অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ৪০

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ৪০
Mousumi Akter

পূজা লুকিয়ে লুকিয়ে কৃষ্ণের সাথে দেখা করতে আসছিলো।হঠাৎ করে ওয়াজেদের সামনে পড়ায় তার বুক ধুক করে উঠল।আচমকা এক ভ’য়ে বুকের মাঝে উথাল-পাথাল করতে শুরু করল।চোখ-মুখ চুপসে গিয়েছে পূজার।সে কি বলবে এখন ওয়াজেদ কে। এমনিই এসছে ঘুরতে এটা বলবে। তাহলে তো আর কৃষ্ণের সাথে দেখা হবেনা।

এইদিকে কৃষ্ণকে দেখার জন্য তার হৃদয় ছটফট করছে।সে কৃষ্ণকে না দেখে একটুও থাকতে পারেনা। কেন যেন ইদানিং তার কৃষ্ণকে দেখার তৃষ্ণা কয়েক হাজার গুন বেড়ে গিয়েছে।সারাক্ষণ বুকের মাঝে অদ্ভুত এক তৃষ্ণা জাগে। কৃষ্ণ ও ইদানিং পূজা ছাড়া থাকতে পারছে না।সে বার বার এ বাড়ির কাজ ছেড়ে দিতে বলছে।জাহান অসুস্থ। পূর্ণতা ফিরে এলেই সে এ বাড়ির কাজ ছেড়ে দিবে।তারপর ই তার আর কৃষ্ণের বিয়ে।ওয়াজেদ পূজার কাঁধে হাত রাখল।মুহুর্তের মাঝে পূজার হৃদয় আত্মা কেঁপে উঠল।
পূজাকে কেঁপে উঠতে দেখে ওয়াজেদ পূজার দিকে ঝুঁকে ফিসফিস করে বলে উঠল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“এত রাতে বাগান দিয়ে ছুটতেছো কেন পূজা মা’মনি।আর এভাবে কেঁপে উঠলে কেন? জ্বী_ন৷ দেখেছো নাকি। ”
পূজা কোনো কথা না বলে ওয়াজেদের দিকে তাকাল।সে এখন কি উত্তর দিবে মাথায় আসছে না।ওয়াজেদ আবার ও বলল,

” রাত-বিরাইতে বাগান দিয়ে প-রী-র মত ছুটাছুটি করলে তো জ্বী-ন আসবেই মা’মনি।”
পূজা মিন মিন স্বরে বলল,
“ইয়ে মানে জ্যাঠা।”
“তা যাচ্ছো কোথায় মা’মনি?”
পূজা আবার ও মিন মিন স্বরে বলল,

“মানে জ্যাঠা..”
“সত্য কথা বলো, না হলে কিন্তু তোমার মা-বাবাকে ডাকব।বাড়ির সবাইকে ডাকব।সত্য বললে মাফ করে দিবো।”
পূজা লজ্জা শরম ভ’য় ডর বিসর্জন দিয়ে দিলো।ঠোঁটের আগায় চলে এসছে কৃষ্ণের নাম।সে ঠোঁট নাড়িয়ে বলল,

“আসলে জ্যাঠা।”
“ভয় পেও না সত্য বলো, আমি কিচ্ছু বলব না।”
“আমি একটা ছেলেকে ভালবাসি জ্যাঠা।ও এসছে দেখা করতে।”
“এভাবে রাতের বেলা ছেলে বন্ধুর কাছে যাওয়া ঠিক নয়। পুরুষ মানুষ যত বড় সাধুই হোক না কেন মেয়ে মানুষ দেখলেই ওরা ভন্ড হয়ে যায়।”

“জ্যাঠা ও আসলে অমন নয়।”
“আমিতো তোমার জ্যাঠা হিসাবে এত রাতে একটি ছেলের হাতে তোমাকে ছেড়ে দিতে পারিনা। আমি আগে ছেলেটির সাথে কথা বলব।ছেলেটিকে ভাল মনে হলে তারপর না হয় বিয়ের ব্যবস্থা করে দিবো। তখন রাত-দিন জামাই-এর সাথে কথা বলিও।”

