অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ২৬

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ২৬
Mousumi Akter

আকাশে এক ফালি পূর্ণিমার চাঁদ নরম আলো ছড়াচ্ছে ধরণীতে।আকাশ জুড়ে লক্ষ লক্ষ তারার মেলা মিটিমিটি জ্বলছে।মাঝে মাঝে সাদা তুলার ন্যায় শুভ্ররঙা মেঘ ভেষে বেড়াচ্ছে।রাজন ছাদের রেলিং হেলান দিয়ে আকাশপানে তাকিয়ে সে দৃশ্য গভীর দৃষ্টি নিক্ষেপন করে দেখছে।গভীর ধ্যানে মগ্ন রাজন।আকাশের বুক থেকে চাঁদ ছিটকে পড়লে কি সে আর আলো ছড়াতে পারবে।

চাঁদের কি নিজস্ব সৌন্দর্য্য থাকবে? চাঁদের নিশ্চয়ই মৃত্যু হবে।তাহলে তার আকাশ থেকে যদি পুষ্প খসে পড়ে যায় তাহলে কি পুষ্প বাঁচবে।এই সহজ-সরল মেয়েটাকে কি মিথ্যা বলা পাপ হচ্ছে।সত্য বললে কি মেয়েটা তাকে ভালবাসত।এই মেয়েটার ভালবাসার লোভ রাজনকে মিথ্যা বলতে বাধ্য করেছে।দুঃচিন্তায় বারেবার মাথার চুলে হাত বুলোচ্ছে রাজন।পুষ্প দূরে গেলেই অশান্তি লাগে তার।তার গায়ের এই শ্যামবর্ণ রং হওয়া সত্বেও পুষ্পের মত সুন্দর মেয়ে তাকে এক্সেপ্ট করেছে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

তার মানে মেয়েটা সরল।রাজনের ভেতরে তীব্র অশান্তি হচ্ছে।এই অশান্তি থেকে বাঁচতে কি করবে বুঝতে পারছে না।ফোনের স্ক্রিনে পুষ্পের ছবি দেওয়া।ফোনের পাওয়ার বাটন চেপে আলো জ্বালিয়ে পুষ্পের ছবিটা দেখল।প্যান্টের পকেটে ছোট্ট একটা ধারালো ছুরি রাখা। রাজন ছুরিটা বের করে বুকের বা পাশে ছোট্ট করে পুষ্পের নামটা লিখল।রাজনের কাছে এসব ছিলো পৃথিবীর থার্ড ক্লাস কাজ।কিন্তু হৃদয়ের ভেতরের যন্ত্রণা থেকে বাঁচতে বাহ্যিক যন্ত্রণার প্রয়োজন ছিল।

যার জন্য ভেতরে যন্ত্রণা হচ্ছে তার জন্যই বাইরের যন্ত্রণা সৃষ্টি করল।পুষ্প কি আদেও জানবে তার অজান্তে রাজন তাকে কত ভালবেসেছিলো।বিগত কয়েকদিন রাজন হসপিটালে আছে।সেদিন হসপিটালে একটা কা’টা মাথার লাশ এসছে।এটার তদন্ত করতেই হসপিটালে আসা।চেষ্টা করেও রাজন কোনো ক্লু পাচ্ছে না।এতটা নির্দয় আর হৃদয়হীন মানুষ এই পৃথিবীতে এখনো আছে।এত নির্মম ভাবে একটা মানুষের গলা থেকে মাথা আলাদা করে ফেলে।সেই কুখ্যাত মানুষ টা কে? তার চেহারা কেমন? রাজনের শুধু একবার তাকে দেখার ইচ্ছা।এত বড় জঘন্য অপরাধীর চেহারা কি সত্যি মানুষের মত দেখতে।এরা কেমন হয় দেখতে।রাজন শুধু অপেক্ষায় আছে এই নিকৃষ্ট চেহারা টা দেখার জন্য।

