আজকে শহর তোমার আমার পর্ব ১৩+১৪+১৫

আজকে শহর তোমার আমার পর্ব ১৩+১৪+১৫
জিন্নাত চৌধুরি হাবিবা

ডাক্তার এসে রুপ্সিতাকে চেক-আপ করেছে।সবাই অধির আগ্রহে চেয়ে আছে ডাক্তারের দিকে উনি কি বলেন সেটা শোনার জন্য।ডাক্তার বললেন,উনার শরীরটা একটু উইক।খাওয়া-দাওয়া ঠিকমতো করেনা মনে হয়।অনেক্ষণ পানিতে ভেজার কারণে শরীর ঠান্ডা হয়ে গেছে রাতে জ্বর ও আসতে পারে।আমি কিছু ঔষধ প্রেসক্রিপশনে লিখে দিচ্ছি সেগুলো আনিয়ে নিয়ে উনাকে খাওয়াবেন।
রুপ্সিতার শাশুড়ী ভেবেছেন হয়তো রুপ্সিতা প্রেগন্যান্ট।কিন্তু ডাক্তার উনার আশানুরূপ কথা না বলে অন্য কথা বললেন।উনি বরাবরই ছোট বাচ্চার প্রতি আগ্রহী।তাই রুপ্সিতার অসুস্থতায় এরকম একটা ধারণা করে বসে আছেন।
আরিফ গেছে ডাক্তারকে এগিয়ে দিয়ে সামনের ঔষধ দোকান থেকে রুপ্সিতার জন্য ডাক্তারের বলা ঔষধ গুলো আনতে।আলিফকে রুপ্সিতার কাছেই বসিয়ে রেখে এসেছে।ছোট্ট সানি ড্যাবড্যাব করে রুপ্সিতার দিকে তাকিয়ে থেকে ওর মাকে জিজ্ঞেস করলো,আম্মু!মামনির কি হয়েছে?

ইরিন সানিকে জড়িয়ে নিয়ে বলল,তোমার মামনি একটু অসুস্থ বাবা।
সানি চোখ পিটপিট করে বলল,তাহলে কি মামনি আমার সাথে খেলবেনা?
ইরিন স্মিত হেসে বলল,আগে তোমার মামনি সুস্থ হয়ে নিক তারপর আগের মতো তোমার সাথে খেলবে।
সবাই যে যার ঘরে চলে গেছে।আলিফই সবাইকে পাঠিয়ে দিয়েছে।যেহেতু রুপ্সিতার এখনো জ্ঞান ফেরেনি তাই এখানে থেকে কারো কাজ নেই।আলিফ বলেছে রুপ্সিতার জ্ঞান ফিরলে সবাইকে ডেকে দেবে।
আলিফ রুপ্সিতার পাশে বসে ওর একটা হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে তাকিয়ে রইলো রুপ্সিতার মুখের দিকে।মুখটা শুকিয়ে একটুখানি হয়ে গেছে।চেহারার হাল বেহাল হয়ে গেছে।নিথর দেহটি বিছানার সাথে মিশে আছে।আলিফের বুকের ভেতর কেমন মোচড় দিয়ে উঠছে।মনে হচ্ছে এই মেয়েটার অনুপস্থিতে ও দুমড়ে মুচড়ে শেষ হয়ে যাবে।তখন রুপ্সিতাকে ওয়াশরুমে ওই অবস্থায় দেখে আলিফের কি অবস্থা হয়েছিলো একমাত্র সে বলতে পারবে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আস্তে আস্তে রুপ্সিতার শরীরের তাপমাত্রা বাড়ছে।কিন্তু এখনো জ্ঞান ফিরছেনা দেখে আলিফ চিন্তায় পড়ে যায়।ডাক্তার তো বলে গেছে তাড়াতাড়ি জ্ঞান ফিরবে কিন্তু ডাক্তার যাওয়ার আধা ঘণ্টা হয়ে গেলো অথচ রুপ্সিতার জ্ঞান ফেরেনি।হঠাৎ আলিফ খেয়াল করলো রুপ্সিতার চোখের পাতা নড়ছে।
কিছুক্ষণ পর পিটপিট করে চোখ মেলে তাকায়।আলিফ মিহি কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,এখন কেমন লাগছে রুপ্সি!
রুপ্সিতা আলিফের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।আলিফ ও রুপ্সিতার দিকে তাকিয়ে থাকে উত্তরের আশায়।কিছুক্ষণ এভাবে তাকিয়ে থাকার পর রুপ্সিতার মনে পড়ে যায় সেই ছবি সেই ডায়েরিতে অন্যকাউকে উদ্দেশ্য করে লিখা আলিফের সমস্ত আবেগ,ভালোবাসার কথা।মুহূর্তেই চোখমুখ শক্ত হয়ে আসে রুপ্সিতার।ঝাড়া মেরে আলিফের হাতের মুঠোয় থাকা নিজের হাতটি ছাড়িয়ে নেয়।
আলিফ অবাক হয়ে তাকায় রুপ্সিতার দিকে।
রুপ্সিতা অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নেয়।আলিফ কিছু বুঝতে না পেরে বলে কি হয়েছে খারাপ লাগছে?আচ্ছা আমি সবাইকে ডাকছি।
তারপর আলিফ উঠে গিয়ে সবাইকে ডেকে আনে।রুপ্সিতার শাশুড়ী ওর মাথার কাছে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে বলে কিভাবে পড়েছো তুমি??

রুপ্সিতা কি বলবে?তাই চুপ করে আছে।ওর শশুর বলল,তুমিও না?ডাক্তার কি বললো শুনোনি?মেয়েটার শরীর দুর্বল।
আলিফের মা ইরিনকে বলল,রুপ্সিতার জন্য খাবার নিয়ে আসতে।সেই সকালে খেয়েছে আর এখন রাত হয়েছে।
ইরিন রান্নাঘর থেকে কিছু খাবার নিয়ে এসে রুপ্সিতাকে খাইয়ে দিতে গেলো।রুপ্সিতা মাথা নেড়ে বলল,আমি খাবোনা।আলিফ জোরে একটা ধমক দিয়ে বলল,খাবেনা মানে?না খেয়ে খেয়ে আজ অসুস্থ হয়েছো।তুমি জানো আমরা সময় মতো না আসলে কি হতো?চুপচাপ খাবার খাও!নয়তো চড় মেরে যা কয়টা দাঁত আছে সেগুলো ফেলে দেবো।
আলিফের বাবা আলিফকে উল্টো ধমক দিয়ে বলল,তুই চুপ থাক।সুন্দর করে বলা যায় না?

