আজকে শহর তোমার আমার পর্ব ৪+৫+৬

আজকে শহর তোমার আমার পর্ব ৪+৫+৬
জিন্নাত চৌধুরি হাবিবা

সানির সাথে কিছুক্ষণ দুষ্টুমি করে রুপ্সিতা ঘরে এসে খাটের উপর তিনটে ব্যাগ দেখলো।পাশে আলিফের ফোন আর অফিসের ব্যাগ ও আছে।বাথরুম থেকে পানি পড়ার আওয়াজ আসছে।নিশ্চয়ই আলিফ ভেতরে।কখন এলো?রুপ্সিতা টেরই পেলো না।
এতকিছুতে মাথা না ঘামিয়ে রুপ্সিতা ব্যাগ গুলো চেইক করে দেখলো একটাতে দুটো পেটিকোট আর ব্লাউজ।আর দুটোতে আলাদা দুটো শাড়ী।শাড়ীগুলো সুন্দরই আছে খারাপ না।উল্টে পাল্টে দেখার মাঝেই আলিফ বাথরুম থেকে বেরিয়ে এসেছে।
রুপ্সিতার হাতে শাড়ী দেখে মুখটাকে গম্ভীর করে বলল,আপাতত দুটো শাড়ি এনেছি।আর যা লাগবে ভাবিকে নিয়ে তুমি পছন্দ করে নিয়ে এসো।

রুপ্সিতা আলিফকে আগা থেকে গোড়া একবার স্ক্যান করে নিলো।একদম হিরো হিরো ভাব নয়।একদম সাদামাটা সাধারণ একটা ছেলে।তবে নিজেকে পরিপাটি করে রাখে সবসময়।
একটা মানুষ যেমনই হোক সে যখন নিজেকে পরিপাটি করে গুছিয়ে তোলে তখন না চাইতেও তাকে ভালো লাগে।যে মানুষটাকে প্রথমবার দেখলেই তার চেহারা ভালো লেগে যায়?দিন যেতে যেতে সেই মানুষটার প্রতি ভালোলাগাটাও কমতে থাকে।আবার একজন মানুষকে আপনার প্রথম দেখাতেই ভালো লাগলো না।কিন্তু তার সাথে চলতে চলতে সখ্যতা গড়ে উঠবে।তখন আপনা আপনিই তাকে আপনার ভালো লাগবে।তার দিকে তাকিয়ে থাকতে ভালো লাগবে মোট কথা তার সব কিছুই তখন আপনার ভালোলাগবে।হয়তো প্রথম দেখায় সে আপনাকে রূপ দিয়ে মুগ্ধ করতে পারবেনা ঠিকই কিন্তু তার আচরণ,ব্যবহারে আপনাকে মুগ্ধ করতে পারবে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আলিফ হালকা গলা ঝেড়ে বলল,সকালে তুমি আমাকে কি যেন বলেছিলে?
আর এখন তুমিই আমার দিকে তাকিয়ে আছো।স্ট্রেঞ্জ না?
রুপ্সিতা আলিফের উপর থেকে নিজের দৃষ্টি সরিয়ে নিলো।অন্যদিকে তাকিয়ে বলল,আপনি কোন হিরো নয় যে আমি আপনার দিকে তাকিয়ে থাকবো।একটা জলজ্যান্ত মানুষ চোখের সামনে দাঁড়িয়ে থাকলে কতক্ষণ দৃষ্টি নিচের দিকে রাখা যায়?
আলিফ এক ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলো,হিরো হলে তাকিয়ে থাকতে বুঝি?
রুপ্সিতা বিরক্ত হয়ে বলল,আপনার সাথে ফালতু বকার টাইম নাই আমার।
আলিফ ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে হাত দিয়ে চুল ঝাড়তে ঝাড়তে বলল,তোমার বাসা থেকে বই পত্র আনার ব্যবস্থা করো।কতদিন আর পড়ালেখায় গ্যাপ দিবে?

রুপ্সিতা ভ্রু কুচকে বলল,বই কি আজকেই লাগবে?
আলিফ খাটে এসে বসে বলল,নাহ দু’তিন মাস পরে হলেও চলবে।
রুপ্সিতা বিড়বিড় করে বলল,আস্ত একটা ত্যাড়া।সুন্দর করে কথা বলতেই জানেনা।
আলিফ রুপ্সিতার দিকে নিজের মুঠোফোন এগিয়ে দিয়ে বলল,তোমার বাসায় ফোন করে জানিয়ে দাও বই রেডি করে রাখতে।আমি একটু পর গিয়ে নিয়ে আসবো।
রুপ্সিতা হাত বাড়িয়ে মোবাইলটা নিয়ে বারান্দায় চলে গেলো।মায়ের নাম্বারে কল দিলো রিং হওয়ার কিছুক্ষণ পরই রিসিভ হলো।
রুপ্সিতার মা জুলেখা বেগম কল রিসিভ করেই সালাম দিলো।
রুপ্সিতা সালামের উত্তর দিয়েই বলল,কেমন আছো?

