আবেগময় সম্পর্ক পর্ব ৩

আবেগময় সম্পর্ক পর্ব ৩
লেখিনীতে মৃদু সুপ্রিয়া

মেহুল আকাশের যত্নশীল ব্যবহারের প্রেমে পড়ে যেতে থাকে। আকাশ মেহুলের হাতে একটা মলমও লাগিয়ে দেয় যাতে ব্যাথা কমে যায়। এরপর আকাশ নিজেই গ্যাসের চুলা থেকে খিচুড়ি নামায় এবং মেহুলকে বলে, “তুমি যাও আমি সবকিছু করছি।”

মেহুলের সেই মুহুর্তে নিজেকে সবথেকে ভাগ্যবতী মনে হয়। এমন যত্নশীল স্বামী পাওয়া সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার। মেহুল আকাশের কথামতো ডাইনিং টেবিলের কাছে আসে। আমিনা আক্তার মেহুলকে দেখে বলে, “খিচুড়ি রান্না হয়েছে?”
“জি, রান্না কমপ্লিট।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আমিনা আক্তার তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ছেলের সাথে মেহুলের পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলে, “ও হলো আমার ছোট ছেলে আশিক, মানে তোমার দেবর। ওর পরীক্ষা ছিল তোমার বিয়েতে আসতে পারেনি।”
আশিক মেহুলের সাথে কুশল বিনিময় করে। পরবর্তীতে নিজের মায়ের কানে কানে বলে, “আমার নতুন ভাবি তো ভালোই কিন্তু অন্তরা ভাবির মতো ওতো বেশি সুন্দরী নয়।”

কথাটা কানে কানে বললেও মেহুল শুনতে পায়। কারণ আশিক কথাটা বেশ জোরেই বলেছে। মেহুলের মন অজান্তেই খারাপ হয়ে যায়। হিংসা জন্ম নেয় অন্তরা নামের মেয়েটির উপর।
আমিনা আক্তার বোধহয় ব্যাপারটা ঠিকভাবে নেন না। আশিককে কড়া গলায় বলেন, “ওতো রূপ থেকে কি হবে? একজন তো নিজের রূপের আ*গুনে আমার সোনার সংসারটা পু*ড়িয়ে দিয়ে চলে গেছে। এবার আর তেমন কিছু না হলেই হয়।”
মেহুল চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিল। আশিক সবকিছু স্বাভাবিক করার জন্য বলে, “ভাবি খিচুড়ি কোথায় নিয়ে এসো। আজ তোমার হাতের খিচুড়ি খেয়ে দেখব কেমন লাগে। অন্তরা ভাবির হাতের রান্না খুব টেস্টি ছিল। ভাবির বৌভাতের খিচুড়ির স্বাদ এখনো আমার জিভে লেগে আছে।”

মেহুলের এসব কথা ভালো লাগছিল না আর। তাই সে রান্নাঘরের উদ্দ্যেশ্যে পা বাড়ায়। আমিনা আক্তার আশিককে ধমক দিয়ে বলেন, “কথায় কথায় এত অন্তরা অন্তরা করিস কেন? ঐ মেয়ের তুলনা টেনে তুই কি বোঝাতে চাইছিস?”
আশিক আমিনা আক্তারকে বলে, “আমি শুধু এটাই বোঝাতে চাইছি আম্মু যে অন্তরা ভাবিই ভাইয়ার জন্য ঠিক ছিল। রূপে,গুণে তার সমকক্ষ কাউকে খুঁ জে পাওয়া কঠিন। তুমি কেন তাকে মেনে নিতে পারো নি আম্মু?”
আমিনা আক্তার শক্ত গলায় বলেন, “আমার কাছে কৈফিয়ত চাইবি না। কারণ তুই নিজেও সব জানিস।”

“আচ্ছা অন্তরা ভাবি যদি কখনো ফিরে আসে তখন কি হবে বুঝতে পেরেছ? কি করবে তুমি? নতুন ভাবিরও বা কি হবে?”
“ঐ মেয়েকে আর আমি ফিরতে দেবো না। অন্তত আমার বাড়িতে, আমার ছেলের জীবনে ও আর ঠাঁই পাবে না।”
আশিক আর কিছু বলতে যাবে তখনই মেহুল ও আকাশের আগমন ঘটে। আকাশ মেহুলকে খিচুড়ি নিয়ে আসতে সাহায্য করে। আশিক সেটা দেখে বলে, “বাহ দ্বিতীয় বউয়ের তো অনেক বেশি কেয়ার করছ। এমন কেয়ার যদি আগে করতে তাহলে….”

আমিনা আক্তার কড়া দৃষ্টিতে তাকাতেই আশিক চুপ হয়ে যায়। সবাই খেতে বসে। মেহুল সবাইকে নিজের হাতে খিচুড়ি বেড়ে দেয়। সবাই খেতে শুরু করে। আমিনা আক্তার তো খিচুড়ির প্রশংসায় একেবারে পঞ্চমুখ। তিনি বলেন, “রান্নাটা অনেক বেশি ভালো হয়েছে।”
আকাশও প্রশংসা করে রান্নার। তবে আশিক বলে, “হুম সুন্দর হয়েছে। তবে অন্তরা ভাবির হাতের রান্না অনেক বেশি সুন্দর ছিল।”

মেহুলের বারবার এই অন্তরা নামটা শুনতে ভালো লাগছিল না। কিন্তু সে কিছু বলতেও পারছে না। আকাশই বরঞ্চ বলে, “অতীতকে টেনে আমার বর্তমানটা নষ্ট করিস না ভাই। অন্তরা আমার অতীত, মেহুল আমার বর্তমান, ভবিষ্যত সব। আমাকে মেহুলের সাথেই থাকতে হবে।”

এতক্ষণে হাসি ফুটে ওঠে মেহুলের মুখে। ইতিমধ্যে রায়ানও চলে আসে ডাইনিং টেবিলে। আশিকের পাশের চেয়ারে বসে মেহুলকে বলে, “নতুন মা তুমি আমাকে খিচুড়ি দাও৷ আমি খিচুড়ি খেতে অনেক বেশি ভালোবাসি।”
আশিক রায়ানের গাল টেনে দিয়ে বলে, “ওল্লে আমার সোনাটা। কেমন আছ?”

