অবেলায় ভালোবাসি পর্ব ২৩

অবেলায় ভালোবাসি পর্ব ২৩
সাবরিন জাহান

সকাল থেকে বাড়িতে তোড়জোড় চলছে। আয়ুশী এসব দেখেও ভার্সিটি চলে এসেছে। এসব তার সহ্য হবে না। ভার্সিটির মাঠে গাছের নীচে বসে আছে ওরা তিন জন।প্রথম ক্লাস মিস দিচ্ছে।মূলত আয়ুশীর এখন কিছুতেই মন বসছে না!
“এই রবিন!”

সীমার গলা শুনে ওর দিকে তাকালো আয়ুশী।বুঝলো না এই চিপকু কে কেনো ডাকছে!রবিন ভয়ে ভয়ে ওদের কাছে এলো!
“কি গো,আয়ু কে দেখি আর ফোন দেও না!”
ইভা আর আয়ুশী ভাবুক ভঙ্গিতে তাকালো।রবিন ঢোক গিলে বললো,”আসলে ব্যাস্ত থাকি তো!”
“আহারে!”
রবিন আয়ুশীর দিকে তাকিয়ে বললো,”আসসালামু আলাইকুম আপু!”
ইভা আর আয়ুশীর চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“আপু?”
“জি আপু,তুমি গুনে গুনে আমার সাত মাসের বড়!তাই আপু ই ডাকি!”
আয়ুশী হতভম্ভ!বলে কি এই ছেলে?
“কোনো দরকার হলে এই ছোট ভাইকে অবশ্যই ডাকবে আপু!”
বলেই উঠে গেলো।আয়ুশী আর ইভা বিস্ময় কাটিয়ে উঠতে পারছে না!ওদের রিয়েকশন দেখে সীমা জোড়ে হেসে দিল!
“কিরে সীমা?কি করেছিস তুই?একদিনেই চিপকুকে আপু ডাকতে বাধ্য করে দিলি?”(ইভা)
“আরে শোন….”(সীমা)

পরে সেদিন রাতের সব কথা বললো।সব শুনে ওরা হাসতে লাগলো।
“এই আয়ু, আয়ান স্যার আজকে কেনো এলো?উনার তো ছুটি ছিলো আগামী তিনদিন!”
ইভার কথায় আয়ুশী ওর দৃষ্টি অনুসারে তাকালো।দূরেই আয়ান এক টিচারের সাথে কথা বলতে বলতে হাটছে!
“জানি না আমি!”

“চল ক্লাসে যাই!উনি তো আমাদের ক্লাসের দিকেই যাচ্ছে!”
“তোদের ক্লাস করার ইচ্ছে যা,আমার কোনো ইচ্ছে নেই!”
ইভা আর কথা বাড়ালো না!ওভাবেই মাঠে বসে রইলো ওরা!একটা ক্লাসও করেনি আজ!ভার্সিটির টাইম শেষ হতেই বাড়ি ফিরতে উদ্বুদ্ধ হলো ওরা।গেটে আসতেই আয়ানের গাড়ি দেখতে পেলো ওরা।আয়ুশী পাশ কেটে যেতে নিলেই আয়ান ডাক দিল।

“আয়ুশী!”
আয়ুশী দাড়ালেও ঘুরলো না।
“মা তোমাকে আমার সাথে নিয়ে ফিরতে বলেছে!”
আয়ুশী কোনো রকম ভনিতা ছাড়াই আয়ানের গাড়িতে ড্রাইভিং সিটের পাশে বসে পড়লো। আয়ান সীমা আর ইভার দিকে এক পলক তাকিয়ে উঠে গেলো।
ড্রাইভিং করতে করতেই আয়ান বললো,”আসলে মা কিছু জিনিস কিনতে বলেছে।আমি তো সেভাবে কিছুই কিনতে পারিনা।তাই বললো তোমায় নিয়ে যাই!”
আয়ুশী তাও কোনো উত্তর দিলো না। আয়ান দীর্ঘশ্বাস ফেললো।

সন্ধ্যা ছয়টা।সবে গোসল করে বের হলো ইহরা।সবার সাথে মিলে কাজ করতে করতে ভুলেই গিয়েছিলো গোসলের কথা।মাথা মুছতে মুছতে ড্রেসিং টেবিলের সামনে আসলো।তখনই বাড়ির কাজের লোকটি এসে বললো,
“আপা, খালাম্মায় আপনাকে ডাকছিল।আপনি গোসলে ছিলেন বলে তখন কই না!”
“আচ্ছা,আমি যাচ্ছি!”
কাজের লোকটি যেতেই ওর ফোন বেজে উঠলো।সকাল থেকে ফোনের উপর ফোন এসেছে।সব ফ্রেন্ডস একের পর এক ফোন দিয়েই যাচ্ছে।নাম খেয়াল না করেই ফোন রিসিভ করে ড্রেসিং টেবিলের উপর লাউডস্পিকারে রেখে দিলো।