রুপ্সিতার কন্ঠ শুনে জুলেখা বেগম পানশে মুখে জবাব দিলেন ভালো।তুই কেমন আছিস?ওই বাড়িতে সব ঠিকঠাক আছেতো?
রুপ্সিতা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,ওসব নিয়ে তোমাদের ভাবতে হবেনা।চিন্তা করোনা আমার জন্য তোমাদের কাছে এবাড়ি থেকে নালিশ যাবেনা।
জুলেখা বেগম চুপসে গেলেন।আবারো মেয়েকে জিজ্ঞেস করলেন ও বাড়ির সবাই,জামাই ভালো আছেতো?
রুপ্সিতা শক্ত কন্ঠে জবাব দিলো,সবাই ভালো আছে।আমি ফোন দিয়েছি যেকারণে সেটাই বলা হলোনা।
আমার বইগুলো গুছিয়ে রেখো।উনি কিছুক্ষণ পরে গিয়ে নিয়ে আসবেন।রাখছি বলেই রুপ্সিতা দেরি না করে লাইন কেটে দেয়।দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রুমের দিকে পা বাড়ায়।
সকালে ঘুম থেকে উঠেই আগে নামায পড়ে নেয় রুপ্সিতা।এটা ওর প্রতিদিনের রুটিন।সকালে নামায পড়ে আবার ঘুমাবে ঘুম না আসলে কিছুক্ষণ হাটাহাটি করে।

আলিফ এখনো ঘুমাচ্ছে।রুপ্সিতা ভ্রু কুচকে ভাবছে, লোকটা কি প্রতিদিন এভাবে পড়ে পড়ে ঘুমায়?নামায পড়ে না?
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে এখনো সময় আছে নামাযের।আগে পড়তো কি না রুপ্সিতার জানা নেই এখন পড়তে হবে।
আলিফের মাথার কাছে গিয়ে রুপ্সিতা ডাকতে লাগলো,শুনছেন!
এই যে শুনছেন?উঠুন!নামাযটা পড়ে নিয়ে পরে ঘুমাবেন।
আলিফের উঠার কোনো নাম নেই।সে তো ঘুমিয়ে কাঁদা।
রুপ্সিতা বেশ কয়েকবার ডাকার পরেও যখন আলিফ উঠলো না তখন আলিফের বাহু ধরে ধাক্কা দিলো।

আলিফ চোখ খুলে তাকায়।কি হচ্ছে বুঝতে পারছেনা।ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে রুপ্সিতার দিকে।এখনো চোখে ঘুমের রেশ।
আলিফকে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে রুপ্সিতা ভ্রু কুচকে বলল,কি?
আলিফ আবার চোখ বুঝতে গেলেই রুপ্সিতা আরেকটা ধাক্কা মারে।এবার আলিফের ঘুম ছুটে যায়।রেগে গিয়ে বলে,
সমস্যা কি তোমার?মাঝরাতে এরকম করছো কেন?জিন পরী আছর করেছে নাকি?
রুপ্সিতা কপট রাগ দেখিয়ে বলল,জিন পরী আপনাকে আছর করেছে।দেখেন এখন সকাল মাঝ রাত না।তাড়াতাড়ি নামায পড়ে নিন।আপনি নামায পড়েন না?
আলিফ দমে গিয়ে মুখটা ছোট করে বলল,মাঝে মাঝে পড়ি আবার গ্যাপ যায়।
রুপ্সিতা বলল,আচ্ছা ঠিক আছে আপনি তাড়াতাড়ি ওযু করে নামায পড়ে নিন।সময় কিন্তু বেশি নেই।একটু পরেই হয়তো সূয্যি মামা উঁকি দিবে তখন নামায পড়া যাবেনা।
আলিফ আর কথা না বাড়িয়ে ওযু করে নামায পড়ে নেয়।নামায শেষে আবারো শুয়ে পড়ে।সাড়ে সাতটা বাজলেই উঠে পড়বে।অফিস যেতে হবে।

দুপুরের খাবার খেয়ে সবাই ভাতঘুম দিয়েছে।রুপ্সিতার ঘুম আসছেনা।এই বাড়ির কিছুই ও চেনেনা।বিয়ের পর থেকে বাড়ির ভেতরেই ছিলো।তাই এখন ভাবলো একটু ছাদে যাবে।যেই ভাবা সেই কাজ।ছাদে গিয়ে বোকা বনে গেলো।পুরো ছাদে খা খা করা রোদ।মাত্রতো দুপুর এখনতো রোদ থাকবেই।কিন্তু রুপ্সিতার এতকিছু মনে ছিলোনা।অগত্যা ছাদ থেকে নেমে রুমে এসেছে।
মুঠোফোন হাতে নিয়ে ওর একমাত্র বান্ধবী তিন্নিকে কল দিলো।
কল রিসিভ করে রুপ্সিতাকে কিছু বলতে না দিয়েই তিন্নি বলতে শুরু করলো,
হারামি!তোর তিনচারদিন কোনো খোজ নাই কেন?কল দি ফোন বন্ধ।মরছিলি নাকি?
নাকি বিয়েসাদি হয়ে গেছে জামাই আর সংসার নিয়া ব্যস্ত তাই আমার খবর নিতে পারতাছস না।
রুপ্সিতা শুকনো ঢোক গিলে।তিন্নিকে কিভাবে বলবে ওর বিয়ে হয়ে গেছে।তিন্নি ওকে কাঁচা চিবিয়ে খাবে।
তিন্নি আবারো ধমক দিয়ে বলে,ওই বেডি কথা কছনা কেন?আমার কথার উত্তর দে।

