অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ৩৯

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ৩৯
Mousumi Akter

গোধুলী লগ্নে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে দাঁড়িয়ে আছে পূর্ণতা।সূর্য প্রায় অস্তমিত হওয়ার পথে।পূর্ণতার পরণে লাল জরজেট শাড়ি।আঁচল ছেড়ে দেওয়া।ঠোঁট লাল লিপিস্টিক দেওয়া।সোনালি রঙের চুল গুলো খোপা করে রাখা।সে মুগ্ধ হয়ে সমুদ্রের বুকে ভাসমান সূর্য দেখছে।মাঝে মাঝে সমুদ্রের বিশাল বিশাল ঢেউ তার পা ছুঁয়ে দিচ্ছে।সে একবার আকাশ, একবার সমুদ্র, একবার সূর্য দেখছে।

জীবনে প্রথম কোনো সন্ধ্যা ফুরিয়ে যাবার জন্য আফসোস হচ্ছে তার।মনে হচ্ছে এই সময়টা এখানেই থমকে যাক।সে ডানে, বামে তাকালো।প্রভাত কে খুজছে।চারদিক লোহিতবর্ণ ধারণ করেছে।কিছুটা দূরেই প্রভাত দাঁড়িয়ে আছে।ঘর্ণায়মান সন্ধ্যায় সে এক ভয়ংকর সুন্দর পুরুষকে দেখে থমকে গেলো।প্রভাতের আপাদমস্তক সে ভাল ভাবে তাকিয়ে দেখল।থ্রি-কোয়ার্টার প্যান্ট পরা,গায়ে সাদা গেঞ্জি,চোখে কালো চশমা।মুখে হালকা হালকা খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি।কার সাথে যেন হেসে হেসে কথা বলছে।পূর্ণতার মুখে স্মিথ হাসি।এমন পরিপূর্ণ সুদর্শন পুরুষ থেকে সে কেন এতদিন দূরে ছিলো।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সারাজীবন নাকি পুরুষের হৃদয় থমকে যায় সুন্দরী নারী দেখলে।আজ পূর্ণতার হৃদয় থমকে গেলো প্রভাত কে দেখে।পুরুষ মানুষের এত সুন্দর হওয়ার কি প্রয়োজন।তার কি হঠাৎ চেহারা সুন্দর হলো।কই এতদিন তো এত সুন্দর লাগেনি তাকে।পূর্ণতা ভাবনায় বিভোর।প্রভাত দূর থেকে চোখ রাখল পূর্ণতার চোখে।প্রভাত বুঝতে পারল পূর্ণতা তাকে দেখছে।তাও গভীর ভালবাসার নজরে দেখছে।প্রভাত কথা শেষ করে নেশাতুর চোখে তাকাতে তাকাতে পূর্ণতার দিকে এগিয়ে গেলো।পূর্ণতার কাছাকাছি গিয়ে তার চুল গুলো ছেড়ে দিলো।খোলা চুলে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল, ‘ এমন করে তাকিয়ে থাকলে সর্বনাশ হয়ে যাবেতো আমার।’

কথাটা পূর্ণতার হৃদয়ে কঠিন দোলা দিলো।সে দ্যুলোকপানে চেয়ে মনে মনে বলল, ‘ হে ধরনি, আমি তাকে ভালবাসি।এই সমুদ্রের গভীরতার চেয়েও গভীর সে ভালবাসার অনুভূতি। কিন্তু প্রকাশ করব কীভাবে? আমি তো প্রকাশ করতে পারছি না।কোন শব্দ প্র‍য়োগ করলে বোঝানো যাবে আমি তাকে ভালবাসি।শুধু মুখে ভালবাসি বললেই কি তা প্রকাশ হয়ে যাবে।পৃথিবী তোমার কাছে, বিশাল আকাশের কাছে,বিশাল সমুদ্ররর কাছে আজ আমি প্রতিজ্ঞা করছি,আমি তার অর্ধাঙ্গী। তার অর্ধাঙ্গী রুপে পৃথিবীর যত কঠিন পরিস্থিতি আসুক না কেন? আমি তাকে কোনদিন ছেড়ে যাবোনা।সারা পৃথিবী তার বিপক্ষে গেলেও আমি তার পাশে থাকব।এটাই হয়ত আমার ভালবাসা প্রকাশের ধরণ।’

