অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ২৪
Mousumi Akter
“যায় হউক সিগারেট খাওয়া গালে আমি চুমু দিবনা।”
পূর্ণতার বাচ্চাসুলভ কথায় প্রভাতের ভাল লাগল। সে আবারও দুষ্টু হাসল।আচমকা পূর্ণতার মসৃণ পেটে হাত রাখল।প্রভাতের এমন স্পর্শে পূর্ণতা বজ্রের ন্যায় চমকালো।শরীর শিরশির করে উঠল।শরীরের সমস্ত লোমকূপ দাঁড়িয়ে গেল।সে অগ্নিচোখে তাকাল প্রভাতের দিকে।তাকিয়ে বলল,
“কি হচ্ছে? হাত সরান আর আমাকে নামান।”
প্রভাত পূর্ণতাকে নামিয়ে দিল খুব সাবধানে।নামিয়ে দিয়ে বলল,
“তোমাকে ছুঁয়ে বলছি বউ,আই সয়্যার আমি ঠোঁট ছাড়া জীবনেও গাল দিয়ে সিগারেট খাইনি।”
পূর্ণতা প্রভাতের দিকে তাকাল।তাকিয়ে দেখল প্রভাতের ঠোঁট জুড়ে দুষ্টুমির ছড়াছড়ি।পূর্ণতা প্রভাতের বুকে হাত দিয়ে ধাক্কা মেরে বলল,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“ছুঁয়ে বলার জন্য অন্য কোনো জায়গা ছিলনা।পেট ছুঁয়ে বলতে হবে?”
প্রভাত পূর্ণতার দিকে ঝুঁকলো।পূর্ণতার নাক টেনে দুষ্টু কন্ঠে বলল,
“অন্য কোথাও তো স্পর্শ করতে দাওনা বউ। ইচ্ছাতো করে তুলার মত নরম বউটাকে স্পর্শ করি।যদি তুমি চাও আমি স্পর্শ করতে আগ্রহী।” বলেই প্রভাত হাত বাড়াল পূর্ণতার দিকে।পূর্ণতার কাছে প্রভাতের হাবভাব ভাল লাগল না।
পূর্ণতা প্রভাতের দিকে আবারও অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,
“সমস্যা কি প্রভাত ভাই?আপনি কি সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছেন?”
পূর্ণতার কথা শেষ হতে না হতেই আচমকা প্রভাত আবারও পূর্ণতার ওষ্টে ওষ্ট ডুবিয়ে দিল। পূর্ণতার নড়চড় বন্ধ হয়ে গেল।সে শুধু হাত ছুড়াছুড়ি করছে।প্রভাতের পিঠে পূর্ণতার হাত দুটো যেন নৃত্য করছে।প্রভাতের সেসব দিকে কোনো হুঁশ নেই।সে ডুবে আছে পূর্ণতার ওষ্টে।বউ-এর এমন পা’ গ’লা’মো প্রভাতের ভাল লাগছে। সব সময় সব কিছু সহজ ভাবে পেলে ভাল লাগেনা।কিছু সময় বাঁধা আসলে ভাল লাগে।সেই বাঁধা যদি বউকে ভালবাসার সময় বউ নিজেই দেয় তার মত মিষ্টি আর কিছুতে নেই।মিনিট পাঁচেক পর প্রভাত পূর্ণতাকে ছেড়ে দিল।প্রভাতের ঠোঁটে বিশ্ব জয়ের হাসি।পূর্ণতা ওড়না দিয়ে ঠোঁট মুছতে মুছতে প্রভাতের দিকে তাকিয়ে ফুঁসছে।প্রভাত মাথার পেছনে হাত দিয়ে চুলকাতে চুলকাতে বলল,
” নেহাৎ বাচ্চাদের মত কথা বলার জন্য ভেজা চুমু দিলাম।”
পূর্ণতা ফুঁসে উঠে বলল,
“মানে?”
“সুযোগ নিতে চাইব কেন? বউ আমার এতে সুযোগ নেওয়ার কি আছে?”
