আকাশে তারার মেলা পর্ব ২৩+২৪

আকাশে তারার মেলা পর্ব ২৩+২৪
আসরিফা সুলতানা জেবা

গায়ে হলুদ জামদানি শাড়ি জড়িয়ে আমরিন চুলে বেনুনি করে একটা সাদা গোলাপ গেঁথে নিল। নিজেকে আয়নায় ভালো করে অবলোকন করে ঘুরে দাঁড়াতেই ঠাস করে ভারি খেল কারো বুকে। ব্যাথায় টনটনিয়ে উঠল নাক টা। রাগ নিয়ে নাকে হাত ঘষতে ঘষতে চোখ উপরে তুলতেই নিবিড়ের অগ্নি দৃষ্টি দেখে চুপসে গেল। নিচু স্বরে জিজ্ঞেস করল,
–” কি হলো এভাবে রেগে আছো কেন? সাদা পাঞ্জাবির সাথে রাগ মানানসই নয়।”
কথাটা বলে হালকা হাসল। নিবিড় ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে চশমাটা নিয়ে আমরিনের চোখে পড়িয়ে দিল। তাজ্জব বনে গেল আমরিন। বিস্ফোরিত গলায় বলে উঠল-

–” আজ আমি চশমা পড়ব না নিবিড়। শাড়ির সাথে চশমা ভালো লাগবে না।”
–” চশমা না পড়লে চোখ খুলে সাজিয়ে রাখব।”–দাঁতে দাঁত চেপে বলল আদ্র।
–” আমি জানতাম ডাক্তার গুলো এত ভয়ানক হয়। যেদিন আমি ডাক্তার হব না দেখবেন সেদিন আপনার হৃদপিণ্ড টাই খুলে নিয়ে আসব।”
আমরিনের মুখে এরকম অদ্ভুত কথা শুনে ফিক করে হেসে দিল নিবিড়। হাসি দেখে গা জ্বলে উঠল আমিনের। ভ্রু কুঁচকাল নিবিড়ের দিকে চেয়ে। কোমর জরিয়ে আমরিন কে কাছে এনে নিবিড় হাসি টা বজায় রেখেই বলল,,
–” তুমি কবে থেকে তুলি ভাবীর মত অদ্ভুত কথা বলা শুরু করলে বউ? হৃদপিণ্ড খুলে নিতে হবে না। আমার হৃদপিণ্ড জুড়ে তো তোমারই দখল।”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

নিবিড়ের মুখের কথা শুনে সবটুকু রাগ উবে গেল আমরিনের। ঠোঁট দুটো প্রসারিত করে বলে উঠল-
–” তুলির বেস্ট ফ্রেন্ড যখন হয়েছি একটু আধটু বলতেই পারি। এখন কি আমাকে ছাড়বেন? হলুদের ফাংশন শুরু হয়ে যাবে। তুলি কে বসিয়ে এসেছি রুমে। ওকে নিয়ে নিচে যেতে হবে তো।”
–” উম! যেতে দিতে পারি তবে একটা শর্ত আছে।”
–” কি শর্ত? ”
–” আজ কিন্তু আমার সাথে ডান্স করতে হবে।”
–” আমার বয়েই গেছে।”
–” গেছে তো। নাহলে সবার সামনে কোলে তুলে নিব।”
–” ভয় পায় না কিছু আমরিন। ”

কথাটা বলেই আমরিন নিজেকে নিবিড়ের কাছ থেকে ছুটাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। নিবিড় হাতের বাধন টা শক্ত করে আমরিন কে নিজের সাথে মিশিয়ে নিল। দুষ্ট হেসে বলল,,,
–” অন্তু টা বাবা হবে দেখে যেই ভাব দেখাচ্ছে আমার তো গা পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে। তা আমরিন আমরা বাবা -মা হলে কেমন হয়?”
চোখ বড়বড় করে তাকাল আমরিন। সাবলীল কন্ঠে জবাব দিল,,
–” আজকাল নিবিড় নামক পাগল ঘুরে বেড়াচ্ছে সারাঘরময়।”
আমরিনের মুখে এমন জবাব শুনে তীক্ষ্ণ নজরে চাইল নিবিড়। সাথে সাথেই আমরিন মুখ লুকাল নিবিড়ের বুকে। নিবিড় আমরিন কে জড়িয়ে নিতেই একটু হেসে বলে উঠল,,
–” বউ কে কম চোখ রাঙাবেন তাহলে ভালো বাবা হতে পারবেন। ”
আমরিনের আদুরে কথাটা কর্ণপাত হতেই সূক্ষ্ম হাসল নিবিড়। এই মেয়েটার জন্য সত্যিই সে পাগলামি করে আজকাল। শান্তশিষ্ট মনটাও অস্থির হয়ে পড়ে তার বউটার জন্য।

