আমার শহরে তুমি পর্ব ১৩ ||  Alisha Rahman Fiza

আমার শহরে তুমি পর্ব ১৩
 Alisha Rahman Fiza

আমি মুখ ফুলিয়ে বললাম,
~নিরামিষ জানি কোথাকার।আপনি আসলেই রাক্ষস শুধু শুধু আমি আপনাকে আমি এ নামে ডাকি না।
রক্তিম হালকা হেসে বললো,
~আর তুমি রাক্ষসের বউ রাক্ষসনী।
রক্তিমের কথায় রাগ করে মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিলাম সে আপনমনে গাড়ি ড্রাইভ করছে এই মানুষটা আমার মনের কোনো ইচ্ছা বুঝে না। বাসার সামনে এসে গাড়ি থামলো আমি গাড়ি থেকে নামতে যাবো রক্তিম আমার হাত ধরে বললো,
~বৃষ্টি বিলাস করবে না?
আমার চোখ খুশিতে চিকচিক করতে লাগলো।রক্তিম বললো,

~ছাদে চলো।
আমি গাড়ির দরজা খুলে বের হলাম হাত দিয়ে বৃষ্টির পানি গুলোকে ছুয়ে দিলাম,বৃষ্টির পানি আমার পুরো শরীরকে ছুয়ে দিলো।রক্তিম আমার কাছে এসে আমাকে কোলে তুলে নিলেন আমি তার দিকে চোখ বড় করে তাকালাম আর বললাম,
~ছাড়েন আমাকে। আমার পা আছে আমি হেঁটে যেতে পারবো।
রক্তিম বললো,
~হুশ।আমি জানি তোমার পা আছে আমার মন চেয়েছে তোমায় কোলে নিতে আবার ড্যাংড্যাং করতে পা পিছলে পরে যাবে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

রক্তিমের কথায় আমি লজ্জা পেলাম সে আমায় কোলে নিয়েই বাসার ছাদে চলে গেলো।ছাদে পৌছে রক্তিম আমাকে নিচে নামিয়ে দেয়। আমি রক্তিমের থেকে ছাড়া পেয়ে দৌড়ে ছাদের মাঝখানে চলে আসলাম দুহাত মেলে বৃষ্টি উপভোগ করছি।
রক্তিম তার প্রেয়সীকে দেখতে ব্যস্ত বৃষ্টির পানি গুলো তার প্রেয়সীর পুরো শরীরকে ছুয়ে দিচ্ছে।সে যদি বৃষ্টির পানি হতো তাহলে সে তার প্রেয়সীকে ছুয়ে দিতে পারতো।এখন তো এই বৃষ্টির পানিকে হিংসা করতে মন চাইছে।রক্তিম ধীর পায়ে অধরার পিছে এসে দাড়ালো।তার উত্তপ্ত নিঃশ্বাস গুলো অধরার কাধে গিয়ে পরছে।

কারো গরম নিঃশ্বাস আমার কাধে পৌছাতেই আমি পিছন ঘুরে তাকাই বৃষ্টির জন্য চোখ পিটপিট করে তাকালাম।রক্তিম আমার দিকে তাকিয়ে আছে এই তাকানো স্বাভাবিক লাগছে না।এতে রয়েছে ভালোবাসা যেই না আমি একটু পিছে যেতে নিবো সেই সময়ই আমার পা পিছলে গেলো আমি চোখ বন্ধ করে নিলাম।আমার কোমড়ে কারোও শীতল স্পর্শ পেতেই চোখ খুলে তাকালাম।রক্তিম আমার কোমড় জরিয়ে ধরে নিজের কাছে টেনে নিয়েছে।তার নিশ্বাসের প্রতিটি শব্দ আমার কানে বাজছে।আমার বুকটা ঢিপঢিপ করছে এমন কেন হচ্ছে আমার সাথে।রক্তিম আমার কানে ফিসফিস করে বললো,
~হয়েছে বৃষ্টি বিলাস এখন রুম বিলাসও করে নেওয়া যাক।
আমি মাথা নাড়িয়ে তাকে হ্যাঁ বলতেই আমাকে কোলে নিয়ে নেয় রক্তিম।তারপর সে রুমের উদ্দেশ্যে পা বাড়ায় রুমে পৌছে রক্তিম আমাকে ওয়াশরুমের সামনে দ্বার করিয়ে দেয় আমার একটা শাড়ি আর প্রয়োজনীয় জিনিস হাতে দিয়ে সে বললো,

