অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ২৭

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ২৭
Mousumi Akter

পরের দিন সকালে চৌধুরী বাড়ির পরিবেশ কেমন থমথমে হয়ে আছে।বাড়ির কর্তা ওয়াসেল গভীর চিন্তায় মগ্ন।মিস এনি কিছুক্ষণ পরে চলে যাবে। মিস এনি চলে গেলে ডিল টা ক্যান্সেল হয়ে যাবে।এই ডিল ক্যান্সেল এর কারণ হিসাবে থাকবে প্রভাত। যার জন্য ওয়াসেলের উপর প্রেসার আসবে ভয়াবহভাবে।ওয়াসেলের ব্যবসা জীবনে একজন গুরু আছে।যে ওয়াসেলের থেকে হাজার গুন চতুর।

সে যদি ব্যবসায়িক চুক্তি ক্যান্সেল করে দেয় তাহলে ওয়াসেল আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবেনা।ওয়াসেলের গুরু কঠিন মেজাজের মানুষ এবং এক কথার মানুষ। ওয়াসেলের মাথা ফেটে যাচ্ছে চিন্তায়। হাজার চেষ্টা করেও ছেলেকে নিজের লাইনে আনতে পারেনি।তার গোপনীয় কিছু ব্যবসা আছে যে বিষয়ে তার ছেলে এখনো জানেনা।তার চেয়ে সম্পূর্ণ উল্টা ধাঁচের হয়েছে ছেলে।তার চেয়ে সাহসী এবং এক রোখা,জেদি হয়েছে।ওয়াসেলের মাথায় ঢুকছে না তার ছেলে এমন বউ পা-গ-ল পয়দা হল কীভাবে?

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

এমন সময় প্রভাত-পূর্ণতা হসপিটালে যাওয়ার জন্য বের হল।পূর্ণতার হাত খুব যত্নের সাথে ধরে সিঁড়ি থেকে নামছে প্রভাত।প্রভাতের কাছে পূর্ণতা যেন একটা শিশু।যাকে সারাক্ষণ আগলে রাখতে চায়।নিচে ডায়নিং-এ নামতেই দেখল, জমেলা, ওয়াসেল আর ওয়াজেদ বসে আছে। তিনজনের মুখের অবস্থা-ই থমথমে।প্রভাত আড়চোখে তাকিয়ে দেখল ওয়াজেদ আর ওয়াসেলের মুড বেশী খারাপ।

এই মুড অফের কারণ প্রভাত খুব ভাল ভাবে জানে ওদের যে বিজনেস পার্টনার আছে সে এক কথার মানুষ।কথা রাখতে না পারলে ব্যাবসায়িক সমস্ত ডিল ক্যান্সেল করে দিবে।এর ফলাফল স্বরুপ ওয়াজেদ এবং ওয়াসেল-কে পথে বসতে হবে।প্রভাতের এই বিষয়ে কোনো মাথা ব্যাথাই নেই।ওয়াসেল ভিক্ষা করলেও প্রভাত পূর্ণতা ছাড়া অন্য কাউকে ছুঁয়েও দেখবে না।জমেলা বরাবর-ই পূর্ণতা কে দু’চোখে দেখতে পারেনা।এর একটাই কারণ পূর্ণতা ছেলে হয়ে কেন জন্ম নিলোনা।পূর্ণতাকে দেখেই জমেলা ছেলেদের তাক করে বলল,

” বাড়িতো আজকাল ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। বাড়ির মেয়ে-বউদের পাখনা গজাইছে।রান্না করবে কে?”
ওয়াসেল চিন্তিত কন্ঠে বলল,
” ফায়েক কে কয়েকদিন ধরে বলছি ওর তেমন গুরুত্ব দেখছি না। খুব সাহস বেড়েছে ফায়েকের।”
জমেলা খিটখিটে মেজাজে পূর্ণতার আপাদমস্তক তাকিয়ে দেখে বলল,
“সাত – সকালে আবার কোথায় যাওয়ার জন্য বের হলি।”
পূর্ণতার কোনো উত্তর দিতে ইচ্ছা হচ্ছেনা।সে জমেলার দিকে না তাকিয়েই বিরক্ত কন্ঠে জবাব দিল,
“হসপিটালে।”

জমেলা আবারও খিটমিট কন্ঠে বলল,
“হসপিটালেই কি সংসার শুরু করলি। বাড়ির সবাই তো হসপিটালে থাকা শুরু করেছে।আমি এই বুড়ো বয়সে কি রান্না করে খেতে পারি।বাড়ির সবাই কি না খেয়ে থাকবে।”
পূর্ণতার এ বাড়ির কিছু সদস্যর প্রতি তীব্র ঘৃণা।সে সবার সাথে কথা বলতে চায়না।সবার কথা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে।শুধু ঘৃণাভরা দৃষ্টিতে তাকালো জমেলার দিকে।
ওয়াজেদ মেজাজের সাথে বলল,

