আজকে শহর তোমার আমার গল্পের লিঙ্ক || জিন্নাত চৌধুরি হাবিবা

আজকে শহর তোমার আমার পর্ব ১+২+৩
জিন্নাত চৌধুরি হাবিবা

মুখপুড়ি নিজের বড় বোনের সংসারটা খোয়াতে বসে আছিস?তোর লজ্জা করলোনা বড় বোনের স্বামীর সাথে সম্পর্কে জড়াতে।তুই বেঁচে আছিস কেন?এসব করার আগে মরতে পারলিনা?
মা বিশ্বাস করো আমি কিছু করিনি।
তুই কিছু না করলে শোভন রাত একটায় তোর ঘরে কি করছিলো।
আমি ডাকিনি মা।উনি নিজেই এসেছেন।
শোভন চট করে উত্তর দিলো,তুমিই তো আমাকে জরুরী কাজের কথা বলে ডেকেছিলে।আমি যেতে চাইছিলাম না বলে তুমি বললে খুব আর্জেন্ট তুমি নাকি বিপদে আছো।তাইতো আমি গিয়েছিলাম।কিন্তু তুমি যে আমাকে এমন প্রস্তাব দেবে আমি ভাবতেও পারিনি ছিঃ বলেই সবার অগোচরে রুপ্সিতার দিকে তাকিয়ে একটা কুটিল হাসি দেয়।
রুপ্সিতার বাবা এতক্ষণ সব শুনছিলেন এবার উঠে এসে সজোরে একটা চড় বসিয়ে দিলেন রুপ্সিতার গালে।এরকম মেয়ে আমার দরকার নেই।

রুপ্সিতা গালে হাত দিয়ে অশ্রুভেজা চোখে বাবার দিকে তাকায়।খুব কষ্ট হচ্ছে ওর।যে বাবা কোনো দিন একটা ধমক দিয়ে কথা বলেনি সেই বাবা আজ তার গায়ে হাত তুলেছে।
রুপ্সিতা ছলছলে চোখে বড়বোন রিতার দিকে তাকাতেই।রিতা মুখ ঘুরিয়ে নেয়।রুপ্সিতা কাকুতি মিনতি করে বলে
বিশ্বাস কর আপু আমি এরকম কিছু করিনি।দুলাভাই মিথ্যে বলছে।
রিতা আরেকটা চড় বসিয়ে দিয়ে বলে
তোকে আমি সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতাম।আর তুই কি করলি?আমার সংসার ভেঙে দিতে চাইছিস বলেই হু হু করে কেঁদে দিলো।
রুপ্সিতা চিৎকার করে বলছে,তোমরা কেন বিশ্বাস করছো না আমি কিছু করি নি।
রুপ্সিতার মা ওকে রুমে টেনে নিয়ে মারতে লাগলো।রুপ্সিতার আর্তনাদ তাদের কারো কানে যাচ্ছে না।
শোভন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মজা নিচ্ছে।

রুপ্সিতার মা মারতে মারতে যখন ক্লান্ত তখন হাতের লাঠিটা ফেলে দরজা আটকে দিয়ে বললেন,আজ থেকে তুই এখানেই পঁচে গলে মরবি।তোর বাইরে যাওয়া বন্ধ।
শরীরের ব্যাথায় নড়তে কষ্ট হচ্ছে।তবুও উঠে দুহাতে দরজা ধাক্কাতে লাগলো রুপ্সিতা।মা প্লিজ দরজা খোলো।মা আমি কিছু করিনি আমি নির্দোষ।
কেউ দরজার আশেপাশে ও নেই।
রুপ্সিতার বাবা ভেঙে পড়েছেন।তিনি ভাবতে ও পারেন নি উনার ছোট মেয়ে এরকম কিছু করতে পারে।
রুপ্সিতার মা ও মুখে আঁচল চেঁপে কাঁদছেন।আজ সমস্ত রাগ মেয়েটার উপর দিয়ে ঝেড়েছেন।
নিজের ঘরে বসে মুখে হাত চেপে ধরে কেঁদে যাচ্ছে রুপ্সিতা।চিৎকার করে কাঁদতে মন চাইছে।কিন্তু এই চিৎকার সবার কানে গেলেও কারো হৃদয় স্পর্শ করতে পারছে না।শরীরে অসহ্য ব্যথা তারচেয়েও বেশি ব্যথা হচ্ছে মনের আঘাতে।নিজের পরিবার যখন বিশ্বাস করেনা তখন কতটা কষ্ট হয় সেটা এই মুহূর্তে রুপ্সিতা বুঝতে পারছে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

রুপ্সিতা আর রিতা দুই বোন একে অপরের প্রাণ।আর সেই প্রাণের সুখে কিভাবে হাত বাড়াবে রুপ্সিতা।
ছোটবেলা থেকেই রুপ্সিতা বা রিতা কেউই দরজা লক করে ঘুমায় না।হালকা একটু চাপিয়ে রাখে।বলতে গেলে দরজা লক করার প্রয়োজন পড়ে না।রিতার যেহেতু বিয়ে হয়ে গেছে স্বামী আছে তাই এখন তাদের দরজা লক করাটা স্বাভাবিক।
গতকাল রাতে রুপ্সিতা নিজের পড়া শেষ করে ঘুমিয়ে পড়ে।হালকা ঘুম ভারী হয়ে আসার পর নিজের শরীরে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে চোখের ঘুম ছুটে যায় রুপ্সিতার।লাফ দিয়ে উঠে বসে রুমের লাইট জালিয়ে শোভনকে দেখে চমকে উঠে।
নিজের গায়ে ওড়না চাপিয়ে অবাক কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,একি দুলাভাই?এতরাতে আপনি আমার ঘরে কি করছেন??
শোভন হালকা হেসে রুপ্সিতার পাশে বসে বলে
দেখতে এলাম তুমি ঠিক করে ঘুমিয়েছো কিনা?