~যাও চেঞ্জ করে আসো।
তাড়াতাড়ি করে ঢুকে গেলাম ওয়াশরুমে। ওয়াশরুমের দরজায় পিঠ ঠেকিয়ে আমি জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস নিচ্ছি।আজকাল এগুলো যে কী হচ্ছে আমার সাথে বুঝতেই পারছিনা।কিছুক্ষন এভাবে থেকে ফ্রেশ হয়ে শাড়ি পরে নিলাম তখনই ওয়াশরুমের দরজায় করাঘাত করলো রক্তিম আর বললো,
~আর কতো লেট করবে আমার এখন ঠান্ডা লাগছে প্লিজ তাড়াতাড়ি করো।
আমি চটজলদি দরজা খুলে বের হয়ে বললাম,
~সরি,আসলে আমি
আমার পুরো কথা শেষ করতে পারলাম না তার আগেই রক্তিম বললো,
~তুমি পরে তোমার লেট করার কারণ বলো আগে আমি চেঞ্জ করে নেই।
বলেই সে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো আর আমি বিছানা বসে পরলাম পা দুটো হঠাৎ ব্যাথা করছে হয়তো আজ অনেক দিন পর ভার্সিটিতে ভাগাভাগী করেছি তার কারণেই হচ্ছে।

কিছুক্ষন পর রক্তিম ফ্রেশ হয়ে এসে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
~তোমার কী কোনো প্রবলেম হচ্ছে?
আমি বললাম,
~না।
রক্তিম বললো,
~তাহলে পায়ে এভাবে হাত বুলাচ্ছো কেন?
আমি বললাম,
~পা ব্যাথা করছে।
রক্তিম হালকা রেগে বললো,
~আরো করো দৌড়াদৌড়ি ভালো লাগবে।এখান থেকে সেখানে সবসময় ওনার দৌড়াদৌড়ি করতে হবে।ফাজিল একটা
আমি ঠোঁট উল্টে বললাম,
~আমাকে কেন বকছেন পা ব্যাথা কী আমি ইচ্ছে করে এনেছি।
রক্তিম আর কিছু না বলে আমার পায়ের সামনে বসে পায়ে হাত দিতে নিবে তখনই আমি পা সরিয়ে ফেললাম আর তাকে বললাম,

~এতটুকুর জন্য পা ধরে মাফ চাইতে হবে না।আপনাকে এভাবেই আমি মাফ করে দিলাম।
আমার কথা শুনে রক্তিম আমাকে ধমক দিয়ে বললেন,
~স্টুপিট মেয়ে।আমি তোমার পা ধরে কেন মাফ চাইবো?তোমার পায়ের কোথায় ব্যাথা করছে তা দেখতে চেয়েছি।
রক্তিমের কথায় জিহ্বা দাঁত দিয়ে কেটে বললাম,
~আমার ভাবনায় ভুল হয়েছে।সরি
রক্তিম দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন,
~তোমার দ্বারা কিছু হবে না অধরা।
রক্তিমের এহেন কথায় আমি বোকার মতে বলে ফেললাম,

~তাহলে আপনার বাচ্চা গুলো কার দ্বারা হবে?আপনি কী আরেকটা বিয়ে করবেন বাচ্চার জন্য।
নিজের কথায় নিজে ফেসে এখন অন্য দিকে মুখ করে রেখেছি আর রক্তিম আমার দিকে তাকিয়ে আছেন কিছু না বলে সে আমার পা দুটো কাছে টেনে টিপে দিতে থাকলো আর বললো,
~একদম ঠিক কথা বলেছো আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম।তো মিসেস অধরা আপনার কয়টা বেবি নেওয়ার প্ল্যান আছে?বাবা হিসেবে আমি জানতে চাই।

আমি মাথা নিচু করে আছি তা দেখে রক্তিম মিটমিট করে হাসছে কিন্তু নিজেকে বেশিক্ষন কন্ট্রোল করতে না পেরে সে জোরে হেসে দেয়।রক্তিমের হাসির শব্দ শুনে আমার আরো বেশি লজ্জা করছে তার থেকে নিজের পা ছাড়িয়ে কাঁথা মোড়া দিয়ে শুয়ে পরলাম। রক্তিম এখনো হাসছে তার হাসি যেন থামার নাম নিচ্ছে না।
আমি কাঁথা মুখ থেকে সরিয়ে বললাম,
~আজব তো এতে এতো হাসার কী হলো?আরেকবার যদি হি হি করেছেন তাহলে আর আপনার সাথে থাকবো না এক কাপড়ে দাদীমার রুমে চলে যাবো।
রক্তিম হাসি বন্ধ করে আমাকে কাঁথা সরিয়ে আমাকে ঝাপটে ধরে শুয়ে পরলেন আর বললেন,
~থাক আমার বউ আমার কাছেই থাক।