আদ্র পাঞ্জাবীর হাতা গুটিয়ে নিচে নেমে আসল তাড়াতাড়ি করে। বহু কষ্টে রেডি হওয়ার সময়টুকু বের করেছে। বর হয়েও বহু কষ্টে রেডি হওয়ার সুযোগ পেয়েছে হাস্যকর হলেও তা সত্যি। রাদিফ সাহেব অসুস্থ।তাই বাবা কে কিছু করতে না দিয়ে একা হাতেই সবটুকু আয়োজন সামলিয়েছে। বন্ধুদের উপর সব ছেড়ে দেওয়া যায় না। তার উপর তুলির শখ তাদের খুব বড় অনুষ্ঠান করে বিয়ে হবে তাই কোনো ত্রুটি রাখছে না আদ্র। তুলির ছোট্ট ছোট্ট শখ গুলোও আদ্রর কাছে বিশাল যা যেভাবেই হোক পূর্ণ করা প্রয়োজন। নিচে এসে স্টেজের সাজ টার দিকে চোখ বুলাল আদ্র। পাশে এসে অন্তু,সাগর,নিবিড় দাঁড়াল। সাগর দাঁত কেলিয়ে বলল,,

–” স্টেজের সাজ তো বেশ সুন্দর হয়েছে কিন্তু তোর ছোট্ট তুলার সাজ কেমন হয়েছে তা দেখবি না?”
পাশ ফিরে সাগরের দিকে তাকাল আদ্র। সাগর হাত দিয়ে সদর দরজার দিকে তাকাতে ইশারা করল। সাথে সাথেই এক রাশ মুগ্ধতা আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে নিল আদ্র কে। বুকের বা পাশ টা প্রচন্ড জোরে কেঁপে উঠল। তুলির মুখে লাজুক হাসি। মাথার উপর উড়না ধরে রেখেছে সব মেয়েরা। তুলি চোখ নিচে রেখে দু’হাতে গোলাপী লেহেঙ্গা টা আঁকড়ে ধরে ছোট ছোট কদম ফেলে এগিয়ে আসছে। তুলির গোলাপী রাঙা ঠোটের কোণে লজ্জালু হাসি টা আদ্রের হৃদয়ের কম্পন ক্রমশই বাড়িয়ে দিচ্ছে।

এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আদ্র। তুলি নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে পারছে না। লজ্জায় মাথা তুলেও সামনের দিকে চাইতে পারছে না। না দেখে ও তুলির মন টানছে আদ্র তার দিকে অপলকভাবে চেয়ে আছে যা ভেবে লজ্জায় নত হয়ে পড়ছে। স্টেজের কাছে এসে আদ্রর দিকে না তাকিয়েই রাদিফ সাহেব ও সায়েরা বেগমের সামনে এসে থেমে গেল। সালাম করতে নিলেই থামিয়ে দিলেন রাদিফ সাহেব। তুলির মাথায় হাত রেখে হাসি মুখে বললেন,,
–” তোকে দেখে নিজেকে সুস্থ সুস্থ লাগছে মা। তোকে কতটা সুন্দর লাগছে তোর বাবা ঠিক বলে বুঝাতে পারবে না।শুধু এতটুকুই বলব যতদিন বাঁচবি তোর মুখে যেন এই হাসির রেখা টা থাকে।”

–” আপনারা পাশে থাকলে প্রতি মুহুর্তে প্রশান্তির হাসি হাসব বাবা।”–ধীর স্বরে কথাটা বলল তুলি।
রাদিফ সাহেব তুলির হাত টা ধরে আদ্রর পাশে নিয়ে দাঁড় করাল। কেঁপে উঠল তুলি। আদ্রর কাছে আসতেই বুকে উতালপাতাল ঢেউ গর্জে উঠল। ভীষণ ইচ্ছে করছে চোখ উঠিয়ে আদ্র কে এক পলক দেখতে। কিন্তু লজ্জায় অসহায় সে। রাদিফ সাহেব আদ্রর এক হাতে তুলির এক হাত রাখলেন। বাবার থেকে চোখ সরিয়ে তুলির হাতের দিকে তাকাল আদ্র। এমন তো কোনোদিন হয় নি? নিজেও তো কত আঁকড়ে ধরেছে তুলির হাত টা। আজ তো প্রথম না। তবুও কেন হাত টার স্পর্শ পেতেই হৃৎস্পন্দন সেকেন্ডের জন্য থমকে গেল? তুলির নতজানু মুখের দিকে তাকিয়ে হাত টা শক্ত করে মুঠোয় পুরে নিল আদ্র। সাথে সাথেই লাল আভায় ছেয়ে গেল তুলির দু গাল। রাদিফ সাহেব সহ সবাই হেসে উঠল। অন্তু সুযোগ পেয়ে দাঁত কেলিয়ে বলে উঠল-

–” দেখলেন আংকেল আপনি হাতে হাত দিতে না দিতেই কেমন করে মুঠোয় পুরে নিল?”
রাদিফ সাহেব হাসি বজায় রেখেই বললেন –“দেখতে হবে না ছেলে কার? আমি এটাই আশা করেছিলাম। আমি জানি আমার ছেলে এই মেয়েটাকে সবটুকু দিয়ে আগলে রাখবে।”
বাবা কে কে শক্ত করে জরিয়ে ধরল আদ্র। ধরা কন্ঠে বলে উঠল- ” সেদিনের ব্যবহারের জন্য দুঃখিত বাবা।”
সবার মুখে হাসি ফুটে উঠল এমন দৃশ্য দেখে। তুলির চোখ জুড়িয়ে গেল। রাদিফ সাহেব আদ্রর পিঠে হাত রেখে বললেন–” তুলি কে স্টেজে নিয়ে বসাও। অনেক শখ ছিল তোমার মায়ের হাত ধরে স্টেজে নিয়ে বসানোর কিন্তু তোমার নানা ভাই তা আর হতে দিলেন কই? ছেলে হয়ে তুমিই নাহয় বাবার ইচ্ছে টা পূরণ করে দাও।”