রুপ্সিতা শক্ত কন্ঠে বলে,এতরাতে আপনি একটা মেয়ের ঘরে কেন আসবেন?আমি ঘুমিয়েছি কিনা সেটা আপনার নিশ্চয়ই দেখার প্রয়োজন নেই।কেউ ঘুমিয়েছে কিনা দেখতে এসে তার শরীর স্পর্শ করা কোন ধরনের নিয়ম??
শোভন নিজের হাতটা এগিয়ে রুপ্সিতার হাত ধরতে গেলেই রুপ্সিতা হাত সরিয়ে নেয়।
আপনি এখনই বের হবেন আমার ঘর থেকে।বের হন বলছি।
এবার শোভন রুপ্সিতার দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে থেকে বলল,আমি তোমাকে ভালোবাসি রুপা।তোমাকে আমি চাই।দেখো আমাদের সম্পর্কের কথা কেউ জানবেনা।কাউকে আমি জানতে দেবো না।
রুপ্সিতার পিলে চমকে উঠে।কি বলছে কি উনি?

আপনি এখনই আমার ঘর থেকে বের হবেন।তা নাহলে আমি এখন সবাইকে ডাকবো।
সবাইকে ডাকার কথা শুনে শোভন বাড়াবাড়ি না করে উঠে দাঁড়িয়ে বলে এটা তুমি ঠিক করলেনা।তোমাকে আমি ভালোয় ভালোয় বললাম আর তুমি আমাকে অপমান করছো?এর ফল তোমাকে ভোগ করতে হবে।বলেই শোভন বেরিয়ে যায়।
রুপ্সিতা দরজাটা লক করে দিয়ে বিছানায় এসে বসে।ওর পুরো শরীর কাঁপছে।কপালে চিকন ঘাম দিয়েছে।এতরাতে ও একটা মেয়ে তাছাড়া ওর বোন যখন এসব জানবে তখন খুব কষ্ট পাবে।রুপ্সিতা আর ঘুমালো না।মনের মাঝে চিন্তা নিয়ে এখন আর ঘুম আসবে ও না।
আস্তে আস্তে বারান্দার দিকে এগিয়ে গেলো।
হঠাৎ হাতড়ে শোভনকে পাশে না পেয়ে উঠে বসে রিতা।বাথরুম,বারান্দায় চেইক করে রুমের বাইরে বেরিয়ে দেখে শোভন রুপ্সিতার ঘর থেকে বের হচ্ছে।

রিতা চমকে উঠে।এতরাতে শোভন রুপ্সিতার ঘরে কি করছিলো?
শোভন রুমে ঢুকতে গিয়ে রিতাকে দেখে ভয় পেয়ে যায়।রিতার থেকে দৃষ্টি লুকানোর চেষ্টা করছে।
রিতা চট করে প্রশ্ন করে উঠে,রুপার ঘরে কি করছিলে তুমি?
শোভন চুপ থেকে কিছু একটা ভাবলো।রিতা এবার কন্ঠে জোর বাড়িয়ে বলল,কি হলো?উত্তর দিচ্ছো না কেন?
শোভন মুখটাকে ইনোসেন্ট করে বলল,আমি এখন যা বলবো তা শোনার জন্য তুমি প্রস্তুত নও।তুমি আমার কথাগুলো বিশ্বাস করবে না হয়তো?
রিতা রাগ আর কৌতুহল মিশ্রিত চাহনি দিয়ে বলে,কি এমন কথা?আমি শুনতে চাই।
শোভন একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে বলে

আগে রুমে চলো,আমি তোমায় সব কিছু বলছি।রিতাকে শোভন রুমে নিয়ে এসে নিজের মনগড়ামতো সব কিছু বলতে লাগলো।
রাতে কল আসায় আমার ঘুম ভেঙে যায়।মোবাইলের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখি রুপার কল।আমার ভ্রু কুচকে আসে এতোরাতে রুপা আমাকে কেন কল দিবে?ভাবতে ভাবতে কল কেটে গিয়ে আবার কল আসে আমি আর কিছু না ভেবে রিসিভ করি।
কল রিসিভ করতেই রুপা বলল,দুলাভাই একটু আমার রুমে আসেনতো?আমি অবাক হলাম এতোরাতে রুপা আমায় কেন রুমে ডাকছে।আমি ওকে জিজ্ঞেস করতেই ও বলল,ওর নাকি জরুরী কি কথা আছে অনেক রিকোয়েস্ট করছিল।তাই আমি বাধ্য হয়ে গেলাম।কিন্তু
রিতা কৌতুহলী হয়ে প্রশ্ন করলো
কিন্তু কি?

শোভন আবার বলা শুরু করলো,আমি ভাবিনি রুপা আমাকে এরকম প্রস্তাব দিবে।ও চায় আমি ওর সাথে রাত কাটাই আর এই ব্যপারে তুমি কোনদিনও জানতে পারবেনা।তুমি যাতে না জানো সেই ব্যবস্থা ও করবে।আমি….
শোভনের কথা শেষ হওয়ার আগেই রিতা সজোরে শোভনের গালে থাপ্পড় মারে।
আমার বোনের নামে আর একটা বাজে কথা বললে আমি তোমার জিব টেনে ছিড়ে ফেলবো।আমি জানি আমার বোন কেমন তাই বলবো তোমার মিথ্যা তোমার কাছে রেখে সত্যিটা বলো।কেন গিয়েছিলে আমার বোনের রুমে?কোন মতলবে গেছো?
শোভন একটু রাগ দেখানোর ভান করে বলল,আমার যদি কোনো মতলব থেকে থাকে তাহলে তোমার বোনের তো এতক্ষনে চিৎকার চেঁচামেচি করার কথা ছিলো।একটা কথা মনে রেখো সবসময় আপন মানুষগুলোই পিঠে পেছন থেকে আঘাত করে।তারপর শুয়ে পড়ে।
ব্যস এটুকু কথাই যথেষ্ট ছিলো রিতাকে বিষয়টা নিয়ে ভাবিয়ে তুলতে।ওই রাতে আর ঘুম হয়নি রিতার।এখন ওর মনে হচ্ছে শোভন সত্যি কথা বলছে।যদি শোভন অসভ্যতামি করে থাকে তাহলেতো রুপার চিৎকার চেঁচামেচি করার কথা ছিলো।কিন্তু ও তো চুপ ছিলো তাহলে কি শোভনের কথাই ঠিক।