“জ্যাঠা আপনি তাকে চিনবেন।”
ওয়াজেদ কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞেস করল
“কে সে?”
“রাজন দাদার সাথে যে ছেলেটা থাকে।ওর নাম ই কৃষ্ণ। ”
“তবুও আমি কথা বলতে চাই।একটু যাচাই করা প্রয়োজন আছে।”
“তাহলে চলুন আমার সাথে।”
“তুমি ছেলেটাকে ফোন দিয়ে এখানে ডেকে আনো।”
“এখানে আনব।”

“এখানে দাঁড়িয়ে কথা বলা খারাপ দেখাবে। ওইযে সাদা বিল্ডিং ওটা আমাদের গেস্ট হাউজ। আমাদের গেস্ট হাউজ।চলো ওখানে বসব।ফোন দিয়ে বলো ছেলেটাকে।”
“কিন্তু জ্যাঠা..”
“কোনো কিন্তু নয়। তুমি চলো।”

পূজার সরল মন।সে ওয়াজেদ কে বাবার নজরে দেখে।বাবারা সন্তানতুল্য মেয়েদের সাথে আর কি খারাপ করবে।পূজার মাথায় এত কিছু আসেনি।পূজা কৃষ্ণের নাম্বারে রিং করল কিন্তু রিসিভ হলোনা।পর পর ৩-৪ বার রিং হয়ে গেলো কিন্তু রিসিভ হলোনা ফোন।ফোন দিতে দিতে পূজা ওয়াজেদের সাথে গেস্ট হাউজে ঢুকে গেল।গেস্ট হাউজে প্রবেশ করেই পূজার দু’চোখ জুড়িয়ে গেল।

এত সুন্দর করে সাজানো ঘর সে আগে কখনো দেখেনি।ওয়াজেদ পূজাকে নিয়ে পাশের রুমে গেলো।কৃষ্ণ ফোন রিসিভ করছে না। পূজার কেমন অস্থির লাগছে।ওয়াজেদ বিছানায় বসল।বসে পূজার দিকে কু-নজরে তাকালো।সহসা সেই চাহনি পূজার চোখে ধরা পড়ল।পূজার আত্মা কেঁপে উঠল। বুকের মাঝে দুরুম দুরুম শব্দ হচ্ছে।মন কেমন যেন কু-গাইছে।প্রবল সন্দেহ হচ্ছে ওয়াজেদ এর চাহনি।পূজা তড়িঘড়ি করে ওয়াজেদ কে বলল,

” জ্যাঠা আমি আসছি৷ ও ফোন তুলছে না।” বলেই পূজা হাঁটা দিলো। ওয়াজেদ দ্রুত বিছানা ছেড়ে উঠল।পূজার হাত ধরে টান দিয়ে বিছানায় ফেলে দিলো।তখন ই পূজার ফোন বেজে উঠল। কৃষ্ণের নাম্বার থেকে ফোন এসছে।পূজা ফোন রিসিভ করতে যাবে তখন ই ওয়াজেদ পূজার ফোন ফ্লোরে আছাড় মেরে ভেঙে ফেলল।পূজা ততক্ষণে বুঝে গিয়েছে ওয়াজেদের উদ্দেশ্য। পূজা ভয়ে কাঁপছে।সে ওয়াজেদের দু’পা জড়িয়ে ধরে বলল,

” আমাকে ছেড়ে দেন জ্যাঠা। আমাকে বাইরে যেতে দেন।”
ওয়াজেদ কুৎসিৎ একটা হাসি দিয়ে পূজার দুই হাত ধরে উঠালো।পূজাকে বলল,
” তোর সব চাহিদা আমি পূর্ণ করব পূজা।তোর আর আমার মাঝে একটা সম্পর্ক হোক যা কেউ জানবে না।শুধু আমি যখন ডাকব তুই চলে আসবি।”
পূজা কাঁদতে কাঁদতে বলল,

