আজকে শহর তোমার আমার পর্ব ৭+৮+৯

আজকে শহর তোমার আমার পর্ব ৭+৮+৯
জিন্নাত চৌধুরি হাবিবা

রুপ্সিতা আলমারির উপর থেকে টুল দিয়ে উঠে আলিফের ট্রলি নিচে নামিয়ে একটা শাড়ি পড়ে যাওয়ার জন্য আলাদা রেখে নিজের সব জামাকাপড় গুছিয়ে নেয়।
রাত নয়টার দিকে আলিফ ঘুম থেকে উঠে ওয়াশরুমে যাওয়ার সময় খাটের পাশে ট্রলি দেখে বুঝলো রুপ্সিতাই নামিয়েছে।এই দু’দিনে জানা হয়ে গেছে এই মেয়ে কি করতে পারে আর না পারে।তাই এসবে মাথা না ঘামিয়ে ওয়াশরুমে পা বাড়ায়।রুপ্সিতা শাশুড়ীকে রাতের রান্নায় সাহায্য করেছে।এতে রান্না করাটাও দেখে নিলো।এভাবে কয়েকদিন দেখলে আস্তে আস্তে রান্না শিখে যাবে।
রুপ্সিতার শশুর পুরোনো কোন বন্ধুর সাথে দেখা করে বাসায় ফিরেছেন।এখন আর চাকরি করতে হয়না উনাকে।দুই ছেলেই এখন কর্মীক।
রাতের খাবার শেষ করে আলিফ ল্যাপটপ নিয়ে বসেছে।জামাকাপড় কালকেই গোছানো যাবে।রুপ্সিতা রুমে এসেই শুয়ে পড়েছে।দুজনের মধ্যে আর কোনো কথা হলোনা।

পরেরদিন রুপ্সিতা আলিফ দুজনে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।বাসে উঠে রুপ্সিতা জানালার পাশে বসেছে।জার্নিটা খুব ভালোই কেটেছে।রুপ্সিতার বমি করার অভ্যেস নেই।দীর্ঘ পাঁচ ঘন্টা জার্নির পর ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পৌঁছায় দুজনে।
গাড়ি থেকে নেমে আলিফ একহাতে ট্টলি অন্যহাতে রুপ্সিতার হাত মুঠো করে ধরে।
শক্তপোক্ত হাতের বাধনে নিজের হাত বাধা পড়তেই রুপ্সিতা অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে হাত দুটোর দিকে।আলিফের এতদিকে খেয়াল নেই।আলিফ রুপ্সিতার হাত শক্ত করে ধরে রাখার কারণ রুপ্সিতা এখানে কিছুই চেনেনা।
একটু সামনে গিয়েই সিএনজি ভাড়া করে নিজেদের গন্তব্যে পাড়ি জমায়।
ঘন্টাখানেক পর ওরা দুজন আলিফের মামাবাড়িতে এসে পৌঁছায়।সবাই বসার ঘরে ওদের জন্য অপেক্ষা করছিলো।মামি এগিয়ে এসে রুপ্সিতাকে জড়িয়ে ধরেন।রুপ্সিতা ও জড়িয়ে ধরে সালাম দেয়।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আলিফ সোফায় গা এলিয়ে বসে।আলিফের বড়মামার দুই মেয়ে এক ছেলে।বড় মেয়ে বিবাহিত।ছেলে আর ছোট মেয়ে বাকি আছে।ছেলেটা সারাদিন বাইরে বাইরেই ঘুরে বেড়ায়।ছোট মেয়ে মাহি এবার ইন্টার ফাস্ট ইয়ারে পড়ে।একটু গায়ে ঢলে পড়া স্বভাবের।সেটা হোক ছেলে হোক মেয়ে।একেকজনের এরকম গায়ে গা ঘেষে থাকার অভ্যেস আছে।
মাহি দৌঁড়ে এসে আলিফের পাশে বসে বলল,কেমন আছো ভাইয়া?
আলিফ হাসিমুখে জবাব দিলো,ভালো আছি আমি।তুই কেমন আছিস?
মাহি মুখে হাসি টেনে বলে,ভালো ছিলাম এখন তোমাকে দেখে আরো ভালো হয়ে গেছি।
মাহির মা রুপ্সিতার সাথে মাহিকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলল আলিফ আর রুপ্সিতাকে তাদের থাকার ঘর দেখিয়ে দিতে।
মাহি ওদেরকে আসতে বলে সামনে এগিয়ে গেলো।রুপ্সিতা চারপাশ দেখতে দেখতে হাটছে।আলিফ ওর হাতের কব্জি চেপে ধরে বলল,ঠিক করে হাটো।এখানে সাতদিন থাকবে সো বাড়িটা পরেও দেখতে পাবে।এখন দেখতে গিয়ে পড়ে হাড়গোড় ভাঙলে হসপিটালে বসে থাকতে হবে তোমার আর ঘোরা লাগবেনা।

রুপ্সিতা ভেঙচি কেটে আলিফের সাথে হাটা ধরলো।ওদেরকে রুম দেখিয়ে দিয়ে মাহি বেরিয়ে গেলো।রুপ্সিতা ট্রলি থেকে একটা জামা নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।পরনের শাড়ীটা চেঞ্জ করা দরকার।রুপ্সিতা বেরিয়ে আসতেই আলিফ ঢুকলো ওয়াশরুমে।
আলিফ বেরিয়ে দেখে টেবিলের উপর নাস্তা রাখা।রুপ্সিতা বসে বসে কিছু একটা ভাবছে।
মাত্রই মাহি নাস্তার ট্রে রেখে গেলো।রুপ্সিতার সাথে কথাও বলল না।কেমন টেরা চোখে তাকিয়ে চলে গেলো।রুপ্সিতা ভাবছে মেয়েটার আবার কি হলো?দিব্যিতো উনার সাথে হেসে হেসে কথা বলেছে।ধুর বাবা আমার এসব ভেবে কাজ নেই।
রুপ্সিতার ভাবনার মাঝেই আলিফ বলে উঠলো,কি ভাবছো রুপ্সি?
রুপ্সিতার হুস ফিরতেই ভাবনাটাকে সাইডে রেখে বলল,নাহ!কিছুনা।
আমার ক্ষিধা পেয়েছে চলুন নাস্তা করি।

