আবেগময় সম্পর্ক পর্ব ৬

আবেগময় সম্পর্ক পর্ব ৬
লেখিনীতে মৃদু সুপ্রিয়া

আকাশ আজ প্রথম শ্বশুর বাড়িতে এসে বেশ ভালোই জামাই আদর পাচ্ছে। মেহুলের মা সিতারা বেগম আকাশের সামনে হরেক রকমের পদ সাজিয়ে দিচ্ছেন। আকাশও বেশ আয়েশ করেই খাবার গুলো খাচ্ছে। কিছু একটা মনে পড়তেই আকাশ সিতারা বেগমকে জিজ্ঞাসা করে, “আচ্ছা মেহুলের বাবা কোথায়? এসেছি থেকে ওনার সাথে তো দেখা হয়নি।”
“উনি তো অফিসে আছেন। আজ নাকি অনেক ব্যস্ত। রাতের দিকে ফিরবেন। তখন তোমাদের সাথে দেখা হবে। তুমি পেট ভরে খাও বাবা। একদম লজ্জা করবে না।”

আকাশের সাথে রায়ানও খেতে বসেছে। রায়ানকে মেহুল খাইয়ে দিচ্ছিল৷ আকাশ অমিনেষ দৃষ্টিতে সেদিকে তাকিয়ে ছিল৷ মেহুল আর রায়ানকে দেখে কে বলবে তাদের মধ্যে কোন রক্তের সম্পর্ক নেই? বরং তাদের দেখে মনে হয় রায়ান মেহুলের নিজের সন্তান। আকাশ মনে মনে বলে, “এটাও কি সম্ভব? কেউ নিজের সতীনের ছেলেকেও মাত্র এই ক’দিনে এত আপন করে নিতে পারে? আমি তো জানতাম পারে না। মেহুল কি সত্যিই রায়ানকে মন থেকে ভালোবাসে? নাকি এর পেছনে অন্য কোন কিছু রয়েছে।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

অপরদিকে মেহুল ভাবছিল, “রায়ান আমার নিজের ছেলে না হলেও কেন জানি ওকে আমার অনেক বেশি আপন আপন লাগে। প্রথম যেদিন ছেলেটা আমায় নতুন মা বলে ডেকেছিল সেদিন থেকেই ওর প্রতি আবেগে জড়িয়ে গেছি আমি। ছেলেটার শত বায়না, জেদ সত্বেও কেন জানি আমি বিরক্ত হইনা। ওর সাথে যেন এক আবেগের সম্পর্কে জড়িয়ে গেছি আমি।”

আকাশ রাতের অন্ধকারে মেহুলদের বাড়ির ছাদে চলে এসেছে। আগে আকাশের অন্ধকার পছন্দ ছিল না। কিন্তু এখন কেন জানি এই অন্ধকারে থাকতেই তার ভালো লাগে। আকাশ নিজেই নিজেকে বলে, “যার জীবনটাই অন্ধকার হয়ে গেছে তার আবার নতুন করে অন্ধকারে ভয় কিসের। এই অন্ধকারেই যে আমাকে মানিয়ে নিতে হবে।”
“আমি যদি তোমার জীবন আলোকিত করার দায়িত্ব নেই।”
মেহুলের গলা কানে আসতেই আকাশ পিছনে ফিরে তাকায়। মেহুলকে দেখে বলে, “তুমি এখানে কি করছ? রায়ান ঠিক আছে তো?”

“হঠাৎ করেই ঘুমটা ভেঙে গেল। তারপর আলো জ্বালিয়ে বিছানায় তোমাকে দেখতে না পেয়ে ভাবলাম তুমি ছাদে আছ। কারণ তোমার তো রাতের আকাশ দেখার অভ্যাস আছে। আমাদের বাড়িতে তো বেলকনি নেই, তাই ভাবলাম ছাদে থাকতে পারো।”
আকাশ বাঁকা হেসে বলে, “তুমি খুব ইন্টেলিজেন্ট৷ আমার বরাবরই ইন্টেলিজেন্ট মানুষদের ভয় লাগে জানো৷ কারণ আমার মাথায় তেমন বুদ্ধি নেই। যখন যে খুশি আমায় সহজেই ধোকা দিতে পারে।”