প্রভাত পূর্ণতার ভাবুক দৃষ্টি দেখে বলল,
‘ কি ভাবছো? নিশ্চয়ই আমাকে নিয়ে কিছু।’
পূর্ণতা স্মিথ হাসল।প্রভাত তার আঙুলের ভাজে আঙুল রাখল।দুজনে সমুদ্রের কিনারা দিয়ে হাঁটছে।মৃদু বাতাসে পূর্ণতার চুল উড়ছে।মাঝে মাঝে তা প্রভাতের মুখেও লাগছে।পূর্ণতা চুপ আছে।প্রভাত বলল,
‘ স্বীকার করতে লজ্জা পাচ্ছো? এইযে দেখো আমার মনে সারাক্ষণ তুমি থাকো।ভাবনায় তুমি থাকো।স্বপ্নেও তুমি থাকো।এ কথা আমি গর্বের সাথে স্বীকার করতে পারি জা’ন। ‘

পূর্ণতার আজ অদ্ভুত রকমের ভালো লাগছে।মনে আনন্দের প্রলয়। এত আনন্দের জন্য ও তার ভ-য় করছে।অতি আনন্দ নাকি জীবনে দুঃখ বয়ে আনে।পূর্ণতা আচমকা ই ভয়ে প্রভাতের হাত শক্ত করে চেপে ধরল।ভয়ার্ত দুটো অসহায় চোখ নিয়ে প্রভাতের দিকে তাকালো।
প্রভাত সেই চোখে চোখ রাখল।এর মানে আমি আছিতো।ভ’য় কীসের? পূর্ণতা ও খুব সহযে প্রভাতের চোখের ভাষা বুঝতে পারল।পূর্ণতা মায়াভরা দৃষ্টি নিয়ে প্রভাতে দিকে তাকিয়ে বলল,

‘ আমার খুব ভ’য় করছে চৌধুরী সাহেব।’
প্রভাত একটুও অবাক না হয়ে জিজ্ঞেস করল,
‘ কেন?’

‘এইযে এত সুখ সুখ অনুভব হচ্ছে।পৃথিবী সুন্দর লাগছে।চারদিক সুন্দর দেখাচ্ছে।বেঁচে থাকার প্রবল ইচ্ছা জেগে উঠেছে।এসব ই আমার ভয়ের কারণ। আমার কপালে কি এত সুখ সইবে? বেশী হাসলে নাকি দুঃখ আসে কপালে।’

প্রভাত পূর্ণতার কাধের উপর দিয়ে হাত রাখল।পূর্ণতাকে নিজের সাথে মিশিয়ে ধরে বলল,
‘ ভ’য় পেওনা, আমি আছিতো।তোমার সব দুঃখ আমি নিংড়ে নিবো।’
‘আমার সব দুঃখ নিংড়ে আপনার সুখ আমাকে দিতে হবেনা।আমি কি অত স্বার্থপর।আমি পৃথিবীর সব দুঃখ মেনে নিয়েও আপনাকে ভালবাসতে চাই চৌধুরী সাহেব।’
‘এভাবে বলোনা।ঘুম হারাম হয়ে যাবে।এত ভালবাসার কথা শুনে এমনিই চুমু চুমু পাচ্ছে আমার।চলো রুমে।’

পূর্ণতা লজ্জা পেয়ে বলল,
‘আপনি আর ভাল হলেন না।’
‘আমি ভাল হয়ে গেলে কোনদিন আর সন্তানের মা ডাক শুনতে পাবানা বুঝেছো আমাকে ভাল হতে বলোনা।উল্টো লস তোমার ই।’