আদ্র হালকা হাসল। তুলির হাত টা ধরে নিয়ে স্টেজে পাতানো সোফায় বসিয়ে দিল। একটু ঝুঁকে মৃদুস্বরে বলল,,
—” আজ আবারও হৃদয় কাঁপানোর জন্য দায়ী হলে তুলা। এখন তো তোমায় লাল বেনারসি তে দেখার অপেক্ষা টুকু ও করতে পারছি না।”
মাথা তুলে আদ্রর দিকে নিষ্পলক চেয়ে রইল তুলি।আদ্রর ঘোর লাগানো স্বর তার মনের গহীনে ঝড় তুললেও চোখ দুটো আদ্র তে স্থির। নীল পাঞ্জাবী, ফর্সা চেহারা, নীল বর্ণের দু’টো নয়ন, ঠোঁটে তৃপ্তির হাসি দেখে তুলি অভিভূত, স্তব্ধ। ভুলে গেছে দিক বিদিক। চক্ষুদ্বয় আঁটকে গেছে আদ্র তে। হাতে হিম শীতল স্পর্শ অনুভব করতেই ঘোর থেকে বেরিয়ে এল।

চেয়ে দেখল হাতে হলুদ লেগে আছে। আদ্রর হাতে ও হলুদ। কিছু বলার আগেই গালে হাত ছোঁয়াল আদ্র। হৈ হুল্লোড় শব্দ ভেসে এল চারদিক থেকে। অতিশয় জড়তায় ঠোঁটে ঠোঁট চেপে নত হয়ে গেল তুলি। আদ্র মুচকি হেসে স্টেজ থেকে নেমে এল। মেয়েটার লজ্জা রাঙা মুখ তার দুর্বলতা। তাই দূর থেকেই চোখ জুড়িয়ে নিবে। একে একে সবাই হলুদ লাগাল তুলি কে। হলুদ ছোঁয়ানো শেষ হতেই তুলি কে স্টেজ থেকে উঠিয়ে রুমে নিয়ে এল রিমি,পায়েল। ঝটপট সবুজ রঙের জামদানি পড়িয়ে রেডি করিয়ে বাহিরে নিয়ে আসল।

এখন মেহেদী অনুষ্ঠান হবে সাথে নাচ গান। তুলির হাতে দু’জন মেয়ে মেহেদী লাগিয়ে দিচ্ছে। পায়েল পাশে বসে দেখছে। বেচারি এতোক্ষণ অনেক চিন্তায় ছিল অন্তুর লুঙ্গি ডান্সের সময়। চিন্তায় ছিল যদি লুঙ্গি খুলে যায়। অবশেষে চিন্তা মুক্ত হল। নিবিড়-আমরিন, ইনশিতা -রনক,সাগর-রিমি সবাই কাপল ডান্স করেছে। তুলি সবার নাচ দেখে মুগ্ধ। সবকিছু স্বপ্ন স্বপ্ন লাগছে তুলির কাছে। আজ রাত টা কেটে গেলেই সারাজীবনের জন্য আদ্রর অর্ধাঙ্গিনী হয়ে যাবে। মনে অর্ধাঙ্গিনী শব্দটা উদয় হতেই শীতল স্রোত বয়ে গেল তুলির হৃদয় জুড়ে। তার ডাক্তার সাহেব রাত টা পেরুলেই তার স্বামী হবে।

সামিরা হাতে এক গ্লাস জুস নিয়ে হাজির হল তুলির সামনে। সাদা ও লাল মিশ্রিত শাড়িতে অসম্ভব সুন্দর লাগছে সামিরা কে। তুলি ঠোঁট উল্টে বলল,,
–” খাবো কিভাবে আপু?”
সামিরা হেসে বলল,,–” আমি খাইয়ে দিচ্ছি। ”
–“ধন্যবাদ আপু।”
সামিরা গ্লাস টা তুলির মুখের কাছে নিতেই এক ঢোক খেল তুলি। চোখ গেল দূরে দাড়িয়ে কালকের আয়োজনের জন্য বাবুর্চির সাথে কথা বলা আদ্রর দিকে। তুলি মোলায়েম কন্ঠে বলল,, –” আপু ওনার জন্য কাউকে দিয়ে এক গ্লাস জুস পাঠাবে?”

