অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ২৫

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ২৫
Mousumi Akter

অর্ধনগ্ন সাদা চামড়ার একজন মধ্যবয়সী নারী কামুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে প্রভাতের দিকে। নিজের স্পর্শকাতর জায়গাগুলো বিভিন্ন অঙ্গ-ভঙ্গিতে প্রদর্শন করছে প্রভাতের দিকে তাকিয়ে। প্রভাত বিচক্ষণ ছেলে।মহিলাটির ভাব-ভঙ্গি বুঝতে বেশী সময় লাগল না।মহিলাটির দিকে একবার তাকিয়েছিল মাত্র তারপর আর একবার ও তাকায়নি।
সে কঠিন মেজাজের সাথে ওয়াজেদ আর ওয়াসেলের দিকে তাকাল।মেজাজ স্থির রেখে এগিয়ে গেল ওয়াজেদ আর ওয়াসেলের দিকে, যেন চোখ দিয়েই গিলে খেয়ে ফেলবে বাপ আর চাচাকে।প্রভাত ওয়াজেদ আর ওয়াসেলের কাছাকাছি এগিয়ে যেতেই মহিলাটি উঠে দাঁড়াল।সে প্রভাতের কাঁধে রেখে বলল,

” ইউ আর সো হট বেবি।”
প্রভাত মহিলাটির হাত সরিয়ে দিয়ে কয়েকটি বিশ্রী গালি দিল ওয়াজেদ আর ওয়াসেলের দিকে তাকিয়ে।এত জঘন্য গালি যে প্রভাত জানে তা ওয়াজেদ আর ওয়াসেল এর জানা ছিলনা। মহিলাটা প্রভাতের গালি শুনে বুঝে উঠতে পারল না গালি প্রভাত কাকে দিল। মহিলাটি জঘন্য নোংরা জগতের মানুষ। প্রভাতের গালি শুনে প্রভাতের প্রতি বিরক্তি আসার পরিবর্তে আরোও মুগ্ধ হল।তার কামুক দৃষ্টি আরোও বেড়ে গেল।কামুক হাসি হেসে প্রভাতের দিকে তাকিয়ে বলল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“নটি বয়।”
প্রভাত ঘৃণিত দৃষ্টিতে মহিলাটির দিকে তাকিয়ে বলল,
“আপনার আমাকে কি দেখে নটি বয় মনে হল আন্টি।”
মহিলাটি আবারও কামুক হাসি হেসে জবাব দিল,
“সিগারেট খাও তুমি।”
প্রভাত ঘৃণা আর বিরক্তিভরা দৃষ্টি আগের ন্যায় স্থির রেখে বলল,

“হ্যাঁ খাই।”
” ওয়াও আই আলছো লাইক ইট নটি বয়।”
প্রভাত বিরক্তিতে ভ্রু কুঁচকে আবার প্রশ্ন করল,
“আপনার কথা আমি কিছুই বুঝলাম না। ”

“সিগারেট খাওয়া,গালি জানা, রাগি,তেজি ছেলে আমার উইকনেস।তোমাকে আমার দারুণ লেগেছে।তোমাকে দেখেই তোমার বাবার সাথে বিজনেস ডিল ফাইনাল করলাম। আমি আমার পণ্য পাই বা না পাই ডিল ফাইনাল করে যাবো।পুরা টাকা এডভান্স করে যাবো।আমার শুধু তোমাকে লাগবে। ” বলেই প্রভাতের দিকে হাত বাড়াল মহিলাটি।
প্রভাত এবার সরাসরি জঘন্য একটা গালি মহিলাটিকে দিয়ে বলল,

“সর পতিতা।”
ওয়াসেল প্রভাতের দিকে তাকিয়ে বলল,
“প্রভাত উনি আমাদের বিজনেস পার্টনার মিস এনি।আমাদের দেশের ই।তবে বিদেশ থাকেন।কিছুদিনের জন্য বাংলাদেশে ঘুরতে এসছেন।”
প্রভাত ওয়াসেলের দিকে এগিয়ে গেল।ওয়াসেলের মুখের উপর গিয়ে ফিঁসফিঁস করে বলল,
“বিজনেস পার্টনার নাকি দুই ভাই-এর বেড পার্টনার।”
ওয়াসেল চোখের মনিদ্বয় ঘুরালো।ওয়াজেদ আর মিস এনির দিকে তাকিয়ে বলল,