“তুমি আছো রান্না বান্না নিয়ে।এই দিকে ব্যবসায় বাঁশ যাচ্ছে আমাদের।প্রভাত চাইলেই এত বড় লসের হাত থেকে রক্ষা পেতাম আমরা।”
প্রভাত বিরক্ত চোখে ওয়াজেদের দিকে তাকাল।চোখ দিয়ে যেন এখনি গিলে খে’য়ে ফেলবে।কোনো নারীঘটিত ব্যাপার প্রভাত একদম সহ্য করতে পারেনা।গতরাতে বলার পরও ওয়াজেদ আবার সে কথা তুলবে প্রভাত ভাবতে পারেনি।সে পূর্ণতার হাত ছেড়ে ওয়াজেদের দিকে এগিয়ে গেল।কঠিন মেজাজে বলল,

“আপনাকে আমি কখন গি’ লে খেয়ে ফেলব চাচা, টের ও পাবেন না। আপনাকে বলে বাংলা ভাষায় বেয়াদব পুরুষ। যে নিজের জামাই-কে অন্য মহিলার পিছে লেলিয়ে দেয়।আপনি আমার টার্গেট এ আছেন। চাচীর সাথে এত বড় ঘটনা ঘটানোর পরেও আমি চুপ আছি কি জন্য জানেন। ঘূর্ণিঝড় এর আগে থমথমে আকাশ দেখে প্রকৃতি ভ’য় পায়।আমি তার চেয়ে ভয়ংকর তান্ডব করব।আপনার ভাতিজা কেমন আপনি তো জানেন ই। যাকে টার্গেট করি পয়মাল করে ছেড়ে দিই।”

ওয়াজেদের মাথা ঠিক নেই। সে উঠে দাঁড়াল।চোখ দু’টো লাল টকটকে হয়ে আছে।মাথা কাজ করছে না এই মুহুর্তে কি করবে।পূর্ণতার দিকে বড় বড় র*ক্তরাঙা চোখে তাকিয়ে জাহানের উদ্দেশ্য বলল,
“বান্দির বাচ্চার কৈ মাছের জা’ ন। অত পে’টা’নো পে’টা’লা’ম তাও ম’রে নি।বান্দির বাচ্চার না ব্লাড ক্যান্সার।আরো এক বছর আগে শুনেছি ও মা’রা যাবে।কিন্তু এখনো ম’রে নি।ওই বান্দি নিজেও ম’র’বে আমাদের ও পয়মাল করে ছেড়ে দিবে।আজরাইল মনে হয় খা* ন* কি*র বাচ্চাকে চোখে দেখছে না।আমি হসপিটালে গিয়ে আজ ওরে যদি জ-বা*ই না দিছি।ওর জন্য আজ সব ধ্বংসের পথে।”

ওয়াসেল বলল,
” অন্য মানুষের দোষ দিয়ে কি হবে? আমি আগেই বুঝছিলাম প্রভাত মাইয়্যা মানুষের পাল্লায় পড়েছে। ধ্বংস নিশ্চিত৷ পূর্ণতার জন্য আজ ব্যবসায় লালবাতি জ্বলবে।প্রভাত যদি বউ পা-গ-ল না হয়ে বাস্তবতা ভাবত তাহলে আজ ব্যবসায়ের এই অবস্থা হতনা।আমি যে শেষ বয়সে ওর উপর সব ছেড়ে দিবো কিন্তু ও তো জানেই না কখন কাকে কীভাবে ব্যবহার করতে হয়।”

প্রভাত ওয়াসেলের দিকে তাকিয়ে কপাল টান টান করে বলল,
“নোংরামি করে ব্যবসা করতে হবে।আজ থেকে গেস্ট হাউজে কোনো নোংরামি চলবে না।টাকা -পয়সা কবরে নিয়ে যাবা।টাকার জন্য যা খুশি তাই করছো? আজকের পর গেস্ট হাউজে কোনো নোংরামি চললে আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবেনা।”
ওয়াজেদ বলল,