“হ্যালো?”
ওপাশ থেকে কোনো উত্তর এলো না। স্ক্রিনের দিকে তাকাতেই দীর্ঘশ্বাস ফেললো ইহরা! ফাহিন ফোন করেছে!
“কিছু বলবেন?”
“উহু!”
“ফোন কেনো করেছেন?”
“ফোন করতেও পারবো না বুঝি?”
ইহরা কিছু বললো না।

“মিস করছিলাম!”
“এরকম কেনো করছেন?”
“কারণটা তোমার অজানা নয়!”
“সব ভুলে নতুন করে শুরু করুন!”
“আমাকে কি তোমার ওইসব লোকের মতো লাগে যে ভালোবাসা পায়নি বলে সহজেই সবটা শুরু করতে পারবে?”
“ভুল বুঝছেন কেনো?”
“তুমি বাধ্য করছো!”
আবার নিরবতা!

“কান্নার জল সবাই দেখে কিন্তু হৃদয়ের কষ্ট কেও দেখে না…পাওয়ার আনন্দ কিছু দিন থাকে কিন্তু না পাওয়ার বেদনা সারাজীবন এ ও ভুলা যায়না..!মায়াবতী!”
ইহরার চোখ থেকে নোনা জল গড়িয়ে পড়লো।ঠোঁট চেপে কান্না আটকানোর চেষ্টা করলো ।
“নাই বা পেলাম তোমায়,শুধু একবার বলবে প্লিজ?ভালোবাসি!”
ইহরা নিশ্চুপ!
“প্লিজ!”
“ভালোবাসি!”

ওপাশে এবার নিরবতা।কিছুক্ষণ পর ফাহিন বলে উঠলো,”সব চাইলেই ঠিক করে নেয়া যায়!”
“আমি পারবো না ফাহিন!আমি চেষ্টা করেছি খুব বলার!কিন্তু যতবারই এই বিয়ে নিয়ে মামনির মুখের হাসিটা দেখি,আমি দূর্বল হয়ে যাই!যদি হাসি মুখের হাসিটা আমার কারণে হারিয়ে যায়,আমি কখনো পারবো না নিজেকে ক্ষমা করতে!আমি সত্যি দুঃখিত…সব আমার হাতে,কিন্তু তাও কিছু করতে পারলাম না আমি।সরি!এক্সট্রিমলি সরি!”
আরে কাঁদছো কেনো ? তোমার সত্যি কোনো দোষ নেই। শুধু অগ্যটা অন্যরকম
ছিলো।”

ইংরা ড্রেসিং টেবিল ঘেঁষে বসে পড়লো।
“ইহরা!”
“সরি!”
“হুশ……ভুলে যাও সব!রাখছি!”
বলেই কেঁটে দিলো। ইহরা চোখের পানি মুছে নিলো।নিজেকে স্বাভাবিক করে বেরিয়ে গেলো নাহারের উদ্দেশ্যে!নাহারের ঘর খুঁজেও নাহারকে পেলো না ইহরা!নিজের রুমে যেতে নিলেই দেখলো নাহার সিড়ি দিয়ে নিচে নামছে!

“তুমি কোথায় ছিলে মামনি?আমি তো তোমাকে খুঁজতেই নিচে এলাম!”
“তোমার কাছেই গিয়েছিলাম!”
“ওহ,কি বলবে বলো!”
“আয়ান ওরা এখনও ফিরেনি।মোবাইলে কি সমস্যা দেখা দিচ্ছে!ঐটাই ঠিক করার জন্য ডেকেছিলাম!”
“আচ্ছা , চলো আমি ঠিক করে দিচ্ছি!”
নাহার ইহরাকে নিয়ে রুমে গেলেন!