” ছেলে হয়ে বাপকে এসব বলছো।”
” তুমিই তো বাপ হয়ে ছেলের দেহ বিক্রি করে বিজনেস করতে চাইছো। এখন তো দেখছি ছেলে হয়েও রক্ষা নেই।মেয়ে হলে তো তুমি রেগুলার বাড়ি আমার জন্য কাস্টমার খুজে আনতে।”
“এই ছেলে বিয়ের পরে একেবারে নির্লজ্জ হয়ে গিয়েছে। বাপকে যা খুশি তাই বলছে।”
প্রভাত বিরক্ত চোখে ওয়াসেলের দিকে তাকিয়ে বলল,

” তোমাদের এসব বিজনেস ডিলের মধ্য আমাকে কেন ডেকেছো জানতে পারি৷ আমি আমার বউ-এর সাথে যখন থাকব কখনো আমাকে ডাকবে না।”
ওয়াজেদ একটা কাশি দিয়ে ফিসফিস করে বলল,
” প্রভাত মিস এনির সাথে ডিল টা আমাদের হয়ে গেলে আমাদের গত মাসের লসটা পুষিয়ে যাবে।এডভান্স টাকা পেলে এই টাকা দিয়ে কম দামে বেশী করে পণ্য কিনে রাখতে পারব।পরে বেশী দামে বিক্রি করে লস পুষাতে পারব। মিস এনির টাকার অভাব নেই।উনাকে খুশি করতে পারলেই ডিল ফাইনাল।”

প্রভাত বুকে হাত বেঁধে সোজা হয়ে দাঁড়াল।ওয়াজেদের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ফেলে বলল,
“উনাকে কীভাবে খুশি করতে হবে।”
ওয়াজেদ প্রভাতের আরোও একটু কাছে এগিয়ে এসে বলল,
“মিস এনি দীর্ঘদিন বিদেশে থেকেছেন।বাংলাদেশী একজন বেড পার্টনার খুজছেন।আমরা কয়েকজন কে দেখিয়েছি।কিন্তু তুমি বাড়িতে প্রবেশ করতেই উনার তোমাকে পছন্দ হয়েছে।উনি গেস্ট হাউজে সাতদিন থাকবেন।তুমি যদি একটু সাতদিন সময় দিতে তাহলে ডিল টা ফাইনাল হয়ে যেত।”

প্রভাত কয়েক সেকেন্ড নিশ্চুপ রইলো।ওয়াজেদের দিকে ভালভাবে তাকিয়ে দেখে বলল,
“তাহলে এই সাতদিন আপনার মেয়েকে সময় দিবে কে চাচা?”
“কেন পুষ্প আছে, তার মা- কাকী আছে।”
আপনি জানেন না আপনি কি চিজ পয়দা করেছেন।যে মেয়ে জীবনে এক ড্রেস দু’বার পরেনি সে কীনা অন্য কারো ইউজ করা জিনিস এক্সেপ্ট করবে।সে এক্সেপ্ট করলেও আপনি কোন সাহসে আমাকে এই ধরনের প্রস্তাব দেন।আপনার মত ক্যারেক্টরলেস ভাবেন আমাকে।নেক্সট যদি এই ধরনের প্রস্তাব আমার কাছে রাখেন ভুলে যাব আপনি আমার বউ-এর বাপ।