“ওই বান্দি যদি প্রভাতকে কেঁদে কেঁদে না বলত ও অসুস্থ ম’রে যাবে।প্রভাত যেন পূর্ণতাকে বিয়ে করে।তাহলে কি প্রভাত জোর করে হলেও পূর্ণকে বিয়ে করত।শুধু মাত্র জাহান ‘কে দেওয়া কথা রাখতেই প্রভাত পূর্ণতাকে বিয়ে করেছে।এমন তো না প্রভাত প্রেমে পড়ে বা ভালবেসে বিয়ে করেছে।সব কিছুর দায়ী ওই বান্দির।”
প্রভাত পূর্ণতার দিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে ওয়াসেলের দিকে নিক্ষেপ করল।চাপা কন্ঠে বলল,
” আমি যদি ভাল না বাসতাম কার সাধ্যি ছিল আমাকে জোর করে বিয়ে দিবে।আমি ভালবেসেই বিয়েটা করেছি।আমি ভালবাসি পূর্ণকে।”

ওদিকে কি কথা হচ্ছে পূর্ণতার সেদিকে খেয়াল নেই।সর্বাঙ্গ কাঁপছে তার।মাথা চক্কর দিয়ে উঠল।চোখ টলমল করে উঠল পানিতে।তার মায়ের ব্ল্যাড ক্যান্সার।আর সে এতদিন ধরে কিছুই জানত না। এইজন্য তার মা এত অসুস্থ হয়।সমস্ত পৃথিবী যেন অন্ধকার লাগছে পূর্ণতার কাছে।দুই কানে শুধু বাজছে ওয়াজেদের কথা।তার মায়ের আরোও এক বছর আগে মারা যাবার কথা ছিলো।তার মানে তার মায়ের সময় ফুরিয়ে এসছে।বুক ফেঁটে কান্না উপচে আসছে পূর্ণতার।এখনি ছুটে গিয়ে নিজের মা’কে জড়িয়ে ধরে রাখতে ইচ্ছা করছে।

ইচ্ছা করছে মা’কে খুব শক্তভাবে জড়িয়ে ধরতে।তার মা যেন তার জীবন থেকে হারিয়ে না যায়।কত স্বপ্ন ছিলো একদিন সুখ কুড়িয়ে এনে মায়ের পায়ে রাখবে। মা খুশিতে হাসবে সেই দৃশ্য দেখবে।মায়ের জীবনে সুখ আসার আগেই সময় ফুরিয়ে গেল।পূর্ণতা কেঁদেই যাচ্ছে বিভিন্ন চিন্তা করে।পূর্ণতার কান্নার শব্দ প্রভাতের কানে গেল।প্রভাত দেখল পূর্ণতা ফুঁপিয়ে কাঁদছে। প্রভাতের সর্বাঙ্গ রাতে তিরতির করে কাঁপছে।সে ওয়াজেদ আর ওয়াসেলের দিকে তাকিয়ে শক্ত চোয়ালে বলল,

“পূর্ণতাকে কিছু বললে পুরা ব্যবসায়ে আ’ গু’ ন লাগিয়ে দিব।পূর্ণতা একদিকে সমস্ত পৃথিবী একদিকে আমার মাইন্ড ইট।ওর চোখের পানির কারণ যে হবে তাকেই দুনিয়ার বাহিরে পাঠিয়ে দিব।এতে আমার যে পাপ হয় হবে।পূর্ণতার হাসি মুখের জন্য সহস্র খু*ন করতেই হাত কাঁপবে না আমার।”

পৃথিবীর সব চেয়ে বাজে অনুভূতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে পূর্ণতা।কিন্তু এই বাজে অনুভূতির মাঝেও প্রভাতের তার প্রতি কঠিন ভালবাসা পূর্ণতাকে মুগ্ধ করল।তার মায়ের মতই কেউ তাকে ভালবাসে।এই ভালবাসা কতটুকু সত্য পূর্ণতা জানেনা।তবুও কেন যেন তার অদ্ভুত এক অনুভূতি হল।প্রভাতের কথার জন্য পূর্ণতা সাহস পেল।সে আজ ঘৃণাভরা চোখে ওয়াজেদের দিকে তাকাল।ওয়াজেদের মুখোমুখি গিয়ে এক দলা থু থু ওয়াজেদের মুখে ছুড়ে দিল।জীবনে প্রথমবার পূর্ণতা এতটা সাহসিকতার পরিচয় দিল।এই সাহসের নাম প্রভাত।সে বুঝে গিয়েছে প্রভাত পাশে থাকলে সে সর্বদা জিতে যাবে। পূর্ণতা এক দলা থু থু ছুড়ে বলল,

“তোকে বাপ বলতে ঘৃণা হয় আমার। এইজন্য তোর সাথে কথা বলিনা আমি।আমার আম্মুর জীবন টা নষ্ট করেছিস তুই। মানুষ একদিন ম’রে আর তুই আমার আম্মুকে রেগুলার মৃত্যুর স্বাদ দিয়েছিস।আমার অসুস্থ আম্মুকে অমানুষের মত মে’রে’ছি’স।আমার আম্মুর কিছু হলে তোকে খু*ন করব আমি মাথায় রাখিস জা’নো’য়ার, চরিত্রহীন”
ওয়াজেদের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল।পূর্ণতা এত সাহস কীভাবে পেল।ওয়াজেদ কিছু বলতে যাবে তখনই প্রভাত বলল,

