অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ৪১

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ৪১
Mousumi Akter

তখন গভীর রাত। নির্জন ধরণীতে কেবল সমুদ্রের সাঁ সাঁ শব্দ ভেষে আসছে পূর্ণতার কানে।তার খুব শখ গভীর রাতের সমুদ্র দেখার। থম মেরে তাকিয়ে আছে সমুদের দিকে। প্রভাত পূর্ণতার দিকে তাকিয়ে মোহনীয় কণ্ঠে বলল,

‘ কি দেখছো এই মহাসমুদ্রে?’
পূর্ণতা স্মিথ হেসে বলল,
‘সমুদ্রের ঢেউ।’
প্রভাত পূর্ণতার গোলাকার মুখের অদলে দৃষ্টি মেলে বলল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

‘ তুমি না হাসলে, মহাসমুদ্রে ঢেউ উঠবে না পূর্ণ। ‘
‘আমার হাসির বুঝি এত দাম।’
‘পৃথিবীতে যত মহামূল্যবান জিনিস আছে তোমার হাসির চেয়ে দামী তো আমার চোখে কিছু পড়ল না।’
পূর্ণতা মৃদু হাসল।হেসে বলল,

‘সমুদ্র ও কি আমার প্রেমিকের মত আমাকে ভালবাসে? যে আমি না হাসলে ঢেউ উঠবে না।’
প্রভাত পূর্ণতার কাঁধের উপর দিয়ে হাত দিয়ে পূর্ণতাকে নিজের সাথে মিশিয়ে ধরল।পরম ভালবাসা মিশ্রিত কণ্ঠে বলল,

‘সেই মহাসমুদ্র টা আমার হৃদয় পূর্ণ। ‘
পূর্ণতার হৃদয় প্রভাতের কথায় সমুদ্রের ঢেউ-এর মতোই দোলা দিয়ে উঠল।সে প্রভাতের বুকে মাথা গুজে বলল,
‘ আমার এমন অস্থির লাগছে কেন চৌধুরী সাহেব।আপনি এত কাছে তবুও বুকের মাঝে কেমন যেন প্রলয় বইছে আমার।কেন এই অস্থিরতা। খালি মনে হচ্ছে কি যেন নেই।’
প্রভাত পূর্ণতার অশান্তি দূর করতে বলল,

‘বেশী দুঃচিন্তা করো তুমি।বলেছি না আমার অর্ধাঙ্গী যখন হয়েছো তোমার সুখের ভাগ নিবোনা কিন্তু দুঃখের ভাগ পুরাটা নিবো।’
সমুদ্রের পাড়ে কত -শত গল্পে তাদের সময় কাটতে লাগল।প্রভাত পূর্ণতাকে বলল,
‘আজ কি সারারাত জেগে থাকবে?’
‘হুম।’

‘রুমে চলো একটা সারপ্রাইজ দিই।’
পূর্ণতা এইবার কিছুটা অবাক হয়ে বলল,
‘আর কত?’
‘এখনো বহুপথ বাকি পূর্ণ। সারপ্রাইজের তো কিছুই দেখোনি।’
এরপরই প্রভাত পূর্ণতার হাত ধরে হোটেলের দিকে নিয়ে গেলো।ওদের রুমের কাছাকাছি আসতেই প্রভাত পূর্ণতাকে কোলে তুলে নিলো।পূর্ণতার ভালো লাগছে।সে প্রভাতের গলা জড়িয়ে ধরে রেখেছে।প্রভাত পূর্ণতার দুই চোখে চুমু দিয়ে বলল,

‘ চোখটা বন্ধ করো প্লিজ!’
পূর্ণতা কোনো বাহানা ছাড়া চোখ বন্ধ করল।রুমে ঢুকে প্রভাত বলল,
‘ চোখ খোলো।’
পূর্ণতা চোখ খুলেই হা হয়ে গেল।রুম টা চেনা যাচ্ছে না।সব সাদা ফুল।দিয়ে সাজানো।চারদিক কেমন রঙিন,ঝলমলে লাগছে তার কাছে।পূর্ণতা খুশিতে আত্মহারা হয়ে প্রভাতের গলা আরেকটু জড়িয়ে ধরে বলল,

‘ এসব কীভাবে?’
প্রভাত স্মিথ হেসে বলল,
‘ আমাদের রোমান্স হয়েছে কিন্তু ফুলের বিছানায় তো কোনো শয্যা হয়নি। সেটা বাদ রাখব কেন?’
পূর্ণতা এইবার লজ্জা পেলো।সে প্রভাতের বুকে মুখ গুজল।
প্রভাত পূর্ণতাকে নিয়ে বিছানায় গেলো।পূর্ণতাকে আদর মাখা কণ্ঠে বলল,

‘ ফুলসজ্জিত খাটে জীবন্ত একটা ফুল দেখতে পাচ্ছি। আমার ব্যক্তিগত ফুলের সাথে আজীবন এভাবে কাটিয়ে দিতে চাই।’
পূর্ণতা প্রভাতকে জড়িয়ে ধরল।একদম প্রভাতের সাথে মিশে গিয়ে বলল,
‘সময় ধরে রাখা যায়না চৌধুরী সাহেব?’
‘কেন?’