রুপ্সিতা মিনমিনে কন্ঠে বলে,আমার বিয়ে হয়ে গেছে।
তিন্নি বলে,মজা করার আর মানুষ পাইলিনা।
রুপ্সিতা অসহায় কন্ঠে বলে,আমি সত্যি বলছি।একটুও মজা করছিনা।
রুপ্সিতার কন্ঠ শুনে তিন্নির মনে হচ্ছে মেয়েটা সত্যি বলছে।
চমকে উঠে তিন্নি বলল,কবে বিয়ে হইছে?কিভাবে হইছে?আমি তোর একমাত্র বেষ্টু আমাকে দাওয়াত দিলিনা।অভিশাপ দিলাম একশ বাচ্চার জননী হবি তুই।
রুপ্সিতা বলল,বিয়েটা হুট করেই হয়ে গেছে।তাই তোকে জানাতে পারিনি।কালকে আমাদের বাড়ি থেকে মোবাইল নিয়ে এসে এখন তোকে কল দিলাম।

শোভনের ব্যপারটা আর জানালো না তিন্নিকে।এখন ফোনে এসব বলা সম্ভব নয়।কথা বললে আরো বাড়বে।
আরো কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন রেখে দিলো রুপ্সতা।একা একা সময় কাটছেনা।রোদ ও এখনো পড়েনি।তাহলে ছাদে গেলে সময় কাটতো।কোনো উপায় না পেয়ে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো।অনেক্ষণ পর দুচোখ জুড়ে ঘুম নেমে এলো।
রাতে সবাই একসাথে ডিনার করতে বসেছে।বাবা,মা,ইরিন ভাবি,আরিফ ভাইয়া,সানি,আলিফ সবাই একসাথে।খাবার খেতে খেতে আলিফের বাবা আলিফকে বলে উঠলো,
তোর বড়মামা নাকি ফোন করেছে বউমাকে নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে ঘুরে আসতে?
আলিফ মুখে এক লোকমা ভাত দিয়ে বলল,বাবা এখন আমার অফিস থেকে ছুটি পাওয়া যাবেনা।কিছুদিন অফিসে কাজের চাপ বেশি।
চট্টগ্রাম যাওয়ার কথা শুনে রুপ্সিতা খুশি হয়ে গেছে কিন্তু সবার সামনে প্রকাশ করছেনা।আলিফের কথা শুনে হাসি খুশি মনটা বিষিয়ে গেছে।

আরিফ বলল,অফিসের কাজ সারাজীবনই থাকবে।তাই বলে বউকে নিয়ে ঘুরতে যাবিনা?রুপ্সিতা তুমি কি বল?ঘুরতে যাবে তুমি?
আরিফের কথায় রুপ্সিতা দাঁত কেলিয়ে চেয়ে রইলো।যার মানে ও চট্রগ্রাম যেতে চায়।
আরিফ বলল,দেখেছিস রুপ্সিতা ও যেতে রাজি আছে।এবার তুই যেভাবে হোক বসকে রাজি করিয়ে ছুটি নে।
আলিফ পড়লো বিপাকে।এদিকে ফ্যামিলির ঠেলা ওই দিকে এখন ছুটি চাইলে বস দিবে ঝাড়ি।কোনরকম খাওয়া শেষ করে রুমে গেলো।ওর আগেই রুপ্সিতা খেয়ে রুমে চলে এসেছে।
আলিফ রুমে গিয়ে দেখে রুপ্সিতা খাটের উপর বসে পা দোলাচ্ছে।আলিফকে দেখে বলল,আমরা যে চট্টগ্রাম যাবো আমার ড্রেস কিনতে হবে তো।আমি কি পড়ে যাবো?

আলিফ বিরক্তি কন্ঠে বলল,এত লাফালাফি করে লাভ নেই।বস এখনো ছুটি দেয়নি আমাকে।ছুটি না দেওয়ার চান্স বেশি তাই এত খুশি হইওনা।
রুপ্সিতা গাছাড়া ভাব নিয়ে বলল,ছুটি কিভাবে নিবেন সেটা আপনার দায়িত্ব।আর শপিং কিভাবে করবো,কোথায় কোথায় ঘুরবো সেসকল দায়িত্ব আমার।
মেয়েটার আগ্রহ দেখে আলিফ সিদ্ধান্ত নিলো কালকেই বসের সাথে ছুটির ব্যাপারে কথা বলবে।
রুপ্সিতা বিছানা ঝেড়ে বালিশ ঠিক করে কাঁথা নিয়ে শুয়ে পড়েছে।আলিফ কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
তুমি প্রতিদিন কাঁথা নিয়ে নিজেকে মুড়িয়ে রাখো।আমার কাঁথা গায়ে দিতে মন চায় না?
রুপ্সিতা ভেংচি কেটে বলল,আপনি অন্য আরেকটা কাঁথা নেন।এটা আমার লাগবে ছোট বেলা থেকেই আমার এই অভ্যাস।কাঁথা ছাড়া ঘুমাতে পারিনা।
আলিফ বলল,আমি এখন আরেকটা কাঁথা পাবো কই?আমার রুমে এই একটাই কাঁথা।
রুপ্সিতা ভাবলেসহীনভাবে বলল,তো আমি কি করতাম?কাঁথা একটা আপনার রুমে সেটা আপনার দোষ।
আলিফ ধৈর্য হারিয়ে বলে,হইছে আমাকে কাঁথা দিতে হবেনা।তারপরেও কথা পেঁচিয়ে না।আলিফ খাটের এক প্রান্তে রুপ্সিতা অন্যপ্রান্তে।মাঝখানে কোনো বর্ডার নেই তারপরও মনে হচ্ছে দুজন দু দেশের নাগরিক।

