পূর্ণতা নাকি শূন্যতা পর্ব ৫

পূর্ণতা নাকি শূন্যতা পর্ব ৫
রেজওয়ানা রমা

ঈশাদের বাড়ি থেকে বের হয়ে সোজা সিফাতের বাসায় গেলাম। সিফাত কে নিয়ে পার্কে যাই। অতঃপর,,
– বল কি হয়েছে এভাবে ডেকে আনলি কেন?
– ঈশার যোগ্য হতে বলেছে আংকেল।
– মানে?
– মানে আব্বু আজকে ঈশা আর আমার বিয়ের কথা বলেছিলো। কিন্তু আংকেল বলেছে উনার মেয়ে ছোট। এখন এসব নয়

– কিন্তু এখন তো বিয়ে দিতে বলা হয় নি। ঈশা যখন বড় হবে তখন তোদের বিয়ে হবে
– আরে বা*ল সেটাই তো আমার বাপ বলেছে। কিন্তু আংকেল বলেছে ঈশার যোগ্য হতে।
-তুই কি ঈশার অযোগ্য?
– হয়তো অযোগ্য
– ধুরু।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-কিছু একটা করতে হবে দোস্ত। যেন ঈশার যোগ্য বলে মেনে নেয়
– কি করবি? তোদের যা কিছু সব তো তোরই হবে।
– হুম। কিন্তু সেটা তো বাবার। যার উত্তরাধিকারি আমি। কিন্তু আমার নিজের কিছু একটা করতে হবে
– কি করবি

– এমন কিছু একটা করতে হবে। যেটা অনেক অনেক কষ্টের। এতো বেশি কষ্টের যে ঈশা কে ভুলে যেন থাকতে পারি
– আচ্ছা, তুই ওই বাচ্চা মেয়ে টার মধ্যে কি পেয়েছিস বল তো। ক্লাসে এতো সুন্দর সুন্দর মেয়ে থাকতে ওই পিচ্চি মেয়ে টা কেন?
– জানি না। আমি কিচ্ছু জানি না। ঈশা ছাড়া আমার আর কাউ কে ভালো লাগে না। যে কোনো মূল্যেই ঈশা কে আমার চাই চাই।

– এখন কি করবি?
– প্রচন্ড কষ্ট এমন একটা প্রফেশন দরকার
– তুই কি জব করবি?
-হুম
– অনেক কষ্টের জব?
-হুম

– অনেক অনেক বেশি কষ্টের?
– আরে বা*ল হ্যাঁ
-তাহলে তুই আর্মি তে জয়েন কর
– আর্মি?
-হুম। শুনেছি এটা অনেক কষ্টের হয়।
– ভেবে দেখি

এর পর কলেজে ভর্তি হলাম। সব বন্ধু রা প্রেম করছে। গার্লফ্রেন্ড নিয়ে ঘুরতে যাচ্ছে। শালা সিফাত টাও। আমিও চাইলে পারতাম প্রেম করতে কিন্তু আমার মন ঈশার কাছে পড়ে থাকতো। ঈশা ছাড়া আমার কাউ কে ভালো লাগতো না। খুব অবাক করা বিষয় তাই না?

যে একটা বাচ্চা মেয়ের মধ্যে কি পেয়েছিলাম। আসলে কি পেয়েছিলাম তা আমার নিজেরও জানা নেই। আমিও তখন ভাবতাম ঈশার মাঝে কি আছে, এতো মেয়ে থাকতে ঈশা কেন। উত্তর টা আজও আমার অজানা। ঈশা কে নিয়ে উপন্যাস লেখা যাবে তবুও এই ভালোবাসার কারন খুজে পাওয়া যাবে না।

কলেজ লাইফে একটা প্রেমপত্র পেয়েছিলাম। মেয়ে আজও আমার জন্য অপেক্ষা করছে। আমি তবুও মেয়েটা কে প্রশ্রয় দেই নি। গোটা শিক্ষাজীবন সিঙ্গেল থেকে কাটিয়ে দিয়েছি ঈশার জন্য। আমার লক্ষ্য ছিল ঈশার যোগ্য হওয়ার। ইন্টারমিডিয়েট দিয়ে সিফাতের কথা মত আর্মি অ‍্যাপ্লাই করি। এক্সামে পাস করে যাই।

এক এক করে সব কিছু পেরিয়ে যখন আইএসএসবি তে গ্রীন কার্ড পেলাম সেদিন আমার মত খুশি কেউ ছিল না। এবার আংকেল নিশ্চয় বলবেন যে আমি ঈশার যোগ্য। চলে গেলেন চট্টগ্রাম ট্রেনিং এ। এর পর ট্রেনিং শেষ করে ইউনিটে জয়েন করলাম। আমি যখন ইউনিটে জয়েন করি ততদিনে ৫ বছর কেটে যায়।

এই ৫ বছরে ঈশার কথা ভীষন মনে হতো। যখনই ঈশার কথা মনে পড়তো তখনই পুশআপ দিলাম। রাগে একশ দেড়শ পুশআপ অনায়াসে দিয়ে ফেলতাম। যা কোনো ভাবেই সহজ ছিলো না। এভাবেই কেটে যায় ঈশা কে ছাড়া আমার ১১ টা বছর। প্রতি দিন ঈশা কে ভেবে কমপক্ষে ৫০ থেকে ১০০ পুশআপ দেওয়া আমার ডেইলি রুটিন ছিল।

