আমার তুমি পর্ব ৪০

আমার তুমি পর্ব ৪০
জান্নাত সুলতানা

-“আআহ,ব্যাথা পাই।”
প্রিয়তা সাদনান এর মাথার চুল শক্ত করে চেপে ধরে ব্যাথাতুর শব্দ করে বলে উঠে।
-“প্রায় শেষ আর একটু সহ্য করো সোনা।”

সাদনান শুভ্র রঙের ব্যান্ডেজ টা পায়ে পেঁচাতে পেঁচাতে জানালো প্রিয়তা কে।
প্রিয়তা আর কোনো শব্দ প্রয়োগ করে না দাঁতে দাঁত খিঁচে শক্ত হয়ে থাকে।
সাদনান ব্যান্ডেজ টা পেঁচানো শেষ উঠে এগিয়ে গিয়ে আলমারি খুলে সেখান থেকে নিজের আর প্রিয়তার ড্রেস আনে।
সেগুলো সোফায় রেখে ফিরে এসে প্রিয়তা কে কোলে তুলে নিলো।
প্রিয়তা চুপটি করে গলা জড়িয়ে ধরলো।ভীষণ ব্যাথা করছে পায়ে।তাই আর কথা বাড়ায় না। পায়ে তখন একটা ব্লেড ভাঙ্গা গেঁথে গিয়ে ছিল।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

রাহান সেটা বেড় করলেও রক্ত পড়া বন্ধ হয় নি।আর হসপিটাল যাওয়া টাও তখন সেফ ছিল না তাই তো বাসায় এসে সাদনান নিজে প্রাথমিক চিকিৎসা করেছে।অবশ্য একটা ইনজেকশন পুশ করছে যাতে ইনফেকশন না হয়।
সাদনান প্রিয়তা কে ওয়াশ রুমে এনে নিজে কলেজে ড্রেস বদলে টাওয়াল পেঁচিয়ে দিয়ে আবারও কোলে করে এনে সোফায় বসিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করিয়ে দেয়।
প্রিয়তার নিজেও টেনেটুনে পড়ে নিলো।
সাদনান হাসলো হাতে থাকা ভেঁজা টাওয়াল টা নিয়ে ব্যালকনিতে যেতে যেতে বলল

-“একদম নড়াচড়া করবে না।
আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।খাবার রুমে দিতে বলবো।”
-“ভাবা যায়,এমপি মহোদয় বউয়ের সব কাজ নিজে হাতে করছে।”
প্রিয়তা কেমন তাচ্ছিল্যের স্বরে বলে উঠলো। সাদনান ওয়াশ রুমে যাওয়ার জন্য মাত্রই নিজের হাল্কা গোলাপি রঙের টাওয়াল টা সোফা হতে হাতে নিয়ে ছিল।
প্রিয়তার কথা শুনে প্রিয়তার সামনে দাঁড়াল নিজেও ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো

-“কোথাও লেখা আছে এমপি’রা কাজ করতে পারবে না?”
-“কি বলুন তো,অপ্রত্যাশিত ছিল তো তাই।”
সাদনান প্রিয়তার কথা শুনে হঠাৎ মনে হলো প্রিয়তা একজন বাইশ, তেইশ বছর এর প্রাপ্ত বয়স্ক নারী।
কিন্তু কথা হলো এতো গভীর করে কেন তার সাথে কথা বলছে তার বউ?

-“তোমার হয়েছে টা কি?”
-“কিছু না তো।
আপনি যান বরং, আপনার আবার সময় অপচয় হচ্ছে।”
সাদনান জবাবে কিছু বলল না ওয়াশ রুম যাওয়ার জন্য অগ্রসর হলো।চার টার দিকে আজ কিছু মানুষ আসবে তার উপর একটা বিশেষ কাজও করতে হবে। সাথে দুপুরে আক্রমণকারী লোকদের একটা কিছু করতে হবে।রাতে না হয় আজ বউয়ের সব অভিযোগ শুনবে।সে জানে বউ তার মনে মনে অভিমানের পাহাড় তৈরি করে রেখেছে। অবশ্য রাখা’রই কথা।

