকে। নিবিড় আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ কি হয়েছে ছোঁয়া তুমি লিহান কে চোখ রাঙানি দিচ্ছ কেন?’

আমি আমতা আমতা করে বলল, ‘ ক‌ই না তো!’
লিহান আমার চোখ রাঙানিতে থেমে গেছে আর কিছু বলছে না দেখে নিবিড় লিহান কে জিজ্ঞেস করে, ‘আম্মুকে নিয়ে কি কথা বলছিলে?’

‘ কই কিছু না তো।’ লিহান অস্বীকার করে বলল।
নিবিড় সন্দেহীন চোখে তাকিয়ে বলল, ‘আবার অস্বীকার করছ। এইমাত্র না বললে তোমরা আমার আম্মু নিয়ে কথা বলছিলে।’

লিহান বলল, ‘আমি জিজ্ঞেস করছিলাম বিয়ে না দেখে ছোঁয়া কোথায় ছিলে। ছোঁয়া বলল তোমার আম্মু মানে আন্টিকে নাকি চা করে দিতে গেছিল। তিনি নাকি অসুস্থ। ‘

বলেই লিহান সেখান থেকে চলে গেল। সেখানে থেকে গেলাম আমি আর নিবিড়। নিবিড় এবার আমার দিকে তাকিয়ে খুশি মুখ করে বলল, ‘ তুমি তো খুব লক্ষ্মী বউমা হবে ছোঁয়া। বিয়ের আগে থেকেই শাশুড়ির সেবা যত্ন করে মন জয় করার চেষ্টা করছো।’

আমি কটমট চোখে তাকালাম নিবিড়ের দিকে। নিবিড় আমার চাহনী দেখে বলল, ‘ রাগ কিন্তু তোমাকে সুন্দর লাগে না।’
এই কথাটা শুনে যেন আমার রাগটা আরো বেড়ে গেল আমি রাগে দাঁতে দাঁত চেপে বললাম,, ‘ আপনি যাবেন এখান থেকে!’

আর বিরবির করে বললাম, মা ছেলে দুজনে আমাকে জ্বালিয়ে খেলো। একটু আগে ওনার মা আমাকে কিরকম ভাবে বাসা থেকে তাড়িয়ে দিচ্ছিল। থাপ্পর পর্যন্ত দিয়েছে। তাও আমাকে সব কিছু দাঁতে দাঁত চেপে হজম করে উনার মায়ের জন্য চা করে আনতে হলো।

যেখানে ওনার মা আমাকে দু চোখে সহ্য করতে পারেনা সেখানে উনি আসছে আমাকে লক্ষী বউ বলতে। শুধুমাত্র উনার জন্য আমাকে থাপ্পর খেতে হলো। নিবিড় কী যেন বলছে আমাকে আমি তো তার কথা শুনছি না আমি রাগে ফুসফুস করছি। থাপ্পরের কথা মনে পড়তে মনে হলো প্রতিশোধটা নেওয়া হয়ে যাক।

নিবিড় কি যেন বলতে আমার দিকে এগিয়ে আসছিল মনে হয় নিচু হয়ে বলতো কথাটা। আমিও সুযোগের সদ্ব্যবহার করলাম। আমি ঠাস করে নিবিড়ের গালে থাপ্পড় মেরে বসলাম। নিবিড় গালে হাত দিয়ে হা হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। নিবিড়ের মুখের এক্সপেরেশন দেখে আমি কিছুটা থতমত খেয়ে গেলাম।

অবাধ্য প্রেম পর্ব ৩৯

তবুও রাগী গলায় বললাম, ‘আমার থেকে দশ হাত দূরে থাকবেন। দশ হাত মেপে বুঝছেন! একদম আমার কাছাকাছি আসার চেষ্টা করবেন।’

অবাধ্য প্রেম পর্ব ৪১