আবেগময় সম্পর্ক পর্ব ২২

আবেগময় সম্পর্ক পর্ব ২২
লেখিনীতে মৃদু সুপ্রিয়া

অন্তরা রায়ানের পাশে চলে আসে। রায়ান অবাক নয়নে অন্তরার দিকে তাকিয়ে থাকে। সে বিশ্বাসই করতে পারছে না যে তার মা ফিরে এসেছে। রায়ান অন্তরাকে জড়িয়ে ধরা বলে,“তুমি কি সত্যি আমার আম্মু? তুমি ফিরে এসেছ? আর আমাকে ছেড়ে যাবা না তো?”

অন্তরা রায়ানকে আদর করতে থাকে। আজ কত দিন পর নিজের ছেলেকে ফেরত পেল সে। অন্তরা রায়ানকে বলে, “আমি আর তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবো না। তোমার আম্মু এবার তোমাকে সাথে করে নিয়ে যাবে।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

অন্তরার কথা শুনে মেহুলের বুক কেপে ওঠে। অন্তরা দেখামাত্রই সে প্রচণ্ড অবাক হয়ে গেছে। এমন দিন যে কখনো আসবে সেটা কল্পনাও করে নি মেহুল। এখন তার কি হবে সেই চিন্তাতেই মগ্ন সে। মেহুল একবার আকাশের দিকে তাকায়। আকাশের দৃষ্টি অন্তরার দিকেই স্থির ছিল। প্রচণ্ড চমকিত হয়েছে আকাশ। শুধু আকাশ নয়, আমিনা আক্তার এমনকি বার্থডে পার্টিতে উপস্থিত থাকা বাকি সবাইও অনেক বেশি পরিমাণে অবাক।

অন্তরা সেসব দিক খেয়াল না করে রায়ানকে বলে, “চলো আমরা একসাথে কেক কা*টি।”
রায়ান মাথা নাড়ায়। তারপর তারা দুজনে মিলে কেক কা*টে। এতক্ষণ চুপ থাকলেও আর চুপ থাকে না আকাশ। সে অন্তরার কাছে এসে তার হাত শক্ত করে ধরে বলে, “এত দিন কোথায় ছিলে তুমি? আজ ফিরেই বা এলে কেন?”
অন্তরা স্বাভাবিক ভাবেই উত্তর দেয়,“তোমাকে কোন কিছু বলতে বা জানাতে আমি বাধ্য নই। আমি এখানে তোমার কাছে ফিরেও আসিনি। তুমি নিজের বর্তমান স্ত্রীকে নিয়ে থাকো। আমি শুধু নিজের ছেলেকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চাই।”

আকাশ কিছু বলার আগেই আমিনা আক্তার এগিয়ে আসেন সামনে। তিনি অন্তরাকে চোখ রাঙানি দিয়ে বলেন,“কোন মুখে তুমি এই কথা বলছ? এত দিন নিজের ছেলের কোন খোঁজ রেখেছ তুমি? ছেলেটা বেঁচে আছে নাকি মারা গেছে সেই খবরও তো রাখো নি। আর আজ হঠাৎ ছেলের প্রতি মায়া তোমার উতলে উঠছে।”

অন্তরা বলে, “আমি এত কথা শুনতে এখানে আসিনি। আমি রায়ানের জন্মদাত্রী মা। তাই ওর উপর সম্পূর্ণ অধিকার আমার আছে। আমি ওকে আমার সাথে করে নিয়ে যাবো আর এটাই আমার ফাইনাল ডিশিসন।”
আকাশ রায়ানের হাত শক্ত করে ধরে বলে, “রায়ান তোমার একার সন্তান নয় যে তুমি ওকে এভাবে নিয়ে যেতে পারবে। রায়ান কিন্তু আমারও সন্তান।”