মহিলাটি ওদের ফিসফিস কথাবার্তা কিছু শুনতে পাচ্ছেনা।সে কামুক দৃষ্টিতে প্রভাতের দিকে তাকিয়ে আবারও বলল,
“বেবি বাংলাদেশে পা রেখে প্রথম এরকম হট ছেলে দেখলাম।চলো আমরা রুমে যায়।”
প্রভাত মহিলার কাছে এগিয়ে এসে বলল,
“আমার চাচা ওয়াজেদের বেড পার্ফানেন্স অনেক ভাল।ট্রাই করে দেখুন আন্টি। উপরে আমার বউ অপেক্ষা করছে।আমার সুন্দরী পবিত্র বউ রেখে গু-এর পোকার দিকে তাকানোর রুচি আমার আসবে না কখনোই।ওটা আমার বাবা আর চাচার পক্ষেই সম্ভব।”

বলেই প্রভাত উপরে ওঠার জন্য তাকাল।তাকাতেই দেখল পূর্ণতা তার দিকে গোল গোল চোখে তাকিয়ে আছে।পূর্ণতাকে ওভাবে তাকাতে দেখে প্রভাত বলল,
“সর্বনাশ করেছে।এখন বউ সামলাবো কীভাবে?”
মিস এনি প্রভাতের দিকে তাকিয়ে বলল,
” বিশ্বাস হয়না এটা আপনার ছেলে ওয়াসেল চৌধুরী। এত আলাদা কীভাবে হতে পারে।”

ওয়াসেল বলল, ” আমি বলেছিলাম আমার ছেলে রাজি হবেনা। ওর অন্যরকম।”
” ও কি আসলেই আপনার ছেলে।”
” হ্যাঁ আমার ছেলে।”
” আমি গেস্ট হাউজে যাচ্ছি। প্রয়োজনে টাকা বাড়িয়ে দিব।তাও ওর সাথে একরাত আমি কাটাতে চাই।” বলেই এনি গেস্ট হাউজে চলে গেল।

ওয়াজেদ বলল, ” ভাই কি বিপদে পড়লাম। এইদিকে আমাদের গুরু বলেছে এই ডিল যেন ফাইনাল করি।না’হলে আমাদের সাথে আর কোনো বিজনেস সে করবে না।”
ওয়াসেল বলল, ” প্রভাত তো রাজি হবেই না। এইদিকে গুরু দিয়েছে শর্ত।”
ওয়াজেদ বলল, ” ভাই কোনদিন যদি এইসব ফাঁস হয় আর গুরু যদি সামনে আসে মানুষ কি আর কোনদিন মানুষকে বিশ্বাস করবে।”
ওয়াসেল হেসে বলল, ” এত বছরে কেউ টের পেলনা আর কোনদিন পাবেও না টের।”

রাত বারোটা বাজে। মেরি জাহানের পাশে বসে আছে। পুষ্প হসপিটালের ছাদে দাঁড়িয়ে আছে। রাজন পুষ্পের সাথে দেখা করতে এসছে। আকাশে গোলাকার চাঁদ। সোনালি আলো ছড়াচ্ছে।সেই আলোয় রাজন মুগ্ধ হয়ে দেখছে পুষ্পকে।
আকাশের চাঁদের দিকে তাকিয়ে রাজন মৃদু হেসে বলল,
” আকাশের চাঁদ এখন আর অতটা সুন্দর লাগেনা বুঝলে।”
পুষ্প রাজনের দিকে তাকিয়ে বলল,
” কেন?”

রাজন পুষ্পের কাঁধের উপর হাত রাখল অনায়াসে। হাত রেখে বলল,
” যেদিন তোমাকে দেখেছি সেদিন থেকে পৃথিবীর কিছুই আর আমাকে মুগ্ধ করতে পারেনা।আমি জানিনা কি যাদু করেছো তুমি আমাকে।তুমি ছাড়া পৃথিবীর কোনো সুন্দর জিনিস আমাকে মুগ্ধ করতে পারে না।”
পুষ্প লজ্জা পেল।লজ্জা পেয়ে বলল,
“সব আমার মন রাখার জন্য বলছেন।”
রাজন আবার মৃদু হেসে বলল,