এসব ভেবে ঘুম হয়নি রিতার সকাল হতে না হতেই মায়ের কাছে চলে গেলো ব্যাপারটা বলার জন্য।
রিতার মা নামায শেষ করেছেন মাত্র।এসময় বড় মেয়েকে নিজের ঘরে দেখে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন,কিরে তুই এতসকাল এই ঘরে।কিছু বলবি নাকি?
রিতা বলল,বাবা কোথায়?
তোর বাবা মসজিদে গেছে কেন কি হয়েছে?
রিতা দুহাত সমানে কচলে যাচ্ছে।
মেয়েকে এভাবে দাঁড়িয়ে হাত কচলাতে দেখে রিতার মা ওকে হাত ধরে বসিয়ে দিয়ে বলে,কি হয়েছে মাকে খুলে বল?না বললে বুঝবো কি করে?
রিতা ঢুকরে কেঁদে ওঠে।রিতার মা মেয়েকে কাঁদতে দেখে চমকে উঠলেন।রিতা একে একে কাল রাতে শোভনকে পাশে না পেয়ে খোজা,শোভনের বলা বানোয়াট কথাগুলো সব মাকে খুলে বলে।

রিতার মা বিষ্ময় নিয়ে বললেন,তোর কি মনে হয় রুপা এসব করেছে?রুপা এসব জীবনেও করবেনা রিতা।তোর কোথাও ভুল হচ্ছে।
রিতা কাঁদতে কাঁদতে বলল,মা আমিও প্রথমে বিশ্বাস করিনি।সারারাত আমি ভেবে দেখেছে শোভনের কথাগুলো।যদি সত্যি শোভনের দোষ থেকে থাকে তাহলে রুপা আমাদের কেন ডাকলোনা?মা আমার সংসারটা নষ্ট হয়ে গেলে আমি কি ভাবে বাঁচবো?
মেয়ের আকুতি-মিনতি শুনে রিতার মাও ভাবতে লাগলেন শোভনের কথাগুলো।এতক্ষনে রিতার বাবা মসজিদ থেকে এসে সব শুনেছে দরজায় দাঁড়িয়ে।
রাতে ঘুম না হওয়ায় সকালের দিকে চোখটা হালকা একটু লেগে এসেছিল তখনই দরজায় কড়াঘাতের শব্দ শুনতে পায় রুপ্সিতা।ওর মা জোরে জোরে ডাকছে,
রুপা!রুপা!
রুপ্সিতা দরজা খুলে দিতেই ওর মা ওকে ড্রইংরুমে টেনে নিয়ে আসে।
বাকি ঘটনা প্রথমে উল্লেখ আছে।
সকাল ঘড়িয়ে বিকাল হতে চললো।কেউ একটিবারের জন্যেও রুপ্সিতার ঘরে এলোনা।মারের কারণে শরীরে জ্বর চলে এসেছে রুপ্সিতার।ফ্লোরেই জ্বর নিয়ে পড়ে আছে।

কাঁদতে কাঁদতে চোখদুটো ফুলে গেছে।জবা ফুলের ন্যায় লাল রং ধারণ করেছে।
রুমের বাইরে থেকে আওয়াজ শোনা যাচ্ছে
রুপ্সিতার বাবা তার মাকে জোরে জোরে বলছে,কালকেই ছেলে পক্ষকে আসতে বলেছি সম্ভব হলে বিয়েটা কালকেই দিয়ে দেবো।তোমার মেয়েকে বলে দিবে যেন কোন রকম জামেলা না করে।যেসব কিছুর জন্য আমাদের সম্মানের কথা ভাবলোনা সেসব স্বামীর কাছ থেকেই বুঝে নিতে বলিও।
নিজের ঘর থেকে বাবা কথাগুলো শুনে নিজের প্রতি এখন ঘৃনা লাগছে রুপ্সিতার।ও কি এতটাই খারাপ?বাবা কি ইঙ্গিত করলো ওর বুঝতে অসুবিধা হলোনা।জ্বর গায়ে নিয়ে ফ্লোরে শুয়ে আবারো কাঁদতে লাগলো।

#গল্পঃআজকে_শহর_তোমার_আমার
#লেখিকাঃজিন্নাত_চৌধুরী_হাবিবা
#পর্ব_০২

ড্রইংরুমে সোফায় বসে আছে কয়েকজন লোক।তাদের মাঝখানে রুপ্সিতাকে শাড়ী পরিয়ে বসিয়ে রেখেছে।রুপ্সিতার দৃষ্টি নিচের দিকে।একবারো চোখ তুলে কাউকে দেখার প্রয়োজনবোধ করেনি।
ছেলের বাবা বললেন,আলহামদুলিল্লাহ মেয়ে আমাদের পছন্দ হয়েছে।এখন আপনাদের পছন্দ হলেই বিয়ের কথা পাকা করা যাবে।
রুপ্সিতার বাবা গলা ঝেড়ে বললেন,আমাদের আর দেখার কিছুই নেই।ছেলে আমাদের পছন্দ হয়েছে আপনারা চাইলে আজই বিয়েটা সেরে ফেলতে পারেন।
পাত্রের বাবা উনার সাথে আসা সবার সাথে কিছু একটা ইশারা করে রুপ্সিতার বাবাকে জানালেন উনাদের যেহেতু সমস্যা নেই তাই আজই বিয়ের কাজ সেরে নিতে।
রুপ্সিতার বাবা আর ছেলের বাবা কোলাকুলি করে নিলেন।কাজিকে খবর দিয়ে।সবাই মিষ্টি মুখ করতে ব্যস্ত।
রুপ্সিতার মা রান্নাঘরে কাজ সামলাচ্ছেন।রিতা উনাকে সঙ্গ দিচ্ছে।ড্রইংরুমে সবার সাথে শোভন ও আছে।রুপ্সিতা নিচের দিকে দৃষ্টি নত রাখায় শোভনের ভাব ভঙ্গি বুঝতে পারছেনা।

