অবাধ্য প্রেম বোনাস পর্ব

অবাধ্য প্রেম বোনাস পর্ব
নন্দিনী নীলা

বরপক্ষ রা বসে আছে তাদের পেছনে একজন দাঁত কেলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। শ্যামলা করে হ্যাংলা পাতলা ছেলেটা। সেই চেনা মুখ সেই চেনা বিশ্রী হাসি। ইয়ার কেউ না জসিম। জসিমকে দেখে ভয়ে আমার জান বের হওয়ার উপক্রম। আমি ঠাস করে দরজা শব্দ করে লাগিয়ে ভেতরে গিয়ে কাঁপতে লাগলাম। আমাকে হঠাৎ ভয় পেতে দেখে লিলি চমকে উঠলো।

বসা থেকে দাঁড়িয়ে পরল অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ছোঁয়া কি হয়েছে তোর!এমন করছিস কেন?’
আমি কাঁপা কাঁপা পায়ে বিছানায় বসে বললাম,, ‘জসিমের বাচ্চা এখানে কি করছে? তোর ওই হবু শ্বশুর বাড়ির লোকের সাথে ওর আবার কি সম্পর্ক? কেন আসতে গেলাম এখানে আমি! একবার জসিম আমাকে দেখে নিলে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে।’

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

লিলি জসিম নামটা শুনে চিনতে পেরে গেছে। কারণ ছোঁয়ার থেকে জসিম কে কেন জসিমকে এত ভয় পাচ্ছো তার সবই জানে ও। ও নিজে অবাক হল সেই শয়তান ছেলেটা ওদের বাসায় কি করছে?
ছোঁয়া কি ঠিক বলছে? নাকি ও ভুল দেখল!
ও ছোঁয়া কে আবার জিজ্ঞেস করল,, ‘ ছোঁয়া তোর কথাও ভুল হচ্ছে না তো? ওই বদমাইশ ছেলেটা এখানে কিভাবে আসবে?’

লিলির কথা শুনে আমি বিরক্তিকর চাহনী দিলাম ওর দিকে।
বিরক্ত আর ভয় মাখা গলায় বললাম, ‘ওই হারামিটা কে চিন্তে আমার একটু ভুল হবেনা। জসিমার মত ছেলের সাথে যে ফ্যামিলির সম্পর্ক সেই ফ্যামিলি যে কতটা ভালো হবে সেটা আমি ভাবছি। এরকম একটা ফ্যামিলির সাথে তোর বিয়ে ঠিক হলো‌। তুই যেভাবে পারিস দোস্ত বিয়ে ভেঙে দে। আর আমাকে একটা লুকিয়ে থাকা জায়গা দে। ওই জসিমের সামনে যেন আমি না পড়ি‌। ও যেন জানতে না পারে আমি এখানে আছি।’

লিলি আমাকে আশ্বাস দিয়ে বলল, ‘যদি জসিমের সাথে ওই পরিবারে কোন সম্পর্ক থেকে থাকে রে বাবা মার বিরুদ্ধে আমি এই প্রথম কথা বলব। এই বিয়ে আমি করবো না। আর একটা কথা তুই নিশ্চিন্তে এখানে থাক। আমি আছি তো এই রুমে কেউ আসতে পারবে না।

মা এমনিতেই তো তোকে বলেছিল তুই যেন পাত্র-পক্ষের সামনে না যাস। ভালোই হয়েছে তুই এবার ভালো মতো লুকিয়ে থাকতে পারবি। আমি বলব এরুমে তুই আছিস কেউ না আসে যেন।’
সেই মুহূর্তের দরজা ধাক্কা দিয়ে আন্টি এলো লিলির মা। এসে লিলিকে নিয়ে গেল আর আমাকে বলল রুমে থাকতে।
আমি বললাম, আন্টি আমি তাহলে ভেতর থেকে দরজা আটকে দেই!’
তিনি কি যেন ভেবে বলল,’ আচ্ছা!’