সেদিন দুই সপ্তাহের ছুটি তে বাড়ি ফিরছিলাম। তারিখ টা ছিল ১০ এপ্রিল ২০২২। রাস্তায় আমার গাড়ি তে একটা মেয়ের ধাক্কা লাগে। দোষ টা অবশ্য মেয়েটার ছিলো। হঠাৎ করেই সামনে চলে আসে। গুরুতর আঘাত পায় নি যদিও তবুও হসপিটালে নিয়ে গিয়েছিলাম। চেকআপ করিয়ে মেয়েটার বাড়ি পৌঁছে দিতে যাই। দরজা খুললেন একজন মধ্য বয়স্ক মহিলা। মুখ টা খুব চেনা চেনা লাগছে মনেই করতে পারছি না। অতঃপর বললাম,

– আসলে ওর ছোট একটা এক্সিডেন্ট হয়েছে আমার গাড়ির সাথে। হসপিটালে নিয়ে গিয়েছিলাম। ওখান থেকেই আসছি।
ভদ্রমহিলা বললেন,
– হায় আল্লাহ! কিছু হয় নি তো। তুই ঠিক আছিস মা।
মেয়েটি: হ্যাঁ আম্মু আমি ঠিক আছি।

মহিলাটি মেয়ে কে নিয়ে ভিতরে গেলেন। আমি এখনো ভাবছি কে ইনি। এতো চেনা কেন লাগছে। যা ভাবছি সেটা নয় তো? কিছু টা সংকোচ নিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম,

– আচ্ছা আন্টি যদি কিছু মনে না করেন একটা কথা জিজ্ঞাসা করতে পারি?
– হ্যাঁ বাবা বলো
– আপনি কি শাহানাজ আন্টি?
– তুমি কে বাবা?

– আমার নাম সিদ্ধাত। সিদ্ধাত চৌধুরী
আমার নাম শুনে যেন তিনি আকাশ থেকে পড়লেন। দ্রুত পায়ে আমার দিকে হেঁটে এলেন। আমার গাল ধরে বললেন,
– সিদ্ধাত? শাহাদাত ভাইয়ের ছেলে সিদ্ধাত?
– জ্বী। আপনি সত্যি শাহানাজ আন্টি? আর ও-ওই মেয়েটা ঈশা?
– হ্যাঁ বাবা। আমি শাহানাজ আন্টি। আর ও ঈশা।

ওই মূহুর্তে আমার যে অনুভূতি হয়েছিল আমি কখনও কাউকে বুঝাতে পারবো না। আমার ঈশা কে এতো দিন পর এতো কাছ থেকে দেখলাম অথচ চিনলাম না। চোখে পানি টলমল করছিল। পুরুষ মানুষ কাদে না। কিন্তু সেদিন আমার চোখের পানি কিসের ছিল তা জানি না।

এই যে আবারও শুরু হলো আমাদের দেখা হওয়া, কথা হওয়া, আসা যাওয়া চলছে দুই পরিবারের। ঠিক আগের মত। ঈশার সাথে আমার খুনসুটি চলেই। সারাদিন ওকে জালানোই আমার প্রধান কাজ। ওকে রাগিয়ে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য। ওর বাচ্চা বাচ্চা স্বভাব আমার খুব ভালো লাগে।

সে বার ওই দুই সপ্তাহ ছুটি ঈশার সাথে কাটিয়েছিলাম। ১১ বছর পর আমি আবারও প্রান খুলে নিশ্বাস নিয়েছিলাম সেই সময় টাতে। সে সময়ের অনুভূতি টা কখনও বোঝাতে পারবো না। আমার ছুটি শেষ হলে আমি চলে আসি। এর পর থেকে ঈশার সাথে আমার ডেইলি ৩/৪ বার কথা হতো। রাতে ঘন্টার পর ঘন্টা কলে থাকতাম।

ও পড়তো আর আমি ঘুমিয়ে যেতাম ওভাবেই কলে রেখে। ঈশাও অনেক ফ্রি হয়ে যায়। কয়েক মাস চলে যায় এভাবে। এরপর একদিন ঈশা আমাকে মেঘের কথা বলে।
মেঘের কাহিনি পরে আপনাদের কে বলবো। এখন যাই আমার জানপাখি টা না খেয়ে ঘুমিয়ে গেছে ওকে খাইয়ে দিয়ে আসি।
ঘুমের মধ্যে পেটের ওপর কিছু অনুভব করতেই চোখ খুলে দেখি সিদ্ধাত ভাইয়া। তিড়িং করে লাফিয়ে উঠে বসলাম।

– একি সিদ্ধাত ভাইয়া তুমি এখানে কি করছো?
– বিয়ের পর প্রথম রাত টা বাসর রাত হয়। তাই আর কি….
– এই খাটাসের বাচ্চা তুই এখানে কেন আসছিস। বাসর না? করাচ্ছি তোরে বাসর।
বলেই বালিশ তুলেছি মারবো খপাত করে বালিশ টা কেড়ে নিয়ে রাক্ষস টা বলে,

– ওই বড় দের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় জানিস না?
আমিও আবার বালিশ টা নিয়ে বললাম,
– ওই ছোটদের কিভাবে স্নেহ করতে হয় তুমি জানো না?
– সেটা করতেই তো আসছি
– কিহ!!! তুমি আমার পেটে টাচ করেছো কেন?
-হাহাহা। পেট বের ঘুমিয়ে ছিলি কেন?