অবশেষে কাজি এসে বিয়ের কার্যক্রম শুরু করলো।ছেলেকে কবুল বলতে বললে
ক্ষীণস্বরে তিনবার কবুল বলে থামে।এবার রুপ্সিতার পালা।ও সিক্ত চোখে একবার পুরো বাড়িটা পরোখ করে নিলো।বাবার মুখের দিকে তাকাতেই উনার তীক্ষ্ণ নজর চোখে পড়লো রুপ্সিতার।উনার চোখেও হালকা পানির রেশ।রুপ্সিতা তাকিয়ে আছে দেখে অন্যদিকে তাকিয়ে চোখের পানি লুকানোর চেষ্টা করছেন।

আর কোনোদিকে না তাকিয়ে রুপ্সিতা কবুল বলে অন্যের অধীন হয়ে গেলো।
বাবার বাড়ি থেকে বিদায় নিয়ে এক অচেনা রাজ্যে পাড়ি জমালো।
গাড়ি এসে থামলো একটা দোতলা বাড়ির সামনে।রুপ্সিতার শশুর গাড়ি থেকে নেমে ওকে নিয়ে ঘরের ভেতরে গেলো।বাড়ির ভেতরে ঢুকতেই দুজন নারীকে চোখে পড়লো।হাসি মুখে এগিয়ে আসছে।একজন মাঝবয়সী,অন্যজন ২৭/২৮ বয়সের হবে।
রুপ্সিতাকে হাসিমুখে এগিয়ে এসে অল্পবয়সী নারী সোফায় বসালো।
আমি হলাম আলিফের বড় ভাবি,আর উনি আলিফের মা মানে আমাদের শাশুড়ী।
উনার কথা শুনে রুপ্সিতা বুঝলো ওর যার সাথে বিয়ে হয়েছে তার নাম আলিফ।
রুপ্সিতা ওর শাশুড়ীকে পা ধরে সালাম করতে গেলে উনি বাধা দিয়ে বলেন,মুখে বললেই হবে মা।পায়ে হাত দিতে হবেনা।
ইরিন ছোটবউ মাকে ঘরে নিয়ে যাও।ফ্রেশ হয়ে পড়ার জন্য আমি শাড়ি দিচ্ছি।
আলিফের ভাবি রুপ্সিতাকে একটা রুমে নিয়ে বলে,আজ থেকে এটা তোমার রুম।ওহ তোমার নামটাই আমার জানা হলোনা।
রুপ্সিতা মুচকি হেসে জবাব দেয় আমার নাম রুপ্সিতা।সবাই রুপা বলে ডাকে।
ইরিন হেসে দিয়ে বলে তাহলে আমিও রুপা বলেই ডাকবো।রুপ্সিতাকে ওয়াশরুম দেখিয়ে দিয়ে ইরিন বলল আমি মায়ের কাছ থেকে শাড়ী নিয়ে আসি।

রুপ্সিতা ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে খাটের উপর একটা শাড়ী দেখতে পায় সাথে ব্লাউজ,পেটিকোট দুটোই আছে।রুপ্সিতা গায়ের শাড়ীটা খুলে এই শাড়ীটা পড়ে নেয়।ব্লাউজ একটু ঢিলা।আঁচল ঘাড়ের উপর দিয়ে টেনে মাথায় ঘোমটা দেওয়ার কারনে ব্লাউজের ঢিলা চোখে পড়ছেনা।
আলিফের ভাবি এসে রুপ্সিতাকে খাবার খাইয়ে চোখে কাজল আর ঠোঁটে হালকা লিপস্টিপ দিয়ে দিলেন।
রুপ্সিতা একা একা বসে আছে।বুকটা দুরুদুরু করছে।না জানি মানুষটা কেমন হয়।আচ্ছা আগে কি একে অপরকে জানবে?নাকি ঝাপিয়ে পড়বে নিজের চাহিদা মেটাতে।এসব ভাবতে ভাবতেই দরজায় খট করে আওয়াজ হয়।আলিফ রুমে ঢুকেছে।রুপ্সিতা খাট থেকে নেমে আলিফের পায়ে সালাম করে।
আলিফ কিছু না বলে কাবার্ড থেকে বাসায় পরার টি-শার্ট আর ট্রাউজার নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।
রুপ্সিতা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।
আলিফ ফ্রেশ হয়ে রুপ্সিতাকে আগের জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলল,এরকম হা করে দাঁড়িয়ে না থেকে একজায়গায় গিয়ে বসো।নয়তো মুখে মশা ঢুকবে।
রুপ্সিতা থতমত খেয়ে গেল।মুখটা মিলিয়ে খাটে বসে।
তোমার নাম কি?
রুপ্সিতা বলে,জ্বি?