তুলির কথা শুনে হেসে দিল সবাই। রসাত্মক কন্ঠে বলে উঠল- “বাহ! বরের জন্য কত টেনশন।” সাথে সাথেই তুলির চঞ্চল মন লাজ লজ্জা ভুলে জবাব দিল –” উঁহু! চিন্তা না বরং ওনি যেমন করে আমার খেয়াল রাখে তেমন করে ওনার খেয়াল রাখাও আমার দায়িত্ব। ” কথাটা বলেই নিজেও লজ্জায় ডুবে গেল তুলি। সামিরা সায় জানিয়ে উঠে এল। একজন ওয়েটার কে ডেকে এক গ্লাস মালটার জুস ধরিয়ে দিয়ে বলল যেকোনো মূল্যে যেন জুস টা আদ্রর হাতেই পৌঁছায়। হাতে পাঁচশ টাকার একটা নোট ও গুঁজে দিল।

বাঁকা হাসি ঝুলিয়ে পা বাড়াল স্টেজের দিকে। ওয়েটার টা গিয়ে আদ্রর হাতে জুস দিয়ে বলল–” তুলি ম্যাম আপনাকে দিতে বলেছে স্যার। আর বলেছেন মেহেদী শেষে দেখা করতে।” সন্দেহ দৃষ্টি নিক্ষেপ করল আদ্র। তুলির দিকে চাইতেই তুলি চোখের ইশারায় খেতে বলল। নিমিষেই সকল সন্দেহ দূর করে জুস টা খেয়ে নিল আদ্র। তুলি হালকা হাসল। মেহেদী দেওয়া শেষ হয়ে গেছে সেই কখন। পা দুটো ঝিম ধরে গেছে বসে থাকতে থাকতে। মাথাটাও ব্যাথা করছে ভীষণ। তাই আমরিন রুমে দিয়ে গেল।

মেহেদী গুলোও হালকা শুকিয়ে এসেছে। আচ্ছা আদ্র কি আমার মেহেদী রাঙা হাত দেখবে না? আনমনে কথাটা বলে স্মিত হাসল তুলি। ড্রেসিং টেবিলের উপর থাকা ফোন টা বেজে উঠল আওয়াজ তুলে।ঘড়ির দিকে তাকাতেই দেখল রাত ১টা বাজে। এমন সময় কে ফোন দিল? ফোনটা রিসিভ করতেই একটা মেয়েলি স্বর ভেসে আসল কানে। তীব্র কাশির চোটে কিছু বলতে পারছে না তুলি। ফোনটা টেবিলে রেখে হাত মুখ ধুয়ে আসল। গলাটা জ্বলে যাচ্ছে। পানি খেয়ে মোবাইল নিয়ে রুমের বাহিরে সিঁড়ির কাছে এসে নাম্বার টায় ডায়েল করল। নাম্বার টা থেকে অনেকগুলো কল এসেছে। রিসিভ হতেই ওপাশ থেকে কিছু কথা ভেসে এল। তুলির চোখে মুখে চিন্তার রেখা দৃশ্যমান হল । বেমালুম ভুলেই গেছিল সে বিষয় টা। নিচু স্বরে বলল –” আসলে আমার খেয়াল ছিল না। এই নাম্বারে আমার হোয়াটস অ্যাপ আছে পিক তুলে পাঠিয়ে দিবেন প্লিজ। সমস্যা কি? ”

ওপাশ থেকে মেয়েটা বলে উঠল- “ম্যাম আপনার,,
মেয়েটাকে আর কিছু বলার সুযোগ দিল না তুলি। কিছু একটা চোখে পড়তেই বুক টা ধুক করে উঠল তার। ফোন টা কেটে দিয়ে তড়িঘড়ি করে এগিয়ে গেল সিঁড়ির দিকে। সামিরার কাঁধে আদ্রর এক হাত দেখে কষ্টে বুক ফেটে যাচ্ছে তার। মনে হচ্ছে কেউ হৃদপিণ্ড বরাবর ছুরি বসিয়ে দিয়েছে।তুলি কে দেখে সামিরা ঢোক গিলল। সামিরার দিকে দৃষ্টি না দিয়ে আদ্রর দিকে পানি ভর্তি চোখ নিবদ্ধ করল তুলি। স্বাভাবিক লাগছে না আদ্র কে। কেমন অগোছালো লাগছে। আদ্র তো কখনও এমন করে না। এমন ঢুলছে কেন? তুলি সামিরার কাছ থেকে এক প্রকার ছিনিয়ে নিল আদ্র কে। নিজের কাঁধে আদ্রর হাত টা রেখে বলল–” কি হয়েছে সামিরা আপু? ওনি এমন করছেন কেন?”

–“হয়তো আদ্র ড্রিংকস করেছে তুলি। ড্রইং রুমে এসে বেসামাল ভাবে হাঁটতে গিয়ে পড়ে যাচ্ছিল তাই আমি ভাবলাম রুমে দিয়ে আসি। সবাই তো বাহিরে।–অকপটে বলল সামিরা।
আদ্র ড্রিংকস করেছে তা কোনোমতেই বিশ্বাস করতে পারছে না তুলি কিন্তু আদ্রর অবস্থা তাই প্রমাণ করছে। হয়তো নিজের ইচ্ছে তে করে নি। তুলি মলিন কন্ঠে বলে সামিরা কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠল-
–“তুমি যাও আপু। আমি ওনাকে রুমে নিয়ে যাচ্ছি।”
–“কিন্তু,,!”
–” আপু আমি পারব।”

কথাটা বলেই আদ্র কে নিয়ে রুমের দিকে পা বাড়াল তুলি। সামিরা হাত মুঠো করে আক্রোশে ফেটে পড়ল। নিজেকে আজ ব্যর্থ মনে হচ্ছে তার। রুমে এনে আদ্র কে বিছানায় বসিয়ে দিল তুলি। আদ্রর মাথা টা ব্যাথায় ছিড়ে যাচ্ছে। নেশার ঘোরে মন অবাধ্য হয়ে পড়ছে। আদ্র কে বিচলিত হতে দেখে তুলি টেবিলের উপর রাখা পানির গ্লাস টা নেওয়ার জন্য উঠে আসল। ঘাড়ে গরম নিশ্বাসের উত্তাপ পেতেই গ্লাস টা হাত ফস্কে পড়ে গেল ফ্লোরে। থরথর করে কাঁপতে লাগল অনবরত।

