আমার একটাই যে তুই পর্ব ২৪ || সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি

আমার একটাই যে তুই পর্ব ২৪
সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি

দিনক্ষণ বদলাচ্ছি। সাথে বদলাচ্ছে ইউসুফের স্বভাব।আর বাড়চ্ছে পাগলামি। এই তো সেদিন আমার লাষ্ট পরীক্ষা ছিল। ক্লান্ত শ্রান্ত হয়ে পরীক্ষার হল থেকে বের হতেই আমি বিস্মিত হলাম। সামনে অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিটি কে দেখে। উনার কাছে যেতেই উনি হুট করে আমার হাতটি ধরে বলতে লাগেন,,
–” চল বাবুইপাখি! এখানে আর ভাল লাগচ্ছে না!”
–” কই যাবো? নেতা সাহেব?”
অবাক হয়ে বলাম আমি।ইউসুফ বললেন,,

–“অনেক দূরে! এতটা দূরে যে এই শহরের কলরব শুন্তে না হয়!না পারবে ছুঁতে শহরের ধূলো।”
তার কথায় হেসে দিলাম। বললাম,,
–” নেতাগিরি ছেড়ে কবি হয়ে যাচ্ছেন?”
ইউসুফ হাসলো!বললো,,
–“তোর জন্য সব হতে পাড়ি আমি!চল এবার?”
–” কিন্তু কই!”
জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালাম তার দিকে। তিনি আমার মাথায় টোকা দিয়ে বললেন,,
–“কক্সবাজার ”
–“সত্যি!”
আহ্লাদে আপ্লুত হয়ে তার এক হাতে জড়িয়ে ধরে বললাম।
তিনি হেসে ফেললেন। আর বললেন,,

–“চল”
–“কিন্তু আমিতো কলেজ ড্রেসে! কাপড় ও আনিনি!”
মন খারাপ হয়ে গেল আমার! তা দেখে ইউসুফ ভাই আবার হেসে ফেললেন। এত হাসচ্ছে কেন এই লোকটা। উফ! কত মাতাল করা সেই হাসি! ইউসুফ এবার আমার নাক টিপে বললেন,,
–“ব্যাকআপ প্ল্যান আছে! চল।”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আমি ইউসুফের আঙ্গুলের হাতে ভাজে হাত রেখে হেঁটে গাড়িতে এসে বসলাম। গাড়ি চলছে। ইউসুফ ড্রাইভ করছে তার পাশের সিটে আমি বসে! সে আমার এক হাত তার বুকে গুঁজে অন্য হাত ড্রাইভ করছেন! মাঝে মাঝে চুমু এঁকে দিচ্ছেন হাতে। এতে লজ্জায় লাল হচ্ছি আমি! আবার একা পাবো কটা দিন ইউসুফকে। বিগতো ৬ টা মাস তার সাথে ভাল ভাবে কথাটি হয়ে উঠে নি! আর আজকে আবার যাচ্ছি সেই ব্যক্তিটির সাথে বহু দূর! ভাবতেই শরীরের চামড়ার ভিতর দিয়ে শিরশির করে উঠচ্ছে। ইউসুফ হাসচ্ছেন প্রাণ খোলা হাসি!কিন্তু বুঝলাম না হঠাৎ ঘুড়তে যাওয়ার প্লেন কেন? জিগ্যেস করলাম,,

–” আচ্ছা! হঠাৎ ঘুড়তে যাওয়ার প্লেন কেন? এমনিতে তো আপনার চান্দ মুখ খানা দর্শন করতে পারি না? আজ এই অধমের উপর এত দয়া কেন?”
ইউসুফ হেসে ফেললো।ক্লান্ত স্বরে বলল,,
–” হাপিয়ে উঠে ছিলামরে বাবুইপাখি! দম বন্ধ হয়ে আসচ্ছিল সব কিছুতে! তার মাঝে তোকেও টাইম দিতে পারাচ্ছি না। সামনে ইলেকশন তখন আরো ব্যস্ত থাকবো! তুই দৌঁড়াবি এডমিশন কোচিং এ। তাই ভাবলাম কদিন বরং গা ঢাকা দি তোরে নিয়ে তো নিয়ে টু মেরে আসি!”

