অবেলায় ভালোবাসি পর্ব ২০

অবেলায় ভালোবাসি পর্ব ২০
সাবরিন জাহান

“এটা কে দিয়েছে ?”
“আয়ুশীর প্রশ্নে ঘাবড়ে গেলো কাজের লোকটি।
“কি হলো? বলছো না কেনো ?”
“আপা, এক ভাই আইসা দিছে।”
” কে সে?”
“আমি তো চিনি না হেরে। দিয়াই চলে গেছে।আপনার নাম কইয়া !”
“আচ্ছা, তুমি যাও।”
কাজের লোকটি যেতেই ভাবনায় পড়ে গেলো ও।

“এটা আমাকে কোথায় নিয়ে এলি তোরা ?”
ইভার প্রশ্নে চওড়া হাসলো ওরা। প্ল্যান মোতাবেক ইভাকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে আসলো আয়ুশী আর সীমা।
“ইউ ইঞ্জয় বেবি! আমরা গেলাম, চল আয়ু! (সীমা)
বলেই আয়ুশীকে টেনে নিয়ে গেলো সীমা।
“আরে তোরা…”
আর কিছু বলার আগেই জুনাইদের গলা শুনতে পেলো ও!
“হ্যালো মিস!”
পরিচিত কন্ঠ শুনে চোখমুখ শক্ত হয়ে গেলো ওর!

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“ফাজিলের দল।”
” না মিষ্টি আছে। ”
ইভা আড়চোখে জুনাইদের দিকে তাকিয়ে ভেংচি কাটলো।
“আমার সাথে একটু কথা তো বলো।”
“কেন আপনার লাভলী কোথায়?”
“আমার লাভলী আবার কই পাও, আমার তো ইভা।”
বত্রিশ দাঁত বের করে হাসলো জুনাইদ,
“এসব ফ্লার্ট অন্য কারো সাথে করেন। গেলাম আমি!”
“ইভা প্লিজ!”
“বাই !”
ইভা বের হতে নিলেই জুনাইদ বলে উঠলো,

“লাভলী আমার বড় আন্টির মেয়ে, যে বিবাহিত। একটা বাচ্চাও আছে। মাঝে মাঝে মজা করে আমাকে বাবু বলে খেপায়। আর সামনে বিয়ে । এক সপ্তাহের ছুটি নিতে হবে৷ তাই কাজ একটু বেশি। তাই সময় বের করতে পারিনি। কিন্তু রাতে দশ মিনিট বের করে খোজ তো নিতাম।”
ইভা থেমে গেলো। আমি বেশ কিছু সময় চুপ থেকে বললো,
“আগে বললেই হতো।”
“বলার চেষ্টা করেছি, কিন্তু কে যেনো শুনেনি!”
ইভা জুনাইদের দিকে ঘুরে কোমড়ে হাত রেখে বললো,

“মোবাইলে এত সেজে পাঠান, সেই সব মেসেজে ইভা একটু কথা বলো না বলে এই সেম কথা সেই মেসেজেও তো বলা যেতো। তাই না? আমি রিপ্লাই না করলে কি হবে?দেখতাম তো এটা জানেন!তাহলে?”
জুনাইদ মাথা চুলকে বললো,
“আসলেই তো ভেবে দেখিনি!”
“ভাববেন কেনো ? ব্যাডা মানুষ তো।”
জুনাইদ ক্ষিপ্ত দৃষ্টিতে তাকালো। তাই দেখে ইভা মুচকি হাসলো।

” তুমি এখানে?”
স্টুডেন্টের মায়ের কথা শুনে অবাক হলো আয়ুশী।
“কেনো ? আজকে পড়বে না ওরা?”
“না, কিন্তু আমি তো জানি তুমি আর পাড়াবে না ওদের!”
আয়ুশী এবার আরও অবাক হলো।
“কে বললো আপনায় ?”
“আয়ান নামে একজন। এটাও বললো তুমি আর আসবে না। এই জন্য নতুন টিচারও খুঁজে দিয়েছে।”
সাইড ব্যাগের বেল্ট শক্ত করে ধরলো আয়ুশী৷ রাগ হচ্ছে ওর। কিছু না বলেই দৌড়ে বের হয়ে গেলো।

“কেনো বার বার আপনি আমার সাথে এমন করেন, মিষ্টার আয়ান মাহতাব?”
হুট করে আয়ুশীকে নিজের রুমে এসে এভাবে রেগে কথা বলতে দেখে চমকে গেলো আয়ান।
” মানে ?”
“বুঝতে পারছেন না, নাকি বুঝতে চাইছেন না? আমার টিউশনিটা কেনো বন্ধ করলেন ?”
“কারণ চাই না আবার সেদিনের মতো ওই রকম পরিস্থিতিতে পড়!”
” ওহ! তো এইজন্য আমার টিউশনি অফ করে দিবেন?!”
“যা করেছি তোমার ভালোর জন্যই করেছি।”