জানালার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে আছে পূর্ণতা বাহির পানে চেয়ে।সবুজ গাছের মাথার উপর দিয়ে উঁকি দিচ্ছে পূর্ণিমার গোলাকার চাঁদ।সেই চাঁদের সোনালী আলো জানালা দিয়ে প্রবেশ করে পূর্ণতার শরীরে মেখে দিচ্ছে আদর।পূর্ণতা আনমনে তাকিয়ে আছে বাহিরে। কি যেন ভাবছে গভীর ধ্যানে মগ্ন হয়ে। মনের মাঝে উঁকি দিচ্ছে হাজারও প্রশ্ন।তার বাবা-চাচারা আসলে কীসের বিজনেস করে।প্রায় প্রায় গেস্ট হাউজে কারা আসে।ওরা কীসের ডিল করে।আলাদা ভাবে আবার গেস্ট হাউজ কেন?

ওখানে একটা বিশেষ রুম আছে।সে রুমে তালাবদ্ধ থাকে।মাঝে মধ্যই তার বাবা বলে আজ গুরু এসেছিলেন।এই গুরু কে? সে তার ইচ্ছামত আসে।কাউকে বলে আসেনা।তার ইচ্ছামত আসে।তার রুমের তালা পাসওয়ার্ড ছাড়া খোলে না।হাজার বার পূর্ণতার মনে এসব প্রশ্ন এসেছে।কিন্তু কাউকে বলতে পারেনি।ভাবতে বুদ হল পূর্ণতা।মাত্রই সাওয়ার নিয়েছে ও।সোনালি রং-এর ভেজা চুলগুলো পিঠের উপর ছেড়ে দেওয়া।পরণে কালো রং-এর থ্রি পিছ।

ভেজা চুলে জামার পেছন অংশ ভিজে একাকার হয়ে টুপটাপ বৃষ্টির ফোঁটার ন্যায় ফ্লোরে পড়ছে।পূর্ণতার সেদিকে কোনো খেয়াল নেই। আনমনে নিজের বাবা-চাচাকে ছেড়ে মায়ের কথা ভেবে চলেছে। সে গোসল করে এসেই কাপড় টা ওয়াশ রুমে রেখে দিত। ওর আম্মু রেগুলার কাপড় ধুয়ে শুকিয়ে আবার ভাজ করে রেখে যেত।ভেজা চুলে টাওয়াল দিয়ে মুছে দিত।

ভাত মাখিয়ে খাবার গালে তুলে দিত।আম্মু ছাড়া এত ভালবাসার মানুষ কে আছে এই দুনিয়াতে? আম্মুর কিছু হয়ে গেলে কে এত আদর করবে পূর্ণতাকে? কে মন খারাপে বুকে টেনে নিবে।না বলতেও কে বুঝে নিবে হৃদয়ের সমস্ত ক্ষত। কে মলিন মুখের ভাষা বুঝবে অনায়সে।মা-এর পরে আরোও একজন মানুষ আছে এই পৃথিবীতে যে পূর্ণতাকে মন প্রাণ দিয়ে ভালবাসে।সে হল পুষ্প। পুষ্প কোনদিন পূর্ণতাকে চাচাতো বোনের নজরে দেখেনি।পূর্ণতার সমস্ত পছন্দের জিনিস পুষ্প নিজে হাতে কিনে এনে দেয়।

পুষ্প বাইরে গেলে নিজের জন্য কিছু না কিনলেও পূর্ণের জন্য কিনবেই।পুষ্প মেয়েটা একদম আলাদা।নিজের কোনো বাড়তি চাওয়া-পাওয়া নেই।কোনো লোভ নেই।সরল মনের মেয়েটা সারাজীবন জাহান আর পূর্ণর খেয়াল রেখে জীবন কাটিয়ে দিল।পূর্ণতা ভাবছে পুষ্প আপুর ও এক সময় বিয়ে হয়ে যাবে।কে তখন দেখে শুনে রাখবে? আম্মু আর পুষ্প জীবন থেকে হারিয়ে গেলে সে বাঁচবে কীভাবে?