আমি আর কোনো কথা না বলে তার বুকে গুজে শুয়ে পরলাম।ভালো লাগে রক্তিমের সাথে থাকতে সে যখন আমার আশেপাশে থাকে তখন মনে হয় আমি কোনো অন্য দুনিয়ায় চলে গেছি।পরম আবেশে নিজের চোখ বন্ধ করে নিলো ভালোবাসার মানুষ দুটি তারা এখন ব্যস্ত আছে তাদের নিজ নিজ স্বপ্নে।
এক রুমে ভালোবাসার স্বপ্ন দেখতে ব্যস্ত আরেক রুমে একাকীভাবে নিদ্রাহীন অবস্থায় নিজ বারান্দায় বসে আছে রাত।ফোন হাতে নিয়ে সেই দূর আকাশে তাকিয়ে আছে সে কতোবার সারাকে ফোন করলো রাত কিন্তু সেই একই কথা একজন সুন্দর কন্ঠের নারী বার বার বলছে,
~এই নাম্বাটি ব্যস্ত আছে অনুগ্রহ করে আবার ট্রাই করুন।
এই বাক্যটি শুনতে শুনতে ত্যক্ত রাত।বুকে চিনচিন ব্যাথা করছে আচ্ছা সে যখন সারকে নিয়ে ব্যস্ত থাকতো তখন কী অধরারও এতোই খারাপ লাগতো।
হয়তো হ্যাঁ। পরক্ষনেই নিজের মনকে শাসায় রাত অধরা তার মাকে অপমান করেছে একটা অভদ্র মেয়ের সাথে সে কোনো সম্পর্ক রাখতে চায় না।

সকালে সবাই একসাথে ব্রেকফাস্ট করতে বসেছে।তখনই রাহাত বললো,
~রায়হানের মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছে।এই মাসেই সে তার মেয়ের বিয়ে সেরে ফেলতে চায়।তোমরা তো জানো রাহির মা নেই আর রায়হানের ও তার ছোট ভাই ছাড়া আর কেউ নেই।তাই রায়হান চায় রক্তিম আর অধরা বিয়ের সব দায়িত্ব পালন করুক।রায়হান অনেক খুশি হবে বাকিটা তোমাদের ইচ্ছা সময়ের উপর নির্ভর করে।
বাবার কথাশ আমি বললাম,
~অবশ্যই বাবা,আমরা বিয়ের সব দায়িত্ব নিতে চাই।
রক্তিম বললো,
~জ্বী বাবা আমারও একই মত আছে।
আমাদের কথা শুনে বাবা বললেন,
~বেশ তো তোমরা রাহি আর অভির সাথে আজই দেখা করো তারা কীভাবে সব কিছু করতে চায়।তা জেনে নিও।আর অধরা তোমার সাথে রাহি কথা বলতে চায় তাই সে তোমাকে ফোন করবে তখনই জেনে নিও কখন তারা দেখা করতে চায়।
আমি বললাম,
~জ্বী বাবা।

ব্রেকফাস্ট শেষ করে বাসার বাহিরে এসে দেখি রক্তিম ড্যাশিং লুক নিয়ে গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে।আমি তাকে দেখেও না দেখার ভান করে অন্যদিকে তাকিয়ে হাটা শুরু করি।গাড়ির সামনে এসে যেই আমি গাড়ির পাশ কাটিয়ে যেতে নিবো তখনই রক্তিম আমার হাত ধরে বললো,
~কোথায় যাওয়া হচ্ছে?একা একা।
আমি বললাম,
~যেখানেই যাই এতে আপনার কী?
রক্তিম হেসে বললো,
~আমারই তো সব।আচ্ছা ম্যাডাম আপনার আর আমার পথ একই৷ আমরা কী একসাথে সেই পথ পাড়ি দিতে পারি।
রক্তিমের এমন মিষ্টি মিষ্টি কথায় আমি গলে যাওয়ার মেয়ে আমি না।আমি বললাম,
~কী দরকার আছে বলেন একই পথ একসাথে পাড়ি দেওয়ার?
রক্তিম বললো,

