আবেগময় সম্পর্ক পর্ব ১৫

আবেগময় সম্পর্ক পর্ব ১৫
লেখিনীতে মৃদু সুপ্রিয়া

আশিকের ফোনে একটি ভিডিও আসে। মূলত পিহুই তাকে ভিডিওটি পাঠিয়েছে। পিহু ও আশিকের অনেক বছরের গোপন রিলেশনশিপ। তাদের এই সম্পর্কের কথা কেউ জানে না। আশিক যখন সন্দেহ করে যে অন্তর চৌধুরী তাদের পরিবারের বিরুদ্ধে কোন ষড়যন্ত্র করছে তখন পিহুকে লাগিয়ে দেয় তার পেছনে। উদ্দ্যেশ্য ছিল যে করেই হোক অন্তরের মুখোশ উন্মোচন করা তথা তার কি পরিকল্পনা সেই সম্পর্কে খোঁজ খবর রাখা।

ভিডিওটি দেখে আঁতকে ওঠে আশিক। কারণ সেখানে অন্তর চৌধুরী নিজের সব কৃতকর্মের দায় স্বীকার করে নিয়েছে। কিন্তু ভিডিওর শেষ দিকে দেখা যাচ্ছে অন্তর চৌধুরী পিহুকে ফলো করছে। এটা দেখেই ভয় পেয়ে যায় আশিক। তৎক্ষনাৎ বেরিয়ে পড়ে পিহুকে বাঁচানোর উদ্দ্যেশ্যে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আশিক ভিডিওতে দেখতে পাওয়া স্থানটিতে চলে আসে। রাস্তার মধ্যে রক্ত দেখতে পেয়ে ভয় পেয়ে যায় আশিক। দেখে মনে হচ্ছে কেউ একটা কিছু টেনে টেনে নিয়ে গেছে রাস্তা দিয়ে। সেই রক্তের দাগ অনুসরণ করেই আশিক চলে আসে একটি কবরস্থানে। সেখানে এসে দেখতে পায় অন্তর চৌধুরী একটা কবরের মাটি খুড়ছে। আশিক ভালো ভাবে তাকিয়ে দেখতে পায় পিহু মাটিতে পড়ে আছে। অর্থ্যাৎ পিহুর দেহ। কিন্তু আশিক বুঝতে পারছিল না পিহু বেঁচে আছে কিনা। এমনকি সে এটাও ঠাহর করতে পারছিল না যে অন্তর চৌধুরীর সামনে যাওয়া উচিৎ হবে কিনা। কিছু সময় ভেবে আশিক সিদ্ধান্ত নেয় পুলিশকে ফোন করবে। কারণ অন্তর চৌধুরীর বিরুদ্ধে সব প্রমাণ আছে তার হাতে।

আশিক আর সময় নষ্ট না করে পুলিশকে ফোন দেয়। পুলিশকে ভিডিওটা পাঠায় সাথে এও বলে এখনই উক্ত কবর স্থানে চলে আসতে। আশিক অন্তর চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলে, “অনেক পাপ করে ফেলেছ তুমি মিস্টার অন্তর চৌধুরী। কিন্তু আর নয়। এবার তোমার সব পাপ বিনাশের পালা। আজ তোমাকে আমি উপযুক্ত প্রমাণ সহ পুলিশের হাতে তুলে দেব।”
পুলিশের আসতে দেরি হচ্ছিল। এর মধ্যে অন্তর চৌধুরী পিহুর দেহটা কবরে রেখে দিচ্ছিল। যার কারণে আশিক ভয় পেয়ে যায়। কারণ পিহুর বেঁচে থাকার যথেষ্ট চান্স রয়েছে। আশিক আর বেশি কিছু না ভেবে দৌড়ে চলে গেল অন্তর চৌধুরীর সামনে। তার পর তাকে একটা ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিয়ে রাগী গলায় বলে, “তুই কি করেছিস আমার পিহুর সাথে? ওর কিছু হয়ে গেলে কিন্তু আমি তোকে ছাড়ব না। এই কথাটা মাথায় রাখিস।”

অন্তর চৌধুরী বাঁকা হেসে বলে, “আর কোন কিছু করাই বাকি রাখিনি। তুই কি ভেবেছিলি? নিজের প্রেমিকা দিয়ে আমার উপর নজর দারি করবি আর আমি কিছু বুঝতেও পারব না। ভুল ভেবে ছিলি তুই। দেখ তোর প্রেমিকার আমি কি হাল করেছি। এতক্ষণে হয়তো মরেও গেছে।”
আশিক পিহুকে আগলে নেয়। পিহুর দেহটা জড়িয়ে কান্নামিশ্রিত গলায় বলে, “তোমার কোন ক্ষতি আমি হতে দেব না পিহু। চোখ খোলো।”

পিহুর পার্লস রেট চেক করে আশিক বুঝতে পারে সে এখনো বেঁচে আছে। তাছাড়া পিহুর নিঃশ্বাসও ততক্ষণ চলছিল। এরমধ্যে পুলিশ সদস্যরা সেখানে উপস্থিত হয়। তারা পুরো কবর স্থান চারিদিক থেকে ঘিরে নেয়। অন্তর চৌধুরী পালানোর আর কোন পথ খুঁজে পায়না।

পুলিশের কাছে অন্তর চৌধুরীর বিপক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ থাকায় পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। আশিক পুলিশ অফিসারদের বলে, “একটা গাড়ির ব্যবস্থা করুন প্লিজ। এই মেয়েটাকে এক্ষুনি হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। নাহলে ওকে বাঁচানো যাবে না।”
পুলিশ তাদের সাথে করে আনা একটা গাড়ির ব্যবস্থা করে দেয়। আশিক পিহুকে নিয়ে যেতে ধরে তখন অন্তর চৌধুরী বলে, “আজকে কাজটা তুই ভালো করলি না আশিক।