প্রায় ১০ মিনিট ধরে নির্জন রাস্তায় গাড়ি দাড় করিয়ে বাইরে দাড়িয়ে আছে আয়ান। আয়ুশী বিরক্তির চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। আয়ানের সাথে কেনাকাটা করলেও, একবারও কথা বলেনি আয়ুশী! আয়ান বেশ কয়েকবার কথা বলার চেষ্টা করেছে, কিন্তু আয়ুশী পাত্তা দেয়নি… বাড়ি ফেরার পথে রওনা হলে, দীর্ঘ ১০ মিনিট ধরে গাড়ি দাঁড় করে রেখেছে এখানে। আয়ুশী কিছু বলতেও পারছে না আবার সইতেও পারছে না। অবশেষে আর না পেরে গাড়ি থেকে বের হলো।

“সমস্যা কি আপনার ?মাঝ রাস্তায় গাড়ি দাড় করে রাখছেন কেন?”, তীক্ষ্ণ কন্ঠে কথাটি বললেও প্রতি উত্তর করল না আয়ান।
“আপনাকে বলছি আমি!”
আয়ান এক পলক আয়ুশীর দিকে তাকালো। আয়ানের মুখ দেখে আয়ুশীর মনটা খচ খচ করতে লাগলো।
“আপনার কি কিছু হয়েছে? বিধ্বস্ত লাগছে কেন আপনাকে?”

“কিছু প্রশ্ন ছিল!”
“বলুন!”
“সত্যি করে উত্তর দিবে?”
“জানা থাকলে দিবো!”
“আমাকে ভালোবেসে ছিলে কেন আয়ুশী?”
“এসব আজগুবি প্রশ্নের মানে কি?”
“এটা আমার উত্তর নয়!”

আয়ুশী কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল,”ভালোবাসার কোন কারন লাগেনা, করেই যখন -, যেখানে -সেখানে ভালোবাসা হয়ে যেতে পারে… যখন ভালোবাসা হয় তখন মন না কোন পরিস্থিতি দেখে আর না এটা দেখে সামনের ব্যাক্তিটি আদৌ তার জন্য কিনা! তেমনই আমার পরিস্থিতি, হুট করেই হয়ে গেল সবকিছু। কখন কিভাবে সেটা বলতে পারবো না, কিন্তু জানি ভালোবেসে ছিলাম কোনো এক অবেলায়! কিন্তু ভালোবাসলেই যে পেতে হবে এমন কোন মানে নেই, আপনার কোন দায়বদ্ধতা নেই এজন্য।

আপনার জন্য ইহরা আপু একদম সঠিক। মাঝে আমি হলাম উড়ে আসা ঝড়ের মত, যার কোনো নিশ্চয়তা ছিল না। এখন আমি বুঝতে পেরেছি আপনার এখানে দাঁড়ানোর কারণ। আপনি চিন্তা করবেন না, আমি আর ওভাবে রিয়েক্ট করব না। আসলে কি বলুন তো আপনার এই দায়িত্ববোধ ,এই মানবিকতা আমার মনের উপর বড্ড ইফেক্ট ফেলে। আপনারই দায়িত্ববোধক, এই মানবিকতা দেখে মাঝে মাঝে আমার মনে হয় আপনি আমাকে ভালোবাসেন। পরবর্তীতে আপনি নিজেই তা ভেঙ্গে দেন।

আমাকে এখন নির্লজ্জ বলতে পারেন ,নিজের ভালোবাসার কথা এভাবে বলছি বলে। আমি সরাসরি কথা পছন্দ করি, সরাসরি কথাবার্তা বলতেই পছন্দ করি। তাই এই মুহূর্তে আপনি কি ভাবছেন সেটা আমার জানার বিষয় না। তবে এতোটুকু বলতে পারি ,নিজের মধ্যে কোনবপ্রকার অপরাধবোধ রাখবেন না। আপনার এতে কোনো দোষ নেই, আপনি তো মানুষ হিসেবে আমার পাশে ছিলেন, শুধু আমি ভুল বুঝেছিলাম। আর যাই হোক আপনি আমাকে ভালবাসেন তো টপিক এখানেই বন্ধ করে,এবার যাওয়া যাক? কালকে তো অনেক কাজ আছে, আপনার এনগেজমেন্ট বলে কথা!”

আয়ান নিরুত্তর!হুট করেই বলে ফেললো,”যদি বলি আমিও বাসি!”
আয়ুশী না বুঝতে পেরে বলল,”মানে?”
তখনই ফোন আসলো নাহারের। ফোন রিসিভ করতেই আয়ান শুনতে পেলো নাহারের গম্ভীর কন্ঠ।
“জলদি বাসায় আসো ,দরকার আছে।”, বলেই রেখে দিল নাহার!
মায়ের কণ্ঠ শুনে আয়ান বুঝতে পারলো, সিরিয়াস কিছু হয়েছে।আয়ান আর এক মুহূর্ত দেরি না করে আয়ুশীকে বললো,”মা জলদি যেতে বলেছে ,তাড়াতাড়ি উঠো!”