তড়িৎ গতিতে ঘোরে দাঁড়াতেই চোখ আটকাল আদ্রর নেশাময় চাহনিতে। মনটা কেঁপে উঠল অজানা আশঙ্কায়। আদ্র যে নেশার ঘোরে নিজেকে সামলাতে ব্যর্থ তা নির্দ্বিধায় বুঝতে পারছে। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে কিছু বলতে নিলে ঠোঁটে আঙুল চেপে হুঁশ শব্দ করল আদ্র। কিছুটা নুয়ে পড়তেই এক কদম পিছিয়ে গেল তুলি। আদ্র হাত টা চেপে ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসল। বিস্ময়ে দু চোখ বুঁজে এল তুলির।তৎক্ষনাৎ চোখের কার্ণিশ বেয়ে গড়িয়ে পড়ল চোখ ভর্তি অশ্রু গুলো।

রাতের আঁধার কাটিয়ে পৃথিবীর বুকে নেমে এসেছে এক স্নিগ্ধময় সকাল। সূর্যের আলোর পাশাপাশি রুমে ধেয়ে আসছে শীতল বাতাস। চার দেয়ালের প্রতিটি কোণায় কোণায় বাতাসের বিচরণ। হাওয়ার তালে কিছু টা নড়ছে আদ্রর কপালে পড়ে থাকা ছোট ছোট চুল গুলো। লোক মুখের কথা ডাক্তারি পড়তে পড়তে মাথার অর্ধেক চুল খোয়াতে হয়। অথচ আদ্র নামক সুদর্শন যুবকের মাথায় চুলের ও কমতি নেই। মানুষ টা পারফেক্ট সব দিক দিয়ে পারফেক্ট। এটা একটা ভুল!

নিতান্তই ভুল বাক্য। পৃথিবীতে সবাই পারফেক্ট হয় না। কোনো না কোনো দিক দিয়ে ত্রুটি,শূণ্যতা থেকেই যায়। যেমন আদ্রর ও আছে। দেখতে সুদর্শন হলেও তার রয়েছে চরম দুর্বলতা। তার দুর্বলতা একটা মেয়েকেই কেন্দ্র করে । আটাশ বছরের এই সুদর্শন যুবকের দুর্বলতা আঠারো বছরের তুলি কে ঘিরে। হঠাৎ একটা দমকা হাওয়ায় রুমের সাদা পর্দা গুলো এলোমেলো ভাবে উড়তে লাগল। নিমিষেই সূর্যের কিরণ বিলুপ্ত হয়ে রুম টা হিম ঠান্ডায় পরিণত হল। এক নজরে আদ্রর ঘুমন্ত চেহারায় দৃষ্টিপাত করে রেখেছিল তুলি।

বাতাস এসে জ্বালাতন করায় না চেয়ে আদ্রর সামনে থেকে উঠতে হল তার। ধীর পায়ে হেটে বেলকনির কাছে এসে কাচের দরজা টা লাগাতে নিলে বাতাসের দাপটে উড়তে লাগল খোলা হালকা ভেজা চুল ও শাড়ির আঁচল টা। আকাশের দিকে তাকাল তুলি। আকাশ জুড়ে মেঘের খেলা। হয়তো আজ বৃষ্টি হবে নয়তো আসবে কোনো প্রকান্ড ঝড়। তারই পূর্বাবাস দিয়ে যাচ্ছে কালো মেঘ ও এই দমকা হাওয়া। দরজার কাছে দাড়িয়ে চোখ বুঁজে নিল তুলি। বাতাস এসে চোখে মুখে দোলা দিয়ে যেতেই ঠোটের কোণে ফুটে উঠল মৃদু হাসির ঝলক। মনের কোণে ভেসে উঠল কিছু মুহুর্ত। আশ্চর্য! তুলির মন বিষাদে ছেয়ে যাচ্ছে না। কোনো তিক্ততা ও তাকে গ্রাস করতে পারছে না। বিষাক্ত অনুভূতি হৃদয়পটে জমাট হতে অক্ষম। তুলির কাছে সবকিছুই নিছক সত্য একটাই আদ্রর ভালোবাসা। তুলির ঠোঁট দুটো আলগা হয়ে এল। মিন মিন স্বরে উচ্চারিত হল,,

” একটা আহত মন,ক্ষত-বিক্ষত হৃদয় নিয়ে কোনো এক বসন্তে আপনার দুয়ারে এসে দাঁড়িয়েছিলাম। অথচ!অথচ আপনি বদলে দিয়েছেন সময়।ভালোবাসা দিয়ে সুস্থ করে তুলেছেন আমায়। আমার হৃদপিন্ডের প্রতিটি অংশে ছড়িয়ে দিয়েছেন অনুরাগের অনল। ”
কাচ লাগিয়ে তুলি আদ্রর সামনে এসে বসল। আদ্র গভীর ঘুমে মগ্ন। সারারাত নেশার ঘোরে থেকে এখন ঘুমানো টাই স্বাভাবিক। কিন্তু যখন ঘুম টা ভাঙবে তখন কি মনে পড়বে আদ্রর সবকিছু? স্মৃতির পাতায় কি সজীব থাকবে কিছু সময়? নিঃশব্দহীন একটা নিঃশ্বাস ফেলল তুলি। ঠোঁটে প্রস্ফুটিত হাসি নিয়ে হাত বাড়িয়ে আদ্রর কপালের চুল গুলো সরিয়ে দিল।