– তাই বলে তুমি টাচ করবে?
– হোপ। শাড়ি ঠিক করে দিচ্ছিলাম।
– তোমাকে বিশ্বাস করা যায় না
– কিহ!!
– আচ্ছা সিদ্ধাত ভাইয়া দরজা তো ভিতর থেকে লক করা। তাহলে তুমি কিভাবে আসছো?
– সেটা সিক্রেট। বলা যাবে না

– চোরের মত কেন আসছো সেটা বলো।
– আমি চোরের মত আসছি?
– তা নয়তো কি।
– কেন আসি সেটা যদি বুঝতি,

– হুম। কেন আসছো বলো? পাতিলের তলার মত কালো, ট্যারা, প্রতিবন্ধি এমন মেয়ের ঘরে এত রাতে তুমি কি করো?
কান্না কান্না কন্ঠে কথা গুলো বললাম। সিদ্ধাত ভাইয়া থ হয়ে বসে আছে। কিছু বলছে না। কিছুক্ষন চুপ থেকে ভাইয়া বলল,

– ঈশু তুই কি সিরিয়ালি নিয়েছিস কথা গুলো?
– কেন নেবো না। তুমি তো সত্যি সত্যি বলেছো। মিথ্যা তো বলো নি তাই না।
সিদ্ধাত ভাইয়া বসা থেকে উঠে একটা খাবারের প্লেট নিয়ে এলো। সামনে এগিয়ে দিয়ে বলল,
– খেয়ে নে
প্লেট টা সরিয়ে দিয়ে বললাম,

– খাবো না
– মেজাজ খারাপ করিস না। খেয়ে নে
– বললাম তো খাবো না। শুনতে পাও নি? কানের সমস্যা টা বেড়েছে নাকি?
– হ্যাঁ বেড়েছে। আমি না বোধক কোনো কথা শুনতে পাই না।

– বেশ তো। থাকো বয়রা হয়ে
বলেই উল্টো ঘুরে শুয়ে পড়লাম।
আমি যেই না শুয়েছি ওমনি হ্যাচকা টানে শোয়া থেকে উঠে বসালো। রাগী কন্ঠে বলল,
– ভালো কথা কি ভালো ভাবে নিতে পারিস না?
– না পারি। হাত ছাড়ো। আর এখন থেকে যাও। ঘুমোতে দাও

বলেই হাত ছাড়িয়ে আবারও শুয়ে পড়ি। সিদ্ধাত ভাইয়া এবার অনেক রেগে গেছে বুঝতে পারছি। কিন্তু আমিও জেদ করে খাবো না। সব সময় এমন করে। দুপুরে কি ব্যবহার টাই না করেছে। আবার সন্ধ্যায় বলল আমাকে দয়া করে বিয়ে করেছে। এখনো নিশ্চয় দয়া দেখিয়ে খাবার নিয়ে এসেছে। খাবো না আমি। লাগবে না কারো দয়া। এর মধ্যেই সিদ্ধাত ভাইয়া আমাকে আবারও তুলে বসিয়ে দিয়েছে। এবার নিজ হাতে খাবার টা আমার মুখের সামনে ধরেছে।

– হা কর
– খাবো বললাম তো
-হা কর ( রাগী কন্ঠে )
– শুনতে পাও নি কি বললাম
– বলেছি না আমি না বোধক কথা শুনতে পাই না। নে হা কর
আমি হাত ধাক্কা দিয়ে খাবার টা ফেলে দিলাম। সিদ্ধাত ভাইয়ার হাত থেকে খাবারের প্লেটটাও নিয়ে ছুড়ে দিলাম ফ্লোরে। তার পর রাগ দেখিয়ে বললাম,

– কথা শুনতে পাও না নাকি বুঝতে পারো না। বলেছি খাবো। কেন জোর করছো? ঘুমাবো আমি শুনতে পেয়েছো? এখন যাও এখান থেকে আর আমাকে একটু শান্তি তে ঘুমাতে দাও।

পূর্ণতা নাকি শূন্যতা পর্ব ৪

আমার কথা গুলো শুনে সিদ্ধাত ভাইয়া এবার উনার সেই রাক্ষস রূপে চলে আসে। ফোস ফোস করছে রাগে। আমি একটু ভয় পেয়ে গেলাম। আমাকে এক ধাক্কায় বিছানায় ফেলে দিয়ে দুই হাত আবারও শক্ত করে চেপে ধরে বিছানার সাথে। আমি নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছি,,,

পূর্ণতা নাকি শূন্যতা পর্ব ৬