অবাধ্য প্রেম পর্ব ৪১

অবাধ্য প্রেম পর্ব ৪১
নন্দিনী নীলা

নিবিড় আমার হাত ধরে বলল, ‘ রেগে আছো কেন? হোয়াটস হ্যাপেন্ড?’
আমি হাত ঝাঁপটা মেরে ছাড়িয়ে বললাম, ‘ডোন্ট টাচ মি।’বলেই চলে এলাম সেখান থেকে।

চাইলেই নিবিড়কে কথাটা বলে দিতে পারতাম কিন্তু কি হতো অযথায় তাদের মা ছেলের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ হতো। এখানে আমি যদি নিবিড় কে চাইতাম তাহলে না হয় নিবিড় কে নিজের কাছে রাখার জন্য নিবিড় ভুল না বোঝার জন্য সব চেষ্টা করতাম। যেখানে আমিই চাই না নিবিড় পাগলামো করুক। আর আমি না ওকে কখনো মেনে নেব। না ওর পাগলামো কে আমি একসেপ্ট করব।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আজকের রাতটাই আমি এই বাসায় আছি আমাকে তাড়িয়ে দিলেও আমি আগামীকাল চলে যাব। রাখতে চাইলেও চলে যাব‌।
এই বাসায় কি আমি একটা জোকার সেজে থাকবো নাকি। সবার অবজ্ঞা অবহেলা সহ্য করে অনেকদিন থেকেছি। কারণ তখন আমি নিরুপায় ছিলাম। আমার যাওয়ার কোন জায়গা ছিল না।

কিন্তু এখন আমি বাসা ঠিক করে ফেলেছি। লিলির সাহায্যে। এ বাসা থেকে গেলে আমাকে শুধু অবজ্ঞা অবহেলা না নিবিড়ের এই পাগলামো থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
রাফসান কাকা আমাকে স্টেজ থেকে ডাকছে। সে তার বন্ধু আত্মীয়-স্বজন সবার সাথে ছবি তুলছিল। সেদিকে একবার তাকিয়ে দেখলাম তাহমিনা আপু মুখ গোমরা করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি ভাবলাম আজকে একবার আপুর ধারের কাছে যায়নি। কাজটা ঠিক হয়নি।

যার জন্য এত অপমান এত লাঞ্ছনা সহ্য করো আমার থাকতে হচ্ছে তাকে কিনা আমি এমন একটা আনন্দের দিনে দুঃখ দিলাম‌। অপরাধী ন্যায় মুখ করে আপুর পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। আপু আমার দিকে ফিরে পর্যন্ত তাকাল না। অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। আমি আপুকে জাপটে ধরে হাসিমুখ করে বললাম,, ‘আপু স্মাইল নতুন ব‌উ যদি মুখটা বাংলার পাঁচের মত করে রাখে তাহলে ছবি একটু ভালো হবে না।’

আপু আমার হাত নিজে থেকে ছাড়িয়ে বলল, ‘তুই এখানে এসেছিস কেন? যেখানে ছিলি সেখানেই থাক। আমার ধারের কাছে আসতে হবে না কাউকে। আমার এমনিতেই কেউ নাই তোদের আর দয়া দেখাতে হবে না‌।’
আমি অসহায় মুখ করে বললাম, ‘তোমার কি মনে হয় আমি দায়ে পরে তোমার সাথে ছবি তুলতে এসেছি? এখানে কোনো ভালোবাসা নেই।’

‘কোন ভালবাসা নেই। থাকলে তুই আগে আসতি আমার কাছে। এইভাবে আমাকে একা রাখতি না। কখন থেকে তোকে খুজছি জানিস।’
‘তুমি কি চাও এখন সবার সামনে আমি কান ধরে উঠবস করি। তোমার রাগ বানাই। আপু তুমি যদি চাও তাই করবো আমি। তাও প্লিজ এমন আনন্দ ময় একটা দিনে তুমি মুখটা এমন করে রেখো না। একটুও ভালো লাগছে না দেখতে। হাসো প্লিজ।’

