অবেলায় ভালোবাসি পর্ব ৩২

অবেলায় ভালোবাসি পর্ব ৩২
সাবরিন জাহান

প্লেটের ভাঙ্গা টুকরো গুলো ট্রে তে করে নিচে নিয়ে এলো ডেইজি!কাজের লোক কে ট্রে টা দিয়ে বললো,”এগুলো ফেলে দিয়ে আয়ানের ঘর পরিষ্কার করে দিয়ে আসো!”
নাহার চশমা মুছতে মুছতে বললেন,”আজও ফেলে দিয়েছে সব?”
ডেইজি মলিন কণ্ঠে বলল,”হুমম!”
চশমাটা চোখে পড়ে নিলেন উনি!চশমাটা আয়ুশীর দেয়া!যদিও আগে তেমন ব্যাবহার করতেন না,কিন্তু ইদানিং চোখে সমস্যা দেখা দিয়েছে!

“সকালে খেয়েছিল কিছু?”
ডেইজি সামান্য হেসে বললো,”এই আট মাসে শুধু রাতেই একটু খেয়েছে বেঁচে থাকা জরুরি বলে!”
নাহার দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,”নিজের করা ভুলের জন্যই তো নিজেকে এভাবে শাস্তি দিচ্ছে!আগে তো আমার কথাও শুনতো!আর এখন…”
ডেইজি কিছু বললো না।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“ছেলেটার স্বপ্ন ছিল নিজের ব্যাবসা দাড় করাবে,কত কাজ করতো এই নিয়ে!আর এখন সব ফেলে নিজের ঘর অন্ধকার করে ওখানেই বসে থাকে! আয়ুর ছবি দেখে আর কথা বলে… বুড়ো বয়সে এখন তোমার আঙ্কেলকেই হাল ধরতে হচ্ছে।আর তুমি আয়ানের ব্যাবসা দাড় করাতে ওর হয়ে কাজ করে যাচ্ছো!ছেলেটা এত উন্মাদ কবে থেকে হলো বলো তো?এত পা’গল আয়ুর জন্য,কই আগে তো বুঝি নি!”
“একটা কথা আছে না মামনি? হারালে সব কিছুর মূল্য বুঝা যায়,সেটাই হয়েছে ওর সাথে!”

বলতে বলতেই নিচে নেমে এলো ইহরা!বিয়ের তিন মাসের পর ফাহিনের মা বাবা তার দাদা দাদীর সাথেই থাকতে গ্রামে চলে যান !তাই ইহরারাও এখানে এসে পড়েছে!সেই সাথে নাহারকেও সঙ্গ দেয়া হবে।বেলাল এখন আয়ানের বদলে ভার্সিটিতে ক্লাস নেয়।যেহেতু এই ইয়ারেই উনার অবসর নেয়ার পালা!কিন্তু ক্লাস মিস দিয়ে তো নিতে পারবেন না!আর আয়ানও যেতে পারবে না ,তাই কষ্ট করে নিজেই যান!আর একটা মাসই তো!ডেইজি আয়ানের হয়ে ব্যাবসার কাজ করে!নাহলে আয়ানের এই স্বপ্ন,স্বপ্নই থেকে যাবে!সেই সাথে সবার খেয়ালও রাখে….

“আন্টি,তোমার আয়ুকে আসলে বলে দিও,তার মানুষদের তার অনুপস্থিতিতে আমি দেখা শোনা করেছি!এর মূল্য না দিলে কিন্তু ওকে এ বাড়িতে আসতে দিবো না।”
নাহার মলিন হেসে বললো,”সে কি আসবে আর?”
ডেইজি নিরুত্তর!
“আয়ান যাই করুক না কেনো,আমি বা তোমার আংকেল তো কোনো দোষ করিনি!আমাদের কেনো ফেলে গেলো?”
“বাদ দেও মামনি!খাবে কিছু?সকালে তো দুই পিস পাউরুটি খেয়েছো শুধু!এমন করলে তো অসুস্থ হবে!”
“আর খাওয়া,ছেলে মেয়েদের এমন অবস্থা দেখে খাবার নামে গলা দিয়ে?”