আলিফ অফিসে বসের থেকে অনেক কষ্টে ছুটি নিয়েছে।বস এখন ছুটি দিতে চাইছিলেন না।তারপরও সাতদিনের ছুটি নিয়েছে পরশু থেকে টাইম শুরু।এর মাঝে বস যদি ফোন করে চট্টগ্রামে ঘোরাঘুরি বাদ দিয়ে অফিসে আসতে হবে।আলিফ রাজি হয়ে যায় বসের শর্তে।নয়তো ছুটি দিবে না।
বিকালে বাসায় গিয়ে আগে শাওয়ার নিয়ে নেয় আলিফ।আজকে যা গরম পড়েছে ঘামে পুরো শরীর চুপচুপে হয়ে গেছে।
রুপ্সিতা ঘরে নেই।অফিস থেকে এসে নিচে দেখে এসেছে সবার সাথে।
আলিফের মা এসে বলল,তুই আজ আর কোথাও যাস না।ইরিনের বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।তোর ভাইয়া,ইরিন,আমি আর তোর বাবা সেখানেই যাচ্ছি।আমি আর তোর বাবা রাতেই ফিরবো।ইরিন আর আরিফ থাকবে।
আলিফ ঠিক আছে বলে বারান্দায় চলে যায়।

সবাই চলে গেছে ইরিনের বাবার বাসায়।এখন শুধু রুপ্সিতা আর আলিফ বাসায় আছে।বিকালে মেয়েটাকে নিচে দেখেছে এখন সন্ধ্যা অথচ এর মাঝে একবার ও রুপ্সিতার দেখা মিলে নি।এসব ভাবনার মাঝেই রুপ্সিতা রুমে ঢুকে হাতে ট্রে।সন্ধ্যার নাস্তা হিসেবে পাকোড়া আর চা বানিয়েছে।আলিফ এক কাপ চা হাতে নিয়ে তাতে চুমুক দিয়ে বলে বাহ বেশ ভালো চা বানাওতো তুমি।
আমার মা ও অনেক ভালো চা বানায়।তোমার আর মায়ের দুজনের বানানো চা ভালো।তবে দুটোর স্বাদই আলাদা।
রুপ্সিতা পাকোড়া খাচ্ছে আর আলিফের পেটের দিকে তাকাচ্ছে।রুপ্সিতার দৃষ্টি লক্ষ্য করে আলিফ নিজেও এবার নিজের পেটের দিকে তাকালো।কিছু দেখতে না পেয়ে বলল,কি?এভাবে আমার পেটের দিকে কি দেখো?
রুপ্সিতা ভাবুক হয়ে বলল,আপনি কি জীম করেন?আপনার পেট দেখি একেবারে স্লিম কোনো ভূড়ি নাই।
আলিফ ভ্রু কুচকে বলল,কেন?তোমার কি ভুড়িওয়ালা ছেলে পছন্দ নাকি?
রুপ্সিতা নাক মুখ কুচকে বলল,ছ্যাহ!

আলিফ পাকোড়ায় কামড় বসিয়ে বলল,জীম করা ছেলেদের পেটই কি শুধু স্লিম থাকে?আশেপাশে তাকিয়ে দেখো অনেক ছেলে আছে জীম না করেও আমার মতো পেট স্লিম।
আলিফের কথা শুনে রুপ্সিতা চারদিকে তাকানো শুরু করে দিয়েছে।কই ওতো আশেপাশে কোনো ছেলেকে দেখছেনা আলিফকে ছাড়া।
আলিফ রুপ্সিতার তাকানো দেখে ওর মাথায় গাট্রা মেরে বলল,আমি তোমাকে এভাবে তাকাতে বলিনি।কথার কথা বলেছি।
চা খাওয়া শেষে রুপ্সিতা কাপ আর ট্রে হাতে তুলে রান্নাঘরে পা বাড়ালো।

এখন আর কি করবে কোন কাজ নেই।তারচেয়ে বরং রাতের রান্নাটা সেরে ফেলা যাক।ফ্রিজ থেকে মাছ নামিয়ে ভিজিয়ে রেখেছে।
অনেক্ষণ যাবত রুপ্সিতাকে রুমে না আসতে দেখে আলিফ নিচে নেমে এলো রুপ্সিতা কি করছে দেখতে।রান্নাঘরে খুট খুট আওয়াজে সেদিকে গিয়ে দেখলো রুপ্সিতা রান্না করছে।আলিফ গলা উঁচিয়ে বলল,তোমার পড়ালেখা নেই?এখানে কি করো?
রুপ্সিতা পেছনে আলিফকে দেখে বলল,একেবারে চট্টগ্রাম থেকে এসে পড়তে বসবো।আর এখন রাতের রান্না করছি।
আলিফ উঁকি মেরে বলল,কি রান্না করছো?