একটু নিচু হয়ে কপালে নিজের অধর ছোঁয়াল গভীরভাবে। চোখে জড়ো হল জল। আর মাত্র কিছু সময় পর সারাজীবনের জন্য দু’জন বিয়ের পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হবে। ঘুচে যাবে সাময়িক দূরত্ব। মাথা উঠিয়ে ঘড়ির দিকে তাকাল তুলি। সাতটা বেজে গেছে। সবাই হয়তো ঘুম থেকে উঠে গেছে বিয়ে বাড়ি বলে কথা। অবশ্য তুলি ফজরের সময় নিজের ঘরে গিয়েছিল একবার সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে। এখন না গেলে পরিস্থিতি বিগড়ে যাবে তাই উঠে দাঁড়াল। দরজার কাছে গিয়েও আরেকবার ফিরে তাকাল আদ্রর মুখের দিকে।

অজানা কারণেই বুকটা হাহাকার করছে। তুলির ইচ্ছে করছে না তার ডাক্তার সাহেবের কাছ থেকে একটুও দূরে যেতে। তবে যেতে তো হবেই। “কিছু সময় পরই তো বিয়ে তারপর আমাদের জীবনের নতুন সূচনা ঘটবে।” কথাটা বিড়বিড় করে বলেই হালকা হেসে বেরিয়ে এল তুলি। চারদিকে নজর দিতেই দেখল দু তলায় কেউ নেই সবাই নিচে। হাফ ছেড়ে দরজা টা চাপিয়ে দ্রুত গতিতে পা ফেলে রুমে চলে আসল।

ঘুম থেকে ধরফরিয়ে উঠল আদ্র কিছু শোরগোলের আওয়াজে। কোনোদিকে না চেয়েই মাথা টা চেপে ধরে বসে পড়ল। প্রচন্ড ভার হয়ে আছে মাথা টা সেই সাথে তীব্র ব্যাথা। এমন তো কখনও হয় নি তার।কানে আবারও আওয়াজ এসে ভিড়তে মাথা তুলে চাইল চারপাশে। সাগর,অন্তু,নিবিড় ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে। চরম বিরক্তি নিয়ে আদ্র বলে উঠল-
-“সমস্যা কি তোদের? সকাল সকাল এভাবে পাগলের মতো চেয়ে আছিস কেন?”

–” বর সাহেব ঘড়িতে তাকালেই দেখতে পাবেন নয়টা বাজে। এখনও সক্কাল সক্কাল রয়ে যায় নি।” —কথাটা বলেই নিবিড়, সাগর,অন্তু হু হু করে হেসে উঠল। নিবিড় একটা বালিশ নিয়ে পাশে শুয়ে রসাত্মক কন্ঠে বলে উঠল-
–” তুই তো এতো বেলা পর্যন্ত ঘুমাস না। ব্যাপার কি! আজকের কাজ গতকাল শেষ? ”
নিবিড়ের মজার ছলে বলা রসাত্মক বাক্য টা শুনে বুক টা ধুক করে উঠল আদ্রর। বাকি সবাই আরেক দফা হাসতে শুরু করল। আদ্র কপাট রাগ দেখিয়ে বলল–

–‘ আমি তোর বউয়ের বড় ভাই হই ভুলে যাস না।”
–” তার আগে তুই আমার বন্ধু। আর বন্ধুর সাথে কথা বলতে সীমার প্রয়োজন নেই। ”
–” হু। এখন তোরা তিনটা বের হ আমার রুম থেকে। যার যে বউয়ের কাছে যা আর আমাকেও ফ্রেশ হয়ে আমার বউয়ের কাছে যেতে দে।”
আদ্রর কথা শুনে চোখ ছোট ছোট করে চাইল তিনজন।সাগর কপালে ভাজ ফেলে বলল–
” একটু পরেই তো বিয়ে ভাই। এখনই যেতে হবে তোর?”
–” যেতে হবে। যদি মাইর না খেতে চাস ফুট এখান থেকে।”

মাইর খাওয়ার কথা শুনেই উঠে দাঁড়াল অন্তু। যেতে যেতে বলল–” পায়েল বোধহয় আমাকে ডাকছে। বেবীর সেবা করতে হবে তো।” সাগর ও নিবিড় একসাথে বলে উঠল- “পায়েল বাঘিনী অথচ তার বর ভেজা বেড়াল। ” দুজনে না পেরে চলে গেল রুম থেকে। ওরা যেতেই আদ্র বিছানা থেকে উঠে দরজা টা ঠাস করে লাগিয়ে দিল। ওয়াশরুমে এসে চোখে মুখে পানি দিয়ে কাল রাতের কথা মনে করার চেষ্টা করল। আদ্রর স্পষ্ট মনে আছে জুস খেয়েছিল সে। খাওয়ার কিছু সময় বাদে তুলির সাথে দেখা করার জন্য বাড়ির ভিতরে এসেছিল। সামিরার উপস্থিতি ও ঝাপসা হয়ে স্মৃতির পাতায় বিচরণ করছে। মাথার চুল টেনে মনে করার চেষ্টায় লেগে পড়ল আদ্র।