হাঁটুতে মুখ গুজে বসে আছে আয়ান!উগ্র চেহারা, উস্কো খুস্কো চুল…ময়লা কাপড়!এই নিয়েই বসে আছে!ঘরে সূর্যের আলো আসতেই মাথা তুলে চোখ পিট পিট করে তাকালো ও!কালো গোল কামিজ পরিহিত কাউকে জানালার পর্দা সরাতে দেখেই অস্ফুট স্বরে বলল,”আয়ুশী!”
আয়ুশী আয়ানের দিকে তাকিয়ে ওর কাছে এগিয়ে এলো!ওর পাশে বসে রইলো ও!
“তুমি এসেছো আয়ুশী?”

আয়ুশী মুচকি হেসে ওখানেই বসে রইলো! আয়ান ওকে ছুতে গেলেই মুহূর্তে অদৃশ্য হয়ে গেলো ও!অন্ধকার ঘরেই আছে ও।কোনো আলো আসেনি ঘরেতে!আয়ুশীর অদৃশ্য হওয়াতে আয়ান জোড়ে জোড়ে আয়ুশীকে ডাকতে লাগলো…নিচ থেকে আয়ানের গলা শুনে ইহরা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে উঠলো,”আবারও আয়ুশীকে ইমাজিন করেছে !”
নাহার বেগম আঁচলে মুখ চেপে ঘরে চলে গেলেন!বেশ কিছুক্ষণ ডাকার পর সাড়া না পেয়ে ফোনের স্ক্রিনে থাকা আয়ুশীর ছবিটির দিকে তাকিয়ে বললো,”আজও আমার স্বপ্নে এসে মিলিয়ে গেলে?আর কত সাজা দিবে আমায়?প্লিজ ফিরে এসো না!তোমার মিষ্টার খারুশ যে অপেক্ষায় আছে তোমার!”

ফোনটা বুকে জড়িয়ে বসে রইলো ও!সেদিন হসপিটাল থেকে বেরিয়ে সব জায়গায় খোজ করেছে আয়ুশীর।টানা দুইদিন খোজ করেও পায়নি আয়ুশীর দেখা!অনিচ্ছায় হারিয়ে যাওয়া মানুষদের ফিরে পাওয়া গেলেও,স্বেচ্ছায় হারিয়ে যাওয়া মানুষদের কোনোদিন ফিরে পাওয়া যায় না!সেই থেকে কেঁটে গেছে আট মাস। ক্যালেন্ডারের আরেকটি ডেট কেঁটে দিয়ে আয়ান নিজের কাছে নিজেই বললো,”তোমার যাওয়ার আট মাস শেষ হয়ে নয় মাসে পড়লো মিস ঝামেলা!আর কত অপেক্ষা করাবে?কত?”

সোফায় বসে বসেই আয়ানের কথা ভাবছিলো ইহরা!হুট করেই কিছু মাথায় আসতে বড় বড় পা ফেলে নিজের রুমে গেলো ও। ফাহিন বসে বসে কিছু ফাইল দেখছিলো! কড়া গলায় জিজ্ঞেস করলো,”আয়ুশী কথায় ফাহিন?”
ইহরার প্রশ্নে চমকে গেলেও নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বললো,”আমি কিভাবে বলবো?”
ফাহিনের হাত থেকে ফাইলটা নিয়ে ছুঁড়ে ফেললো ও!
“কি করছো কি ইহরা?”
“তোমার কি মনে হয় আমি বোকা?সেদিন আয়ুর পিছনে পিছনে তুমি গিয়েছিলে,সেটা কিন্তু কেউ খেয়াল না করলেও আমি দেখেছি!”

“গিয়েছিলাম তার মানে এই না যে আমি ই জানি আয়ু কোথায়!”
“কাম অন,আয়ু চলে আসার সাথে সাথেই তুমি ওর পিছে গিয়েছিলে!ওইটুকু সময়ে ও তো চলে যেতো না হাওয়া হয়ে!”
“তোমার যা খুশী ভাবো!”
“কেনো করছো এমন?তোমার বেস্ট ফ্রেন্ড কষ্ট পাচ্ছে দেখছো না তুমি?”
“কষ্ট পাওয়ার কাজ করেছে তাই পাচ্ছে!”
“ওহ,এখন দোষ শুধু আয়ানের!আয়ুর নেই?”
“আমি এসব বিষয়ে কথা বলতে চাচ্ছি না!”