অন্তরা বাঁকা হেসে বলে, “কি বললে তুমি? রায়ান তোমার সন্তান। হাহ্ রায়ান তোমার কেউ নয়। রায়ানের আসল বাবা হলো আমার বয়ফ্রেন্ড আদিত্য। আদিত্য এবং আমি দুজনেই এখন বিদেশে সেটেলড। আদিত্যই আমাকে এখানে পাঠিয়েছে রায়ানকে ফেরত নিয়ে যাওয়ার জন্য। রায়ানের বায়োলজিকাল ফাদার কিন্তু আদিত্যিই
তাই আশা করি তুমি এ বিষয়ে কোন রাইট রাখো না। আর হ্যাঁ, আমাদের ডিভোর্স হওয়া এখনো বাকি আছে। আমি ডিভোর্স পেপারস সাথে করেই নিয়ে এসেছি। তুমি নিজের দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে সুখে থাকো। শুধু আমাকে নিজের সন্তানকে নিয়ে যেতে দাও।”

আকাশ কি বলবে বুঝতে পারছিল না। একসাথে এত ধাক্কা তার সহ্য হচ্ছিল না। এর মাঝেই আমিনা আক্তার বলে ওঠেন, “কেমন মা তুমি? জন্ম দিয়ে নিজের বাচ্চাকে রেখে চলে গেছ। এখন এত দিন ধরে আমার ছেলে তোমার বাচ্চাকে মানুষ করল, আর এখন তুমি এসেছ নিজের বাচ্চার অধিকার নিয়ে! লজ্জা করে না তোমার?”
অন্তরা রায়ানের হাত ধরে বলে, “রায়ান তুমি যাবে তো আমার সাথে?”

রায়ান কোন উত্তর দেওয়ার পূর্বেই মেহুল এসে রায়ানের অপর একটি হাত ধরে। সে অন্তরাকে বলে, “আমি জানি আপনি রায়ানের মা হন। কিন্তু তাই বলে এভাবে হঠাৎ করে আমাদের সবার থেকে রায়ানকে নিয়ে যাওয়ার কোন অধিকার আপনার নেই। রায়ানের নিজস্ব মতামত রয়েছে। এক্ষেত্রে রায়ান যা বলবে সেটাই হবে।”
এরপর মেহুল রায়ানকে জিজ্ঞাসা করে, “রায়ান তুমিই বলো তুমি কি আমাদের সবাইকে ছেড়ে চলে যেতে চাও?”
রায়ান মাথা নাড়িয়ে বলে, “না নতুন মা আমি তোমাদের সবার সাথেই তো থাকতে চাই। কিন্তু আমি আম্মুর সাথেও থাকতে চাই। আমার সবাইকে লাগবে।”

অন্তরা রায়ানকে বলে, “না রায়ান। এখানে কেউ তোমার আপন নয়। আমি তোমার মা। তাই আমি তোমাকে নিজের সাথে করে নিয়ে যাবো। তুমি আমার সাথে চলো। জানো আমাদের অনেক বড় একটা সুন্দর বাড়ি আছে। সেখানে অনেক খেলনাও আছে।”
রায়ান অন্তরার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে, “না আমি যাবো না। আমি এখানে সবার সাথে থাকব। তুমিও এখানে থাকো না আম্মু।”

অন্তরা অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। মেহুল বিজয়ীর হাসি হেসে বলে,“দেখলেন তো রায়ান নিজেই চাইছে না এখান থেকে যেতে। আপনি নিশ্চয়ই একটা বাচ্চার মতের বিরুদ্ধে গিয়ে তাকে নিয়ে যেতে পারবেন না। রায়ানের সাথে এই বাড়ির কারো রক্তের সম্পর্ক নাই থাকতে পারে কিন্তু আবেগের সম্পর্ক রয়েছে। সেই আবেগ, মায়া কা*টিয়ে রায়ানকে নিয়ে যাওয়া আপনার পক্ষে সম্ভব নয়।”