তার মন টানছে অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটেছে গত রাতে। বহু চেষ্টার পর মনের আরশিতে ভেসে উঠল তুলির চোখ বুজে থাকা শ্যামলা মুখশ্রী টা। থমকে গেল আদ্র। গলা শুকিয়ে এল তার। হৃদয় নিংড়ানো ভয় চেপে ধরল আষ্টেপৃষ্টে। আয়নায় চোখ যেতেই মনের আশঙ্কা টা পরিণত হল যন্ত্রণায়। তাড়াতাড়ি করে ফ্রেশ হয়ে বেলকনিতে এসে এক লাফে তুলির বারান্দায় উপস্থিত হল। পায়ের গতি বাড়িয়ে রুমে আসতেই চোখে পড়ল আয়নার সামনে কলা পাতা রঙের শাড়ি পড়ে দাঁড়িয়ে থাকা তুলির দিকে। তড়িৎ বেগে তুলি কে ঘুরিয়ে নিজের সাথে চেপে ধরল আদ্র। কাতর স্বরে এক নিশ্বাসে বলল,,,

–” আমার মনে হচ্ছে আমি অপরাধ করে ফেলেছি তুলা। সত্যিই কি তাই? ”
আদ্রর প্রশ্ন শুনে কেঁপে উঠল তুলির মনটা। হৃদয়ের উঠানামা হতে লাগল দ্রুত গতিতে। আদ্র অধীর আগ্রহ নিয়ে করুন চাহনি নিক্ষেপ করে রেখেছে উত্তরের আশায়। পারবে না তুলি জবাব দিতে। আজ যেন তুলি কিছু বলার ভাষা ও হারিয়ে ফেলেছে। তুলি কে নিশ্চুপ দেখে আদ্র ধরা গলায় বলল,,

–” নীরবতা কি সত্যের প্রমাণ দিচ্ছে?”
–” আপনি কখনও অপরাধ করতে পারেন না আদ্র।”– কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে উঠল তুলি। আদ্রর ভয় হচ্ছে। তুলির ছোট্ট মনের ভাবনা সে আজ কোনোভাবেই বুঝতে পারছে না। বুকের অসহনীয় পীড়ন নিয়ে অসহায় কন্ঠে বলে উঠল-
–” তুমি আমার কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে নাতো তুলি? আমার মনে হচ্ছে আমাদের মাঝে,,,।”
আর কিছু বলতে পারছে না আদ্র। তুলির গালে হাত রেখে বলল–” জুস টা তুমি পাঠিয়েছিলে?”

আদ্রর এহেন প্রশ্নে কিছুটা বিস্মিত হল তুলি। সাবলীলভাবে জবাব দিল –” আমি সামিরা আপু কে বলেছিলাম ওনি পাঠিয়েছেন। ”
ব্যাস যা বুঝার বুঝে গেল আদ্র। সামিরার উদ্দেশ্য বেশ ঠাওর হয়েছে তার। ছলছল চোখে তাকিয়ে থাকা তুলির দিকে তাকাতেই আদ্রর অন্তর আত্মা কেঁপে উঠল। মেয়েটার চোখে মুখে লজ্জার ছাপ নেই আজ যা আদ্র কে পোড়াচ্ছে ভীষণভাবে। তুলির ললাটে ঠোঁটের স্পর্শ দিয়ে কপালে কপাল ঠেকাল আদ্র। করুন স্বরে বলে উঠল-
” যদি কিছু হয়েও থাকে তবে মুহুর্ত গুলো অবৈধ ছিল না তুলা। আমি অপেক্ষা করব। অপেক্ষা করব আরো একটা বার তোমাকে আপন করে নেওয়ার।”

তুলির মেহেদী রাঙা দু হাতে চুমু একে আস্তে আস্তে দু হাত ছেড়ে দিতে লাগল আদ্র। এক পলকে হাতের দিকে তাকিয়ে রইল তুলি। মনটা আনচান করছে আজ।বড্ড কু ডাকছে। ইচ্ছে করছে আদ্রর হাত টা দু হাতে শক্ত করে আকড়ে ধরতে। ধীরে ধীরে চলে গেল আদ্র। দরজার কড়া নাড়ার শব্দে ঘোরের সমাপ্তি ঘটল তুলির। খুলে দিতেই আমরিন, ইনশিতা,পায়েল, রিমি, ঝুমু কে দেখে মৃদু হাসল। আমরিনের হাতে বিয়ের বেনারসি। ঝুমুর হাতে নাস্তার প্লেট। নিঃশব্দে খাটে এসে বসল তুলি। ঝুমু তুলির দিকে তাকিয়ে বলল —
“বাহ! গোসল করে নিয়েছ। বেশ ভালো হয়েছে। নাস্তা করতে তো নিচে যাও নি। এখন ঝটপট খেয়ে নাও। অলরেডি দশটা বেজে গেছে। সাজানো এখন থেকেই শুরু করে দিতে হবে। নামাজের পরেই তো বিয়ের কার্য সম্পন্ন করা হবে।”

