অবেলায় ভালোবাসি পর্ব ২৪

অবেলায় ভালোবাসি পর্ব ২৪
সাবরিন জাহান

প্রায় সবাই এসে গেছে। আয়ুশীকে দেখে ফাহিন এগিয়ে এলো।
“তুমি চাইলে আমাদের বিয়েটাও হতে পারে।”
আয়ুশী কোমরে হাত দিয়ে ফাহিনের দিকে অকিয়ে বললো, ” আবার শুরু করলেন ?”
“কিকরবো ? সুন্দরী মেয়ে যে আমার পাশে দাড়িয়ে আছে ভাবতেই গর্ব হচ্ছে!”
আয়ুশী হাসলো। তবে ও জানে লোকটা নিজেকে আড়াল করতে এভাবে বলছে।

“ডাক্তার, আপনার মাথা গেছে।”
ফাহিন ভাব নিয়ে বললো,
“মিস রোগী! আমার মত হ্যান্ডসাম দ্বিতীয় কাউকে পাবে না।”
“ইস! কি দুঃখের ব্যাপার, আপনাকে পেলাম না।”
“বাহ, আমার মতো মজা করা শুরু করে দিলা?”
“অবশ্যই ”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

দুজন হাসলো। তখনই নেমে এলো ইহরা৷ সাদা গাউনে হাল্কা সাথে একদম হুর পরী লাগছে। আয়ুশী ফাহিন একসাথে বলে উঠলো, “মাশাআল্লাহ।”
আয়ান ওর কাছে গিয়ে হাত বাড়িয়ে দিলো৷ ইহরাও হাত বাড়িয়ে দিলো। আয়ান ওকে নিয়ে ওর বাবা মায়ের কাছে এলো। ফাহিন আয়ুশীকে বললো, “দুজনকে খুব মানিয়েছে তাই না?”

আয়ুশী ফাহিনের দিকে তাকালো।ইস!ও তো মাত্র কয়েকমাস ভালোবেসেছে।লোকটা তো তারও বেশি!দীর্ঘশ্বাস ফেললো গোপনে!ওসব মেয়েদের মতো ও না যে কেঁদে কেটে বুক ভাসাবে!নিজেকে সামলাতে ও বেশ পারে।কিন্তু মনের কোথাও শূন্যতা অনুভূত হচ্ছে ওর!তখনই বেলাল বলে উঠলো,”আজকের এই পার্টি আমার ছেলে মেয়েদের উদ্দেশ্যে!আমি আমার মেয়ে ইহরার সাথে জনাব মোস্তফার ছেলে ফাহিনের বিয়ে দিতে চাইছি!আর আজকেই ওদের এনগেজমেন্ট হবে!”

ফাহিন হেসে বললো,”বুঝলে মিস রোগী!মনের সাথে সাথে কানটাও গেছে।নাম বলছে আয়ানের ,আর আমি শুনছি আমার!”
“আমারও কান বোধ হয় গেছে,নাহলে আমিও কিভাবে আপনার নাম শুনলাম!”
দুই জন দুইজনার দিকে চোখ বড় করে তাকালো!আবার বেলালের দিকে তাকালো!এদিকে ইহরার রিয়েকশনও ওদের মত!হুট করেই বেলাল এসে ফাহিনের ঘাড়ে চাপড় দিয়ে বললো,”কি ব্যাপার!ডাকছি শুনছো না?”

“আমাকে?”
“হ্যাঁ, চলো চলো!”
ফাহিনকে টেনে নিয়ে গেল। ফাহিন ঘাড় ঘুরিয়ে আয়ুশীকে ইশারায় বুঝালো,”আমি কি স্বপ্ন দেখছি?”
আয়ুশীও ইশারায় বুঝালো,”কে জানে!”
তখনই আয়ান এসে ওর পাশে দাঁড়ালো।
“এনি প্রবলেম?”
“আমার মনে হচ্ছে আমরা দুইজন একসাথে স্বপ্নের দুনিয়ায় ভাসছি!”
“মানে?”

