আবেগময় সম্পর্ক গল্পের লিংক || মৃদু সুপ্রিয়া

আবেগময় সম্পর্ক পর্ব ১
লেখিনীতে মৃদু সুপ্রিয়া

বিয়ের দিন মেহুল জানতে পারল সে তার হবু স্বামী আকাশের দ্বিতীয় স্ত্রী হতে চলেছে। এই কথাটা জানামাত্রই বিয়ের আসর থেকে উঠে যেতে চেয়েছিল সে। কারণ আর যাইহোক বিবাহিত কোন পুরুষকে বিয়ে করতে চায় না মেহুল।
বিয়ের আসর থেকে উঠে আসতে যাবে এমন সময় পাচ বছর বয়সী একটা ছেলে এসে তার শাড়ির আচল ধরে বলে, “তুমি বিয়েটা করে নাও নতুন আম্মু। দাদি, আব্বু আমাকে একটুও ভালো বাসে না। আমার আম্মুই শুধু আমায় ভালোবাসত। তুমি আমার নতুন আম্মু হয়ে আসো না।”

ছেলেটির এমন মায়ামাখা কথায় মেহুল কি বলবে বুঝতে পারছিল না। এমন সময় একজন পুরুষ এসে তার সামনে দাড়ায়। নিজেকে ছেলেটির মামা পরিচয় দিয়ে বলে, “ওর নাম রায়ান। আমার বোন অন্তরার ছেলে। আমাকে হয়তো তুমি চিনবে আমি তোমার বাবার অফিসেরই বস। আমার নাম অন্তর চৌধুরী।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

মেহুল আগ্রহী ছিল না এসব বিষয়ে জানতে সেটা তার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছিল। অন্তরও সেটা বুঝতে পারে। ব্যাপারটা বুঝতে পেরে বলে, “তুমি এই বিয়েটা করে নাও। আমার ভাগ্নের জন্য একটা মায়ের খুব দরকার।”
মেহুল রেগে গিয়ে বলে, “আপনার ভাগ্নের মায়ের দরকার তো আমি কেন ওর বাবাকে বিয়ে করব? আপনিই বা কেমন ভাই নিজের বোনের সতীন আনতে চাইছেন।”

অন্তর হতাশ হয়ে বলে, “আমার বোন অনেকদিন থেকে নিরুদ্দেশ। আজ প্রায় দুই বছর থেকে ওর কোন খোজ নেই। এতদিনে যখন ফেরেনি তখন এখনও আর ফেরার চান্স নেই।”
মেহুল কি বলবে বুঝতে পারছিল না। যদি এমন হতো যে অন্তরা মারা গেছে তাহলে সে বিয়েটা করে নিতে পারত। কিন্তু এরকম নিখোজ জন্যই সে বিয়ে করতে চাইছে না। মেহুল তো প্রথমবার আকাশকে দেখেই তাকে ভালোবেসে ফেলেছিল। তাকে দেখে কে বলবে সে এক ছেলের বাবা। এখনো চেহারায় রূপ লাবণ্য ধরে রেখেছে। মেহুল কিছু একটা ভেবে বলে,“আমি যতদূর জানি আপনিই আমার জন্য সম্মন্ধটা এনেছিলেন আমার বাবার কাছে। আচ্ছা আপনি আমাকেই কেন বাছাই করলেন?”

অন্তর চৌধুরী বাকা হেসে বলেন,“আমার বোনের নিরুদ্দেশের পর আমার ভাগ্নেকে অনেক অযত্নে বড় হতে হয়েছে। এরমধ্যে যখন আমার কানে আসে যে, আকাশ দ্বিতীয় বার বিয়ের জন্য মেয়ে দেখছে তখন আমি ভাবি যদি সৎমা এসে রায়ানের উপর আরো অত্যাচার করে, তাই আমি তোমাকে ঠিক করি। কারণ তোমার বাবার থেকে যতদূর শুনেছি তুমি খুব ভালো মেয়ে। বাচ্চাদের খুব ভালোবাসো। তাছাড়া তুমি যদি আমার ভাগ্নের উপর কোন রকম অত্যাচার করো তাহলে আমি তোমার বাবাকে চাকরিচ্যুত কর‍তে পারি।”

মেহুলের কাছে এতক্ষণে সব ব্যাপারটা পরিস্কার হতে থাকে। তাকে নিয়ে যে কত বড় খেলা চলছে সেটা তার মাথায় আসল। সবটা বুঝতে পেরে আরো বেশি রেগে যায় মেহুল। জোরে চিৎকার করে বলে, “আমাকে কি ভেবেছেন আপনারা? আমি কেন আপনাদের কথা শুনব? আমার কোন ঠেকা নেই। আমি করবো না এই বিয়ে।”

“অনেকক্ষণ থেকে ভালো ভাবে কথা বলেছি। এখন বলছি ভালোয় ভালোয় বিয়েটা করে নাও। নাহলে ভালো হবে না। তোমার বাবা কিন্তু অফিস থেকে অনেক টাকা লোন নিয়েছে। তুমি যদি বিয়েটা না কর তাহলে সেই লোন পরিশোধ করতে গিয়ে তোমাদের পথে বসতে হবে।”
“আপনি কি আমাকে ব্ল্যাকমেইল করছেন?”
“ধরো সেটাই করছি। এখন বলো বিয়ে করবেন কি না?”

মেহুল একপ্রকার দিশেহারা হয়ে যায়। এখন বিয়েটা করা ছাড়া তার কাছে সত্যি আর কোন উপায় ছিল না। তাই মেহুল বলল,“আমি বিয়েটা করে নেব।”
অন্তর জয়ের হাসি হাসে। রায়ানও খুশিতে লাফিয়ে উঠে বলে, “তার মানে আমার নতুন আম্মু হবে তুমি। কি মজা। তুমি আমাকে অনেক আদর করবে তো?”

