আবেগময় সম্পর্ক পর্ব ১৪

আবেগময় সম্পর্ক পর্ব ১৪
লেখিনীতে মৃদু সুপ্রিয়া

মেহুল হতাশ হয়ে যায়। এতকিছু করেও সে রায়ানকে রক্ষা করতে পারল না৷ হতাশ হয়ে রাস্তার মধ্যেই বসে কাদতে থাকে সে। এমন সময় আকাশ ও আশিকের আগমন ঘটে সেখানে৷ তারা ট্যাক্সি চালকের সাহায্যে এখানে আসতে পেরেছে।
মেহুলকে রাস্তা থেকে টেনে তোলে আকাশ। মেহুল আবেগ প্রবণ হয়ে আকাশকে জড়িয়ে ধরে। আকাশকে জড়িয়ে ধরা অবস্থাতেই বলে, “আমি পারলাম না রায়ানকে বাঁচাতে। ঐ শয়তান গুলো রায়ানকে নিয়ে গেল।”

আকাশ মেহুলকে ভরসা দেয়। মেহুলকে আশ্বাস দিয়ে বলে, “তুমি একদম চিন্তা করো না। আমরা রায়ানকে ফিরিয়ে আনবোই। এখন বাড়ি চলো।”
আকাশের কথায় মেহুল ভরসা পায়৷ তাই সে চলে আসে বাড়িতে। আকাশ ও মেহুলকে একা বাড়িতে ফিরতে দেখেই অন্তর চৌধুরী তাদের সামনে এসে বলে, “একা এসেছ কেন তোমরা? রায়ান কোথায়? আমার ভাগ্নেকে তার মানে ফিরিয়ে আনতে পারো নি তোমরা। আমি আগেই জানতাম তোমরা আমায় মিথ্যা আশ্বাস দিচ্ছ। ঠিক আছে, এবার আমি অন্য উপায়ে সব কিছু সামনে আনব। এক্ষুনি আমি পুলিশকে ফোন করছি৷ তারপর তারাই যা করার করবে।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

মেহুল বলে, “বিশ্বাস করুন, আমি রায়ানকে প্রায় উদ্ধার করেই আনছিলাম। কিন্তু মাঝপথে কেউ একজন আমার মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে ওকে নিয়ে চলে গেল।”
“এসব নাটক অন্য কোথাও গিয়ে করো। আমার সামনে এসব নাটক করে কোন লাভ নেই। আমি খুব ভালো করেই জানি আকাশ রয়েছে এসবের পেছনে। এখন তো এর প্রমাণও আমার হাতে আছে।”

আশিক বলে, “কি প্রমাণ আছে তোমার হাতে বলো? আমাদেরও দেখার সুযোগ করে দেও সেই প্রমাণ।”
অন্তর চৌধুরী বলে, “সেই প্রমাণ নাহয় আমি পুলিশকেই দেবো। তারপর তারা যা করার করবে।”
অন্তর চৌধুরী পুলিশকে ফোন করে। আশিক আকাশের কাছে এসে বলে, “ভাইয়া আমার মনে হয় এই অন্তর চৌধুরী বেশ ভালোই ষড়যন্ত্র করেছে আমাদের বিরুদ্ধে। তুমি এখানে থাকলে সেটা তোমার নিরাপত্তার জন্য হুমকি হবে। তার থেকে ভালো তুমি কিছু দিন আত্মগোপনে থাকো।এরমধ্যে আমরা ঠিকই রায়ানকে খুঁজে বের করব।”

