আগুনের তৃষ্ণা পর্ব ২৩ || Maishara Jahan

আগুনের তৃষ্ণা পর্ব ২৩
Maishara Jahan

হঠাৎ করেই সায়ন আস্তে আস্তে তার চোখ খুলে, আলো কিছুটা ভয়ে তাকিয়ে আছে। সায়ন হঠাৎ করেই উঠে বসে, আলো কিছুটা চমকে যায়।
আলোর ভীত চেহেরা দেখে সায়ন হালকা হেঁসে বলে,, ভয় পেয়ো না, আমি তোমার কোনো ক্ষতি করবো না।
আলো সায়নের হাত ধরে বলে,,, আমি ভয় আমার জন্য পাচ্ছি না, আমি ভয়টা তোমার জন্য পাচ্ছি। তুমি তোমার নিজের না ক্ষতি করে ফেলো।

সায়ন আলোর দিকে তাকিয়ে, তার মাথা বেন্ডেজ করা দেখে সায়ন তার হাত সরিয়ে নিয়ে বলে,,, দূরে থাকো আমার থেকে। আমি কারো জন্য নিরাপদ না। আমি একটা ভয়ানক সাইকো।
আমি সায়নের কাঁধে হাত রেখে বলি,,, তুমি ভয়ানক হতেই পারো না। যে নিজের আগে অন্যের কথা আগে ভাবে সে ভয়ানক কিভাবে হতে পারে। আর যার মন অন্যের কষ্ট দেখে কষ্ট পায় সে তো সাইকো হতেই পারে না।
সায়ন তুচ্ছ হাসি দিয়ে বলে,,, এসব শুনতেই ভালোলাগে কিন্তু বাস্তব অনেক আলাদা।
আলো,,, বাস্তব আরো সুন্দর, বাস্তবকে সুন্দর করে দেখলেই সুন্দর লাগবে কঠিন ভাবলে কঠিন হবে।

,,,,হুমম,ঠিক আছে,আমি এখন বাসায় যাবো।
আলো একটু দ্বিধা বোধ করে বলে,,,,, সায়ন আমরা সবাই ভাবছিলাম কি যে,,
,,,কি আমাকে পাগলা গারতে পাঠিয়ে দিবে তাই তো।
,,,,,নাহহ,,তুমি কি পাগল নাকি যে তোমাকে পাগলা গারতে পাঠাবো। আর যদি হতেও তাও আমি যেতে দিতাম না।
সায়ন আমার দিকে তাকিয়ে আবার তার চোখ ফিরিয়ে নিয়ে বলে,, তাহলে?
,,,,, দেখো আমি তোমাকে। স্পষ্ট করে বলছি। তোমার সাইকোলজি-ক্যাল ট্রিটমেন্ট দরকার। এর এটা তোমাকে বাসায় রেখেও করা যেতে পারে, কিন্তু এটা মারু ভাবীর জন্য হানী কারক হতে পারে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

,,,নাহহ আমি এটা চাই না, আমার কারনে ভাবী বা তার সন্তানের কিছু হোক সেটা আমি চাই না।
,,,হুমম তাই তো তোমাকে প্রাইভেট প্লেজে রেখে চিকিৎসা করবো,আর চিন্তা করো না সেখানে আমি আমার বেশিরভাগ সময় কাটাবো। তুমি খুব তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যাবে।
,,,,কিন্তু আমি ভালো হতে চাই না। চাই না এখানে থাকতে। আমি চলে যাবো এখান থেকে, আমি আবার আমেরিকায় ফিরে যাবো। তাহলেই সব ঠিক হয়ে যাবো।
আমি মুখটা মলিন করে বললাম,,,,,,কোথাও যেতে দিবো না আপনাকে আমি। যদি ঐখানে গিয়ে আপনার কিছু হয়ে যায় তখন।
,,,হয়ে গেলে হয়ে যাবে, তাছাড়া আমার কিছু হলেই বা কার কি এসে যায়।
,,,,যায় আমার এসে যায়।