অন্তরা বেশ দাম্ভিকতার সাথে বলে,“একজন মায়ের শক্তিকে তুমি খাটো করে দেখো না। আমি যদি খুব ভুল করে না থাকি তাহলে তুমি আকাশের দ্বিতীয় স্ত্রী মেহুল। তো যাই হোক তুমি একটা কথা শুনে রাখো রায়ান আমার ছেলে। আর আমি ওকে আজ হোক, কাল হোক আমার নিজের কাছে ফিরিয়ে নিয়ে যাবোই।”
কথাটা বলেই অন্তরা বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে ধরে। তখন রায়ান তার শাড়ির আঁচল ধরে তাকে আটকে বলে,“আম্মু তুমি চলে যাচ্ছ কেন? আমাদের সাথে থাকো না।”

অন্তরা ঝুকে বসে রায়ানের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, “এখানে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব নয় রায়ান। কিন্তু আমি একেবারের মতো চলে যাচ্ছি না। আমি আবার আসবো তোমাকে নিতে। তখন কিন্তু তোমাকে আমার সাথে ফিরতেই হবে।”
অন্তরা বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। তার চোখে জল চিকচিক করছিল। যেটা আর কারো চোখে না পড়লেও মেহুলের দৃষ্টি এড়ায় না। মেহুল ভাবতে থাকে, “অন্তরা কাঁদছিলে কেন? আমার মনে হয় বড় কোন রহস্য আছে। আমাকে সব কিছু জানতে হবে।”

আশিক অন্তরার মুখোমুখি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সে অন্তরাকে জিজ্ঞাসা করে, “তুমি কেন মিথ্যা বললে অন্তরা ভাবি? কেন তুমি কাউকে বললে না যে রায়ান তোমার আর আকাশ ভাইয়ারই ছেলে?”

অন্তরা নিজের চোখের জল লেপন করে বলে, “আমি সত্যটা কাউকে বলতে পারবো না আশিক। আমি যদি সত্যটা সবার সামনে আনি তাহলে আমার জন্য মেহুলের জীবনটা নষ্ট হয়ে যাবে। আকাশ আগে আমাকে ভালোবাসতো কিন্তু এখন তো ও মেহুলকে ভালোবাসে। তাই আমি চাই ও মেহুলকে নিয়ে ভালো থাকুক। আমার সম্পর্কে ওর নেগেটিভ ভাবনা যদি বজায় থাকে তাহলেই কেবল এটা সম্ভব। আমি কোন মেয়ের সংসার ভাঙার কারণ হতে চাই না। আমি শুধু নিজের ছেলেকে নিজের কাছে পেতে চাই ব্যস।”

আশিক বলে, “কিন্তু এখানে তোমার তো কোন দোষ নেই অন্তরা ভাবি। তুমিও তো পরিস্থিতির স্বীকার।”
“কার কি দোষ আছে নেই, সেটা বড় কথা না। আমি তো নিজের জীবনের সব কিছু হারিয়েই ফেলেছি। আমি চাইনা মেহুলও ওর সবকিছু হারাক। ও নিজের স্বামীকে নিয়ে ভালো থাকুক। আমি আকাশকে ডিভোর্স দিয়ে ওর জীবন থেকে দূরে সরে আসবো। ক’দিন পর মেহুলের নিজের সন্তান হবে তখন ওরা রায়ানকে ছাড়াই ভালো থাকবে। আমি তাই শুধু রায়ানকে চাই।”

আবেগময় সম্পর্ক পর্ব ২১

“তুমি ভুল ভাবছ অন্তরা ভাবি। মেহুল ভাবি রায়ানকে অনেক বেশি ভালোবাসে। রায়ানকে ছাড়া সে ভালো থাকতে পারবে না। সেক্ষেত্রে তোমাদের দুজনের মাঝে দ্বন্দ্ব হওয়াই স্বাভাবিক।”
অন্তরা এবার বেশ ধমকের সুরে বলে,“নিজের স্বামীর অধিকার তো আমি ছেড়ে দিয়েছি কিন্তু সন্তানের অধিকার ছাড়ব না। রায়ানকে নিজের কাছে আনার জন্য যা যা করা লাগে সবকিছুই আমি করব।”

আবেগময় সম্পর্ক পর্ব ২৩