কিন্তু তার নিজের কি দোষ এতো এতো ঝামেলা সামলে বউ কে সময় দিয়ে উঠতে পারছে না।
নতুন এমপি হওয়ার সুবাদে সব টা সামলে নিতে একটু হিমশিম খেতে হচ্ছে। অবশ্য ততটা সমস্যা হতো না যদি না প্রাক্তন এমপি সব দায়িত্ব, নিয়ম ঠিক ঠাক পালন করতো।

সাদনান শাওয়ার নিয়ে একটা টাওয়াল পেঁচিয়ে বেড়িয়ে এলো।
রুমে এসে প্রিয়তার পাশে বসে প্রিয়তা কে নিজের এক উরুর উপর নিয়ে চুল মুছে দিতে বলে।
প্রিয়তা বাধ্য মেয়ের মতো শুনলো। চুল মুছা শেষ সাদনান প্রিয়তা কে আবার আগের স্থানে বসিয়ে দিয়ে গায়ে একটা টি-শার্ট জড়িয়ে নিলো।

এ-র মধ্যে একজন কাজের লোক আর সুফিয়া বেগম খাবার নিয়ে হাজির হলো।
প্রিয়তার ব্যাপার টা নিয়ে সবাই অবগত তাই নিজে যে যেতে পারবে না সেই জন্য খাবার উপর রুমে পাঠিয়ে দিয়েছে সালেহা বেগম। সবাই অবশ্য খাবার শেষ করে নিয়েছে, তার উপর আয়নার নয় মাস শেষ এর দিকে তাই সালেহা বেগম সেখানেই আছে বলে জানালো সুফিয়া বেগম।

খাবার রেখে প্রিয়তার হালচাল জিগ্যেস করে তিনি চলে গেলো।
সাদনান ততক্ষণে নিজের প্রয়োজনীয় সব কাজ শেষ করে প্রিয়তার পাশে বসে খাবার থালা হাতে নিয়ে প্রিয়তা কে খাইয়ে দেয় সাথে নিজেও খেয়ে নিলো।

প্রিয়তা এটা বেশ উপভোগ করলো।অনেক দিন পর সাদনান প্রিয়তা কে নিজের হাতে খাবার খাইয়ে দিচ্ছে।
খাবার শেষ সাদনান এঁটো থালা সেন্টার টেবিলে রেখে নিজের হাত ধুয়ে আসে বেসিন হতে।
প্রিয়তার মুখ মুছিয়ে দিয়ে একটা ব্যাথার ঔষধ খাইয়ে দিলো।প্রিয়তা বিনাবাক্য খেয়ে নিলো।সাদনান প্রিয়তা কে বিছানায় নিয়ে নিজের ল্যাপটপ নিয়ে বসে গেলো প্রিয়তার পাশে।

প্রিয়তা সাদনান এর দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে গেলো।
সাদনান সে দিকে তাকিয়ে মিনি কম্বল টা প্রিয়তার গায়ে দিয়ে দিলো।ঠিক তক্ষুনি দরজায় কেউ কড়া নাড়ে।
সাদনান জিগ্যেস করলে জানালো নিচে মানুষ এসছে।সাদনান আসছি বলে।প্রিয়তার কপালে একটা চুমু খেয়ে বেড়িয়ে এলো রুম হতে।

সাদনান বসে আছে ওয়াসিফ দেওয়ান এর সামনে।সাথে আছে আরও কিছু বড় বড় নেতা।তারা মুলত কিছু নিয়ে সমালোচনা করছে।
বেশ অনেক টা সময় সাদনান সবার কথোপকথন শুনে। কিন্তু সে খুব গভীর মনোযোগ দিয়ে কিছু ভেবে চলছে। ভাবনা অতি প্রখর যা ওয়াসিফ দেওয়ান পর্যবেক্ষণ করে।