রুপ্সিতা কাজ করতে করতে বলল,ভাত,মাছ ভাজা,ডাল আর আলু ভর্তা।এগুলো ছাড়া আমি আর তেমন রান্না জানিনা।যদি খাবার খেয়ে উল্টাপাল্টা কমপ্লিমেন্ট দিছেন তো পাতিল দিয়ে পিটিয়ে আপনাকে সোজা করে দেবো।
আলিফ চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।এই মেয়ে বলে কি?ওকে নাকি পাতিল দিয়ে পিটাবে।
রুপ্সিতার কথা শুনে আলিফ চোখ বড় বড় করে বলল,তুমি দু’আঙ্গুলের পুচকি মেয়ে হয়ে আমাকে পাতিল দিয়ে পিটাবে?এতো সাহস আছে তোমার?
রুপ্সিতা ঘাড় বেকিয়ে আলিফের দিকে তাকিয়ে বলল,আগে পিটাবো পরে যা হওয়ার হবে।এখন এখান থেকে বের হন।পরে রান্না খারাপ হলে রাতে না খেয়ে থাকতে হবে।

আলিফ কথা না বাড়িয়ে বেরিয়ে গেলো।কারণ রাতে না খেলে ওর অর্ধেক রাতই এপাশ ওপাশ করতে করতে কাটে।সহজে ঘুম আসেনা।
রুপ্সিতা রান্না শেষ করে ওয়াশরুমে গিয়েছে।ফ্রেশ হওয়া দরকার।রান্না করে ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে গেছে।আলিফ ল্যাপটপে কাজ করছে মনযোগ দিয়ে।
এখন রাত ৮ টা বাজে।এত তাড়াতাড়ি ডিনার করবেনা।আরো পরে ডিনার করবে।রুপ্সিতা আঁচলে হাত মুছতে মুছতে খাটের একপাশে বসেছে।হঠাৎ রুমের লাইট সব অফ হয়ে গেছে।রুপ্সিতা অন্ধকারের মধ্যেই আলিফকে জিজ্ঞেস করলো,কি হয়েছে?লাইট অফ হয়ে গেছে কেন?

আলিফ ল্যাপটপ বন্ধ করে বলল,কারেন্ট চলে গেছে তাই লাইট অফ হয়ে গেছে।এই ইজি ব্যাপার তোমার মাথায় ঢুকে না?
রুপ্সিতা মুখ ছোট করে বলল,তাহলে মোম জ্বালাচ্ছেন না কেন?
আলিফ ফোনের ফ্ল্যাশ অন করে ড্রয়ার থেকে মোম খুজে রান্না ঘরে গেছে মোম জ্বালাতে।রুপ্সিতা ও পিছু পিছু এসেছে।একলা অন্ধকারে বসে থাকা ওর পক্ষে সম্ভব নয়।নিজের বাড়ি হলে থাকা যেত।
আলিফ মোম জ্বালিয়ে নিয়ে মোবাইলের ফ্ল্যাশ অফ করে দিয়েছে।দুজনে রুমে ফিরে আসতেই রুপ্সিতা চেঁচিয়ে উঠে বলল,ঐ দেখেন পাশের বিল্ডিং এ আলো জ্বলছে।তারমানে কারেন্ট আছে।
আলিফ তাকিয়ে দেখলো সত্যিই আশেপাশের বিল্ডিং গুলোতে আলো জ্বলছে।তাই বলল,মনে হয় আমাদের মেইন সুইচে প্রবলেম হইছে।
রুপ্সিতা বলল,ঠিক আছে এখন মোম নিয়ে আমার সাথে আসুন।
আলিফ ভ্রু কুচকে বলল,কোথায় যাবো?

রুপ্সিতা পেছন ঘুরে বলল,আরে মেইন সুইচে কি হয়েছে ঠিক করতে হবেনা?
আলিফ ব্যঙ্গ করে হেসে বলল,তুমি ঠিক করবে মেইন সুইচের প্রবলেম।সব কিছুতেই নিজেকে এক্সপার্ট মনে করো কেন?
রুপ্সিতা বিরুক্তি আর রাগ মিশ্রিত কন্ঠে বলল,আর একটা কথা বললে মোমের আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেবো।
আলিফ এগিয়ে এসে বলল,এই মেয়ে তোমার দেখি আজ সাহস বেড়েছে।একবার বলছো পাতিল দিয়ে পিটাবে।এখন বলছো মোম দিয়ে পুড়িয়ে ফেলবে।

রুপ্সিতা আবারো বলল,আপনি এতো কথা কেন বলছেন?আমার সাথে আসলে আপনার কি হয়?নাকি অন্ধকারে বসে থাকতে ভালো লাগে।রুপ্সিতা নিজের মোবাইল নিয়েই হাটা ধরলো।অগত্যা আলিফকে ও পিছু পিছু যেতে হলো।
ভালো করে মেইন সুইচ দেখে রুপ্সিতা দেখলো কেউ মেইন সুইচ অফ করে দিয়েছে।রুপ্সিতা মেইন সুইচ অন করতেই লাইট সব জ্বলে উঠলো।আলিফের দিকে তাকিয়ে ভাব নিয়ে হাত দিয়ে বাতাশ ঝাড়ার মতো করে হেটে রুমে চলে গেছে।
আলিফ সেখানে দাঁড়িয়ে রুপ্সিতার যাওয়া দেখছে।মেয়েটা কি ভাব দেখাচ্ছে ও কে।যেন ও মেইন সুইচ অন করতে জানেনা।
আলিফের বাবা ফোন করে জানিয়ে দিয়েছেন উনারা আজ আর ফিরবেনা।ইরিনের মা বাবা আসতে দিচ্ছেনা।উনারা কালকে সকালে ফিরবেন।দুজনে মিলে ডিনার সেরে নেয়।