আলিফ চুপ করে যায়।আলিফের মা ইরিনকে সরিয়ে খাবারের প্লেট হাতে নিয়ে রুপ্সিতাকে বলল,খেয়ে নাও।মায়েরা বললে না করতে নেই।উনার কথা শুনে রুপ্সিতার চোখে পানি চলে এসেছে।মায়ের কথা বড্ড মনে পড়েছে।হা করতেই উনি সযত্নে মুখে খাবার তুলে দেন।সবাই ভাবছে আলিফ ধমক দিয়েছে বলে রুপ্সিতার চোখে পানি।রুপ্সিতা খাইয়ে দিয়ে সবাই চলে গেছে।আলিফ ঔষধ পাতা থেকে বের করে গ্লাসে পানি ঢেলে রুপ্সিতার দিকে এগিয়ে দেয়।রুপ্সিতা ঔষধ গ্লাস কোনোটাই ধরলোনা বরং মুখটা অন্যদিকে ঘুরিয়ে রাখলো।আলিফের এবার প্রচুর রাগ লাগলো।জ্ঞান ফেরার পর থেকেই ওকে ইগনোর করে যাচ্ছে কি পেয়েছাটা কি?
তাই রুপ্সিতার মুখ টিপে ধরে মুখে ঔষধ ঢুকিয়ে গ্লাসের পানি জোর করে খাইয়ে দেয়।রুপ্সিতা চোখ লাল করে তাকিতেই আলিফ বলল,সমস্যা কি তোমার?এরকম করছো কেন?কি করেছি আমি?

এবার রুপ্সিতা চুপ থাকলোনা।আলিফের শার্টের কলার চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,কি করেছিস তুই?মায়া কে হ্যাঁ?কে মায়া?
রুপ্সিতার কথা শুনে আলিফ চমকে উঠে।
রুপ্সিতা আলিফকে ঝাঁকিয়ে বলল,কি হলো?বলছেন না কেন?মায়াকে এতো ভালোবাসেন তাহলে আমাকে কেন বিয়ে করলেন?যদি বাধ্য হয়ে করে থাকেন তাহলে আমাকে বলে দিলেই পারতেন আপনি কাউকে ভালোবাসেন।তাহলে আমি কখনো আপনাকে নিয়ে ভাবতাম না আর না নিজের অনুভূতি গুলো আপনার কাছে প্রকাশ করতাম।কথাগুলো বলতে বলতে মায়া ডুকরে কেঁদে ওঠে।

আলিফ মায়াকে শান্ত করার চেষ্টা করছে কিন্তু সে ব্যর্থ।রুপ্সিতাকে জিজ্ঞেস করলো,তোমাকে কে বলেছে আমি মায়াকে ভালোবাসি?
আমাকে কেউ বলেনি আমি আপনার ডায়েরি পড়েছি মায়ার ছবিগুলোও দেখেছি।এখন প্লিজ এটা বলবেন না ডায়েরিতে লেখা গুলো মিথ্যা।মায়াকে ভালোবাসেন বলেই বুঝি এতদিন আমার থেকে দূরত্ব বজায় রাখতেন?সেটা মানলাম কিন্তু এই কটাদিন আমার সাথে যে ব্যবহার গুলো করেছেন সেগুলো কি ছিলো?আমাকে যে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন অনুভূতির সাথে পরিচয় করালেন সেগুলো কি ছিলো?কথা গুলো বলতে গিয়ে রুপ্সিতার কন্ঠ জড়িয়ে আসছে।তবুও হেঁচকি তুলে কথাগুলো বলছে।

আলিফ রোবট হয়ে গেছে।ওর কিছু বলার নেই কিই বা বলবে?ও চেয়েছিলো মায়ার কথাটা রুপ্সিতার কাছ থেকে লুকিয়ে রাখবে কিন্তু সেই রুপ্সিতা সব জেনেই গেলো।ও ভেবেছে রুপ্সিতা জানলে কষ্ট পাবে এখনতো আরো বেশি কষ্ট পাচ্ছে।রুপ্সিতার শরীরের তাপমাত্রা অনেক বেড়ে গেছে।আলিফ ওকে জোর করে শুইয়ে দিয়েছে।রুপ্সিতা বিড়বিড় করে বকে যাচ্ছে।আলিফ ওয়াশরুম থেকে জগে করে পানি এনে তোয়ালে ভিজিয়ে রুপ্সিতার কপালের জলপট্টি দিচ্ছে।
রুপ্সিতা উঠার চেষ্টা করছে।আলিফ উঠতে দিচ্ছেনা জোর করে হাত চেপে ধরে আছে আরেক হাতে ওর কপালে জলপট্টি দিচ্ছে।
জ্বরের ঘোরে চোখ বন্ধ করে কি বলছে রুপ্সিতা নিজেও জানেনা।
আলিফ পানি আর রুমাল ওয়াশরুমে রেখে এসে রুপ্সিতার পাশে এসে বসে।রুপ্সিতা এখনো বিড়বিড় করে কিছু বলে চলেছে।আলিফ সেটা শোনার চেষ্টা করতে রুপ্সিতার মুখের কাছে কান পেতে রইলো।

রুপ্সিতা বলছে,কেউ আমাকে ভালোবাসে না।কেউনা।আপনি ও ভালোবাসেন না।কিন্তু আমি না আপনাকে অনেক ভালোবাসি আর আপনি ওই মায়াকে ভালোবাসেন।আমাকে একটু ভালোবাসলে কি হয়?বাবা মা ও আমাকে ভালোবাসেনা।একটা বাইরের ছেলের কথায় আমাকে মেরেছে পরেরদিন আপনার সাথে বিয়ে দিয়ে দিয়েছে।আমি ভেবেছি আপনি আমাকে ভালোবাসবেন কিন্তু না আপনিও সবার মতো আমাকে দূরে ঠেলে দিলেন।আপনি মায়াকে ভালোবাসেন।
রুপ্সিতার কথা শুনে আলিফ অবাক হয়ে যায়।তারমানে রুপ্সির গায়ে যে দাগ গুলো দেখেছিলাম সেগুলো ওর পরিবারের থেকে দেওয়া?কিন্তু রুপ্সি কোন ছেলের কথা বলছে আর কিই বা বলছে আমিতো বুঝতেছিনা।দুহাতে রুপ্সিতাকে আগলে নিয়ে নিজেও রুপ্সিতার পাশে শুয়ে পড়ে।