সায়ন আমার দিকে তাকায়, আমি তাড়াতাড়ি নার্ভাস হয়ে বলি,,,মানে আপনার মা বাবা, ভাই,ভাবী এদের এসে যায়। ওরা আপনাকে অনেক ভালোবাসে। অন্তত তাদের জন্য তো আপনাকে সুস্থ হওয়ার ট্রাই করা উচিত। আর আপনি যদি এক বার এটা ধরে নেন যে আপনি সুস্থ হতে চান তাহলে খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবেন।
সায়ন বেডে অন্যদিকে অন্য পাশ হয়ে শুয়ে বলে,,,,,, আমি একটু একা থাকতে চায় মিস্ আলো।
আলো সায়নকে নিজের দিকে ফিরিয়ে বলে,,,,,একা থাকতে চাইলেই হলো। আমি দিবো না আপনাকে একা থাকতে। কারন আমি আপনার বন্ধু, আর বন্ধুরা কোনো দিন একা ছাড়ে না।

সায়ন আমার কপালের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,,,কিন্তু আমি তো তোমাকে আঘাত করেছি।
আমি মুচকি হেঁসে বললাম,,,, আপনি ইচ্ছে করে তো আর আঘাত করেননি। আর ইচ্ছে করে আপনি করতেও পারবেন না। আর আপনার সামনে এই ব্যাথা কিছুই না।
সায়ন আমার দিকে তাকিয়ে বলে,,, এমন কোনো ফিলিং নিজের মধ্যে এনো না যেটাতে পরে কষ্ট পেতে হয়।
আমি হেঁসে বলি,,,এই ফিলিংসটাতে একটা অন্য রকম খুশি আছে, আর সেটার জন্য এসব কষ্ট কিছুই না বুঝলেন,, এখন আপনি শুয়ে থাকেন আমি একটু আসছি ওকে।
আলো একটু বাহিরে যায়, সায়ন শুয়ে গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে থাকে।

বেশ অনেক ক্ষন পর অয়ন সাওয়ার নিয়ে বের হলো। অয়নকে বের হতে দেখে বিছানা থেকে উঠে বসি। অয়ন আমার দিকে তাকিয়ে ছোট্ট করে একটা হাসি দেয়। হাসিটা যে মিথ্যে ছিলো সেটা আমার বুঝতে আর বাকি নেয়।
আমি অয়নকে গিয়ে জরিয়ে ধরি। অয়ন আমাকে ছাড়িয়ে বলে,,আমার শরীর এখনো ভেজা নীর।
আমি আবারো অয়নকে জরিয়ে ধরে বলি,,, তো কি হয়েছে আমি তো ধরবো। আর আমার তো বেশ ভালো লাগছে শরীরটা বেশ ঠান্ডা ঠান্ডা।

অয়ন ও আমাকে জরিয়ে ধরে বলে,,আজ আমার উপর এতো মেহের বানী হলে যে।
,,আমার মা বলে জরিয়ে ধরলে নাকি সব টেনশন দূরে চলে যায়, আর মন ভালো হয়ে যায়।
,, হুমম তাহলে তোমার মা ঠিক কথাই বলেছে।
,,,অয়ন শুনো না।
,,,হুমম বলো।
,,,কিছু না তোমার নামটা নিতে ইচ্ছে করছিলো।

