আবেগময় সম্পর্ক পর্ব ২৭

আবেগময় সম্পর্ক পর্ব ২৭
লেখিনীতে মৃদু সুপ্রিয়া

মেহুল সকালের খাবার রান্না করে সকলকে খেতে ডাকে। গত কাল কোন রকমে মায়ানের জন্মদিনটা পালিত হয়েছে। মায়ানের মন খুব খারাপ। আজ সে অভিমান করে ঘরে শুয়ে আছে। মেহুল আকাশকে খাবার বেড়ে দিচ্ছে। একটু পরেই সে অফিসে চলে যাবে। পিহু, আশিক ওরাও রেডি হয়েছে। আশিকের অফিস থেকে এক দিনের ছুটি নিয়ে এসেছিল তাই এবার ওকে ফিরতে হবে।

খাবার খেতে বসে সবাই চুপচাপ খেয়ে নেয়। এরপর চলে যাওয়ার সময় ঘনিয়ে এলে পিহু মেহুলকে যাওয়ার আগে বলে যায়,“আপি তুই সব কিছু ভালো করে সামলানোর চেষ্টা করিস। আবার দেখিস রায়ানকে কথা ভাবতে নিতে গিয়ে মায়ানের অযত্ন যেন না হয়। ছোট বাচ্চাদের উপর এসবের বাজে প্রভাব পড়তে পারে।”
মেহুল তখন বলে, “আমি এক জন মা হিসেবে নিজের সব সন্তান দের কে সমান চোখে দেখব। তাদের সমান যত্ন নেওয়ার চেষ্টা করব। কারো যাতে অবহেলা না হয় সেটা আমিই দেখব।”
পিহু,আশিক এবং আকাশ সবাই চলে যায়।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

মেহুল আজ এসেছে মায়ানের সাথে তার স্কুলে। এই স্কুলে রায়ানও পড়ে। মেহুল স্কুলে আসলে একজন শিক্ষক তাকে বলে, “আপনি রায়ানের মা তাইনা?”
মেহুল বলে, “জ্বি, কেন কোন সমস্যা হয়েছে রায়ানের?”
শিক্ষক বলেন,“প্রিন্সিপাল ম্যাডাম আপনাকে রুমে ডাকছে। কি যেন জরুরি কথা আছে আপনার সাথে।”
মেহুল প্রিন্সিপালের রুমের দিকে অগ্রসর হয়। রুমের বাইরে এসে বলে,“মে আই কাম ইন?”

প্রিন্সিপাল ম্যাডাম বলেন কাঠখোট্টা গলায় বলেন,“ইয়েস কাম।”
মেহুল ভেতরে প্রবেশ করে। প্রিন্সিপাল বলে, “হ্যাভ আ সিট।”
মেহুল বসে পড়ে। প্রিন্সিপাল ম্যাডাম মেহুলের হাতে একটা রেজাল্ট কার্ড তুলে দিয়ে বলে, “এই হলো আপনার ছেলে রায়ানের রেজাল্ট।

আমি সত্যিই খুব অবাক হয়ে যাচ্ছি। সেই ছেলে আগে প্রত্যেকটা ক্লাসে টপ করত এখন সে তিনটে সাবজেক্টে ফেইল করেছে। আর ইদানীং ওর নামে অনেক কমপ্লেইন্টও পাচ্ছি আমি। ক্লাসে ও একেবারেই অমনোযোগী। আর অনেক দুষ্টুমিও করে। মূলত এই জন্যই আমি আপনাকে ডেকে পাঠিয়েছি। আপনি রায়ানকে একটু শাসন করুন। নাহলে কিন্তু ও দিনে দিনে আরো বখে যাবে।”

প্রিন্সিপাল ম্যাডামের কথা শুনে মেহুল বলে, “ঠিক আছে, আমি দেখছি এই ব্যাপারে।”
এরপর মেহুল উঠে বাইরে চলে আসে। রায়ানের উপর খুব রাগ হয় মেহুলের। তার রেজাল্ট এবার অনেক খারাপ হয়েছে। তাই মেহুল সিদ্ধান্ত নেয় এবার রায়ানকে শাসন করবে।

দুপুরে স্কুল থেকে ফিরে রায়ান ফোন নিয়ে গেমস খেলতে বসে পড়ে। এমন সময় মেহুল এসে রায়ানের হাত থেকে ফোন কেড়ে নেয়। রায়ান বিরক্ত হয়ে বলে,“আমার ফোন নিলে কেন? দাও আমার ফোন।”
মেহুল রাগ দেখিয়ে বলে,“চুপ আর একটা কথাও বলবে না তুমি। সারা দিন খালি ফোন আর ফোন। এই ফোনই যত নষ্টের মূল। তোমার রেজাল্ট কি হয়েছে দেখেছ? তুমি না ডাক্তার হতে চাও। এই রেজাল্ট দিয়ে ডাক্তা হবে? গণিতে ৫, ইংরেজিতে ৮ এসব কি নাম্বার?”