আয়ুশীও আর কিছু জিজ্ঞেস না করেই উঠে বসলো।বাড়িতে ফিরতেই আয়ান নাহারের রুমে গেলো। আয়ুশী ফ্রেশ হতে নিজের রুমে গেল। ফ্রেশ হওয়ার পর বেলকনিতে গেল ও। পাশে বেলকনিতে তাকাতেই দেখলো আয়ানও দাড়িয়ে আছে।আয়ুশী একটু ভেবে জিজ্ঞেস করলো,”আন্টি তখন ওভাবে ডাকলো কেন?”
আয়ান হেসে বললো,”কালকের বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে,মিস ঝা’মে’লা!”
আয়ুশী ভ্রু কুঁচকে বললো,”কি বললেন?”

“বললাম কালকের বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে!”
“এর পরে কি বললেন?”
“কি বললাম?”
“আমাকে কি বলে ডাকলেন?”
“তোমার ডাকনাম দিয়ে!”
“আমার ডাকনাম ঝামেলা?”
“অবশ্যই!”
“সিরিয়াসলি ?”
“হুমম!”
“এই নাম দেওয়ার কারণ কি?”

আয়ান হেসে বললো ,”তোমার সাথে দেখা হওয়ার শুরু থেকে একটা না একটা ঝামেলা লেগেই ছিল। কখনো তুমি আমাকে ফল বিক্রেতা ভেবে রাস্তার মাঝে ওভাবে কথা বলতে, আবার কখনো আমার হোঁচট খেয়ে উপরে এসে পড়ে যেতে। আবার কখনো আমার উপর জুস ,আইসক্রিম ফেলে দিতে। এগুলো দেখেই তোমার নাম ঝামেলা আমার কাছে বেশি পারফেক্ট মনে হলো।”

“অদ্ভুত লোক তো আপনি!”
“হুমম অদ্ভুতই!”
আয়ুশী কিছুক্ষণ চুপ রইলো।এরপর বললো,”সেদিন ডেয়ারের খপ্পরে না পড়লে আজকে সব ঠিক থাকতো!”
“ভাগ্যিস পড়ে ছিলে!”
“মানে?”
“কিছু না মিস ঝামেলা!রাত হয়েছে!খেতে এসো!”,বলেই রুমে চলে গেলো।আয়ুশী বোকা চাহুনি দিয়ে ওর যাওয়ার পানে তাকিয়ে ভাবলো,”লোকটার মাথা গেছে নাকি?”

সেদিন রাতটা কোনো ভাবে পার হলো! সকাল হতেই সবাই কাজে লেগে পড়লো,আয়ুশী একবার এই কাজ করছে,তো আরেকবার অন্য কাজ!কাজের চক্করে ওর আর খাওয়া হয়নি!আর সবাইকে ও ই খাইয়ে দিয়েছে!নাহলে কাজের ফাঁকে কেউ ই খেতে পারবে না!কিন্তু ও নিজেই অবসর পাচ্ছে না।এত বড় বাড়ি,আর সেখানে এত মানুষের অনুষ্ঠান।একটু তো কাজ থাকবেই!রান্নাঘরে সব কাঁ’টাকাটি করছিলো।

ওদের বাড়ির কাজের লোকের সাথে দুইজন এনেছে রান্নার জন্য!কিন্তু তাও রান্নার কাজ তো কম না!তাই সাহায্য করছে ও। ইহরাও থাকতে চেয়েছিলো।কিন্তু আয়ুশী কড়া করে নিষেধ করে বলেছে রূপচর্চা করতে। ইহরাকে ঠেলে পাঠালেও ইহরা অন্য কাজে লেগে পড়েছে।কাজের মাঝেই কেউ তরকারি দিয়ে রুটির টুকরো ওর মুখে পুড়ে দিলো! আয়ানকে দেখে অবাক হয়ে বললো,”আপনি…”

আর কিছু বলার আগেই আয়ান আরেকটু ছিঁড়ে তরকারি দিয়ে ওর মুখে দিলো।
“সবাইকে খাইয়ে নিজে খেলেন না কেনো,মিস ঝামেলা!”
আয়ুশী অবাক হলো।এই লোকটার হয়েছেটা কি?আগে কথা বললেও মনে হয় অনেক জড়তা নিয়ে কথা বলছে।অথচ কালকে থেকে কেমন খাপছাড়া হয়ে কথা বলেই যাচ্ছে! আয়ান মুখের সামনে আবার খাবার ধরতেই ভাবনা থেকে বের হলো ও।

