অবেলায় ভালোবাসি পর্ব ৩৩

অবেলায় ভালোবাসি পর্ব ৩৩
সাবরিন জাহান

চোখে সূর্যের আলো পড়তেই পিট পিট করে তাকালো আয়ান।বেশ কিছুক্ষণ আগেই ইহরা এসেছিল খাওয়ানোর জন্য!কিন্তু ফেলে দিয়েছে।চোখের সামনে সাদা গোল কামিজ পরিহিত আয়ুশীকে দেখে ওর মুখে হাসি ফুটলো!আয়ুশী গিয়ে আয়ানের পাশে বসলো! আয়ান মলিন কণ্ঠে বলল,”আজও স্বপ্নে এসে ফাঁকি দিয়ে চলে যাবে!”
আয়ুশী কিছু বললো না!

আলতো হাতে আয়ানকে টেনে তুললো!চমকে উঠলো আয়ান!কই এতদিন তো ছোঁয়ার আগেই অদৃশ্য হয়ে যেতো আয়ুশী! আয়ান পুতুলের মত উঠে দাড়ালো!আয়ুশী ওর হাতে টাওয়াল,ট্রাউজার আর টিশার্ট দিয়ে বললো ,”ফ্রেশ হয়ে আসুন!”
“তুমি সত্যি এসেছো আয়ু?”
“ফ্রেশ হয়ে, গোসল করে তারপর আসুন!”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

বলেই ওকে ওয়াশরুমে পাঠালো!আয়ান ঘোরের মাঝেই ফ্রেশ হয়ে আসলো!গোসল করে বের হতেই আয়ুশী আয়ানের হাত থেকে টাওয়াল নিয়ে ওকে বিছানায় বসিয়ে দিলো। আয়ান এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে! ও চাইছে এই স্বপ্ন না ভাঙুক!এভাবেই আয়ুশী ওর কাছে থাকুক!আয়ুশী আয়ানের মাথা মুছিয়ে দিতে লাগলো!দরজায় টোকা পড়তেই আয়ানের ঘোর ভাঙলো!

“আয়ান,দরজা লাগিয়েছিস কেনো? খোল!!”
বাইরে থেকে চিন্তিত হয়ে ডাকছে ফাহিন।কখনো আয়ানের দরজা কখনো বন্ধ পায় নি!আজ এভাবে বন্ধ দেখে চিন্তিত হলো!
আয়ুশী বলে উঠলো,”দরজা খুলুন!”
আয়ান উঠে দরজা খুললো। দরজা খোলার সাথে সাথে ফাহিন কিছু বলতে নেয়ার জন্য মুখ খুলতে নিলেও বলতে পারে না!অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে!আয়ানের মুখে মুচকি হাঁসি!

“আয়ান তুই?”
“আয়ুশী এসেছে!”
“হোয়াট?কোথায়?”
“এইতো…”
বলেই পিছে তাকাতে দেখলো আয়ুশী নেই!
আয়ান তড়িঘড়ি ভিতরে এসে আশেপাশে ওকে খুঁজলো!না নেই ঘরে কেউ!
“কোথায় আয়ুশী?”
“এখানেই ছিল ও!আমার মাথা মুছে দিচ্ছিলো!”
ফাহিন দীর্ঘশ্বাস ফেললো!

“তুই আয়ুকে ইমাজিনেশন করেছিস আয়ান!”
“আরে না ও সত্যি ছিল!”
“আয়ান! আয়ুশী এখানে নেই…তোর আজও হিলিউসন হয়েছে!”
“কিন্তু ও যে আমার মাথা মুছে দিচ্ছিলো!”
“সব হিলিউশন আয়ান!আয়ু আসেনি এখানে…”
বিছানায় মাথা চেপে বসে পড়লো আয়ান!আজও ফাঁকি দিয়ে চলে গেলো আয়ুশী? ফাহিন দীর্ঘশ্বাস ফেললো!ছেলেটার অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে!

“আরে ডাক্তার!কেমন আছেন?”
আয়ুশীর আওয়াজে দুইজনই চমকে তাকালো! ফাহিন অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো!
“তুমি?”
“একটু আগেই এসেছি!দুপুর টাইম , কেউ ছিলো না বসার ঘরে!তাই এখানে আসলাম… স্যার এর অবস্থা দেখে ফ্রেশ করালাম!”
“তুমি সত্যি এসেছো?”
আয়ুশী হাসলো!