আয়ুশীর এতক্ষণে খেয়াল হলো ও আয়ানের পাশে।মুখ বাঁকিয়ে ওদের কাছে চলে গেলো আয়ুশী।
সুন্দরভাবে এনগেজমেন্ট সম্পন্ন হলো।পুরোটা সময় ওরা তিনজন ঘোরের মাঝে ছিল!রাত হয়ে যাওয়ায় আর কেউ তেমন ঘাটলো না!ঘুমিয়ে পড়লো।সকালে উঠে ফ্রেশ হয়ে আয়ুশী আর ইহরা নিচে গেলো!নাহার সব গুছিয়ে রাখছে।আয়ুশী আর ইহরাও কাজে লেগে পড়লো!কিন্তু ইহরা কাজে হাত দিতে গেলেই নাহার বলে উঠলো,”আরে আরে!কি করছো?”

“কেনো মামনি?তোমায় সাহায্য!”
“আরে তুমি এ বাড়ির কেউ হও নাকি যে কাজ করবে?মেহমান মানুষ,নিজের রুমে থাকো!যাও যাও!”
ইহরার চোখ ভরে উঠলো।
“এসব কি বলছো মামনি?”
“ভুল বললাম নাকি?”

চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো। ইহরা মাথা নিচু করে আছে।মামনি হঠাৎ এমন করে এসব বললো কেনো?নাহার নিজের কাজে মন দিলো। আয়ুশীও ঠিক বুঝলো না কিছুই।বেলাল তখন নিচে এলো।
“কই গো?আমার আদা চা দাও!”
ইহরা চোখের পানি মুছে বললো,”আমি এখনই দিচ্ছি বাবাই!”
“না না,তুমি কেনো দিবে?তুমি হলে এ বাড়ির অতিথি!অতিথি কে কি কেউ এসব করতে দেয়?”
ইহরা এবার জোড়ে কেঁদে দিল।

“এভাবে কেনো বলছো?রোজ তো আমি ই করি!আজ কি হলো?”
“এতদিন আমরা যাকে করতে দিতাম সে আমাদের মেয়ে ছিল।”
“তো এখন কি মেয়ে না?”
“মেয়ে হলে আমাদের সবটা বলতো!”

আয়ুশীর এতক্ষণে সব মাথায় ঢুকলো।ঠোঁট চেপে হাসলো ও! ইহরা মাথা নিচু করে আছে।নাহার ইহরাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বললো,”আমি যখন প্রথম নিজের ছেলের জন্য তোমার হাত চেয়েছিলাম,তখন সেই চাওয়াতে আমার খুশি ছিল।তবে এই ভেবে নয় যে তুমি আমার ছেলের বউ হয়ে আসবে!বরং এই ভেবে আমাদের সাথে তুমি খুশি থাকবে!আমি চাইতাম না,অপরিচিত কারোর কাছে তোমায় তুলে দিতে।

যখন দেখলাম আয়ান আর ফাহিনের সাথে তোমার বন্ধুত্ব খুব ভালো তখন ভাবলাম এদের মধ্যেই কেউ তোমার লাইফ পার্টনার হতে পারে। ফাহিনকে চাইলেই বেছে নিতে পারতাম কিন্তু আয়ানকে বেছে নিয়েছি এই ভেবে তুমি তাহলে নিজের ঘরটার মাঝেই স্বাচ্ছন্দ্যে থাকতে পারবে!কিন্তু তাই বলে এটা চাইনি নিজের ভালোবাসা স্যাক্রিফাইস করে আমাদের কথা রাখো!সেদিন তোমাকে ওই কথা আমি জিজ্ঞেস করেছি,কোনো আবদার ছিল না।অথচ এতটাই পর ভাবলে যে কিছু বললেই না!”

ইহরাই নাহারকে জড়িয়ে বললো ,”আমি একটুও পর ভাবিনি।আমি তো তোমাদের খুশি দেখতে চেয়েছিলাম।আর কিছু না!”
বেলাল এবার কাছে এসে বললেন,”আমাদের কাছে তোমার খুশিই আমাদের খুশি!তাই পরের বার থেকে এমন কিছু যেনো না হয়!”
ইহরা কান ধরে বললো,”এই কান ধরছি!আর হবে না!”