“আমার এত ভালো করতে কে বলেছে আপনায় ?”
” আজব, তুমি এমন রিয়েক্ট করছো কেনো?”
“করবো না কেনো ? আপনি আমাকে একা থাকতে না দিয়ে এখানে নিয়ে এলেন। তার উপর আমার পড়াশোনার খরচবাবদ সব খরচ চালাচ্ছেন, এখন যখন টিউশনি করে নিজের টুকটাক খরচ চালাতে চাই সেটাতেও বাঁধা দিচ্ছেন।কেনো ?”
“তোমার যা লাগবে বলবে,এতে কি হবে এমন?”
“আপনি কেনো বুঝতে পারছেন না ,নিতে পারছি না আমি আপনাদের এত উপকার!প্রতি নিয়ত মনে হচ্ছে বোঝা হয়ে আছি এখানে!আপনারা যতই ভালোবাসা বলুন,আমার তো খারাপ লাগে!অন্তত এই টুকু করে নিজের জন্য কিছু করলে ভালো লাগবে!”

“যাই বলো না কেনো,তুমি আর বাড়তি কোনো কাজ করবে না!”
“কেনো!”
“হোয়াট কেনো?সেদিনের মত অমন ঘটনা আবার ঘটলে কি জবাব দিবো আমি সবাইকে?তোমার কিছু হলে আমার কি হবে বুঝতে পারছো?”
“আপনার কি হবে?”
থমকে গেলো আয়ান।রেগে যে কি বলতে যাচ্ছিল ভাবতেই ভয়ে গা শিউরে উঠলো ওর!
“কি হলো বলুন?কি হবে আপনার?”

“তোমায় আনার কথা যেহেতু বাবাকে আমি ই বলেছি,সেহেতু তুমি আমার দায়িত্ব!তোমার কিছু হলে তার দায় আমার!”
“গো টু হেল উইথ ইউর দায়িত্ব মিস্টার আয়ান!”
বলেই বেড সাইড টেবিলে থাকা ফুলদানি আছার দিয়ে ভেঙ্গে ফেললো!
“আয়ুশী!”
ধমকে বললো আয়ান!

“খবরদার আমায় ধমক দিবেন না!কি পেয়েছেন টা কি হুম?শুরু থেকে যা যা হয়েছে সব কিছু আপনি দায়িত্ব বলেছেন!এই দায়িত্ব,দায়িত্ব করে আপনি আমার লাইফ হেল করে দিয়েছেন!দায়িত্ব ,দায়িত্ব করে আমার মনটাকে আপনার প্রতি দূর্বল করতে বাধ্য করেছেন!আর এই দায়িত্ব ,দায়িত্ব করেই আজ আবারও আপনি আমাকে এটা ফিল করাচ্ছেন যে আপনার আমার প্রতি কিছু আছে!কিন্তু আসলে তো কিছুই নেই!আপনি শুধু দায়িত্ব নিভাচ্ছেন!”
চুপ হয়ে গেলো আয়ুশী।চোখের পানি বাঁধ মানছে না!আবার বলতে লাগলো,

“একটা কথা বলুন তো?আমার জন্য কেয়ার করা ,আমাকে সামলিয়ে রাখা, আমাকে যারা টিজ করেছে তাদের মা’রা,এমনকি আমার মায়ের গয়না গুলো ফিরিয়ে আনা,সব কি সত্যি শুধু দায়িত্বের মাঝে পড়ে?”
চমকে তাকালো আয়ান! তাই দেখে আয়ুশী তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো,”আপনি কি ভাবলেন?আপনার হ্যান্ড রাইটিং আমি চিনবো না?”
আবারও থামলো ও।

“আর যদি এগুলো দায়িত্ব ধরেও নেই,তাহলে আজ এই মুহূর্ত থেকে আপনাকে সব দায়িত্ব থেকে মুক্ত করলাম আমি!প্লিজ আমার লাইফের কোনো দায়িত্ব আপনাকে পালন করতে হবে!প্লিজ…আমি বাঁচি বা ম’রি এতেও আপনি নাক গলাবেন না!”
“জাস্ট শাট আপ!কি যা তা বলছো?”
“কোনো যা তা বলছি না আমি!”
“দেখো আয়ুশী,তুমি তো জানো তোমার বাবাই চাইতেন যে…”
“সেটা আপনার কাছে না,আঙ্কেলের কাছে!আপনি আর দয়া করে কোনো দায়িত্ব পালন করতে আসবেন না!”
“তুমি না করলেও আমি সেই দায়িত্ব পালন করবো!”
“কেনো?কিসের এত অধিকার ফলাচ্ছেন আপনি?কেনো আপনার আমাকে নিয়ে এত চিন্তা?দায়িত্বের মাঝে শুধু পড়ে আমার খরচ,আর কিছুর না ।তাহলে?”
আয়ান আয়ুশীর বাহু চেপে বললো,

“বিকজ ইউ আর মাই…”
“আই এম ইউর?”
আয়ান নিশ্চুপ!
“কি হলো ?থেমে গেলেন কেনো?বলুন!”
“ইউ আর মাই রেসপনসিবিলিটি!”
নিষ্প্রাণ দৃষ্টিতে তাকালো আয়ুশী।রাগে দুঃখে নিজের সর্ব শক্তি দিয়ে ধাক্কা দিলো আয়ানকে!ধাক্কা সামলাতে না পেরে বিছানায় পা বেজে বিছানায় বসে পড়লো ও!অবাক দৃষ্টিতে তাকালো ও। এ কোন আয়ুশীকে দেখছে ও?