“আমায় বিশ্বাস করে দেখতে পারো আমি ধোকা দিবো না।”
আকাশ অকপটে স্বীকার করে নেয়, “একটু আগে অব্দি তোমায় বিশ্বাস করতাম না, কিন্তু আজ তোমার বাবার সাথে কথা বলে নিশ্চিত হয়েছি যে তোমায় বিশ্বাস করা যায়।”
মেহুল কিছু না বুঝতে পেরে প্রশ্ন করে, “মানে? আমায় কেন বিশ্বাস করতে তুমি?”

“আমি ভেবেছিলাম তুমি অন্তরের সাথে সংযুক্ত। অন্তরের পাঠানো কোন স্পাই। যে অন্তরার অন্তর্ধান রহস্যের সমাধান করতে এসেছ। আমাকে যে অন্তর তার বোনের নিখোঁজের জন্য দায়ী ভাবে সেটা আমি জানি। সে তো এটাও ভাবে যে আমি অন্তরাকে মে*রে গুম করে দিয়েছি।”
আকাশের কথায় মেহুল বেশ অবাক হয়। সাথে সাথেই বলে, “তুমি বিশ্বাস করো, আমি এমন কোন উদ্দ্যেশ্য নিয়ে কাজ করছি না।”

আকাশ মৃদু হেসে বলে, “জানি আমি। আজ তোমার বাবার সাথে কথা বলে আমি সব জানতে পেরেছি যে তুমি কেন এবং কিরকম পরিস্থিতিতে বিয়েটা করতে বাধ্য হয়েছ। তবে আমার মনে হয় অন্তর যখন তোমাকে নিজে পছন্দ করে আমার সাথে বিয়ে দিয়েছে, তখন এর পেছনে তার নিশ্চয়ই কোন উদ্দ্যেশ্য আছে। হয়তো অদূর ভবিষ্যতে সে তোমাকে আমার বিরুদ্ধে কাজে লাগাতে পারে।”

“তুমি আমাকে বিশ্বাস করতে পারো। আমি তোমার বিরুদ্ধে গিয়ে কোন কিছু করব না।”
“করলাম বিশ্বাস। তোমার কাছে শুধু এটুকুই অনুরোধ, আমার বিশ্বাসের মর্যাদাটা রেখো। এই ক’দিনেই তোমার সাথে একটা আবেগে জড়িয়ে গেছি। তুমি আমার আবেগ নিয়ে খেলো না। এটা আমার অনুরোধ। কারণ এর আগেও একজন আমার আবেগ নিয়ে খুব বিশ্রীভাবে খেলে, আমার জীবনটা নরকে পরিণত করে চলে গেছে। আরো একবার যদি একই পরিস্থিতি হয়, তো আমি জানি না নিজেকে কিভাবে সামলাবো। হয়তো পারব না সামলাতে।”

মেহুল আকাশের দিকে ভরসার হাত বাড়িয়ে দেয়। দুজনে একসাথে নিচে নেমে আসে। আকাশ মেহুলকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে রাখে। আজ প্রথমবারের মতো শারীরিক ভাবে মিলিত হয় তারা।

মেহুল, আকাশ ও রায়ান আজ আবার মেহুলের বাবার বাড়ি থেকে ফিরে আসল। ফিরে এসেই আকাশ নিত্যদিনের মতো অফিসে চলে যায়। রায়ানও চলে যায় তার স্কুলে। একা মেহুলই বাড়িতে থেকে যায়।
ঘরে একা বসে থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে যাওয়ায় মেহুল নিচে চলে আসে। আমিনা আক্তার রান্নাঘরে রান্না করছিল। মেহুল রান্নাঘরে প্রবেশ করে আমিনা আক্তারকে জিজ্ঞাসা করে, “আমি কি আপনাকে কোন সাহায্য করতে পারি?”
আমিনা আক্তার মৃদু হেসে জবাব দেন, “তুমি তো রান্নাবান্না পারো না, তুমি একটা কাজ করো পারলে সবজি গুলো কে*টে আমায় একটু সাহায্য করো। আর একটু দেখে দেখে শিখে নেও রান্নাগুলো।”