“বেশ,যতদিন না আয়ু ফিরছে ততদিন তোমার আমার মাঝে এক দেয়াল তৈরি করলাম!যা পেরিয়ে তুমি কখনোই আমায় পাবে না…”
ফাহিন চুপচাপ বসে রইলো। ইহরা উত্তরের আশায় থাকলেও উত্তর না পেয়ে চলে যেতে নিলেই ফাহিন বলে উঠলো,”আয়ানের দোষ গুলোকে তোমার এতটাই ঠুনকো লাগে?”
“মানে?”
“একটা সম্পর্কে সব চেয়ে বেশি কি দরকার ইহরা?”

ইহরা কিছুক্ষণ ভেবে বলল,”ভালোবাসা ও বিশ্বাস!একে অপরকে বোঝা… সুখে দুঃখে সাথে থাকা!”
“তাহলে আজ কেনো আমার সঙ্গ ছেড়ে যাচ্ছো?”
ইহরা জবাব দিলো না!
“আয়ান সবসময় আয়ুকে কারণে অকারণে ভুল বুঝেছে!ওর রাগ ওর কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে!ওকে একটু বুঝতে দেও যে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করা কতটা জরুরি!আমি জানি আয়ু ঠিক ফিরবে…সেও যে তার আয়ানকে ভীষণ ভালোবাসে!”

ইহরা ফাহিনের পাশে বসে পড়লো!ওর কাঁধে মাথা রেখে বললো,”তোমার রোগীকে বোঝাও না,তার খারুশ সাহেব একটুও ভালো নেই তাকে ছাড়া!একটুও না…এভাবেই চলতে থাকলে আয়ান যে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়বে।মামনি বাবাই ওদের দিকে তাকানো যাচ্ছে না।ডেইজি আপুও দিন রাত এক করে এখানে পড়ে আছে সবার দিক ভেবে!আয়ুশীকে খোঁজার চেষ্টাও বন্ধ করেনি!এভাবে আর কত দিন!”
ফাহিন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,”ওদের মাঝে রাগ জিনিসটাই বেশি!চিন্তা করো না..সব ঠিক হবে!সব…”
ইহরা ওভাবেই বসে রইলো! দুইজনই নিরবতা পালন করলো!

ঘরের কাজ শেষ করে সবে মাত্র মোবাইলে অফিসের কাজ গুলো দেখছিলো ডেইজি!সেই মুহূর্তে অপরিচিত নাম্বারে ফোন আসায় বেশ বিরক্ত হলো!তাও প্রয়োজনীয় ভেবে রিসিভ করে সালাম দিলো!
ওপাশ থেকে সালামের উত্তর নিয়ে বলে উঠলো,”বাহ ডা’ইনি আপু বেশ উন্নত হয়েছে দেখি তোমার!এখন সালামও দেও ?”
পরিচিত কণ্ঠ শুনে চমকে উঠলো ডেইজি!

“তুমি?”
“কেমন আছো?”
ডেইজি নিরুত্তর রইলো!
“আমার ফোন দেয়াটা বুঝি পছন্দ হয়নি?চিন্তা করো না,আয়ানের জন্য ফোন দেইনি!”
“তাহলে হঠাৎ আমাকে কি মনে করে ফোন দিলে?”
“না ভাবলাম দেখি তোমরা কিভাবে সংসার করছো!হাজার হোক,এক সময়ের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলে!”
ডেইজি আবার চুপ করে রইলো!

“আচ্ছা বেশ রাখছি!”
“কেমন আছো?”
ফোন রাখতে রাখতে থেমে গেলো আয়ুশী!
“এইতো ভালো তুমি?”
“এই বাড়ির একটা মানুষও ভালো নেই?”
“কেনো?”
“বাড়ির প্রাণ ভোমরা কেড়ে নিয়ে বলছো কেনো?”
“আমি কিছুই কেড়ে নেইনি!সব ছেড়ে দিয়েছি শুধু!”

“ফিরে এসো আয়ু!”
“ফিরে আসলে যে আয়ানকে নিয়ে নিবো আমি!সইতে পারবে?”
ডেইজি হাসলো!
“জানো আয়ু,ছোট থেকেই একা একা বড় হয়েছি!এইজন্য সব সময় একাকী থাকতাম।যখন আয়ানরা আমার ক্লাসে এলো ওদের সাথেও কথা বলতাম না!কিন্তু ফাহিনের কারণে কিভাবে জানি ফ্রেন্ডশিপ হয়ে গেলো আমাদের তিনজনের!সেই সাথে ছিল ইহরা!বাবা মা বিজনেস নিয়ে ব্যাস্ত থাকতো!আমাকে দেখার সময়ই পেতো না!স্কুল লাইফ পেরিয়ে ,কলেজ লাইফ পেরিয়ে ভার্সিটি লাইফে এলাম!

