আমার একটাই যে তুই পর্ব ১৮ || সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি

আমার একটাই যে তুই পর্ব ১৮
সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি

তখনি ড্রাইভার বললো,,
–“মামা আমার গাড়ি কি জানি হইছে স্টার্ট লইতেসে না।”
ড্রাইভারের কথায় সবার মুখে চিন্তার ছাপ। তখন জায়েদ ভাই বলল,,
–” কি কও মামা! এখন যামু কেম্নে আমরা? এত দূর?”
–” মামা চিন্তা কইরেন না গাড়ি ঠিক করে দিতাসি আমি! আপনাগো নিয়া যাইবো আর লইয়া আইবো। কি কমু কোন বিপদতো লইয়া, কইয়া আহে না।”

তারপর ড্রাইভার কংলাক পাহাড় যাওয়া একটি চান্দের গাড়িতে তুলে দিল। বিপত্ত ঘটল তখন যখন দুজনে জায়গা হলো না। আর সে দুজন ইউসুফ ভাই আর আমি। তাই একটি সি এন জি ভাড়া করা হলো।আর উঠে রওনা দিলাম কংলাক পাহাড়।
রাস্তার মাঝে আপ হিল, ডাউন হিল হওয়াতে পড়ে যাওয়ার ভয়ে ইউসুফ ভাইয়াকে ঝাপটে ধরে বসে ছিলাম আমি। মাঝে মাঝে এ মোর ও মোর নিতেই কতবার যে তার গায়ের উপর পড়েছি হিসেব নেই। তিনি শুধু মিটমিটে হেসেই গেছেন।

আঁকা বাঁকা রাস্তা ধরে উপরে উঠে গেল আমাদের গাড়ি! কংলাক পাহাড়ের সামনে এসে থেমে গেল।অনেক মানুষ উপরে উঠে যাচ্ছে পাহরের উপর। কংলাক পাহাড় হচ্ছে সাজেক ভ্রমণে আসা পর্যটকদের কাছে প্রধান আকর্ষণ।
এটা হচ্ছে সব থেকে উঁচু পাহাড়।এখান থেকে সূর্য উঠার দৃশ্য সুন্দর করে ফুঁটে উঠে। আমারা ধীরে উপরে উঠে গেলাম। সেখানে অধিবাসী বাসা বাড়ি। এখানের হেট মেনের ঘর। এই হেট মেন কথায় সব হয় তাদের।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আমরা পাহারের একদম শেষে চল এলাম। আশে পাশে মেঘ মালা দেখে মনে হচ্ছে কোনো সমুদ্র। সেখানে বসে আমরা কিছুক্ষন রেস্ট করলাম। ইউসুফ ভাইয়ার রোদে গাল দুটো লাল টমেটো লাগচ্ছে।তিনি বার বার ঘাম ঝাড়চ্ছেন।
আমি বসে দেখছি তাকে তখনি হুট করে লিয়া এসে আমার পাশে নানা কথা জুড়ে দিলো। আজ লিয়ার হয়েছেটা কি? কাল রাতে মারার জন্য উঠে পড়ে লেগেচ্ছে আর আজকে সকাল থেকে এমন ভাবে কথা বলছে যেন আমার মায়ের পেটের বোন! হুহ! না জানি তার মনে কিচলেছে? আল্লাহ মালুম।

দেখতে দেখতে ৩ টা বেঁজে গলে এবার যাওয়ার পালা।এ দিকে হুট করে পরিষ্কার আকাশ মুহূর্তে কালো হয়েছে এসেছে। তাই সবাই নেমে যাচ্ছে। কারণ বৃষ্টি হলে গাড়ি নিয়ে নিচে যাওয়া রিস্কি। রাস্তা বৃষ্টির জন্য অনেক খারাপ হয়ে যায়।
আমি নামছি ধীরে পাশেই বড় খাদ। এক বার পড়লে বাঁচা মুশকিল। ইউসুফ ভাই আমার সামনে ঠিক। এদিকে পাহাড় কেটে সিঁড়ি করা হয়েছে উঠা নামার সুবিধার্থে।

আমি আশে পাশে তাকাতে তাকাতে হাটতে লাগলাম তখনি কেউ পিছন থেকে আমাকে খুব জোড়ে ধাক্কা দেয়। পাহাড়ের ঠিক কিনারায় থাকতে পড়ে যেতে নেই। সাথে সাথে পিছন থেকে ইউসুফ ভাইয়ার জ্যাকেট টেনে ধরি। ইউসুফ ভাইয়ার পায়ে তখন স্লিপ কাটতে সাথে সাথে পাহাড় থেকে নিচে পড়ে যাই দুজন। এদিকে এমন ঘটনায় হতভম্ব সবাই।
চারিদিকে হৈ চৈ শুরু হয়ে গেল। ইউসুফ তখন একটি আগাছা গাছের ডালে ধরে ফেলে আরেক হাতে আমার হাত। আমি ভয়ে কান্না করে চলছি। রীতিমত হাত পা কাঁপচ্ছে আমার শ্বাস আঁটকে আসচ্ছে। ইউসুফ ভাই আমাকে টেনে তার কাছে এনে অভয় দিতে লাগে,,