রুপ্সিতা মোবাইল হাতে নিয়ে একমনে কিছু দেখে চলেছে।আলিফ কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থেকে বলল,মুভি দেখবে?
রুপ্সিতা আড় চোখে আলিফের দিকে তাকিয়ে বলল,কি মুভি?
আলিফ ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে ভাবুক হয়ে বলল,চলো আমরা আজ হরর মুভি দেখবো।
রুপ্সিতা সিটকে দূরে সরে বলল,জীবনেও না।আমি দেখবোনা।পরে রাতে আমার ঘুম আসবেনা।
রুপ্সিতাকে ভয় পেতে দেখে আলিফ শয়তানি হাসি দিয়ে বলল,আজ তো তোমাকে আমি হরর মুভি দেখাবোই।
রুপ্সিতা বলল,আমি দেখবোনা কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকবো।
আলিফ এদিক ওদিক খুজে কিছু না পেয়ে কাবার্ড থেকে রুপ্সিতার একটা শাড়ী বের করে সোফায় রাখে।
রুপ্সিতা চোখ ছোট ছোট করে বোঝার চেষ্টা করছে আলিফ কি করতে চায়।
হুট করে রুপ্সিতাকে কোলে তুলে সোফায় নিয়ে ছেড়ে দেয়।এরপর শাড়ী দিয়ে সোফার সাথে ওর হাত দুটো বেঁধে ল্যাপটপে হরর মুভি অন করে।

রুপ্সিতা ছুটার জন্য ছটপট করছে আর বলছে ও হরর মুভি দেখবেনা ওর হাতের বাঁধন খুলে দিতে।কিন্তু কে শুনে কার কথা।আলিফ রুপ্সিতার কথায় কান না দিয়ে মুভি দেখতে থাকে।
ভূত আসলেই রুপ্সিতা এক চিৎকার দিয়ে ওঠে।আর আলিফ হেসে কুটিকুটি হয়ে যায়।অনেক্ষণ পর রুপ্সিতার কোনো সাড়া না পেয়ে আলিফ তাকিয়ে দেখে রুপ্সিতা ঘুমিয়ে গেছে।মুভি অফ করে রুপ্সিতাকে ডাকে কিন্তু রুপ্সিতা সাড়া দেয়না।অনেক্ষণ ডাকাডাকির পরও যখন রুপ্সিতা সাড়া দিলোনা তখন আলিফ ঘাবড়ে গেলো।মেয়েটা ভয়ে অজ্ঞান হয়ে গেছে মনে হয়।হাতের বাধন খুলে।গ্লাসে পানি ঢেলে রুপ্সিতার মুখে ছিটা দেওয়ার আগেই রুপ্সিতা চোখ মেলে আলিফের পিঠের মাঝখানে একটা কিল বসিয়ে দিলো।
আলিফের পিঠ মনে হয় বাঁকা হয়ে গেছে।এই চিকন মেয়ের গায়ে এত শক্তি?
এই তুমি না অজ্ঞান হয়ে গেছিলে ভূতের ভয়ে?
রুপ্সিতা দাঁত কিড়মিড় করে বলল,আমি এরকম অজ্ঞানের ভান না করলে তো আপনি মুভি অফ করতেন না আর না আমার হাতের বাঁধন খুলতেন।

সোফা থেকে ধপাধপ পা ফেলে খাটে এসে শুয়ে পড়ে রুপ্সিতা।আলিফ ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে আছে।
পরেরদিন সকাল সকাল আলিফের বাবা মা চলে এসেছে।আলিফ অফিসের উদ্দেশ্যে বেরিয়েছে।
ইরিন আসেনি সারাদিন রুপ্সিতার একা একাই কেটেছে।দুপুরের খাবার খেয়ে আজ আর শাশুড়ীকে ঘুমাতে দিলোনা রুপ্সিতা।বউ শাশুড়ী মিলে কিছুক্ষণ গল্প করলো।

বিকালে আলিফ তাড়াতাড়ি ফিরেছে।রুপ্সিতাকে নিয়ে শপিং এ যেতে হবে।দুটো সুতি শাড়ি পড়েতো আর চট্টগ্রাম যাবে না।আলিফ ফ্রেশ হয়ে অফিসে পরে যাওয়া শার্ট চেঞ্জ করে অন্য একটা শার্ট পড়ে নিয়েছে।রুপ্সিতা রেডি হয়ে নিলে দুজনেই বেরিয়ে পড়লো।
শপিং মলে এসে রুপ্সিতা সব ঘুরে ঘুরেই দেখছে কিন্তু কিছু পছন্দ করে কিনতে পারছেনা।আলিফের বিরক্ত লাগছে।বিরক্ত লাগারই কথা সারাদিন অফিসে গাধার খাটুনি খেটে এখন আবার শপিংমলে ঘুরতে হচ্ছে।
আলিফ হালকা রাগ মিশ্রিত কন্ঠে বলল,সমস্যা কি?কিছু কিনছো না।শুধু ঘুরে ঘুরেই দেখছো।
রুপ্সিতা কিছু বলতে নিলেই আলিফ চোখ রাঙিয়ে তাকায়।তারপর তিনটা জামা আর তিনটা শাড়ি দোকানির দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,এগুলো প্যাক করেন।

রুপ্সিতা কটমট চোখে তাকিয়ে আছে আলিফের দিকে।আলিফের এত কিছু যায় আসে না।শপিং ব্যাগ গুলো হাতে নিয়ে রুপ্সিতাকে নিয়ে বেরিয়ে যায়।রুপ্সিতাকে কিছু খাবে কি না জিজ্ঞেস করতেই ও না করে দেয়।ওকে জামা কাপড় পছন্দ করে কিনতে দেয়নি কেন সেই জন্য রেগে আছে।
অবশ্য আলিফ যদি জামাকাপড় গুলো না কিনে রুপ্সিতার পছন্দের কিনতো তাহলে আজ সন্ধ্যা কেন সারারাত কেটে গেলেও ওর ঠিকমতো পছন্দ হতো না।এই জামাটা সুন্দর তো ওড়না সুন্দর না।একশ একটা খুত ধরে।
রুপ্সিতা কিছু খাবেনা জানাতেই আলিফ গাড়ি দেখতে লাগলো।রুপ্সিতার রাগ আরো বেড়ে গেলো।ও খাবেনা বলেছে তো কি হয়েছে জোর করে খাওয়াতে পারলো না?
এই জন্যই লোকে বলে মেয়েদের মন বোঝা বড় দায়।