নিজের গায়ে একটু উষ্ণ ছোয়া পেতেই রুপ্সিতা আলিফকে আঁকড়ে ধরে করুণ সুরে বলে,
আমি আপনাকে খুব ভালোবাসি।প্লিজ আমাকে ছেড়ে যাবেননা।ছোট বেলা থেকেই যেটা আমার সেটাতে আমি কাউকে ভাগ দিতাম না।সেটা খাবার হোক,খেলনা হোক।কিন্তু আপনিতো আমার ভালোবাসা,স্বামী তাহলে আপনার ভাগ আমি কিভাবে দেবো?
আলিফের চোখে পানি চলে এসেছে রুপ্সিতার কথা শুনে।
রুপ্সিতাকে আরেকটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রুপ্সিতার ঠোঁটে নিজের ঠোঁটের উষ্ণ ছোয়া দিয়ে বলল,কারো সাথে ভাগ করতে হবেনা।আমি পুরোটাই তোমার।কেউ তোমার ভালোবাসায় ভাগ বসাতে আসবেনা।
আলিফের ছোয়া পেয়ে রুপ্সিতা আরেকটু গুটিশুটি মেরে আলিফের বুকে মুখ গুঁজে শুয়ে থাকে।

রাত ০২ঃ৪৮ মিনিট।রুপ্সিতা ঘুমিয়ে আছে আলিফের বুকে।আলিফের চোখে ঘুম নেই সে রুপ্সিতাকে দেখে চলেছে।মায়ের পরে দুজন নারী ওকে নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবাসেছে।একজন মায়া অন্যজন রুপ্সিতা।নিজের প্রতি তাচ্ছিল্য করে হেসে নিজের মনেই বলল,আমি ওদের ভালোবাসার যোগ্যইনা।আমাকে ভালোবেসে সবাই কষ্ট পেয়েছে।কিন্তু রুপ্সিতাকে আর কষ্ট দিতে পারবোনা আমি।এই মেয়েটাই এখন আমার সব।আজ থেকে তোমাকে আর কষ্ট পেতে দেবোনা বলে রুপ্সিতার কপালে গভীর চুমু আঁকে।তারপর রুপ্সিতাকে জড়িয়ে ধরে নিজেও ঘুমানোর চেষ্টা করে।সকালে ঘুম থেকে উঠলে ওর উপর দিয়ে একটা ঝড় যাবে আর সেই ঝড়টা যে রুপ্সিতা নিজেই বইয়ে দিবে সেটা আর ভাবার অপেক্ষা রাখেনা।হয়তো সকালে উঠলে রুপ্সিতার এখনকার কোনো কথাই মনে থাকবেনা।আপাতত এসব না ভেবে ঘুমানো প্রয়োজন।

সকালে ঘুম ভাঙতেই রুপ্সিতা নিজেকে আলিফের বাহুডোরে আবিষ্কার করে।দ্রুত সরে এসে ছলছল চোখে তাকিয়ে বলে,আমিতো চেয়েছিলাম এভাবে থাকতে কিন্তু আপনিতো সেই পথ খোলা রাখেননি।রাতের চেয়ে জ্বর এখন অনেকটা কম পুরোপুরি নির্মুল হয়নি।ভালোভাবে ঠান্ডা লেগেছে জ্বর সারতে সময় লাগবে।আস্তে আস্তে উঠে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ায় রুপ্সিতা।
আলিফ আস্তে করে চোখ খুলে তাকায়।রুপ্সিতা ঝাড়া মেরে সরে যাওয়ার সময়ই আলিফের ঘুম ভেঙে গেছে এতক্ষণ ঘুমের ভান ধরে পড়েছিলো।ও চায় না এতো তাড়াতাড়ি রুপ্সিতা টর্নেডো,ঘূর্ণিঝড়,জলোচ্ছ্বাস শুরু করে দিক।আরেকটু সময় নিয়ে নিজেকে প্রিপার্ড করে নিয়ে রুপ্সিতার সামনে যাবে যাতে প্রথমবারেই ঢেউয়ের সাথে ভেসে না যায়।রুপ্সিতার জেদ সম্পর্কে এতদিনে আলিফ অবগত হয়ে গেছে।এত সহজে যে আলিফের নিস্তার নেই সেটা ভেবেই শুকনো ঢোক গিলে আলিফ।
রুপ্সিতা রমে এসে দেখে আলিফ খাটে নেই।বারান্দায় উঁকি দিয়ে দেখে কারো সাথে ফোনে কথা বলছে।নিশ্চয়ই মায়া হবে তাছাড়া আর কার সাথে কথা বলবে?রুপ্সিতার গলা ধরে আসছে।খাটে এসে বসে রইলো চুপ করে।
আলিফ ফোনে বসকে বলছে,ওর ছুটি দরকার আজকে অফিসে যেতে পারবেনা।আলিফ খুব একটা অফিস কামাই দেয়না তাই বস আজকের জন্য ছুটি দিয়ে দিলো।তারপর মায়ার নাম্বারে কল দিয়ে বলল,