আমি দরজা আটকে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতেই। আমার ফোনটা বেজে উঠলো। নিবিড় কল করেছে। আজকে নিবিড়ে পরীক্ষা ছিল। আমার শর্ত অনুযায়ী আজকে একবারের বেশি কল করতে পারবে না। আমার শর্ত ভাংলো! আমি কল কেটে দিলাম। কিন্তু তার কল করা থামছে না। কল করেই যাচ্ছে। ফোন বন্ধ করতে নেব তখনই নিবিড় মেসেজ পাঠাবো,
‘নিবিড়ের জানেমান। তোমার শর্ত ভাঙ্গার কারণ আছে। ফোনটা রিসিভ করো। জসিম এ ব্যাপারে তোমার সাথে কথা বলতে হবে। জসিম কিন্তু এই ফ্ল্যাটে ঢুকেছে।’

আমি চোখ বড় বড় করে মেসেজটার দিকে তাকিয়ে আছি। নিবিড় জানলে কি করে জসিম এই ফ্ল্যাটে ঢুকেছে?
এবার ফোন আসতে আমি ফোনটা রিসিভ করলাম।
ফোন রিসিভ করেই বললাম, ‘আপনি জানলেন কি করে জসিম এই ফ্ল্যাটে ঢুকছে?’
নিবিড় আমাকে বলল, ‘একটু বারান্দায় আসো তো।’
‘মানে? আমি যা বলছি তার আনসার দেন!’

‘আরে আসো তো। কিভাবে জানতে পারলাম দেখবে না? আমি বলার থেকে তুমি নিজ চোখে না হয় দেখো‌।’
বিরক্তিতে নাক মুখ কুঁচকে এল আমার। নিবিড়ের উপর মেজাজটা গরম হয়ে যাচ্ছে। লোকটা এত ভনিতা করতে পারে। জাস্ট বিরক্তিকর। জানার তীব্র আকাঙ্ক্ষার জন্য আমি নিবিড়ের কথাটা ফেলতে পারলাম না।

বেলকনিতে এলাম। আমি ভাবছি নিবিড় হয়তো ভাবছে আমি নিচ তলায় আছি। ও হয়তো নিচের দিকে তাকিয়ে থাকবে। কিন্তু না এখানে সে আমাকে অবাক করল নিবিড় ও তিন তলার বেলকুনিতে চেয়ে আছে। আমি যে রুমের টাই আছি। আমি বেলকনিতে গিয়ে দাড়াতেই নিবিড় আমাকে হাত ইশারা করল। একটা ফ্লাইং কিস দিল আমি কটমট চোখে তাকিয়ে আছি।

আমি দাঁতে দাঁত চেপে বললাম,’আপনি এখানে কি করছেন? দেখে তো মনে হচ্ছে পরীক্ষার হল থেকে বের হয়ে সোজা এই রাস্তা ধরেছেন।’
নিবিড় চটপটে উত্তর দিল, ‘তোমার ধারনা কিন্তু ভুল নয়। ১০০% রাইট তুমি যা বলছো সেটাই তো করেছি।
‘মাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি? বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হবেন, খাবেন, রেস্ট নিবেন। তা না বৈরাগীর মতো রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছেন কেন?’

‘তোমার প্রেমেতে হয়েছি যে আমি পাগল পারা।’
‘অসহ্যকর!’
‘শোনো আমি এসেছিলাম তোমাকে এক নজর দেখতে। কিন্তু তোমার দেখা তো আজ পেলাম না পেলাম গিয়ে তোমার ওই জসিমের নজর। তাকে দেখতে পেলাম কয়জন মানুষের সাথে ভেতরে ঢুকতে। তোমার আবার বিপদ হলো নাকি। তাই জন্যই কল দিলাম না হলে আমি যে এখানে এসেছিলাম সেটা তোমাকে জানাতাম না। কিন্তু দুশ্চিন্তায় জানাতে বাধ্য হলাম এবার বল ওই জসিমের বাচ্চা কোথায় আছে? ও কি তোমাকে ডিস্টার্ব করছে ও বাসায় কোথায় গেছে কার বাসায় গেছে ?’

‘জসিম যে বাসায় এসেছে সেটা লিনিদের বাসা আর আমি এখন লিলিদের বাসায় বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি।’
‘সেটা আমি জানি। আচ্ছা তুমি এখানে আছো জসিম সেটা কিভাবে জানলো? আমার কি উপরে আসতে হবে? আমি কি আসবো?’

‘একদমই না। চুপচাপ বাসায় ফিরে যান। আর শর্ত মোতাবেক আপনার এই কয়দিন আমার আশেপাশে আসা বারণ ছিল। আপনি তাও কেন এসেছেন?’
‘দেখো এখন আমি টেনশনে আছি। ওই জসিম কেন ওখানে গেছে। আমাকে সবটা খুলে বলো। না হলে আমি কল কেটে উপরে এসে নিজেই দেখছি বাই।’

‘আরে না না। আপনি উপরে আইসেন না। আপনি চলে যান জসিম আমার জন্য আসেনি। আর আমি যে এখানে আছি সেটাও জানে না।’
‘তুমি মিথ্যা বলছো!’