তখনই ক্যামেরাম্যান বলে উঠলো, ‘আপনারা মান অভিমান বাদ দিয়ে এবার একটু সুন্দর হয়ে দাঁড়ান। আর কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবো ছবি না তুলে।’
আমি আপুকে তবুও কান ধরে সরি বলতে নিছিলাম আপু হেসে দিয়ে কান থেকে আমার হাত ছাড়িয়ে বলল, ‘ পাগলী রাগ ভাঙিয়েই ছাড়লি।’

আমি আর আপু হাসিমুখ করে ক্যামেরাম্যানের দিকে তাকিয়ে আছি, কিন্তু ক্যামেরাম্যান ছবি না তুলে আবার বিরক্ত করে বলল, ‘ এবার বর। এতক্ষণ বউ রাগ করছিল এবার বর কারে ডাকে ..
রাফসান কাকা নিবিড় কে ডাকছে। নিবিড় ত ডাক শুনেই ঝড়ের গতিতে স্টেজে চলে এলো। রাফসান কাকা নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘এতক্ষণ ডাকলাম আসলি না‌। এখন ডাক দিতে না দিতে দৌড়ে আসলি।’

‘এতক্ষণ ত আসার মানুষ টা ছিল না। তাই আসিনি।’
কেউ বুঝতে না পারলেও আমি নিবিড়ের কথার মানে বুঝতে পারছি। নিবিড় হাসি মুখ করে আমার পাশে এসে বসল। আমি লাফিয়ে উঠে দাঁড়াতে যাব নিবিড় আমার হাত শক্ত করে ধরে বসিয়ে রেখে বলল, ‘ সুন্দর করে ছবি তোলে দেন তো।’

বলেই হাসি মুখে ক্যামেরাম্যানের দিকে তাকাল নিবিড়। আমি রেগে নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে আছি। নিবিড় তা বুঝে সামনে দিকে দৃষ্টি রেখেই বলল, ‘আমাকে পরে দেখিও। আগে পোজ দাও সুন্দর করে ছবিটা ভাল হবে তাইলে।’
আমি বললাম, ‘ আপনার সাথে আমি ছবি তুলবো না। সেখানে ভালো আর খারাপ হওয়ার প্রশ্নই উঠে না।’

‘সবার সামনে সিনক্রেট করো না। তাহলে আমি কিন্তু লিমিট ক্রস করে সিনক্রেট করবো। আমাকে তো চিনোই।’
আমি চুপ করে সামনে তাকালাম। আমাদের কয়েকটা ছবি তুলে হলো। তারপর আমি সেখান থেকে চলে এলাম।

এদিকে তাহমিনা আর রাফসান অবাক হয়ে নিবিড় আর ছোঁয়াকে দেখছিল। ওদের ফিসফিসিয়ে কথা বলা না শুনলেও মুখে এক্সপ্রেশন দেখে কিছু একটা সন্দেহ করেছে।
নিবিড় ও স্টেজে ছেড়ে চলে গেছে। দুজনের একজন ও রাফসান ও তাহমিনার সাথে কথা বলে নি।

বাসার ভেতরে চলে এলাম আমি। দেখতে পেলাম কাকার রুম সাজানো হচ্ছে ফুল দিয়ে। আমি কৌতুহল নিয়ে একটু কাছাকাছি যেতেই আমাকে ধমকে দিল মাইশা। মাইশার দিকে চেয়ে বললাম, ‘ তোমার সাথে আমার কথা আছে এদিকে আসো।’

মাইশা অহংকারী গলায় বলল, ‘ আমি তোমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছুক না।’
‘ইচ্ছা না থাকলেও বলতে হবে আসো আমার সাথে।’
বলে মাইশার হাত ধরে টেনে আমি নিয়ে এলাম একটু নিরিবিলি জায়গায়।

মাইশা তো রাগে চিৎকার করে উঠল, ‘ You have so much courage. Drag me against my will?’
‘ নিবিড়ের মার কানে আমার নামে বিষ কেন দিছো তুমি? ‘
মাইশা বলল, ‘ বেশ করেছি। ‘