” ছিঃ ছিঃ এসব আপনি কি বলছেন জ্যাঠা।আপনি আমার বাবার মত।এসব পাপী কথা কেন বলছেন?”
“আমি জানি তুই আমার কথা শুনবি না।” বলেই ওয়াজেদ পূজাকে বিছানায় ফেলে দিলো।ছোট্ট বাচ্চা মেয়েটার সাথে পশুর মত আচরণ শুরু করল।পূজা ছটফট করছে আর ওয়াজেদের কাছে অনুনয়

-বিনয় করছে ছেড়ে দেওয়ার জন্য।কিন্তু ওয়াজেদ সে পশুর চেয়ে খারাপ।পূজা চিৎকার করছে বলে, পূজার মুখ বেঁধে দিলো।হাত -মুখ বেঁধে জানোয়ারের মত ধ_ র্ষ_ণ শুরু করল।পূজা যন্ত্রণায় ছটফট করছে। মুখটা বাঁধা কোনো কথা বলতে পারছে না।ওয়াজেদ একাধারে শারীরিক অত্যাচার শুরু করল।সমস্ত চোখ, মুখে,বুকে, পিঠে নখের আঁচরে র’ক্তা’ক্ত করে ফেলল।যন্ত্রণায় পূজার প্রা’ন টা যেন বের হয়ে যাচ্ছে।

সে এক মনে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থণা করে যাচ্ছে।এত ভয়ানক যন্ত্রণা সে আগে পায়নি।ওয়াজেদ ঘন্টাখানিক পূজার উপর অত্যাচার চালিয়ে ক্ষ্যান্ত হল।পূজা আধমরা হয়ে পড়ে আছে। তার কিছুক্ষণ পরেই ওয়াজেদ দের বিজনেস পার্টনার ঘরে প্রবেশ করে।যাকে ওয়াজেদ আর ওয়াসেল গুরু বলে ডাকে।ওয়াজেদ লোকটাকে দেখে বলল,

‘ গু’রু যাবেন নাকি।’
লোকটা বিশ্রী ভাবে হেসে দিয়ে পূজার কাছে গেলো।আধমরা পূজা এই গুরু নামক লোকটাকে দেখে চমকালো।পূজা এই ভয়ানক যন্ত্রণার মাঝেও যেন আকাশ ভেঙে পড়ল।এই লোকটা পূজার চিরচেনা আপণ কেউ।পূজা লোকটাকে দেখে দুই হাত জড়ো করে মাফ চাইলো।মুখ বাঁধা তাই মুখে কিছু উচ্চারণ করতে পারল না।

হাত জোড় করে ছেড়ে দেওয়ার জন্য বা তাকে বাঁচানোর জন্য অনুনয় করছে।কিন্তু কে শোনে কার কার কথা।সেও ওয়াজেদ এর মতো একই কাজ করল।বাচ্চা মেয়েটার উপর অমানবিক অত্যাচার চালালো।শারিরীক যন্ত্রণা সহ্য সীমার বাইরে চলে গেলো। পূজা অজ্ঞান হয়ে গেলো।লোকটার অত্যাচার শেষ হয়ে গেলে ওয়াজেদ বলল,

” গুরু কি করব এটাকে।”
গুরু মদের বোতল হাতে নিয়ে বলল,
“ম’রে ফেলো। ”

কৃষ্ণ পূজাকে ফোনে না পেয়ে ঘন্টা দু’য়েক অপেক্ষা করল।দু’ ঘন্টা অপেক্ষার পর যখন পূজা এলোনা কৃষ্ণ চৌধুরী বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করল।বাড়িতে প্রবেশ করতেই বাড়ির কেয়ার টেকার রউফ এর সাথে দেখা।রউফ এতদিনে কৃষ্ণকে চিনে গিয়েছে।পুলিশ বাবুর সাথের লোক রউফ তা জানে।রউফ কৃষ্ণকে বলল,