আলিফ বলল,ক্ষিধা লেগেছে বসে আছো কেন?খাওয়া শুরু করে দিলেই পারতে।
তারপর দুজনেই নাস্তা সেরে একটা ঘুম দিলো।পাঁচ ঘন্টার জার্নি কি কম কথা নাকি?ক্লান্ত থাকায় দুজনেই ঘুমিয়ে পড়লো।আজ আর এখানে কাঁথা না থাকায় রুপ্সিতা এমনিতেই শুয়ে পড়েছে।হয়তো উনাদের কাঁথা রাখতে মনে নেই।নতুন বউ উনাদের কাছে কাঁথার জন্য যেতেও লজ্জা করছে।
রাত আটটায় রুপ্সিতার ঘুম ভেঙে গেলো।জামা কাপড় সব কুচকে উলটপালট হয়ে আছে।চুলগুলো এলোমেলো।ভাগ্যিস আলিফ জেগে নেই তাহলে ওকে এই উদ্ভট অবস্থায় দেখে কি না কি ভাবতো?

কিন্তু রুপ্সিতা বুঝতে পারছেনা হয়তো এই অবস্থায় রুপ্সিতাকে দেখলে আলিফ কয়েকটা হার্টবিট মিস করে যেতো।
নিজের কুচকানো জামা টেনেটুনে ঠিক করে ওয়াশরুমে গিয়ে চোখেমুখে পানি দিয়ে বের হলো।মাথার চুলগুলো হাত খোঁপা করে তাতে একটা কাঠি গুঁজে দিয়ে বারান্দায় পা বাড়ালো রুপ্সিতা।এখান থেকে দুরের উঁচুনিচু রাস্তাগুলো দেখা যাচ্ছে।সবকিছু কেমন ছোট ছোট মনে হচ্ছে।আসলে আলিফের মামার বাড়িটা উঁচু স্থানে হওয়ায় সবকিছুই ছোট ছোট মনে হচ্ছে।এখানে এসে রুপ্সিতার মন খুশিতে ভরে গেছে।ভাবতেই ভালো লাগছে ওরা এখানে সাতদিন থাকবে।হঠাৎই গান গাইতে মন চাইলো তাই দেরি না করে গান ধরলো।

“আমার একলা মনের আকাশ রাখি তোমার জন্য খুলে”
“আমার অবুজ সবুজ স্বপ্নগুলো সাজাই ফুলে ফুলে”(2)
“আমার সকল চাওয়া আর সকল পাওয়া,বুকে বয়ে যাওয়া সুখের হাওয়া তুমি নিতেই পারো”
“তোমার ইচ্ছে হলে মনটা শুধুই আমায় দিতে পারো”(2)

আলিফ এসে পেছনে দাঁড়িয়েছে।গানটা শুনে মায়ার কথা মনে পড়ে গেলো।মায়া প্রায় সময় গানটা গাইতো।যতই মায়ার স্মৃতিগুলোকে মনের কোনে চাপা দিয়ে রাখার চেষ্টা করে ততই তারা দীর্ঘশ্বাস হয়ে বেরিয়ে আসে।
লম্বা দুটো শ্বাস নিয়ে আলিফ বলল,গানটা কি তোমার খুব পছন্দের?
রুপ্সিতা চমকে ওঠে পেছনে ঘুরে তাকায়।আলিফতো ঘুমিয়ে ছিলো উঠলো কখন??
রুপ্সিতাকে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে আলিফ ক্ষীণ স্বরে বলল,কি হলো?উত্তর দিচ্ছো না যে?
রুপ্সিতা আলিফের দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে দূরের পথেরদিকে দৃষ্টি মেলে বলল,নাহ!এমনি মন চাইলো তাই গাইলাম।
ওহ বলে আলিফও বুকে হাত ভাজ করে সামনের দিকে তাকালো।
কিছুক্ষণ পর বলল,কোথায় কোথায় ঘুরতে যাবে?

রুপ্সিতা হাতের আঙ্গুলে হিসাব করছে আর একটা করে জায়গার নাম বলছে।
পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত,চন্দ্রনাথ পাহাড় ও মন্দির,মহামায়া লেক,সীতাকুণ্ড ইকোপার্ক,গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত,বাঁশবাড়ীয়া সমুদ্র সৈকত,কুমিরাঘাট সীতাকুণ্ড,চেরাগি পাহাড়,ছাগলকান্দা ঝর্ণা,নজরুল স্কয়ার,কুমারীকুন্ড,জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘর শেষ।এই জায়গা গুলোতেই ঘুরবো।
আলিফ কোমরে হাত দিয়ে বলল,তুমি বাদ রেখেছো কোনটা?তুমিতো চট্টগ্রামের সব দর্শনীয় জায়গার নামই বলে ফেলেছো।এত।নাম তুমি কিভাবে জানো?
রুপ্সিতা হাত উল্টে বলল,গুগল আছে কি করতে?তার কাছ থেকেই জেনেছি।
আলিফ বলল,তুমি সাতদিন কেন একমাস থাকলেও এই জায়গা গুলো ঘুরতে পারবেনা।এখান থেকে একেকটা জায়গা কতদূর তুমি জানো?

