আমার একটাই যে তুই পর্ব ১৯ || সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি

আমার একটাই যে তুই পর্ব ১৯
সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি

আজ হয়তো এখানেই শেষ হয়ে যাবে আমার কাহিনী। কিন্তু তখনি ইউসুফ ভাইয়া ঝাপ দেয়। আর আমার হাত চেপে ধরে পাহড়ে আরেকটা আগাছা ডালে ধরে ফেলে। আমি তার এহেন কাজে ভয় পেয়ে চোখ বুজে নেই। সঙ্গে সঙ্গে তিনি টেনে তার বারবার করে আমাকে দাড় করায় শক্ত করে কোমর চেপে ধরে। আমি পিট পিট করে চোখ খুলতেই। তিনি দাঁত বের করে হাসি দিলেন। তার হাসিতে গা জ্বলছে আমার। উনার কিছু হলে কি হতো তখন। তাই রেগে বললাম,,

–“এমন করলেন কেন আপনি? যদি কিছু হয়ে যেতে আপনার! কে বলেছে আপনাকে ঝাপ দিতে? হুম! সুখে থাকলে ভুতে কিলায়! তাই না? ”
তিনি আমার কথার পাত্তা না দিয়ে দাঁত কেলিয়ে গেয়ে উঠলেন,,
–“তুমি যেখানে আমি সেখানে সে কি জানো না
একি বাধনে বাধা দুজনে ছেড়ে যাব না”
তার এমন কাজে হতভম্ব ।কেউ এমন একটা বিচ্ছিরি সময় গান ধরতে পারে। রাগে কটমট করে বলতে লাগি,,

–” ফাজলামো করেন! মানে, এমন সিচুয়েশনে আপনার মজা কমচ্ছে না কেমনে ভাই?এমন একটা বিচ্ছিরি সময় তো আপনি গান ধরেছেন? ”
ইউসুফ ভাই ভ্রু উঁচু করে বললেন,,
–” তো কি কাঁদবো নাকি? আজিব তো? মরেই যখন যাবো এভাবে ঝুলে থাকাটা এনজয় করেই মরি! (বাঁকা হেসে) কি বলো??”
আমি তার কথায় চোখ বড় বড় করে চেয়ে আছি! কি যাতা বলছে এ লোক! মাথা ঠিক আছে তো??
–” এই আপনি পড়ার সময় মাথা চট পাননিতো? ”
ইউসুফ ভাই ভ্রু কুচকে বলল,,
–“কেন?” ব্যথা পাবো কেন?”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

–“যদি না পেয়ে থাকেন তাহলে এমন পাগলের প্রলাপ করছেন কেন?”
–” আশ্চর্য নরমাল থাকার ট্রাই করছি তুই আমাকে পাগল বানিয়ে দিচ্চিস! আমাকে পাগল বললে তুই পাগলী! হুহ!”
–” এই আপনি আপনি আমাকে পাগলী কেন বলছেন? আমি কি করেছি?”
–” একটু আগে কি করেছিস তুই ভুলে গেছিস? হাত কেন ছেড়ে দিছিলি?ওরকম ফালতু কাজ কে করতে বলেছিল তোকে? আমার উপর বিশ্বাস ছিল না? ” গম্ভীর শুনালো তার কন্ঠ..!
আমি কিছু বলবো তার আগেই উপর থেকে তিথি বলল,,

–” ভাই তোমরা এই সিচুয়েশনে ঝাগড়া করছো? কিভাবে! হাউ? আমরা টেনশন করছি আর তোমরা..!”
তিথির কথার মাঝে ইউসুফ ভাই চেঁচিয়ে বললেন,,
–“হে দেখতে পাচ্ছি কতো টেনশন তোদের এখনো দড়ি যোগাড় করতে পাড়লি না আবার টেনশন চুপ থাক…! (পরে আমার দিকে ফিরে বললেন) হে! পড়ে আমরা কোথায় যেন ছিলাম! ও হে! লাফ কেন দিলি বল!”
আমি আমতা আমতা করে বলি,,