আশিকের কথায় মোটেও রাজি হয়না আকাশ। সে আপত্তি জানিয়ে বলে, “মোটেও আমি এমন করবো না। আমি কোন অপরাধ করেছি নাকি যে এভাবে পালিয়ে বেড়াব? আমার কোন ভয় নেই৷”
মেহুল তাদের পাশে আসে। তাদের সব কথোপকথন শুনেছে মেহুল। সেও আকাশের সাথে একমত জানিয়ে বলে, “এখন যদি আকাশ পালিয়ে যায় তাহলে পুলিশ ওকেই অপরাধী ভাববে৷ তাই এমন কিছু করার দরকার নেই। আমি জানি, যারা ন্যায়ের পথে,সত্যের পথে থাকে তাদের ক্ষতি করা এত সহজ নয়। আর আকাশ কোন অন্যায় তো করেনি। তাই ঐ অন্তর চৌধুরী যতোই চেষ্টা করুক কোন লাভ হবে না। জয় সব সময় সত্য এরই হয়।”

আশিক আর কিছু বলতে পারল না। অন্তর চৌধুরী কল করে পুলিশকে ডাকল। পুলিশ বাড়িতে আসামাত্রই অন্তর চৌধুরী তাদের উদ্দ্যেশ্য করে বলল, “স্যার, এই লোকটাই আমার ভাগ্নেকে কিডন্যাপ করেছে। ওকে এরেস্ট করে বেধম ধোলাই দিন। দেখবেন সব সত্য ও সামনে বলে দেবে বাধ্য হয়ে।”
মেহুল চিৎকার করে বলে, “আপনারা কোন প্রমাণ ছাড়া এভাবে আমার স্বামীকে গ্রেফতার করতে পারেন না।”
অন্তর চৌধুরী বলে, “আমার কাছে আছে প্রমাণ। আমি যথা সময়ে পুলিশকে দেব সেগুলো।”

অন্তর চৌধুরী একজন বড় বিজনেস ম্যান। তাই তার অনেক প্রভাব রয়েছে। তাছাড়া পুলিশের উপর মহল থেকে আদেশ আছে। তাই পুলিশ সদস্যরা আকাশের হাতে হাতকড়া পরায়। গ্রেফতার করে নেয় তাকে। এরপর তাকে নিয়ে যেতে চায়। আমিনা আক্তার পুলিশের কাছে অনুরোধ করে বলে, “দয়া করে আমার ছেলেটাকে এভাবে নিয়ে যাবেন না। আমার ছেলে কোন অন্যায় করে নি। ঐ রায়ান ওর নিজের ছেলে না হলেও ওকে এতদিন নিজের সন্তানের মতোই মানুষ করেছে। ওর কোন ক্ষতি করতে পারে না আকাশ।”

পুলিশ কারো কোন কথা শুনল না। আকাশকে গ্রেফতার করে নিয়ে গেল। মেহুল শেষবারের মতো আকাশের সামনে এসে বলল, “তুমি কোন চিন্তা করো না। আমি তোমাকে উদ্ধার করে আনবোই। এটা আমার প্রতিজ্ঞা। যা অবশ্যই পূরণ করব।”
আকাশকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়ার পর আশিক মেহুলের সামনে এসে বলে, “এখন আমাদের কি করা উচিৎ ভাবি?”
মেহুল বলে, “আমার তো ঐ অন্তর চৌধুরীর উপরেই সন্দেহ হয়। মনে হচ্ছে সেই করাচ্ছে এসব।”

আশিক বলে, “যদি এমন হয়ে থাকে তাহলে তার সত্য জানতে আমাদের বেশি সময় লাগবে না। কারণ তার উপর গোয়েন্দাগিরি করার জন্য আমি অলরেডি একজনকে পাঠিয়েছি।”
মেহুল বুঝতে পারে না কিছুই। না বুঝতে পেরে আশিককে প্রশ্ন করে, “গোয়েন্দা মানে তুমি কি বলতে চাইছ?”
“সময় হলে তোমরা সবাই সব জানতে পারবে। এখন শুধু এটুকুই জেনে রেখো। আমি একটা ব্যবস্থা করে রেখেছি।”

অন্তর চৌধুরী তার এক উর্ধতন পুলিশ কর্মকর্তা বন্ধুর একাউন্টে অনেক টাকা পাঠিয়ে দেয়। তারপর তাকে ফোন করে বলে, “তোকে অনেক ধন্যবাদ আমাকে এত সাহায্য করার জন্য। এখন শুধু দেখিস যাতে ঐ আকাশ সহজে জেল থেকে বেরোতে না পারে।”
অন্তর চৌধুরীর সেই বন্ধু বলে, “ধন্যবাদ দেওয়ার কিছু নেই। টাকার জন্য আমি সবকিছু করতে পারি। তোর কাজ হয়ে যাবে।”