‘তাহলে আমি সময় ধরে রাখতাম।এই সময় টা ফুরিয়ে যাক আমি তা চাইনা। এই সুখ টুকু মুঠোবন্দি করতে চাই আমি।’
‘যতদিন আমি আছি, সুখ, সুখ আর সুখ ছাড়া দুঃখ দিবে কে তোমায়?’
পূর্ণতা প্রভাতকে আরোও শক্তভাবে জড়িয়ে ধরে বলল,

‘ আজ এত ভয় কেন লাগছে আমার চৌধুরী সাহেব।আমাকে আরোও একটু শক্তভাবে জড়িয়ে ধরুন।’
প্রভাত পূর্ণতাকে শক্তভাবে জড়িয়ে ধরে হারিয়ে গেলো পূর্ণতার প্রেমের গভীরতার।দু’জন মানব-মানবী সমুদ্রের ঢেউ এর মতোই গভীর উন্মাদনায় মেতে উঠল।দুটো মন মিলিত হলো ভালবাসায়।অথচ প্রেম,এত সুখের ভীড়ে কি আর পূর্ণতা জানত তার মা এই দুনিয়াতে নেই।

গাড়িতে মেরি কান্নারত অবস্থায় বারবার ওয়াজেদকে ফোন দিচ্ছে।অথচ ওয়াজেদ ফোন তুলছে না।এইদিকে নিজের স্ত্রী মারা গিয়েছে আর সে অন্য মেয়ের সর্বনাশে লিপ্ত। ওয়াজেদ এর নাম্বারে অতবার ফোন দিতে দেখে কৃষ্ণ বলল,’ আন্টি হয়ত উনি কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যাস্ত আছেন।মেরি এইবার উপায় না পেয়ে প্রভাত কে ফোন শুরু করল।প্রভাতের ফোন ও রিসিভ করছে না।

মেরি একা একা জাহান কে নিয়ে কি করবে বুঝে উঠতে পারছে।সে কৃষ্ণের সাহায্য জাহান কে হসপিটালে নিলো।জাহানকে হসপিটাল নিতেই ডাক্তার জাহানকে মৃত ঘোষণা করল।মেরি হাউ মাউ কঁন্নায় ভেঙে পড়ল।এই পৃথিবীতে জাহান ই একমাত্র তার সুখ-দুঃখের সঙ্গী ছিলো।মেরি এক নাগারে প্রভাত কে ফোন দিচ্ছে।ঘন্টা দুয়েক পরে প্রভাত খেয়াল করল তার ফোনের আলো জ্বলছে।সে বিছানা ছেড়ে উঠে দেখল এত রাতে মায়ের ফোন।বেশ উদিগ্ন হয়ে ফোনটা রিসিভ করল।ফোন রিসিভ হতেই ফোনের ওপাশ থেকে মেরির কাঁন্নার আওয়াজে প্রভাত বুঝে গেলো কি হয়েছে।পূর্ণতা বলল,

‘ কি হয়েছে?’
প্রভাত পূর্ণতার দিকে তাকালো।মুহুর্তের মাঝেই এই মায়াভরা মুখটা আঁধারে ঢেকে যাবে।অসহায় এর মত কাঁদব।প্রভাত এখনি কিছু বলল না।সে পূর্ণতাকে বলল,
‘ দাদীর অবস্থা খুব একটা ভালো নয়।আমাদের এখনি ফিরতে হবে।’

পূর্ণতা রেডি হয়ে নিলো।রাত প্রায় শেষের দিকে প্রভাত সর্বোচ্চ স্পিডে গাড়ি চালাচ্ছে।ভেতর টা পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে প্রভাতের।তীব্র কষ্ট হচ্ছে।পূর্ণতার জন্য কাঁদতে পারছে না।পূর্ণতা গাড়িতে ঘুমিয়ে পড়েছে।প্রভাত বারবার পূর্ণতার দিকে তাকাচ্ছে।কীভাবে এই কষ্ট সহ্য করবে সেই চিন্তা হচ্ছে।

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ৪০

পরের দিন সকাল দশটা বাজল প্রভাতের বাড়ি পৌছাতে।বাড়ির গেটেই প্রচুর মানুষের ভীড়।পূর্ণতা গাড়ি থেকে নেমে বুঝে উঠতে পারল আসলে কি হচ্ছে।তার দাদীর কি খারাপ কিছু হল?…

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ৪১ (২)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here