“কিছু কইবেন? জামাই বাবাও আইছে নাকি।”
“হ্যাঁ, বাড়ির ভেতরে কেউ আছে।আমি একটু কথা বলতাম।”
” হ, যান।”
কৃষ্ণ বাড়ির ভেতরে গিয়ে পূজার নাম ধরে ডাকতে শুরু করল।কৃষ্ণের কণ্ঠ শুনে মেরি দৌঁড়ে বাড়ির ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো।মেরিকে খুব চিন্তিত দেখাচ্ছে।সে কৃষ্ণকে দেখেই বলল,

” বাবা আমাকে একটু সাহায্য করবে?”
মেরিকে এমন চিন্তিত দেখে কৃষ্ণ বলল,
“কি হয়েছে আন্টি?”

“বাবা, জাহানের অবস্থা ভাল নয়।এক্ষুনি হসপিটালে নিতে হবে।বাড়িতে কোনো পুরুষ মানুষ নেই। জাহান যেন কেমন কেমন করছে।”
কৃষ্ণ বলল, ” হসপিটালে চলুন আন্টি। কিন্তু পূজাকে তো দেখছি না।”
” পূজা আছে হয়ত কোথাও।জাহানের অবস্থা ভাল নয়। এখন পূজাকে খুঁজতে গেলে জাহানকে বাঁচাবো যাবেনা।”

কৃষ্ণ আর কোনো কথা বাড়ালো না।সে মেরির সাথে উপরে উঠল।জাহান কে কোলে তুলে গাড়িতে এনে সুইয়ে দিলো।ড্রাইভার দ্রুত গাড়ি ছেড়ে দিলো।মেরি আর কৃষ্ণ জাহান কে নিয়ে হসপিটালে চললো।গাড়িতেই জাহানের অবস্থা খুব খারাপ। জাহানের খিঁচুনি শুরু হয়েছে।মেরি দোয়া -দুরুদ পড়ছে।মেরি বুঝতে পারছে জাহানের অন্তিম সময় ঘনিয়ে এসছে।ড্রাইভার গাড়ি চালাচ্ছে খুব জোরে তবুও পথ ফুরাচ্ছে না।মেরি চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে চিৎকার দিয়ে বলল,

‘ জাহান তুই এমন করছিস কেন? তোর না আমার জীবনের গল্প শোনার খুব ইচ্ছা।তোকে শুনতে হবে একজন অর্ধাঙ্গী কেন বিদ্রোহী হয়ে উঠল সে গল্প।একমাত্র তোর কাছে বলেই শান্তি পাবো আমি।’
জাহানের মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না।সে খানিকটা আউ আউ করে বলল,

” আমার পূর্ণতা, আমার পূর্ণতা।”
মেরি জাহানের মুখে হাত রেখে বলল,
” পূর্ণতাকে আসতে বলছি।পূর্ণতা আসবে।”
জাহান চোখের পানি ছেড়ে বলল,
” আমার পূর্ণ সোনাকে দেখে রাখবেন আপা। আজ থেকে ও হয়ত এতিম হয়ে যাবে।আমার এতিম মেয়েটাকে দেখে রাখবেন।”

মেরি জাহানকে জড়িয়ে ধরে বলল,
” এসব আর বলিস না জাহান। তোর কিছু হবে না।”
জাহানের কথা আস্তে আস্তে এড়িয়ে গেলো।নিঃশ্বাসে তীব্র কষ্ট হচ্ছে।আস্তে করে জাহান চোখ বন্ধ করে দিলো।কৃষ্ণ বলল,

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ৩৯

” আন্টি একটু ঘুমোচ্ছে।এইবার সুস্থ হয়ে যাবে।”
মেরি চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠে বলল,
“এ ঘুম আর ভাঙবে না। ”

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ৪১