‘ আবার পঁচা কথা বলতেছেন।’
‘ কেন তোমার ভাল লাগছে না শুনতে।’
পূর্ণতা কিছু বলতে যাবে তখন ই প্রভাত বলে উঠল,
‘ আমি জানি রোমান্টিক কথা সবার ই ভাল লাগে।তাই উত্তর না দিলেও চলবে।’
পূর্ণতা লজ্জা পেল।অন্য দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ আপনাকে কিছু বলা যায়না।শুধু ওইদিকে চলে যান।’
‘ আমিতো তোমার দিকেই যেতে চাচ্ছি।তুমি আপত্তি করো শুধু।’
‘ আপনার সাথে কথায় পারব না।’

কিছুক্ষণ নিরবতা।দু’জনে হেঁটে চলেছে।পূর্ণতা কয়েক সেকেন্ডের জন্য প্রভাতের দিকে তাকালো।সে স্মিথ হেসে প্রশ্ন করল,
‘আচ্ছা হঠাৎ আপনি এত সুন্দর হয়ে গেলেন কীভাবে?আগে তো এত সুন্দর ছিলেন না।আগে তো এত সুন্দর দেখাতো না।’

‘কারণ এখন ভালবাসো আমাকে।ভালবাসার নজরে দেখো তাই সুন্দর লাগে।ভালবাসার নজর এমন নজর, যেখানে কালো রং ও উজ্জ্বল লাগে।’
এমন সময়ে দু’টো মেয়ে প্রভাতের দিকে তাকিয়ে রইলো।অবশ্য প্রভাত তা খেয়াল করেনি।কিন্তু পূর্ণতা ঠিক ই খেয়াল করেছে।সে আচমকাই প্রভাত কে প্রশ্ন করল,

‘ মেয়ে দু’টো কি পরিচিত?’
প্রভাত আকাশ থেকে পড়ার ন্যায় অবস্থা। সে ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করল,
‘কোন মেয়ে?’
ওইযে আমাদের পেছনে পেছনে আসছে।’
‘আমিতো খেয়াল করিনি।’
‘দেখুন এই সাইডের মেয়ে গুলাও আপনার দিকে তাকাচ্ছে।

‘আমিতো তাকাচ্ছি না।’
‘ কিন্তু ওরাতো তাকাচ্ছে।আমার রাগ হচ্ছে।মন খারাপ হচ্ছে।’
‘ ওয়েট ওদের বকা দিয়ে আসি।এত বড় সাহস পূর্ণতার স্বামীর দিকে তাকাচ্ছে।’
‘ না থাক।’
এর মাঝে প্রভাতের ফোন বেজে উঠল।
পূর্ণতা সন্দিহান চোখে তাকিয়ে বলল,
‘কে ফোন দিচ্ছে?’
প্রভাত ফোন কেটে পকেটে রেখে বলল,

‘কেউ না।’
‘বারবার ফোন দিচ্ছে তো।’
‘দিলে দিক,আমার কাছে অতটা গুরুত্বপূর্ণ নয়।’
প্রভাতের ফোন আবার বেজে উঠল।পূর্ণতা এইবার প্রভাতের থেকে ফোনটা ছিনিয়ে নিয়ে দেখল, অজান্তার ফোন।’

পূর্ণতা অজান্তার নাম্বার দেখে ফোনটা প্রভাতের হাতে দিয়ে হাঁটা শুরু করল।
প্রভাত বলল, ‘ শালার রোমান্স এর ষষ্টি মেরে দিলো।আজই ফুলসজ্জা আমাদের।আজই বউ রাগ করল।’
প্রভাত কাকে যেন ফোন দিয়ে বলল,
‘ ভাই ঘরটা সাজাতে যেন কার্পণ্যতা করবেন না।টাকা যা লাগে নিয়েন।’

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ৩৮

জাহানের শরীর খারাপ বেড়েছে।সে কথা কেউ জানেনা।জাহান কাউকে জানায় নি।এখন তার মনে বচ্ছে মেয়েটা পাশে থাকলেই ভাল হত।পূজা ফোন চাপতে চাপতে জাহানের ঘর ছেড়ে বের হল।এ বাড়ির বাগানেই কৃষ্ণ এসে অপেক্ষা করছে।পূজা গুন গুন গান গাইতদ গাইতে এগিয়ে যাচ্ছে।আর এমন সময় -ই গহীন বাগানে ওয়াজেদের সাথে দেখা।

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ৪০