একজায়গায় গিয়ে ফেরত আসলে এতই টায়ার্ড হবা যে পরেরদিন আর বের হওয়ার ইচ্ছা থাকবেনা।
রুপ্সিতা মুখটা পানশে করে বলল,তাহলে আমরা এখানে দুইমাস থাকবো।তাহলেইতো সব ঘুরতে পারবো।
আলিফ তাচ্ছিল্য করে বলল,হ্যাঁ সাতদিন থাকতে পারো কিনা সেই চিন্তা করো।নাকি কালই বস ফোন দিয়ে বলে আলিফ এক্ষুণি অফিসে আসো।
রুপ্সিতা রেগে গিয়ে বলল,কি কচুর বস আপনার?বেটাকে সামনে পেলে দুইটা চটকানি মারতাম।মানুষ নতুন নতুন বিয়ে করে কত জায়গায় ঘুরে।আর আমি একজায়গায় আসতে না আসতেই চলে যাওয়ার চিন্তা করতে হচ্ছে।
রুপ্সিতার বলার ভঙ্গি দেখে আলিফ শব্দ করে হেসে দিলো।

রুপ্সিতা রেগে বলল,একদম হাসবেন না।তাহলে আপনার চুল টেনে সব ছিড়ে ফেলবো।
আলিফ হাসি থামিয়ে বলল,তাহলে সবাই তোমাকে বলবে ঐ দেখো আলিফ টাকলার বউ যাচ্ছে।আমার কিছুই হবেনা।
রাতের খাবারের জন্য ডাক পড়তেই দুজনে নিচে গেলো।আলিফ আর রুপ্সিতা যখন এসেছিলো তখন আলিফের মামা বাসায় ছিলেন না।এখন ডাইনিং এ আছেন।আলিফ রুপ্সিতাকে খোঁচা দিয়ে বলল,সালাম করো মামাকে।আর হ্যাঁ বেশি কথা বলা বা হাসাহাসি করবেনা।মামা এসব পছন্দ করেনা।
রুপ্সিতা সালাম দিলে আলিফের মামা উত্তর নিয়ে আলিফকে কেমন আছে জিজ্ঞেস করেছেন।আলিফ ও ভালো আছি আপনি কেমন আছেন মামা বলে কথার পিঠে আর একটা কথাও বলেনি।
সবাই চুপচাপ খাচ্ছে কেউ কথা বলছেনা।রুপ্সিতা আলিফের মামাকে আগাগোড়া স্ক্যান করছে।উনার মাথায় চুল নেই টাকলা যাকে বলে আরকি।আলিফ রুপ্সিতার দিকে আড়চোখে বারকয়েক তাকিয়ে ওর দৃষ্টি অনুসরণ করে বুঝলো রুপ্সিতা মামার মাথার দিকে তাকাচ্ছে বারবার।

হঠাৎ আলিফের বলা,সবাই তোমাকে বলবে ঐ দেখো আলিফ টাকলার বউ যাচ্ছে।কথাটা মনে করে রুপ্সিতা উচ্চস্বরে হাসতে যাবে তার আগেই আলিফ ওর মুখ চেপে ধরেছে।সবার দৃষ্টি খাবারের দিকে কেউ এদিকে তাকাচ্ছেনা।
রুপ্সিতার মুখেরদিকে তাকিয়েই আলিফ বুঝতে পেরেছে এই মেয়ে এখন কিছু একটা গন্ডগোল করবে তাই মুখ চেপে ধরে রেখেছে।
রুপ্সিতার শ্বাস আটকে আসছে।আলিফের হাতটা মুখ থেকে অনেক কষ্টে সরিয়ে পানি খেয়ে রুমে চলে এসেছে।রড় বড় শ্বাস নিচ্ছে রুপ্সিতা।কিছুক্ষণ পর আলিফ ও রুমে চলে আসে।
তোমাকে বলেছিলাম না মামার সামনে বেশি কথা বলবানা আর হাসবাও না।
রুপ্সিতা চোখ গরম করে বলল,তাই বলে এভাবে মুখ চেপে ধরে আমাকে মেরে ফেলবেন?আর একটু হলেতো আমি ইন্না-লিল্লাহ হয়ে যেতাম।কারো মুখ চেপে ধরলে নাক সহ ধরেন কেন?এতে মানুষ শ্বাস নিতে পারে?ভবিষ্যতে মুখ চেপে ধরার আগে নাক বাদ দিয়ে ধরবেন।জীবনে কারো মুখ চেপে ধরেন নি নাকি?
আলিফ জবাব দেওয়ার আগেই ওর ফোন বেজে উঠলো।রুপ্সিতা ভাবছে ওর বস ফোন দিয়েছে।অগ্নিমুখ করে আলিফের দিকে তাকিয়ে আছে।

আরিফ কল দিয়েছে সানি নাকি ওদের সাথে কথা বলবে।আলিফ মোবাইল রুপ্সিতার সামনে নিয়ে দুজনেই সানির সাথে কথা বলে।মোবাইলের স্ক্রিনে সানির মুখ দেখতেই রুপ্সিতার সব রাগ উবে গেলো।আলিফ ভাবছে মেয়ে মানুষ এত রাগ কিভাবে করে?
সবশেষে ইরিন সানিকে বলল,তোমার চাচ্চু আর মামনীকে বল গুড নাইট।
সানি বলল,আমার নানুর বুট নাই।
সানির কথা শুনে সবাই হাসতে হাসতে শেষ।রুপ্সিতা হাসতে হাসতে আলিফের বাহুতে একটা চাপড় মারলো।
আলিফ ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে আছে রুপ্সিতার দিকে।আজব মেয়ে মনে হচ্ছে আমি ওর বন্ধু তাই চাপড় মেরে দিলো।
সকালে নাস্তা সেরে আলিফ,রুপ্সিতা আর মাহি বেরিয়েছে ঘুরতে।এখন আশপাশেটা ঘুরবে।দুপুরের পর পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে যাবে ওরা।
পাহাড়ি উঁচু নিচু আঁকা-বাঁকা রাস্তা দিয়ে হেটে চলেছে তিনজনে।রুপ্সিতা হাটছে সামনের দিকে চোখ চারপাশে।এরকম হাটতে গিয়ে একবার হোঁচট খায়।পড়ে যাওয়ার আগে আলিফ হাত চেঁপে ধরে।
একটা ঝাঁড়ি দিয়ে বলে,চোখ কই থাকে তোমার?কিভাবে হাঁটো?