“দায়িত্ব,মানবিকতার কথা বলে আপনি আমাকে তিলে তিলে শেষ করে দিয়েছেন আর এখনও দিচ্ছেন!একদম নিঃশেষ!”
বলেই বেরিয়ে গেলো ও! দরজার পাশে দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাড়ানো ইহরাকে দেখতে পেলো না ও!নিজের রুমে গিয়ে ব্যাগ ছুঁড়ে ফেলে দিল।বিছানায় বসে কাঁদতে লাগলো ও।ওর সমস্যা টিউশনি বন্ধ হওয়া নয়!সমস্যা আয়ান !সমস্যা আয়ানের কেয়ার!সমস্যা আয়ানের ওকে নিয়ে টেনশন!

কই দায়িত্ব ও আঙ্কেলের বেশি!তাও তো এমনটা করে না! ফাহিন বা অন্য কোনো ছেলের সাথে দেখলে রেগে যাওয়া,ব্যাথা পেলে মুখ ফুটে না বললেও বুঝে যাওয়া,ছেলেগুলোকে মা’রা,মায়ের স্মৃতি নিজ দায়িত্বে ফিরিয়ে দিয়ে ছোট্ট উপহার ও চিরকুট দেয়া,আর আজ ও যাতে সেদিনের মত কিছু ফেস না করে তাই টিউশনি বন্ধ করে দেয়া!এগুলো কি শুধু দায়িত্ব?মেয়েদের মন যে অনেক কিছুই বুঝে!

কিন্তু এগুলো ও দায়িত্ব হিসেবে মেনে নিতে পারছে না।শুধু মাত্র এইসবের জন্য ওর মন আবারও আয়ানের প্রতি ব্যাকুল হচ্ছে।বাধ্য হচ্ছে ওকে নিয়ে ভাবতে!বাধ্য হচ্ছে ওর জন্য কষ্ট পেতে।সেটা কেনো বুঝছে না আয়ান!কেনো বার বার হঠাৎ আসা ঝড়ের মত ওর মনকে উলোট পালোট করে ফেলে!কেনো বার বার ওর মনকে বাধ্য করে বলতে,”অবেলায় ভালোবাসি!”

“আয়ান!”
আয়ানের পাশে বসে আয়ানের কাধে হাত রেখে মৃদু স্বরে বলে উঠলো ইহরা! আয়ান কিছু না বলে জড়িয়ে ধরলো ইহরাকে!ছোট থেকে আর কাউকে পাশে পাক বা না পাক!এই মেয়েটাকে পেয়েছে!মেয়েটা ওর ছোট হলেও,ওর একজন ভালো বন্ধু হিসেবে সব সময় ব্যাবহার করেছে!কিছুক্ষণ পর নিজেকে সামলে সোজা হয়ে বসলো ও! ইহরা আয়ানের ঘর থেকে আয়ুশীর চিৎকার শুনে এসেছিল!নাহারের আজকে শরীর ভালো না থাকায় ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমাচ্ছেন!নাহলে হয়তো এসব দেখতে পেতেন!

“ইউ লাভ আয়ু?”
আয়ান চুপ থেকে উত্তর দিলো,”আমি দুঃখিত ইহরা!আমি পারিনি নিজেকে সংযত করতে!যেই অনুভূতি আমি তোমার প্রতি আনতে চেয়েছি,সেই অনুভূতি আমি আনতে পারিনি!সব পাল্টে গেলো আয়ুশীর সাথে দেখা হবার পর থেকে!সব!আমি কি করবো ইহরা,আমি যে নিরুপায়!মন মস্তিষ্কের যুদ্ধে মন জিতে গিয়েও হেরে গেছে!”

অবেলায় ভালোবাসি পর্ব ১৯

“ভালোবাসা বলে কয়ে হয় না আয়ান!আর কারো প্রতি জোর করে ফিলিং আনাও যায় না!”
আয়ান নিশ্চুপ!
“আন্টিকে বলবে?”
আয়ান মলিন চোখে তাকিয়ে বললো,”সব তো জানো তুমি!এটা হবার নয়!তাহলে কেনো জিজ্ঞেস করছো?”
ইহরা কিছু বললো না! ও বুঝতে পারছে আয়ানের অবস্থা!না পারবে ও বলতে আর না পারবে আয়ান!দুইজন যে একই পরিস্থিতির স্বীকার!

অবেলায় ভালোবাসি পর্ব ২১