আর হ্যাঁ তুমি আরাফাতকেও সাথে নিয়ে এসো।আমি রুপ্সিকে নিয়ে পৌঁছে যাবো।
ওপাশ থেকে মায়া বলল,হুম ঠিক আছে।আর তোমার জন্য একটা গুড নিউজ আছে সেটা আসলেই বলবো বায়।
আলিফ কল কেটে ভাবছে মায়া কিসের গুড নিউজের কথা বলছে?
এদিকে রুপ্সিতা চোখের পানিতে নালা-নদী ভাসিয়ে ফেলতেছে।
আলিফ রুমে এসে দেখে রুপ্সিতা নিঃশব্দে কাঁদছে।আলিফ যে রুমে এসেছে সেটা টের পায়নি।আলিফ হালকা গলা ঝেঁড়ে বলল,চেয়েছিলাম তোমাকে ব্যাপারটা জানাবোনা।কিন্তু তুমি যখন জেনেই গেছো তখন আর লুকিয়ে লাভ নেই।আমি কি চাই তা নিশ্চয়ই তুমি বুঝতে পেরেছো এবার তুমি কি করবো সেই সিদ্ধান্ত তোমার।
আবার আড় চোখে রুপ্সিতার দিকে তাকিয়ে দেখছে রুপ্সিতা কিভাবে রিয়েক্ট করে।

আলিফের কথায় রুপ্সিতা কান্না মাখা চোখে আলিফের দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ।পরোক্ষণে ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে ওঠে,এখন সিদ্ধান্ত আমার?যখন বিয়ে করেছিলেন তখন কেনো বলেননি আপনি আমার কোনোদিনও হবেন না।আপনি অন্যকারো তাহলে তখনই আমি আমার জীবনের সিদ্ধান্ত নিয়ে নিতাম।তারপর হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে চোখ মুছে বলল,তবে এটা ভাববেন না যে আমার সাথে প্রতারণা করে আপনি পার পেয়ে যাবেন।শাস্তি আপনাকে পেতেই হবে।
আলিফ রুপ্সিতার থেকে মুখ আড়াল করে মিটিমিটি হাসছে।

আলিফ ওয়াশরুমে চলে গেছে ফ্রেশ হতে।রুপ্সিতা মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে আলিফকে এমনি এমনি ছেড়ে দেবেনা।ওর অনুভূতি নিয়ে ছিনিমিনি খেলার জন্য আলিফকে উচিত শিক্ষা দেবে।জ্বর গায়ে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে নিচে এসে সোফায় বসে পড়েছে।
ইরিন রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এসে রুপ্সিতাকে নিচে নামতে দেখে বিচলিত হয়ে বলল,সেকি রুপা তুমি অসুস্থ শরীর নিয়ে নিচে নামতে গেলে কেন?রুপ্সিতার কপালে গালে হাত দিয়ে বলে শরীরে তো এখনো জ্বর।

রুপ্সিতা বলল,এটা কিছুনা।আমি সুস্থ আছি আর তোমাদের সবার সাথে আমার কিছু কথা আছে।বাবা-মা,ভাইয়া সবাই কোথায়?
তখনই সিঁড়ি দিয়ে আলিফ নিচে নেমে আসছিলো।রুপ্সিতার কথা শুনে পেটে কামড় দিয়ে উঠে।রুপ্সিতা এখন উল্টাপাল্টা সবাইকে কি বলে বসে থাকে।তাই দ্রুত নেমে এসে রুপ্সিতাকে ধমকের সুরে বলল,এই অসুস্থ শরীর নিয়ে তোমাকে নিচে কে নামতে বলেছে?চলো রুমে চলো তোমার খাবারও উপরে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।আজ এক পাও রুমের বাইরে রাখবেনা।
আলিফের কথা গুলো রুপ্সিতার গায়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার মতো।এখানে এসে আদিখ্যেতা দেখাচ্ছে কেন?রুপ্সিতা সরু চোখে আলিফের দিকে তাকিয়ে কিছু বুঝার চেষ্টা করলো।কিছু একটা বোধগম্য হতেই রুপ্সিতা মনে মনে বলল,ওহ আচ্ছা!বুঝতে পেরেছি আমি যাতে কাউকে এই বেটার কুকীর্তির কথা না বলতে পারি সেই জন্যই এত অভিনয়।

রুপ্সিতা ঘাড়ত্যাড়ার মতো বসে রইলো।মুখ বাঁকিয়ে ইরিনকে উদ্দেশ্য করে বলল,ভাবি সবাইকে বলে দাও আমি এখান থেকে কোথাও নড়ছিনা।
ইরিন রান্নাঘরের দিকে যেতে যেতে বলল,তোমরা দুজন মারামারি করো আমি নাস্তা বানানো শেষ করে আসি।
ইরিন রান্নাঘরে যেতেই আলিফ চট করে রুপ্সিতাকে কোলে তুলে নিয়ে রুমের দিকে হাটা ধরলো।হুট করে এরকম কোলে নেওয়ায় রুপ্সিতা প্রথমে ঘাবড়ে গিয়ে আলিফের বুকের কাছে টিশার্ট আঁকড়ে ধরে।পরোক্ষণে কি হচ্ছে বুঝতে পেরেই হাত পা ছোড়াছুড়ি করতে লাগলো।আলিফ সেদিকে তোয়াক্কা না করে রুপ্সিতাকে রুমে নিয়ে খাটের উপর ছেড়ে দিলো।
রুপ্সিতা খাট থেকে নেমে দরজা দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই আলিফ পেছন থেকে এক হাতে রুপ্সিতার কোমর ধরে কাছে টেনে অন্যহাতে দরজা লক করে দেয়।

রুপ্সিতা আলিফকে ইচ্ছামতো কিল,খামছি মারছে আর বলছে,ছাড়ুন আমাকে।আমি সবাইকে আপনার কুকীর্তির কথা বলে দেবো।উপরে সাধু সেজে থাকেন ভেতরে পুরোই নোংরা মনের লোক।
আলিফ রুপ্সিতাকে শক্ত করে পেঁচিয়ে ধরে কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল,বিকালে তোমাকে একজায়গায় নিয়ে যাবো।রেডি থেকো বলেই ছেড়ে দিলো রুপ্সিতাকে।
রুপ্সিতা রাগ আর বিরক্তি মিশ্রিত কন্ঠে বলল,কোথায়?আপনার মায়ার সাথে দেখা করাতে নিয়ে যাবেন আমাকে?
আলিফ ভাবলেশহীন ভাবে বলল,হ্যাঁ!গেট রেডি।
রুপ্সিতা দুহাতে আলিফের বুকে ধাক্কা দিলো।আলিফ প্রস্তুত না থাকায় দু’কদম সরে গেলো।রুপ্সিতা মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বলল লম্পট কোথাকার।