“আয়ু রে,এই লোক আবার তোকে ফাঁসাচ্ছে! ফাসিস না, ফাঁসিস না! এটাও উনার মতে দায়িত্ব ই হবে!নিজের কাজ কর।”,নিজের মনে নিজেই বির বির করে কাজে মন দিল ও! আয়ান ও খাইয়ে চলে গেলো
সন্ধ্যায় অনুষ্ঠানের জন্য রেডি হচ্ছে আয়ুশী।ব্ল্যাক গাউন ,মাঝে হালকা ব্ল্যাক স্টোন দিয়ে কাজ করা!ওড়নাটা ভালো মত গায়ে জড়িয়ে নিলো। চুল গুলো ডিজাইন করে নিচু করে খোঁপা করে নিলো ,সেই সাথে হালকা সাজ!ওড়নার কারণে গলায় কিছু পড়া লাগেনি!কানে ছোট স্টোনের ঝুমকা দিলো।হুট করেই নজরে এলো আয়ানের দেয়া সেই ব্রেসলেট না।চোখ ঘুরিয়ে নিয়েও আবার তাকালো।অবশেষে অনেক ভেবে চিন্তে ওটাও পড়ে নিলো।মানুষটা নাই বা থাক,তার দেয়া তো কিছু আছে!

“একদম বাজে লাগতেছে!”
আয়ানের কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে তাকালো ও!
“আপনাকে কমিটমেন্ট করতে বলেছি আমি?”
“চোখের সামনে বাজে জিনিস দেখলে কমিটমেন্ট তো করতেই হবে!”
আয়ুশী ক্ষিপ্ত চোখে তাকালো!
“এভাবে দেখে লাভ নেই! বসো!”
বলেই আয়ুশীকে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসিয়ে দিলো।
“আরে কি করছেন টা কি?”
“চুপ করে বসো!”

আয়ান আয়ুশীর কান থেকে স্টোনের ঝুমকা সরিয়ে সিলভারের ছোট ঝুমকা পড়িয়ে দিলো।চুল গুলো খুলে দিয়ে সামনে দিয়ে একটু স্টাইল করে পেঁচিয়ে বেধে দিল।
“এবার ঠিক আছে!”
আয়ুশী আয়নায় নিজেকে একবার পরখ করে বললো,”আপনি কি আগে বিউটি পার্লারে কাজ করতেন?”

আয়ুশীর এমন প্রশ্নে হতভম্ভ হলো আয়ান!আয়ানের অবস্থা দেখে আয়ুশী বললো,”না মানে এত ভালো কাজ করেন,তাই আরকি!যাক গে,নিজের হবু ফিয়নসে কে বাদ দিয়ে হঠাৎ আমার সাজ নিয়ে পড়লেন কেনো?ওহ সরি,দায়িত্ব রাইট?”
আয়ান বিরক্তির শ্বাস ফেললো।এক কথা বার বার বলার কি আছে!কিছু একটা খেয়াল হতেই বললো,”ওয়েট!”
বলেই দৌড়ে বাহিরে গেলো। আয়ুশী ওর দিকে তাকিয়ে আয়নাতে চোখ রাখলো।নিজেকে নিজেই বললো,”এটাও কি দায়িত্ব আয়ু?”

দীর্ঘশ্বাস ফেললো ও!তখনই আয়ান এসে ওর কানের কাছের চুলে একটা সাদা কাঠগোলাপ গুঁজে দিয়ে বললো,”এখন ঠিক আছে!এখন লাগছে পারফেক্ট মিস লজ্জাবতী!”
আয়ুশী অবাক চোখে তাকালো। তা দেখে আয়ান ওর কানের কাছে ফিস ফিস করে বললো,”এভাবে তাকাতে নেই,প্রেমে পড়ে যাবেন।মিস ঝামেলা!”
বলেই এক মুহুর্ত না দাড়িয়ে বেরিয়ে গেলো।আয়ুশী এবার আরো অবাক হলো।না ও স্বপ্নে বিভোর হয়ে আছে!নাহলে এসব আজব কারবারি কেনো হবে?আজব তো….