-“সিকিউরিটি আরও কড়াকড়ি করতে বলবো!”
ওয়াসিফ দেওয়ান বললো।ওনার সাথে এখানে থাকা সবাই সায় দিলো।তবে সাদনান নাকচ করে দিলো।থুতনিতে নিজের দুই হাত ঠেকিয়ে জানালো
-“কি দরকার?
তারচেয়ে ঢের বেশি ভালো শেকড় টা উপড়ে ফেলা।”

-“সম্ভব হবে না।”
জাফর মির্জা বলল।সাদনান দাদার দিকে তাকালো।ফের দৃষ্টি ঘুড়িয়ে ওয়াসিফ দেওয়ান এর দিকে তাকিয়ে হাল্কা হেঁসে বলল
-“সময় বলে দিবে।
বাসায় যান রেস্ট করুন।”

এইচএসসি পরীক্ষা শেষ তিন্নির এডমিশন টেস্ট এর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে এখন।
এখন বই নিয়ে বসে আছে টেবিলে পাশেই সোফায় কবির খুব মনোযোগের সাথে কিছু করে যাচ্ছে ল্যাপটপ স্কিন এর দিকে তাকিয়ে।
হাতের আঙুল গুলো অনবরত keyboard চালিয়ে যাচ্ছে।

তিন্নি সে দিক টায় তাকিয়ে থাকে অনেক্ক্ষণ যাবত।তবে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারে না খাবার খেয়ে এসছে এই একটু আগেই শরীর টা কেমন করছে গা ঘোলাচ্ছে। মনে পেটের ভেতর নাড়িভুড়ি সব বেড়িয়ে আসবে।
তিন্নি হাতে থাকা কলম টা টেবিলে রেখে মুখে হাত চেপে ধরে এক দৌড়ে ওয়াশ রুম চলে গেলো।
কবিরের চোখে সেটা ধরা পরলো।ল্যাপটপ রেখে তৎক্ষনাৎ উঠে নিজেও পেছনে পেছনে ওয়াশ রুমে আসে ততক্ষণে তিন্নি ঘড়ঘড় আওয়াজ তুলে পেটের হাত চেপে ধরে বেসিনে উপর ঝুঁকে বমি করছে।

কবির এগিয়ে এলো চুল গুলো সামনে থেকে পেছনে এনে কোনো রকম বেঁধে দিয়ে মুখে পানি দিতে সাহায্য করলো।
বেচারা বেশ ঘাবড়ে গিয়েছে চোখ মুখে কেমন আতংকের ছাপ স্পষ্ট।
তিন্নি চোখে মুখে পানির ঝাঁপটা দিয়ে দূর্বল শরীর টা আর ধরে রাখতে পারে না।কবির এর বুকের উপর আলগোছে মাথা টা এলিয়ে দেয়।
কবির কি বুঝতে পারলো কে জানে।হঠাৎ করে কোলে তুলে নিলো। তিন্নি গলা জড়িয়ে ধরে ক্লান্ত ভরা কণ্ঠে জানালো

-“যেতে পারতাম।
দরকার ছিল না।”
-“হুম সেটা তো দেখতে পাচ্ছি।
ঠিক মতো খাও,,,
কবির কথা টা কি মনে করে আর সব টা সম্পূর্ণ করেনা।
তিন্নি কে বিছানায় বসিয়ে নিজেও পাশে বসে কৌতুহল নিয়ে জানতে চাইলো

-“সব ঠিক ঠাক ছিল তো এই মাসে?”
তিন্নি হাসলো খুব সাবধানের সহিতে। মাথা টা কবির এর কাঁধে রেখে এক বাহু জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো
-“যদি বলি না!”
-“মজা করছো তুমি।”
-“আপনার তাই মনে হচ্ছে? ”

আমার তুমি পর্ব ৩৯

তিন্নি মাথা তুলে কবির এর মুখ পানে তাকালো। কবির খুশি কি না বুঝে উঠতে পারে না।
কবির ফিরে বসলো নিজের দানবীয় হাত জোড়া তিন্নির গোলগাল মুখ খানা নিজের সেই হাতের আঁজলে নিয়ে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে শুধালো
-“তুমি শিওর, আমি বাবা হবো!”

আমার তুমি পর্ব ৪১