এই দুজন মানুষ ছাড়া জীবন অনেক কঠিন তার জন্য। এমন সময় আচমকা পূর্ণতার ঘাড় শিরশির করে উঠল।পুরুষালী দুটো শক্ত হাত পূর্ণতার কোমরের দু’দিক দিয়ে নেমে কোমর জড়িয়ে ধরল।খোঁচা খোঁচা দাঁড়ির সংস্পর্শে শিউরে উঠল ঘাড়।মানুষটার নিরব উপস্থিতিতে পূর্ণতা টের পেল এই মানুষটা আর কেউনা প্রভাত চৌধুরী।পূর্ণতা কোনো কথা বলল না।প্রভাতের স্পর্শ কেন যেন ভাল লাগতে শুরু করেছে।দিন যাচ্ছে আর প্রভাতের প্রতি ভুল ধারণা গুলো কমতে শুরু করেছে।প্রভাত পূর্ণতার ঘাড়ে থুতনি রেখে উষ্ণ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,

“পূর্ণিমার চাঁদ আজ আমার ঘরে।মানুষ বলে চাঁদে কলঙ্ক থাকে।কই আমার চাঁদে তো কোনো কলঙ্ক নেই।” বলেই পূর্ণতার ঘাড়ে ওষ্ট ডুবাল।
সর্বাঙ্গ ঝাঁকিয়ে কেঁপে উঠল পূর্ণতা।শরীর কেমন দূর্বল হয়ে এল।অনুভূতির শিহরণ বইছে দেহ-মনে।খাঁদে নেমে আসা কন্ঠে বলল,

“কলঙ্ক ছাড়া কখনো চাঁদ হওয়া যায়না চৌধুরী সাহেব।”
প্রভাত মাদক ভরা কন্ঠে কিঞ্চিৎ হাসল।নেশালো কন্ঠে বলল,
“তুমি ঠিকই বলেছো কলঙ্ক ছাড়া চাঁদের সৌন্দর্য্য বড্ড বেমানান।আমার চাঁদেরও কলঙ্ক আছে।”
পূর্ণতা খাঁদে নেমে আসা লাজুক কন্ঠে জবাব দিল,
“কি কলঙ্ক? ”

প্রভাত পূর্ণতাকে নিজের দিকে ঘুরাল।পূর্ণতা তিরতির করে কাঁপছে।সেই কম্পণে ওর ওষ্ট দু’টো কাঁপছে।চোখে -মুখে লাজুকতায় ভয়াবহ সুন্দরী দেখাচ্ছে পূর্ণতাকে।সদ্য সাওয়ার নেওয়া ভেজা এলোমেলো চুলে পূর্ণতাকে যেন মাদকের মত নেশালো দেখাচ্ছে প্রভাতের চোখে।সে পূর্ণতার আরো কাছাকাছি গেল।পূর্ণতার কপালের সাথে নিজের কপাল মেশাল।উষ্ণ কন্ঠে ফিসফিস করে বলল,

“তোমার কলঙ্ক আমি।তুমি আমার হৃদয় আকাশের জ্বলে ওঠা চাঁদ।প্রভাত চৌধুরীর জীবনের ব্যক্তিগত চাঁদ।যে চাঁদের আলো প্রভাত চৌধুরী ছাড়া আর কেউ মাখতে পারবে না।যে চাঁদকে কারণে অকারণে আমি ছাড়া কেউ স্পর্শ করতে পারবে না সেই চাঁদের কলঙ্ক আমি ছাড়া আর কে হবে পূর্ণ।