তোমার নাম কি?কানে শুনো না?
রুপ্সিতার রাগ লাগলো।কিন্তু কিছু বললোনা।মুখ ফুলিয়ে রেখে জবাব দিলো আমার নাম রুপ্সিতা।
আলিফ ভ্রু কুচকে বলল,রুপ্সিতা?
রুপ্সিতা উপর নিচ মাথা নেড়ে হ্যা জানালো।
আলিফ ঠোঁট চেপে কিছুক্ষণ ভেবে বলল,ওকে আমি রুপ্সি বলে ডাকবো।
রুপ্সিতা ও মাথা নাড়ে।
আলিফ হাতের তোয়ালে বারান্দায় মেলে দিতে যাওয়ার সময় রুপ্সিতার দিকে তাকিয়ে বলল,এখন শুয়ে পড়ো।তোমার আর আমার বিয়েটা তাড়াহুড়ো করেই হয়েছে।একজন আরেক জনকে ঠিকভাবে চিনিও না।
আমি কিছুদিন নিজেকে সময় দিয়ে চিনতে চাই তোমাকে।
রুপ্সিতার ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠে।সে তো এটাই চেয়েছিলো।
আলিফ তোয়ালে মেলে দিয়ে রুমে এসে মোবাইল হাতে নিয়ে আবার বারান্দায় চলে গেল।

রুপ্সিতা মাথা না ঘামিয়ে গুটিশুটি মেরে খাটের এক কোনে শুয়ে পড়লো।বাবা মায়ের কথা মনে পড়ে গেলো।কিভাবে তারা আমাকে বিশ্বাস না করে পর ছেলেকে বিশ্বাস করলো?আসলে আমারই উচিত ছিল চিৎকার করে সবাইকে ঢেকে আনা।তাহলে আমার জীবনটা এরকম হতো না।বাবা মা আমাকে অবিশ্বাস করতো না।
চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা নোনাজল বালিশে গড়িয়ে পড়তেই চোখ মুছে নিল রুপ্সিতা।এখনই যদি নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পারে তাহলে কান্নার প্রকোপ আরো বেড়ে যাবে।আলিফ যখন কান্না করার কারণ জিজ্ঞেস করবে তখন কি বলবে?
কাঁথা গায়ে জড়িয়ে চুপটি করে ঘুমানোর চেষ্টা করলো। ৬৬৯

বারান্দার রেলিঙের সাথে হেলান দিয়ে রুমের দিকে মুখ করে বসে আছে আলিফ।এখান থেকে খাট পুরোটা দেখা যায় না।হালকা একটু কাঁথা দেখা যাচ্ছে।মুঠোফোন বের করে স্ক্রিনে একটা ছবি বের করে সেটার দিকে তাকিয়ে আছে।দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে
তুমি চেয়েছো আমি বিয়ে করে সংসার করি।দেখো বিয়েটা করে নিয়েছি।মেয়েটা এখন আমার খাটে ঘুমিয়ে আছে যেই খাটে তোমার ঘুমানোর কথা ছিলো।কিন্তু আমাদের ভাগ্য হয়তো তার বিপরীত।আল্লাহ চায়নি বলে তুমি আমার জীবন থেকে চলে গেলে কিন্তু মন থেকে কি আদৌও তুমি যেতে পারবে?সময়ের ব্যবধানে মেয়েটার সাথে থাকতে থাকতে হয়তো তাকে মেনে নেবো,ভালোও বাসবো কিন্তু তোমাকে কি ভুলতে পারবো?প্রথম ভালোবাসা কি ভোলা যায়?
এভাবে বারান্দায় কিছুক্ষণ থেকে মুঠোফোন পকেটে পুরে রুমে আসে।
খাটের দিকে নজর দিয়ে দেখে

রুপ্সিতা খাটের এককোনে জড়োসড়ো হয়ে ঘুমিয়ে আছে।শাড়ি দিয়ে নিজেকে পেছিয়ে রেখেছে।পায়ের উপর দিয়ে কাঁথা দিয়ে সেটা হাত দিয়ে মুঠো করে ধরে রেখেছে যাতে শাড়ি উপরে উঠে গেলেও পায়ের দিকটা দেখা না যায়।
মেয়েটার বুদ্ধি দেখে আলিফ ক্ষীণ হাসলো।
টেবিলের উপর ফোন রেখে অন্যপাশে নিজেও শুয়ে পড়লো।
সকালে রুপ্সিতার তাড়াতাড়ি ঘুম ভেঙে যায়।ঘড়িতে সময় দেখে এখনো নামাযের সময় আছে।ফ্রেশ হয়ে এসে নামায পড়ে নেয়।এখন ঘুম আসবে না।তাই বারান্দায় পা বাড়ালো।চারদিকে আলো ফুটেছে তবে রোদের আলো নয় ভোরের স্নিগ্ধ আলো।বারান্দায় এসেই রুপ্সিতার মনটা ভালো হয়ে গেলো।রাস্তা একেবারে ফাঁকা।এই সময়ে ঢাকা শহরে মানুষ জন দেখা যায় না।আরো পরে সবার আনাগোনা বাড়বে।এই ব্যস্ত শহরে সবাই নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়বে।
বারান্দায় কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে রুমে আসে রুপ্সিতা।
আলিফ এখনো ঘুমিয়ে আছে।রুপ্সিতা দরজা খুলে নিচে নেমে এলো।রান্নাঘরে উঁকি দিতেই দেখলো ইরিন ভাবি নাস্তা বানাচ্ছেন।রুপ্সিতা পাশে গিয়ে দাঁড়িতেই ইরিন বলল,এত সকালে উঠলে যে?ঘুম হলো?
রুপ্সিতা মুচকি হেসে বলল,হুম।