“ছোট আম্মু কি ঘুমাচ্ছে?*
ফাহিন কিছু না বলেই জোড়ে জোড়ে ইহরা , নাহারকে ডাকতে লাগলো! ফাহিনের এমন হাঁকানো শুনে দৌড়ে আসলো ইহরা ,তার পিছু পিছু নাহার আর ডেইজি!
“এভাবে চিল্লাচ্ছো কেনো…”
বলতে বলতেই ওর আয়ুশীর দিকে চোখ যায়,!ওখানেই থমকে দাড়িয়ে থাকে…কিছুক্ষণ যেতেই এক দৌড়ে আয়ুশীকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে!
“আপু?”
“চুপ কথা বলবে না,স্বা’র্থপর কোথাকার!”
আয়ুশী হাসলো!
“সরি আপু…”

“ফাজিল মেয়ে!কেমনে ছিলে আমাদের ছাড়া?”
“চলে এসেছি তো!”
নাহার গম্ভীর গলায় বললো,”এখানে আসতে কে বলেছে ওকে?”
আয়ুশী ইহরাকে ছেড়ে নাহারের সামনে গিয়ে বললো,”ও ছোট আম্মু!এই দেখো,কানে ধরছি!এখনও রাগ করে থাকবে?”
“আমি তোমায় চিনি না!”
“বেশ,তাহলে চলে যাচ্ছি!”
বলে পা বাড়াতে নিলেই নাহার ওর হাত ধরে টান দিলেন!ওর কান টেনে বললেন,”খুব পেকে গেছিস তাই না?”
“লাগছে ছোট আম্মু!সরি সরি…”

নাহার হেসে জড়িয়ে ধরলেন ওকে!
মাঝে ডেইজি গলা ঝেড়ে বললো,”আমাকে তো কেউ পাত্তাই দিচ্ছে না!”
আয়ুশী নাহারকে ছেড়ে ওর সামনে গিয়ে বললো,”বেশ মোটা হয়ে গেছো…”
মুখটা ডেইজির কানের কাছে নিয়ে বললো,”ডা’ইনি আপু!”
ডেইজি মেকি রাগ দেখালো!পর মুহূর্তেই ওকে জড়িয়ে ধরলো ও!
“তোমার এই ডাকটা ভীষণ মিস করেছি!”
আয়ুশীকে পাওয়া মাত্রই সবাই রাজ্যজুড়ে আলাপ জুড়ে দিল। আয়ান নিষ্পলক তাকিয়ে রইলো!

নিজের রুমে গোসল করে বেরিয়ে আসতেই ডেইজিকে বিছানায় বসে থাকতে দেখলো!!কিছু না বলেই বারান্দায় কি তোয়ালে মেলে দিলো!
“আয়ানের সাথে কথা বলেছো?”
“হুমম!এসেই তো ওখানে গেলাম!”
“সেই কথা বলার কথা বলছি না!তুমি বুঝতে পারছো কি বলছি আমি!”
“ইহরাপু আর ছোট আম্মু কি করে?”
“আয়ু!”

আয়ুশী উত্তর দিলো না।ডেইজি ওর সামনে দাড়িয়ে বললো,”জানো রাগ ,জেদ ভালো!তবে এতটাও না!শেষ একটা সুযোগ দিয়েই দেখো না!রাগ মানুষকে ধ্বংস করে ফেলে! আয়ান তো সাজা পেয়েছে…প্লিজ আর রেগে থেকো না!”
“নিচে চলো!”
“আবারও এড়িয়ে গেলে!আয়ু,একটা সম্পর্কে রাগ থাকা ভালো।কিন্তু এতটাও না !সম্পর্ক টিকাতে একটু কম্প্রোমাইজ করতে হয়!”
আয়ুশী কিছু না বলে নিচে গেলো!

বিকেলে ছাদে গাছে পানি দিচ্ছিলো আয়ুশী। সেই সময় এলো আয়ান!
“এতদিনে গাছ গুলো তার অরজিনাল মালিককে পেলো!”
আয়ুশী কিছু না বলেই পানি দেয়া শেষ করে নিচে যেতে নিলেই আয়ান হাত ধরে আটকালো!
“কিছু বলবেন?”
“এখনও রেগে থাকবে?”
“রেগে নেই তো আমি!কোন অধিকারে রাগ করবো?যেখানে আপনি আফসোস করেন আমাকে ভালোবেসে!সেই অধিকারে?”

“সরি আয়ুশী,তুমি জানোই তো আমার রাগ..”
“আর কত রাগের দোহাই দিবেন আপনি?আর কতবার মেনে নিবো আমি?একটা সম্পর্কে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ভালোবাসা আর বিশ্বাস!সেখানে আপনি বিশ্বাস তো দুর,আমাকে আমার পক্ষে বলার সুযোগটাও দেননি!”
আয়ান নিরুত্তর!
“আমি এখানে শুধু ছোট আম্মুর জন্য এসেছি! আপনার জন্য নয়!”