রুপ্সিতা মুখ কালো করে বলল,এরকম করেন কেন?আমি যদি চারপাশে না দেখি তো এখানে এসেছি কিসের জন্য?
আলিফ রুপ্সিতার হাত শক্ত করে ধরে বলল,দেখবা!কিন্তু আগে চলার পথে তাকাবা পরে আসেপাশে।
ওদের কাহিনী দেখে মাহি প্রচন্ড বিরক্ত।কি দরকার আলিফ ভাইয়ার এই মেয়েটাকে এভাবে ট্রিট করার?মেয়েটাকি ছোট নাকি?যত্তসব।
মাহি রাস্তা দিয়ে হাটতে হাটতে হঠাৎ হোঁচট খেয়ে আলিফের বাহু আঁকড়ে ধরে।আলিফ বিরক্ত হয়ে বলল,দুজন দুদিক থেকে আমাকে চেপে মেরে ফেল।তুই তো এসব রাস্তায় হেঁটে অভ্যস্ত তাহলে আজ তোর আবার হোঁচট খেতে হলো কেন?
আমার মনে হচ্ছে আমি ঘুরতে আসিনি নিজেকে মারতে এখানে এসেছি।
মাহি আলিফের বাহু আঁকড়ে ধরেছে দেখে রুপ্সিতার রাগ লাগলো।ও এবার ইচ্ছে করে রাস্তায় পড়ে গিয়ে পা ধরে বসে থাকলো।
আলিফ কোমরে হাত দিয়ে বলল,বেশ হয়েছে।আরো উল্লুকের মতো করে হাঁটো।রুপ্সিতা পা ধরে কাঁদো কাঁদো স্বরে বলল,আমি কি ইচ্ছে করে করেছি নাকি?

আলিফ নিচে বসে রুপ্সিতার পা চেক করে বলল,দেখি কোথায় ব্যথা পেয়েছো?
রুপ্সিতা পায়ের গোড়ালিতে হাত দিয়ে পা সরিয়ে নেয়।কেঁদে উঠে বলে লাগবেনা পা দেখা।পরে আমি আরো ব্যথা পাবো।
আলিফ বলল,আমাকে দেখতে তো দেবে পা মচকেছে কিনা?
রুপ্সিতা চমকে উঠে বলে না না না কিছু হয়নি।লাগবেনা পা চেক করা।রুপ্সিতা বুঝতে পেরেছে আলিফ এখন ওর পা ধরে মোচড় দিবে।তাই বলল,লাগবেনা আমি বাসায় গিয়ে মলম লাগিয়ে নেবো।
আলিফ বলল,তাহলে এখন বাসায় যাবে কি করে?ঘুরতেও তো পারবেনা এখন।
রুপ্সিতা মনে মনে বলে বেটা তোর কোলে উঠার জন্য এত কিছু করলাম আর তুই জিজ্ঞেস করিস বাসায় কিকরে যাবো?কিন্তু কাঁদো কাঁদো হয়ে মুখে বলল,আমি এখন এখান থেকে উঠতেও পারবোনা।
আলিফ কোনো উপায় না পেয়ে জোরে জোরে দুটো শ্বাস নিয়ে রুপ্সিতাকে কোলে তুলে নিয়ে বাসার পথে হাঁটা দেয়।রুপ্সিতা দুহাত দিয়ে আলিফের গলা আঁকড়ে ধরে।

মাহির রাগ লাগছে এবার।ও আলিফকে একটু একটু পছন্দ করে কিন্তু আলিফ সেটা বোঝার চেষ্টা করেনা।এখন আবার বিয়ে করে এই মেয়েটাকে নিয়ে শুরু করেছে আদিখ্যেতা।রাগ,দুঃখ সব একসাথে মিশিয়ে রুপ্সিতার দিকে তাকিয়ে আছে।যেন পারলে এখনি রুপ্সিতাকে চিবিয়ে খাবে।
রুপ্সিতা ব্যস্ত আলিফকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে।এই কয়দিনে মানুষটার প্রতি একটা মায়া জন্মে গেছে।আলিফের সাথে থাকতে ভালো লাগে ওর।ওর আশেপাশে থাকলে একটা অদ্ভুত অনুভূতি হয়।একমনে চেয়ে আছে আলিফের মুখপানে।হঠাৎ রুপ্সিতার কি হলো ও জানেনা।হাত উঁচু করে আলিফের গাল ছুঁয়ে দিলো।