মেহুল তাই করতে থাকে। আমিনা আক্তার আজ অনেক গুলো রান্না করছিল। যা দেখে মেহুলের একটু খটকা লাগে। তাই মেহুল জিজ্ঞেস করে, “আজ কি কেউ আসবে? মানে অনেক কিছু রান্না হচ্ছে তো।”
“হ্যা আজ আমার বড় ননদের আসার কথা। উনি বিদেশে থাকেন তাই তোমাদের বিয়েতে আসতে পারেন নি। আজ তোমায় দেখতে আসবেন। তুমি তৈরি হয়ে থেকো।”

“আচ্ছা।”
রান্নাবান্না হয়ে গেলে মেহুল নিজের রুমে চলে যায়। তারপর গোসল করে নেয়। গোসল শেষে ছাদে কাপড় রাখতে গিয়ে দেখা হয়ে যায় আশিকের সাথে। আশিক ফোনে কাউকে বলছিল, “সবকিছু প্ল্যান অনুযায়ী হচ্ছে তো? মনে রাখবে সবকিছু যেন আমাদের প্ল্যান অনুযায়ী হয়। কোন গণ্ডগোল যাতে না হয়। উনি কিন্তু খুব চালাক কিছু বুঝে গেলে আমাদের অসুবিধা হবে।”

কথাগুলো বলে ফোন রেখে দেয় আশিক। মেহুলকে সামনে দেখে কিছুটা হচকচিয়ে যায়। তবে নিজেকে সামলে নিয়ে বলে, “নতুন ভাবি তুমি। আমি ভাবলাম কে না কে। আমি নিচে যাচ্ছি। সাবধানে কাপড় শুকোতে দিও। আমাদের ছাদ কিন্তু অনেক পিচ্ছিল। পরে গেলে হাত-পা ভেঙে যেতে পারে।”
আশিক চলে যাওয়ার পর মেহুল আশিকের যাওয়ার পানে তাকিয়েই কিছু ভাবতে থাকে। কাপত দড়িতে টাঙ্গাতে টাঙ্গাতে ভাবতে থাকে,“কার সাথে কথা বলছিল আশিক? কথাগুলো কেমন রহস্যময়। না জানি আর কতো রহস্য লুকিয়ে আছে এই বাড়িতে।”

কাপড় শুকাতে দেওয়া শেষ হলে মেহুল ফিরে আসতে গিয়ে অসাবধানতা বশত পা পিছলে পড়ে যায়। পায়ে বেশ খানিকটা আঘাত পায়। হাটতেও কষ্ট হচ্ছিল তার৷ অনেক কষ্টে খোঁড়াতে খোঁড়াতে নিচে নেমে আসে। নিজের রুমে গিয়ে ব্যাথার মলম খুঁজতে থাকে। ব্যাথার মলম খুঁজতে গিয়ে ড্রয়ারে একটি এলবাম খুঁজে পায়। যেখানে আকাশ, রায়ান সাথে একটি মেয়ের ছবি ছিল। ছবি দেখেই বোঝা যাচ্ছে মেয়েটা অপরূপ সুন্দরী। মেহুল ছবিটার উপর হাত বুলিয়ে বলে, “এই তবে রায়ানের মা অন্তরা। সত্যিই অনেক রূপবতী সে। আমি তার রূপের কাছে কিছুই না। এইজন্যই মনে হয় আশিক সেদিন বলেছিল এই কথা।”

আবেগময় সম্পর্ক পর্ব ৫

মেহুলের হিংসা হয় মনে। তাই সে ছবিটা পুনরায় ড্রয়ারে রেখে নিজের পায়ে ব্যাথার মলম মাখতে থাকে। কিন্তু তার মনের মধ্যে যে ব্যাথা চলছে তার উপশম সে কোথায় পাবে?

আবেগময় সম্পর্ক পর্ব ৭