“আমার নতুন মা এসে গেছে এখন আমি অনেক ভালো আছি। নতুন মা আমাকে অনেক ভালোবাসে।”
মেহুল খিচুড়ি দেয় রায়ানের প্লেটে। রায়ান আবদার করে বলে, “এত গরম খিচুড়ি তো আমি খেতে পারবো না। তুমি আমাকে খাইয়ে দেবে নতুন মা?”
মেহুল জবাব দেওয়ার আগে আমিনা আক্তার বলেন, “তোর হাত নেই? নিজে খেতে পারিস না। দিন দিন ছোট হচ্ছিস নাকি?”

রায়ান মুখটা নামিয়ে নেয়। আশিক তার মাকে বলে, “এভাবে বলছ কেন আম্মু? ও তো ছোট। আচ্ছা আমি তোমাকে খাইয়ে দিচ্ছি।”
মেহুল খিচুড়ির প্লেট হাতে নিয়ে বলে, “আমি খাইয়ে দিতে পারব। রায়ান তুমি হা করো তো।”
রায়ান খুশি হয়ে যায়। মেহুল নিজের হাতে রায়ানকে খাইয়ে দিতে থাকে। আশিক এসব দেখে বলে, “দেখে মনেই হচ্ছে না সৎ মা। কিন্তু এমন কি সবসময়েই থাকবে? নতুন ভাবির যখন নিজের বাচ্চা হবে তখন নিশ্চয়ই আর সতীনের ছেলের জন্য এত দরদ থাকবে না।”

আকাশ বলে, “সেটা তোর ধারণা। কিছু কিছু সম্পর্ককে রক্ত দিয়ে বিচার করা যায়না। কিছু সম্পর্ক হয় আত্মার সম্পর্ক, আবেগময় সম্পর্ক, যা সবকিছুর ঊর্ধ্বে থাকে।”
খাওয়া দাওয়ার পাট চুকিয়ে সবাই বিশ্রাম নিতে উঠে পড়ে। আকাশ মেহুল ও রায়ান রুমে আকাশের এসেছে। রায়ান মেহুলকে বলে, “তুমি আমাকে পড়াশোনা করাবে নতুন মা?”

মেহুল অনেক বেশি টায়ার্ড হয়ে গেছিল। তবুও রায়ানের এমন অনুরোধ ফেলতে পারে না। সে রায়ানকে পড়ার টেবিলে নিয়ে গিয়ে বসায়। ছোট বাচ্চাদের পড়ানো অনেক বেশি চাপের ব্যাপার। কোন বিষয় তাদের অনেক ভালো করে না বুঝালে তা বুঝতে ই পারে না। তাই মেহুলকে বেশ সময় ব্যয় করতে হয়। আকাশ মেহুলের পাশে এসে বলে, “আপনি অনেক টায়ার্ড। যান রেস্ট নিন। আমি রায়ানকে পড়াবো।”

রায়ানও তালে তাল মিলিয়ে বলে, “হ্যাঁ নতুন মা তুমি আরাম করো। আমি আব্বুর কাছে নাহয় পড়ে নেব।”
মেহুল বিছানায় শুয়ে যায়। দুপুরে ঘুমানোর অভ্যাস যদিও তার নেই তবে আজ অনেক ব্যস্ত থাকায় ঘুমের কোলে ঢোলে পড়ে সে নিমেষেই।
মেহুলের ঘুম ভাঙে বিকেল বেলা। তখন সে দেখে রায়ান তার পাশেই ঘুমিয়ে আসে৷ মেহুল আকাশের খোঁজ করে। ঘরের কোথাও না পেয়ে বাইরে আসে। রান্নাঘরে আমিনা আক্তারকে দেখতে পায়। আমিনা আক্তার মেহুলকে দেখে বলেন, “তুমি উঠে পড়েছ। ভালো, তোমার মায়ের কাছে শুনেছি তুমি তেমন রান্না বান্না করতে পারো না। কোন ব্যাপার না, আমার কাছে শিখে নিও।”

“উনি কোথায়?”
“কার কথা বলছ?”
“আপনার ছেলে।”
“ও আকাশের কথা বলছ। আকাশ তো অফিসে গেছে। যাইহোক একটা কথা, কাল তোমাদের তো তোমার বাপের বাড়িতে যেতে হবে। তুমি সবকিছু রেডি করে রেখ।”

আবেগময় সম্পর্ক পর্ব ২

মেহুল মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বোধক ইশারা করে। এর পর সে রওনা দেয় নিজের রুমে। রায়ানের ঘুম ভেঙে গেছে। মেহুলকে দেখে সে জিজ্ঞেস করে, “তুমি কোথায় চলে গিয়েছিলে নতুন মা? আমি তো ঘুম থেকে উঠে তোমাকে খুঁজছিলাম৷ ভয়ে ছিলাম যে আম্মুর মতো তুমিও আমায় রেখে একেবারের মতো চলে যাওনি তো।”
মেহুলের মায়া হয় রায়ানের জন্য। তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে, “আমি কখনো তোমাকে ছেড়ে যাবো না। এটা আমার প্রমিস।”

আবেগময় সম্পর্ক পর্ব ৪