আমার একটাই যে তুই পর্ব ২৫ || সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি

আমার একটাই যে তুই পর্ব ২৫
সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি

গাড়ি আবার চলতে শুরু করেছে। আমি গাল ফুলিয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আচ্ছি। ইউসুফ ভ্রুকুটি কুঁচকে আমার দিকে বার বার তাকাচ্ছে! হয়তো বুঝতে ট্রাই করছেন আমি গাল কেন ফুলিয়ে আছি!
–” কি হয়েছে বাবুইপাখি তুমি গালফুলিয়ে কেন?”
আমি আবাক হলাম লাইক সিরিয়াসলি উনি বুঝতে পারছেন না আমি কি জন্য গাল ফুলিয়েছি? নাকি বুঝেও না বুঝার ধন্দা??আমি কিছু বললাম না। শুধু তার দিকে তাকিয়ে ভেংচি কাটলাম। তিনি এতে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। বলল,,

–“এটা কি ছিল!”
আমি তখনো চুপ! মুখে তালা দিয়ে বসে আছি! এই লোকের সাথে কথা বলবই না আর। ইউসুফ ভাই এবার চুপ রইলেন কিছুক্ষণ তারপর বললেন,,
–” রাগ করেছিস আমার উপর? কি করেছি বলবি তো নাকি? শুধু শুধু বাচ্চাদের মতো গাল ফুলিয়ে বসে থাকিস?”
তার কথায় মেজাজ বিগড়ে গেল আমার। রাগী চোখে তাকিয়ে বললাম,,
–” হে আমি তো শুধু শুধু গাল ফুলাই। আর আপনি? আপনিত এক নং লুচু!”
আমার কথা শুনে ভাইয়া যেন আকাশ থেকে পড়ল। চোখ গরম করে আমার দিক তাকিয়ে বলল,,

–” তুই আমার ক্যারেক্টার নিয়ে কথা বলছিস? সাহসতো কম না তোর? আমি কি করেছি লুচুঘিরি? বল? যখন তখন যেখানে সেখানে কিস করেছি? না টাচ করেছি? নাকি তোর উপর হামলে পড়েছি? কোনটা??”
কি ভয়নাক কথা বার্তা। তার কথা আঙ্গুনে ঘী ডালার মতো কাজ করলো।রাগে ফুসতে লাগলাম আমি! বুঝতে পাড়চ্ছি লোকটাও রেগে আঙ্গুন হয়ে গেছে!আমাকে কিছু বলতে না দেখে ধমকে উঠলেন,,
–” বেদ্দপ কথা বলিস না কেন? এখন? বল!”
আমি তখন কটমট করে বললাম,,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

–” আপনি তো কিছু করতেই পারেন না? ধোয়া তুলসী পাতা তখন রেস্টুরেন্টে ছেলে দেখে হামলে তো আমি পড়েছিলাম। হুহ।?”
তিনি কিছুক্ষণ থম মেরে থেকে হো হো করে হেসে দিল। তার হাসিতে রাগ আরো বাড়তে লাগলো! আমি নিজের রাগ সামলাতে না পেরে ভ্যা করে কাঁদতে কাঁদতে বললাম,,
–” আপনি খুব খারাপ নেতা সাহেব। খুব খারাপ! তখন রেস্টুরেন্টে আমাকে পাত্তাই দিলেন না। এখন আমি রেগে আছি। ভিষন রকম রেগে আছি আর আপনি! হাসচ্ছেন?
বলে হাউ মাউ করে কেঁদে দিলাম।ইউসুফ ভাইতো রীতিমত হতভম্ব। হয়তটে ভাবতেই পারেনি আমি এতটা কষ্ট পাবো বা কেঁদে দিব। তিনি আমাকে কাছে টেনে নিয়ে গেলেন। আর বললেন,,

–“সরি বাবুইপাখি! আমি তো যাষ্ট দুষ্টুমি করছিলাম। এতে যে তুমি এতো রেগে যাবে ভাবিনী। সরি না! আর হবে না। কান্না থামাও এ যে কানে ধরছি দেখ!”
কথা গুলো নরম স্বরে বললেন তিনি!
আমি উনার বুকে মাথা রেখে ফুঁপিয়ে যাচ্ছি। ভিজে যাচ্ছে তার বুক! আমার চোখে পানিতে!কাঁপা স্বরে বললাম,,