আলিফ নিজের জায়গায় স্থির থেকেই বলল,আমাকে যাই বলো না কেন?এখন এই রুমের বাইরে এক পাও বাড়াতে পারবেনা।
আলিফ রুমে থেকে বেরিয়ে দরজা বাইরে থেকে লক করে নিচে চলে গেছে।এই মুহুর্তে আলিফ রুপ্সিতাকে কিছু বোঝাতে চায়না।এখন বুঝাতে গেলে উল্টো রিয়েক্ট করে বসে থাকবে।বিকেল পর্যন্ত সব কিছু নিজের মনমতোই ভাবুক।
হাতে নাস্তার প্লেট নিয়ে আলিফ রুমের দরজা খুলতেই দেখে রুপ্সিতা অন্যমনস্ক হয়ে কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলছে,আমি ভেবেছিলাম আমার মেয়ে হলে নাম রাখবো আলিফা আর ছেলের নাম রাখবো রালিফ।কিন্তু কিচ্ছু হলো না সব কিছু হওয়ার আগেই ওই বেয়াদব লোক আমার স্বপ্ন গুলোকে মাটিচাপা দিয়ে দিলো।পেটে ডান হাত দিয়ে বলল,তোরা আর দুনিয়াতে আসতে পারলিনা।তোদের বাবা তোদেরকে দুনিয়ার আলো দেখানোর আগেই তোদের মাকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে।
রুপ্সিতার কথা শুনে আলিফের দম ফাটা হাসি আসছে।কিন্তু এখন হাসলে চলবেনা তাই ঠোঁট চেপে হাসি আটকানোর চেষ্টা করতে লাগলো।

বেচারি ছেলে মেয়ের নাম পর্যন্ত ঠিক করে ফেলেছে।
আলিফ হাসি থামিয়ে খাবারের প্লেট নিয়ে রুমে ঢুকে।রুপ্সিতাকে খাবার খেতে বললেই রুপ্সিতা প্লেট হাত দিয়ে সরিয়ে দেয়।আলিফ বুঝতে পেরেছে এখন সহজভাবে রুপ্সিতা খাবার খাবেনা।তাই প্লেট নিজের দিকে টেনে পরোটা ছিড়ে একটু ভাজি নিয়ে রুপ্সিতার মুখের সামনে ধরে।রুপ্সিতা মুখ সরিয়ে নিয়ে ঝাঁজালো কন্ঠে বলল,যাবেন এখান থেকে?এত অভিনয় করে লাভ নেই আমি সবাইকে বলে দেবো আপনি আমার সাথে প্রতারণা করেছেন আমাকে ঠকিয়েছেন।

আলিফ পরোটার টুকরো রুপ্সিতার মুখ টিপে ধরে মুখে ঢুকিয়ে দেয়।রুপ্সিতা ফেলে দিতে গেলেই আলিফ রুপ্সিতার ঠোঁটে চুমু দিয়ে বসে।আলিফের কাজে রুপ্সিতা জমে গেছে।চোখ দুটো বড় বড় করে তাকিয়ে আছে আলিফের দিকে।
আলিফ আরেক টুকরো পরোটায় ভাজি নিতে নিতে বলল,এখন চুপচাপ খাবারটা গিলো নয়তো অন্যকিছু করে ফেলবো।তুমিতো এখন চাও না আমি তোমাকে টাচ করি সো খাবারটা খেয়ে নাও।রুপ্সিতা আলিফের থেকে প্লেট টেনে নিয়ে নিজেই গপাগপ খাওয়া শুরু করলো।গলায় খাবার আটকে কাশতে থাকে।আলিফ পানির গ্লাস এগিয়ে দিয়ে বলল,আস্তে খাও।
রুপ্সিতা গ্লাসের পানি সব এক ঢোকে খেয়ে শেষ করে ফেলেছে।

তারপর আবারো খাওয়া শুরু করেছে।চুল খোলা থাকায় বারবার সামনের চুলগুলো মুখে এসে পড়ছে।আলিফ একমনে রুপ্সিতার খাওয়া দেখে চলেছে।মুখের সামনে চুল আসায় রুপ্সিতা বিরক্তিতে চোখ-মুখ কুচকে ফেলছে।আলিফ হাত বাড়িয়ে রুপ্সিতার চুল গুলো কানের পিছনে গুজে দেয়।রুপ্সিতা সেদিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে।আমিতো চেয়েছিলাম আপনাকে নিয়ে সুখী হতে কিন্তু আপনি অন্যকারো মাঝে নিজের সুখ খুজে চলেছেন।
খাওয়া শেষ করে রুপ্সিতা প্লেট রাখতেই আলিফ প্লেট হাতে নিয়ে বেরিয়ে গেলো।এবারেও বাইরে থেকে দরজা লক করে দিয়েছে।নিচে সবার সাথে আলিফ নাস্তা করতে বসে পড়েছে।রুপ্সিতা অসুস্থ তাই কেউ আর ওর কথা কিছু জিজ্ঞেস করেনি।
আরিফ বলল,আজকে কি তুই অফিসে যাবি?
আলিফ মাথা তুলে জানালো আজকে বসের কাছ থেকে ছুটি নিয়েছে।

রুপ্সিতার ফোন বাজছে।ফোন হাতে নিয়ে দেখে তিন্নির কল।রিসিভ করে কানে দিতেই তিন্নি বলল,আজকে তোকে কিন্তু আসতেই হবে।না করলে আমি শুনবোনা জিজুকে সাথে নিয়ে আসবি।না আসলে আমি তোর সাথে আর কখনো কথা বলবোনা।
রুপ্সিতা জিহ্বা দিয়ে শুকনো ঠোঁটজোড়া ভিজিয়ে বলল,তুই বুঝার চেষ্টা কর আমি আসতে পারবোনা।তাছাড়া আমি অসুস্থ এখন এই অসুস্থ শরীর নিয়ে তোর এনগেজমেন্টে যাওয়া কেউ এলাউ করবেনা।
তিন্নি তেঁতে উঠে বলল,আমার এনগেজমেন্টের দিনই তোকে অসুস্থ হতে হলো?আচ্ছা এনগেজমেন্ট তো রাতে হবে তুই যদি একটু সুস্থ হস তাহলে যেভাবে হোক জিজুকে নিয়ে আসিস।