আলিফ থেমে গেছে রুপ্সিতার হঠাৎ আক্রমনে।পরক্ষণে আবার হাটা ধরলো।ও নাহয় নিজে এখন প্রস্তুত নয় কিন্তু রুপ্সিতার অনুভূতি গুলোকে অগ্রাহ্য করার অধিকার ওর নেই।আলিফর নিজেকে প্রস্তুত করার জন্য সময় প্রয়োজন।একজনকে ভুলে দ্বিতীয়বার কাউকে মনে জায়গা দেওয়া এতটাও সহজ নয়।যতটুকু সম্ভব রুপ্সিতার সাথে স্বাভাবিক হতে চাইছে।
অনেকটা পথ হেঁটে বাসায় এসে পৌঁছেছে তিনজনে।আলিফ হাঁপিয়ে গেছে রুপ্সিতাকে কোলে নিয়ে।একে তো অনেকটা পথ আবার উঁচুনিচু রাস্তা তাই কষ্টটা একটু বেশিই হয়েছে।
একটু আগেই তিনজনে বেরিয়েছে।এত তাড়াতাড়ি ফিরে এসেছে আবার রুপ্সিতাকে কোলে নিয়ে তাই মাহির মা চিন্তিত হয়ে বলল, কি হয়েছে?তোমরা ফিরে এলে যে।রুপ্সিতার কি হয়েছে?
আলিফ বলল,বলছি আগে ওকে নামাই।রুপ্সিতাকে সোফায় বসিয়ে বলল,মাহি এক গ্লাস পানি দেতো।
মাহির মেজাজ এমনিতেই বিগড়ে আছে এখন ইচ্ছা করছে রুপ্সিতার সাথে সাথে আলিফের মাথাটাও ফাটিয়ে দিতে।
রুপ্সিতা মনে মনে মাহির উপর রাগ ঝাড়ছে।এই মেয়ের কারণে আজ ঘুরতে পারলো না।শয়তান মেয়ে আলিফের সাথে চিপকে থাকতে চায়।

যখন পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে যাবো?তখন তোকে মোটেও নেবো না।স্বামী-ত্রীর মাঝে কাবাবে হাড্ডি হতে আশে।
মাহি পানির গ্লাস এগিয়ে দিতেই আলিফ ঢকঢক করে পুরো গ্লাস খালি করে দেয়।গায়ে ঘাম ছুটে গেছে।রুপ্সিতার এখন নিজের কাছেই খারাপ লাগছে আলিফের অবস্থা দেখে।এবার আলিফ তার মামিকে সবটা বলতেই উনি হন্তদন্ত হয়ে বললেন,সে কি পায়ে বেশি চোট পেয়েছে নাকি?
রুপ্সিতা বলল,মামি আপনি চিন্তা করবেন না।কিছুক্ষণ রেস্ট করলে পা ঠিক হয়ে যাবে।আলিফ রুপ্সিতাকে আবার কোলে নিয়ে রুমে নিতে চাইলে রুপ্সিতা না করে দেয়।ও বলে,
আমি এখানে কিছুক্ষণ থাকি।রুমে একা একা বসে থাকতে হবে।
আলিফ ও আর জোর করলোনা নিজে রুমে চলে এসেছে।
রুপ্সিতা যে পায়ে ব্যাথা পায়নি এমনটা নয়।অভিনয় করে পড়েছে ঠিকই পায়েও একটু ব্যথা পেয়েছে।তবে সেটা এত গুরুতর না।ঘন্টাখানেক বসার ঘরে থেকে মাহিকে ডেকে বলল,ওকে একটু হেল্প করতে।ও রুমে যেতে চায়।মাহির মা মাহিকে বলল,যা ওকে রুমে দিয়ে আয়।

মাহি মুখটাকে বেলুনের মতো ফুলিয়ে রুপ্সিতা কাঁধের নিচে হাত দেয়।রুপ্সিতা ইচ্ছে করে নিজের খানিকটা ভর মাহির উপর ছেড়ে দেয়।মাহি পা এগোতে পারছেনা তাই বলল,তুমি এত ভারী কেন?
রুপ্সিতার রাগ লাগছে কিন্তু মুখে মেকি হাসি ধরে বলল,তুমি এত পাতলা যে তাই আমি ভারী।এখন আমাকে কষ্ট করে রুম পর্যন্ত দিয়ে আসো।
মাহি রক্তচক্ষু নিয়ে বলল,তুমি এসব ইচ্ছে করে করছো তাইনা?
রুপ্সিতা কথা না পেঁচিয়ে সোজাভাবে বলল,অন্যের জামাইর গা ঘেষে দাঁড়ালে এরকমই হবে।এখন কি দেখছো পরে আরো কিছু দেখবে।সো ডিসটেন্স মেনটেইন করে চলবে।
মাহি রুপ্সিতার কাঁধ থেকে হাত সরিয়ে নিতেই রুপ্সিতা মাহিকে চেপে ধরে বলে,উহু!আমাকে রুমে দিয়ে তারপর তুৃমি যাবে।অগত্যা মাহি রুপ্সিতাকে রুমে পৌঁছে দিলো।আলিফ ফোনে কারো সাথে কথা বলছিলো।ফোন রেখে পেছনে তাকিয়ে দেখে মাহি রুপ্সিতাকে ঘরে নিয়ে এসেছে।

রুপ্সিতা খাটে হেলান দিয়ে বসে পা টা হালকা একটু নাড়াচাড়া করে নিলো।
মাহি আর না দাঁড়িয়ে চলে গেলো।আলিফ বলল,ব্যথাটা এখন কেমন?কমেছে?
রুপ্সিতা বলল,হ্যাঁ!এখন অনেকটাই কমেছে।আলিফ চিন্তিত কন্ঠে বলল,পায়ের ব্যথা বেশি হলে আজ আর ঘুরতে যেতে হবে না।
রুপ্সিতা চেঁচিয়ে উঠে বলল,নাহ!আমি ঘুরতে যাবো ততক্ষণে পা ঠিক সেরে যাবে।
আলিফ বিরক্ত হয়ে বলল,তুমি হাটতে পারছোনা বলে আমি তোমাকে কোলে করে নিয়ে আসলাম তাহলে তুমি বিকালে বেরোবে কি করে?পায়ের ব্যথা সারতে অন্তত একদিন তো লাগবেই।

রুপ্সিতা আমতা আমতা করে বলল,আমার পা ঠিক সেরে যাবে।আর যদি না সারে তাহলে যাবোনা।
মানে তোমাকে যেতেই হবে।বিয়ের প্রথমদিন দেখলাম একরকম ভোলাভালা এখন দিনদিন তোমার নতুন নতুন রূপ বের হচ্ছে।।রিতিমতো ঝগড়া করছো।জানিনা আমাকে তোমার আর কত রূপের সাথে পরিচিত হতে হবে।
দুপুরে রোদ একটু কমে আসতেই রুপ্সিতা আর আলিফ পতেঙ্গার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে।আলিফ মাহিকে নেওয়ার কথা বলতেই রুপ্সিতা বলল,আমরা স্বামী-স্ত্রী যাচ্ছি সেখানে ও ছোট বাচ্চা গিয়ে কি করবে?