যতগুলো বছর এই পৃথিবীতে আমার নিঃশ্বাস বহমান হবে ততগুলো বছর অসংখ্যবার আমি তোমার কলঙ্কের কারণ হবো।চাইলেও তোমাকে আমি আমার থেকে দূরে যেতে দিবোনা।তুমি চাইলেও তুমি আমার, না চাইলেও তুমি আমার।আমার ব্যক্তিগত বিধানে তুমি শুধু আমার।লিখিত ভাবে,অলিখিত ভাবে, বৈধভাবে,অবৈধভাবে সব ভাবেই তুমি আমার।তোমাকে পাওয়ার জন্য আমি সব নিয়ম ভঙ্গ করতে পারি,অনিয়মের অনেক কিছু করতে পারি।”

পূর্ণতা কোথায় যেন হারিয়ে গেল।এই মানুষটা আগে তার সাথে কত ত্যাড়া ত্যাড়া কথা বলত।কত দাম্ভিক মেজাজের একজন মানুষ। সেই মানুষটার এত আত্মসমর্পণ, এত মাথানত হওয়া সত্যি অবিশ্বাস্য।ভালবাসলে কি তাহলে মানুষ সত্যিই সেচ্ছায় ভালবাসার মানুষের কাছে নিজের আত্মঅহংকার, ইগো সব জলাঞ্জলি দিয়ে দেয়।পূর্ণতা যেন বাকশক্তি হারাল।

পূর্ণতা টের পেল প্রভাতের ভালবাসায় মিথ্যা কিছু নেই।কিন্তু নারী সহজেই পুরুষের ভালবাসার জালে ধরা দিতে চায়না।নারী যখন বুঝে যায় একজন পুরুষ তাকে সত্যি ভালবাসে, বুঝেও না বুঝার ভান ধরে সহস্রবার।কেননা, ওই পুরুষের থেকে ভালবাসার আকুতিভরা কন্ঠ বারেবার শুনতে চায়।পূর্ণতা অনুভূতির টইটুম্বুর ভরা কন্ঠস্বরে বলল,
“আমি চৌধুরী পরিবারের পুরুষের ভালবাসা বিশ্বাস করিনা।ওদের ভালবাসা সব মিথ্যা, অভিনয়,ওরা নারীর শরীর ভালবাসে।”

প্রভাত সাথে সাথে পূর্ণতাকে ছেড়ে দিল।শরীর ভালবাসার কথাটা যেন হৃদয়ে তীরের মত বিঁধল সরাসরি।সে তার পূর্ণকে হৃদয় উজাড় করে ভালবাসে।শরীরের প্রতি বিন্দুমাত্র লোভ তার নেই।প্রভাত আরো দু’পা পিছিয়ে গিয়ে বলল,
“যদি সুযোগ থাকত পূর্ণ, আমি আমার জনম পরিবর্তন করতাম।এই জনমে আমি চৌধুরী পরিবারের ই সন্তান।

চাইলেও আমি এ পরিচয় পরিবর্তন করতে পারব না।তুমি যতবার বলো চৌধুরী পরিবারের পুরুষদের তুমি ঘৃণা করো ততবার-ই আমার হৃদয়ে বিষাক্ত এক তীর গিয়ে ছিন্ন -ভিন্ন করে দেয় হৃদয়ের সমস্ত অনুভূতি। তোমার উপেক্ষা আমাকে বিষাক্ত যন্ত্রণার অনলে পু’ড়ি’য়ে ছারখার করে দেয়।তোমার ভালবাসা পাওয়ার লোভে আমিই বোধহয় একমাত্র পুরুষ যে কীনা খুব আফসোস করে বলেছি কেন আমি এই চৌধুরী বাড়িতে জন্মগ্রহন করলাম।কেন আমার জন্ম একটা সহজ, সাধারণ পরিবারে হলনা।তাহলে আমার পূর্ণ আমাকে অনায়াসে নিজের কাছে টেনে নিত।তবে হ্যাঁ পূর্ণ সুযোগ থাকলে, পরকালে আমি চৌধুরী পরিবারের সন্তান হিসাবে জন্ম গ্রহন করব না,তোমার জন্য জন্ম গ্রহন করতে চাই।পরের জন্ম আমি সৃষ্টিকর্তার কাছে চাইব শুধুমাত্র তোমাকে ভালবাসার জন্য।”