“হৃদয় চিরে দেখানোর সিস্টেম থাকলে দেখাতাম পুষ্প। তোমাকে আমি কত ভালবাসি। কত গভীর ভাবে ভালবাসি।তুমি আমার চোখে কত সুন্দর। ”
পুষ্প রাজনের মুখের দিকে তাকাল।পুষ্প খেয়াল করল শ্যামবর্ণ মুখশ্রী অদ্ভুত মায়াবী দেখাচ্ছে।এ যেন হৃদয় উজাড় করা সব কথা বলছে।পুষ্পের ইচ্ছা করছে রাজনের মুখে হাত বুলোতে। জড়তার জন্য পারল না।রাজন কিছু বুঝতে পারল কীনা পুষ্প জানেনা।সে পুষ্পের ডান গালে হাত রাখল। রাজনের স্পর্শ পেতেই পুষ্প লজ্জায় মিহিয়ে গেল।পুষ্পের লজ্জা রাঙা মুখটা রাজনকে আরো মুগ্ধ করল।সে পুষ্পের চিবুক ধরে মুখ উঁচু করল।খুব আলতো পরশে পুষ্পের কপালে ঠোঁট ছুইয়ে চুমু এঁকে দিয়ে বলল,

“জীবনে প্রথম কোনো নারীকে ভালবাসার চিহ্ন এঁকে দিলাম।জীবন থেকে মৃত্যু পর্যন্ত এই নারীর সাথেই যেন কাটাতে পারি।”
পুষ্প লজ্জায় রাজনকে ধাক্কা মেরে ছাদ থেকে নামতে গেল।
রাজন পুষ্পের হাত টেনে ধরে বলল,
“আমার কাছে আর কিছুক্ষণ থাকো।”
” আম্মু খুজবে।”
” খুজুক।”

” সত্যি বকা দিবে পরে।”
” আমার জন্য না হয় একটু বকা শুনলে।”
” পরে আর দেখা করতে পারব না।”
” শিঘ্রই আমার ঘরে নিয়ে যাব তোমাকে।কেউ আর বকবে না।শুধু এই খু-নীকে ধরি একবার।”
পুষ্প এইবার জয়নাবের প্রসঙ্গ টা তুলে বলল,
“আমি ভাবতে পারছি না জয়নাব আন্টি আর নেই।সজল ভাই, জয়নাব আন্টি এদের সাথে কে এমন করবে?”
রাজন চিন্তিত হয়ে বলল,

” চাকরী জীবনে এমন ঘটনা আগে দেখিনি।তবে আমিও এর শেষ দেখে ছাড়ব।”
পুষ্প আচমকা রাজনকে জড়িয়ে ধরল।জড়িয়ে ধরে বলল,
” আমার খুব ভয় করছে। আপনাকে নিয়ে চিন্তা হচ্ছে।ওই খু’ নী তো বুঝে গিয়েছে আপনি ওদের ধরার জন্য চেষ্টা করছেন।যদি কিছু করে আপনার।”

পুষ্পের এই জড়িয়ে ধরা, চিন্তা,কেয়ার করা রাজন – কে প্রশান্তি দিল।কেউ ভালবাসলে হৃদয়ে এত প্রশান্তি লাগে রাজন তা প্রথমবআর অনুভব করল।নারীর ভালবাসায় কেন পুরুষ পা-গ-ল হয় রাজন তা হাড়ে হাড়ে টের পেল।পুষ্প ছাড়া জীবনের আর এক ‘পা ও চলা সম্ভব নয়।হঠাৎ দুঃচিন্তায় মুখ শুকিয়ে এল রাজনের।সে চিন্তিত কন্ঠে বলল,
“আচ্ছা পুষ্প আমার পরিচয় যদি খারাপ হয় আমাকে মেনে নিবে তুমি?”
পুষ্প রাজন-কে আরো একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ২৪

“আমার আপনি হলেই চলবে।আর কোনো পরিচয় লাগবে না অফিসার।ভালবাসি আপনাকে।শুধু আমাকে বিয়ে করে আপনার বউ বানিয়ে নিন আপনি।”
রাজন পুষ্পের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
“অনেক সহজ -সরল মানুষ তুমি পুষ্প।”

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ২৬

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here