–“জ..জানেন নেতা সাহেব! আমি আপনাকে অনেক ভালবাসি! অনেক! অন্য কারো সাথে ভাবতেই বুকটা ফেঁটে যায় আমার! সহ্য করতে পারি না আমি! সত্যি বলছি আপনার সাথে কাউকে ভাবতেই পারি না আমি। খুব ভয় হয় আমার খুব! মনে হয় আপনি হারিয়ে যাবেন। ভুলে যাবেন আমায়। লাষ্ট পর্যন্ত মিল হবে তো আমাদের।”
সেদিন এগুলো বলে কেঁদে কুটে একাকার হয়ে ছিলাম আমি। কেনই বা হবো না মনের ভিতর একটা ভয় যে ধীরে ধীরে ঘর বাধচ্ছে!হারানোর ভয়, ইউসুফকে না পাওয়ার ভয়!সত্যি কি আমি এতটা ভাগ্যবতী? পাবো তো তাকে আজীবন? এসব ভেবেই কান্নার বেগ বৃদ্ধি পাচ্ছে আমার।।

ইউসুফ ভাই আমাকে কান্না থামানোর চেষ্টা করছেন। আদুরে সুরে বলে যাচ্ছেন,,
–” কাঁদিস না বাবুইপাখি! আমিতো তোরি! শুধু তোর! আর কারো না। এ বুকে তোকে ছাড়া আর কারো ঠাই হবে না কখনো!”
জানি না কেন। সেদিন ইউসুফ ভাইয়ার কথায় খুব শান্তি পেয়েছিলাম। এতটা শান্তি যে কোনো পোড়া জায়গায় বরফ ঘসলে হয় ঠিক তেমন আরাম পাচ্ছিল মনে।

মাঝ রাতে গাড়ি এসে থামলো একটি কাঠের দোতালা বাড়ির সামনে! আমি তখন ঘুমে ঢুলুঢুলু। ইউসুফ ভাইয়া ডাকতেই পিট পিট করে চোখ মেলে তাকালাম।তখন কান্না করতে করতে ঘুমিয়েছি বলে এখন চোখ জ্বলছে খুব।
ইউসুফ ভাইয়া চাবি দিয়ে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকলেন। আমি আবাক হয়ে বললাম,,
–“ওমা এটা কার বাসা? না বলে চোরের মত যে ঢুকচ্ছি? ভিতরের লোক তো ডাকাত ভেবে পিটুনি শুরু করবে?”
ইউসুফ ভাই বিরক্তি নিয়ে বললেন,,

–” এত দু লাইন বেশী কেন বুঝিস তুই! সব সময়? তোর কি ধারণা আমি যার তার বাসায় আসবো? ডাফার!”
আমি ইউসুফ ভাইয়ার দিকে ভ্যাবলার তাকিয়ে আছি। তা দেখে বাঁকা হেসে বললেন,,
–” এঁটা আমার বাড়ি! কিনেছি কতদিন আগে গাঁধা। এবার ভাবা বাদ দে ঘুম পাচ্ছে আমার।”
বলে গট গট করে উপরে চলে গেলেন উনি! এদিকে আবাক হয়ে দেখে যাচ্ছি আর চার পাশ ঘুরে ঘুরে। কি সুন্দর কাঠের বাড়িতে সব কিছু কাঁঠে জিনিষ দিয়ে পরিপাটি করে সাজানো!তখনি ডাক পড়লো আমি উপরে যেতেই তিনি আমাকে রুম দেখিয়ে দিলেন। আর নিজে চলে গেলেন ফ্রেস হতে!

ফ্রেস বের হতেই ইউসুফ ভাই রুমে ঢুকলেন। আমাকে দেখে স্থির চাহনিতে চেয়ে রইলেন। আমার কেমন লজ্জা লাগতে লাগলো। সাথে অস্বস্তি কাজ করছে। কারণ আমার সাড়া শরীর হালকা ভেজে।
ইউসুফ ভাই হয়তো আমার অস্বস্তি বুঝতে পেরে অন্য দিকে তাকালেন বললেন,,
–” নিচে আয় খাবার রেডি!”
বলে চলে গেলেন তিনি! এদিকে লজ্জায় মরে যাই আমি।