ইরিন রুপ্সিতার গায়ের শাড়ির দিকে তাকিয়ে জিবে কামড় দিয়ে বলল,দেখলে আমার একটু ও মনে নেই তোমাকে শাড়ি দিয়ে আসতে।তুমিতো মনে হয় এখনো গোসল করোনি।দাঁড়াও আমি তোমাকে শাড়ি দিচ্ছি।
রুপ্সিতা তাড়াহুড়ো করে বলল,না না ভাবি!আপনি যা ভাবছেন সেরকম কিছু হয়নি।আমার এখন শাড়ী লাগবেনা বলেই মাথা নিচু করে নিলো।
ইরিন রুপ্সিতাকে কোনোরকম লজ্জা না দিয়ে বলল,তোমার এখন এখানে কাজ নেই তুমি ঘরে যাও।
রুপ্সিতা বলল,আমিও তোমার সাথে কাজে হাত লাগাই।
সবাই সকালের নাস্তা করে নিয়েছে।খাবার টেবিলে আলিফের বড় ভাইয়ার সাথেও পরিচয় হয়েছে।উনাদের একটা চার বছরের ছেলে আছে।কাল রুপ্সিতা বাচ্চাটাকে দেখেনি।
আলিফ অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে।বিয়েটা হুট করে হয়ে যাওয়ায় অফিস থেকে ছুটি নেয়নি।এটাতো আর নিজের অফিস না যে মন চাইলো কয়েকদিন বাড়িতে কাটালাম।
আলিফ রেডি হতে হতেই রুপ্সিতাকে জিজ্ঞেস করলো
তুমি কি আরো পড়তে চাও?

রুপ্সিতা খুশি হয়ে গেলো আলিফের কথায়।খুশিতে গদগদ হয়ে মাথা নাড়াতেই আলিফ একটা ধমক দিলো।
তুমি কি কথা বলতে পারো না?সব কথায় মাথা নাড়াতে হবে?মুখে বলতে পারোনা।
রুপ্সিতা মুখটা পাংশু করে রাখলো।আলিফ আবারো বলল,কোন ক্লাসে পড়ো?
রুপ্সিতা এবার চট করে উত্তর দিলো অনার্স থার্ড ইয়ার।
আলিফ চুলে চিরুনি চালাতে চালাতে বলল,ঠিক আছে।পড়তে পারবে কিন্তু ইম্পরট্যান্ট ক্লাস ছাড়া ভার্সিটিতে যেতে পারবেনা।বাড়িতে বসেই প্রচুর পড়তে হবে তোমাকে।এই শর্তে রাজি থাকলে তুমি পড়তে পারবে।অথবা পড়ালেখার চিন্তা মাথা থেকে বাদ দাও।মা কখনো বাড়ির বউকে এভাবে বাইরে যেতে দিবেনা।
রুপ্সিতা মুখ খুলে বলল,পড়তে পারবো এটাই অনেক।

আলিফের ফোন বেজে ওঠায় রুপ্সিতাকে বলল,আমার ফোনটা এগিয়ে দাও তো?
রুপ্সিতা ধপাধপ পা ফেলে ফোন হাতে নিয়েছে।আলিফের দৃষ্টি রুপ্সিতার পায়ের দিকে ধপধপ করে হাটায় শাড়ি টাকনুর অনেক উপরে উঠে গেছে।রুপ্সিতা আলিফের দিকে ফোন বাড়িয়ে দিয়ে তার দৃষ্টি অনুসরণ করে নিজের পায়ের দিকে তাকাতেই চমকে উঠে।শাড়ী হাত দিয়ে টেনে নিচে নামিয়ে দেয়।আলিফ নিজের দৃষ্টি সংযত করে ফোন কানে দেয়।
রুপ্সিতা শাড়ী নিচের দিকে টানছে আর আলিফের দিকে তাকাতে তাকাতে হাটছে।শাড়ী নিচের দিকে এতটাই নেমে গেছে যে এবার রুপ্সিতা হোচট খেয়ে ফ্লোরে ধপাস করে পড়ে গেলো।
রুপ্সিতাকে পড়তে দেখে আলিফ ফোন কেটে দিয়ে হু হা করে হাসতে লাগলো।
আর রুপ্সিতা কোমরে ব্যাথা পেয়ে চোখ খিচে বন্ধ করে রেখেছে।

#গল্পঃআজকে_শহর_তোমার_আমার
#লেখিকাঃজিন্নাত_চৌধুরী_হাবিবা
#পর্ব_০৩

রুপ্সিতা উঠছেনা দেখে আলিফ হাসি থামিয়ে ওর দিকে হাত বাড়িয়ে দেয় উঠার জন্য।পড়ে যাওয়ার কারণে রুপ্সিতার মাথার ঘোমটা পড়ে যায় ঢিলা ব্লাউজটাও কাঁধের দিকে হালকা নেমে যায়।কনুইয়ের উপরের দিকে আর কাঁধে কয়েকটা দাগ দেখে আলিফের ভ্রু কুচকে এলো।ওভাবেই রুপ্সিতাকে জিজ্ঞেস করলো তোমার গায়ে এগুলো কিসের দাগ?
রুপ্সিতা তড়িঘড়ি করে আঁচল দিয়ে শরীর মুড়িয়ে নিয়ে বলল,সেটা আপনাকে জানতে হবেনা।কালরাতে আপনি বলেছেন আমাদের চেনা জানার প্রয়োজন আছে আর আজ আপনি আমার ঘাড়ের দিকে নজর দিচ্ছেন?
আলিফের মেজাজ চটে গেল।

লিসেন?আমি যাস্ট কৌতুহলের কারণে তোমাকে জিজ্ঞেস করেছি।আমার এত শখ নেই তোমার দিকে তাকানোর।রুপ্সিতাকে ওভাবে ফেলে রেখেই মুঠোফোন আর ওয়ালেট নিয়ে বেরিয়ে গেল আলিফ।
রুপ্সিতা আস্তে আস্তে উঠে খাটে গিয়ে শুয়ে পড়লো।কোমরে ব্যথা পেয়েছে ভালো করে।এখন একটু জিরিয়ে নিয়ে নিচে যাবে।এখন কোমরের ব্যাথা নিয়ে নিচে নামতে পারবেনা।তারচেয়ে ব্যাথাটা একটু কমুক।
আলিফ অফিসে এসে মুখ গম্ভীর করে কাজ করছে।সকাল সকাল এভাবে মেজাজ খারাপ হবে ভাবেনি।
হঠাৎ ফোনকল পেয়ে হাতে নিয়ে রিসিভ করে।
হ্যালো!
কেমন আছো?