অন্তর চৌধুরী ফোন কে*টে দিয়ে বলে, “এই বার আমার প্ল্যান একদম সঠিক কাজে লেগেছে। আমাকে তো এতকিছু করতেই হতো না যদি না বাবা তার অর্ধেক সম্পত্তি নিজের মেয়ের স্বামী আর নাতির নামে লিখে দিয়ে না যেত। আমি তো প্রথমে অন্তরাকে নিজের পথের কাঁটা ভেবেছিলাম। তাই তাকে উপড়েও ফেলেছিলাম। তখন ভেবেছিলাম সব হয়তো ঠিক হয়ে যাবে। কারণ আমি ভেবেছিলাম বাবা হয়তো তার অর্ধেক সম্পত্তি অন্তরার নামে লিখে দিয়েছে। কিন্তু পরে জানতে পারলাম অন্তরার নামে না তার স্বামী ও সন্তানের নামে লিখে দিয়েছে। তখন থেকে নানাভাবে চেষ্টা করেছি সম্পত্তি হাতানোর কিন্তু সফল হইনি। অবশেষে ঐ মেহুলের সাথে আকাশের বিয়ে ঠিক করলাম। ভাবলাম ওকে ভয় দেখিয়ে ওর দ্বারাই নিজের স্বার্থ হাসিল করব। কিন্তু সেটা তো হলো না। উলটো ঐ মেহুল আমার বিপক্ষেই চলে গেল। এখন আমি একদম সঠিক স্টেপ নিয়েছি। এবার দেখি তোমরা কি করে আমার বিরুদ্ধে লড়াই করো।”

অন্তর চৌধুরী হা হা করে হাসতে থাকে। একটু দূরে দাঁড়িয়ে কেউ তার সম্পূর্ণ কথা রেকর্ড করে নেয়। তারপর যে কথাগুলো রেকর্ড করেছিল সে বলে, “তোমাকে ফাসানোর যথেষ্ট উপায় আমার হাতে এখন এসে গেছে অন্তর চৌধুরী। তুমি অনেক কিছুই করেছ। এখন দেখ আমি কি করি।”

কথাগুলো বলে সে দূরে সরে আসে। অন্তর চৌধুরী বুঝতে পারে কেউ তার উপর নজর রাখছে। তার কথাগুলো রেকর্ড করতেও সে দেখে নেয়। তাই সে দৌড়ে রেকর্ড কারীকে ফলো করতে থাকে। রেকর্ড কারী কালো হুডি ও মাস্ক পড়ে ছিল। অন্তর চৌধুরী একপর্যায়ে তাকে ধরে ফেলে। এরপর তার মুখের মাস্ক সরিয়ে দেয়। মাস্ক সরিয়ে মেহুলের বোন তথা নিজের গার্লফ্রেন্ড পিহুকে দেখে হতবাক হয়ে যায়। পিহুকে উদ্দ্যেশ্যে করে বলে, “তোমার এত সাহস আমার সাথে থেকে আমার বিরুদ্ধেই ষড়যন্ত্র করো। এখন দেখ আমি তোমার কি অবস্থা করি। তোমার এমন হাল করব যে ভবিষ্যতে কেউ আমার সাথে লাগতে আসার আগে দশবার ভাববে।”

আবেগময় সম্পর্ক পর্ব ১৩

কথাটা বলেই পিহুকে টানতে টানতে একটি নির্জন স্থানে নিয়ে যায় অন্তর। তারপর পিহুকে রে*প করে এরপর একের পর এক ছু*রি চালায় পিহুর বুকে। একপর্যায়ে পিহু নিস্তেজ হয়ে যায়।

আবেগময় সম্পর্ক পর্ব ১৫