(আজকে অনেক বড় করে দিছি…তো আজকে আরো কিছু কথা ক্লিয়ার করি।আপনাদের অনেকের অভিযোগঃ ছোট করে দেই,দেরীতে দেই…ব্লা…ব্লা!সে জন্যই এগুলো বলা!আমি গল্প আর লিখতে চাইনি।কারণ দুইটা,এক-আমার নিজস্ব ফোন নেই। আর দুই আমার ফোন ধরা নিষিদ্ধ!
ফোন না থাকার কারণে আম্মুর ফোন দিয়ে লিখতাম, কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আম্মু ফোন দিতো না।নিয়ে যেতো!তাই প্রতিদিন দিতে পারতাম না।তখন অত পাঠক ছিলোও না,কিন্তু যারাই ছিলো ওরা ক্ষিপ্ত হতো।এটা স্বাভাবিক।বর্তমানে গল্প লেখার কোনো ইচ্ছেই ছিলো না।ভেবেই রেখেছিলাম নিজের ফোন পেলেই গল্প লিখবো নয়তো আর না….যেই ভাবা সেই কাজ।লাস্ট গল্পের পর প্রায় দেড় মাস অফ ছিলাম।

কিন্তু এই স্বল্প সংখ্যক পাঠিকার মাঝে কয়েকজন অভিমান করে বসেছিলো গল্প লিখবো না দেখে।খালি অভিযোগ করতো।তখন সিদ্ধান্ত পাল্টালাম।গল্প লিখবো কিন্তু একদিন পর পর দিবো!সেই অনুসারে থিম বানালাম!প্রথম পর্বেই উল্লেখ করতে চেয়েছিলাম একদিন পর পর গল্প দিবো।কিন্তু ভুলো মনের কারণে ভুলে গেছি।পরে এডিট করতে গিয়েও করিনি!ভাবলাম থাক,পরের পর্বে বলে দিবো।তখনও আমার ভাবনার বাইরে ছিলো গল্পের এত পাঠক/পাঠিকা হবে!পুরো একদিনে ১কে রিয়েক্ট আমার মতো ছোট খাটো লেখিকার বিরাট পাওনা!টোটালি স্পিচলেস ছিলাম…তখন মন বললো এত গুলো মানুষকে একদিন পর পর ওয়েট করানো ঠিক হবে?ব্যস শুরু করলাম ডেইলি লিখা।প্রতিদিনের পর্বের ওয়ার্ড নির্ধারণ করলাম যে কমপক্ষে ১১০০ ওয়ার্ড লিখবো।

এরপর যতো লিখা যায়।কিন্তু কম হবে না!সেভাবেই শুরু।কিন্তু হুট করে মেহমানের আগমন।বেশির ভাগ কাজই আমায় করতে হয়।তাও ফুরসত পেলেই লিখতে বসে পড়তাম!এখন মেহমান না থাকলেও আমার কাজ থাকেই।বলতেই পারেন অবিবাহিত মেয়ের আবার এত কাজ কিসের?আসলে যার কাজ সেই বুঝবে!গল্প শুরু করার পর আমি কেবল একদিন গ্যাপ দিয়েছি।কিন্তু প্রতিদিন ছোট করে দেরিতে হলেও আমি গল্প দিয়েছি এই ভেবে আপনারা অপেক্ষা করেন।এমনও দিন গেছে আমি খাতায় লিখে লেন্স দিয়ে টেক্সট কপি করে দিয়েছি মোবাইল পাইনা বলে।আবার এমনও গেছে আমি কাজ করার ফাকে নিজে মুখে বলে অন্য কাউকে দিয়ে টাইপ করিয়েছি!

অবেলায় ভালোবাসি পর্ব ২২

এই দেরী আর ছোটর জন্য অনেকেই বলেন রিচ বেড়ে ভাব বাড়ছে,হেন তেন।অনেক কিছুই!কিন্তু আমার অবস্থা তো আর আপনারা বুঝবেন না!এই কারণেই আমি আর লিখতে চাইনি।ওদের অনুরোধ রক্ষার্থে লিখেছি।কিন্তু ভাবিওনি এতটা রিচ হবে।কিন্তু আমিও নিরুপায়,ফোন না পেলে লিখতে পারিনা!আবার অনেক সময় কাজের কারণেও এমন হয়!যাই হোক…অনেক কিছুই বললাম!ভুল বললে মাফ করে দিবেন।আর আমার দিকটা বোঝার অনুরোধ রইলো!আশা করি আপনাদের উত্তর পেয়েছেন!ধন্যবাদ,দুঃখিত!)

অবেলায় ভালোবাসি পর্ব ২৪