অবেলায় ভালোবাসি পর্ব ২১

অবেলায় ভালোবাসি পর্ব ২১
সাবরিন জাহান

চোখে মুখে পানি দিয়ে বের হলো, আয়ুশী। কিছু ভালো লাগছে না ওর ।আজ আয়ানের সাথে বড্ড বাজে বিহেভ করেছে। কিন্তু ও ই বা কি করবে? এভাবে কি থাকা যায়? ভাবলো ইহরার কাছে যাওয়া যাক। কিছু না ভেবেই যেতে নিলেই দেখলো আয়ান আর হইরা একে অপরের হাত ধরে বসে আছে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে ইহরার রুমে বসে ওর অপেক্ষা করতে লাগলো। কিছুক্ষণ বাদেই ইহরা এলো।

“আরে আয়ু! তুমি এখানে?”
“এমনি ভালো লাগছিলো না, ভাবলাম গল্প করি একটু।”
ইহরা আয়ুশীর পাশে বসে বললো, “মন খারাপ?”
“উহু! ”
“মিথ্যে বলছো!”
“থাকো তুমি, ভীষণ ঘুম পাচ্ছে।”
বলেই বেরিয়ে গেলো। উত্তর দেওয়ার ইচ্ছে নেই ওর এখন।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

রাতে খাওয়া দাওয়া করে সবে রুমে এলো আয়ুশী। বেডের পাশে ল্যাম্প নিভাতে গিয়ে একটা ডায়েরী দেখতে পেলো। তৎক্ষণাৎ মনে পড়লো দুপুরে এখানে বসে ডায়েরী লিখেছিল ইহরা। কৌতূহলবসত ডায়েরীটো খুলে পড়তে লাগলো। খুব সম্ভবত ছোট থেকে লেখা এটা । বেশ মোটা-সোটা ডায়েরী। ছোটবেলার কাহিনী। দু এক পাতা দেখে রেখে দিলো ও। কারো পার্সোনাল জিনিস না বলে পড়া উচিত নয়। ভেবেই আবার আগের জায়গায় রাখতে গেলে ডায়েরীটা পড়ে যায়। বিরক্তি নিয়ে ডায়েরীটা তুলতেই এক পেজ সামনে পড়লো। যেখানে বড় করে লেখা আছে – “ইহিন”
ভ্রূ আপনাআপনি কুঁচকে গেলো ওর। কথাটার মানে বুঝতেই পেজ উল্টালো ও। পরের পেজেই হার্ট শেপের ভিতরে লিখা, ” ইহরা + ফাহিন =ইহিন”

চোখ বড় বড় হয়ে গেলো আয়ুশীর।। । এক এক করে প্রতিটা পাতা উল্টাতে লাগলো ও। দীর্ঘ আট বছর ধরে লিখা অনুভূতি সব ফাহিনকে ঘিরে। কোনো কিছু উল্লেখ না থাকলেও ফাহিনকে নিয়ে তিলে তিলে গড়া প্রতিটা অনুভূতি এখানে স্পষ্ট উল্লেখ আছে। এতই যখন ভালোবাসে তাহলে আয়ানের সাথে বিয়ের মানে কি? প্রশ্ন উঠলেও উত্তর নেই। উত্তর দিতে পারবে একমাত্র ইহরা। প্রায় মধ্যরাতে ঘুমালো ও হাজারও কল্পনা জল্পনা করতে করতে।

সকালে
পুরো ঘর তন্ন তন্ন করে ডায়েরীটা খুজছে ইহরা । না পাচ্ছে না কোথাও। কারো হাতে পড়লে অনেক কিছু হয়ে যাবে ।
“এটা খুজছো আপু?”, ডায়েরীটা এগিয়ে দিয়ে বললো আয়ুশী।
আয়ুশীর হাতে ডায়েরী দেখে ভয় পেলো ইহরা,
“কালকে আমার রুমে ফেলে এসেছিলে এটা।”
ইহরা কাঁপা কাঁপা হাতে ডায়েরীটা নিলো,
“ভালোবাসো একজনকে ,বিয়ে করতে যাচ্ছো আরেকজনকে। কেনো আপু?”
চোখ মুখ খিচে বন্ধ করলো ইহরা।

“অন্যের জিনিসে হাত দিতে নেই জানো না?”
“সেটা জানি? কিন্তু কি করবো বলো? কৌতূহল!’ ইহিন’ শব্দটা দেখে কৌতূহল হলো!নিজেকে আর দমাতে পারলাম না!”
ইংরা নিশ্চুপ। আয়ুশী ওকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বললো,
“উত্তর দিলে না যে?”
ইহরা নিশ্চুপ। কি বলবে ও? বলার যে কিছুই নেই?
“চুপ করে আছো যে?বলো না। কেনো করছো?”