“চাচা ও আপনার মেয়ে না। প্রভাত চৌধুরীর বউ।তেজ একটু বেশীই থাকবে এটাই স্বাভাবিক।আজ থু থু খেয়েছেন পরের দিন জনসম্মুখে নিয়ে জু’ তা দিবে।”
ওয়াজেদ ওয়াসেলের দিকে তাকিয়ে হা করে রইলো।তার মুখের জবান যেন বন্ধ হয়ে গেল।ওয়াসেল কিছু বলতে যাবে তখন-ই ফায়েকের কন্ঠস্বর শোনা গেল।ফায়েক মাছ নিয়ে এসে ডাকাডাকি করছে।
ওয়াসেল উঠে গেল।ফায়েক মাছের ঝাঁকা নামাল।মাছের ঝাঁকা নামিয়ে বলল,

“স্যার মাছ লইবেন না। আগের বাকি টেহা গুলান দিলে উপকার হইতো।”
ওয়াসেল মাছের ঝাঁকার দিকে তাকিয়ে দেখল আজ বেশী ভাল মাছে নেই।ওয়াসেল গম্ভীর কন্ঠে বলল,
“কি মাছ এসব।আমার বাড়ি গেস্ট এসছে বলছিলাম না ভাল মাছ আনবি।”
ফায়েক বোকা সোকা মানুষ। সে বোকা হেসে বলল,
“স্যার আজকের মাছ গুলান আমার ছেলে নিয়ে গিয়েছে।একটা মাত্র ছেলেতো।ও খাইতে চাইলে তো না কওন যায়না।”

ওয়াসেল ফায়েকের মুখে লা-থি মেরে বলল,
“তোর ছেলে বড় হয়ে গেল আমার চেয়ে।আমার গেস্ট কে মাছ খাওয়াতে চেয়েছিলাম।মাছ না এনে ছেলেকে দিয়েছিস।কতদিন ধরে বলছি একটা কাজের মেয়ে খুযে দে।সেদিকেও খেয়াল নেই তোর।”
ফায়েকের বোকা সরল মুখটা কালো হয়ে গেল।চোখ দিয়ে পানি ছেড়ে বলল,
“পৃথিবীর সব বাপের কাছেই তার সন্তান বড়।আপনারা যদি আর মাছ না ও নেন তাই আমার আপত্তি নাই।আমার ছেলের উপরে আর কিছু নেই আমার স্যার।আপনাগো কামের মানুষ খুজে এনেছি।”

প্রভাত দূর থেকে দৃশ্যটা দেখেছে।হৃদয় টা কেঁদে উঠেছে প্রভাতের।দরিদ্র মানুষটকে এমন আঘাত করেছে যা প্রভাতের হৃদয়ে গিয়ে লাগল।প্রভাত কঠিন মেজাজ নিয়ে এগিয়ে গেল।ফায়েকের দিকে হাত বাড়িয়ে বলল,
“চাচা উঠুন।”
ফায়েক খুব সরল ভাবে জিজ্ঞেস করল,
“কেন?”

প্রভাত ওয়াসেলের দিকে তাকিয়ে বলল,
“উনাকেও একটা লা’ থি দিন আপনি।”
ফায়েকের গাল একদম হা হয়ে গেল প্রভাতের কথা শুনে।ওয়াসেল চৌধুরীর দিকে তাকানোই যেখানে দুঃসাহসিকতার কাজ।সেখানে লা-থি।প্রভাত এটা কি বলল।
ফায়েকের মুখভঙ্গি দেখে প্রভাত বুঝেই প্রশ্ন করল,

“অবাক হচ্ছেন কেন? দিন লা- থি।”
ওয়াসেল বলল, “তোমার কি মাথা একদম খারাপ হয়েছে?”
প্রভাত বলল, “তোমাদের টাইট দিতে আমাকে এসব রাস্তায় বেছে নিতে হবে।কাজটা ঠিক করোনি ফায়েক চাচার গায়ে হাত তুলে।”

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ২৬

ফায়েক ঝামেলা দেখে বলল, “আমি আর মাছ ধরব না।আমার ছেলে প্রতিদিন রাগারাগি করে।তাই ভাবছি এ কাম আমি আর করব না।আপনাদের নতুন কামের মানুষ আমি জেলে পাড়া থেকে খুজে এনেছি।ওর নাম পূজা।”

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ২৮

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here