বাসায় এসেই আলিফ শুয়ে পড়েছে।সারাদিন অনেক ধকল গেছে।রুপ্সিতা ধপধপ পা ফেলে হাটছে।ও বোঝাতে চায় ও রেগে আছে কিন্তু আলিফ পাত্তাই দিচ্ছেনা।চোখের উপর ডান হাত দিয়ে শুয়ে আছে।ফ্রেশ হয়ে এসে রুপ্সিতা জামাকাপড় গুলো খুলে খুলে দেখছে।এখন এই জামাগুলো ভালো লাগছে।যদি ও নিজে পছন্দ করে আনতো তখন বাসায় আনার পর আর ভালো লাগতো না।এই জন্য মায়ের কাছে অনেক বকা শুনতে হতো।কিন্তু এখন আর শুনতে হয়না।
দুবোন মিলে কত দুষ্টুমি করতো।সেজন্য ও মা অনেক বকতো বাবার কাছে বিচার দিতো।কিন্তু বাবা কখনো তাদের দুবোনকে কিছু বলতো না।কথা গুলো মনে করেই চোখ দুটো সিক্ত হয়ে উঠলো রুপ্সিতার।
ফোনটা আলিফের হাতে দিয়ে বলে বই নিয়ে আসার সময় আমার ড্রয়ারে মোবাইল রাখা আছে ওটা নিয়ে আসবেন।
আলিফ মুখে বিরক্তি ফুটিয়ে বলল,আমি এখন তোমার ড্রয়ার হাতাতে যাবো?
রুপ্সিতা বলল,আরে বুকশেলফের ড্রয়ারেই আছে।খুললেই পেয়ে যাবেন।

আলিফ মোবাইলটা হাতে নিয়ে কাবার্ড খুলে একটা শার্ট আর প্যান্ট নিয়ে চেঞ্জ করতে চলে যায়।সন্ধ্যা নেমে এসেছে।রুপ্সিতার বইগুলো এনে দিয়ে বন্ধুদের সাথে দেখা করতে যাবে।চাকরির কারনে সচরাচর দেখা করা হয় না।
রুপ্সিতাদের ড্রইংরুমে বসে আছে আলিফ।রুপ্সিতার মা জামাই আসবে শুনে আগেই হরেকরকম নাস্তার ব্যবস্থা করে নিয়েছেন।আলিফ আসার দেরি কিন্তু উনার নাস্তা সামনে আনতে দেরি হয়নি।আলিফ কোনোরকম হাসিমুখে একটুকরো আপেল মুখে দিয়ে বলল,আমাকে রুপ্সিতার রুমটা দেখিয়ে দিন।আমাকে বই নিয়ে তাড়াতাড়ি যেতে হবে।

জুলেখা বেগম বললেন,সে কি কথা।তুমিকি বই নিয়ে এখনই যাবে নাকি?তোমার শশুর আসলে একেবারে ডিনার করে তারপর যাবে।
আলিফ কোনোভাবে উনাকে মেনেজ করে রুপ্সিতার বইগুলো একে একে বেঁধে নিলো।সব বুকশেলফের উপরই ছিলো তাই আর এদিক সেদিক খুজতে হয়নি।বই বাঁধা শেষে রুপ্সিতার কথা অনুযায়ী ড্রয়ার খুলতেই একটা এন্ড্রয়েড সেট পেয়ে সেটা পকেটে পুড়ে নেয়।আর দেরি না করে জুলেখা বেগমকে বিদায় জানিয়ে বই গুলো গাড়িতে তুলে বাসায় রওনা হয়।
রুমে ঢুকেই প্রথমে আলিফের চোখ পড়ে রুপ্সিতার উপর।আগের শাড়ীটা পাল্টে ওর আনা একটা সুতি শাড়ী গায়ে জড়িয়েছে।
আসলে দুপুরে পরা শাড়ীটা জর্জেট ছিলো তাই সেটা পাল্টে সুতি শাড়ীটা পড়েছে।
মেয়েদের যতই দামী জামাকাপড় থাকুক সে কিন্তু কমদামি সুতি জামাকাপড় পড়েই কমপোর্ট ফিল করে।এখন রুপ্সিতার ও হয়েছে সেরকম।