“ছোট থেকে যারা আমায় বাবা- মায়ের অভাব বুঝতে না দিয়ে এতটা আদর যত্ন করে নিজের মেয়ের মতো বড় করলো। এমনকি আমি বাইরে পড়তে চাই, ইচ্ছেটা মুখে না বলার আগেই তারা আমার ইচ্ছে পূরণ করলো, আমাকে নিজের পায়ে দাড়ানোর যোগ্য করে তুললো, সেই তারা যখন আমার কাছে ছোট্ট জিনিস চাইলো,তার ছেলের বউ হওয়ার। সেখানে স্বার্থপরের মতো কি করে নিজের ভালোবাসা বেছে নেই?ওদের মুখের হাসি কেড়ে নেই?”
আয়ুশী বলার কিছু পেলো না। যা বুঝার বুঝে গেলো ও!

“স্যারকে বললে হয় না?”
” ও নিজেও এই পরিস্থিতির স্বীকার!”
“মানে?”
‘কিছু না!’ বলেই ইহরা বেরিয়ে গেলো । আয়ুশী ওর যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো। এত অদ্ভূত কেনো জীবন ?
উদাস মনে ভার্সিটির মাঠে বসে আছে আয়ুশী। তার পাশেই বসে আছে সীমা আর ইভা।

“আয়ু ?” (ইভা)
“হুম ?”
“কি হয়েছে তোর?” (ইভা)
“এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে ওকে আরো কষ্ট কেন দিচ্ছিস?” (সীমা)
“মানে?” (ইভা)
“তুই জানিস তো সামনে আয়ান স্যারের এনগেজম্যান্ট।” (সীমা)

ইভা আর কিছু বললো না, আয়ুশী ও প্রতিউত্তর করলো না। কোনো কিছুই মিলছে না তার। আয়ানের প্রতিটা ব্যবহারই বলে সে আয়ুশীকে ভালোবাসে। কিন্তু ওর তো কোনো বাধ্যবাধকতা নেই, তাহলে,কিসের বাধা বিপত্তি? সত্যি কি সে ভুল ভাবছে,যে আয়ান তাকে ভালোবাসে?এমনই কল্পনা-জল্পনার মাঝে এলো রোগা-পাতলা এক ছেলে। ছেলেটিকে দেখে ভ্রু কুঁচকে গেলো ওর। ছেলেটি ওর পাশে বসতেই বিরক্ত আরও বেড়ে গেলো এবং ঝট করে উঠে দাড়ালো ও। ওর সাথে সাথে সীমা আর ইভাও দাড়ালো!

“কি হলো ? দাড়িয়ে গেলে যে?” (ছেলেটি)
আয়ুশীর বেশ রাগ হলো। ওদেরই ক্লাসমেট ছেলেটি। ফ্রেন্ড হিসেবে ঠিক থাকলেও এর ব্যবহারই আয়ুশীর পছন্দ না। কেমন গায়ে পড়া টাইপ।
“তুমি এখানে বসেছো কেন?”
“বারে কথা বলতে এলাম।”
আয়ুশী কিছু না বলে যেতে লাগলো। ছেলেটি উঠে দৌড়ে গেলো ওর কাছে!
“আয়ুশী, তোমার নাম্বারটা দিবে?”

আয়ুশী বিরক্তি ভরা কন্ঠে বললো, “তোমাকে আমি কয়বার বলেছি? আমি ফোন ইউজ করি না।”
“মিথ্যে কেনো বলো ? আমি দেখেছি তোমায় ফোন ইউজ করতে !”
আয়ুশী কিছু বলবে তার আগেই সীমা বলে উঠলো,”হ্যাঁ ইউজ করে তো!”
আয়ুশী চোখ পাকিয়ে তাকালো!সীমা দাত বের করে হেসে বললো,”তুমি ফোন তুলো,আমি বলছি!”
“সীমা তুই…”

“আরে থাম তো!আমাদের ক্লাসমেট ই তো!লিখো!”
অতঃপর সীমা ফোন নাম্বার বললো।ছেলেটি হেসে বললো,”আচ্ছা,তাহলে কথা হবে!বাই!”
সীমা হেসে বিদায় জানালো!আয়ুশী আর ইভা চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছে!
“এভাবে কি দেখিস?”
“তুই ওকে নাম্বার দিলো কেনো?”(আয়ুশী)

“আর দিলি তো দিলি,কিন্তু তোর নাম্বার কেনো দিলি?”(ইভা)
“আরে ওই ব্যাটা আয়ুকে ফোন দিয়ে ডিস্টার্ব করবে! আয়ু তো সিধা মানুষ!আমার চক্করে পড়লে দেখবি কয়েকদিন পর আয়ুকে দেখলেই ভয় পাবে!”
“দেখিস এসব করতে গিয়ে নিজে না বিপদে পড়িস!”(আয়ুশী)
সীমা হাসলো শুধু!