অয়ন হেঁসে বলে,,, কেনো আমার নামে এমন কি আছে যেটা আপনার বলতে ইচ্ছে করে।
,, যানিনা, শুধু জানি তোমার নাম নিতে আমার খুব ভালো লাগে। আলাদা একটা ভালো লাগা কাজ করে।
,,,,তুমি আর তোমার কথা।
আমি অয়নকে সরিয়ে দিয়ে বলি,,,,,লজ্জা করে না সারা দিন এভাবে জরিয়ে ধরে থাকতে, আর কোনো কাজ নেয় নাকি। তাড়াতাড়ি জামা কাপড় পড়ে নাও, খেতে হবে না, রাত হয়েছে কতো দেখছেন।
,,,,,, আরে এটা কি হলো।
অয়ন নিচে আসে, এসে দেখে সবার মন খারাপ করে বসে আছে। অয়ন আসার সাথে সাথে সবাই খেতে বসে। কিন্তু কেও আর খাচ্ছে না। সবাই খাবারে আঙ্গুল ঘুরাচ্ছে।

অয়ন সবার উদ্দেশ্যে বলে,,,, আরে চিন্তা করার কিছুই নেয়, আমি সায়নকে দেখেছি। ও একদম ঠিক হয়ে যাবে। আমি আছি না। দেখবে কিছুদিনের মধ্যে সায়ন আমাদের সবার সাথে বসে খাবে। এখন তোমরা না খেলে পরে সায়ন যখন সুস্থ হয়ে আসবে তখন তোমরা সবাই অসুস্থ হয়ে যাবে। তাই সবাই ঠিক মতো খাও পিল্জ।
অয়ন সবাইকে তো সান্ত্বনা দিয়ে দিলো কিন্তু নিজেকে কি বলে বুঝাবে সেটাই ভাবছে। সবাই খাওয়া দাওয়া শেষ করে নিজের মতো চলে যায় রুমে। প্রহর আর অয়ন সোফায় বসে আছে। আমি তাদের দুজনের জন্য কফি নিয়ে আসি।
অয়ন,,,,, প্রহর আলোকে ফোন দে তো, জিজ্ঞেস কর সব কিছু ঠিক আছে নাকি।
প্রহর আলোকে ফোন দেয়।কিছু ক্ষন পরে আলো ফোন ধরে,, হ্যালো,, কে বলছেন।
প্রহর,,,, আলো আমি প্রহর।

,,,জ্বী ভাইয়া বলেন।
,,,,সায়ন কেমন আছে।
,,,ভাই য়া ও তো আবার আগের মতো পাগলামো শুরু করে দিয়েছে, আমি ওকে ঘুমের ইনজেকশন দিয়েছি।
প্রহর একটু আস্তে বলে,,,এ কথা অয়নকে বলবে না পিল্জ।
,,,,ঠিক আছে।
,,,,একটু পরে আমি আসছি।
,,,,না ভাইয়া লাগবে না, একটু পরেই সায়ন ঘুমিয়ে যাবে। আপনার আসার কোনো দরকার নেয়,আমি সামলে নিবো।
,,,হুমম তাহলে ঠিক আছে,, কিন্তু বেশি প্রবলেম হলে বলবে কিন্তু।
,,,হুহহ ওকে।
অয়ন,,,,,প্রহর এতো আস্তে আস্তে কি বলছিস আমার কাছে ফোনটা দে।

অয়ন প্রহর থেকে ফোনটা নিয়ে জিজ্ঞেস করে,,, হ্যালো আমি অয়ন,সায়ন কেমন আছে, ও কোনো প্রবলেম করছে না তো। করলে বলো আমি এখনি আসছি।
,,,না স্যার আসার দরকার নেয়, সায়ন তেমন কিছু করেনি। ঘুমের ইনজেকশন দিয়েছি একটু পরেই ঘুমিয়ে যাবে।
,,,,আচ্ছা,, সায়ন কোনো ধরনের পাগলামো করলে আমাকে অবশ্য জানাবে আমি সাথে সাথে চলে আসবো।
,,,,,, ওকে স্যার।
,,,,এতো রাত হয়েছে তুমি এখনো বাসায় যাওনি।
,,,,সায়ন ঘুমালেই আমি চলে যাবো, তাছাড়া আমার বাসা তো বেশি দূরে না।
,,,,ঠিক আছে,, তবে বেশি লেইট করবে না।
,,,,হুমম ঠিক আছে।

