আমার একটাই যে তুই পর্ব ৩১ || সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি

আমার একটাই যে তুই পর্ব ৩১
সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি

৫ বছর পর…!
ইউসুফ তার ব্যালকনিতে বসে ড্রিংক্স করছে। চারিদিকে ভোরে আভা ফুঁটে উঠছে। তা দেখে হেসে ফেললো সে। জড়িয়ে আসা কন্ঠে বলল,,
–“আরোও একটি রাত ঘুমহীন কেঁটে গেল আমার! এসবি চাইছিলে তাই না বাবুইপাখি! বলে ছিলে না ভালো থাকতে? দেখে আমি ভাল আছি! তোমাকে ছাড়া খুব খুব ভাল আছি। একদম ফিট এন্ড ফাইন্ড।”

এসব বুলি আওড়াতে আওড়াতে ঢুলুঢুলু শরীর নিয়ে উঠে দাঁড়ালো। নেশাটা আজ বেশি করে ফেলেছে। পা দুটো এদিক ওদিক চলছে। এ বুঝি পড়েই যাবে। দু এক বার পড়েও যেতে নেয়। তাও সামলে হেসে দেয়। বলে,
–“দেখ বাবুইপাখি! আমি নিজেকে সামলে নিতে শিখেছি।খুব শিখেছি। তোমার আর দরকার নেই। নেই দরকার।”
বলতে বলতে নিজের শরীর বেডের উপর ছেড়ে দিল। চোখ বুঝে উল্টো হয়ে শুয়ে রইলো। কিছুক্ষণ পর চোখ দিয়ে তার শিশির কণার মতো বিন্দু বিন্দু মুক্ত দানা পড়তে লাগলো তার চোখ দিয়ে! বিড়বিড় করে শুধু বলল,,
–” আমার সামনে কখনো এসো না বাবুইপাখি! আমি তোমাকে জানে মেরে দিবো! তারপর নিজে মরে যাবে। এসে না আর সামনে। কখনো না!”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

এসব কিছু দরজার আড়াল থেকে দেখে ডুকরে উঠছে ইউসুফের মা। সত্যি বড় ভুল সে করেছে। কুহুকে দূর করে নিজের ছেলের অধঃপতন স্বচক্ষে দেখছে।এ ৬ বছরে কতই না খুঁজেছে কুহুকে। কিন্তু কুহু যেন গায়েবই হয়ে গেছে। কেউ কোনো খোঁজ আর দিতে পারেনি!কুহুকে শুধু আর একটি বার ফিরে পেত? তার ধরতো ফিরে আসার জন্য। তাতেও না মানলে পা ধরবে তারপরও না আসলে তুলে আনবে। তাও কুহুকে আসতেই হবে তার ইউসুফের জন্য। কিন্তু কথা হচ্ছে? কুহু কই? এতটা বছরে কুহুর কোনো খবর কেনই বা তারা পাচ্ছে না????

–“খালা কায়া কোথায়? ওর ডিউটি কিছুক্ষন পর!”
–” জে জয়ীতা আফা! আমি দেখতেছি।”
–” মেয়েটাকে নিয়ে আর পারিনা!”
–” আমিও তো তোমাকে নিয়ে পারিনা!” ঠোঁট উল্টে বাচ্চাদের মতো বলল প্রিজম!
জয়ীতা প্রিজমকে দেখে ভ্রু কুচকালো। রাগি কন্ঠে বললো,,
–” ডাঃ প্রিজম? হোয়াট আর ইউ ডুইং হেয়ার? কাজ নেই আপনার? গো?”
প্রিজম হেসে দিল। তা দেখে গা জ্বলে উঠলো জয়ীতার। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,,
–“হাসচ্ছেন কেন? হাসার মতো কিছু বলেছি? খবরদার আর হাসবেনা না।”
প্রিজম বুঝলো জয়ীতা সত্যি রেগে আছে। অসহায় ফেস করে বলল,,

–“আম সরি না! আমি সত্যি কিছু করি নাই! আমি পুরোই নির্দোষ! বি…”
কথার মাঝেই থামিয়ে দিলো জয়ীতা হাত দেখিয়ে। চোখ মুখ শক্ত করে বলল,,
–“আমি কারো কাছে কোন সাফাই চাইনি! সো ইউ কেন লিভ নাও।”
মুখটা ছোট হয়ে গেল ডাঃ প্রিজমের।তা দেখে বুক ফেঁটে যাচ্ছে জয়ীতার। এমনটি তো সে চায় নি! তাহলে!চোখ টলমল করছে তার। ছোট শ্বাস ফেলে বেড়িয়ে যেতেই প্রিজম। হু হু করে কেঁদে দিলো সে!
তখনি রুমে ঢুকে কায়া। জয়ীতাকে দেখে বিচলিত হয়ে জিগ্যেস করে,,

–” জয়ী মেম আপনি কাঁদচ্ছেন কেন? আর ইউ ওকে?ডাঃ প্রিজমকেও দেখলাম মুখ ভাড় করে আছেন? কিছু হয়েছে?”
জয়ীতা এবার হাউ মাউ করে কেঁদে দেয়ে। কায়া কি করবে বুঝতে পারছে না। শান্তনা দিয়ে যাচ্ছে শুধু।কায়ারো খারাপ লাগচ্ছে।হসপিটালের লাভ বার্ড নামে দুজনের পরিচিতি আর তাড়াই দিন রাত লড়েই যাচ্ছে!
–” জয়ী মেম প্লীজ সে সামথিং? ”
জয়ীতা তাকালো কায়ার দিক বললো,,
–” হি চিট মি!”
বলে আবার কেঁদে দিলো। কায়া অবাক হয়ে বললো,,