পূর্ণতা আবার-ও ফুঁসে উঠে বলল,
“আপনার তো মতলব সুবিধার নয়। ভুলেও কাছে আসার চেষ্টা করবেন না।”
“ওকে আসব না। তবে আমার ও যেন তোমাকে দেখে ফিলিংস না আসে।যদি কোনো ফিলিংস আসে খবর আছে আজ তোমার।”
পূর্ণতা রাগে গটমট হয়ে বলল,
“অসভ্য,অভদ্র,অশালীন পুরুষ মানুষ কোথাকার।”
প্রভাত আবার ও হাসল।হেসে রুমে প্রবেশ করল।পূর্ণতাও রুমে প্রবেশ করল।প্রভাত ড্রেসিন টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে হাত ঘড়ি খুলতে খুলতে বলল,
“আমি আগে যাচ্ছি সাওয়ারে।আমার জাস্ট পাঁচ মিনিট লাগবে।তোমার তো ঘন্টা একটা লেগে যাবে।”
পূর্ণতা আলমারি খুলে প্রভাতের দিকে একটা ট্রাউজার আর গেঞ্জি ছুঁড়ে মেরে বলল,
“দ্রুত যান।”
প্রভাত গেঞ্জি আর ট্রাউজার বিছানায় রেখে শুধু টাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুমে প্রবেশ করতে করতে বলল,
“আমি কি মহিলা শাড়ি, ব্লাউজ নিয়ে ওয়াশরুম যাবো।”
পূর্ণতা প্রভাতের দিকে তাকিয়ে বলল,
“জঘন্য রকমের অশালীন ব্যক্তি।”
প্রায় দশমিনিট পরে প্রভাত সাদা টাওয়াল পরে ওয়াশরুম থেকে বের হল।প্রভাতের একটায় কাজ সেটা হল পূর্ণতাকে জ্বালানো কথা বলা।ওয়াশরুম থেকে বের হয়েই বলল,
“পূর্ণতা তুমি যদি আমার মত এভাবে বের হতে পারো আমি তোমাকে আগামি দশদিন স্পর্শ করব না।এভাবে দেখলে আমার আর কিছু লাগবে না।”
পূর্ণতা প্রভাতের দিকে অগ্নি চোখে তাকাতে তাকাতে সাওয়ারে ঢুকল।কারণ জানে প্রভাত তাকে আরোও দশটা অসভ্য কথা বলার প্রক্টিস করেই ওয়াশ রুম থেকে বের হয়েছে।পূর্ণতা ওয়াশরুমের দরজা লাগাতে গিয়ে দেখল সিটকিনি ভাঙা। দেখে মনে হচ্ছে কেবল ই ভাঙা। পূর্ণতার কৌতুহলী মন প্রশ্ন করল, হসপিটালে যাওয়ার আগে তো সিঁটকিনি ভাল ছিল, ভাঙল কখন।পূর্ণতা দরজা খুলে দেখল, প্রভাত আয়েসি ভঙ্গিতে ডিভানে বসে ফোন স্ক্রল করছে।সেই টাওয়াল পরা অবস্থায় ফোন দেখছে।পূর্ণতা খেয়াল করল প্রভাতকে ভীষণ স্নিগ্ধ দেখাচ্ছে।প্রভাত যে আসলেই স্মার্ট পুরুষ তাতে কোনো সন্দেহ নেই।কিছুক্ষণ প্রভাতের দিকে তাকিয়ে থেকে প্রভাতকে ডেকে বলল,
“এইযে হ্যালো, রুম থেকে বের হন।” দরজার দিকে তাকিয়ে ইশারা দিল।
প্রভাত ফোনের স্ক্রিন থেকে চোখ সরিয়ে পূর্ণতার দিকে তাকিয়ে বলল,
“কি বললে কাছে আসব।একা একা সাওয়ার করতে চাওনা।আমাকে সাথে নিতে চাও?”
পূর্ণতা চোখ মুখ থমথমে করে বলল,
“বললাম বের হন।”
“কেন?”
“আমি গোসল করব।”
“তার জন্য আমি বের হবো কেন?”
“কারণ ওয়াশরুমের সিঁটকিনি ভেঙে গিয়েছে।আপনার মত বিপদ সামনে রেখে তো সিঁটকিনী বিহীন বাথরুমে গোসল করা যায়না। যান মিস্ত্রি ডেকে আনুন।এটা ঠিক করান।”
প্রভাত এইবার পায়ের উপর পা তুলে বসে বলল,
“ওটা ঠিক করাব বলে তো ভাঙিনি।”
পূর্ণতা যেন আকাশ থেকে পড়ল।সে কৌতুহলী মন নিয়ে জিজ্ঞেস করল,
“মানে?”
প্রভাত নিচের ঠোঁটে হালকা কামড় দিয়ে পূর্ণতার দিকে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থেকে বলল,
“ওটা ঠিক করানো লাগবে না।আমিই ভেঙেছি।”
“কেন?”