‘উফ মিথ্যা কেন বলতে যাবো? সত্যি, লিলি কে আজ দেখতে আসছে পাত্রপক্ষ। তার সাথে জসিম আসছে। আমি লিলি কাছে আসছিলাম সেই জন্য। এসে জসিমকে দেখে আমি লুকিয়ে আছি। আপনি এসে আর ঝামেলা বাড়াইয়েন না। নিজের শর্ত পালন করুন চলে যান‌। না হলে আমিও আপনার শর্ত মানবো না।’
‘ওকে চলে যাচ্ছি। কোনো গন্ডগোল হলে আমাকে কল করবে।’

আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম নিবিড় গাড়ি নিয়ে চলে গেল। রুমে ভেতর আসতেই দরজা ধাক্কানোর শব্দ পেলাম আমার বুকটা ছ্যাদ করে উঠলো। দরজা ধাক্কাচ্ছে কে দরজা খুলতে আমার ভয় করছে। আমি দরজার কাছে এসে বললাম কে? তখন লিলির আওয়াজ পেয়ে দরজা খুলে দিলাম।

লিলি আমাকে বলল,, ‘দোস্ত সর্বনাশ হয়ে গেছে এটা তো রায়ান।’
আমি চোখ কপালে তুলে বললাম, ‘কি বলিস তোর সেই পুরনো প্রেমিক!’
লিলি কপট রাগ দেখিয়ে বলল, ‘আবার পুরনো প্রেমিক বলছিস। ও কবে আমার বয়ফ্রেন্ড ছিল?’
‘আমি কি জানি তুই তো আমাকে সম্পূর্ণ কাহিনী এখনো বলিস নি!’

‘আচ্ছা আজকে রাতে বলবনি তুই আজ আমার বাসায় থেকে যা।
‘আজ তোর বিয়া আজ তোর জামাই থাকবে এই রুমে। আমার জায়গা হবে না।’
‘ধ্যাত, দোস্ত ওই জসিমের খবরটাও নিয়ে আসছি।’
‘ বল বল…

‘দোস্ত জসিম হচ্ছে রায়ানের বোনের জামাই যে গাড়ি আছে সেই গাড়ির ড্রাইভার। রায়ানের যেহেতু গাড়ি নাই তো বোনের গাড়ি নিয়ে আসছে। তো সেই গাড়ির সাথে ড্রাইভার আসছে।’
‘ও আচ্ছা। তাহলে তো বিয়েটা করাই যায়। যেহেতু পুরনো প্রেমিক পেয়েছিস। আর ছেলে তো মাশাল্লাহ সুন্দর আছে। তুই তো রাজী মনে হয়।

তোকে তো এখন আর রাগী মনে হচ্ছে না। মনে হচ্ছে বিয়েতে তুই নিজেও রাজি হয়ে গেছিস।’
‘হ্যাঁ রায়ান কিন্তু ছেলে হিসেবে খুব ভালো। আর যেহেতু আমার দিক থেকে ওর প্রতি একটা ভালো লাগা আছে রাজি না হয়ে কোথায় যায়।’

‘আচ্ছা ভালো বিয়ে করে নে। শুধু ওই জসিম শয়তান টা কে আমার ধারে কাছে আনিস না। আজকে দিনটা পার করতে পারলে। তোর বিয়ের ধারের কাছে আর আসতাম না।’
লিলি বিস্মিত গলায় বলল, ‘আমার বিয়েতে থাকবি না?’

‘নিজে বাঁচলে বাপের নাম। ওই জসিম আমার চির শত্রু ও তোর বিয়েতে থাকবে যেহেতু ড্রাইভার দেখতে আসতে যে থাকে সে তো বিয়ের সময় ও থাকবে। আমি এভাবে লুকিয়ে, পালিয়ে বিয়ে খেতে পারব না রে। তার থেকে বরচ আমি নিজের বাসায় দরজা বন্ধ করে বসে থাকব।’

‘বিয়েতে কোন সমস্যা হবে না অনুষ্ঠান যেহেতু হবে। এত মানুষের মধ্যে তোকে লক্ষ্যই করবে না। তুই একটু লুকিয়ে চুরিয়ে থাকলেই হবে।’