ফাহিন ডাক্তারি নিয়ে পড়তো বিধায় আমাদের সাথে কম থাকতো!আমি আর আয়ানই বেশির ভাগ সময় এক সাথে থেকেছি!আয়ানের কেয়ারিং,সাপোর্ট সব ও ফ্রেন্ড হিসেবে করলেও ওর প্রতি টান এসে পড়লো!একসময় ভালোবেসে ফেললাম!কিন্তু আয়ানের মনে এসব কিছুই ছিল না এটাও জানতাম!তাই কখনো ফ্রেন্ডশিপ ভাঙার ভয়ে প্রকাশ করিনি!যখন ইহরার সাথে ওর বিয়ে ঠিক হয়েছিল,সব মেনে নিয়েছিলাম!ওদের বুঝতেও দিতাম না আমি ঠিক কিভাবে লাইফ লিড করছিলাম!কিন্তু যখন জানলাম ওদের বিয়ে হচ্ছে না,আমার থেকে বেশি খুশি হয়তো কেউ হয়নি!

সেদিনই নিজের পাসপোর্ট , ভিসা সব ঠিক করলাম!হলুদের আগের দিন রওনা দিলাম বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে।আর পৌছালাম হলুদের দিন! ফাহিনের সাথে দেখা করেই ছুটে এলাম আয়ানের কাছে।ওকে দেখা মাত্রই আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে জড়িয়ে ধরলাম!দুনিয়ার কোনো খেয়াল ছিল না আমার মাঝে!আল্লাহকে লাখ লাখ শুকরিয়া জানালাম আমার ভাগ্যকে আরেকবার সুযোগ দেয়ার জন্য।কিন্তু পরক্ষণেই তোমার কথা জানলাম!কিন্তু এবার কোনোভাবেই মানতে পারলাম না!তাই তোমার সাথে এভাবে কথা বলতাম!

কিন্তু সেদিন রাতে তুমি আর আয়ান যখন একসাথে খুনসুটি করতে করতে খাচ্ছিলে সেদিনই নিজের ধারণা বদলে ফেললাম!ভালোবাসা জোর করে হয় না!তাই সরে গেলাম…কিন্তু তোমার সাথে ঝগড়া করতে বেশ লাগতো!তাই তখনও আয়ানের নাম করে খেপাতাম!আমি আজও জানি তুমিও আয়ানকেই ভালোবাসো,আর আয়ান ও তোমায়!আমি সত্যি আয়ানকে চাই না! হ্যাঁ,হয়তো ভালোবাসি!কিন্তু ভালোবাসলেই যে পেতে হবে এর কোনো মানে নেই!না পেয়েও দুর থেকে ভালোবাসা যায়!আর একতরফা ভালোবাসার এই অনুভূতি ই সুন্দর!”

বলে কিছুক্ষণ থামলো!
“আয়ান একদম ভালো নেই,প্রতিটা মুহূর্তে ও তোমায় খুজে নিজের আশেপাশে!”
“ভালোবাসলে বিশ্বাস করতে হয়,সে তো করেনি!”
ডেইজি নিরুত্তর!
“হ্যাঁ আমি মানছি আমি অন্যায় করেছি তোমার সাথে,কখনো খাবার নষ্ট করে,কখনো ফেলে দিয়ে!তাই বলে তোমাকে আঘাত দেয়ার কথা ভাবিনি আমি!”
“আমি জানি আয়ু,তুমি কেমন!”

“আমি ফোন করেছি শুধু এটা বলতে!আমি আমার কৃতকর্মের জন্য দুঃখিত আপু!আমি সত্যি নিজের মাঝে ছিলাম না!কিন্তু পরে ঠিকই বুঝেছি!তোমার থেকে ক্ষমা না চাওয়া অব্দি শান্তি পাচ্ছিলাম না!”
“ক্ষমা চাইতে হবে না আয়ুশী।প্লিজ ফিরে এসো!”
আয়ুশী চুপ রইলো!
“আয়ুশী?”
“আমার নামটা তাহলে উচ্চারণ করতে পেরেছো!”
ডেইজি হাসলো!