আলিফ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,আল্লাহ যেরকম চাইছেন ঠিক সেরকম।তুমি কেমন আছো?
অপরপাশের জন হালকা হেসে বলল,ভালোই।
এরপর দুজনেই চুপ করে থাকে।হয়তো দুজনেই কিছু বলতে চায় দুজনকে।তাই সময় নিচ্ছে।কিছুক্ষণ নিরবতার পর আলিফ আগে বলে উঠলো,
মায়া আমি বিয়ে করে নিয়েছি গতকাল।
আলিফের কথা শুনে মায়ার বুকের ভেতর ধক করে ওঠে।বিড়বিড় করে নিজের মনেই বলল,আলিফ বিয়ে করে নিয়েছে।
মায়াকে নিশ্চুপ থাকতে দেখে আলিফ বলল,তুমি খুশি হওনি?তুমিইতো চেয়েছিলে আমি যাতে বিয়ে করে নিই।
মায়া ভাঙা ভাঙা কন্ঠে বলল,ভালোইতো।বিয়ে করেছো,মেয়েটাকে কষ্ট দিও না।এখন তোমার উপর সম্পূর্ণ অধিকার তার।নিজেকে আর আমায় ভেবে কষ্ট দিও না।

আলিফ তপ্তশ্বাস ফেলে বলল,চেষ্টা করছি সব কিছু মানিয়ে নেওয়ার।
মায়া আবারো বলল,আমি কেন কল দিয়েছি জিজ্ঞেস করবেনা?
আলিফ ক্ষীণ স্বরে জবাব দিলো,কেন?
মায়া কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,বিয়ের এক বছর পূরণ হয়ে গেছে।এখনো বাচ্চকাচ্চার মুখ দেখছিনা।ডক্টরের কাছে গিয়েছি কিছু টেষ্ট দিয়েছে।রিপোর্টে এসেছে আমার মা না হওয়ার কারণ জরায়ুমুখে পাথর।এগুলো ঔষধে না গেলে অপারেশন লাগতে পারে।সুস্থ না হলে আমি কখনো মাহ হতে পারবোনা বলেই ঢুকরে কেঁদে ওঠে মায়া।
মায়ার কথা শুনে আলিফ থম মেরে রইলো।ওর এখন কি বলে মায়াকে শান্তনা দেওয়া উচিত ও বুঝতে পারছেনা।
মায়া আবারো বলল,আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করে।যদি আমার বিয়েটা তোমার সাথে হতো তাহলে আমার জন্য তোমাকেও ভুগতে হতো।

আলিফ এবার মায়াকে শান্তনা দিয়ে বলল,এই সমস্যাটা এখন প্রায় নারীর হয়।ঠিক মতো চিকিৎসা নিলে সব ঠিক হয়ে যাবে তুমি কান্নাকাটি করোনা।
মায়া নাক টেনে বলল,আরাফাত ও আমাকে এই কথা বলেই শান্তনা দেয়।
আলিফ প্রশ্ন করলো,আরাফাত আমাদের অতীত সম্পর্কে জানে?
মায়া নিজেকে স্বাভাবিক করে বলল,নাহ!আমি বলিনি।আমি চাইনা আমাদের অতীতের সম্পর্কের কথা শুনে সে কষ্ট পাক।এখানেতো তার দোষ নেই।আর না আছে তোমার আর আমার।আসলে দোষ আমাদের ভাগ্যের।
আমার শাশুড়ী ডাকছে বলে মায়া লাইন কেটে দিলো।
আলিফ ফোন রেখে হাত দিয়ে চুলগুলো পেছনের দিকে ঠেলে দিলো।এখন কাজেও মন বসবেনা।তবুও কাজ করতে হবে। অন্যের অধীনে কাজ করলে নিজ ইচ্ছায় কিছু করা যায় না।

সব প্রাক্তন প্রতারক হয়না।কিছু কিছু ভালোবাসা হেরে যায় পরিস্থিতির কাছে।আলিফ আর মায়া একে অপরকে ভালোবাসতো।মায়ার বাবা ওদের সম্পর্ক মেনে নেয়নি।উনি আগে থেকেই আরাফাতের সাথে মায়ার বিয়ে ঠিক করে রেখেছেন।মায়া জানতোনা,জানলে আলিফের সাথে সম্পর্কে জড়াতো না।ওর বাবা বলে দিয়েছে আরাফাতকে বিয়ে না করলে উনার মরা মুখ দেখবে।তখন আলিফের হাতেও কিছু ছিলোনা।বাধ্য হয়ে আলিফ বলে দিলো মায়াকে বিয়ে করে নিতে।
এখন বর্তমানে মায়া অসুখী নয়।আরাফাত ছেলেটাও অনেক ভালো।শুধু শুধু নিজের জন্য অন্যকে কষ্ট দিয়ে লাভ নেই।তাই মায়াও সব ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিয়ে আরাফাতকে মেনে নিলো।