“সাওয়ারে তোমার পার্টনার হবো বলে? তোমার সাথে রোমান্স করব বলে।ওয়াশরুমের দরজা যাতে আর লাগাতে না পারো সেজন্য ই ভেঙে রেখেছি।”
পূর্ণতা চেতে গিয়ে বলল,
“মানে কি এসবের, আপনি এত বড় অসভ্য কেন?”
“বউ এর সাথে রোমান্স কে অসভ্যতা বলে বুঝি।”
“অসভ্যতা ছাড়া কি? আপনি দুনিয়ার শ্রেষ্ট বাজে অসভ্য লোক।”
প্রভাত উঠে দাঁড়াল। পূর্ণতার দিকে এগিয়ে গেল।পূর্ণতার কপাল থেকে নাক বরাবর অনামিকা আঙুল নামিয়ে এনে কন্ঠ খাদে নামিয়ে বলল,
“বিয়ের আগেতো ছোট ছোট পোশাক পরবে বলে অশান্তি করতে।এখন নিজের বরের সামনে ঘোমটা দিয়ে থাকো কেন?”
পূর্ণতা প্রভাতের আঙুল ধরে সরিয়ে দিয়ে বলল,
“কারণ আপনার নজর ভাল না তাই।”
প্রভাত এইবার পূর্ণতাকে নিজের সাথে চেপে ধরে বলল,
“আজ একটা নাইট ড্রেস পরোতো বেবিগার্ল।ওয়েদার ও রোমান্টিক।তা না হলে কিছুই পরার দরকার নেই।এখন তো জোর করছি না ছোট পোশাক পরা যাবেনা।এখন পরা যাবে।সব পরা যাবে।”
এমন সময় জমেলা হুট করে প্রভাত আর পূর্ণতার রুমে প্রবেশ করল।জমেলা সব সময় খুব জোরে কথা বলে।জমেলা জোরে বলে উঠল,
“ছিঃ ছি কি কান্ড এসব।”
প্রভাত পূর্ণতাকে ছেড়ে দিল।পূর্ণতা জমেলার দিকে তাকিয়ে এক সেকেন্ড ও দেরি না করে ওয়াশ রুমে প্রবেশ করল।
প্রভাত জমেলার দিকে তাকিয়ে বলল,
“কেবল -ই বউটাকে জড়িয়ে ধরেছি ওমনি হাজির তুমি।”
জমেলা বলল,
“তোমাকে এখনি নিচে ডাকছে তোমার বাবা।”
“যাচ্ছি তার আগে তুমি এ রুম থেকে বের হও।”
“কেন?”
“কারণ তুমি পূর্ণতাকে বাজে কথা বলবে।পূর্ণতার মন খারাপ হবে আর আমার মেজাজ ভীষণ বিগড়ে যাবে।আর তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার হয়ে যাবে।”
জমেলা প্রভাতের রুম থেকে বের হতে হতে বলল,
“পূর্ণতা আমার দাদুভাই-কে বশিকরণ করেছে।”
প্রভাত ট্রাউজার আর গেঞ্জি পরে নিচে নামল।নিচে নেমে ডায়নিং এ অনাকাঙ্ক্ষিত একটি ঘটনা দেখল।শর্ট প্যান্ট পরা আর চিকন ফিতার গেঞ্জি পরা একজন ধবধবে সাদা নারী তাদের ডায়নিং এ বসে আছে।প্রভাত নিচে নামতেই সে প্রভাতের দিকে মোহনীয় কন্ঠে তাকিয়ে রইলো।ওয়াসেল এর দিকে তাকিয়ে বলল,
“ডিল ফাইনাল।”
প্রভাত কিছু বুঝে উঠতে পারল না।তখন ই রাজনের নাম্বার থেকে ফোন এল।প্রভাত ফোন রিসিভ করতেই রাজন বলল,
অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ২৩
“প্রভাত ভাই আপনাদের জয়নাবের দেহ নদীতে পাওয়া গিয়েছে।তার মাথা ছিলনা দেহের সাথে।তবে এলাকার মানুষ তার গড়ন দেখে চিহ্নিত করেছে এটাই জয়নাব।”
প্রভাত রাজনের ফোন কেটে বলল, ” আমি দেখা করছি আপনার সাথে।”
প্রভাত ফোন পকেটে ঢুকিয়ে সামনে সাথে অর্ধনগ্ন মেয়েটির দিকে তাকিয়ে রইলো।