বেলাল আর নাহার হেসে দিল।ওদের দেখাদেখি ইহরাও হাসলো!আয়ুশী গাল ফুলিয়ে বললো,”আজ কেউ নেই বলে আমাকে ভুলে গেছে!”
নাহার আয়ুশীর কান মলে দিয়ে বললো,”কি বললি?”
“আহ..ছোট আম্মু লাগছে!ছোট আব্বু কিছু বলো।”
দূর থেকেই ওদের দেখে হাসলো আয়ান! সন্ধ্যার একটু আগে ছাদে এসেছে আয়ান,আয়ুশী আর ইহরা!মূলত ইহরা ডেকেছে সবটা শুনতে। আয়ান বলতে লাগলো…

নিজের রুম থেকে বের হলো ইহরা ,নাহারের কাছে যাবার জন্য!তখনই বেলকনি থেকে বেরিয়ে এলো নাহার! ইহরা আর ফাহিনের প্রতিটা কথা শুনেছে উনি!কাজের লোক এসে যখন বলেছে ইহরা গোসলে তার কিছুক্ষণ পরেই তিনি ওর রুমে এসে অপেক্ষা করতে থাকেন।বেশ কিছুক্ষণ বসে থাকার পর বেলকনিতে চলে যান।তখনই এসব শুনতে পান! আয়ানকে ফোন করে ডেকে এনে সবটা বলার পর তিনি বলেন,”আমি জানি আয়ান,এখন তোমার সাথে অন্যায় হবে!কিন্তু ওরা দুইজন একে অপরকে ভালবাসে!”

আয়ান হেসে বললো,”আমার কোনো আপত্তি নেই মা!তুমি যা করবে তাতেই আমি খুশি!”
“কিন্তু…”
“মা!আমার সত্যি খারাপ লাগছে না!ইভেন আমি ইহরাকে এখনও পর্যন্ত ভালো বন্ধু হিসেবেই ট্রিট করেছি!আর কিছুই না…”
নাহার সন্তুষ্ট হলেন ছেলের কথায়।রাতেই ফাহিনের মা বাবার সাথে কথা বলেন।আর সব ঠিক করেন!

সবটা বলার পর আয়ান বললো,”আমি তোমাকে ভালো বন্ধু ভাবলেও,তুমি ভাবলে না ইহরা!”
“সরি, ইয়ার?আমি বুঝতে পারছিলাম না কি করবো!”
“চলো নিচে যাওয়া যাক।আজান দিবে!”
ইহরা মাথা নাড়িয়ে আগেই নেমে গেলো। আয়ান আয়ুশীকে না দেখে নামতে গিয়েও নামলো না!

“নিচে যাবে না?”
“আপনি যান!”
“সন্ধ্যায় কিন্তু ভূতে ধরবে!”
“ধরুক আপনি যান!”
“তুমি কি কিছু নিয়ে আপসেট?”
“জি না!”
“বলো!”
“বললাম তো না!”
“বলতে বলেছি!”

“আরে আজব তো?যখন বলছি কিছু না তাও কেন জোর করছেন?”
“এভাবে রিয়েক্ট কেনো করছো?”
“কারণ মানতে পারছি না আপনার এই পাল্টে যাওয়া!”
“মানে?”
“এইযে,এই হুট করে পাল্টে যাওয়া! ইহরা আপু অন্য কারো বলে এখন আপনি আমার কাছে আসতে চাইছেন!কি ভেবেছেন আমি বুঝি না?”

আয়ান নিষ্প্রাণ দৃষ্টিতে তাকালো।আয়ুশী সেই দৃষ্টি উপেক্ষা করেই বললো,”এখন ইহরা আপু নেই বলে আপনি আমাকে ফিরাতে চাইছেন!তাই না মিস্টার আয়ান মাহতাব?বাট সরি সেসব কোনো কাজে লাগবে না।আপনাকে আমি মন থেকে সেদিনই মুছে ফেলেছি।তাই অন্য কাউকে খুঁজে নিবেন!”

আয়ান কিছু না বলে নিচে চলে গেলো।আয়ুশী চোখের কোণে জমে থাকা পানি মুছে নিলো। ও জানে এসব কথায় আয়ান কষ্ট পেয়েছে।কিন্তু ওর হাতে কিছুই নেই।এতটাই সস্তা নাকি ?যখন মনে হলো কাছে টানবে ,আবার পরক্ষনেই ছুঁড়ে ফেলবে!আত্মসম্মান নেই নাকি ওর!ওকে সেদিন যেভাবে অপমান করেছিলো, সেটাকি এত সহজেই ভুলে যাবে? হ্যাঁ,হতে পারে ক্ষমা করেছে।কিন্তু বুকে ও যায়নি।এত সহজে আয়ানকে ও ধরা দিবে না।বুঝাবে কিভাবে কষ্ট পেয়েছে ও!