আয়ান হেসে বললো,”তাহলে এসে সবার আগে মায়ের কাছে যেতে,আমাকে দেখতে আসতে না!”
আয়ুশী নিচের দিকে তাকিয়ে আছে! আয়ান আয়ুশীর আরেকটু কাছে গিয়ে চোখের কোণে থাকা জল আঙ্গুল দিয়ে মুছে বললো,”আমার জন্য না আসলে,এই চোখে জল থাকতো না!”
আয়ুশী ঘুরে চলে যেতে নিলেই আয়ান আবার আটকে নিজের দিকে ঘুরালো!ওর সামনে দুই হাঁটু গেরে কান ধরে বললো,”আমি কথা দিচ্ছি আর কখনো রাগ দেখাবো না!খুব শিক্ষা হয়েছে আমার..এবার থেকে রাগের আগে দুইবার ভাববো!তাও এভাবে থেকো না!প্লিজ!ভীষণ ভালোবাসি তোমায়…ভীষণ!”

আয়ুশী গম্ভীর গলায় বললো,”যদি আবার এমন করেন?”
আয়ান আয়ুশীর ডান হাতটা নিজের বাম বুকে রেখে বললো,”আবার এমন করলে দরকার পড়লে মে’রে দিও,তবে ছেড়ে যেও না!সইতে পারবো না!একদম না….হয় একেবারে মে’রে দিও,কিন্তু ছেড়ে দিয়ে জীবন্ত লা’শ করে দিও না!প্লিজ…”
আয়ুশী নাক টেনে বললো,”মাত্র আট মাসে দেবদাস হয়ে গেছেন!আমি তো ভেবেছিলাম এক বছরের আগে ফিরবোই না…কিন্তু এই পাগলের এমন পাগলামি শুনে না এসে পারলাম না!মানলাম আমি চলে গেছি!তাই বলে এমন উন্মাদ হবেন?”

“প্রাণভোমরা হাত ছাড়া হলে পাগল তো হতেই হয়!”
“আর এমন করলে আসলেই জানে মে’রে দিবো!”,বলেই হেসে দিলো!
আয়ান উঠে আয়ুশীর কপালের সাথে কপাল ঠেকালো!
“ভালোবাসি,মিস ঝামেলা!তুমি ছাড়া তোমার মিস্টার খারুশ যে ভালো থাকবে না!একদম শে’ষ হয়ে যাবে!এই খারুশের খারুশগিরি যে তোমার সাথেই চলে!”
আয়ুশী ফিক করে হেসে চলে!
“আমিও ভালোবাসি!”

দুইজনার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়লো!প্রাপ্তির কান্না এটা!মূল্যবান প্রাপ্তির…আয়ান চট করে আয়ুশীকে ছেড়ে কাঠগোলাপ গাছ থেকে একটা ফুল নিলো!আয়ুশীর কানে গুঁজে দিয়ে বললো,”ভালোবাসি আমার কাঠগোলাপ!যেই ফুল দিয়ে আমার অনুভূতি তৈরি হয়েছিল!সেই ফুল দিয়েই আজ তোমায় স্বীকার করলাম!আবারও ভালোবাসি আমার কাঠগোলাপ!”
আয়ুশী সেই দিনের মত আজও লজ্জামাখা হাসি দিল! যা দেখে আবার মুগ্ধ হলো আয়ান।অপলক তাকিয়ে রইলো!

ছাদের দরজায় দাড়িয়ে ওদের মিলন দেখে খুশি হলো ডেইজি!এই কয়দিনে গাছের যত্ন নিতো ও!ভেবেছিলো আজ আসবে না!কারণ আয়ুশী তো এসে গেছে!ওরাও ওদের মালিককে পেয়ে গেছে..কিন্তু তাও মায়া জন্মে গিয়েছিল!তাই চলে এলো..এসেই ওদের মিলন দেখলো!একটু কষ্টও হচ্ছে,তাও নিজে নিজেই বললো…”খুব খুব খুশি থাকো তোমরা!আর যেনো কোনো বাঁধা না আসে!”

অবেলায় ভালোবাসি পর্ব ৩২

চোখের জল মুছে নিয়ে আবার বললো,”আমার সময় ফুরিয়ে গেছে,এবার যাওয়া দরকার!”
বলেই নিচে চলে গেলো!

অবেলায় ভালোবাসি পর্ব ৩৪