প্রভাতের এমন গভীর অনুভূতি মেশানো কথায় পূর্ণর চোখ দু’টো ছলছল করে উঠল।বাবা-চাচার মত জঘন্য র-ক্তের সম্পর্ক থাকা মানুষটা এত ভীন্ন কেন?কোথাও যেন কোনো মিল নেই।না কথা বার্তা না আচার-আচরণ।কোথাও কিছুর মিল নেই।পূর্ণতা ভাবনায় বিভোর হয়ে তাকিয়ে আছে প্রভাতের দিকে।প্রভাত তাকিয়ে আছে পূর্ণতার এলোমেলো ভেজা চুলের দিকে।স্মিথ হেসে ভাবব,

“আমার বউটা একদমই ছোট বাচ্চা।এখনো নিজের ভেজা চুলটা পর্যন্ত মুছতে পারেনা।”
প্রভাত বেলকনির দিকে উঁকি দিল।সে গোসল করে টাওয়াল নেড়ে দিয়েছিলো।বেলকনি থেকে টাওয়াল এনে পূর্ণতার পেছনে দাঁড়াল।পূর্ণতা বুঝে ওঠার আগেই প্রভাত টাওয়াল দিয়ে পূর্ণতার চুলগুলো সুন্দরভাবে মুছিয়ে দিচ্ছে।
পূর্ণতা এবার সব চেয়ে বেশী অবাক হল।প্রভাত তার চুলের পানি মুছে দিচ্ছে।পূর্ণতা ধীরতা ভরা কন্ঠে বলল,
” কি করছেন এসব?”
প্রভাত হালকা হেসে জবাব দিল,

” চুলের পানিতে পেছনের জামা ভিজে গিয়েছে। ঠান্ডা লেগে যাবে নাহ ভেজা চুলে,ভেজা কাপড়ে থাকলে।”
” লাগলে সমস্যা কি?”
” আমি থাকতে আমার বউ ঠান্ডা লাগবে কেন?”
” কতদিন চুল মুছে দিবেন? আমি কিন্তু আর একদিন ও ভেজা চুল মুছব না।”
পূর্ণতার চুল মোছা শেষ হলে প্রভাত ড্রেসিন টেবিলের সামনে থেকে চিরুনি এনে পূর্ণতার চুল আঁচড়ে দিতে দিতে বলল,

” তোমার সব ব্যক্তিগত কাজের দায়িত্ব আমায় দিলেই আমি ধন্য হবো।তোমার ছোঁয়ার একটা বাহানা তো পাওয়া যাবে।”
পূর্ণতা এবার প্রভাতের দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে বলল,
” এত ছুঁতে চান কেন?”
” স্বামী-স্ত্রীর মাঝে দূরত্ব রাখা ভাল নয় পূর্ণ। এতে পাপ হবে পাপ।ঘন ঘন ছুঁতে হয় বুঝলে।”

বলেই প্রভাত ওয়াশরুমে গেল।পূর্ণতার ভেজা কাপড় গুলো ধুয়ে বেলকনিতে গিয়ে মেলে দিল।
পূর্ণতা বিছানায় বসে আজ প্রভাতের এসব কাজ-কর্ম দেখে অবাক হচ্ছে।যে ছেলে পানি ঢেলে খায়না সে বউ-এর কাপড় ধুয়ে দিচ্ছে।পূর্ণতা এবার দুষ্টুমি করে বলল,
” চৌধুরী সাহেব, এবার কিন্তু মানুষ বউ পা- গ- ল বলবে নির্ঘাত।”