–” কি বলছেন এসব! ডাঃ প্রিজম মোটেও এমন না। হয়তো আপনার কোথাও ভুল হয়েছে!”
–” না হয় নি! আমি ওকে সেদিন বেসমেন্টে দেখেছি! কারো হাত ধরে কথা বলতে!”
–” মেম হয়তো দেখেছেন! কিন্তু এমনটিও হতে পারে যা দেখেছেন ভুল! অনেক সময় আমরা চোখে যা দেখি তা সত্য নাও হতে পারে!”
জয়ীতা মাথা নত করে রইলো। কায়া আবার বলল,,

–” মেম আপনাদের বিয়ে হতে চলেছে! এখনই মনে সন্দেহ ঢুকে গেলে পুরো লাইফটা হেল হয়ে যাবে। প্লীজ মেম লেম লেম বিষয় না ধরে ভাইয়ার সাথে বসে সর্ট আউট করে নিন। নয়তো আপনি আর ডাঃ প্রিজম দুজনি জ্বলবে সারাজীবন। ”
জয়ীতা চকিতে তাকালো। কায়া মাথা নাড়িয়ে আসত্ত করল। জয়ীতা এবার হেসে জড়িয়ে ধরলো কায়াকে। বলল,,
–“সত্যি কায়নাত তুমি আমার চোখ খুলে দিলে! আমি এখনি ওর সাথে কথা বলছি!”
–” গো!”

কায়া হেসে বলল! জয়ীতা দৌড়ে গেল।প্রিজমকে সরি বললো। রাগ ভাঙ্গাতে চেষ্টা করলো। দূর থেকে কায়া তাদের খুনসুটি দেখে দীর্ঘ শ্বাস ফেললো! এক সময় তার লাইফেও ভালবাসা ছিল। এমন ভাবেই খুনসুটি চলতো! আজ মানুষটি নেই তার কাছে! কেমন আছে জানা নেই তার।আর এ দুটো ব্যাক্তির মাঝে তাদের ভালবাসা খুঁজে পায় কায়া। মানুষটির কথা ভাবতেই চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়তে লাগলো তার। চোখে জল মুছে পা বাড়ালো বাচ্চাদের ওয়ার্ডে। তার ডিউটি শুরু।

প্রতিদিনের মতো আজ ঘুম থেকে উঠায় অদ্রি ইউসুফকে! ছোট ছোট পায়ে সিঁড়ি বেয়ে ইউসুফের ঘরে এসে পিঠের উপর বসে পড়ে গালে চুমু খেয়ে বলতে থাকে তার আধ ভাঙ্গা বুলিতে,,
–” বলো পাপা উলো! সকল হইছে। উলো। ”
অদ্রির ছোঁয়া পেতেই ঘুম ছুটে গেছিল তার। অদ্রিকে দেখে হেসে দেয় বলল,,
–” গুড মর্ণিং আমার আম্মুটা!”
–“গুল মনিঙ! চলো লেডি হও। তোমাল নাকি মিনিন আছে! তামান্না আন্টি আসচ্ছে!”
ইউসুফ হেসে ওকে আদর করে উঠে পরে বলে,,

–“থ্যাংক ইউ আম্মু! ”
বলে ফ্রেশ হতে চলে যায়। রেডি হয়ে অদ্রিকে নিয়ে নিচে আসতেই ইউসুফের আম্মু এসে বলল,,
–“বাবা নাস্তা করে যা! তোর পছন্দের নাস্তা বানিয়েছি!”
ইউসুফ কাঠ কাঠ গলায় বলে,,
–“খাবো না! তামান্না চলো!”
বলে চলে গেল। ইউসুফের মা কেঁদে দিল। আর কতদিন চলবে এসব। তামান্না কাঁদে হাত রেখে বলে,,
–“মেম ডোন্ট ক্রাই সব ঠিক হয়ে যাবে!”

আমার একটাই যে তুই পর্ব ৩০

কায়া ডিউটি শেষে রুমে আসতেই ডাঃ আশিক তাকে খবর পাঠায় যেতে। সারা রাত ডিউটি করে শরীর অনেক ক্লান্ত। যেতেই ইচ্ছে করছে না। ধুপ করে বেডে শুয়ে পড়তে ইচ্ছে করছে। কিন্তু যেতে তো হবেই। কাপর পাল্টে ডাঃ আশিকের কেবিনে গেল। যেখানে তার ক্লাসের অনেকেই উপস্থিত! ডাঃ জয়ীতা আর প্রিজম ও। সে যেতেই ডাঃ আশিক বলতে শুরু করলো,,
–” গাইস! ময়মনসিংহ মেডিকেলে একটা ক্যাম্পিং হবে রাজশাহী সহ সকল বিভাগের স্টুডেন্টদের সেখানে পাঠানো হবে। আমাদের এখান থেকে আপনাদের পাঠানো হচ্ছে! আজ রাতেই রওনা করবো আমরা ঠিক ১৫ দিনের জন্য। সো ব্যাগ প্যাগ রেডি করে ফেলুন। রাত ৮ টায় বাসে উঠবো আমরা। আর…!”

এমন আরো কথা ডাঃ আশিক বলতে লাগলো। যা কান পর্যন্ত পৌঁছালো না কায়ার! হাত পা কাঁপচ্ছে। চোখ দুটি টলমল করছে। বিন্দু বিন্দু ঘাম জমা হচ্ছে তার মাথায়। কাঁপা কাঁপা ঠোঁট দুটি নাড়িয়ে শুধু বলল,,
–“ম..য়…ম…ন..সি..ং..হ! ”

আমার একটাই যে তুই পর্ব ৩২