রুপ্সিতা মুখ বাঁকিয়ে মনে মনে বলল,এহহহহ!জিজু!কচুর জিজু ওই বেডা অন্য কাউকে ভালোবাসে।তবে আমিও তাকে ছাড়বো না এত সহজে।ওই বেডার মাথা থেকে মায়ার ভূত যদি আমি না নামাইছি তো আমার নাম ও রুপ্সিতা না।আমি অন্যদের মতো দূরে চলে যাবোনা কাছে থেকে পুড়িয়ে মারবো সালাকে।
তিন্নি বলল,হ্যালো!হ্যালো কই গেলি,মরলি নাকি?
রুপ্সিতা ভাবনা থেকে বেরিয়ে বলল,আচ্ছা তোর আর জুনায়েদ ভাইয়ের জন্য শুভকামনা আর সন্ধ্যায় সুস্থ হলে যাবো।
তিন্নি লাভ ইউ বলে কল কেটে দিলো।
রুপ্সিতা বলেতো দিয়েছে যাবে কিন্তু ওর সত্যিই যাওয়ার মুড নাই।নিজের সংসার নিয়া যেখানে টানাটানি সেখানে অন্যের সংসার গঠনের সুখ দেখতে কার ভালো লাগে?

জুনায়েদ আর তিন্নির রিলেশন ছিলো।এখন পরিবারের মত নিয়েই বিয়ে হবে।
রুপ্সিতা মোবাইল রেখে লম্বা হয়ে শুয়ে একটা ঘুম দিলো।আলিফ রুমে এসে দেখে রুপ্সিতা ঘুমিয়ে গেছে।নিজেও রুপ্সিতাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়েছে।কালরাতে রুপ্সিতার জ্বরের কারণে ঠিকমতো আলিফের ঘুম হয়নি।
শোভন শাওয়ার নিতে ওয়াশরুমে গেছে ওর ফোন বাজছে অনবরত।রিতা কল ধরবে কি ধরবেনা ভাবতে ভাবতেই কল কেটে গেলে।আবারো তীব্র আওয়াজে ফোন বাজা শুরু হয়েছে।রিতা এবার গিয়ে কল রিসিভ করতে গিয়ে দেখে ফোনের স্ক্রিনে সাথী নাম জ্বলজ্বল করছে।রিতা কল রিসিভ করে কানে দিতেই ওপাশ থেকে একটা মেয়েলি কন্ঠ ভেসে আসে।

বেবি!এতক্ষণ কোথায় ছিলে তুমি?এতক্ষণ লাগে কল ধরতে?তাড়াতাড়ি আসো আমি তোমার জন্য ওয়েট করে আছি।
রিতা কল কেটে দিয়ে খাটের উপর ধপ করে বসে পড়ে।তারমানে এতদিন শোভন ওকে ঠকিয়ে এসেছে।তারপর তড়িঘড়ি করে মোবাইল হাতে নিয়ে লক খুলে মোবাইল চেইক করতে থাকে।শোভন কখনো মোবাইলের লক রিতাকে দেখায়না।পরশুদিন শোভন লক খোলার সময় পেছনে রিতা দাঁড়িয়ে ছিলো সেটা শোভন খেয়ল করেনি।তাই এখন পাসওয়ার্ড দেওয়ার সাথে সাথেই ফোন আনলক হয়ে গেলো।ফোন টিপতে টিপতে রিতার সামনে একটা দুমিনিটের ভিডিও আসে।ভিডিওতে ক্লিক করার কয়েক সেকেন্ড যেতেই রিতা চিৎকার করে ওঠে ফোনটা ছুড়ে ফেলে দেয়।ফ্লোরে পড়ার কারনে ফোনটা ভেঙে কয়েকটা পার্ট হয়ে গেছে।রিতা হাঁপাচ্ছে শোভন এত খারাপ?ছিঃ!তারমানে রুপার কোনো দোষ ছিলো না।শোভনই ওকে ফাঁসিয়েছে।আমার বোনটা কতবার আকুতি-মিনতি করে বলেছে ও কিছু করেনি কিন্তু আমরা শুনিনি।এই জানোয়ারের ভালোবাসায় এতটাই অন্ধ হয়ে গিয়েছিলাম যে আমার নির্দোষ বোনটাকে কিনা অবিশ্বাস করলাম?দুচোখ বেয়ে বাঁধাহীন ভাবে অশ্রু গড়িয়ে চলেছে রিতার।শোভনের প্রতি প্রচন্ড ঘৃণা হচ্ছে।ওই ভিডিওটিতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিলো শোভন অন্য একটা মেয়ের সাথে খুব গভীর সম্পর্কে আছে যেটা চোখের সামনে ভেসে উঠলেই রিতার মরে যেতে ইচ্ছা করে।
শোভন শাওয়ার শেষ করে বেরিয়েে দেখে ওর ফোন কয়েকটা পার্টে ভেঙে আছে আর রিতা খাটের উপর থম মেরে বসে কাঁদছে।শোভন মোবাইলের দিকে ইশারা করে রিতাকে বলল,আমার ফোনের এই অবস্থা কেন?ভাঙলে কি করে আমার ফোন।চিল্লিয়ে বলল,স্পিক আপ ডেম ইট!

রিতা খাট থেকে উঠে শোভনের বরাবর গিয়ে কিছু না বলে সজোরে একটা চড় মেরে দেয় শোভনের গালে।শোভন রক্তেচক্ষু নিয়ে বলল,আমার গায়ে হাত তুলেছিস তুই?তোকেতো….
রিতা আরেকটা চড় মেরে বলল,চুপ!একদম চুপ।আর কয়টা মেয়ের সাথে তোর সম্পর্ক আছে?কতদিন থেকে এসব রঙ্গলীলা চলছে?আমার বোনকে যে তুই ফাঁসিয়েছিস সেটা আমি এখন বুঝতে পারছি।আর তোর ফোনে থাকা নোংরা ভিডিও টাও আমি দেখেছি তাই একদম মিথ্যে বলার চেষ্টা করবিনা।