দূর থেকে আয়ুশীকে কারো সাথে কথা বলতে দেখে ক্ষোভে হাতের কাগজ দলাই মালাই করতে লাগলো আয়ান!মন চাইছিলো এখনই আয়ুশীর কাছে গিয়ে ছেলেটাকে কিছু কথা শোনাতে!কিন্তু পর মুহূর্তেই থেমে গেলো!আয়ুশীর বলা কালকের কথা গুলো মনে পড়লো!না!গেলো না আর,দূরে থাকবে ও আয়ুশীর থেকে!ভেবেই নিজের কেবিনে চলে গেলো!আয়ানের এই ক্ষোভ এড়ালো না আয়ুশীর চোখ!দীর্ঘশ্বাস ফেললো।বুঝতে পারছে না কোনটা সত্যি,কোনটা মিথ্যা!দায়িত্ব সত্য নাকি এই টের পাওয়া ভালোবাসা?কোনটা?

রাত প্রায় বারোটা!সীমা আর যাই করুক পড়াশোনার প্রতি ওর মনোযোগ ঠিকই থাকে!লাইফে সাকসেসফুল হতেই হবে!তার জন্য দরকার ভালো করে পড়াশোনা করা!সেই সাথে একজন ভালো মানুষ হওয়া!হুট করেই ফোন বেজে উঠলো ওর!এত রাতে কে ফোন করলো দেখতে গেলেই আননোন নাম্বার চোখে পড়লো!কিছুক্ষণ ভেবে মনে পড়লো আজকে রবিনকে ওর নাম্বার দিয়েছিল ও! শয়”তানি হাসি দিয়ে ফোন রিসিভ করলো ও!

“হ্যালো?”
“হ্যালো কে?”
“আমি রবিন,ঐযে সকালে বললাম কথা হবে?”
“ওহো,তুমি?তো এত রাতে ফোন করলে যে!”
“ইয়ে মানে…”
“থাক আর বলতে হবে না বুঝে গেছি!”
“সত্যি তুমি বুঝেছো?”
“হুমম বুঝেছি তো!”
“তার মানে তুমি রাজি?”

সীমা মনে মনে বির বির করলো,”বাবা রে,আমি তো আন্দাজে ধিল মা’র’লাম, এ দেখি সঠিক জায়গায় লেগে গেলো!”
“আচ্ছা তাহলে শুনো এক ছিল রাজা,এক ছিল রানী!দুইজন সুখে শান্তিতে বসবাস করতো!”
“এসব কি বলছো?”
“ওমা কেনো?কাহিনী বলছি!”
“মানে?”
“এত রাতে বড় বোনের কাছে নিশ্চয়ই গল্প শুনতে ফোন দিয়েছো,ঘুম আসছে না বলে?”
“বড় বোন?”

“ওমা,তুমি জানো না?তুমি গুনে গুনে আমার ৭ মাস ছোট!”
ছেলেটি হতভম্ভ হয়ে রইলো।এদিকে সীমা হেসে খুন!সেদিন ফেসবুকে ওর বার্থডে ডেট দেখেছিল ও!এভাবে কাজে লেগে যাবে ভাবেনি ও!তারপর আবার বললো,”আচ্ছা ছোট ভাই,রাখছি হ্যাঁ!আসলে আজকে অনেক ধখল গেছে!”
“কেনো?”
“আর বলো না,সেদিন এক ছেলে প্রপোজ করেছিল!আমি বললাম দেখো তুমি আমার ছোট ভাইয়ের মত!শুনলো না..বলে কিনা ভালোবাসার বয়স হয় না!তাই তো আজ হকি স্টিক দিয়ে এমন মা’র মে’রে’ছি যে আগামী তিন মাস হাঁটতে পারবে না !”

রবিন ঢোক গিলে বললো,”আপু আমার না ঘুম পাচ্ছে!আমি ঘুমাই…কোনো দরকার হলে ছোট ভাইকে অবশ্যই মনে করবে!শুভরাত্রি!”
বলেই রেখে দিল!সীমা উচ্চস্বরে হেসে দিল। ও জানতো ছেলেটা ভীতু প্রকৃতির ,কিন্তু এতটা ভীতু জানতো না!সামান্য মুখের কথাতেই এত ভয়?
“রাত বিরেতে কি তোকে জ্বীনে ধরলো নাকি?”
নাহিমের এমন উদ্ভট কথায় হাসি থামিয়ে অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো ও!
“জ্বীন কেনো ধরবে?”
“তাহলে এমন হাহা করে ডা’ইনির হাসি দিচ্ছিস কেনো?”
“কি বললে?আমি ডা’ইনি ?”

“বলার কি দরকার ?তোর ঘরের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলাম!তোর হাসি শুনে মনে হলো নিশ্চয়ই কোনো ডা’ইনি আমার মত সুন্দর ছেলের চেহারা দেখে খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেছে!কি ভয়টাই না পেলাম!”
বলেই বুকে হাত দিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলো!সীমা রেগে বললো,”এহ,যেই না চেহারা! ডা’ইনি কেনো, পে’ত্নীও ফিদা হবে না!”

অবেলায় ভালোবাসি পর্ব ২০

“এই চেহারায় তুই ও ফিদা হবি!”
“ইহ,বয়েই গেছে আমার!”
“দেখে নিস!”
বলে সিটি বাজাতে বাজাতে চলে গেলো!সীমা মুখ বাঁকিয়ে বললো,”শখ কত!”

অবেলায় ভালোবাসি পর্ব ২২