–” ততত..তো ককক..কি করবো! দদদ…দুজন একসাথে মরবো নাকি!”
ইউসুফ ভাই তখন রেগে ধমকে বললেন,,
–” আর আমি দিচ্ছি তোকে মরতে বেদ্দপ! একবার এখান থেকে উদ্ধার হইতে হাড্ডিগুড্ডি ভাঙ্গবো আমি।”
তার ধমকে ভয় চুপসে গেলাম আমি। কিছু বললাম না আর। কিন্তু সে ভাষণ দিয়ে যাচ্ছে। এমন সিচুয়েশনে কেউ যে বকা দিতে পারে এতো উনাকে না দেখলে বুঝতেই পাড়তাম না আমি।
আমাদের কথার মাঝে হাসান ভাই দড়ি ফেললেন আর বললেন,,

–“ভাই এটা শক্ত করে ধরে উঠে এসো আমরা টানচ্ছি।”
–“ওকে!”
দঁড়ি ধরে উপরে উঠছি আমরা মনে মনে দোয়া পরছি। আর ইউসুফ ভাইয়াকে ঝাপঁটে ধরে রাখি। ইউসুফ ভাই শক্ত করে ধরে আছেন আমাকে।আমরা প্রায় উঠে পড়েছি! তখনি ঘটলো অঘটন। দড়ি মাঝ দিয়ে ছিড়ে যেতেই ইউসুফ ভাইয়া আর আমি আবার গোল গোল গড়াগড়ি খেতে খেতে নিচে পড়ে যাই এবার। পিছন থেকে ভেসে আসে চিৎকার তাদের। পড়তে পড়তে এতো নিচে চলে আসি যে উপরের কারো কন্ঠ আর শোনা যাচ্ছে না। না দেখা যাচ্ছে কিছু। মাথা ঘুড়চ্ছে। এভাবে গোল গোল ঘুড়াতে। এক পর্যায় চোখের সামনে কালো হয়ে আসে সব! তারপর আর কিছু মনে নেই আমার।

চোখ খুলতেই নিজেকে একটি অজানা পরিবেশে পাই।মাথা চেপে উঠে বসতেই চোখে পড়ে আশেপাশে বড় বড় সবুজ গাছ-পালা। এতটা ঘন যে মনে হচ্ছে সন্ধ্যা হয়ে আসচ্ছে। চারিদিকের পরিবাশটা দেখে গা ছমছম করতে লাগে আমার। ইউসুফ ভাইয়ার কথা মনে পড়তেই উঠতে নিতে গিয়ে পড়ে যেতে নিলাম। মাথা এখনো ঘোড়াচ্ছে। আশে পাশে চোখে বুলাতেই কিছু দূর দেখতে পেলাম ইউসুফ ভাইকে। সেন্সলেস উনি। তাড়াতাড়ি তার কাছে আসতেই চমকে গেলাম আমি তার মাথা ফেঁটে রক্ত বের হচ্ছে! কি করবো বুঝতে পারচ্ছি না! রক্তের বন্যা বয়ে যাচ্ছে যেন!আমি কি করবো ভেবে পাচ্ছি না।কান্না আসচ্ছে খুব। ভয়ে ভয়ে নাকের কাছে আঙ্গুল দিলাম শ্বাস নিচ্ছেন তিনি।তারপর তাকে আমার ওড়না দিয়ে মাথা বেঁধে দেই। পরে তাকে ঝাকাতে ঝাকেতে ডাকতে লাগলাম আমি।

–ইউসুফ ভাই! ভাইয়া উঠুন না! ভাইয়া! ভাইয়া প্লীজ উঠুন।
তিনি উঠলেন না।মনে পড়লো ব্যাগে পানির পট আছে। উপর থেকে পড়ার সময় ব্যাগ আমার সাথেই ছিল। আমি বোতল থেকে পানি নিয়ে তার চোখ মুখে দিতেই তার জ্ঞান ফিরে আসলো। সাথে ফুঁটে উঠলো আমার ঠোঁটে হাসি।
ইউসুফ ভাইয়া আর আমি হাটচ্ছি পাশা পাশি। ভাই এখন মোটামোটি সুস্থ! তিনি বার বার ফোনে নেটওয়ার্ক এসেছে কিনা চেক করছেন।কিন্তু না আসচ্ছে না।কি করবো ভাবচ্ছি তখন ইউসুফ ভাই বললেন,,