অয়ন ফোন রেখে দিয়ে সবাইকে বলে,,,আমি ভাবছি সায়নকে বাসায় নিয়ে আসবো। ওর কাছে সব সময় কাওকে না কাওকে দরকার।
প্রহর,,,,,,কিন্তু সায়ন যদি আবার মারুর কোনো ক্ষতি করতে চাই তখন।
আমি সোফায় বসতে বসতে বলি,,,, তাহলে তো আগেই করে দিতো। সায়ন আমার কোনো ক্ষতি করবে না। ওকে এখানে আনলে আরো তাড়াতাড়ি সুস্থ হবে।
প্রহর,,,,হুমম,,তোদের যেটা ভালো মনে হয়। আচ্ছা ঘুমাতে যা, এমনি অনেক লেইট হয়ে গেছে। তাছাড়া মারুর এখন তাড়াতাড়ি ঘুমানো উচিত।
অয়ন,,,হুমম,,ঠিক। চলো নীর ঘুমাবে।

অয়ন আর আমি রুমে চলে আসি প্রহর তার রুমে চলে যায়। অয়ন শুয়ে মন খারাপ করে আছে। আমি সোজা গিয়ে অয়নকে জরিয়ে ধরে শুয়ে পড়ি। এক কথায় বলতে নিলে অয়নের উপরে উঠে পড়ি।
অয়ন ও আমি তার দুই বাহু ডরে বেঁধে বলে,,,,কি হয়েছে।
,,,,আমার এভাবে শুতে ইচ্ছে করছে, তোমার কোনো সমস্যা।
,,,,, না, কোনো সমস্যায় নেয়।
বলে আমার পেটে এক হাত রেখে বলে,,,তোমার মামনি আগের থেকে অনেক দুষ্টু হয়ে গেছে।

আগুনের তৃষ্ণা পর্ব ২২

,,,,, হুমম,, আর বাবা তো দুধে ধোঁয়া তুলশী পাতা।
,,,, আচ্ছা তোমার কি চাই, এতো বড় খুশি দিলে আমাকে।
,,,,,, আমার আর তোমার অতীতের কাহিনী শুনানো লাগবে। আমার তো কিছুই মনে নেয়।
,,,,হুমম অবশ্যই শুনাবো, কিন্তু আজ না, আজ আপনি ঘুমান, আমি কাল আপনাকে বলবো সব ওকে।
,,,,হুমম,, তাহলে ঠিক আছে।
সকাল সকাল সায়ন তার চোখ খুলে দেখে আর বাবা তার পাশে বসা। চোখে পানি টলমল করছে। যেকোনো মূহুর্তে পানি নিচে পড়ে যেতে পারে।

সায়ন উঠে বেডের সাথে হালকা হেলান দিয়ে অর্ধেক শুয়া অবস্থায় আস্তে করে বলে,,,,বাবা তুমি এতো সকাল সকাল।
সায়নের বাবা সায়নের হাত ধরে বলে,,,তোর কাছে মাফ চাওয়ারো আমার কাছে কোনো উপায় নেয়। কোন মুখে মাফ চাবো তোর কাছে।
,,,,, বাবা কি হয়েছে, তুমি কেনো আমার কাছে মাফ চাইবে।
,,,,এসব কিছু আমার কারনেই হয়েছে, এর জন্য আমি দায়ী। শুধু মাত্র আমি। আর আমার দোষের কারনে তার শাস্তি ভোগ করছে আমার দুই ছেলে আর বৌ মা।

,,,,বাবা তুমি কি বলছো আমি বুঝছি না।
,,,,সায়ন,, দিয়ার মৃত্যুতে অয়নের কোনো দোষ নেয়, সব দোষ আমার।
সায়ন উঠে বসে গিয়ে বলে,,,,,মানেহহ।

আগুনের তৃষ্ণা পর্ব ২৪