“আসলে কি বলোতো,যাদের আমার ভালো লাগে না…তাদের নাম হাজার চাইলেও মাথায় সেট করতে পারতাম না!তখন তো তোমায় ভালোই লাগতো না!”
“এখন লাগে বুঝি?”
“লাগে তো! বড় বোন হয়ে মিষ্টি ছোট বোনকে ভালো না লাগলে চলে?”
আয়ুশী হাসলো!ডেইজি আবার বললো,”কথা এড়িয়ে গেলে?”
“ভালো থেকো!”

বলেই কেঁটে দিলো ও!এক মুহুর্ত দেরি না করে সিম খুলে ফেললো ও!বর্তমানে সিলেটে আছে! ফাহিনের বাবা মায়ের সাথে!সেদিন হসপিটাল থেকে বের হবার পর….
“মিস রোগী,দাড়াও!”
“কি বলবেন?”
“কোথায় যাচ্ছো?”
“যেদিকে দু চোখ যায়!”
“এভাবে রাগ করে না,মাথা ঠাণ্ডা করো!”
“কি ঠাণ্ডা করবো আমি?দেখলেন না কি বললো আমায়?”
“তুমি জানোই তো রেগে গেলে ওর মাথা ঠিক থাকে না!”

“রাগ রাগ, করে করে উনি আমাকে প্রতিবার কষ্ট দিয়েছে!আজ আমায় বললো আমি নিচু মন মানসিকতার লোক?আমাকে ভালোবেসে উনি আফসোস করছেন!বেশ তাহলে থাকুক উনার ডেইজিকে নিয়ে!”
“শাট আপ আয়ু!কোথায় যাবে তুমি?”
“জানি না!”
“দেখো রাগ করে সব কিছুর সমাধান হয় না!একটু পরেই আয়ান বুঝতে পারবে সবটা!”
“ভালোবাসার কথা বাদ দিলাম!আরে একজন আসামিও তো নিজের পক্ষে সুপারিশ করার সুযোগ পায়!উনি আমাকে সেটাও দেন নি!আমার কি কোনো আত্মসম্মান নেই?”

“কুল আয়ু,ঠাণ্ডা হও!”
“সরি ভাইয়া,আপনার এই কথা আমি কোনো ভাবেই রাখতে পারবো না!”
“ওকে ওকে!বাট প্লিজ এত রাতে কোথায় যাবে?”
“আমি জানি না!তবে ভাইয়া একটা কথা!”
“কি?”

“সিড়ির বাম সাইডে উপরে একটা ক্যামেরা লাগিয়েছিলাম ইহরাপুর বিয়ের রেকর্ডিং করতে!ওটা খোলা হয়নি!ওটা আপনার ফ্রেন্ডকে দেখিয়ে দিবেন!আসি…আমি এত অপমানের পর তার মুখো হতে চাই না!”
“বেশ তোমার আয়ানের সামনে যাওয়া লাগবে না!আমাদের বাসায় থেকো?”
“আমি তার লাইফ থেকেই চলে যেতে চাই!”
“এসব কি বলছো?”
“হুমম,অন্তত বুঝুক রাগের পরিণাম কি কি হতে পারে!আসছি…”
“আয়ু,আচ্ছা বেশ ঠিক আছে!বাট আমার কথাটা মানো!”
“কি কথা?”

অতঃপর ফাহিন ওকে অনেক বুঝিয়ে সুজিয়ে সিলেট ওর দাদা দাদীর কাছে পাঠিয়েছে!তিন মাসের মাথায় ওর মা বাবাও আসে!কিন্তু আয়ুশী বলে রেখেছে ওর এখানে থাকা কখনো কাউকে দিলে একদম চলে যাবে ও!তাই ওরাও জোর করেনি। ফাহিনও আয়ুশীর কথা মতো ভিডিও ক্লিপ টুকু বাড়িতে এসে নিয়ে গেছে! তারপরই আয়ানকে আয়ুশীর খবর দেয়!ডেইজির জন্য অপরাধবোধ অনুভব হচ্ছিলো আয়ুশীর!তাই নয় সিম তুলে কল করলো…অন্তত এক দিক দিয়ে তো কষ্ট কমবে!!
এসব ভাবনার মাঝেই ফোন আসলো ওর! ফাহিনের ফোন দেখে রিসিভ করলো!