আলিফকে রুমের দরজায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রুপ্সিতা এগিয়ে গিয়ে এক বান্ডেল বই আলিফের হাত থেকে টেনে নেয়।আলিফের হুস আসতেই নিজের দৃষ্টি সংযত করে নেয়।রুমে ঢুকে হাতে থাকা বাকি বইগুলো খাটের উপর রাখে।নিজের রুমের টেবিলটা খালি করে দিয়ে রুপ্সিতাকে বলল,এবার তুমি বইগুলো গুছিয়ে রাখো।পকেটে হাত দিয়ে বলে ও হ্যাঁ তোমার ফোন।
রুপ্সিতা হাত বাড়িয়ে ফোনটা নিলো।
আলিফ আবার বেরিয়ে গেলো।উদ্দেশ্য বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়া।রুপ্সিতা কাবার্ড খুলে নিজের শাড়ী রাখতে গিয়ে দেখলো সব জায়গা আলিফের শার্ট আর টি-শার্ট দিয়ে ভরপুর।এগুলে একপাশে ঠেলে রেখে নিজের তিনটে শাড়ি গুছিয়ে রাখলো।কাবার্ড আটকাতে গিয়ে একটা নীল রঙের টি-শার্টের দিকে চোখ আটকে গেলো।হাত বাড়িয়ে টি-শার্ট টি নিয়ে গায়ের উপর দিয়ে আয়নায় নিজেকে দেখছে।পরতে পারলে মনের শখ মিটতো।দরজায় উঁকি দিয়ে দেখলো কেউ নেই।একবার পড়ে দেখা যাক।টি-শার্ট টা পড়তে না পড়তেই দরজা ঠেলে আলিফ রুমে প্রবেশ করে।

ও যাওয়ার সময় ওয়ালেট ভুলে রেখে গেছিলো।সেটা নিতে এসে দেখে রুপ্সিতা ওর টি-শার্ট পড়ে আয়নায় একবার এক পোজ দিচ্ছে।আবার বলছে,উফ!আমি কি যে জোস,আয়নার সামনে দাঁড়াই মারি জোস জোস পোজ।
আলিফকে অসময়ে এখানে দেখে রুপ্সিতা থতমত খেয়ে গেলো।ওর গায়ের দিকে একবার নজর দিচ্ছেতো একবার আলিফের দিকে নজর দিচ্ছে।ঝট করে টি-শার্ট খুলতে হাত দিলেই আলিফ মুখ বাঁকিয়ে বলে,খুলতে হবে না।যার কাছ থেকে লুকানোর জন্য খুলতেছো সে অলরেডি দেখে ফেলেছে।
লজ্জায় রুপ্সিতার মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না।গাল দুটো লাল হয়ে গেছে।মাথ উঁচু করতেও কেমন দিধা হচ্ছে।
রুপ্সিতাকে এভাবে লজ্জা পেতে দেখে আলিফ মিটিমিটি হাসছে।আরেকটু লজ্জা বাড়ানোর জন্য জড়ানো কন্ঠে ডেকে উঠলো,রুপ্সি!
আলিফের কন্ঠ যেন রুপ্সিতার গায়ে হিম ধরিয়ে দেওয়ার মতো।এই মুহূর্তে এখানে দাঁড়িয়ে থাকা ওর পক্ষে সম্ভব নয়।দৌঁড়ে বারান্দায় চলে গেলো।

আজকে শহর তোমার আমার পর্ব ১+২+৩

এদিকে আলিফ হাসছে।এইটুকুতেই এত লজ্জা?সামান্য ব্যাপারেও কেউ লজ্জায় নুইয়ে পড়তে পারে যা আজ দেখলো আলিফ।তারপর মায়ার কথা ভাবে।মায়া কখনো এসব ছোট খাটো ব্যাপার নিয়ে লজ্জা পেত না।আজ যদি রুপ্সিতার জায়গায় মায়া থাকতো তাহলে ব্যাপারটা অন্যরকম হতো।এই লজ্জা রাঙা গাল দুটো ছুয়ে দিতো।কিন্তু হুট করেতো আর রুপ্সিতার গাল দুটো ছুয়ে দিতে পারবেনা।
আলিফ আবারো বেরিয়ে গেলো।
রাত এগারোটায় বাসার সামনে এসে কলিংবেল বাজাতেই ওর মা দরজা খুলে দিয়ে বলে,নতুন বিয়ে করেছিস কোথায় বউকে একটু সময় দিবি তা না করে রাত করে বাসায় ফিরছিস?

আলিফ কানে হাত দিয়ে বলল,সরি মা!অনেকদিন পর বন্ধুদের সাথে দেখা হলোতো তাই দেরি হয়ে গেছে।
আলিফের মা বললেন অফিস থেকে সপ্তাহ খানেকের ছুটি নিয়ে নিস।তোর বড় মামা ফোন করেছে।বলেছে রুপ্সিতাকে নিয়ে চট্টগ্রাম যেতে।সেখানে গেলে মামার বাসায় থাকা ও হবে সাথে ঘুরাও হয়ে যাবে।
আলিফ বলল,এখন আমি কোথাও যেতে পারবোনা।তাছাড়া অফিস থেকেও ছুটি দিবেনা এক সপ্তাহের জন্য।
আলিফের মা বলল,আমি এত কিছু জানিনা।তুই তোর মামাকে কিভাবে মানাবি সেটা তুই জানিস।এখন খাবার বেড়ে দিচ্ছি খেয়ে নে।
আলিফ চুপচাপ খাবার খেয়ে রুমে গিয়ে ধপ করে শুয়ে পড়ে।রুপ্সিতা কালকের মতো এখনো নিজেকে শাড়ী আর কাঁথা দিয়ে পেঁছিয়ে রেখেছে।আলিফের হঠাৎ মনে পড়লো সকালে রুপ্সিতার গায়ের দাগগুলোর কথা।মেয়েটার গায়ে এগুলো কিসের দাগ?দেখেতো মনে হলো লাঠির আঘাত।কিন্তু কে মারবে এতবড় মেয়ে কে?

আজকে শহর তোমার আমার পর্ব ৭+৮+৯