প্রভাত বেলকনি থেকে রুমে আসল।পূর্ণতার পাশে বসে খানিকটা পেছনের দিকে ঝুঁকে ছাদের দিকে তাকাল।তারপর পূর্ণতাকে এক টান দিয়ে নিজের হাতের উপর সুইয়ে দিয়ে নিজেও সুয়ে পড়ল।পূর্ণতার দিকে কাত হয়ে বলল,
” এত সুন্দর বউ যার, সে বউ পা-গ -ল ছাড়া আর কি হবে?”
পূর্ণতা লজ্জা পেল।লজ্জায় অন্যদিকে মুখ ঘুরাল।তখন-ই প্রভাতের ফোন বেজে উঠল।প্রভাত প্যান্টের পকেট থেকে ফোন বের করতে করতে বিরক্ত কন্ঠে বিশ্রী গালি দিয়ে বলল,

” এই মাঝ রাতে বউ নিয়ে সোয়ার কায়দা নেই ফোনের যন্ত্রণায়।”
প্রভাত পকেট থেকে ফোন বের করতেই পূর্ণতা খপ করে প্রভাতের হাত থেকে ফোন নিয়ে নিল।ফোনের স্ক্রিনে ভাষছে অজান্তার নাম।পূর্ণতার সমস্ত শরীর টগবগ করে জ্বলে উঠল।সে তাৎক্ষনিক সোয়া থেকে উঠে বসল।পূর্ণতার মুখের থমথমে অবস্থা দেখে প্রভাত বিড়বিড় করে বলল,
” আমার রোমান্টিক মুহুর্তে আ’ গু’ ন দিতে কোন শালী ফোন দিচ্ছে আল্লাহ জানে।বউ এর মুখ থমথমে নিশ্চয়ই কোনো মহিলার ফোন।”

প্রভাত ও উঠে বসল। কিছুটা ভয় পাচ্ছে পূর্ণতাকে।প্রভাত ফোনের দিকে উঁকি দিয়ে বলল,
” কে ফোন দিয়েছে? তোমার মুড চেঞ্জ হল কেন?”
পূর্ণতা অগ্নিচোখে প্রভাতের দিকে তাকিয়ে বলল,
” আপনার ভালবাসার অজান্তা।”
প্রভাত শান্ত কন্ঠে বলল,
” ভাল বন্ধু।”
পূর্ণতা ফোন ওয়ালের সাথে আছাড় মেরে বলল,

” নিচে এক উলঙ্গ মহিলা ডেকে নিয়ে গেল,ঘরে এলেই অজান্তা কল দেয়।তাও মাঝ রাতে। লজ্জা করেনা বউ রেখে এসব করতে।”
প্রভাত তার দুই কান ধরে পূর্ণতার সামনে মাথানত করে বলল, ” আজ থেকে আমার ফোনে আর কোনো মেয়ের ফোন আসবে না।”

পূর্ণতা ফ্লোরে নেমে ওর আদরের বিড়াল টা কোলে নিয়ে বিছানায় সুয়ে বলল,
” ডোন্ট ডিস্টার্ব মি! আপনার বান্ধবীর যতদিন না বিয়ে হয় আমার কাছেও আসবেন না।”
প্রভাত মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল,
“এ আবার কেমন শর্ত? বান্ধবীর বিয়ে না হলে কাছে যাওয়া যাবেনা।”
“এই শর্তের কোনো নড়চড় হবে না।”
“সবই বুঝলাম তাই বলে বর রেখে বিড়াল জড়িয়ে ধরে ঘুমাবা।বিড়ালের প্রতি হিংসা হচ্ছে।”
পূর্ণতা রাগি কন্ঠে বলল,

“ও মেয়ে বিড়াল, ছেলে বিড়াল না।আপনার হিংসে হওয়ার কিছুই নেই।”
প্রভাত বলল,
“মেয়ে হলে আমাকে দাও।আমিই জড়িয়ে ধরে ঘুমায়।”
পূর্ণতা উঠে বসে প্রভাতের কলার চেপে ধরে বলল,

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ২৫

“মেয়ে দেখলেই জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছা করে।”
প্রভাত পূর্ণতাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
“তুমি ছাড়া আর কিছুই জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছা করেনা।আর রাগারাগি করোনা,ছটফট ও করোনা।চুপচাপ আদর করতে দাও।”

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ২৭

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here