“বলুন ডাক্তার!”
“ফিরা যায় না আয়ুশী?”
“না!”
ফাহিন দীর্ঘশ্বাস নিলো!
“আর কত? আয়ানের অবস্থা করুন!শুধু বেচে থাকতে যতটুকু প্রয়োজন ওইটুকু করে!এর বেশি একটা কাজও বাড়তি করে না!সারাদিন নিজে অন্ধকার ঘরে বসে থাকে!আর তোমার ছবির সাথে কথা বলে…এমন চলতে থাকলে ওকে মানসিক হাসপাতালে নিতে হবে!প্লিজ বুঝো!”
আয়ুশী নিরুত্তর…

“রাগ ভালো ,কিন্তু এতটাও না!”
“রাগ কি নাজায়েজ আমার?”
“না আয়ুশী,রাগটা করা স্বাভাবিক!কিন্তু অপর পক্ষ যখন সত্যি অনুতপ্ত হয়ে তাকে ক্ষমা করা উচিত!”
“প্রতিবার করেছি আমি!কিন্তু আর কত?তার রাগের দোহাই দিয়ে কত বার ফিরেছিলাম আমি?আজ আবারও সেই রাগের দোহাই দিচ্ছেন?রাগ তার একার?আমার নেই?”

“দেখো আয়ু,তোমার আগেও ডেইজি আয়ানের লাইফে ছিলো!নিজের বেস্ট ফ্রেন্ড এর এমন অবস্থা দেখলে কার মাথা ঠিক থাকে? আমারও যদি এমন হতো তাহলেও আয়ান এমনটাই করতো!শুধু দুর্ভাগ্যবশত তোমার বলা কথাটা সত্যি হয়ে গিয়েছে!আর সেটাই ওই মুমেন্টে আয়ানের মাথায় বিরাজ করেছে!আচ্ছা ইভা বা সীমা ডেইজির জায়গায় থাকলে আর সেম সিচুয়েশন হলে,আয়ানের জায়গায় তুমি থাকলে কি করতে ভেবে পেতে?”
আয়ুশী নিরুত্তর!

“মানছি আয়ান ভুল করেছে!কিন্তু কম শাস্তি তো পায় নি? আট মাসে প্রতিটা ক্ষণ তোমায় হারানোর জন্য নিজেকে দোষারোপ করেছে!শুধু তুমি ফিরে আসবে এই আশায় নিজের কোনো ক্ষতি করেনি!তুমি ফিরে আসবে এই আশায় বেঁচে থাকার জন্য যতটুকু করা লাগে অতটুকু করে!খাবারও খায় তখন যখন ওর মনে হয় এখন না খেলে বাঁচতে পারবে না তখন!আয়ানের অবস্থা মামনি, ইহরা,আমি কেউ ই সহ্য করতে পারছি না আয়ুশী!অনেক হয়েছে এবার তো সব শেষ করো!”

আয়ুশী নিরুত্তর!
“প্লিজ মিস রোগী!এই ডাক্তারের কথাটা শুনুন!রাগ তো সবার হয়.. কারো বেশি , কারো কম!তোমারও হয়েছে…তাইতো ডেইজির সাথে ওগুলো করেছিলে!শুধু আয়ানেরটা অনেকটা বেশি ছিল! প্লিজ….”
“সরি ডাক্তার!আমি পারবো না…”

অবেলায় ভালোবাসি পর্ব ৩১

বলেই কেঁ’টে দিলো! ফাহিন অসহায় হয়ে বসে পড়লো!কোন দিকে যাবে ও?দুইজনই যে ওর ফ্রেন্ড…
বাড়ির উঠানে চৌকিতে বসে আকাশ দেখছে আয়ুশী।দুপুর সাড়ে বারোটা বেজে গেছে! আয়ানকে ছাড়া সেও ভালো নেই!প্রতিমুহূর্তে অনুভব করে আয়ানকে!কিন্তু ওর সেল্ফ রেস্পেক্ট সেই অনুভূতিকে পাত্তা দেয় না ও! ফাহিনের কথা শুনেও মনে মনে বলে,”ফিরবো না আমি!কিছুতেই না!”

অবেলায় ভালোবাসি পর্ব ৩৩