শোভন রিতাকে নিজের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে চড় মারতেই রিতা সিটকে নিচে পড়ে যায়।ঠোঁট ফেটে রক্ত দেখা যাচ্ছে।
শোভন রিতার দিকে তাকিয়ে শয়তানি হেসে বলল,হ্যা তোর বোনকে আমিই ফাঁসিয়েছি।কারন তোর বোন খুব সতি সাজতে চেয়েছে।একরাতের অফার দিয়েছিলাম তোর বোন রাজি হয়নি তাই তোকে মিথ্যা বলে তোর বোনকে ফাঁসিয়েছি।আমার এরকম অনেক মেয়ের সাথেই সম্পর্ক আছে।তুই হয়তো ভাবছিস আমি এতো সহজে সব কেন স্বীকার করছি তাইতো?
আমার আবার ঘুরানো পেঁছানো ভালো লাগেনা।সব যেহেতু তুই জেনেই গেছিস তাহলে কথা ঘুরিয়ে লাভ কি বল।তুই ভালো বউ ভালো বউ হয়ে থাক।একদম মুখ খুলতে যাবিনা।তোর বোন এখন স্বামীর সংসারে খুব সুখে আছে।তুই মুখ খুললে তোর বোনের সংসারে আগুন লাগিয়ে দেবো।মাইন্ড ইট বলে শোভন রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।

রিতা অঝোর ধারায় কাঁদছে।সেদিন রুপ্সিতার কান্নাটাও কেউ শুনেনি।হৃদয় কাঁপানো কান্না কারো মন গলাতে পারেনি।এখন রিতা নিজের অন্যায়ের শাস্তি ধীরে ধীরে ভোগ করবে।মরে যেতে ইচ্ছে করছে কিন্তু নিজের ভেতরে যে একটা ছোট্ট প্রাণ বেড়ে উঠছে তার কথাও তো ভাবতে হবে।
সারাদিন আলিফ রুপ্সিতাকে রুমে আটকে রেখেছে।একবারের জন্যেও রুমের বাইরে যেতে দেয়নি।ঘড়িতে বিকাল ৩ঃ৫০ মিনিট বাজে।আলিফ কাবার্ড থেকে একটা নীল আর সাদা রঙের মিশ্রণের শাড়ি বের করে দিয়ে রুপ্সিতাকে রেডি হতে বলে।রুপ্সিতা প্রথমে যাবেনা বলে জেদ ধরে থাকলেও মেয়েটাকে একবার সামনা সামনি দেখার আশায় শাড়ি পড়ে নিয়েছে।আলিফ ও নীল রঙের শার্ট পড়ে রেডি হয়ে নিয়েছে।রুপ্সিতা আয়নার সামনে বসে চোখে গাঢ় করে কাজল আর ঠোঁটে লাল লিপস্টিক দিচ্ছে।ও মনে মনে বলছে ওই মায়া ফায়া থেকে আমাকে বেষ্ট দেখাতে হবে একটু ভালো করে সাজি।

আলিফ সরু চোখে তাকিয়ে রুপ্সিতার সাজগোছ দেখছে।কাল থেকে এই মেয়ে কেঁদে কেটে পুকুর বানিয়ে ফেলেছে আর এখন কি সুন্দর খুশি মনে সাজুগুজু করছে।এর মাথায় নিশ্চয়ই কিছু একটা চলছে নয়তো এত নরমাল কিভাবে আছে?
রুপ্সিতা সাজগোছ শেষ করে আলিফের সামনে দাঁড়িয়ে বলল,আমি রেডি চলুন।
আলিফ রুপ্সিতাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত একপলক দেখে নিয়ে হাত ধরে বেরিয়ে গেছে।সব সময় প্রেয়সীর সৌন্দর্যের প্রসংশা করতে হয়না।তার প্রেয়সীর সকল সৌন্দর্য তার জন্যই।
আলিফ আর রুপ্সিতা একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকে কর্ণারের দিকে চলে যায়।সেখানে একটা মেয়ে আর একটা ছেলে বসে আছে।ছেলেটাকে না চিনতে পারলেও মেয়েটা যে মায়া সেটা চিনতে রুপ্সিতার এক বিন্দুও কষ্ট হলো না।আলিফ রুপ্সিতকে সাথে নিয়ে মায়া আর আরাফাতের বিপরীত দিকে বসে পড়ে।আরাফাত মায়ার দিকে প্রশ্নাত্মক চোখে তাকিয়ে আছে।রুপ্সিতা মায়ার দিকে আড় চোখে তাকিয়ে নিজের মনে মনে ভাব নিয়ে বলছে আমি শিওর এই মায়ার থেকে আমাকেই এখন বেশি সুন্দর লাগছে হুহ।
মায়া আগেই খাবার অর্ডার দিয়ে দিয়েছে ওয়েটার এসে খাবার দিয়ে গেছে।

মায়া আর আলিফ রুপ্সিতা আর আরাফাতকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে।রুপ্সিতা বিরক্ত হয়ে গেছে কিরকম সবাই সং এর মতো বসে আছে।
মায়া আলিফের দিকে তাকিয়ে বলল,তাহলে শুরু করি?
আলিফ চোখে ইশারা দিতেই মায়া বলা শুরু করলো।
আরাফাত আর রুপ্সিতার দিকে তাকিয়ে মায়া বলল,তোমাদের দুজনকে এখানে যেকারণে নিয়ে আসা।আমি আর আলিফ দুজন দুজনকে ভালোবাসতাম।রুপ্সিতা না চমকালেও আরাফাত চমকে উঠলো।মায়া না থেমে বলতে লাগলো,আমার বাবা কখনো প্রেম ভালোবাসাকে সমর্থন করেনি।ছোটবেলায় আরাফাতের সাথে আমার বিয়ে ঠিক করে রেখেছিলেন যেটা আমার অজানা ছিলো।বাবা আমাদের সম্পর্কের কথা জানার পরই আরাফাতের পরিবারের সাথে কথা বলে বিয়ের কথাবার্তা শুরু করলেন।আমি আলিফকে ছাড়া কাউকে বিয়ে করবোনা জানাতেই বাবা আমাকে বলল আমি আরাফাতকে বিয়ে না করলে আমাকে বাবার মরা মুখ দেখতে হবে।আলিফকে সব কিছু জানানোর পর পরিস্থিতি এমন ছিলো যে আলিফ আমাকে বলে আরাফাতকে বিয়ে করে নিতে।নয়তো আমি বাবাকে হারাতাম।আমরা দুজন নিজেদের ভাগ্যকে মেনে নিয়েছি।আরাফাত অনেক ভালো ছেলে আমাকে কখনো কোনো কষ্ট বুঝতে দেয়নি।আমার প্রেগন্যান্সিতে সমস্যা আছে জেনেও নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবেসেছে।আমিও আরাফাতকে ভালোবাসতে শুরু করেছি অনেক আগ থেকে।