ওসময়ে খাবার খেতে পারি না আমি! শুধু নাড়িয়ে যাচ্ছি! ভয়ে খাবো না বলতে পারচ্ছি না একবার বলেই রাম ধমক খেয়েছি! তাতেই আরো পেট যেন ভরে টাইটুম্বুর। ইউসুফ ভাই দিব্বি খেয়ে যাচ্ছেন! আমার এসব ভাবার মাঝে আবার বললেন তিনি,
–” কি হলো? খাবার খাচ্ছিস না যে?”
আমি কাঁদ কাঁদ মুখ করে বললাম,
–” আর পারচ্ছি না! সত্যি! ”
উনি খাবার মুখে দিতে দিতে বলল,,
–” ঠিক আছে রেখে দে!”
আমি খুশিতে গদ গদ হয়ে যেই না খাবারে হাত পানি ঢেলে হাত ধুতে নিবো! তখনি মারলেন ধমক। সঙ্গে সঙ্গে কেঁপে উঠলাম আমি। উনি বললেন,

–” কি করছিস তুই! খাবার নষ্ট কেন করছিস? জানিস না খাবার নষ্ট করা আমার পছন্দ না!”
বলে উনি আমার খাবার প্লেটা নিয়ে তার প্লেটে ঢেলে নিলেন। আমি তা দেখে বিস্মিত হোলাম। উনি খাবার মুখে দিতেই চেঁচিয়ে বললাম,,
–“নেতা সাহেব! কি করছে এঁটো ছিলো আমার?”
–“তো!”
ভাবলেশহীন উত্তর দিয়ে খেতে লাগলেন মনোযোগ দিলেন!আমি হা হয়ে দেখতে লাগলাম তাকা। আমাকে এভাবে থাকতে দেখে হেসে দিলেন তিনি বললেন,,
–” একে অপরের এঁটো খেলে মহাব্বত বাড়ে।”
তার কথায় ও কাজে চোখ দুটো ছল ছল করে উঠলো আমার। মনে মনে শুধু এটাই বললাম,,
–” এতো ভালবাসা সইবে তো আমার ভাগ্য!”

ইউসুফ ভাই আমাকে টেনে টুনে বাহিরে নিয়ে আসলেন। ঘড়িতে তখন —-৪.৩০।চারিদিক অন্ধারে আচ্ছান্ন তখন।আমার ভয় ভয় লাগচ্ছে কারণ পথে কেউ নেই শুধু আমি আর সে। তার বাড়িটা থেকে সমুদ্র সৈকত সুন্দর দেখা যায়। গভীর রাতে সমুদ্রের গর্জনের আওয়াজো শোনা যায়। উনি এখানে নিয়ে এলেন।প্রথমে আওয়াজটা কিসের ধরতে না পেরে জিগ্যেস করলাম ইউসুফ ভাইকে।
–” এটা কিসের আওয়াজ! ”
ইউসুফ ভাই মুচকি হেসে বললেন,,
–” সমুদ্রে গর্জনের আওয়াজ!”
অামি অবাক হয়ে গেলাম। উৎকণ্ঠা ভাবে বললাম,,
–“সত্যি?”
ইউসুফ ভাই মাথা নাড়ালেন, অর্থাৎ হে!
আমি আবার বললাম,,

আমার একটাই যে তুই পর্ব ২৪

–“আমরা এখানে এত রাতে কেন আসলাম ইউসুফ ভাই!আপনার না ঘুম পাচ্ছিল? ”
–“পাচ্ছিল তো! কি করবো বল। সমুদ্রের ডাকে এখানে আসতে বাধ্য হলাম।”
–“এটাই কারণ? ”
–” না আরেকটি কারণ আছে!”
–” কি?”
–” আরেকটু পর নিজেই জানতে পাড়বি! ”
–” আরেকটু পর! তার থেকে বরং আপনি বলে দিন!”
–” তুই স্বচক্ষে দেখে যে আনন্দ পাবি! তা বললে পাবি না!”
আমি মন খারাপ করে গাল ফুলালাম। ইউসুফ তা দেখে হেসে ফেললো। বলল,,
–” চল হাটি! সমুদ্রের বুকে!”

বলে আমার হাতের আঙ্গুলের ভাজে তার হাতের আঙ্গুল গুলো পুরে হাটা ধরলেন পানির মাঝে। পানির মাঝে পা রাখতেই মনের মাঝে আলদা ভালোলাগা কাজ করতে লাগলো। প্রিয় মানুষটির পায়ের সাথে পায়ের তাল মিলিয়ে হেঁটেই চলছি! ঠিক তখনি ইউসুফ ভাই গুন গুন করে গান ধরলেন,,
–” এ পথ যদি না শেষ হয়,
তবে কেমন হতো তুমি বলতো”
আমি হেসে ফেললাম। সাথে আমার নেতা সাহেবও।

আমার একটাই যে তুই পর্ব ২৬