রায়ান বলে, “সেসব নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না। আমার ফোন টা দাও তো।”
মেহুল এপর্যায়ে নিজেকে সামলাতে না পেরে রায়ানের ফোনটা আ★ছাড় দিয়ে ভেংগে দেয়। চিৎকার করে বলে,“কোন ফোন চলবে না। আজ থেকে তুমি শুধু পড়বে। বুঝতে পেরেছ? শাসন না করে করে মাথায় উঠে গেছ।”
রায়ান নিজের ফোন ভেঙ্গে যেতে দেখে কাঁদতে শুরু করে দেয়। বলে, “এটা কি করলে তুমি? আমার ফোন..তুমি খারাপ অনেক বেশি খারাপ। আই জাস্ট হেইট ইউ।”

মেহুল নিজের ক্রোধ সম্বরণ করতে না পেরে রায়ানকে মা★রতে উদ্যত হয় এবং বলে, “হ্যাঁ খুব খারাপ আমি৷ তোমার ভালোর জন্য যদি আমাকে খারাপ হতে হয় তাহলে তাই হবো।”
এমন সময় আকাশ এসে মেহুলের হাত ধরে ফেলে। মেহুল আকাশকে দেখে চমকে যায়। নিজের হয়ে কিছু বলার আগেই আকাশ মেহুলকে থা★প্পড় দেয়। মেহুল অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে আকাশের দিকে।
আকাশ মেহুলকে হুংকার দিয়ে বলে,“কোন সাহসে তুমি আমার ছেলের গায়ে হাত তুলতে যাও? এত সাহস তোমাকে কে দিয়েছে!”

মেহুল বলে ওঠে, “তুমি আমায় মা*রলে? এই প্রথম তুমি আমার গায়ে হাত তুললে। আর কি বললে তোমার ছেলে…রায়ান কি আমার কেউ নয়?”
আকাশ রাগী গলায় বলে, “না কেউ নয়৷ যদি তুমি রায়ানকে নিজের ছেলে ভাবতে তাহলে ওর গায়ে হাত তুলরে না। আসলে সবাই ঠিক বলে সৎ মা কখনো আপন হয়না। সৎ সৎই হয়। তুমিই সেটা প্রমাণ করে দিলে। তোমাকে বিয়ে করাই আমার ভুল হয়েছে। সৎ মা কখনো আসল মায়ের জায়গা নিতে পারে না সেটা আমার বোঝা উচিৎ ছিল।”

মেহুল নিজের চোখের জল মুছে বলে,“তুমি ভুলে যেও না আমি আসার আগে রায়ানের অবস্থা কত করুণ ছিল। তোমরা কেউ রায়ানকে ভালোবাসতে না। কারণ তোমরা ভাবতে রায়ান অন্তরা এবং ওর বয়ফ্রেন্ডের ছেলে। আমিই সেই ছিলাম যে এসে রায়ানকে নিজের সন্তানের মতো ভালোবাসা দিয়েছি।

আর কত কি করেছি ওর জন্য । যদি ওকে সৎ ভাবতাম তাহলে এত কিছু করতাম না। হাহ, এসব বলে আর লাভ নেই। কারণ ঐ যে কথায় আছে না, তুমি হাজারটা ভালো কাজ করো কেউ সেটা মনে রাখবে না কিন্তু একটা ভুল করো ব্যাস দেখবে সবাই তোমার আগের সব অবদান ভুলে যাবে৷ আজ আমি রাগের মাথায় রায়ানকে মা*রতে গেলাম জন্যই খারাপ হয়ে গেলাম তাইতো? তুমি একবারো জানতে চেয়েছ আমি রায়ানকে কেন মা*রতে চেয়েছি?”

মেহুল রায়ানের রেজাল্ট কার্ড আকাশের হাতে দিয়ে বলে, “এই দেখ এটা রায়ানের রেজাল্ট। আগে ও পড়ালেখায় কত ভালো ছিল আর এখন.. আজ যদি আমি রায়ানের আসল মা হতাম তাহলে তুমি নিশ্চয়ই আমাকে কিছু বলতে না। রায়ানকে শাসন করলেও কিছু হতো না৷ কিন্তু সৎ মা জন্যই ভালোর জন্য শাসন করলেও সেটা খারাপই মনে হয়। ঠিক আছে, আমি আর রায়ানকে নিয়ে কিছু বলব না। তোমার ছেলেকে তুমিই সামলাও।”

এক নিঃশ্বাসে কথা গুলো বলে মেহুল কাঁদতে কাঁদতে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। আকাশ আফসোস করতে থাকে মেহুলের গায়ে হাত তোলার জন্য এবং তার পেছনে ছুটে যায়।
রায়ান বলতে থাকে,“আমি জানি কেউ আমাকে ভালো বাসে না। আমার কোন দাম নেই কারো কাছে।”
মেহুল নিজের ঘরে এসে দরজা বন্ধ করে কান্না করতে থাকে৷ মায়ান মেহুলকে কান্না করতে দেখে বলে, “তুমি দেদোনা(কেঁদোনা) আম্মু। আমি আর দুশতুমি করব না।”

মেহুল মায়ানকে আকড়ে ধরে কাঁদতে থাকে। আজ মেহুলের মনে হচ্ছে সে এত দিন যাদের আপন ভেবেছে তারা কেউই তাকে আপন ভাবে নি। শুধু নিজের স্বার্থে ব্যবহার করেছে। যাদের সাথে তার আবেগময় সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল তাদের কাছে সে শুধু ছিল প্রয়োজনে প্রিয়জন!

আবেগময় সম্পর্ক পর্ব ২৬

(গল্পে নতুন মোড় আসতে চলেছে৷ খুব শীঘ্রই গল্পের কাহিনি ২০ বছর এগিয়ে যাবে মানে ২০ বছরের লিপ আসতে চলেছে গল্পে। পরবর্তী প্রজন্মের গল্প আরো সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করব। এবার তো তেমন রোম্যান্টিক কিছু ছিল না কিন্তু সামনে অনেক বেশি রোম্যান্টিক হতে চলেছে। )

আবেগময় সম্পর্ক পর্ব ২৮