‘কাজটা তুমি ঠিক করনি। ওনার কাছে তুমি আমাকে খারাপ করে কি পেলে আমি জানিনা। আর আমি ওনার ছেলের বউ হওয়ার জন্য বসে রই নাই। তুমি একদম ঠিক করো নাই।’
‘ আমাকে একদম মিথ্যা বলবে না। তোমার আর ব্রো এর মাঝে যে একটা সম্পর্ক আছে। তাও আবার গভীর সম্পর্ক সেটা আমি সেই দিনই বুঝেছিলাম।

যেদিন ব্রো তোমার জন্য আমার উপর চিল্লাচিল্লি কর ছিল। তারপর তো আমি ফলো করেই দেখেছি। তোমরা একটু কিছু হলে ঝগড়া করো আবার দেখি খুব মাখামাখি। মম বলেছিল ছোটলোকরা নির্লজ্জ টাইপের হয় বেহায়া টাইপের হয়। তুমিও নিশ্চয় বেহায়া নির্লজ্জপণা করেই ব্রোকে তোমার দিকে টেনেছো। তুমি তো সুন্দর ও না। সুন্দরী হলে না মানা যেত যে তোমার রূপ দেখেই ভাইয়া তোমার জন্য এত পাগল হয়েছে। তোমার মধ্যে তো পছন্দ করার মতো কিছুই নেই। না তুমি সুন্দরী আর না তুমি ধনী। এতিম তুমি তোমাকে কি জন্য ভাইয়া পছন্দ করলো বলো আমায় নিশ্চয়ই খারাপ কিছু করেছো‌। অথবা জাদু করেছো। ‘

‘ হোয়াট আর ইউ ম্যাড। একজন শিক্ষিত মেয়ে হয়ে তুমি বিলিভ করো জাদু করা যায়?’
মাইশা গর্জে উঠে বলল, ‘আগে বিশ্বাস করতাম না। কিন্তু এখন বিশ্বাস করছি। তোমার প্রতি ভাইয়ার পাগলামো দেখে আমি বিশ্বাস করতে বাধ্য হচ্ছি। এটা জাস্ট মেনে নেয়া যাচ্ছে না। বশ করা ছাড়া ভাইয়া তোমার মত একটা মেয়ের জন্য পাগল কেন হবে।’

‘সেই প্রশ্ন আমাকে না করে তুমি তোমার ব্রো কে জিজ্ঞেস করো। আর তুমি যে আমার নামে বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যা কথাগুলো বলছো আর যে মিথ্যে উদাহরণগুলো বলছো সবকিছুই তোমার আরেক পাগলামি‌। আসলে তোমরা ভাই বোন সবই পাগল। পাগলের পাল্লা এসে পড়লাম সবাই আমাকে জ্বালিয়ে দিচ্ছো।

যে যার মত ভাবনা চিন্তা করে আমাকে হেনস্তা করার চেষ্টা করছো। শোনো তাই আমাকে নিয়ে ভাবা বাদ দাও আমি আগামীকাল চলে যাচ্ছি বাসা থেকে। তুমি তোমার ব্রোকে পাগল থেকে মানুষ কর আর নিজের মাথাটা ঠিক কর। তোমার মামি মানে নিবিড়ের মাকেও বলিও তার ওমন পাগল ছেলে আর ওনার পুত্র বধু হ‌ওয়ার বিন্দু মাত্র ইচ্ছা নাই আমার‌।’
বলেই মাইশাকে রেখে বাসর ঘরে ঢুকে গেলাম। আমাকে দেখে মাহি বলল, ‘ কেমন হয়েছে আপু। সুন্দর হয়েছে না কাকুর বাসর ঘর সাজানো।’

অবাধ্য প্রেম পর্ব ৪০

আমি বললাম, ‘ খুব‌ সুন্দর হয়েছে।’
এদিকে আবির আড়াল থেকে মাইশা আর ছোঁয়ার কথপোকথন সব শুনেছে। ও অবাক হয়ে মাইশা কথা ভাবছে। ব্রো যদি কোনভাবে জানতে পারে মাইশা তার প্রেমে পাগল হয়ে আছে তাহলে যে মাইশা কে করবে সেটাই ভাবতে পারছি না।

অবাধ্য প্রেম পর্ব ৪২