কি ভেবেছিস আমি জেলে গেলে তুই খুব ভালো থাকবি? সেটা হবে না। আমি এক না এক দিন জেলের বাইরে আসবোই। আমার সর্বোচ্চ কয়েক বছরের কারাদণ্ড হবে। তারপর ঠিকই ফিরতে পারব। যেদিন আমি ফিরব সেদিন তোকে আর নাহয় তোর সন্তানের জীবনে সর্বনাশ নিয়ে আসব। এটা আমার ওয়াদা।”
পুলিশ অন্তর চৌধুরীকে টানতে টানতে নিয়ে যায়। আশিকও পিহুকে নিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

মেহুলের ফোনে কেউ একজন কল করে। মেহুল ফোনটা রিসিভ করামাত্রই রায়ানের গলা শুনতে পায়। রায়ান বলে, “নতুন মা আমাকে বাঁচাও। এরা সবাই কোন একটা যায়গায় আমাকে বন্দি করে রেখেছে।”
মেহুলের মনে পড়ে যায় কয়েকদিন আগেই সে রায়ানকে নিজের ফোন নম্বর মুখস্থ করিয়ে দিয়েছিল। তাই হয়তো সে কল করতে পেরেছে। মেহুল আর দেরি না করে আকাশকে সবকিছু জানায়। আকাশ তার এক বন্ধু কে কল সেন্টারে কাজ করে তার মাধ্যমে ফোনকলের লোকেশন বের করে নেয়।

লোকেশন পাওয়া মাত্রই রায়ানকে আনার জন্য আকাশ ও মেহুল ছুটে চলে যায়। একটি পুরাতন গুদাম ঘরের সামনে দাঁড়িয়েছে দুজনে। আকাশ ও মেহুল পুলিশকে জানিয়ে রেখেছিল। তাই একটু পর পুলিশ এসে উপস্থিত হয়। পুলিশের সাহায্যে তারা দুজনে গুদাম ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে।
ভেতরে অনেক গুন্ডা ছিল। পুলিশ অনেক লড়াই করে রায়ানকে উদ্ধার করে। রায়ানকে ফিরে পাওয়া মাত্রই তাকে কোলে তুলে নেয় মেহুল। রায়ান মেহুলকে বলে, “আমি জানতাম নতুন মা তুমি আমাকে বাঁচাতে পারবেই।”

দুইজনকে নিয়ে একটি সুন্দর দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। যার সাক্ষী হয় সবাই। কিছু কিছু সম্পর্ক সত্যিই রক্তের সম্পর্কের থেকেও নিবিড় হয়। যেই সম্পর্ক তৈরি হয় আবেগ দিয়ে। যাকে আমরা বলি আবেগময় সম্পর্ক।
রায়ানকে নিয়ে সুষ্ঠুভাবে বাড়িতে ফিরতে পারে তারা দুজনে। পুলিশের জিজ্ঞাসা বাদে গুন্ডারা স্বীকার করেছে অন্তরই তাদের দ্বারা এসব করিয়েছে। মানে রায়ানের অপহরণের পেছনে তারই হাত রয়েছে। মেহুল যখন রায়ানকে বাড়িতে ফিরিয়ে এনে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিচ্ছিল তখনই তার কাছে আসে একটি দুঃসংবাদ।

মেহুলের মা সিতারা বেগম মেহুলকে ফোন করে বলে, “তাড়াতাড়ি *** হাসপাতালে চলে আয় মেহুল। পিহুর অবস্থা খুব খারাপ।”
বলেই কাঁদতে শুরু করেন সিতারা বেগম। মেহুল তার মাকে জিজ্ঞাসা করে, “কি বলছ তুমি? কি হয়েছে পিহুর?”
“তুই এখানে আয়। তাহলেই সব বুঝতে পারবি।”

মেহুলের খুব দুশ্চিন্তা হতে লাগল। দুপুরে রায়ানকে খাইয়ে সে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছিল। আকাশ অফিসে চলে গিয়েছিল। তাই মেহুল একাই হাসপাতালে চলে যায়।
হাসপাতালে গিয়ে সবার আগে তার সাথে দেখা হয় আশিকের। আশিককে দেখে বেশ অবাক হয়ে যায় মেহুল। আশিককে প্রশ্ন করে, “তুমি এখানে কি করছ?”
আশিক মেহুলকে সব ঘটনা খুলে বলে।

সব শুনে মেহুল বুঝতে পারে কি কি হয়েছে। পিহুর জন্য তার চিন্তা হওয়ায় সে ছুটে যায় হাসপাতালের ভেতরে। সেখানে গিয়ে কেবিনের বাইরে সিতারা বেগম ও মেহুলের বাবাকে। মেহুল সিতারা বেগমের কাছে জানতে চায়, “পিহুর অবস্থা এখন কেমন?”

“বেশি ভালো নয় রে। জানি না কি হবে। মেয়েটাকে বাঁচানো যাবে তো?”
যদিও মেহুল নিজে অনেক বেশি দুশ্চিন্তাগ্রস্থ ছিল। তবু সে ভয় না পেয়ে নিজের মা-বাবাকে সাহস জুগিয়ে বলে, “চিন্তা করো না সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।”

আবেগময় সম্পর্ক পর্ব ১৪

আসলে ই কি সব ঠিক হবে? এই চিন্তায় ঘুর ছিল সকলের মাথার মধ্যে। পিহুর অসুস্থতার মধ্যেই ডাক্তার আরো একটি খারাপ সংবাদ দেয় যে পিহুকে রে*প করা হয়েছে । যা শুনে সবাই হতবাক হয়ে যায়।

আবেগময় সম্পর্ক পর্ব ১৬