পরের দিন!
“তুই পাগল আয়ু?”(সীমা)
“পাগলামির কি হলো?”
“আরে স্যার তো বলেছিলো,উনার রাগলে নিজের উপর কন্ট্রোল থাকে না।তাই তো তুই ওভাবে ডাকায় টেনশন আর রাগ মিলিয়ে ওভাবে রিয়েক্ট করেছে!”(ইভা)
“তুই কি স্যারের চোখে নিজের জন্য ভালোবাসা দেখতে পাস না?”(সীমা)
“যদি ভালোই বাসতো,তাহলে বিয়েটাতে না করতো আগেই!”

“আয়ু,দেখ আমি ,সীমা এমনকি তুই নিজেও দেখেছিস স্যার তোকে নিয়ে কতটা সেন্সিটিভ!”(ইভা)
“কতটা কেয়ারিং!তাকে তুই এভাবে বললি?”(সীমা)
আয়ুশী মলিন কণ্ঠে বলল,”তাহলে এনগেজমেন্ট কেনো আটকালো না?”
“দেখ আয়ু,আমি বুঝতে পারছি!কিন্তু এমনও হতে পারে সে বাধ্য ছিল!”(সীমা)
“আর এনগেজমেন্ট তো আগে থেকেই ঠিক ছিল।তাই হয়তো ইহরার কথা ভেবে স্যার বলতে পারেনি!”(ইভা)
আয়ুশী নিরুত্তর!

“আয়ু!”
“আগে উনি একটু বুঝুক আমার কেমন লেগেছে,তারপর!”
সীমা ওর মাথায় হাত রেখে বলল,”বেশ,তবে দেখিস বুঝাতে গিয়ে আবার হারিয়ে ফেলিস না!”
“এখন ক্লাসে চল!”(ইভা)
ওরাও আর কথা না বাড়িয়ে ক্লাসে গেলো।
বাড়িতে ফিরতেই বিছানায় গা এলিয়ে দিলো আয়ান।আর কয়েকটা মাস গেলেই এই ভার্সিটির কাজ আর করা লাগবে না।নিজের বিজনেস শুরু করবে!দরজায় কেউ নক করতেই বলে উঠলো,”দরজা খোলা আছে!”
একটু উকি ঝুঁকি মে’রে ভিতরে আসলো আয়ুশী!শরবতের ট্রে টা বেড সাইড টেবিলে রেখে বললো,”ছোট আম্মু পাঠিয়েছে!খেয়ে গ্লাসটা দিন!”

সম্পূর্ণ কথাটা অন্য দিকে তাকিয়ে বললো আয়ুশী। আয়ান নিষ্পলক ওর দিকে তাকিয়ে আছে সেটা ও বেশ বুঝতে পারছে!
“আমার কিন্তু অনেক কাজ আছে!”
“কি কাজ?”
আয়ুশী ভরকে গেলো।মূলত এখন ওর কোনো কাজই নেই! নাহারই শরবত নিয়ে আসছিলো।কিন্তু ও বলেছে এত কষ্ট করে তাকে উপরে যেতে হবে।সে দিয়ে দিবে!
“পড়াশোনা !”
“ওহো!”
আয়ুশী মুখ বাকালো!
তাই দেখে আয়ান মুচকি হাসলো!গ্লাস খালি করে ওর হাতে দিয়ে দিলো।গ্লাস পেতেই আয়ুশী চলে গেলো।তখনই ভিতরে এলো ইহরা!

অবেলায় ভালোবাসি পর্ব ২৩

“সব ঠিক ঠাক?”
“আর ঠিক ঠাক!বলে দিয়েছে আমি তোমাকে না পেয়ে ওর কাছে গেছি!”
“ওকে সব বলে দিলেই তো হয়?”
“আগে আবার ওর মনে অনুভূতি আসুক আমার প্রতি!তারপর!”
“কিন্তু এতে তো ও আরো রেগে যেতে পারে!”
“দেখা যাক!”
ইহরার আয়ানের কথাটা পছন্দ হলো না।উফফ…কবে যে সব ঠিক হবে!

অবেলায় ভালোবাসি পর্ব ২৫