মাঝে মাঝেই আলিফের সাথে ওর যোগাযোগ হয়।একমাস,দুমাস এরকম সময় পরপর কথা হয়।
রুপ্সিতা ঘন্টাখানেক পর নিচে নেমে এলো।ওর শাশুড়ী আর ইরিন রান্নার জোগার করছে।রুপ্সিতা রান্নাঘরে উনাদের পেছনে গিয়ে দাঁড়ালো।রুপ্সিতার শাশুড়ী ওকে দেখে বলল,নতুন বউ রান্নাঘরে কি করছো?
ইরিন বলল,সকালে ও আমি না করা সত্বেও আমার সাথে নাস্তা বানিয়েছে মা।
রুপ্সিতার শাশুড়ী মুখে এ কথা বললেও ইরিনের কথা শুনে খুশি হলেন।মুখে হাসি রেখে রুপ্সিতাকে জিজ্ঞেস করলো,রান্না জানো তুমি?
রুপ্সিতা মাথা নিচু করে বলল,তেমন একটা পারিনা।বাসায় সবসময় মা রান্না করতো।আমরা দুবোন মাঝে মাঝে রান্নাঘরে গিয়ে যা পারতাম রান্না করতাম।

কিন্তু আপনি শিখিয়ে দিলে ইনশাআল্লাহ পারবো।
রুপ্সিতার কথায় ওর শাশুড়ী মুখে হাসি বজায় রেখেই বলল,অবশ্যই শেখাবো।প্রথম প্রথম ইরিন ও কিছু পারতো না।এখন আমার দেখতে দেখতে সব কিছু শিখে নিয়েছে।
দুপুরে গোসল করে কালকের শাড়ীটা পড়ে নিও।আমি আলিফকে ফোন করে বলে দেবো আসার সময় তোমার জন্য জামাকাপড় নিয়ে আসতে।
রুপ্সিতা মাথা দোলালো।
দুপুরের পর মায়ের মোবাইল থেকে কল আসতেই আলিফ রিসিভ করে সালাম দেয়।
ওর মা সালামের উত্তর দিয়ে আলিফকে বলে দিলো আসার সময় রুপ্সিতার জন্য শাড়ী নিয়ে আসতে সাথে পেটিকোট আর ব্লাউজ ও যেন নিয়ে আসে।

রুপ্সিতার কথা সারাদিনে একবারো মনে পড়েনি আলিফের।এখন মা ফোন করে বলায় মনে পড়লো ও বিবাহিত।তারপর সকালের কথা মনে পড়তেই মেয়েটার প্রতি একটা চাপা ক্ষোভ জন্মে।মেয়েটা ওকে কি ভাবে?ক্যারেক্টারলেস?
রুপ্সিতা সারাদিন ইরিনের ছেলেকে নিয়েই কাটিয়েছে।বাচ্চাটা কি কিউট। কত্ত সুন্দর করে কথা বলে।ওর নাম সানি।বাচ্চা মানুষ খেলার সাথী হিসেবে কাউকে পেলে তার সাথে সহজে মিশে যায়।
রুপ্সিতার বাবা কাজ থেকে ফিরে নিজের ঘরে থম মেরে বসে আছেন।রুপ্সিতার মা উনার ঘাড়ে হাত দিয়ে কি হয়েছে জিজ্ঞেস করতেই উনি বলেন,

আমারা কি খুব বড় ভুল করে ফেলেছি?একটাবার কি মেয়েটার কথা শোনা উচিত ছিলোনা?
রুপ্সিতার মা থমকে গেলেন।ঠিকইতো একটাবার নিজের মেয়ের কথাটা শোনার প্রয়োজনবোধ করলোনা?এক মেয়ের কান্নায় জর্জরিত চেহারা দেখে আরেক মেয়ের সাথে অন্যায় করে ফেলেন নিতো?হয়তো শোভন মিথ্যা বলছিলো?
রুপ্সিতার মা বললেন,তখন আমাদের জ্ঞান বুদ্ধি এতটাই লোপ পেয়েছে যে নিজের মেয়েটার কথা একটাবার শুনলাম না।
রুপ্সিতার বাবা বলে,যদি রুপা নির্দোষ হয়ে থাকে তাহলে কিভাবে নিজের মেয়েকে মুখ দেখাবো?ও কি আমাদের ক্ষমা করতে পারবে?
রুপ্সিতার মা ওর বাবাকে বলল,আপনি শোভনের পেছনে লোক লাগিয়ে খোজ নেন ভালো করে।আমি যতদূর জানি শোভন ভালো ছেলে।আর আমাদের মেয়েও এসব করবেনা।

রুপ্সিতার বাবা বলল,এখন আর মেয়েকে বিশ্বাস করে কি হবে?সেদিন অন্তত একজনের মাথা ঠান্ডা রেখে ওর কথা শোনা উচিত ছিলো।আর এখন কিছু জিজ্ঞেস করলেও রুপা কিছুই বলবেনা।

আলিফ অফিস শেষ করে বাসায় আসার পথে শপিং মলে ঢুকে রুপ্সিতার জন্য দুটো শাড়ি কিনে নেয়।সাথে পেটিকোট আর ব্লাউজ কিনতে গিয়ে সমস্যা হলো।ও তো রুপ্সিতার মাপ জানেনা।তাই মায়ের মোবাইলে ফোন দিয়ে রুপ্সিতাকে দিতে বলল,
রুপ্সিতা ভাবছে একদিন যেতে না যেতেই ওর জন্য দরদ বেড়ে গেলো?এখন ফোনেও কথা বলতে চাইছে?
রুপ্সিতা গলা ঝেড়ে ভাব নিয়ে বলল,একদিনেই এত দরদ বেড়ে গেলো?কয়েক ঘন্টা যেতে না যেতেই কল দিলেন।
আলিফ দাঁতে দাঁত চেপে বলল,তোমার সাথে প্রেমের প্রলাপ করার জন্য কল দিনাই।তোমার ব্লাউজের মাপ বলো।
আলিফের কথায় রুপ্সিতা লজ্জা পেয়ে গেল।কোনোরকম থতমত খেয়ে মাপটা বলেই লাইন কেটে দিলো।

আজকে শহর তোমার আমার পর্ব ৪+৫+৬