অপমানিত হয়ে মাহি বলল,ভাইয়া আমি এমনিতেও যাবো না তোমরা যাও।
আলিফ রুপ্সিতাকে চোখ রাঙিয়ে বলল,এসব কোন ধরনের কথা হ্যাঁ।ওর খারাপ লেগেছে না?
রুপ্সিতা উল্টো চোখ গরম করে আলিফের দিকে তাকিয়ে বলল,তাহলে ওকে বেডরুমে ও আমাদের সাথে নিয়ে চলুন।
আলিফ আর কিছু বলল না।এই মেয়েটা এখন মাহিকে সহ্য করতে পারছেনা যখন জানতে পারবে ওর স্বামীর জীবনে ওর আগেও অন্যকেউ ছিলো তখন কিভাবে সহ্য করবে?

মেইন চট্টগ্রাম থেকে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত ১৪ কিলোমিটার।আলিফ আর রুপ্সিতা দুজনে সেখানে বিকালের মধ্যেই পৌঁছে গেছে।সমুদ্র দেখেই রুপ্সিতার মন খুশিতে ভরে গেলো।আলিফের হাত ছেড়ে দিয়ে সমুদ্রের তীরে গিয়ে দাঁড়ালো।
আলিফ পেছন থেকে চিল্লিয়ে বলছে,দৌঁড়াবানা একদম।এবার কিছু হলে আমি তোমাকে এখানে রেখেই চলে যাবো।
আলিফ আর রুপ্সিতা পাশাপাশি হাটছে।বিকেল হলেই এখানে লোকজনের সমাগম বেড়ে যায়।অনেকগুলো কাপল হাত ধরে ঘুরছে।অনেকে সমুদ্রে নেমে সাঁতার কাটছে।রুপ্সিতা সাঁতার কাটার বায়না ধরতেই আলিফ ওকে আটকে দিলো।এই সমুদ্রের প্রস্থ খুব বেশি নয়।এখানে সাঁতার কাটা ঝুঁকিপূর্ণ।কিন্তু রুপ্সিতা মানতেই চাইছেনা ও নামবেই নামবে।আলিফ ধমক দিয়ে বলল,তুমি যে সাঁতার কাটবে উঠে কি পড়বে?জামা এনেছো?আর যেই জামা পড়েছো ভিজলে কি বিচ্ছিরি অবস্থা হবে সেই খেয়াল আছে তোমার?

রুপ্সিতা ভাবলো সত্যিই গায়ের জামাটা হালকা কালারের ভিজলে পুরো শরীরের ভাঁজগুলো স্পষ্ট বুঝা যাবে।এসব ভেবেই দমে গেলো।সেখানে ঘোরাঘুরির পর রুপ্সিতা বলল ও সূর্যাস্ত দেখা ছাড়া এখান থেকে এক পাও নড়বেনা।
আলিফ বলল,ঠিক আছে।ঘড়িতে সময় দেখে বলে উঠলো সূর্যাস্ত হতে এখনো অনেকটা দেরি আছে চলো আমরা ওইদিকে যাই।ওই রাস্তা দিয়ে গেলে ঝাউবন দেখতে পাবা।
রুপ্সিতা মাথা নাড়িয়ে পেছন থেকে আলিফের শার্ট মুঠো করে হাটতে লাগলো।

আলিফ একবার ঘাড় ঘুরিয়ে রুপ্সিতার হাতের দিকে তাকিয়ে আবার সামনে তাকিয়ে হাটতে থাকে।
দিন দিন রুপ্সিতা ওর সাথে মিশে যাচ্ছে।এটাই স্বাভাবিক একজন মেয়ে নিজের স্বামীর প্রতিইতো দুর্বল হবে।
দুজনে মিলে ঝাউবনের রাস্তা ধরে হেঁটে কিছুদূর যেতেই খাবারের দোকান দেখলো।আলিফ রুপ্সিতার হাত ধরে একটা দোকানে ঢুকে পড়লো।রুপ্সিতা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই আলিফ বলল,এখানে খুব কম খরচে সুস্বাদু আর স্ট্রিট ফুড পাওয়া যায়।এখানের জনপ্রিয় খাবার হলো মসলা দিয়ে ভাজা কাঁকড়া যা শসা ও পেয়াজ দিয়ে সাজানো একপ্লেট ছোলার সাথে পরিবেশিত হয়।
রুপ্সিতা মন দিয়ে সব শুনে বলল,আপনি এতকিছু কিভাবে জানেন?আপনি কি আগেও এখানে এসেছেন?
আলিফ চোখ ছোট করে বলল,বোকার মতো কথা বলো কেন?এখানে যেহেতু আমার মামার বাড়ি সেহেতু আমার আসাতো বিচিত্র কিছু নয়।

দুজনে খাবার খেয়ে দোকান থেকে বেরিয়ে সামনে হাটা দিলো।মাথার উপর দিয়ে একটা বিমান যাচ্ছে রুপ্সিতা সেটা দেখে চলেছে।ওর কাছে এটা অনেক ভাল্লাগে।ছোটবেলা থেকেই কোথাও উড়োজাহাজ দেখলে রুপ্সিতা দাঁড়িয়ে পড়ে।
আলিফ রুপ্সিতার জন্য আস্তে আস্তে হাটছে।সামনেই একটা বার্মিজ মার্কেট আছে।রুপ্সিতা ঘুরে ঘুরে তিন কালারের তিন মুঠো চুড়ি,দু’জোড়া কানের দুল কিনে নেয়।আবার সানির জন্য একটা পুতুল কিনে নিয়ে আগের পথে দুজনে ফিরে আসে।