–” তাড়াতাড়ি যেতে হবে এখান থেকে সন্ধ্যা হয়ে আসচ্ছে! আশেপাশে কোনো ঘর বাড়ি আছে নাকি দেখতে হবে চল।”
বলে তিনি আমাকে ধরে হাটা ধরলেন। আমার খুব মজা লাগচ্ছে অচেনা পরিবেশে আমি আর ইউসুফ ভাই আর কেউ নেই! কতটা রোমাঞ্চকর বিষয়। খুশি খুশি লাগচ্ছে খুব! কিন্তু পাশের লোকটার মুখ ভাড় করে আছে। দেখতে মোটেও ভাল লাগচ্ছে না আমার। তাই দুষ্টুমি করতে গান ধরলাম,,
–” এখন তো সময় ভালোবাসার
এ দুটি হৃদয় কাছে আসার
তুমি যে একা আমিও যে একা
লাগে যে ভালো ও প্রিয়….ও প্রিয়”

আমার একটাই যে তুই পর্ব ১৮

ইউসুফ তখন ফোন উঁচু করে নেটওয়ার্ক খুঁজতে ব্যস্ত। গান শুনে রেগে মেগে দিলেন ধমক,,
–” কি সমস্যা? এমন সময় তোর রোমান্টিক গান গাইতে মন চাইছে! না? এদিকে টেনশনে মাথা ফেঁটে যাচ্ছে আমার বেদ্দপ!”
তার কথায় আমারো রাগ উঠলো। পাহাড়ে ঝুলে থাকা অবস্থায় তিনি যখন গান ধরলেন? তখন কি? আর এখন আমি এত সুন্দর পরিবেশটাকে আরো সুন্দর করতে কত না সুন্দর গান গাইলাম আর এই খাটাশ লোক আমাকে ঝেড়ে দিল,,তা তো মানবো না..!
আমি কোমরে হাত দিয়ে ঝগড়ার শুরে বললাম,,
–“ওহো! আমি গাইছি তাই দোষ? আপনি কি করেছিলে ঝুলে থাকা অবস্থায়? মনে আছো তো? নাকি?”
ইউসুফ ভাই তখন ভ্রু কুচকে বললেন,,
–“তো?”

তার “তো” কথায় রাগে গা রি রি করে উঠলো। আমি তেড়ে গিয়ে বললাম,,
–” তো আবার কি হে? নিজের বেলা ১৬ আনা আর আমার বেলায় ১ আনাও না? এ কেমন কথা? এটা হতে দেবো না আমি! হুহ!”
আমার কথা শেষ হতে না হতেই তিনি দু কদম এগিয়ে আসলেন আমার দিক। কিন্তু আমি নিজ জায়গা ছাড়লাম না। কেন ছাড়বো? তাকে কে কি ভয় পাই নাকি আমি..!হুহ..! মোটেও না।

ইউসুফ ভাই আমার মুখামুখি দাঁড়িয়ে হাত দুটো আড়াআড়ি ভাজ করে বললেন,,
–” আমি বড়! যা ইচ্ছে করতে পাড়ি! আর একটি কথা বলবি তো এখানেই রেখে চলে যাবো!”
বলে হাঁটা ধরলেন সামনে। আমি রাগে দুঃখে মরে মরে যাই! এই ছিল তোর মনে! পাহড়ে ঝুলা অবস্থায় কত কেয়ার দেখালো। আমার জন্য লাফ দিলো আর এখন! সব সব আদিখ্যেতা! হুহ..!

আমার একটাই যে তুই পর্ব ২০