–” বাবুইপাখি ভয় পাস না আছি তো আমি তোর সাথে। প্লীজ কাঁদিস না। কিচ্ছু হবে না।?”
কিন্তু আমি কিছুতেই কান্না থামাতে পাড়চ্ছি না। চোখ নিচে গেলেই শরীর হাত পা রিম ঝিম করছে।বার বার চোখ দুটো সিটে বন্ধ করে ফেলছি।কারণ নিচে সমতল দেখাই যাচ্ছে না। না কোনো ঘড় বাড়ি। এখান থেকে পড়লে নির্ঘাত মৃত্যু।
উপর থেকে চিল্লা চিল্লির আওয়াজ ভেসে আসচ্ছে। জায়েদ ভাই, ফুয়াদ ভাই, রশির ফেলার কথা বলছে। পাশ থেকে তিথি, নুশরা, বুশরার কান্নার আওয়াজ ভেসে আসচ্ছে। সাথে ভেসে আসচ্ছে অপরিচিত মানুষের কন্ঠ।
আমার এদিকে শরীর অসাড় হয়ে আসচ্ছে। মাথা ভাড় ভাড় লাগচ্ছে। নিজের সব টুকু ভাড় ইউসুফ ভাইয়ার উপর ছেড়ে দিতেই চেঁচিয়ে উঠেন তিনি,,

–” বাবুইপাখি না দেখ আমার দিকে, প্লীজ তাকা বাবুইপাখি আমার দিকে তাকা। এমন করিস চোখ বন্ধ করিস না। প্লীজ বাবুইপাখি। ”
তারপর উপরের দিক তাকিয়ে চিৎকার করে বললো,,
–“তাড়াতাড়ি কর তোরা! রশি ফেলতে এতো লেট কেন হচ্ছে??(আমার দিক তাকিয়ে) বাবুইপাখি আর একটু ওয়েট কর! আর আমার দিকে তাকা। একদম চোখ বন্ধ করবি না..!”

আমি ঢুলুঢুলু চোখে তার দিকে তাকালাম। এই মাতাল করা চোখ দুটোতে আজ পানি টলটল করছে। সুন্দর মুখ খানায় ভয়ের ছাপ।কেন জানি তাকে দেখতে ভাল লাগচ্ছে। হয়তে এটা শেষ মুহূর্ত বলে? আমি তাকিয়ে রইলাম তার বিড়াল চোখে।তখনি একটা ঝাঁকি অনুভব হলো। উপরে চেয়ে দেখি আগাছার ডালটা ভাঙ্গেতে শুরু করেছে। যে কোনো মুহূর্তে উপড়ে যাবে।
এখানে একজন থাকলে আরো কিছুক্ষন ঝুলতে পারবে। সেই একজন ইউসুফ ভাই। দুজন থাকলে দুজনেরেই মরতে হবে! তার থেকে বরং আমি স্বরে যাই। বেঁচে যাবে ইউসুফ ভাই।আমি বেঁচে থেকেই বা কি হবে? না পাবো ভালবাসা, না ভালবাসার মানুষ।বরং আমি মরে গেলে কেউ কাঁদবে না। ইউসুফ ভাইয়ার কিছু হলো তার পরিবার পরিজন অভিশাপ করবে আমায়। তাই নিজে চলে যাওয়া ভাল। আগাছা আরেকটু হেলতেই ইউসুফ ভাইয়ার হাত ছুটাতে ছুটাতে বলি,,

আমার একটাই যে তুই পর্ব ১৭

–” ভাই ছাড়ুন আমাকে! ছাড়ুন প্লীজ?”
–“কি যাতা বলছিস! এতো নড়চ্ছিস কেন? নড়িস না!নড়া বন্ধ। একদম বন্ধ। এভাবে নড়লে তোর কি মনে হয় ছেড়ে দিব তোকে? কখনো না! এ প্রান থাকতে না।”
–” ভাইয়া বুঝতে চেষ্টা করুন। এখানে দুজন থাকলে দুজনকে মরতে হবে! তার থেকে বরং আমি চলে যাই!”
–” ফালতু কথা কেন বলছিস তুই? বাঁচলে এক সাথে বাচঁবো মরলে এক সাথে।”
–“আপনি বুঝতে চেষ্টা করুন…!
আমাকে বলতে না দিয়ে,,

–প্লীজ বাবুইপাখি! আমাকে এমন শাস্তি দিস না যাতে করে সারা জীবন বেঁচে থেকেও মরতে হয়..!”
ভেজা কন্ঠ শুনালো ইউসুফ ভাইয়ার। ধক করে উঠলো আমার মন। এখন কি আবেগী হলে চলবে! এদিকে আগাছা আরো ঝুলতেই আমি নিজেকে ছাড়িয়ে নিলাম। আর মৃদু হেসে ইউসুফ ভাইয়ার গালে হাত রেখে কান্না জড়িত কন্ঠে বলে উঠি,,
–” আপনাকে অনেক কিছু বলার ছিল! কিন্তু হলো শুধু একটি কথা বলবো! ভাল থাকবেন ভাইয়া।”
বলে হাত ছেড়ে দিলাম সাথে সাথে ইউসুফ ভাই চিৎকার করে বলে উঠে “বাবুইপাখি “। আমি উপরে দিক তাকিয়ে ইউসুফ ভাইয়ার মুখ খান্না ভাসচ্ছে সে কান্না করছে।আজ হয়তো এখানেই শেষ হয়ে যাবে আমার কাহিনী। কিন্তু তখনি…!

আমার একটাই যে তুই পর্ব ১৯