রুপ্সিতার দিকে তাকিয়ে আলিফের দিকে ইশারা করে বলল,আলিফও তোমাকে ভালোবাসে।রুপ্সিতা চমকে উঠে আলিফের দিকে তাকায়।আলিফ মাথা নিচু করে রেখেছে।মায়া আবারো বলল,আমরা দুজন দুজনের প্রথম ভালোবাসা ঠিকই কিন্তু আসল পূর্নতাতো শেষ ভালোবাসায়।মানুষের জীবনে দ্বিতীয়বার ভালোবাসা আসে।আমি চাই আমাদের বর্তমান নিয়ে এগিয়ে যেতে।আমাদের অতীতের প্রভাব যাতে বর্তমানে না পড়ে।আমাদের দুজনের কারণে তোমাদের দুজনের জীবন বিষিয়ে যাক সেটা আমি চাইনা।প্রথমে তোমাদেরকে আমি আর আলিফ কিছু জানাইনি তোমরা কষ্ট পাবে বলে।কিন্তু এখন মনে হচ্ছে সবকিছু জানিয়ে নতুন জীবন শুরু করা উচিত ছিলো।
পুরোটা কাহিনী শুনে মায়া আর আরাফাত স্তব্ধ হয়ে গেলো।কিভাবে দুজন ভালোবাসার মানুষ আলাদা হয়ে গেছে।রুপ্সিতার এখন আর আলিফের প্রতি রাগ নেই কিন্তু সকাল থেকে ওর সাথে করা ব্যবহার গুলোর কথা মনে করে অগ্নিচোখে তাকায় আলিফের দিকে।বেটা ভালোই যখন বাসিস তাহলে এত নাটক করলি কেন?আমাকে বুঝিয়ে বললেই হতো তুই মায়াকে অতীতে ভালোবাসতি হয়তো এখনো বাসিস।আমি বলবোনা মায়াকে ভুলে যেতে কারণ সত্যিকারের ভালোবাসা কখনো ভোলা যায়না।
আলিফ রুপ্সিতার চোখের দিকে তাকিয়েই গলা শুকিয়ে গেছে।আজকে রুপ্সিতা ওকে কাঁচা চিবিয়ে খাবে।

এদিকে আরাফাত মায়ার দিকে তাকিয়ে বলল,তুমি আমাকে বিয়ের আগে বললেই আমি তোমাকে বিয়ে করতাম না।তাহলে তোমাদের ভালোবাসায় পূর্নতা পেতো।মায়া আরাফাতের হাত চেপে ধরে বলল,প্লিজ আরাফাত আমি এখন তোমাকে ভালোবাসি তোমার সাথে বাঁচতে চাই।আরাফাতের ঠোঁটে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠেছে।
রুপ্সিতা কটমট করে তাকাচ্ছে আলিফের দিকে।এখনো ভালোবাসি বললো না।চারজনে খাবার খাওয়া শেষ করেছে।আলিফ মায়াকে বলল,তুমি বলেছিলে না গুড নিউজ দিবে?
মায়া চোখ বন্ধ করে মুখে প্রশস্ত হাসি নিয়ে বলল,থেরাপি দেওয়ার পর আমার সমস্যাটা সলভ হয়েছে।ডাক্তার বলেছে আমি কনসিভ করতে পারবো।আলিফ মুচকি হেসে উঠে বলে অগ্রিম অভিনন্দন জানাচ্ছি তোমাদের দুজনকে।রুপ্সিতার কিছুই বোধগম্য হলো না তাই সে চুপ করে রইলো।

আজকে শহর তোমার আমার পর্ব ১০+১১+১২

আরাফাত আর মায়া চলে গেছে।আলিফ রিকশা ডেকে রুপ্সিতাকে নিয়ে উঠে পড়েছে।আলিফ কথা বলার চেষ্টা করছে কিন্তু রুপ্সিতা মুখ ফুলিয়ে রেখেছে।একটা কথাও বলছেনা।রিকশাওয়ালা ঠিকানা জিজ্ঞেস করতেই রুপ্সিতা তিন্নির বাসার ঠিকানা দিয়ে দিলো।
আলিফ রুপ্সিতা দিকে তাকিয়ে বলল,এটাতো আমাদের বাসার ঠিকানা নয়।রুপ্সিতা রিকশাওয়ালা বলছে,মামা আপনি যানতো।
আলিফ আর কিছু বললনা।তিন্নির বাসায় এসে তিন্নিকে দেখে রুপ্সিতা এগিয়ে গেলো।তিন্নি রুপ্সিতাকে দেখে দৌঁড়ে এসে জড়িয়ে ধরলো।পরে রুপ্সিতা আলিফ আর তিন্নিকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে আলিফকে রেখে অন্যদিকে চলে গেছে।
রুপ্সিতা খেয়াল করলো একটা ছেলে কয়েকটা বিয়ারের বোতল নিয়ে যাচ্ছে।রুপ্সিতা জোর করে সেখান থেকে একটা বিয়ারের বোতল নিয়ে সেটার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,এবার দেখো মিঃআলিফ আহসান আমি কি করি।
বিয়ারের বোতল হাতে নিয়ে রুপ্সিতা মাতালদের মতো ঢুলতে ঢুলতে আলিফের সামনে গেয়ে ওর চারপাশে ঘুরছে আর গান গাইছে,

Ek hath mein sharab,
Doojo peeyo mere sath
Peeti jayu peeti jayu
Ni mai sari sari rat,

আলিফ রুপ্সিতার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলল,খাইছে!এই মেয়ে ড্রিংক করলো কোত্থেকে?আজকে একে সামলাতে গিয়েই আমার বারোটা বাজবে।

আজকে শহর তোমার আমার পর্ব ১৬+১৭+১৮+১৯