মেহুল মলিন হেসে বলে, “হ্যা করবো।”
এরপর বিয়ের আসরের দিকে পুনরায় পা বাড়ায় মেহুল। সবাই অবাক হয়ে যায় তাকে ফিরতে দেখে। মেহুল কাজি সাহেবকে বলে,“আমি ফিরে এসেছি। এই বিয়েতে আমি রাজি আছি। আপনি বিয়ে পড়ানো শুরু করুন।”
মেহুল একনাগাড়ে কথাগুলো বলে আকাশের দিকে তাকালো। আকাশ তার দিকেই অবাক নয়নে তাকিয়ে আছে। আকাশ তো বিয়েটা হবে না ভেবে উঠেই যেতে চেয়েছিল এমন সময়েই মেহুল আবার ফিরে এলো।
কবুল বলার মাধ্যমে আকাশকে নিজের স্বামী হিসেবে স্বীকার করে নিল মেহুল। আকাশও কবুল বলে বিয়েটা করে নিল। এরপর আসে বিদায়ের পালা। মেহুল তার পরিবারের সব সদস্যদের বিদায় জানিয়ে নতুন গন্তব্যের দিকে পা বাড়ায়।

শ্বশুরবাড়িতে এসে মেহুল দেখে তার জন্য তৈরি সাজানো গোছানো একটি বাড়ি। আকাশের মা আমিনা আক্তারই বরণ করে তাকে বাড়িতে তোলে।
মেহুলের একটুও ভালো লাগে না এই সবকিছু। কারণ তার তো অন্য ইচ্ছা ছিল। একটা সুন্দর সাজানো সংসার চেয়েছিল মেয়েটা, যা একান্ত তারই হবে। কিন্তু আমরা যা চাই সবসময় তার বিপরীত কিছুই পাই। মেহুলের গৃহপ্রবেশ ঘটার পরেই রায়ান তার কোল দখল করে বসে আছে। না জানি কেন এই ছেলেটার প্রতি রাগ আসছে না মেহুলের। অথচ আসা উচিৎ। কারণ এই রায়ানের জন্যই তাকে এই বিয়েটা করতে হলো।

তবে রায়ানের মায়া মাখা মুখশ্রী দেখে মেহুলের পক্ষে কিছু বলা সহজও নয়।হঠাৎ করে আমিনা আক্তার এসে রায়ানকে মেহুলের কোল থেকে একপ্রকার টেনে নামিয়ে বলে, “তুই এখানে কি করছিস। যা তোর ঘরে যা। বাড়ির নতুন বউ এসেছে তাকে মানুষ দেখবে না?”

মেহুল রায়ানকে পুনরায় কোলে নিয়ে বলে, “ও থাক না আমার কাছে। কোন অসুবিধা নেই।”
আমিনা আক্তার আর কিছু বললেন না। কিন্তু তার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে কতোটা অখুশি। আমিনা আক্তার তার কিছু আত্মীয়ের সাথে কথা বলার জন্য অন্যদিকে যায়। সেই সময় অন্তর মেহুলের সামনে আসে। মেহুলকে আমিনা আক্তারের ব্যবহারের সূত্র ধরে বলে, “এখন বুঝলে তো আমি কেন বলেছিলাম আমার ভাগিনার অনাদরের কথা।”
“আপনার ভাগ্নের যদি এখানে অনাদর হয়ে থাকে তাহলে আপনি তো তাকে নিজের কাছে নিয়ে যেতে পারতেন, আপনার যখন এতই দরদ।”

“সেটা সম্ভব না। কারণ আকাশ, মানে রায়ানের বাবা ওকে আমার কাছে যেতে দেয় না। আর বাবার অনুমতি ছাড়া তার বাচ্চাকে নিয়ে যাওয়ার কোন আইন নেই।”
মেহুল আর কিছু বলল না। বলার প্রয়োজন মনে করল না৷ এখন একবার যখন তার বিয়ে হয়ে গেছে তখন এখানেই তাকে থাকতে হবে। তাই সবকিছু মানিয়েই চলার চেষ্টা করতে হবে।
একটু সময় পরেই মেহুলের স্বামী নামক মানুষটার আগমন ঘটে। আকাশ এসে রায়ানকে নিজের কাছে ডাকে। রায়ান এক ছুটে নিজের বাবার কাছে চলে যায়। যদিও বাবার ভালোবাসা পাওয়া হয়না রায়ানের। অধিকাংশ সময়ই আকাশ কাজের জন্য অফিসেই থাকে। বাড়ি ফেরে অনেক রাত করে।

আকাশ রায়ানকে বলে, “তুমি নিজের রুমে যাও রায়ান। আমরা বড়রা এখানে কিছু জরুরি কথা বলব।”
রায়ান বাধ্য ছেলের মতো চলে যায়। রায়ানের প্রস্থানের পরেই আকাশ মেহুল ও অন্তরের দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকায়।
অন্তর আকাশকে জিজ্ঞাসা করে, “এমনভাবে তাকিয়ে আছ কেন আমাদের দিকে? ”

“নিজের গার্লফ্রেন্ডের সাথে আমার বিয়ে দিলেন কেন? আমার উপর গোয়েন্দাগিরি করার জন্য?”
মেহুল বিষম খায়। সে আবার অন্তরের কোন জন্মের গার্লফ্রেন্ড। মেহুল সাথে সাথে প্রতিবাদ জানিয়ে বলে, “আমি কারো গার্লফ্রেন্ড নই। আমি আপনার বউ।”
আকাশ অন্তরের দিকে গভীর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে চলে যায়।

আবেগময় সম্পর্ক পর্ব ২