দুজনের আলোচনার মাঝে আবার কে যেন দরজা ধাক্কা দিল‌। আমি ভয় পেয়ে বাথরুমে ভেতরে চলে গেলাম। লিলি দরজা খুলে দেখলো ওর মা এসেছে। ওর মা এসে জানালো ছেলে নাকি মেয়ের সাথে আলাদা কথা বলতে চায়। লিলি কে একা রুমে থাকতে বলল আর ছোঁয়াকে একটু অন্য রুমে যেতে বলল। লিলি চোখটা বড় করে ভাবছে ছোঁয়া তো বের হবে না কিছুতে। এখন কি রুম থেকে বের হবে বের হলেই তো ড্রয়িং রুমে সবার চোখে পড়ে যাবে আর জসিম এদিক মুখ করে বসে আছে।

লিলির মা বলল, ‘কইরে ছোঁয়া কোথায়? আয় ছোঁয়া তুই পাশের রুমে বসবি।’
লিলি আমতা আমতা করে বলল, ‘মা ছোঁয়া না হয় বেলকুনিতে বসে থাকবে। এ রুম থেকে বের হলেই তো ড্রইং গ্রুপের সবার চোখে পড়ে যাবে। আমার রুম একদম ড্রয়িং রুমের কাছাকাছি। রুমটা একদম স্পষ্ট দেখা যায় ড্রয়িং রুম থেকে। ছোঁয়া বারান্দায় বসে থাকবে আর আমরা রুমে কথা বলব সমস্যা হবে না।’
লিলির মা আচ্ছা বলে চলে গেল।

লিলি মাথা নিচু করে বসে আছে ওর পাশে বসলো রায়ান।
খুব‌ই কোমল গলায় লিলির দিকে তাকিয়ে বলল,’কেমন আছো?’
লিলি জড়তা মেশানো গলায় বলল, ‘ জি ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?’

‘ খুব সুন্দর লাগছে তোমাকে শাড়িতে‌।’
প্রশংসা শুনে লিলির মুখটা লজ্জায় রাঙা হয়ে গেল‌।
‘লজ্জা পেলে দেখি আরো সুন্দর লাগে।’
এবার লিলি উঠে দাঁড়িয়ে অন্য দিকে ফিরে রইল‌।

রায়ান আর লজ্জা দেওয়ার মত কোন কথাই বলল না শুধু বলল, ‘তুমি কি আমাকে বিয়ে করতে রাজি আছো?’
লিলি শাড়ির আঁচল আঙ্গুলে প্যাচাচ্ছে মাথা নিচে করে। কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। মুখ দিয়ে কোন কথাই বের হচ্ছে না যেন ওর। ও তো রাজি আছে কিন্তু সেটা বলতে পারছে না কেন?

‘কিছু তো বলো। হঠাৎ করে আমাকে দেখে নিশ্চয়ই চমকাইছো?’
এবারও লিলি কোন উত্তর দিল না। শুধু মাথা নেড়ে সম্মতি দিল। লিলি আরষ্ট হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। প্রচুর অস্বস্তি লাগছে ওর । গলা যেন ভার হয়ে আছে। কোন কথাই বের হচ্ছে না মুখ দিয়ে আজব। নিজের প্রতি নিজের রাগ হচ্ছে কিন্তু তবুও ফলাফল শূন্য।

এবার রায়ান উঠে দাঁড়িয়ে লিলি সামনে এসে দাঁড়ালো। লিলি মাথা নিচু করে রাখা লজ্জা রাঙা মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘আচ্ছা তোমার নীরবতাকে আমি সম্মতি বলে মেনে নিলাম।

বলে রায়ান লিলির শাড়ী পেঁচানো একটা হাত টেনে নিজের হাতে নিল। লিলি আচমকা রায়ানের স্পর্শ পেয়ে থমকে গেল। ওর মনে হলো ওরে হৃদস্পন্দন থেমে গেছে। ও কাপাকাপা চোখে রায়ানের দিকে তাকাল। রায়ান একটা মিষ্টি হাসি উপহার দিল। ও মুগ্ধ হলো হাসিটা দেখে।

অবাধ্য প্রেম পর্ব ৪৪

রায়ান ওর অনামিকা আঙ্গুলে একটা সুন্দর রিং পরিয়ে দিল। আর ফিসফিস করে বলল, ‘আজ থেকে আমার নামে করে দিলাম তোমাকে। বিয়েটা আজকে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আমি চাইছি না। আজ এনগেজমেন্ট টাই হোক‌। এক মাস পর একদম অনুষ্ঠান করে বউ বাসায় তুলবো।’

অবাধ্য প্রেম পর্ব ৪৫