সূর্যাস্ত হতে দেখার জন্য আলিফ রুপ্সিতা পূনরায় সমুদ্রের তীরে এসে দাঁড়িয়েছে।সূর্য লাল বর্ণ ধারন করেছে।আস্তে আস্তে সমুদ্রের মাঝে নিজের অস্তিত্ব বিলিন করে দিচ্ছে।রুপ্সিতা সেই দৃশ্য উপভোগ করছে।আলিফ তার পেছনেই দাঁড়িয়ে আছে আর এক ইঞ্চি হলে রুপ্সিতার পিঠ গিয়ে আলিফের বুকে ঠেকবে।রুপ্সিতা ভাবছে সূর্য তার অস্তিত্ব সমুদ্রের মাঝে বিলীন করে দিনশেষে আমি নিজেকে আলিফের মাঝে বিলীন করে দেবো।এসব ভেবে নিজেই লজ্জা পাচ্ছে।আলিফ পেছনে দাঁড়ানো বলে রুপ্সিতার লজ্জা রাঙা মুখটি মিস করে গেলো।
সূর্য ডুবে যেতেই আলিফ আর রুপ্সিতার বাসার উদ্দেশ্য রওনা হয়।এখান থেকে বাসায় যেতে অনেকটা পথ।

বারান্দায় একটা টুলের উপর বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে মায়া।মুখটা মলিন হয়ে আছে।সবাই বলে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকলে মনের কষ্ট গুলো নাকি অনেকটাই কমে যায়।মায়া ভাবছে ওর ভাগ্যটাই খারাপ তানাহলে নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে পেলোনা।এখন আবার মা হওয়ার অনুভূতিটা কেমন সেই অনুভূতিটাও উপলব্ধি করতে পারছেনা।চোখের কোনে পানি চিকচিক করছে ওর।

পেছন থেকে একটা বলিষ্ঠ হাত মায়ার কাধের উপর পড়েছে।মায়া পেছনে না ঘুরে দৃষ্টি আগের মতোই আকাশের দিকে নিবদ্ধ করে আছে।
আরাফাত মায়ার পাশে আরেকটা টুল টেনে বসে পড়ে।
মায়াকে বুঝাচ্ছে,কেন কষ্ট পাচ্ছো তুমি?আল্লাহ চাইলে সব ঠিক হয়ে যাবে।তাছাড়া তোমার চিকিৎসাতো চলছেই।ডঃ বলেছেন এই থেরাপি দিলে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটা আছে।
এমনটাতো নয় যে বাচ্চা না হলেে আমি তোমাকে ছেড়ে চলে যাবো।আমি তোমাকে বাচ্চার জন্য ভালোবাসি নি।তুমি কেন এসব ভেবে নিজেকে কষ্ট দিচ্ছো সাথে আমাকেও।

মায়া হুট করে আরাফাতের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে হাউমাউ করে কান্না করে দেয়।ওর জীনটা কেন এরকম?একবার একজনের মন ভেঙেছে এখন আরেকজনকে বাবা হওয়ার আনন্দ থেকে বঞ্চিত করছে।আরাফাত পরম আদরে হাত দুটো দিয়ে মায়াকে আগলে নেয়।
রাতের খাবার খাওয়ার সময় রুপ্সিতা লক্ষ্য করলো মাহি সকালের পর থেকে আর বাড়াবাড়ি করে নি।একদম চুপচাপ ছিলো।অল্প বয়সের আবেগে পড়ে প্রথমে হয়তো আলিফের গায়ে পড়তে চাইতো সকালে রুপ্সিতার হুমকিতে মনে হয় সব আবেগ হাওয়া হয়ে বেলুনের মতো চুপসে গেছে।রুপ্সিতা মনে মনে বলে আমার জামাইয়ের ভাগ আমি কাউকে দিমুনা হুহ।

রুপ্সিতা চুলে বেনুনি করছে।এমনিতে নিজের বাসায় থাকলে চার পাঁচদিনেও চুল আঁচড়ায়না।কোথাও বের হলে তখন আঁচড়ায়।এখন বিয়ে হওয়ার পর থেকে রোজ চুল আঁচড়ায়।যদি সবাই ওকে খবিশ বলে?
আলিফ খাটে শুয়ে শুয়ে রুপ্সিতার বেনুনি করা মনযোগ দিয়ে দেখছে।
বেনুনি করা শেষ হলে আলিফের পাশে শুয়ে পড়ে।আলিফ কি মনে করে রুপ্সিতার বেনুনি ধরে দিলো এক টান।
ব্যথায় চোখমুখ কুচকে রুপ্সিতা আহ বলে উঠে।

আলিফ হাসছে।রুপ্সিতার মেজাজ গরম হয়ে গেছে ও উঠে আলিফের চুল ধরে টানাটানি শুরু করেছে।আলিফ নিজের চুল ছাড়াতে চাইছে।ছাড়াতে না পেরে রুপ্সিতা চুল ধরে টানছে।ঘুমনোর সময় দুজনে ধস্তাধস্তি শুরু করে দিয়েছে।রুপ্সিতা টান মেরে আলিফের তিনচারটা চুল উঠিয়ে ফেলেছে সেটা দেখে আলিফ ও রুপ্সিতার দুটো চুল উঠিয়ে ফেলেছে।রুপ্সিতা নিজের চুলের দিকে তাকিয়ে ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দিলো।আলিফ বোকা বনে গেলো।ও ভাবেনি রুপ্সিতা এভাবে কান্নাকাটি শুরু করবে।
রুপ্সিতা কাঁদতে কাঁদতে বলে আপনি আমার চুল ছিঁড়েছেন কেন?
আলিফ বলল,তুমি আগে আমার চুল ছিঁড়েছো কেন?সেজন্য আমি তোমার চুল ছিঁড়েছি।
আপনি আমার বেনুনি ধরে টান দিলেন কেন?
আলিফ বলল,সেদিন তুমি আমার পিঠে কিল দিলে কেন?
রুপ্সিতা নাক টেনে টেনে বলল,সেটার প্রতিশোধ নিলেন?সময় আমারো আসবে।এই দিন দিন নয় আরো দিন আছে।এক মাঘে শীত যায় না হুহ।