তুলি সায় জানিয়ে খেয়ে নিল। আমরিন তুলির চুল গুলো ড্রায়ার দিয়ে শুকিয়ে দিল। একটু পর পার্লারের মেয়েরা চলে আসবে। পায়েল,রিমি সবার সাথে টুকটাক কথা বলতেই কেটে গেল কিছু সময়। সায়েরা বেগম পার্লারের মেয়ে গুলো কে রুমে নিয়ে এসে বাকি সবাই কে তাড়া দিল রেডি হওয়ার জন্য। যাওয়ার আগে তুলির থুতুনিতে হাত রেখে মেয়ে দুটোর উদ্দেশ্যে বলে গেলেন –” আমার মা টা কে এতো সুন্দর করে সাজাবে যেন আমার ছেলে চোখের পলক ফেলতেই ভুলে যায়।” হবু শাশুড়ির মুখে এমন কথা শুনে লজ্জায় কাটা দিয়ে উঠল তুলির সারা শরীর। মাথা নত রেখেই লাজুক হাসি হাসল। সবাই চলে গেল রুম থেকে। মেয়ে গুলো কে বসিয়ে ওয়াশরুমে এসে মুখ ধুয়ে নিল তুলি। আদ্র কে অনুশোচনায় ভুগতে দিবে না সে। বিয়ে টা হয়ে গেলেই বলে দিবে সব।

লাল বেনারসি টা পড়িয়ে তুলি কে সাজিয়ে দিয়ে বের হয়ে গেল মেয়ে দু’টো। নিজেকে আয়নায় দেখে অভিভূত তুলি। লাল বেনারসি তো আগেও গায়ে জড়িয়েছে এতটা মন তো কাড়ে নি তার তবে আজ কেন নিজেকে নিজের কাছেই ভালো লাগছে তুলির?বেনারসি টা আদ্রের পছন্দের বলেই কি এমন? শ্বাস প্রশ্বাস ভারি হয়ে আসছে তুলির। কখন আদ্র কে দেখাবে নিজের এই রূপ টা? আদ্র কে অপেক্ষা করাতে খুব খারাপ লাগছে তার। সে যে নিজেও ভীষণ অস্থির এক পলক তার ডাক্তার সাহেব কে সাদা শেরওয়ানিতে দেখার।আলতো হেসে চোখ বন্ধ করতেই কারো প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠল মনের আঙিনায়। খুশিতে আত্মহারা হয়ে উঠল তুলি। শাড়িটা আঁকড়ে ধরে এগিয়ে যেতেই যেন ধোঁয়াশায় হারিয়ে গেল মানুষ টা। আঁতকে উঠল তুলি। দু চোখ খুলে সামনে রাখা পানির গ্লাস টা নিয়ে ঢকঢক করে খেয়ে নিল। এটা ভ্রম ছিল! আদ্র কে নিয়ে অধিক ভাবার কারণেই হয়তো কোনো কল্পনায় হারিয়ে গিয়েছিল।

আকাশে তারার মেলা পর্ব ২১+২২

নামাজ শেষে সবাই একত্রিত হল বাগানের স্টেজ করা দিক টায়। খুব সুন্দর করে স্টেজ টা সাজানো হয়েছে। কনে ও বরের বাড়ি এক হলেও তুলির বেস্ট ফ্রেন্ড হিসেবে ভাইয়ের কাছ থেকে পইপই করে গেইটের টাকা আদায় করেছে আমরিন। স্টেজের পাতলা পর্দা দেওয়া এক পাশে আদ্র বসল। নিজের হাতের কাগজ টা এগিয়ে দিল কাজী সাহেবের দিকে। কাজী সাহেব কাগজ টার দিকে চেয়ে হালকা হাসলেন। সাদা শেরওয়ানিতে আদ্র সবার নজর কাড়তে সক্ষম। কিন্তু সে যে অপেক্ষায় আছে তার তুলা কে লাল বেনারসি তে দেখার।

ইচ্ছে তো হচ্ছে নিজে গিয়ে কোলে করে নিয়ে আসবে কিন্তু এতে তার তুলা লজ্জায় মরে যাবে। সেটা ভেবেই আদ্রর ঠোঁটের কোণে প্রস্ফুটিত মুগ্ধ হাসি ফুটল। কল্পনায় একে নিল তুলির লজ্জা রাঙা বধূ বেশী মুখটা। অবশেষে আজ দীর্ঘ অপেক্ষার সমাপ্তি ঘটতে চলেছে। আরও একবার প্রাপ্তির খাতায় নাম লিখাতে যাচ্ছে। রাদিফ সাহেব আমরিন কে আদেশ করলেন তুলি কে নিয়ে আসার জন্য। খুশিতে গদগদ হয়ে বাড়ির ভিতরে পা বাড়াল আমরিন। একবার দেখে এসেছিল তুলি কে তারপর আর যাওয়া হয় নি। শাড়ির কুঁচি গুলো ধরে তুলির রুমের সামনে এসে দাঁড়াল। দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকে পুরো স্তব্ধ হয়ে গেল,,,

আকাশে তারার মেলা পর্ব ২৫+২৬