ইউসুফের কথায় ভালোও লাগলো আবার খারাপোও! লোকটি সত্যি ক্লান্ত তার উপর আবার কষ্ট করে ড্রাইভ করে এত দূর যাচ্ছে! যদি কিছু হয়! আর উনার গার্ডরা কই? ড্রাইভার তো নিতেই পারতেন? তাকে বরলাম,,
–” আপনি ড্রাইভার নিলেন না কেন? আর গার্ডরাই কই? ইলেকশনের আগে আগে আপনাকে একা বের হওয়া ঠিক হয়নি! ”
গম্ভীর কন্ঠে বললাম! তার দিকে তাকাতেই তার হাসি মুখ দেখতে পেলাম। হেসে হেসে বললেন,,
–” এখনই বউয়ের দায়িত্ব পালন করা শুরু করেছিস?”
আমি রাগান্বিত চোখে পাতাতেই তিনি আবার বললেন,,

–” আরে বাবুপাখি রাগিস কেন? শুন জানি রিস্কি। তাও নিতে চাই আমি! কিছুটা শান্তির জন্য! তোর সাথে সময় কাটানোর জন্য। কিছুটা স্মৃতি তৈরি করবো বলে। আর তুই বল! যখন তোর সাথে রোমান্স করব, তখন গার্ড আর ড্রাইভার থাকলে কেমনে করবো বল?”
ইউসুফের কথায় লজ্জা পেলাম। ঠিক হয়ে বসে অন্য দিকে তাকিয়ে হাসতে লাগলাম। ইউসুফও হাসচ্ছেন। মিটমিট করে। বললেন,,

–” বাবুইপাখি! তোকে লজ্জা পেতে দেখলে খুব আদর করতে ইচ্ছে করে! করবো নাকি?”
আমার এবার লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে! লোকটি এমন কেন? লজ্জা দেয়ার জন্য একটি মুহূর্ত বাদ দেয় না। তিনি হেসে আবার বললেন,,
–” বলছিস না যে?”
আমি মুখ বাকিয়ে বললাম,,
–” আই হ্যাট ইউ!”
ইউসুফ হো হো করে হেসে ফেললো বলল,,
–” লাভ ইউ টু!”

রাত —-০৮ঃ৩০ বাজে উত্তরার একটি শপিং মল ঢুকলাম আমরা শপিং করতে! ইউসুফ ভাইয়া ামাকে ৪/৫ গাউন আর কিছু টপস, প্লাজো আর জিন্স সাথে মেচিং জুঁতো কিনে দিলেন। এখান থেকে কলেজ ড্রেস পালটে একটি টপস আর প্লাজো পড়ে নিলাম।।তারপর চলে গেলাম জেন্টস জোনে ইউসুফ নিজের জন্য কিছু কিনলেন। কারন তিনিও কোনো কাপড় আনে নি!।সাদা পাঞ্জাবি পড়ে এসেছেন। তিনিও পাল্টে নিলেন।তার চলে গেলাম খাবার খেতে খুব খুদা পেয়েছিল আমার! গপাগপ খাচ্ছি! ইউসুফ ভাই তখন হেসে বললেন,,

আমার একটাই যে তুই পর্ব ২৩

–“আস্তে খাও বাবুইপাখি! গলায় আটকে যাবে!কোনো ট্রেন ছুটচ্ছে না আমাদের!”
আমি খাবার চিবুতে চিবুতে বললাম,,
–” যদি আপনাকে কেউ চিনে ফেলে তখন?”
ইউসুফ হেসে ফেললো।বলল,,
–“বাহ্ এত চিন্তা আমার হবু বউয়ের!”
আমি খাবার আবার মুখে পুড়ে বললাম,,
–” খুব!”
–“আচ্ছা আস্তে খা কেউ চিনবে না আমাকে!”
তখনি পিছন মেয়ে কন্ঠে বলল,,
–“আরে ইউসুফ না! ময়মনসিংহের নেতা যে?”
আরেক জন বলল,,

–“হে তাইতো! আল্লাহ আমাদের ক্রাশ। চল চল পিক তুলে আসি!”
বলে এগিয়ে এলো তারা। উসখুস করতে লাগলো ইউসুফ। আর আমি মুখে এক গাদা খাবার নিয়ে গাল ফুলিয়ে আছি! কি সুন্দর ছেছড়া মাইয়া গুলাইন লজ্জা নাই! আমি রাঙ্গানিত চোখে তাদের দিকে তাকিয়ে খাবার চিবিয়ে যাচ্ছি! আর আমার নেতা সাহেব? বাহ্?

মৌমাছি তো মধু দেখলে বন বন করবেই! তাই বলে কি ফুল কাঁটা ফুটাতে পারে না?না কি চায় না? দেখ দেখ কি সুন্দর সেলফি তুলছে বাবাগো বাবা? চিপকু মাইয়া গুলা। মন টা চাইতেসে এক লাথি মেরে মাইয়া দুটাকে ড্রেনের পানিতে ফেলে দেই।আর এই লোক বাহ্ কথা বলব না এই লোকের সাথে হুহ। একদম না। নো নেভার..! হাত আড়াআড়ি করে অন্য দিকে তাকিয়ে রইলাম। একদম তাকাবো না এদের দিক। একদম না।

আমার একটাই যে তুই পর্ব ২৫