আলিফ কপাল চাপড়ে বলল,আরো কয়টা খনার বচন জানা থাকলে সেগুলো ও বলা শুরু করো।রুপ্সিতা মুখ খুলতে গেলেই আলিফ অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে শুয়ে পড়ে।
রুপ্সিতা কিছুক্ষণ আলিফের দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে নিজেও কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লো।কালরাতেই আলিফের মামি একটা কাঁথা দিয়ে গেছে।

পরেরদিন বিকালে আলিফ শুয়েছিলো।রুপ্সিতা রুম থেকে বেরিয়ে বসার ঘরে গিয়ে চমকে উঠলো।একটা ছেলে ফ্লোরে লম্বা হয়ে শুয়ে আলিফের মামির পা জড়িয়ে ধরে আছে।উনি পা ঝাড়া মেরে সরাতে চাইছেন আর বলছেন,আমার কাছে টাকা নাই।তোর বাবার কাছে যা।
ছেলেটা তবুও পা ছাড়ছেনা।

না মা বাবার কাছে গেলেই এখন কেলানি দিবে।তুমি না আমার লক্ষি মা।প্লিজ দিয়ে দাও না দুহাজার টাকা।
উনাকে মা বলায় রুপ্সিতা বুঝলো এটা মাহির ভাই।রুপ্সিতার ওকে না চেনারই কথা।গত দু’দিনে রুপ্সিতা একবারো ছেলেটাকে দেখেনি।
আলিফের মামি বলল,আচ্ছা আমার পা ছাড়।দেবো টাকা কথাটা বলার দেরি ছেলেটার দাঁড়িয়ে পড়তে দেরি হয়না।মায়ের পিছু পিছু রুমে যাওয়ার সময় গোলাপি থ্রিপিস পড়া একটা মেয়েকে দেখে বলল,এই পরীটা আবার কে মা?
উনি মাথা ঘুরিয়ে রুপ্সিতার দিকে তাকিয়ে বলল,এক চটকানি দেবো।সবজায়গায় মেয়ে দেখলে ফ্লার্ট করার ধান্দা।ও তোর আলিফ ভাইয়ার বউ রুপ্সিতা।

আজকে শহর তোমার আমার পর্ব ৪+৫+৬

ছেলেটা কানে হাত দিয়ে রুপ্সিতার দিকে তাকিয়ে হেসে বলল,সরি ভাবি।
রুপ্সিতা হেটে বাসার ছাদে চলে এসেছে।যত উপর থেকে সবকিছু দেখছে ততই ভালো লাগছে।এসব জায়গা ঘুরতে আসার জন্যই বেষ্ট সারাজীবন থাকার জন্য হলে একঘেয়েমি চলে আসে।
আলিফ শোয়া থেকে উঠে রেডি হয়ে নিয়ে রুপ্সিতাকে খুজছে।ঘুমাতে ঘুমাতে দেরি হয়ে গেছে।এখন ও রুপ্সিতাকে খুজছে বাইরে বের হওয়ার কথা ছিলো।রুম থেকে বেরিয়ে বাড়িতে ভালো করে খুঁজে ছাদে গেলো।ওখানে গিয়ে দেখে রুপ্সিতা ছাদে দাঁড়িয়ে নিচেরদিকে তাকিয়ে আছে।

রুপ্সি!
আলিফের ডাকে পেছন ফিরে তাকায় রুপ্সিতা।
আলিফ বলল,চল ঘুরতে যাবে না?আর আমি এতক্ষণ ঘুমালাম ডেকে দিলেনা কেন?
রুপ্সিতা জিব দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলল,আপনি এমনভাবে ঘুমাচ্ছিলেন ডাকতে হলে আমাকে তিন গ্লাস পানি খেতে হতো।তাই আপনাকে ডেকে নিজের শক্তি অপচয় করতে চাইনি।
আলিফ কোমরে হাত দিয়ে বলে,সব সময় ফাজলামি না?
রুপ্সিতা হেসে দিয়ে বলে,আচ্ছা চলুন!আমাকে রেডি হতে হবে।
রুপ্সিতা সেদিন আলিফের কিনে দেওয়া ওখান থেকে একটা কালো শাড়ি পড়ে চোখে কাজল,ঠোঁটে লিপস্টিক দিয়ে রেডি হয়ে নিয়েছে।আলিফ একদৃষ্টিতে কিছুক্ষণ রুপ্সিতার দিকে তাকিয়ে ছিলো।কালো শাড়িতে বেশ মানিয়েছে রুপ্সিতাকে।আলিফের ধ্যান ভাঙলো রুপ্সিতার কথায়,চলুন আমি রেডি।

আলিফ কিছু না বলে হাঁটা ধরলো পেছন পেছন রুপ্সিতা ও আসছে।সারাদিনের ঘোরাঘুরি করে রাতে বাসায় ফেরার পর আলিফের মামা জানালেন কাল সবাই মিলে উনার বন্ধুর বাড়িতে যাবেন।সাথে রুপ্সিতা আর আলিফ ও যাবে।রুপ্সিতা ভেবেছিলো কালকে মহামায়া লেকে যাবে।এখন আর সেটা পরশু ছাড়া সম্ভব না।

আজকে শহর তোমার আমার পর্ব ১০+১১+১২