~আলবাত আছে অনেক দরকার আছপ বউ হও তুমি আমার আর কোনো নাটক দেখতে চাইনা গাড়িতে বসো।
কথা শেষ হতেই সে আমার হাত টেনে ধরে গাড়িতে বসিয়ে দিলেন তারপর গেইট লক করে
নিজে ড্রাইভিং সীটে বসলেন আমি বললাম,
~গতকাল তো একদম মুড দেখাচ্ছিলেন।আজ কী হলো মাস্টার মশাই।
আমার এহেন কথা শুনে রক্তিম বললেন,
~আজও মুড দেখাবো কিন্তু সঠিক জায়গায় গিয়ে।
রক্তিমের কথায় আমার মেজাজ খারাপ লাগছে তাই জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে রইলাম ভার্সিটির কাছে আসতেই আমি বললাম,
~গাড়ি থামান।
রক্তিম বললো,
~কেন?
আমি বললাম,
~কেউ দেখলে নানান কথা রটিয়ে দিবে।
রক্তিম বললো,
~তুমি আমার বউ কোনো সমস্যা হবে না।
আমি বললাম,

~সবাই তো আর জানে না আমি আপনার বউ।
রক্তিম কিছুক্ষন ভেবে বললেন,
~অধরা আমরা একটা পার্টি থ্রো করি যেখানে আমি সবাইকে জানাবো তুমি আমার বউ।
আমি বিরক্তি নিয়ে বললাম,
~যা ইচ্ছা করেন আমাকে এখানে নামিয়ে দেন।
রক্তিম গাড়ি থামিয়ে দেন আমি গাড়ি থেকে নেমে পরলাম সামনের দিকে হাঁটা শুরু করলাম রক্তিম পিছন থেকে ডাকদিলেন।আমি পিছে ঘুরতেই সে বললেন,
~ভার্সিটির পর রাহি আর অভি সাথে দেখা করতে হবে।তাই আপনি আবার ড্যাংড্যাং করতে করতে বাসায় চলে যেয়ে না।
রক্তিমের কথা শুনে আমি বললাম,

~আমিই মনেই রাখবো আপনি আবার মুড দেখাতে গিয়ে ভুলে যেয়েন না।
বলেই চলে আসলাম সেখান থেকে ভার্সিটির ভিতরে ঢুকেই লিনার সাথে দেখা হলো আমি আর লিনা ক্লাসের উদ্দেশ্যে হাঁটা ধরলাম আমরা দুজন কথা বলতে বলতে এগিয়ে যাচ্ছি হঠাৎ একজন যুবক এসে আমার সামনে এসে দাড়ালো আমি তার আগমনে একটু বিচলিত হলেও নিজেকে ঠিক করে নিলাম।
সেই যুবকটি আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
~আসলে আপনাকে এভাবে ভয় দেখাতে চাইনি কিন্তু একটা জরুরি কাজ ছিল তাই আপনাদের পথ আটকালাম।Kindly can you tell me where is principal room?
আমি কিছু বলতে যাবে তার আগেই লিনা বলে উঠলো,
~আগে গিয়ে বাম দিকে চলে যান।
যুবকটি মুচকি হেসে বললেন,
~Thanks Ladies.
বলেই সে চলে গেলো।আমি লিনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
~এই উজবুকটা আবার কে রে?
লিনা বললো,
~কে জানে?

আমার শহরে তুমি পর্ব ১২

আমরা সে বিষয় নিয়ে ঘাটালাম না ক্লাসে চলে আসলাম।সব গুলো ক্লাস করে আমি ভার্সিটির বাহিরে অপেক্ষা করছি রক্তিমের তখনই মোবাইলে ম্যাসেজ আসলো রক্তিম বলেছে,
~আজ সকালে যেখানে ড্রপ করেছিলাম সেখানে চলে আসো।
আমি চলে আসি সে জায়গায় রক্তিম গাড়ি নিয়ে দাড়িয়ে আছে আমি রক্তিমের কাছে গিয়ে বললাম,
~চলেন যাওয়া যাক।
রক্তিম বললো,
~গাড়িতে উঠে বসো।

আমি গাড়িতে বসলাম রক্তিম ড্রাইভ করা শুরু করলো।কিছুক্ষন পর রক্তিম একটা রেস্টুরেন্টের সামনে গাড়ি থামালেন। রক্তিম গাড়ি থেকে নামলেন আমিও গাড়ি থেকে নেমে দাড়ালাম হঠাৎ রক্তিম আমার চোখ কালো কাপড় দিয়ে বেঁধে দিলেন।আমি উত্তেজিত হয়ে বললাম,
~কী করছেন?চোখে কাপড় কেন বেঁধেছেন।
রক্তিম বললেন,
~হুসস।একদম কথা বলবে না আমার হাত ধরে আসতে আসতে ভিতরে চলো।
রক্তিম আমার হাত ধরে নিয়ে যাচ্ছেন কিছুসময় পর আমার চোখের কাপড় সে খুলে দিলো।আমি চোখ পিটপিট করে খুলে দেখলাম

আমার শহরে তুমি পর্ব ১৪